#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
স্টিলের স্কেল দিয়ে তৃধাকে মেরে চলেছে তেজবীন।তৃধা বুঝতে পারছেনা হঠাৎ করে তেজবীনের কি হলো।কিছুক্ষণ আগেই অফিস থেকে এসেছে তেজবীন।তেজবীন একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সোফায় বসে।তৃধা তাকে পানি দিয়ে রুমে এসে তেজবীনের জামাকাপড় গুলো বিছানায় রাখে।কিন্তু যখনই সে বাইরে যাবে তখনই তেজবীন রুমে এসে আর কিছু না বলেই টেবিলে থাকা স্কেলটা দিয়ে তৃধাকে মারতে শুরু করে।
তৃধা যখন দেখছে না আর চুপ থাকলে চলবেনা তখন সে তেজবীনকে ধাক্কা মারা।ধাক্কা দেওয়ার ফলে তেজবীন আরো রেগে তৃধাকে মারতে আসলে পেছন থেকে কেউ তেজবীনের হাত ধরে তাকে আটকিয়ে দেয়।তেজবীন পেছন ফিরে দেখে তার ছোট বোন তিথি তার হাত ধরে আছে।
” কি করছিস তুই ভাইয়া?এভাবে ভাবীকে মারছিস কেন?”
” তিথি তুই ছোট।তুই এখান থেকে যা।আজ তো আমি একে এর আসল জায়গা বুঝিয়ে দেবো।”
” কি হয়েছে সেটা তো বলবি।”
” তোকে আমি যেতে বলেছি না।যা এখান থেকে।” রেগে চিৎকার করে বলে তেজবীন।
” ঠিক আছে যাচ্ছি।তবে এমন কিছু করিস না যাতে বিষয়টা হাতের বাইরে চলে যায় আর কাউকে মুখ দেখানোর সাহসটা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিস।”
তিথি বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।তিথি চলে যেতেই তেজবীন দরজা বন্ধ করে আবারো তৃধাকে মারতে আসে কিন্তু আবার তৃধা চুপ করে থাকেনা।সে তেজবীনের হাত থেকে স্কেলটা নিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়।তৃধার কাজে তেজবীনের রাগ মাথায় চড়ে যায়।তেজবীন যেই হাত উঁচু করে তৃধাকে মারতে যাবে এবারে তৃধাকে তার হাত ধরে ফেলে তাও খুব শক্ত করে।
” এই তুমি কি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গিয়েছো নাকি?সমস্যাটা কি তোমার?আমি কি পুতুল না কাঠের জিনিস যে যেকোন সময় এসে আমারে মারবে?”
” তুই আজ আমার আপু কি বলেছিস?তোর সাহস কত বড় যে তুই আপুকে খাবারের খোঁটা দিচ্ছিস?আমার আপু ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে বলে তোর খুব জ্বলে না?কোনদিন এতো ভালো খাবার তো তোর বাবা-মা তোকে দিয়েছে বলে মনে হয়না।আমার আপু এতো ভালো ভালো খাবার খাচ্ছে দেখে তোর জ্বলছে তাই না?”
” চুপ করো তেজবীন,চুপ করো।আর একটাও বাজে কথা বলবে না।আর আমার বাবা-মাকে নিয়ে তো মোটেও নয়।আমার বাবা-মা আমাকে ভালো খাবার দিতে পারুক আর না পারুন অন্তত কি করে অন্যরের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হয়,অন্যকেও মানুষ মনে করতে হয় সেটা শিখিয়েছে।তোমার মতো না যে কাপুরুষের মতো বাড়ি এসে বউকে মারধোর করে।”
” তৃধা।” চিৎকার করে বলে তেজবীন।
” আওয়াজটা কম করো।সত্যি বলছি দেখে খুব জ্বলছে তাইনা।আমারো জ্বলে যখন তুমি আর তোমার মা বাবা-মাকে নিয়ে বাজে কথা বলো।আর শোন আমি তোমার বড় কোন খাবার নিয়ে খোঁটা দিয়নি।উনি দুপুরে খাওয়ার সময় আচার আর আপেল খাচ্ছিলেন দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম ছিলাম উনি দুপুরে কি খাবেন না।এতেই উনি চটে গেলেন।আর এমনটাও না যে আমি ওনাকে খাবার খেতে ডাকিনি।আমি ওনাকে ডেকেছি,ইনফেক্ট আমি ওনার জন্য খাবার পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তোমার বোন কি করলো।সব খাবার ছুঁড়ে ফেলে দিলো।তোমার বোনকে আমি বলেছি এক লাইন কিন্তু উনি দাঁড়ি,কমা যুক্ত করে তোমাকে তা একশো লাইন করে শুনিয়েছে।আমি জানি তোমার মা তোমার বোনের একশো লাইনটাকে একশো পঞ্চাশ লাইন বানিয়েছে।তোমার মাকে এটা বলেছে যে উনি আমার খাবারের থালাটা টেনে নিতে যেতে চেয়েছিলো?জানি বলেনি।তবে শুনে রাখো আমি চুপ করে থাকি বলে এটা ভেবোনা আমি দুর্বল।আমি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারি কিন্তু করছিনা।আর শোন সবসময় মা আর বোনের কথা বাদে বউয়ের কথাটাও একটু শোন,কাজে দেবে।”
তৃধা তেজবীনকে কথাগুলো বলে দরজা খুলে কিন্তু দরজা খুলতেই সে দেখতে পাই নন্দিনী আর ফাতেমা বেগম থতমত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দুজনকে দেখে তৃধা ভ্রু-কুচকে তাদের দিকে তাকাই।
” না মানে আসলে কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি তো তাই দেখতে এসেছি।” নন্দিনী বলে। ” মা চলো চলো এখানে সব ঠিক আছে।” ফাতেমা বেগম আর নন্দিনী চলে যায়।তৃধা জানে আসলে ওনারা দুজন কান পেতে শুনছিলেন।তৃধা একবার পেছন ফিরে দেখে তেজবীন রুমে নেই,নিশ্চয়ই বাথরুমে গিয়ে।তৃধা আর দাঁড়িয়ে না থেকে রান্নাঘরে চলে যায়।
আজও নিচে শুয়েছে তৃধা।রাতে খায়নি আজ সে।রান্নাটুক করেই তৃধা শুয়ে পড়েছে তবে তার চোখে মোটেও ঘুম নেই।সে এমনিতেই চোখ বন্ধ করে আছে।হঠাৎ তৃধা অনুভব করে কেউ তার গায়ে তার রেখেছে।তৃধা মনে করে এটা তেজবীন কিন্তু চোখ খুলে পেছন ফিরে দেখে এটা তেজবীন নয় তিথি।তৃধা উঠে বসে।
” কিছু বলবে কি তিথি?”
” রাতে না খেয়ে শুয়ে পড়েছো কেন?এই নাও খেয়ো নাও।” কাঠকাঠ গলায় তিথি বলে।
” না খাবো না।আমার খিদে নেই তুমি নিয়ে যাও এগুলো।”
” পারবো না আমি নিয়ে যেতে।এখানে রেখে গেলাম,খেলে খাও নয়তো ফেলে দাও।”
মাটিতে তালটা রেখে তিথি উঠে দাঁড়ায় কিন্তু যায় না।ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে থালার পাশো রাখে।
” যেখানো ফুলে গিয়েছে ওখানে মলমটা লাগিয়ে দাও,কাল তো আবার অফিসে যাবে।আর শোন ভেবোনা আমি তোমার চিন্তা করছি বা তোমার কেয়ার করছি।আমি সব আমাদের ভালোর জন্যই করছি।দেখা যাবে না খেয়ে বা মারের কারণে অসুস্থ হয়ে পেরেছো তারপর পাড়া প্রতিবেশীরা বলবে আমরা খেতে দিয়না।ব্যস এতটুকুই,এর বেশি কিছু ভেবোনা।”
তিথি চলে যায়,তৃধা প্লেটটাে দিকে তাকাই হালকা হাসে।এই বাড়ি তৃধার চিন্তা কিছুটা হলেও যে করে সেটা হচ্ছে তিথি।হয়তো সে অন্যকোন উদ্দেশ্য তার চিন্তা করে কিন্তু করে এটাই তৃধার কাছে অনেক।বাকিরা তো সেটাও করেনা।তৃধা খেলো কি খেলোনা,মরলো কি বাঁচলো এতে এদের কিছু যাই আসেনা।তৃধা একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো তেজবীন আছে কিনা কিন্তু না রুমে কেউ নেয়।তৃধা উঠে হাত ধুয়ে খাবারটা খাওয়া শুরু করে দেয়।
এদিকে,
ফাতেমা বেগম বিছানায় বসে খুশি মনে পান চিবোচ্ছেন।
” হ্যাঁ হ্যাঁ বসে বসে শুধু পানই খেতে থাকো।” বিরক্তি নিয়ে বলে নন্দিনী।
” কি হয়েছে?এতো চিৎকার করছিস কেন?”
” তো চিৎকার করবোনা।কই ভেবেছিলাম তেজবীন ওই হতচ্ছাড়িটাতে আজ উচিত শিক্ষা দেবে কিন্তু উল্টো ওই হতচ্ছাড়িটা তেজবীনকে চুপ করিয়ে দিলো।”
” আরে এতো উতেজিত কেন হচ্ছিস?এতো উতেজিত হলে কি আর কাজ হবে?”
” আমি তোমাকে তখনও বারণ করেছিলাম যে এই মেয়েকে ঘরের বউ করোনা।এই মেয়ে সুবিধার না।আমাদের উপরই রাজত্ব করবো কিন্তু না তুমি তো ওর চাকরি দেখে আর লোভ সামলাতে পারোনি।”
” এই মেয়ে কি করছিস কি।আস্তে কথা বল আস্তে।ভুলে যাস না দেয়ালেরও কিন্তু কান আছে।আর আমি কি জানতাম নাকি ওই মেয়ে নিজের চাকরির টাকা অর্ধেক তার বাবা-মাকে দিয়ে দেবো।আমি তো ভেবেছিলাম ওর চাকরির কারণে আরো কিছু টাকা আসবে ঘরে।”
” এখন এসব ছাড়ো।কিছু কি চিন্তা করছো যে কি করে এই মেয়েকে শায়েস্তা করবে?”
” এখনো কিছু ভাবিনি।কাল সকালটা হতে দে তারপর কিছু একটা করবো।”
অন্যদিকে তৃধার খাওয়া শেষ হলে সে রান্নাঘরে প্লেট রাখার জন্য আসে।কিন্তু রান্নাঘরের অবস্থা দেখে সে হতবাক।সবার খাওয়া প্লেট,বাটি সব বেসিনে পড়ে আছে।এটা দেখে তৃধা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।সে ভেবেছিলো হয়তো আজকে তারা নিজের প্লেটটা অন্তত ধুয়ে রাখবে কিন্তু না তারা তৃধার জন্য সব রেখে চলে গিয়েছে।তৃধা আর দাঁড়িয়ে না থেকে প্লেটগুলো ধুয়ে তুলে রাখে।রান্নাঘর আর ড্রইংরুমের লাইট বন্ধ করে যখন তৃধাে নিজের রুমে আসবে তখন কি মনে করে যেন সে একটা গেস্টরুমে দরজাটাতে হালকা করে ধাক্কা দেয়।না দরজা ভেতর থেকে বন্ধ।তৃধা বুঝতে পারে যে ভেতরে তেজবীন আছে।তৃধা আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে এসে শুয়ে পড়ে।
চলবে……