#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
কিছুদিন পর,
” তৃধা।”
” হ্যাঁ বলো।”
” একটু রুমে এসো তো।”
এটা বলেই তেজবীন রান্নাঘর থেকে রুমে চলে যায়।তৃধা চুলার আঁচ ছোট করে দিয়ে হাত মুচতে মুচতে রুমে আসে।
” হ্যাঁ বলো।”
” আমাকে কিছু টাকা দাও তো।” অনেকটা ইতস্তত হয়ে বলে তেজবীন।
” টাকা!তা না হয় দিলাম কিন্তু তুমি না কিছুদিন আগে বেতন তুলে ছিলে?”
” হুম কিন্তু আমার এখন কিছু টাকা প্রয়োজন।দাও তাড়াতাড়ি।”
তৃধা বুঝতে পারে তেজবীন নিশ্চয়ই কোন অকাজে তার বেতনে অনেকগুলো টাকা খরচ করে ফেলেছে।তা না হলে তেজবীন কোনদিনও অতি প্রয়োজন ছাড়া তৃধা থেকে টাকা চাইনা।তৃধা একবার কাঠকাঠ গলায় তেজবীনকে জিজ্ঞেস করে, ” তুমি সত্যি করে বলো তো তুমি কোথায় টাকা খরচ করেছো?”
” আরে টাকা খরচ করতে যাবো কেন?আসলে আমি এখনো বেতন তুলিনি তাই আরকি চাইছি।”
” আমাকে মিথ্যা কথা বলোনা তেজবীন।মাসের অর্ধেক শেষ হয়ে গেলো আর তুমি বলছো তুমি টাকা তুলোনি।আমি জানি তুমি মাসের দশ তারিখের মধ্যে নিজের বেতন তুলে ফেলো।এবার সত্যি সত্যি বলো কোথায় খরচ করেছো।”
” আসলে আপুর জন্য শাড়ি কিনতে গিয়ে বেতনের অনেকগুলো টাকা চলে গিয়েছে।”
” কি!তুমি আমাকে শাড়ি কিনে দিয়েছো?কত টাকা দিয়ে নিয়েছো?”
” ১০ হাজার।”
” কি!১০ হাজার।উফ….তেজবীন তুমিও না।তুমি জানো না আমাদের প্রতিমাসে কত হিসাব করে চলতে হয়।আমরা বড়লোক নয় তেজবীন আমরা মধ্যবিত্ত।আমাদের এতো বিলাসিতা মোটেও মানাই না।এখন যে তুমি এই ফালতু কাজে এতগুলো টাকা খরচ করলে এবার মাসের বাকি দিনগুলো চলবে কি করে ভেবে দেখেছো?” রেগে তেজবীনকে কথাগুলো বলে তৃধা।তেজবীন চুপচাপ দাঁড়িয়ে তৃধার কথাগুলো শুনে যাচ্ছে।তৃধা নিজের ব্যাগ কিছু একটা বের করে তেজবীনের হাতে দেয়।
” এই নাও এখানে কিছু একটা আছে,আপাতত এগুলো দিয়ে ম্যানেজ করো।আর শোন পরবর্তী বাজে কোন কাজে একদম একটা খরচ করবেনা।আর করলে তখন আমি আর কোন টাকা দেবোনা।”
টাকা পেয়ে তেজবীন আর দাঁড়ায় না,সে বেরিয়ে যায়।তেজবীন যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তৃধা নন্দিনীর কাছে আসে।নন্দিনী তখন বসে বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখছিল।
” আপু তেজবীন নাকি আপনাকে শাড়ি কিনে দিয়েছে?”
” হ্যাঁ কয়েকদিন আগেই তো দিলো।কি ভালো আমার ভাইটা,আমি…..”
” হ্যাঁ এখন তো ভালো হবেই।এতোগুলা টাকা দিয়ে যে শাড়ি কিনে দিয়েছে।আপনাকে না আমি প্রথমেই বলেছি আমাদের কাছে এইসব বাজে কাজে খরচ করার জন্য টাকা নেই তাও আপনি কেন তেজবীনকে শাড়ির কথা বলতে গেলেন।”
” তেজবীন তোমাকে কিনে না দিয়ে আমাকে শাড়ি কিনে দিয়েছে বলে হিংসা হচ্ছে বুঝি?”
” হা….হাসালেন।শুনুন আমার এতো কিছুর লোভ নেই।আমার যা আছে আমি তাতেই খুশি।আর আপনার কিছু দরকার হলে আপনি আপনার হাসবেন্ডকে বলবেন।ওনার অনেক সামর্থ্য আছে,আমাদের এতো সামর্থ্য নেই।”
কথাগুলো বলেই তৃধা আর একমুহূর্ত সেখানে দাঁড়ায় না।তবে তৃধার কথার কোন প্রভাব নন্দিনীর উপর পড়েছে বলে মনে হয়না।সে নিজের মতোই সিরিয়াল দেখছে।
রাতে খাবার শেষ হলে সব গুছিয়ে তিথির জন্য দুধ নিয়ে তার রুমের কাছে আসে তৃধা।কিন্তু যখনই সে দরজায় নক করতে যাবে তখন সে শুনতে পাই তিথি আস্তে আস্তে কারো সাথে কথা বলছে কিন্তু কি বলছে তা তৃধা স্পষ্ট শুনতে পাইনা।
” তিথি।”
তৃধার আওয়াজ শুনে তিথি তাড়াতাড়ি ফোনটা লুকিয়ে ফেলে।
” তুমি এই সময়ে এখানে?”
” তোমার দুধ।”
” টিবিলে রেখে যাও।”
তৃধা দুধটা টেবিলে রেখে চলে যেতে নিলেও থেমে যায়।
” তুমি কি কারো সাথে কথা বলছিলে?”
” আমি কথা বললে তোমার কি?নিজের কাজে যাও,যত্তসব।”
তিথি বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।তৃধা আর না দাঁড়িয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে আসে।কিন্তু সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে থাকে তিথি কার সাথে কথা বলছিলো।
মধ্যরাত,
দরজায় টোকানোর শব্দ পেয়ে তেজবীনের ঘুম ভেঙে যায় তবে তৃধার নয়।কারণ সারাদিনের ক্লান্তিতে সে গভীর ঘুমে আছে।
” তৃধা,এই তৃধা।”
তেজবীনের ধাক্কানোতে তৃধা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে বসে।
” কি হয়েছে?কিছু লাগবে তোমার?”
” আমার কিছু লাগবেনা।দেখো কে এতো রাতে দরজায় বাড়ি দিচ্ছে।”
কথাটা বলে তেজবীন আবারো ঘুমিয়ে পড়ে।তৃধা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দেখে ফাতেমা বেগম দাঁড়িয়ে আছে।
” মা আপনি এতো রাতে?”
” আসলে আমার পায়ে না খুব ব্যথা করছিল তাই।”
তৃধা বুঝতে পারে ফাতেমা বেগম আসলে কি বুঝাতে চেয়েছে।
” আচ্ছা মা আপনি যান আমি আসছি।”
ফাতেমা বেগম চলে গেলে তৃধা ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে ফাতেমা বেগমের রুম আসে।তারপর অনেক রাত পর্যন্ত ওনার পা মালিশ করে দেয়।
পরেরদিন সকালে,
রান্নাঘরে দ্রুত হাতে রান্না শেষ করছে তৃধা কারণ তার আবার অফিসে যেতে হবে।এরই মাঝে নন্দিনী রান্নাঘরে আসে।
” কি করছো?”
” রান্না করছি।”
” কালকের মাংস আছে না?”
” হুম।”
” আচ্ছা আমার জন্য ২ টো পরোটা বানাও তো।কালকের মাংস দিয়ে খাবো।”
” আপু আমার অফিস আছে,আমি এখন বানাতে পারবোনা।আপনি বরং দোকান থেকে নিয়ে আসুন।”
” না আমি দোকানেরগুলো খাবোনা।তাড়াতাড়ি বানিয়ে দাও।”
তৃধাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নন্দিনী চলে যায়।তৃধা নন্দিনীর প্রতিদিনের এসব নাটক দেখতে দেখতে খুবই বিরক্ত।তৃধা জানে নন্দিনী ইচ্ছে করে এসব করছে যাতে তৃধার অফিস যেতে দেরি হয়।
” তেজবীন,এই তেজবীন।”
” কি হয়েছে কি?এতো সকাল সকাল ডাকছো কেন?”
” উঠো ঘুম থেকে।”
” কেন?কি হয়েছে আবার?”
” দোকেনে যাও আর দুটো পরোটা নিয়ে এসো।”
” পরোটা আবার কার জন্য?তোমার খেতে হলে অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে নিও।”
” আমার জন্য হলে আমার তোমাকে বলার দরকার ছিল না।আপু বলে পরোটা খাবে।আমার এখন বানানোর সময় নেই তাই দোকান থেকে নিয়ে এসো।তাড়াতাড়ি উঠো।”
তেজবীন আলসেমি ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুম যায়।তারপর দোকানে গিয়ে পরোটা নিয়ে এসে তৃধাকে দেয়।তৃধা একটা প্লেটে করে খাবারগুলো নিয়ে তিথির রুমে যায়।নন্দিনী তখন ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো।তৃধাকে দেখে নন্দিনী ফোনটা কেটে দেয়।
” আপনার খাবার।”
” পরোটা তুমি বানিয়েছো নাকি?”
তৃধা মুচকি হেসে বলে,
” আপু আমি আপনাকে প্রথমেই বলেছি আমাকে অফিসে যেতে হবে তাই আমি পরোটা বানাতে পারবোনা।এগুলো তেজবীন দোকান থেকে নিয়ে এসেছে।”
” তোমাকে না আমি বলেছি আমি দোকানের পরোটা খাবোনা।” রেগে বলে নন্দিনী।
” না খেলে রেখে দিন।কোন সমস্যা নেই।ঘরে খাওয়ার মানুষের অভাব নেই।আমার দেওয়ার ছিল আমি দিয়ে দিয়েছি।এবার আপনি খাবেন কি খাবেন না সেটা আপনার ব্যপার।”
তৃধা আর না দাঁড়িয়ে চলে আসে কারণ তার অফিসের জন্য বের হতে হবে।তৃধা অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলি নন্দিনী তেজবীনের কাছে আছে।
” তেজ তোর বউ কিন্তু খুব বাড় বেড়ে গিয়েছে।”
” আবার কি হয়েছে?” বিরক্ত নিয়ে বলে তেজবীন।
” দেখনা,আমি ওকে বলেছি যে আমি পরোটা খাবো যাতে আমাকে দুটো পরোটা বানিয়ে দেয় কিন্তু ও আমাকে বানিয়ে দিলোনা।”
” কিন্তু আমি দোকান থেকে তো এনে দিলাম।”
” কিন্তু আমি দোকানেরগুলো খাবোনা।আমি যে ওকে বললাম আর ও যে আমার কথার অবাধ্য হলো।বুঝতো পারছিস তোর বউয়ের বাড় বেরে গিয়েছে।”
” আপু তুই প্লিজ এখান থেকে যা তো।পরোটা খাবি বলেছিস,ওকে তোকে দিয়ে এসেছে।এখন সেটা ঘরের আর বাইরের একটা হলেই হলো।এখন যা এখন থেকে।আমাকে ঘুমাতে দে,সকাল সকাল আমার মাথা খাস না।”
তেজবীন আবারো ঘুমিয়ে পড়ে।নন্দিনী বেশ রেগে গিয়েছে।সে ভেবেছিল তেজবীনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তৃধাকে মার খাওয়াবে কিন্তু তার কথার তো কোন গুরুত্বই দিলোনা তেজবীন।
চলবে…..