বসন্ত পর্ব-০১

0
99

#বসন্ত
#part_1
#writer_Nahida_islam

বিয়ের কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করা শেষ করে ই কেবল আমার সামনে আসবে মিস ফাতিহা, টেবিলে উপর চোখ দিয়ে দেখো কন্টাক্ট পেপার রাখা আছে। আগে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করবে তারপর বিয়ের বাকি কাজ শেষ করবো।
ফাতিহার মুখে রাগের ভাব স্পষ্ট ফুটে উঠলে ও নিজেকে যথেষ্ট সংযত করে বললো,
মিস্টার উদয় আপনি কি বিয়ের জন্য আর কোনো মেয়ে খোঁজে পান নাই। আমাকে ই কেন?
তন্ময় ফাতিহার দিকে কিছুটা ঝুঁকে আস্তে করে বললো
— না পাই না।
ফাতিহা কিছুটা দূরে গিয়ে বললো,
— আপনার মত বদ স্বার্থপর শয়তান আমি জীবনে ও দেখিনি। শুধু টাকার প্রয়োজন বলে নয়তো আপনার মত অহংকারি স্বার্থপর মানুষের মুখ ও আমি জীবনে কোনোদিন দেখতাম না।
__এখন থেকে রোজ দেখবা।
ফাতিহা কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে তন্ময়ের হাতে দিয়ে বললো,

— দশ নাম্বার পয়েন্ট মনে রাখবেন মিনিমাম তিন মিটার দূরত্ব বজায় রাখবেন।
তন্ময় মুখো একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
–তোমার মতো মেয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই মিস ফাতিহা। নিজেকে সুন্দরী ভাবা বন্ধ করো।

–এমন ভাবে বলছেন যেনো আপনাকে আমার বেশ পছন্দ। আপনাকে দেখে ই
কথাটা শেষ করার আগে ই তন্ময়ের মা রুমে নক করে।
–ফাতিহা মা তোমাদের কথা বলা শেষ হলে চলো কাজী সাহেব অপেক্ষা করছে।
আমি তন্ময়ের মায়ের সাথে নিচে যেতে ই আমার মায়ের দিকে চোখ পড়লো হুইল চেয়ারে বসে আছে। দ্রুত গিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–কষ্ট হচ্ছে মা? আপনার কষ্ট হলে বলেন হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–তুমি বিয়ে করছো আমি যে দেখে যেতে পারছি এটা ই আমার জীবনের শেষ পাওয়া। আমার আর কোনো আক্ষেপ নাই মা। কষ্ট হবে কেনো আজকে সবচেয়ে সুখের দিন।
মায়ের দুটি কিনডি ই নষ্ট। বেচে থাকার চান্স কম। মায়ের জন্য ই আমার এই তন্ময়ের কন্ট্রাক্টে রাজি হওয়া। হসপিটাল বিল মায়ের ডায়ালাইসিস ঔষুধে বিল দিতে আমি অপারগ। যখন একটা চাকুরী পাগল হয়ে খুজছিলাম তখন তন্ময়ের সাথে দেখা। পৃথিবীতে মা ছাড়া কেউ নেই। তাই অনিচ্ছা থাকা শর্তে ও আমি রাজি হয়েছি।
–বিয়ে শেষ করে পরে যা ভাবনা আছে সব ভেবে নিয়ো তোমার জন্য এতো এতো গেস্ট সব তো বসে থাকবে না।
বিয়ের সকল কাজ সম্পূর্ণ করার পর তন্ময়কে আর আমাকে একসাথে সোফায় বসিয়েছে।
–গায়ের সাথে এমন লেপ্টে বসছেন কেন কন্ট্রাক্টের কথা মনে নেই তিন মিটার দূরত্ব বজায় রাখবেন।
তন্ময় আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো। রাগ আমার মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে। এই ছেলেকে বললাম দূরে যেতে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাল।

-আপনার এটা হাত না লোহা। আমাকে এতো জোরে ধাক্কা দিলেন কেনো কন্ট্রাক্টে কোথায় লিখা ছিলো আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাবেন?

–চুপচাপ থাকো নতুন বউ এতো কথা বলতে হয় না।
-ধাক্কা দিলেন কেনো এটা বলেন আর আপনার সাথে আমি কথা বলতে চাই ও না।

— বেশ করেছি আরকেটা কথা বললে আবার ধাক্কা দিয়ে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো।
–শয়তান, ধলা মুলা, বজ্জাতে হাড্ডি। কোন কুক্ষণে যে আপনার সাথে আমার দেখা হলো।
তন্ময়রে বোন অর্পা মিষ্টি নিয়ে আসছে, এসে আমার কানে কানে বলছে,
–ভাবি বাকি কথা তোমাদের বাসর রাতের জন্য রেখে দেও। এখন এই মিষ্টি দুজন দুজনে খাওয়াতে হয়। এটা একটা নিয়ম। তাহলে সবসময় তোমদের সম্পর্ক মিষ্টি থাকবে।

–এই এই বদ লোককে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে পারবো না।
কথাটা বলার সাথে সাথে তন্ময় আস্তে আস্তে আমার কানের কাছে এসে বললো,
— কন্ট্রাক্ট লিখা ছিলো সব নিয়ম মানবে দ্রুত সব শেষ করো এখান থেকে আমাকে বাসায় ফিরতে হবে, তোমার কোনো কাজ নাই বা থাকতে পারে আমার কাজ ঠিক ই আছে।
বাধ্য হয়ে দুজন দুজনকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো। এটা তন্ময়ের মায়ের ফ্ল্যাট। তন্ময়ের নিজের বাসা আছে যেখানে সে একা থাকে। আজ থেকে ফাতিহাকে নিয়ে ও তন্ময় তার নিজের বাসায় থাকবে। সব কাজ শেষ করে তন্ময় ফাতিহাকে নিয়ে বের হয়ে যায়। গাড়িতে দুজন ই নিশ্চুপ। হঠাৎ ফাতিহা বলে উঠলো,

–মুখটা তেঁতো হয়ে আছে। এমন তেঁতো বিস্বাদের মিষ্টি আমি জীবনেও খাইনি।
আমার কথা শুনার সাথে সাথে গাড়ির থামিয়ে দিলো এতো স্পিডে মধ্যে হঠাৎ গাড়ি থামানোর কারনে টাল সামলাতে না পেরে আমার মাথায় আঘাত লাগে।
–এই মেয়ে সিট বেল পড়লে না কেনো দেখলে তো এখন মাথায় লাগলো। বাচ্চা নাকি তুমি এইটুকু খেয়লা নেই।
কথাটা বলে ই তন্ময় আমার কপালে হাত দিতে গেলে আমি হাত সরিয়ে দেই। তন্ময় আমার দুহাত তার এক হাতে মধ্যে নিয়ে আমার কপালে হাত দিলে ম্যাসাজ করে দিলো। তন্ময় অনেকটা কাছে চলে এসেছে তার নিশ্বাস শব্দ শুনতে পাচ্ছি। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
–আমার অস্বস্তি হচ্ছে আপনি দূরে সরুন।
তন্ময় আমার সিট বেট লাগিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে। বিশাল এক বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো। পুরো বাড়ির সামনে অনেক গার্ড। আমাদের গাড়ি ডুকার সাথে সাথে আরো তিনটা গাড়ি ডুকলে। বুঝলাম ঐসব গাড়িতে গার্ডরা আছে। এতো বডিগার্ড রেখে কি করে। আর এতো বডিগার্ড থাকবে না ই বা কেনো এতো বড় বিজনেস ম্যান। যাকগে এসব ভেবে আমার লাভ নেই।

–হেটে ভেতরে ডুকবে নাকি কোলে করে নিবো?
তন্ময় দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে ই হেটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করলাম। চারদিকে চোখ বুলাতে ই দেখলাম সবকিছু পরিপাটি। খুব সুন্দর করে সাজানো।
–যাও ফ্রেশ হয়ে নেও। উপরে আলমারিতে তোমার জন্য জামাকাপড় রাখা আছে যেটা পছন্দ পড়ে নেও।
তন্ময়ের কথা শুনে ও না শোনার বান করে উপরে উঠতে গেলাম হঠাৎ লেহেঙ্গা সাথে পা জড়িয়ে প্রথম সিঁড়িতে ই পড়ে গেলাম। পায়ে চুটটা বেশ ভালোই লেগেছে সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে।

__এই মেয়ে তোমার কি নিজের প্রতি কোনো খেয়াল নেই। পায়ে কি খুব বেশি লেগেছে?

__প্লিজ আপনি আমার পায়ে ধরবেন না, আমি ব্যথা পেয়েছি আমি ঠিক নিজেকে সামলে নিতে পারবো।
–বেশি পাকামো করো না, হাত সরাও দেখি।

_______________________________
সিগারেট ধোঁয়া উপরের দিকে উড়িয়ে মুরাদ রবিনকে জিজ্ঞেস করছে,
–তন্ময়ের পাখিটাকে আমার চাই হয় জীবিত নয় মৃত।
–ভাই আপনার টার্গেট তো তন্ময় ছিলো হঠাৎ তার বউয়ের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন কেনো?

কথাটা বলার সাথে সাথে থাপ্পড়টা এসে রবিনের গালে পড়ে,
–তোকে এতো কৈফিয়ত দিবো আমি? কাজ করতে বলছি কাজ কর।

রবিন উল্টো কোনো কথা বলার সাহস করে না, জানে মুরাদ যা বলে তা যেকোনো কিছু বিনিময়ে তা নিজের করে নেয়।

অবন্তী তার ওয়ালপেপার দিকে তাকিয়ে আছে, তন্ময়ের হাস্যউজ্জ্বল ছবির দিকে তাকালে মনে প্রশান্তি ছুয়ে যায় কিন্তু পরোক্ষনে ই মনে হয় সে তো আজ বিয়ে করেছে অন্য কাউকে। হয়তো কখনো মুখফুটে ভালোবাসার কথা বলেনি তবে স্কুল লাইফ থেকে ই অবন্তী তন্ময় ভালোবাসা। দুজন এখনও বিজনেস পার্টনার হিসেবে আছে। হাজার বার বুঝাবো শর্তে ও তন্ময় তার মনের কথা বুঝতে পারে না। তবে অবন্তী ও হাল ছাড়ার মানুষ নয়। শেষ পর্যন্ত তন্ময়কে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে।

রাত প্রায় দুইটা বাজে। ফাতিহা আর তন্ময় বেডে থাকা ফুলগুলো খুলছে, আর্পা শখ করে বাসার ঘর সাজিয়ে ছিলো কিন্তু এসব তাদের কাছে মূল্যহীন তাই সব ফুল খুলে ফেলছে,
—ফাতিহা তুমি কত কেজি?
তন্ময়ের এমন প্রশ্নে ফাতিহা কিছুটা হাসি পাচ্ছে।
তখন পায়ে ব্যথা লাগার কারণে তন্ময় কোলে তুলে উপরে আনে। হাসি চেপে রেখে বললাম,
—দুইশো
— দুইশো হলে ফাতিহা না বলে বলতাম হাতি তুমি কত কেজি?
বিছার সব ফুল নামিয়ে পরিষ্কার করার পর তন্ময় বিছানায় শুয়ে পড়ে। ফাতিহা এটা দেখে বলে,
–আপনি নিচে শুবেন আমি বিছানায় ঘুমাবো।
–মামা বাড়ির আবদার। নিচে ঘুমালে ঘুমাও নয়তো দাড়িয়ে থাকো।

ফাতিহা তন্ময়ের হাত ধরে জোরে টান দেয় তন্ময়ও তার হাত নিজের দিকে টান দিলে টাল সামলাতে না পেরে ফাতিহা তন্ময়ের উপরে পড়ে যায়,এমন ভাবে পড়ে ঠোঁট ঠোঁট লেগে যায়……..
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে