বসন্তের একদিন পর্ব-১২

0
1101

#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফিরে তিথি।তিথি ফেরার কিছুক্ষণ পর তৃধা তিথির রুমে আসে।তিথি তখন ফোন চালাচ্ছিলো।

” তুমি কোথা থেকে এসেছো তিথি?” গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে তৃধা।

” আবারো তুমি সেইম প্রশ্ন করছো।” বিরক্তি নিয়ে বলে তিথি।

” তোমাকে যা জিজ্ঞেস করছি সেটার উওর দাও।”

” কোচিং এ গিয়েছিলাম।”

” আর কত মিথ্যা কথা বলবে তিথি?”

” মিথ্যা কথা মানে?” কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে তিথি।

” দেখো তিথি আমি তোমাকে সোজাসুজি বলছি তোমার কোচিং থেকে ফোন এসেছিল তেজবীনের কাছে।কিন্তু সে সময় তেজবীন না থাকায় আমিই ফোনটা ধরে ছিলাম।আর উনি বলেছেন তুমি আজ কোচিং-এ যাওনি।”

” ওই আসলে আসলে আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম।আসলে ও কোচিং-এ যাওয়ার সময় রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।”

” আচ্ছা।তো সে কি প্রতিদিনই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো?”

” মা.নে..?”

” উনি বলেছে তুমি এই সপ্তাহে শুধু একদিনই কোচিং-এ গিয়েছিলে।যদি তুমি একদিনই কোচিং-এ যেয়ে থাকো তাহলে বাকি ছয়দিন কোথায় গিয়েছিলে?”

” সেটা আমি তোমাকে কেন বলবো?শোন তুমি আমার বড় ভাইয়ের বউ।সো ভাইয়ের বউ হিসেবেই থাকো।আমার গার্ডিয়ান হতে এসেনা।আমার যেখানে ইচ্ছে আমি সেখানে যাবো তাতে তোমার এতো সমস্যা কেন?আমি কি তোমার টাকায় চলছি নাকি তোমার টাকায় পড়াশোনা করছি?করছি নাতো তাহলে নিজেন চরকায় তেল দাও।আমাকে জ্ঞান দিতে এসোনা।যাও এখন এখান থেকে।”

তিথি আবারো ফোন দেখতে শুরু করে।তৃধা বুঝতে পেরে যায় সে রাস্তায় যাকে দেখেছিলো ওটা আসলেই তিথি ছিলো,সে কোন ভুল দেখেনি।

” এবার যা করার আমাকেই করতে হবে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে খোঁজ নিতে হবে তিথি কোচিং না গিয়ে কোথায় যায়।আর ওই ছেলেটাই বা কে।”
____________________________________________

তৃধার বাড়িতে তার এক দূর সম্পর্কে চাচী শাশুড়ী এসেছেন।ফাতেমা বেগম ওনার সাথে বসে গল্প করছেন।তৃধা ট্রে তে করে নাস্তা নিয়ে এসে টেবিলে রাখে।

” তা ফাতেমা শুনলাম তোমার বউমা নাকি চাকরি করে?” চা খেতে খেতে মহিলাটা বলে।

” হ্যাঁ ওই আরকি।”

” তো বেতন কি এনে তোমাকে দেয় নাকি সব বকবা-মাকেই দিয়ে দেয়?”

” আর বেতন।” মুখ বাঁকা করে বলেন ফাতেমা বেগম।

” শোন ফাতেমা বউকে সামলে রেখো বলাতো যায় না কখন আবার কি ঘটিয়ে বসে।বউদের এতো ছাড় দিতে নেয়।এতো ছাড় দিলে ওরা মাথায় চড়ে বসবে।আমার বউমাকে তো আমি প্রথম থেকে শাসনে রেখেছি।আমার কথার বাইরে সে একচুলও নড়তে পারেনা।এদের ছাড় দিলে এরা আমাদের উপরই রাজত্ব করতে চাই।”

” তা যা বলো।কিন্তু কি করবো বলো বউ কি আর আমার কথা শুনে?সে তো নিজের মতোই কাজ করে।আমি তো চেয়েছিলাম যেন চাকরিটা সে না করে কিন্তু কে শোনে কার কথা।সে তো আর কথা অমান্য করে চাকরি করছে।দুঃখের কথা আর কি বলবো বললো কত আশা করেছিলাম একটা ভালো সুন্দর,সুশীল বউমা পাবো।কিন্তু আমার পোড়া কপাল যে এই মেয়ে আমার বাড়ির বউ হলো।”

এতোক্ষণ রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিলো তৃধা।সে আর চুপচাপ থাকতে না পেরে বেড়িয়ে আসে।

” যদি এখন আমি বলি পোড়া কপাল আপনার না আমার যে আপনার মতো শাশুড়ী পেয়েছি তখন?আর চাচী বাড়ির বউমা কোন ফেলনা বা পুতুল নয় যে তাদের উপর সবসময় হুকুম জারি করে থাকবেন।তারাও মানুষ।আর আপনারাও তো একসময় কারো বাড়ির বউ ছিলেন,তাহলে কেন শাশুড়ী হওয়ার পর বউমাদের কষ্টটা ভুলে যান?আপনি যেমন কখনো চাইবেন না যে আপনার সংসারে অন্যকেউ রাজত্ব করুক তেমনি সেও তা চাইবেনা।বাড়ির বউদের সম্মান দিতে শিখুন,তাদের উপর জামিদারি করতে নয়।আরে বসে আছেন কেন চা-নাস্তা খান না।কথা বলুন আপনারা,আমার না কিছু কাজ আছে।”

একটা হাসি দিয়ে তৃধা চলে যায়।তৃধার কথাগুলো শুনে ফাতেমা বেগম এবং ওই মহিলা অপমানবোধ করে।

তিথির রুমে পানি দিতে এসে তৃধা দেখে তিথি রুমে নেই।তিথিকে রুমে দেখতে না পেয়ে তৃধা খুশি হয়ে যায়।

” এই সুযোগ আমাকে তাড়াতাড়িই ওই ছেলেটা সম্পর্কে জানতে হবে।”

তৃধা পানির মগটা টেবিলে রেখে তিথির মোবাইলটা খুঁজতে শুরু করে।তবে তৃধাকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি।একটু খোজা খুঁজি করেই তৃধা তিথির ফোনটা তার বালিশের নিচে থেকে পেয়ে যায়।তৃধা তাড়াতাড়ি ফোনটা ওপেন করে কিন্তু হায় ফোনে পাসওয়ার্ড দেওয়া।তবে এটা দেখে তৃধা হতাশ হয়না।তৃধা নানান ধরনেরপার্সওয়াড ব্যবহার করে ফোনটা খোলার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু পারেনা আর একসময় আর কোন পাসওয়ার্ডও দেওয়া যায়না।

” ধুর ফোনটা হাতে পেয়েও কিছু করতে পারছিনা শুধু এই পাসওয়ার্ড থাকার কারণে।আমাকে যে করেই হোক তিথির থেকে ওর পাসওয়ার্ডটা জানতেই হবে।”

এরমধ্যে তৃধা বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পাই।তৃধা তাড়াতাড়ি ফোনটা আবারো বালিশের নিচে রেখে দেয়।

” তুমি আমার রুমে কি করছো?” কিছুটা রেগে বলে তিথি।

” আসলে পানি দিতে এসেছিলাম।”

” দেওয়া হয়ে গিয়েছে?যাও এবার।”

তৃধা তিথির রুম থেকে বেরিয়ে আসে তবে সে মনে মনে এখনো আপসোস করছে যে ফোনটা হাতে পেয়েও সে কিছু করতে পারলোনা।
____________________________________________

” নন্দু,এই নন্দু।” রুদ্র বলে।

” কি হয়েছে কি?দেখছো না আমি টিভি দেখছি।”

” সেটা তো দেখছি।তবে আমার এখন চা খেতে ইচ্ছে করছে।আমার জন্য এককাপ চা করে নিয়ে এসোতো।”

” পারবোনা আমি।খেতে ইচ্ছে করলে নিজেই বানিয়ে নাও।তোমার চা বানানোর জন্য আমি আমার সিরিয়াল মিস করতে পারবোনা।”

” সারাদিন তো সিরিয়ালই দেখো কোন কাজ তো করোনা।”

” কি?আমি কোন কাজ করিনা।”

” কি কাজটা করো শুনি?বাড়িতে তো কাজের মেয়ে সবকাজ করে দেয় আর এখানেও তো কিছু করোনা।”

” হ্যাঁ আমি কোন কাজ করিনা।হয়েছে?যাতো এখন এখন থেকে।”

” যাচ্ছি যাচ্ছি।তোমাকে বলে যে কোন লাভ নেই তা আমি বুঝতে পেরে গিয়েছি।আমার এখন তৃধাকে বলতে হবে।”

” তো বলোনা আমার কানের কাছে এসে কেন ঘ্যান ঘ্যান করছো।” বিরক্তি নিয়ে বলে নন্দিনী।

” হ্যাঁ আমার তো এখন ওকেই বলতে হবে।ও কি আর তোমার মতো নাকি।ওকে বললে তো ও তোমার মতো আর ঝগড়া করেনা।কত ভালো একটা মেয়ে।আমি তো ওর মতনই একটা বউ চেয়েছিলাম,যে আমার কথা শুনবে।কিন্তু আমার কপাল যে তুমি…..”

” এই এই কি বললে যেন তুমি?তুমি ওর মতো বউ চেয়েছো?চেয়েছো কেন বলছো বলো ওকে তোমার বউ বানাতে চাইছো।” টোন মেরে বলে নন্দিনী।

” মানে?”

” তুমি কি মনে করো মিস্টার রুদ্র আমি বোকা,কিছু বুঝিনা আমি।শোন তোমাকে না আমি হাঁড়ে হাঁড়ে চিনি।তোমার যে ওর প্রতি নজর আছে সেটা আমি জানিনা মনে করোনা।আমি সব জানি।এই বাড়িতে আসলে সারাদিন তৃধা সাহেবা,তৃধা সাহেবা কেন করো তাও আমি ভালো করে বুঝি।কান খুলে শুনে রাখো আমার সাথে গেইম খেলতে এসোনা।তাহলে কিন্তু সেটা তোমার উপরই ভারী পড়বে।আরে তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?তুমি না চা খাবে বলেছিলে?দাঁড়াও আমি এখুনি তোমার তৃধা সাহেবাকে বলছি তোমার জন্য চা করে দিতে।”

নন্দিনী বেরিয়ে যায়।রুদ্র ভ্রু-কুচকে নন্দিনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।নন্দিনীর এধরণের ব্যবহারে রুদ্র অনেকটা অবাক হয়।

” তৃধা,তৃধা।” তৃধার নাম ধরে ডাকতে থাকতে তৃধার রুমের মধ্যে হুট প্রবেশ করে নন্দিনী।তেজবীন আর তৃধা তখন কিছু একটা নিয়ে কথা বলছিলো।হুট করে নন্দিনীর রুমে ঢুকে যাওয়ার ফলে দুজনেই চুপ হয়ে যায়।

” আপু তুমি রুমে ঢোকার আগে একবার নক করবেনা?” কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে তেজবীন।

” ও মা আমি নক করবো কেন?এটা আমার বাড়ি আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে পারি।যেটা বলতে এসেছিলাম তৃধা যাওতো তোমার জামাইবাবুকে এককাপ চা করে দাও।তার নাকি চা খেতে ইচ্ছে করছে।”

” তো জামাইবাবুর চা খেতে ইচ্ছে করছে তুমি ওকে বলছো কেন?তুমি বানিয়ে দাও।”

” ও আমি এখন পারবোনা,আমার কাজ আছে।এইযে তুমি তাড়াতাড়ি চা বানিয়ে ওকে দিয়ে এসো।”

নন্দিনী চলে যায়।তৃধা একবার তেজবীনের দিকে তাকিয়ে চা বানাতে চলে যায়।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে