বসন্ত পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
29

#বসন্ত
#last_part
#writer_Nahida_islam

ফাতিহা ছেলেদে থেকে আরো সরে গিয়ে অন্য জায়গা দাড়াতে ই আবার ছেলে দুটো তার সামনে দাড়ায়। ফাতিহা বিরক্ত হয়ে রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে
–কি সমস্যা
মুরাদ তখন ফাতিহার হাত ধরে বলে দেখ রবিন মালটা আমাদের সমস্যা জিজ্ঞেস করছে। সমস্যা তো তুমি মামুনি।
মুরাদ ফাতিহার হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলতে গেলে ফাতিহার চিৎকারে অনেক মানুষের জড়ো হয়ে যায়। পরিস্থিতি আয়ত্তে নাই বুঝতে পেরে ফাতিহার দিকে বন্ধুক তাক। ফাতিহা উঠে চলে যেতে নিলে গুলি করে তিনটা। দুইটা ফাতিহার শরীরে লাগে। একটা গুলি প্রাইভেট কারের চাকায় লাগে। দুইটা গুলি ই পেটে লাগে।
উপস্থিত মানুষ মুরাদকে সাথে সাথে ধরে ফেলে। গাড়ির চাকায় গুলি লাগার কারণে সে আর পালাতে পারেনি।

চোখ খুলতে ই নিজের হাতে কেউ শক্ত করে ধরে আছে মনে হচ্ছে। চোখ খুলে ডান দিকে তাকতে ই দেখি তন্ময়। আমার হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। চোখ মুখ ফোলে আছে। অবস্থা এমন দেখে প্রশ্ন করলাম,
–কি হয়েছে আপনার।
প্রশ্ন করতে ই চোখের পানি লুকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

–ফাতিহা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো। যদিও গুলো বেরিয়ে গেছে এখন আশংকা মুক্ত আছো তাও বার বার বলা শর্তে ও তুমি গাড়ি নিয়ে যাওনি কেনো?
–এভাবে ঝাপটে ধরলে তো শ্বাস বন্ধ হয়ে সত্যি ই মরে যাবো।
তন্ময় নিজেকে আমার থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে বললো,
–মুরাদ আমার বিজনেস পার্টনার ছিলো তার অসৎ ও নোংরা চরিত্রের কারণে তাকে আমি পার্টার হিসেবে নেইনি। তার ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার কারণে আমাকে দোষী মনে করে। একদিন তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে ছিলাম। তা মারামারির পর্যায় চলে গিয়েছিলো। সেদিন সে বলেছিলো সে আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কেড়ে নিবে। কিন্তু তোমার দিকে হাত বাড়াবে তা ভাবিনি।

–মরে গেলে ই তো ভালো ছিলো আপনার আর টেনশন থাকতো না কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়ার পর এতোগুলো টাকা ও দিতে হবে না।

—তুমি বললে আমার জান দিতেমও প্রস্তুত। আর এ তো সামান্য টাকা।

দরজায় নক করতে ই তন্ময় কেবিনের দরজা খুলে দেয়। দেখলাম তন্ময়ের মা এবং বোন এসেছে।
–কি অবস্থা মা এখন কেমন আছো?
–এইতো ভালো।
–আমার ছেলে টাকে দেখো তোমার জন্য সেই গতকাল থেকে এখানে বসে আছে খাওয়া দাওয়া ঘুম গোসল কিছু ই নাই। বার বার বলেছি আমি থাকি তুই বাসায় যা কিন্তু না তার এক কথা বাসায় যেতে হলে তোমাকে নিয়ে ই যাবে। মা আমি না থাকলে ও আমার ছেলেটাকে তুমি কষ্ট দিও না।
____________________________
ফাতিহা বাসায় ফিরেছে। এখন প্রায় সুস্থ ই। কন্টাক্টের তিন মাস প্রায় হয়ে গেছে। তন্ময় বেডে শুয়ে শুয়ে অফিসের কাজ করছে। ফাতিহা লাগেজ বের করে জামাকাপড় ঘুচাতে দেখে প্রশ্ন করলো,
–ফাতিহা হানিমুনে যাওয়ার জন্য ব্যাগ ঘুচাচ্ছো নাকি। বিয়ের তো অনেক দিন হলো আমার শার্ট প্যান্ট ও নিয়ে নিও। বিয়ের তো অনেকদিন হলো চলো হানিমুনে যাই।
ফাতিহা শান্তভাবে উত্তর দিলো ,

–কন্ট্রাক্টের সময় শেষ এটা মেনে আছে তো। আমি চলে যাচ্ছি।
কথাটা বলার সাথে সাথে তন্ময় উঠে ড্রায়ার থেকে কন্ট্রাক্ট পেপার বের করে ছিড়ে ফাতিহার উপর উড়িয়ে দেয়।

ফাতিহা রাগ করে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে
–এটা কি করলেন। আপনি এটা কি করলেন?
তন্ময় ফাতিহার দুইহাত একসাথে করে ডানহাত দিয়ে দেওয়ালে চেপে ধরে। ফাতিহার অনেকটা কাছে চলে যায়। দুজন দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

–ছাড়ুন আমাকে।
–ছাড়বো না কি করবে তুমি। তোমার অনেল শক্তি বেড়ে গেছে তাই না।অনেক শক্তির অধিকারী হয়ে গেছো তাই না। পালরে নিজেকে আমার থেকে ছাড়াও।
–আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন প্লিজ।

–কি চাচ্ছো ফাতিহা আমি তোমাকে ভালোবাসি। এটা বুঝতে পেরে কি এখন আমাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছো।
–বিয়েটা তো আর ভালোবেসে করেনি।
–যেভাবে ই হক করেছি তো। বিয়ে তো হয়ে গেছে। এখন প্লিজ তুমি এসব পাগলামি করো না।
–ব্যথা পাচ্ছি আমি আমাকে ছাড়ুন।
তন্ময় ফাতিহাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে বললো,
–যদি যেতে চাও তাহলে আমার লা-শের উপর দিয়ে যেতে হবে ফাতিহা।

ফাতিহা এবার তন্ময়ের কলার চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
–আপনার যখন যেভাবে ইচ্ছে আমাকে নাচাবেন। যখন বিয়ে করতে ইচ্ছে করেছেন। বিয়ে আগে বলেছেন তিন মাসের চুক্তিতে বিয়ে। বিয়ের পরে বলেছেন আপানর মায়ের জন্য বিয়ে করেছেন। এখন আবার বলছেন ভালোবাসেন। আপনি রংধনুর মতো রং কেন বদলান। আমাকে সস্তা পেয়েছেন বলে ই এভাবে নাচাচ্ছেন। কারণ আমি অনাথ। আমার বাবা নেই। যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।
তন্ময় এভার ফাতিহার পা জড়িয়ে ধরে বললো,
–ফাতিহা আমাকে ছেড় যেয়ো না। আমি ভুল করেছি আমাকে মাফ করো প্লিজ। ছেড়ে যাওয়া কোনো সমাধান হতে পারে না। ঋতুর রাজা যেমন বসন্ত। বসন্ত যেমন বাহারি রংয়ের ফুলের আগমন নিয়ে আসে। তেমনে আমার জীবনে তুমি ভালোবাসার বার্তা নিয়ে এসেছো।তুমি আমার জীবনের বসন্ত।
এভবে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর বললো,

–মাফ করতে পারি একটা শর্তে?
তন্ময় দাড়িয়ে বললো,

–কি?

–সিগারেট খাওয়া ছাড়তে হবে, অবন্তীর মুখও দর্শন করা যাবে না। আর আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে।
কথাটা শুনতে দেরি তন্ময় ফাতিহাকে জড়িয়ে ধরতে দেরি করেনি। জড়িয়ে ধরে ফাতিহার কপালে চুমু একে বললো, তোমার সব শর্তে রাজি। শুধু তুমি আমার হয়ে থাকো……

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে