#বসন্তের_আগমনে💛🌸
#পর্ব_১৪
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
আরহান ঈশাকে ছেড়ে তার নাকের ডগায় আঙুল ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,
“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।আমি গিয়ে আমার শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে একটু গল্প করি।নাহলে আবার আমাকে বউ পাগল ভাবতে পারে।”
আরহানের কথা শুনে ঈশা খিলখিল করে হেসে দিলো।আরহান মুচকি হেসে ঈশার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
–
–
–
হিয়া পানির গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে বললো,
“একটা কাজও তোমরা ঠিক মতো করতে পারো নাহ্।বিয়ের পরে খবর নিয়ে আসছো।বিয়েটা হওয়ার কোথায় ছিলে!”
“ম্যাডাম আমরা তো বুঝতেই পারিনি আরহান স্যারের বিয়ে কার সাথে ঠিক হয়েছে।যার কারণে ঝামেলা হয়ে গেছে।”
হিয়া চিৎকার করে বললো,
“গেট আউট।”
লোকগুলো আর কোনো কথা না বলে হিয়ার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।হিয়া রাগে কাঁপছে।রাগের কারণে ড্রেসিং টেবিলে থাকা সব জিনিসপত্র নিচে ছুড়ে মারলো।
||🌸||
আরহান আর আরিশা মাসুমা বেগমের সাথে বসে বসে গল্প করছে।ঈশা একটা লাল শাড়ি পড়ে হালকা সেজে তাদের সামনে আসলো।আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে।
আরহান মনে মনে বললো,
“কপাল করে বউ পেয়েছি।মাশাআল্লাহ!”
আরিশা আরহানের মুখের সামনে তুড়ি মেরে বললো,
“কি রে ভাইয়া’ ভাবিকে দেখে কোথায় হারিয়ে গেলি!”
আরিশার কথায় আরহানের ধ্যান ভাঙ্গলো।আরহান মুচকি হেসে মাসুমা বেগমকে বললো,
“আন্টি ঈশা তো রেডি হয়ে গেছে।আমরা তাহলে এখন আসি।”
মাসুমা বেগম মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।আরহান ঈশা আর আরিশাকে নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।বাড়িতে এসে দেখলো আয়েশা বেগম সোফায় বসে আছেন।ঈশা গিয়ে আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“শ্বাশুমা তোমার ছেলেটা কিন্তু অনেক ভালো।আমি তো ভেবেছিলাম নাম্বার ওয়ান অভদ্র।”
আয়েশা বেগম ঈশার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
“মা তুই এসেছিস!আমি কত চিন্তা করতে ছিলাম।”
আরিশা গিয়ে আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
“আরে আম্মু এতো চিন্তা করে লাভ নাই।ভাইয়া তো ঈশা আপু থুক্কু ভাবির প্রেমে আগে দিয়েই হাবুডুবু খাচ্ছে।জাস্ট আমরা জানতাম নাহ্।”
আরহান অবাক হয়ে বললো,
“কি রে তুই এইসব কোথা থেকে শুনলি?”
“আমি আড়ি পেতে ছিলাম।”
আরহান আরিশার কান টেনে বললো,
“ছুটকি তুই কিন্তু বেশি চালাক হয়ে গেছিস।”
“আউ ভাইয়া লাগছে তো!”
ঈশা আরহানকে বললো,
“মি.অভদ্র আমার ননদকে ছেড়ে দিন।একদম ওর গায়ে হাত দিবেন নাহ্।”
আরহান আরিশার কান ছেড়ে বললো,
“বাহ্ তোমাকেও পটিয়ে ফেলছে।ছুটকি তোর এলেম আছে বলতে হবে!”
আরিশা কান ডলতে ডলতে বললো,
“দেখতে হবে না বোনটি কার!”
আরিশার কথায় সবাই হেসে দিলো।আয়েশা বেগম সবাইকে থামিয়ে বললো,
“অনেক হাসাহাসি হয়েছে।এখন অনেক রাত হয়েছে সবাই ঘুমাতে যাও।”
আরিশা মুখ গোমড়া করে বললো,
“কিন্তু আম্মু ভাইয়া আর ভাবির বাসর ঘর তো সাজানো হয়নি!”
আরিশার কথায় আরহান কেঁশে দিলো।কোনো মতে কাঁশি থামিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেলো।
আরহানের যাওয়া দেখে আয়েশা বেগম আর আরিশা হেসে দিলো।ঈশা মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসছে।আরিশা ঈশার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
“থাক ভাবি এতো লজ্জা পেতে হবে নাহ্।”
আয়েশা বেগম বললেন,
“ওদের জন্য আমি আর রুবি মিলে বাসর ঘর সাজিয়ে রেখেছি।তুই গিয়ে ঈশাকে ওর রুমে দিয়ে আয়।”
আরিশা আর ঈশা দুজনেই আয়েশা বেগমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।আরিশা হাসি দিয়ে বললো,
“ইতিহাসে প্রথমবার কোনো শ্বাশুড়ি মা তার ছেলের বাসর ঘর সাজিয়েছে।”
আয়েশা বেগম আরিশার মাথায় একটা চাটি মেরে বললো,
“এতো কথা না বলে ঈশাকে গিয়ে ওর রুমে দিয়ে আয়।মেয়েটার সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে।”
আরহান তার রুমে এসে চমকে গেলো।সম্পূর্ণ রুম ফুল দিয়ে সাজানো।আরহান অবাক হয়ে বললো,
“কে করলো এইসব?”
আরিশা ঈশাকে নিয়ে এসে বললো,
“কে আবার করবে!আমাদের মা জননী আর রুবি খালা করেছে।”
আরহান পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরিশা ঈশাকে নিয়ে তার রুমে এসেছে।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,
“কি বলছিস তুই?”
“আমি ঠিকই বলতেছি।মা আর রুবি খালাই সবটা করেছে।এখন বেশি কথা না বলে বাসর কর।আমি গেলাম।”
আরিশা কথাটা বলেই দৌড় দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“মেয়েটা কি যে বাদর হয়েছে!”
আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঈশা তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান ঈশার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার তাকিয়ে বললো,
“ঈশা তুমি হয়তো ভাবছো আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি।আসলে কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভুল।আমি তোমাকে মেনে নেয়নি।আর তোমাদের বাড়িতে বসে যা বলেছি সম্পূর্ণটা মিথ্যা ছিলো।তোমাকে এই বাড়িতে এনে অপমান করবো বলে ওইসব বলেছি!”
আরহানের কথায় ঈশা অবাক হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“মি.অভদ্র তুমি কি আমার সাথে মজা করছো!”
“আরে মজা কেনো করবো?আমি যা বলছি ঠিক বলছি।সো তুমি মাটিতে বিছানা করে শুয়ে পড়ো আর আমি বিছানায় শুবো।”
কথাটা বলে আরহান তার গায়ে থেকে পাঞ্জাবিটা খুলে একটা গেঞ্জি পড়ে নিলো।ঈশা তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।মনে হয় সে জেনো আকাশ থেকে পড়েছে।ঈশার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আরহান অনেকক্ষণ ধরে হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করছে।কিন্তু শেষমেশ না পেড়ে জোরে হেসে দিলো।আরহানকে হাসতে দেখে ঈশা চমকে উঠলো।আরহান হাসি থামিয়ে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তারপরে ঈশার চোখ মুছে গিয়ে বললো,
“পাগলি নাকি!এটুকু বিষয়ে কেউ কেঁদে দেয়।আমি তো তোমার সাথে মজা করতেছিলাম।আর আমি তো ভেবেছিলাম মিসেস.বকবকানি একদম ধানিলঙ্কা।কিন্তু না এ তো দেখি নেতিয়ে যাওয়া বরবটি!”
আরহানের কথা শুনে ঈশা চোখ রাঙিয়ে তাকালো।ঈশা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
“এইসব নিয়ে মজা করা ঠিক নাহ্ মি.আরহান।মানুষের ইমোশনাল নিয়ে মজা করা ঠিক নাহ্।”
আরহান মনে মনে বললো,
“ইশ বেশি কষ্ট পেয়েছে মনে হয়!এখন কি করবো?”
আরহান কিছু না বলে ঈশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।ঈশা ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও আরহানের শক্তির সাথে পেড়ে উঠলো নাহ্।আরহান ঈশার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো,
“সরি ঈশু।আর এমন করবো নাহ্!”
ঈশা কিছু বলছে নাহ্।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আরহান ঈশাকে ছেড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে কানের হাত দিয়ে বললো,
“সরি।আর হবে না এমন।এখন তো কানে হাত দিয়েছে।এখন একটু হাসো।”
আরহানের বাচ্চামো দেখে ঈশা খিলখিল করে হেসে দিলো।আরহানের মুখেও হাসি ফুটলো।ঈশা হাসি থামিয়ে বললো,
“সেই অ্যাটিটিউড ওয়ালা মি.অভদ্র আর এই মি.অভদ্র’র মধ্যে কত পার্থক্য!”
আরহান ঈশার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
“এইসব তোমার জন্য সম্ভব হয়েছে।তুমিই আমাকে নতুন করে হাসতে শিখিয়েছো।#বসন্তের_আগমনে 💛🌸তুমি আমার জীবনে বসন্ত নিয়ে এসেছো।”
আরহানের কথাগুলো শুনে ঈশা মুচকি হেসে আরহানকে জড়িয়ে ধরলো।আরহানও ঈশার মাথায় একটা চুমু দিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
কিছুক্ষণ পরে আরহান ঈশাকে ছেড়ে বললো,
“দেখে বেঁচে থাকলে বাসর পড়েও করা যাবে।আজকে আমরা গল্প করেই না’হয় রাতটা কাটিয়ে দিবো।এইদিনটা স্বরণীয় করে রাখতে চাই।”
আরহানের কথা শুনে ঈশা মুচকি হেসে বললো,
“আসলেই তুমি অনেক ভালো।আমার এমন একটা মানুষেরই প্রয়োজন ছিলো।”
“আমারও তোমার মতো একটা ঈশু বকবকানির প্রয়োজন ছিলো।”
“এই একদম আমাকে বকবকানি বলবে নাহ্।”
“তাহলে তুমিও আমাকে মি.অভদ্র বলবে নাহ্।”
“আমি তো বলবোই।”
“তাহলে আমিও বলবো।”
ঈশা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।আরহান ঈশাকে কোলে তুলে বললো,
“আজকে আমরা চন্দ্রস্নান করবো!”
“আরে এতো রাতে?”
“তো কি হয়েছে!”
ঈশা আর কিছু বললো নাহ্।কারণ সে এতোদিনে এটা বুঝে গেছে আরহান কারো কথা শোনার পাত্র নাহ।
আরহান ঈশাকে কোলে করে তার রুমের বেলকনিতে থাকা ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি দিয়ে ছাদে গেলো।ঈশাকে দোলনায় বসিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।ঈশা আরহানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“আরহান তোমার এমন কঠোর হয়ে যাওয়ার কারণ কি ছিলো?
আরহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
“আমার বাবা আর ভাইয়ার মৃত্যু।আমার বড় ভাই আফিনের বউ হিয়া।হিয়া আমার সাথে পড়তো।মেয়েটা অনেক খারাপ ছিলো।চরিত্রের কথা আর না বলি।আমাকে পছন্দ করতো।কিন্তু আমি পাত্তা দিতাম না এরপরে রাগে ও আমার ভাইয়ার সাথে রিলেশনে যায় এবং কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে করে ফেলে।ভাইয়া যখন হিয়াকে নিয়ে বাড়িতে আসে তখন বাবা ওদের মেনে নিতে চায় না।বাবা অনেক চিৎকার চেচামেচি করে হার্ট অ্যাটাক করেন।কারণ বাবা জানতো হিয়া ভালো ছিলো না।কারণ হিয়ার বাবার সাথে বাবার পরিচয় ছিলো।উনিই বাবাকে সবটা বলতেন।এরপরে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।বাবাকে অনেক বুঝানো হয়।তারপরে বাবা স্বাভাবিক হন।আরেক দিকে হিয়া তো আমাকে বিভিন্ন ভাবে জ্বালাতে শুরু করে।যার কারণে আমি বিদেশে চলে যাই।আমি যখন বিদেশ ছিলাম সেই সময়ই আলভি হয়।কিন্তু কয়েকদিন পরে জানতে পারি হিয়া অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।আর ভাইয়া মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।এই খবর যেদিন পাই সেদিনই আমি দেশের উদ্দেশ্য রওনা দেই।কিন্তু দেশে পৌঁছানোর আগেই জানতে পারি ভাইয়া সুইসাইড করেছে।আর ভাইয়ার এইসব সহ্য করতে না পেড়ে বাবা দ্বিতীয় বারের মতো হার্ট অ্যাটাক করেছেন।তাকে আর বাঁচানো যায়নি।একদিনেই আমি আমার বাবা আর ভাইয়া হারাই।যার কারণেই আমি এতোটা পাথর হয়ে গেছিলাম।অনেক কেস করে আলভিকে আমাদের কাছে রাখতে পেরেছি।”
আরহানের চোখ ছলছল করছে।ঈশা আরহানের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
“আরহান এইসব ভেবে আর কষ্ট পেয়ে নাহ্ প্লিজ।”
আরহান মুচকি হেসে বললো,
“চেষ্টা করবো।”
#চলবে………………