বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০২
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
ছেলেটির ডায়েরী_
অফিসের পুরনো হিসেবের খাতা’টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম গত তিন বছরের লাভ ক্ষতির ক্ষতিয়ান। কারন, গত তিন বছর পড়াশুনার স্বার্থে আমায় দেশের বাহিরে থাকতে হয়। এর আগে অবশ্য এখানে ৪বছর কাজ করে গেছি, সেটা অন্য বিষয়। পড়াশুনা শেষ করে দ্বিতীয়ববারের মতো আজ’ই প্রথম বাবার ব্যবসায়ে জয়েন করলাম। হঠাৎ করে’ই শুনতে পেলাম দরজার সামনে মেয়েলি কন্ঠে কেউ একজন বলছে, আসতে পারি স্যার? সামনের দিকে না তাকিয়েই বললাম- Yes, coming. তারপর আমি আবারো লাভ- ক্ষতির দেখতে লাগলাম। হঠাৎ করেই মনে হলো কেউ একজন যে রুমে এসেছে সে বাবার সিলেক্ট করা পি.এ মায়া নয়তো। অতি আগ্রহ নিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। কিন্তু একি?! এ যে সেই মেয়ে যাকে কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে একটু দুরে ছেড়ে দিয়ে আসছিলাম। ও এখানে কেন এসেছে? আর আমার অফিস’টায় বা চিনল কিভাবে? মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলাম-
‘ আপনি? আপনি এখানে কেন?’ মেয়েটি বেশ কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জবাব দিল-
‘ স্যার, আমি মাত্র’ই অফিসে এসেছি। এসে শুনলাম আপনি আমায় ডেকেছেন স্যার। তাই এলাম।’ তার মানে আপনি..?!!!!!
মেয়েটি আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল- স্যার, আমি মায়া। আমি ভ্রু-কুচকে বললাম, মানে আপনি আমার পি.এ মায়া?! মেয়েটি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। মেয়েটির আপাদমস্তক দেখে কেন যেন মনে হলো এই মেয়েটি খুব বেশী হলে ১৬ কি ১৭ বছরের পিচ্চি। এর বেশী নয়। যাকগে। ওকে বললাম, তা মিস/মিসেস মায়া কতদিন ধরে এমন ফাঁকি দেওয়া চলছে কাজে? আই মিন কতদিন ধরে কাজের প্রতি এই অবহেলা চলছে? মেয়েটি কান্না কান্না ভাব নিয়ে বলল- না, স্যার! আমি কখনো লেইট করি না। আজ’ই প্রথম লেইট হলো। প্লিজ স্যার আজকের জন্য মাফ করে দেন। আর কখনো এমন হবে না। আমি বললাম হুম, মাফ করে দিলাম আজকের জন্য’ই। এখন আসতে পারেন। মায়া চলে গেল।
মেয়েটির ডায়েরী_
স্যারের রুমের সামনে গিয়ে বললাম- আসতে পারি স্যার? রুম থেকে কেউ একজন বলল- Yes, coming. কেন জানি কন্ঠস্বর’টা খুব বেশী চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। বুকের ভিতর যে কম্পন’টা এতক্ষণ ধরে চলছিল, সেটি মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে গেল যখন দেখতে পেলাম বসের চেয়ারে বসে থাকা লোকটি আর কেউ নই। কিছুক্ষণ আগে যে যুবকটি আমায় হেল্প করেছিল এ সেই যুবক। কিন্তু এও কি সম্ভব? হয়তো সম্ভব! অবাক দৃষ্টি নিয়ে বসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম। যদিও ছুটে এসেছিলাম স্যরি বলার জন্য। কিন্তু এখানে যে আমার জন্য এত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে বুঝতে পারিনি। ২২বছরের জীবনে আজ’ই প্রথম এত বড় ধাক্কা’টা খেলাম। ৫মিনিট পর বস আমার দিকে তাকালেন। কিন্তু একি?! ওনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? ও বুঝেছি। আমার মত ওনিও টাস্কি খেয়েছে। ??
‘ আপনি? আপনি এখানে কেন? কিভাবে এসেছেন? এমন আরো কতগুলো প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলো আমার দিকে। একসাথে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তো আর সম্ভব না। তাই ছোট্ট করে উত্তর দিলাম, আমি মায়া। কলিগ মুক্তা আমায় পাঠিয়েছি। ওনি আমার শেষ করার আগেই ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকা করে প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলেন বোধ হয়, আপনি মায়া? তার আগেই আমিও ওনার কাছ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম, আমি মায়া। আপনার পি.এ মায়া। ওনি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে মুখটা কেমন যেন করল। তারপর কেন লেইট হলো, এই ফাঁকি কতদিন ধরে চলছে এসব প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন আমার দিকে। ?
আমি ভয়ে চুপসে গেলাম, কারন ওনার হাতে তখন কর্মচারীদের হাজিরা খাতা। বোধ হয় আমার নামের পাশে কলম ঘুরাচ্ছেন। তাই ভয়ে স্যরি বলে কৃতকর্মের জন্য মাফ চেয়ে নিলাম। খাতায় লেইট মার্ক উঠে গেলে আমি শেষ। কিন্তু না। ওনি খাতা’টা রেখে দিলেন। আর কখনো যাতে এমনটি না হয় সেটা বলে আমায় যেতে বললেন। আমি খুশিতে লাফিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। ?
ছেলেটির ডায়েরী_
মেয়েটিকে দেখে কাজের মনে হলেও কেন যেন ওর বয়স দেখে মনে হলো না ও কাজের যোগ্য। আর তাছাড়া এই চাকরী করার ক্ষেত্রে যে শিক্ষগত যোগ্যতা’টা থাকে সেটা আদৌ যে আছে সেটাই আমার সন্দেহ হচ্ছে। সে যায় হোক! দেখি এই মেয়ে কতটা কাজের। বাবার কথা তো আর পুরোপুরি মিথ্যে হতে পারে না…
সেদিন ১০টা বাজার আগেই অফিসে পৌঁছলাম। আসা মাত্রই সবাই নিজ নিজ আসন থেকে উঠে আমায় গুডমর্নিং ওয়িশ হলো। হঠাৎ—
একি?! এই মেয়ে তো দেখি আজ’ও লেইট করছে। তার মানে এই মেয়ে রোজ রোজ এমন করে। আজ আসুক, ওর চাকরীর বারো’টা বাজাবো। মনে মনে ভাবতে ভাবতে রুমে চলে গেলাম। আসার আগে বলে এলাম, মায়া আসার সাথে সাথেই সাথে আমার রুমে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো। মায়া আর আসল না। আমি তো রেগে আগুন। বাবা’কে না জানিয়েই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, এই মেয়েকে এর উপযুক্ত শাস্তি দিব’ই।
মেয়েটির ডায়েরী__
অফিসের খাটাখাটি শেষে বাসায় এসেও একদন্ড রেস্ট নিতে পারি না। মামির অসহনীয় অত্যাচার দিনকে দিন বাড়তে থাকে। তারউপর আবার কালকে অনার্স ৪র্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। যদিও অফিসের বড় কর্মকতার থেকে পারমিশন নেওয়ায় আছে পরীক্ষার দিনগুলোতে কাজে যেতে পারব না তবুও কেন যেন ভয় ভয় লাগছিল। মনে হচ্ছিল বসকে বলে আসলেই ভালো হতো। ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রান্না-বান্না করে রেডি হয়ে নিলাম পরীক্ষার জন্য। ১০টা থেকে পরীক্ষা। একটু আগেই যেতে হবে। দেখতে দেখতে সময় চলে গেল। পরীক্ষা দিয়ে এসে যেই না একটু বিছানায় গা এলিয়ে শুইলাম, ওমনি মামি এসে রাজ্যের ঝাড়ি ঝেড়ে নিলেন। ছুটে গেলাম রান্না ঘরের দিকে। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম। কাজ সেরে রান্না ঘর থেকে এসে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলাম। মনে মনে ভয় হচ্ছে, না জানি আগামীকাল অফিসে গিয়ে বসের কি ঝাড়িটায় না খেতে হয়…..
চলবে….
Nice