বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০৬
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
আমি হাত-পা ছুড়া শুরু করলাম। দেখতে পেলাম অন্ধকারেই একটা ছায়া রশি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এসেই আমায় ধাক্কা দিয়ে ছাদের মধ্যে ফেলে আমার হাত’টাও বেঁধে ফেললেন।
ভয় এবং কষ্টে আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
হঠাৎ’ই ছায়া’টা বলে উঠল__
আমার বাসায় চুরি করতে এসেছিস? দাঁড়া চুরি করার মজা আজ বের করব…….
কন্ঠ’টা শুনে চমকে উঠলাম। এ যে আমার বস….
” স্যার আমি চোর নয়, আমি মায়া…”
বলতে গিয়েও পারলাম না। শুধু পা গুলো ছুড়তে লাগলাম। আর আল্লাহ’কে ডাকতে লাগলাম। সাথে সাথে’ই ছাদের আলো জ্বলে উঠল। পুরো ছাদ মুহূর্তেই আলোকিত হয়ে গেল। ওনি আমার দিকে দৌড়ে আসতেছে আর বলছে মায়া তুমি?!!!?? চোখটা বন্ধ করে ফেললাম। মনে হচ্ছে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি;
তারপর জ্ঞান হারালাম…………
ছেলেটির ডায়েরী_
সে রাতে চোর ভেবে অন্ধকারে একটা ছায়া মানবিকে ধাক্কা দিয়ে ছাদে ফেলে ওর হাত সেই সাথে নাক-মুখ বেঁধে যখন চলে যাচ্ছিলাম, তখন শুনতে পাই ও পাগুলো ভিষণ রকম ছুড়াছুড়ি করছে। আলো জ্বালিয়ে রাগান্বিত দৃষ্টিতে চোরটার দিকে তাকাতেই দেখি আঁতকে উঠলাম। শিউরে উঠল ভেতর’টা। চোর ভেবে যার নাক,মুখ, হাত বেঁধে ছাদে ফেলে যাচ্ছিলাম সে আর অন্য কেউ নয়, আমার’ই অফিসের পি.এ,বোনের প্রাণের বান্ধবি ‘মায়া’। একমুহূর্তের জন্য আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না।মায়া মায়া বলে ছুটে গেলাম ওর কাছে। ওকে ধরে উঠালাম। তারপর ছাদে রাখা চেয়ারটায় বসালাম। বলতে লাগলাম-
‘ মায়া তুমি? আমি তো ভাবছিলাম…(..?..)….
বুঝতে পারলাম মায়া কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। ওর বাঁধনটা খুলে দিলাম। ও ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে, আমি ওর দিকে চেয়ে আছে।৪,৫মিনিট পর স্বাভাবিক হয়ে ও উত্তর দিল,
‘ আসলে তাহাজ্জদ নামাজ পড়ার পরও যখন দেখলাম ফজরের আযান দিচ্ছে না, তখন কয়টা বাজে এটা দেখার জন্য আপনার ফোন’টা আনতে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম আযান দেওয়ার আগ পর্যন্ত ফোন’টা আমার কাছে’ই রাখব। কিন্তু তার আগেই যে…..(…..)….
মায়া এটুকু বলেই থেমে গেল। I am sorry,maya.আমি আসলে বুঝতে পারিনি….
-‘ ইটস ওকে, স্যার।(মায়া)
ওকে চলো বলে আমি ওকে রেখেই বসা থেকে উঠে পরলাম, কিন্তু একি?!!!
ও এখনো বসে আছে কেন? মায়াকে জিজ্ঞেস করলাম, কি? যাবে না আজকে? নাকি এখানেই ঘুমাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছ?
মায়া মাথা নিচু করে জবাব দিল, সিদ্ধান্তের আর কি আছে? হাতের বাঁধন খুলে না দিলে তো এখানেই ঘুমুতে হবে। ওহ, শিট! বলে ওর হাতের বাঁধন’টা খুলে দিলাম। ও আমার দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চেয়ার থেকে উঠে ছাদের রেলিং ধরে দুরে তাকিয়ে আছে। আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রায় ১০,১৫মিনিটের মত দাঁড়িয়ে আছি, ওর সেদিকে কোনো খেয়ালি’ই নেই। ওর দৃষ্টি দুরে কোথাও আটকে আছে। কেন জানি ওর হাত’টা ধরতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে আবার পারছিও না। অবশেষে ধরেই ওর হাত’টা। ও চমকে তাকালো আমার দিকে…..
মেয়েটির ডায়েরী_
স্যার আমার দিকে মায়া মায়া করে ছুটতে এসে বসল। তারপর আমার মুখের বাঁধন না খুলেই জগতের প্রশ্ন জুড়ে দিল। এদিকে আমার নিঃশ্বাস খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি শুধু স্যারকে ইশারা করছিলাম নাক-মুখের বাঁধনটা খুলে দিতে। স্যার আমার ইশারা বুঝতে পেরেছে কি না জানিনা, তবে ওনি আমার নাক-মুখের বাঁধন’টা খুলে দিয়েছিল। স্যরি, বলে আমাকে রুমে যেতে বলে একবার আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। লজ্জিত ভঙিতে ওনি আমার হাতের বাঁধন’টা খুলে দিল। ওনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম ৪,৫মিনিট। ওনার দৃষ্টি যখন আমার চোখে পরে তখন আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নেই। বসা থেকে উঠে ছাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালাম। কোথায় তাকিয়ে আছি আমি নিজেও জানি না। মনে হচ্ছিল, আমি একটা ঘোরের মধ্যে আছি। হঠাৎ’ই আমার হাতে একটা উষ্ম ছোয়া অনুভব করলাম। চমকে গিয়ে ‘বাম’ পার্শ্বে তাকালাম। অবাক হলাম সিয়ামকে দেখে। মানে আমার শ্রদ্ধেয় সিয়াম স্যারকে দেখে। একবার হাত, আরেকবার ওনার দিকে তাকাচ্ছি আমি। এটাও কি সম্ভব? একি বাস্তব নাকি কল্পনা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ঘোর কাটে ওনার ডাকে। মায়া আযান দিচ্ছে রুমে চলো। নাহ, এ স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ওনি আমার হাতটা বাস্তবেই ধরেছে। আমি জানি, কখনো আমার মনের গুপ্ত বাসনা কারো সামনে প্রকাশ করতে পারব না,পারব না বলতে-
” স্যার, আমি আপনাকে ভালোবাসি,ভিষণ ভালোবাসি। কি করে বলব? আমার মত ছিন্নমূল, যার কোনো অস্তিত্ব নেই তার আবার স্বপ্ন থাকে নাকি? আর আমি তো তেমন সুন্দরও না, শ্যামবর্ণের। এই শ্যামবর্ণ নিয়ে কত মুখের কত কথা যে শুনেছি তার কোনো হিসেব নেই। আর ওনারা তো অনেক বড়লোক, ওনারা কি আর একটা ছিন্নমূল, অস্তিত্বহীন মেয়েকে ওনাদের ঘরের বউ করবে? না, করবে না। এসব কথা ভাবতে ভাবতে অজান্তেই কখন যে দু’চোখ ভিঁজে গেছে বুঝতে পারিনি। চোখের জল মুছে নিচে গেলাম……
ছেলেটির ডায়েরী_
ওর হাত’টা ধরতেই ও চমকে উঠল। আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল। এদিকে চারদিক থেকে ফজরের নামাজের আযান ভেসে আসছিল। মায়া’কে নিচে আসতে বলে আমি চলে এলাম ছাদ থেকে। পরদিন সকাল হলো, সকাল গড়িয়ে দুপুর। মায়াকে একটা বারের জন্য দেখিনি। বিয়ে বাড়ির এত্ত কাজের মধ্যেও আমার দুটি চোখ কেন যেন ওকে’ই খুঁজছিল। ওকে না দেখতে পেয়ে ভেতর’টা কেমন যেন অস্থির লাগছিল। বোনকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করিনি, যদি উল্টা-পাল্টা বকার শুরু করে?! ওতো আবার একটু বেশীই ইচড়ে পাকা স্বভাবের। সবকিছুতেই এক লাইন বেশী বুঝে। দুপুরে আমার সব বন্ধুরা আমায় ধরে রেডি করে দিল। এদিকে বর আসারও সময় হয়ে গেছে। বিছানার বালিশের নিচে সকালে ফোন’টা রেখেছিলাম। ফোন’টা আনার জন্য রুমের দিকে ছুটে যাচ্ছিলাম আর কনুই উঁচু করে পাঞ্জাবীর হাতা ঠিক করতে করতে রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই একজন ‘উহ্’ করে উঠলাম। বুঝতে পারলাম আমার অসাবধানতায় কুনো’ই গুতো লেগে এমন’টি হয়েছে। চোখ বোজে স্যরি বলতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। এ যে কোনো এক অপ্সরী বধূবেশে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। কিন্তু এও কি সম্ভব?! স্বর্গের অপ্সরী কি মাটিতে আসে কখনো?!!! হয়তো, আসে। না হলে ও আসবে কিভাবে। চলে যাচ্ছিলাম ওকে পাশ কাটিয়ে। হঠাৎ মনে হলো মায়াপরী’টাতো এখনো চোখ বোজেই আছে। ওকে তো ভালো করে স্যরি বলাটাও হয়নি। স্যরি বলার জন্য এবার ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এবার আমার ঘোর কাটলো।
একি?! মায়া এখানে এই সাজে? এই সাজে তো বোনকে দেখেছি মাত্র। ঠিক একই রকম সাজে, শাড়ি, গহনা সবকিছু একই রকম।এবার ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
-‘ সেকি?! মায়া তুমি? তুমি বধূবেশে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ও চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো মায়া?! জবাব দাও। তুমি এ সাজে কেন?
-‘ স্যার ইয়ে মানে বলতে গিয়েও পুরোটা বলতে পারল না। তার আগেই আমার বোন ওকে ধরে টানতে লাগল। আমি বোনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়ে ‘থ’ হয়ে গেলাম। একি?! মায়া ছাড়াও বোনের ৫, পাঁচটা বান্ধবী একই সাজে বধূ বেশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর নিতে পারছিলাম। কেন জানি আমার মাথা’টা ঘুরছিল। মাথা ঘুরে পরে জ্ঞান হারালাম আমি…….
চলবে….