বসন্তের একদিন পর্ব-১০

0
930

#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

তিথির কথা শুনে তৃধা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।আসলে তৃধা তিথিকে জিজ্ঞেস করেছিলো মেহেরিন মেয়েটা কে কিন্তু তিথির কথা শুনে তৃধা কিছুটা কষ্ট পায়।

” ওই কালো ড্রেস পড়া মেয়েটার কথা বলছো?আরে ওটা তো মেহেরিন আপু।ভাইয়ার জন্য প্রথমদিকে যখন মেয়ে দেখা হচ্ছিলো তখন মেহেরিন আপুকেও আমরা দেখতে গিয়েছিলাম।বিয়ে অনেকটা ঠিকও হয়ে গিয়েছিল কিন্তু শেষ মহূর্তে এসে ভাইয়া বিয়ে করে মানা করে দেয়।কিন্তু তুমি হঠাৎ করে ওনার জন্য জিজ্ঞেস করছো কেন?তুমি চেনো নাকি?”

” না মানে তেজবীন বলেছিল যে উনি নাকি ওর আগের অফিসের কলিগ ছিল।”

” হ্যাঁ কলিগ ছিলো তো কিন্তু তোমাদের বিয়ে হওয়ার কয়েকমাস আগেই ভাইয়ার ট্রাস্ফার হয়ে যায়।”

” ও আচ্ছা।”

” তুমি বসো আমি আপুর সাথে কথা বলে আসি।”

তিথি চলে যায় মেহেরিন নামের মেয়েটার সাথে কথা বলার জন্য।তবে তিথির কথা শুনে তৃধার কিছুটা হলেও খারাপ লাগছে।তৃধা এদিক-ওদিক তাকিয়ে তেজবীনকে খুঁজছে তবে সে তাকে দেখতে পাচ্ছে না।
____________________________________________

নিজে ডেস্কে বসে কাজ করছে তৃধা তখন তাকে এসে অফিসের পিয়ন বলে,

” ম্যাডাম আপনাকে স্যার ডাকছেন?”

” কোন স্যার?”

” বড় স্যার।”

” আচ্ছা আপনি যান আমি আসছি।”

তৃধা তাড়াতাড়ি ফাইল বন্ধ করে অফিসের বসের কেবিন আসে।

” স্যার আসবো?”

” আসুন আসুন মিসেস তৃধা।”

” আমাকে ডেকেছেন স্যার?”

” হুম।তার আগে এটা বলুন কেমন আছেন আপনি?কাজ কেমন চলছে?”

” আমি ভালো আছি স্যার আর কাজেও ভালোই চলছে।”

” কাজের খুব প্রেশার তাই না?”

” সেরকম কিছু না স্যার।সব কাজেই কম বেশি প্রেসার তো থাকেই।”

” হুম কিন্তু এবার থেকে আপনার কাজের প্রেসার আর দায়িত্ব আরো বেড়ে যাবে।”

” যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন স্যার।”

” এই নিন।” একটা খাম তৃধার সামনে রেখে বসে।

” এটা কি স্যার?”

” খুলে দেখুন।”

তৃধা ভয়ে ভয়ে খামটা খুলে দেখে কিন্তু খুলে খাম থেকে সে যা দেখতে পাই তা দেখে খুশিতে তার চোখে পানি জমে যায়।

” স্যার এটা?” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তৃধা।

” আপনার প্রমোশন লেটার।আপনার কাজে আমি খুব সন্তুষ্ট।এতো সুন্দর করে কাজ করার এবং নিজের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করেছেন তাই এটা আপনার পুরষ্কার।”

” অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।আমি এখন থেকে আরো ভালো ভাবে কাজ করবো।”

” কংগ্রেচুলেশন মিসেস তৃধা।”

” ধন্যবাদ স্যার।”

খুশি মনে বসের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে তৃধা।আজ যেন তার খুশির সীমা নেই।

অফিস থেকে ফেরার পথে তৃধা একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে এক প্যাকেট মিষ্টি কিনে।মিষ্টি কিনে খুশি মনে তৃধা যখন দোকান থেকে বেরিয়ে আসে তখন তার চোখ আটকে যায় রাস্তার অপর পাশে থাকা রিকশাতে।একটা মেয়ে উঠছে রিকশাতে আর তার পেছন পেছন একটা ছেলেও উঠেছে।ছেলেটাকে তৃধা না চিনতে না পারলোও মেয়েটিকে তৃধা বেশ ভালো করেই চেনে কারণ মেয়েটি হচ্ছে তিথি।আজ তৃধা ভালো করেই খেয়াল করেছে মেয়েটা আসলেই তিথি।কিন্তু তিথিকে একটা ছেলের সাথে দেখে তৃধার মনে অজানা ভয় হতে থাকে।তৃধা আজও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে কিন্তু সেদিনের মতো আজ সে তিথিকে বাড়িতে দেখতে পেলোনা।তিথি তাড়াতাড়ি নন্দিনীর কাছে যায়।

” আপু তিথি কোথায়?”

” কেন?তোমার তা দিয়ে কি কাজ?”

” আপনি বলুন না তিথি কোথায়?”

” তিথু তো কোচিং এ গিয়েছে।”

” কখন বেরিয়েছে তিথি?”

” এইতো হবে ১ ঘন্টার মতো।তা তোমার হাতে ওটা কিসের প্যাকেট?”

” ও কিছুনা।আপনি টিভি দেখুন।”

মিষ্টির প্যাকেটটা উপরে তুলে রেখে তৃধা চেঞ্জ করতে রুমে চলে আসে।সন্ধ্যার ৭ টার দিকে তিথি বাড়িতে ফিরে আসে।তিথি আসার কিছুটা সময় পর তৃধা তিথির সাথে কথা বলতে আসে।

” তুমি কোথায় গিয়েছিলে তিথি?”

” কোথায় গিয়েছিলাম মানে?”

” মানে তুমি এতোটা সময় কোথায় ছিলে?”

” কোচিং এ ছিলাম।”

” কিন্তু তোমার কোচিং তো ৬ টায় শেষ।আর বাসায় আসতে তোমার বেশি হলে আধাঘন্টা সময় লাগে।”

” তুমি আমাকে জেরা করছো নাকি?আমার ইচ্ছা আমি কখন আসবো বাসাই।আর আমার তো অন্যকাজও থাকতে পারে তাইনা।”

” তো সেই অন্যকাজটা কি সেটাই জানতে চাইছি আমি।”

” আসলে ওই আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে শপিং-এ গিয়েছিলাম।ওর নাকি কিছু জিনিস কেনার ছিল।একা যেতে ওর ভয় লাগছিলো তাই আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়েছে।”

” ফ্রেন্ডটা ছেলে নাকি মেয়ে ছিল?”

” সেটা আমি তোমাকে কেন বলবো?আর তুমি আমাকে এতো প্রশ্ন কেন করছো বলো তো?”

” শোন তিথি তুমি আমার ছোটবোনের মতো।আমি চাইনা তোমার কোন ক্ষতি হোক বা তুমি কোন অসুবিধায় পড়ো।”

” উফ…এতো লেইম ডায়লগ বাদ দিয়ে বলবে আসল কাহিনিটা কি?”

” তাহলে তোমাকে সোজাসুজিও বলছি,আমি তোমাকে আজ একটা ছেলের সাথে দেখেছি।”

” কি!” চমকে জিজ্ঞেস করে তিথি। “কি বললে তুমি?আবার বলোতো।”

” আমি তোমাকে আজ একটা ছেলের সাথে রিকশা করে যেতে দেখেছি।”

” কিসব বলছো তুমি?আমি কেন কোন ছেলের সাথে রিকশায় উঠতে যাবো?”

” আজ কিন্তু আমি ঠিকভাবেই দেখেছি।তোমার আর ওই মেয়েটার ড্রেসের কালার কিন্তু সেইম ছিল।”

” আরে আজব,রাস্তায় তো কত মানুষের ড্রেস সেইম থাকে।আর তুমি কি একদম কাছ থেকে দেখেছো?”

” না আমি রাস্তার উল্টোদিকে থেকে দেখি।”

” শোন তোমার না চোখে সমস্যা হয়েছে।ডাক্তার দেখাও।না জানি রাস্তায় কাকে না কাকে দেখেছে আর বলছে ওটা নাকি আমি।যাও তো আমার মাথা খেওনা।”

তৃধা রুম থেকে বেরিয়ে আসে তবে তার মাথায় এখনো ঘুরছে আসলেই কি সে ভুল দেখে।মানুষ ভুল দেখে এটা ঠিক তাই বলে দু’বারই কি কেউ ভুল দেখে।

রাতে তেজবীন আর রুদ্র একসাথে বাড়ি ফিরে আসে।সবাই আসলে তৃধা সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসে।

” কিগো বউমা হঠাৎ করে মিষ্টি আনলে যে?”

” আরে মা আগে খান তারপর বলছি।” তৃধা একটা মিষ্টি ফাতেমা বেগমের মুখে ঢুকিয়ে দেয়।তেজবীন ভ্রু-কুচকে তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে।

” কিগো তৃধা সাহেবা হঠাৎ করে মিষ্টি খাওয়াচ্ছো?খুশির খবর শুনাবে নাকি?”

তৃধা বুঝতে পারে রুদ্র আসলে কি মিন করে কথাটা বলছে।তৃধা রুম থেকে প্রমোশন লেটারটা এনে তেজবীনকে দেয়।তেজবীন লেটারটা পড়ে কিন্তু তার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।

” কিগো বাবু,ও তোকে ওটা কি দিলো?আর বউমা হঠাৎ করে মিষ্টি কেন খাওয়াচ্ছো?”

” ওর প্রমোশন হয়েছে,এটা তার লেটার।” তেজবীন লেটারটা টেবিলে ফেলে চলে যায়।

” ও আচ্ছা।প্রমোশন হয়েছে।আমি তো আরো ভেবেছিলাম হয়তো এবার খুশির সংবাদটা শুনতে পাবো।হায়রে আমার পোড়াকপাল।”

এক এক করে সবাই উঠে চলে যায়।সবার প্রতিক্রিয়া দেখে তৃধার মন খারাপ হয়ে যায়।সে ভেবেছিলো সবাই হয়তো তার প্রমোশনের কথা শুনে খুশি হবে কিন্তু না কেউ খুশি হলোনা।অন্যকেউ না হোক অন্তত তেজবীন খুশি হবে মনে করেছো তৃধা কিন্তু তেজবীনও সবার মতো বিষয়টাকে গুরুত্ব দিলোনা।

” বাহ্ তৃধা সাহেবা,আপনি তো মনে হয় অফিসে খুব মনে দিয়ে কাজ করেন।”

এতোক্ষণ সবার কথা ভাবছিলো তৃধা।হঠাৎ করেই রুদ্রের কন্ঠ শুনে পিলে চমে উঠে তৃধা।

” আরে আরে এতো ভয় পাচ্ছেন কেন?তো যেটা বলছিলাম অফিসে জয়েন করেছেন তো বেশি দিন হয়নি আর এখনই প্রমোশন,বাহ্।আপনি তো দেখছি কাজে খুবই নিষ্ঠাবান।তা তৃধা সাহেবা কাজটা কি আমি জানতে পারি?যে এতো মন দিয়ে কাজ করেছেন আর কয়েকমাসেই আপনার প্রমোশনও হয়ে গেলো।” বাঁকা হেসে বলে রুদ্র।রুদ্র কথাগুলো কোন ইঙ্গিতে বলতে তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি তৃধা আর বুঝতে পেরেছেই রাগ উঠে যায় তৃধার।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে