#বসন্তের_আগমনে💛🌸
#পর্ব_১৫
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
মাঝরাতের হালকা শীতল বাতাস।আরহান আর ঈশা বসে সেই শীতল বাতাস উপভোগ করছে।দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে।নিরবতা ভেঙে ঈশা বললো,
“আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে মি.অভদ্র।”
“হুম বলো নাহ্!”
“সেদিন একটা ছেলের সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করেছিলাম নাহ্!ওই যে রুশান!”
“হ্যাঁ ফুচকা খেতে গিয়ে মেইবি।”
“হুম।ও আমার চাচাতো ভাই।আমি যখন ক্লাস টেন এ পড়ি তখন আমার শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছিল!আল্লাহর অনেক রহমত যে বাবা ওই দিন চলে এসেছিলো।নাহলে আমি আজকে এই জায়গায় থাকতে পারতাম নাহ্।ওই ঘটনার পরে আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।অনেক টাইম লেগেছে আমার ঠিক হতে।অতিরিক্ত রাগ হলে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। তবে হ্যাঁ এখন আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারি।সেটা তোমার থেকেই শেখা।”
আরাহান ঈশার হাত ধরে বললো,
“এইসব ভেবে কখনো কষ্ট পাবে নাহ্।অতীত তো অতীত’ই।”
ঈশা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো।আরহান মৃদু হেসে বললো,
“সকাল তো প্রায়ই হয়েই গেলো।এখনই ফজরের আযান দিবে।চলো আমরা দুজন আজকে একসাথে নামাজ পড়বো।”
আরহানের কথায় ঈশা হাসি দিয়ে সম্মতি জানালো।তারপরে তারা ছাদ থেকে রুমে চলে আসলো।দুজনে ওযু করে নামাজ পড়তে বসলো।
নামাজ পড়ে শেষ করে আরহান বললো,
“ঈশা সারারাত ঘুমাও নাই।এখন একটু ঘুমিয়ে নেও।”
“তুমি কি করবে?”
“আমার একটু অফিসের কাজ আছে।”
“ওকে তুমি তাহলে কাজ করো।আমি বরং নিচে যাই।এমনিতেও এখন আমার আর ঘুম আসবে নাহ্।”
“আরে শরীর খারাপ লাগতে পারে।”
“আমার এমন অভ্যাস আছে।পরীক্ষার সময় তো রাত জেগে পড়ি।আর এমনিতেও একদিন না ঘুমালে কিছু হয় না।”
“তবে আমি তো জানি তুমি নাকি ঘুমপাগলি!”
“আরে নাহ্।কে বলছে এইসব?”
“ওই যে ওইদিন কতো লেট করছিলে শপিংয়ে যেতে!”
“আরে আমি তো ভেবেছিলাম আমার বরতাহ্ কেমন না কেমন হয়!বিয়ের পরে দেখা গেলো আমাকে বাড়ি দিয়েই বের করে দিলো।তখন তো রাস্তায় যেয়ে ঘুমাতে হতো।তাই বিয়ের আগে তিনদিন ভালো ভাবে ঘুমিয়ে নিয়েছি।”
ঈশার কথা শুনে আরহান জোরে হেসে দিলো।হাসি থামিয়ে ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“তা তোমার বরতাহ্ কেমন হয়েছে?”
“অভদ্রের মধ্যে ভদ্র।”
“মানে অভদ্র উপাধিটা বাদ দিবে নাহ্?”
“কখনোই নাহ্।”
কথাটা বলে ঈশা রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।আরহান মুচকি হেসে বললো,
“পাগলি একটা!”
–
–
–
ঈশা নিচে গিয়ে দেখলো আয়েশা বেগম আর আরিশা গল্প করছে।ঈশা গিয়ে তাদের পাশে বসলো।
“গুড মর্নিং ভাবি।”
“গুড মর্নিং ননদিনী।”
আয়েশা বেগম ঈশার কাঁধে হাত রেখে বললো,
“হ্যাঁ রে মা!আরহান আবার তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি তো?”
ঈশা আয়েশা বেগমের হাতের উপর হাত রেখে বললো,
“নাহ্ মা।উনি অনেক ভালো।আমি যেমনটা ভাবতাম আমার ধারণা একদম ভুল ছিলো।”
আরিশা মুচকি হেসে বললো,
“তা ভাবি বাসর রাত কেমন কাটলো!”
আরিশার কথা শুনে ঈশা কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলো।কারণ আয়েশা বেগম তার পাশেই বসে আছেন।আয়েশা বেগম আরিশার কান টেনে বললো,
“তুই একদম বেশি চালাক হয়ে গেছিস।দিলি তো মেয়েটাকে লজ্জায় ফেলে।”
“আরে আম্মু আমি কি এমন বললাম!খারাপ কিছু তো বলিনি।”
“চুপ কর।ঈশা তুই ওর বাদ দে।বল আজকে ব্রেকফাস্টে কি খাবি।আমি তোর পছন্দ মতো ব্রেকফাস্ট বানাবো বলে এখনো বসে আছি।”
ঈশা আয়েশা বেগমের কথায় অবাক হয়ে গেলো।ঈশা তার ঠোঁটের স্মিত হাসি টেনে বললো,
“আমি কখনো ভাবিনি আমার শ্বাশুড়ি মা এতো ভালো হবে!”
ঈশার কথায় আয়েশা বেগম চুপ থাকলেন।আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো,
“খালি শ্বাশুড়ি মা-ই ভালো!ননদ বুঝি ভালো নাহ্?”
আরিশার কথায় আয়েশা বেগম আর ঈশা দুজনেই হাসলেন।ঈশা আরিশার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
“ননদ তো আরো বেশি ভালো।মোট কথা আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই ভালো।তবে হ্যাঁ সবচেয়ে বেশি ভালো হলো আমার আলভি বাচ্চু।কিন্তু ও কোথায়?”
আরিশা হাসি দিয়ে বললো,
“ঘুমাচ্ছে ভাবি।সমস্যা নেই একটু পরেই চলে আসবে।”
“ঈশা আন্টি…..”
আলভির গলা শুনে ঈশা সিঁড়ির দিকে তাকালো।দেখলো আলভি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।ঈশার মুখেও হাসি ফুটলো।আলভি দৌড়ে এসে ঈশার কোলে বসলো।
“দেখলে ভাবি বলতে বলতেই চলে এসেছে।”
আলভি ঈশার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
“আন্টি থুমি কখন এচেছো?”
“কালকে রাতে বাচ্চু।”
“জানো আমি তো ভেবে চিলাম থুমি আতবে নাহ্।তাই মন খালাপ কলে গুমিয়ে গেচিনাম।”
ঈশা আলভিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আহারে আমার বাচ্চুটা কত কষ্ট পেয়েছে!সরি বাবা।”
“ইট ওখে!”
আলভির কথা শুনে আরিশা বললো,
“ওটা ইট ওখে নাহ্।ইট’স ওকে।”
“ওই পিমনি থুমি চপ থাকু।”
“নিজে ঠিক ভাবে কথা বলতে পারে নাহ্ তা কিছু না।আমি বললেই দোষ।”
আলভি চোখ রাঙিয়ে বললো,
“চপ।”
আয়েশা বেগম আর ঈশা দুজনেই হাসছে আরিশা চর আলভির কান্ড দেখে।আয়েশা বেগম বললেন,
“অনেক ঝগড়া হয়েছে এখন তোরা দুজনে থাম।ঈশা মা বল ব্রেকফাস্টে কি খাবি।”
“শ্বাশুমা তোমার ইচ্ছা মতো বানাও।আমি বরং তোমাকে হেল্প করতেছি।”
“তাহলে তোকে আমি লুচি আর আলুর দম বানিয়ে খাওয়াবো।মাসুমা ভাবি বলছে এটা তো পছন্দের খাবার।”
আরহান নিচে এসে দেখলো আয়েশা বেগম আর ঈশা রান্নাঘরে কাজ করছে।আরিশা আর আলভি টিভি দেখছি।আরহান ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়াতেই দরজার কলিংবেল বেজে উঠলো।আরিশা উঠতে গেলে আরহান বললো,
“তুই টিভি দেখ।আমি দেখতেছি কে আসছে!”
আরহান দরজা খুলে দেখলো হিয়া দাঁড়িয়ে আছে।হিয়াকে দেখেই আরহানের রাগ উঠে গেলো।আরহান চোয়াল শক্ত করে বললো,
“আপনি এখানে এসেছেন কেনো?”
“তোমাকে বউকে দেখতে আসতেই হতো।আফটার অল আমার জা বলে কথা।”
“শাট-আপ!আপনি এই মূহুর্তে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।”
“আরহান সবসময় এমন বিয়েইভ করা ঠিক নাহ্।”
আরহান চিৎকার করে বললো,
“আপনার সাথে এর চেয়ে ভালো ব্যবহার আমার দ্বারা সম্ভব নাহ্।সো চলে যান এখান থেকে।”
আরহানের চিৎকার শুনে আয়েশা বেগম,ঈশা আর আরিশা দরজার কাছে চলে আসলো।আয়েশা বেগম হিয়াকে দেখে বললো,
“তুমি এখানে এসেছো কেনো?তুমি কি আমাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দিবে নাহ্।”
হিয়া বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
“আহারে!বুড়িটার কি কষ্ট।”
আরহান রাগ কন্ট্রোল করতে না পেড়ে ঠাস করে হিয়ার গালে একটা চড় মারলো।হিয়া গালে হাত দিয়ে চোখ রাঙিয়ে আরহানের দিকে তাকালো।আরহান হিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হিয়ার হাত টানতে টানতে বাড়ির গেটের বাইরে নিয়ে দাঁড়া করিয়ে দিয়ে বললো,
“এই বাড়ির ত্রিসীমায় আপনাকে দেখলে আপনার যে কি অবস্থা হবে তা আপনি বুঝতে পারছেন নাহ্!”
আরহান আর কিছু না বলে হনহন করে হেঁটে বাড়ির ভিতরে চলে আসলো।হিয়া রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,
“নিজের বিপদ তুমি নিজেই ডেকে আনতেছো আরহান!”
হিয়া কথাটা বলে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।
||🌸||
আরহান বাড়ির ভিতরে এসে দেখলো সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আরহান হাসি দিয়ে বললো,
“আরে সবাই এমন চুপচাপ হয়ে আছো কেনো!আরিশা আজকে তোর ভাইয়ের বিয়ের পরেরদিন এতো চুপচাপ থাকলে চলবে নাকি!একটু হৈ-হুল্লোড় কর।”
আরহান কথাটা বলে আলভির কাছে যেতে গিয়ে ঈশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
“ঈশা এই সেই হিয়া।কালকে যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।”
আরহান কথাটা বলে আলভির পাশে গিয়ে বসলো।এদিকে আরহানের কথা শুনে আয়েশা বেগম আর আরিশা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।যেই ছেলে হৈচৈ পছন্দ করে নাহ্।সেই ছেলে হৈচৈ করার কথা বলছে!
আয়েশা বেগম ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে ঈশার গালে হাত দিয়ে বললো,
“মা-রে তোর জন্য আমার ছেলের মাঝে এতো পরিবর্তন এসেছে।তুমি আমার রাগী ছেলেটাকে একদম হাসি-খুশি বানিয়ে দিয়েছিস।”
আয়শা বেগমের কথায় ঈশার মুখে হাসি ফুটলো।ঈশা আরহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরহান তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে।
#চলবে……………….
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।!]