বসন্ত পর্ব-০২

0
59

#বসন্ত
#part_2
#writer_Nahida_islam

ফাতিহা তন্ময়ের হাত ধরে জোরে টান দেয় তন্ময়ও তার হাত নিজের দিকে টান দিলে টাল সামলাতে না পেরে ফাতিহা তন্ময়ের উপরে পড়ে যায়,এমন ভাবে পড়ে ঠোঁট ঠোঁট লেগে যায়।

এমন ঘটনায় ফাতিহা তন্ময় দুজনই বেশ লজ্জা পেয়ে দুজন থেকে আলাদা হয়ে যায়। ফাতিহা কথা না বাড়িয়ে সোফা গিয়ে শুয়ে পড়ে।

সকালে ঘুম ভাঙ্গে ফাতিহার মোবাইলের কলে শব্দে। ঘুম ঘুম চোখে কল রিসিভ করতে ই অপর পাশ থেকে তন্ময়ের মায়ের কন্ঠ ভেসে আসে।
–ফাতিহা তোমার মায়ের অবস্থা অনেক খারাপ আমি হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি তুমি তন্ময়কে নিয়ে হসপিটালে আসো।
আমি দ্রুত উঠে জামা চেঞ্জ করে বাসা থেকে একা ই বের হয়ে যাই।
ফাতিহাকে এভাবে যেতে দেখে তন্ময় কৌতূহল বসত উঠে ফাতিহার পিছু নেয়।

মায়ের কিছু হলে আমি একেবারে অনাথ হয়ে যাবো। পৃথিবীতে আমার আর কেউ থাকবে না। আমরা ভাড়া বাসায় থাকতাম, যে ভাড়া বাসায় থাকতাম ঐখানে ও পাঁচ মাসের ভাড়া বাকি আছে। গতকাল মা বাসায় চলে যেতে চাইলে ও তন্ময়ের মা উনার বাসায় রেখে দিয়েছে, কারণ উনি একা দেখাশোনা করার মতো একমাত্র আমি ই ছিলাম। আমার বিয়ে হয়ে যাওয়াতে মাকে দেখাশোনা করার মতো আর কেউ রইলো না।বাবার মৃত্যুর পর যা ছিলো সব বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসা করিয়েছি। এতে কোনো আক্ষেপ নেই তবুও মা বেঁচে থাকুক

হসপিটালের সামনে গাড়ি থামতে ই আমি দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে প্রবেশ করে আমার পা আর চলছে না কিছুদূর যেতে ই তন্ময়ের মাকে চোখে পড়লো সাথে দেখলাম আমার মাকে একটা সাদা কাপড় দিয়ে সারা শরীর ঢেকে রেখেছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না আমার মা নেই।
________________________________
দুই মাস পর,
ফাতিহার মায়ের মৃত্যু পর ফাতিহা তার চঞ্চলতা হারিয়ে ফেলেছে। যদিও এখন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। তন্ময় বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ লক্ষ করছে ফাতিহা এক জায়গায় চুপ হয়ে বসে আছে কিছুটা নিচু হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–মিস ফাতিহা কি ভাবছেন বলা যাবে?
—আপনাকে বলার জন্য ই তো ভাবছি। শুনোন তাহলে, আপনার তিন মাসের কন্ট্রাক্ট প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই আগে থেকে ডিভোর্স পেপার রেডি করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
কথাটা শুনে তন্ময় কিছুটা হাসি দিয়ে ফাতিহাকে কোলে তুলে বেডে বসিয়ে দিলো। বেডে বসিয়ে ফাতিহার কুলে মাথা রেখে বললো,

–এতো তাড়াতাড়ি বেবি আরো তো এক মাস।
আপনার এই আমার সাথে লেপ্টে থাকার অভ্যাসটা গেলো না?
–তুমি চলে গেলে তোমার অভ্যাস ও চলে যাবে। এখন আমাকে একটু আরাম করতে দাও।

ফাতিহা তন্ময়ের মাথায় জোরে ধাক্কা দিয়ে নিছে ফেলে দেয়। তন্ময় ও জোরে ফাতিহাকে হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকে উপর নিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
—শক্তি থাকলে আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দেখাও।
ফাতিহা যত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে তন্ময় আরো শক্ত করে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। এক পর্যায় ফাতিহা নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে শান্ত হয়ে যায়।

–পারলে না তো ফাতিহা। চিন্তা করো সামন্য ধরেছি এটা ই নিজেকে ছাড়াতে পারলে না। বেশি করে খাবে তাহলে শক্তি হবে।
এটা বলে তন্ময় ফাতিহা ছেড়ে দেয়। ফাতিয়া উঠে সবগুলো বালিশ তন্ময়ের দিকে ছুড়ে মারে।

এই দুই মাসে তন্ময় অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে শয়তানি ভাব কিছুটা কমেছে। ফাতিহা আর তন্ময় দুজনে ই বেডে থাকে মাঝখানে বর্ডার হিসেবে কোলবালিশ ব্যবহার করে।
সকাল দশটা অনবরত বাসার কলিং বেল বাজছে। তন্ময় ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে চা খাচ্ছে। এখন ই অফিসে যাবে চা শেষ করে। ফাতিহা এখনও ঘুম থেকে উঠেনি। কিন্তু কলিং বেলে শব্দ ঘুম ভেঙ্গেছে। ফাতিহার বেশ রাগ হচ্ছে এতো শান্তির ঘুমটা কে নষ্ট করেছে তা দেখতে ফাতিহা ঘুম ঘুম চোখে নিচে নামতে ই দেখে অবন্তী এসেছে। অবন্তীকে দেখে ফাতিহার মাথা গরম হয়ে গেছে। অবন্তী তন্ময়ের অনেকটা কাছাকাছি বসেছে। ফাতিহাকে দেখে আরো কাছাকাছি গিয় বসলো। ফাতিহা এটা দেখে সোজা গিয়ে তন্ময়ের কোলে গিয়ে বসে বলতে শুরু করলো,
–বেবি আমাকে কেন ঘুম থেকে উঠাওনি। তুমি ঠোঁট চুমু না দিলে আমার ঘুম ভাঙ্গে না জানো না।বেবি এখন চুমু দেও প্লিজ।
ফাতিহা দুই হাতে তন্ময়ের গলা জড়িয়ে ধরে বসে মুখ উচু করে রেখে বলতেছে চুমু দেওয়ার জন্য।
তন্ময়ের অনেক হাসি পাচ্ছে। সে কোনো রকম হাসি চেপে রেখেছে। অবন্তী জন্য যে এই নাটকগুলো করছে তা তন্ময় বেশ ভালো ই বুঝতে পারছে। যেদিন থেকে ফাতিহা বুঝতে পেরেছে অবন্তী তন্ময়কে বিয়ে করতে চায় ঐদিন থেকে অবন্তী বাসায় আসলে একটা না একটা কান্ড ঘটায়। কিন্তু আজকে একটু বেশি ই করছে।
–বেবি তুমি কি বাহিরের মানুষের সামনে আমাকে চুমু দিতে লজ্জা পাচ্ছো তাহলে থাক রুমে গিয়ে দিও।
তন্ময় হেসে বললো,
–না না বেবি আমি ভয় পাচ্ছি না, এখন ই দিচ্ছি
এটা বলার সাথে সাথে ফাতিহা তন্ময়ে পিঠে চিমটি কাটে।
তন্ময় ফাতিহার কানে কানে বলে,
–সুযোগ পেয়েছি মিস করবো কেনো চিমটি দিলে কাজ হবে না বেবি।
তন্ময় চুমু দিতে যাবে ঠিক সেই সময় ফাতিহা তন্ময়ের মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,
–বেবি আমি তো পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। হৃদয় পোড়া গন্ধ তুমি পাচ্ছো না এই বলে অবন্তী সরিয়ে মাঝখানে বসে পড়ে।
অবন্তী এতোক্ষণ সব কাহিনী দেখে ভেতর ভেতর জ্বলে যাচ্ছে। যদি পাড়তো ফাতিহাকে এক থাপ্পড় দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিতো। নিজের রাগ ভেতরে চেপে রেখে বললো,
–চল তন্ময়ের অফিসে যাই সময় তো প্রায় অনেকটা পার হয়ে গেছে।
তন্ময় কিছু বলার আগে ই ফাতিহা বললো,
–তন্ময় পরে যাবে কাজ আছে আপনি আগে যান।
অবন্তী কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। অবন্তী বের হতে ই তন্ময় ফাতিহাকে জিজ্ঞেস করে,
–তুমি কি জেলাস?
—না
–ফাতিহা তোমার মনে এক মুখে আরেক নয়তো?
ফাতিহা কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে নিলে তন্ময় হাত ধরে ফেলে।

–পালাচ্ছো তুমি।
–না আমাকে ছাড়ুন।
–প্রশ্নের উত্তর দেও ছেড়ে দিচ্ছি।
–তাহলে শুনোন আমি যাওয়ার পর যেনো সে আপনাকে বিয়ে না করে তাই এমন করছি। যেনো আপনার থেকে দূরে থাকে।

–এতে তোমার লাভ কি
–এতো কিছু বলতে পারবো না
বলে ই দৌড়ে উপরে চলে যায়। তন্ময় অফিসে চলে গেলে ফাতিহা কলেজে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে। ফাতিহা পাবলিক গাড়িতে যাতায়েত করে। তন্ময় হাজার বলা শর্তে ও তার গাড়ি ব্যবহার করে না।
কলেজে ক্লাস শেষ করে যখন গাড়ির জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো তখন ই সামনে প্রাইভেট কার থেকে নেমে দুটো ছেলে ফাতিহার সামনে দাড়ায়। ফাতিহা ছেলেদে থেকে আরো সরে গিয়ে অন্য জায়গা দাড়াতে ই আবার ছেলে দুটো তার সামনে দাড়ায়। ফাতিহা বিরক্ত হয়ে রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে
–কি সমস্যা
মুরাদ তখন ফাতিহার হাত ধরে বলে দেখ রবিন মালটা আমাদের সমস্যা জিজ্ঞেস করছে। সমস্যা তো তুমি মামুনি………

[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে