#বসন্তের_আগবসন্তের_আগমনেমনে💛🌸
#পর্ব_০২
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
আরহান ঈশার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
“আমি যদি কোলে তুলে নেওয়ার ইচ্ছা স্থাপন করি তখন আর আপনার মত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করবো নাহ্।আমার এমন আটার বস্তাকে চৌদ্দবার কোলে নেওয়ার শখ নেই।”
ঈশার রাগে মুখ লাল হয়ে গেছে।ঈশা দাঁত চেপে বললো,
“আমি মোটও আটার বস্তা নাহ্।আমার ওজন মাত্র পঞ্চাশ কেজি।হাফ সেঞ্চুরি করেছি।আর আপনি বলেন আমি আটার বস্তা!”
“দেখুন এতো কথা বাদ দিয়ে হাতটা ধরুন আর হাঁটা শুরু করুন।আমার আরো কাজ আছে।”
ঈশা বিড়বিড় করতে করতে আরহানের হাতটা ধরলো।সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ঈশা বললো,
“আচ্ছা আপনি কি হাসতে জানেন না?”
“আমি অকারণে দাঁত ক্যালাবো কি জন্য!”
আরহানের কথার কোনো উত্তর দিলো নাহ্ ঈশা।তার বোঝা হয়ে গেছে আরহান প্রচন্ড পরিমাণ ঘাড়ত্যাড়া লোক।তবে সে নিজেও কম নাহ্।সে আরহানের দ্বিগুণ ঘাড়ত্যাড়া।
আরহান ঈশাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজালো।মাসুমা বেগম এসে দরজা খুলে দিলেন।ঈশার পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে তিনি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,
“কি হয়েছে মা তোর?পায়ে ব্যান্ডেজ কেনো?”
ঈশা কিছু বলার আগেই আরহান বললো,
“রিলাক্স আন্টি আপনার মেয়ের তেমন কিছু হয়নি।উনাকে আগে নিয়ে বসান দ্যান সব জেনে নিয়েন।”
মাসুমা বেগম আর আরহান’ ঈশাকে ধরে নিয়ে সোফায় বসালো।আরহানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাসুমা বেগম বললেন,
“বাবা তুমি বসো।”
“না আমি এখনি চলে যাবো।আমার একটু কাজ আছে।”
“কাজ তো করতে পারবে।আগে একটু পরিচিত হয়েনি আমরা!”
আরহান আর কিছু না বলে একটা সোফায় বসলো।মাসুমা বেগম ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“কিভাবে হলো এমন?”
ঈশা সব ঘটনা মাসুমা বেগমকে বললো।
“রাস্তাঘাটে দেখে শুনে চলতে হয় ঈশা।আর বাবা তোমাকে ধন্যবাদ এতো উপকার করার জন্য।তা বাবা তোমার নাম কি?”
“আরহান মির্জা।”
“আরহান মির্জা মানে মির্জা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক?”
“হ্যাঁ।”
“ওহ্ আচ্ছা।তোমার বাবাকে আমি চিনতাম।ঈশার বাবার বন্ধু ছিলেন।উনার মৃত্যুর খবরটা পেয়ে ঈশার বাবা অনেক ভেঙে পড়েছিলেন।আমারও খুব খারাপ লেগেছিলো।মানুষটা অনেক ভালো ছিলেন।”
আরহান কিছু না বলে চুপ করে বসে আছে।ঈশা অবাক হয়ে বললো,
“তারমানে আপনি মির্জা আঙ্কেলের ছেলে?আঙ্কেল তো অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।কি সুন্দর হাসি খুশি মানুষ!তা আপনি এমন মুখবোজা হয়েছেন কেনো?”
ঈশার কথা শুনে আরহান ঈশার দিকে তাকালো।রাগের কারণে সে চোয়াল শক্ত করে ফেললো।তবে মাসুমা বেগম থাকার কারণে ঈশাকে কিছু বললো নাহ্।মাসুমা বেগম ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“আহ্!ঈশা উল্টাপাল্টা কথা বলা বাদ দে।সবাই তো এক হয় না।আর ও কি তোর মতো বকবক করবে নাকি?”
মাসুমা বেগমের কথায় আরহান মুচকি হাসলো।ঈশা মুখে হাত দিয়ে বললো,
“যাক আপনি তাহলে হাসতে পারেন।”
মাসুমা বেগম বসা থেকে উঠে চলে গেলো।মাসুমা বেগম যাওয়ার পরে আরহান বললো,
“আপনি এতো কথা কিভাবে বলেন?মুখের মধ্যে কি অটোমেশিন লাগিয়ে রাখছেন নাকি!”
“দেখুন আমি একটু কথা বেশি বলি ঠিকই।তবে মানুষ খারাপ নাহ্।”
“ডিসকাস্টিং!”
আরহান মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।ঈশাও মুখ ভেঙচি কেটে বসা থেকে উঠতে গেলে পারলো নাহ্।আবার বসে পড়লো।
“ওফ!নিজের পা-ও এখন শত্রু হয়ে গেছে।”
ঈশার কথা শুনে আরহান মৃদু হাসলো যা ঈশার চোখের আড়ালে।কিছুক্ষণ পরে মাসুমা বেগম নাস্তার ট্রে নিয়ে আসলেন।যা দেখে আরহান বললো,
“আন্টি এইসবের কি দরকার ছিলো!”
“প্রথম বার এসেছো খালি মুখেই চলে যাবে নাকি?একটু খাও।”
আরহান কফির কাপ নিয়ে চুমুক দিলো।কফি খাওয়া শেষ করে আরহান মাসুমা বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে ঈশাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।আরহান যেতেই ঈশা সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললো,
“যাক বাঁচলাম।এই অভদ্র লোকের সামনে এতোক্ষণ বসে থাকা যায় নাকি!”
“ঈশা তুই চুপ কর।”
||🌸||
আরহান ঈশাদের বাড়ির নিচে এসে গাড়িতে উঠলো।
“না অনেক দেরি হয়ে গেছে।আজকে আর অফিসে যাওয়া হবে নাহ্।এখন বরং বাড়িতেই চলে যাই।”
আরহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।আরহান বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে আলভি’ আরিশার(আরহানের ছোট বোন) সাথে খেলা করছে।আরহান গিয়ে আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,
“পাপাই কি খবর তোমার?”
“তোমার সাথে রাগ করছি।তুমি আমার জন্য চক্কেট আনো নাই আজকে।”
আলভি কথাটা বলে মুখ গোমড়া করে ফেললো।আরহান হাসি দিয়ে তার পকেট থেকে চকলেট বের করে আলভির হাতে দিয়ে বললো,
“এটা আনতে আমি কি কখনো ভুলতে পারি!”
আলভি চকলেট পেয়ে খুশি হয়ে আরহানকে জড়িয়ে ধরলো।
“ভাইয়া তুই যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে হিয়া ভাবির বাবা আসছিলো।”
“আরিশা আমি তোকে অনেকবার বলেছি ওই মেয়েটাকে ভাবি ডাকা বন্ধ কর।তুই কিছুতেই তা শুনিস নাহ্।”
“অনেকদিনের অভ্যাস তো ভাইয়া।কি আর করবো বল!”
“তা মিনিস্টার সাহেব এসেছিলো কি কারণে?”
“ওই যে তুই হিয়া ভা……না মানে আপুকে অপমান করেছিস তাই।”
“তা উনার মেয়ে ন্যকামি করতে এই বাড়িতে আসে কেনো!এই বাড়িতে না আসলে তো আর অপমানিত হবে নাহ্।”
আরহান কথাটা বলে আলভিকে কোলে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো।আরহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো আলভি ঘুমিয়ে গেছে।
“পাপাই তাহ্ মনে হয় অনেক টায়ার্ড।নাহলে এই সন্ধ্যাবেলায় তো কখনো ঘুমায় নাহ্।”
“সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করলে টায়ার্ড তো হবেই।”
আরহান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়েশা বেগম দাঁড়িয়ে আছে।
“আম্মু ভিতরে আসো।”
আরহান গিয়ে সোফায় বসলো।আয়েশা এসে তার পাশে বসলো।আরহানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“এতো রাগ ভালো না রে!তোর বাবার-ও এমন রাগ ছিলো।যার ফলেই সে আজকে আমাদের মাঝে নেই।”
“আম্মু বাবার রাগ দেখানোটা একদম স্বাভাবিক ছিলো।আমি বাবার সাথে একমত ছিলাম।তবে এভাবে বাবাকে হারাবো তা কখনো ভাবিনি!উনি আমার আইডল ছিলেন।”
আরহান কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তারপরে আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আম্মু তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুবো?”
“এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়!”
আরহান আয়েশা বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো।আয়েশা বেগম আরহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আরহান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
“একটা বিয়ে করে ফেল বাবা।”
আরহান চোখ খুলে আয়েশা বেগমের দিকে তাকালো।
“আম্মু তুমি আর যাই বলো এই বিয়ে নিয়ে কথা বলবে নাহ্।আর আমি আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক ভালো আছি।আমার বিয়ে করার কোনো দরকার নেই।”
“আলভি দাদুভাইয়েরও তো একটা মায়ের দরকার তাই-না!”
“ওর মায়ের প্রয়োজন নেই।ওর বাবাই ওর জন্য ঠিক আছে।”
“তোকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।”
“বোঝানোর দরকার নেই।মাথায় হাত বুলিয়ে দেও তাতেই চলবে!”
/🌼/
ঈশা টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।তৈয়ব সাহেব এসে তার পাশে বসে বললেন,
“মা তোর পায়ে কি বেশি ব্যথা করছে?”
“না বাবা আমি ঠিক আছি।”
“কিন্তু হাঁটতে তো সমস্যা হচ্ছে।”
“একটু সমস্যা আছে কালকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
“রাস্তাঘাটে একটু দেখেশুনে চলতে হয় মা।”
“দেখে শুনেই চলেছি বাবা।ওই আবুল যে হঠাৎ করে সাইকেল এনে আমার পায়ে উঠিয়ে দিবে তা কি আমি জানতাম নাকি!”
“তা হ্যাঁ রে মা আরহানের সাথে তোর কিভাবে দেখা হলো?”
“তা অনেক কাহিনী বাবা।ওই লোক যেমন ভালো তার দ্বিগুণ খারাপ।উনাকে নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছা নেই আমার।এমনিতেও আমি পরের জামাইকে নিয়ে কথা বলি না।”
“এতোকিছু বলার পরেও বললি বলিস নাহ্!”
মাসুমা বেগমের কথায় ঈশা পাশে ফিরে তাকালো।সে দেখলো মাসুমা বেগম তার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।
“আম্মু আমি খাবো না।আমার ভালো লাগছে নাহ্।”
“না খেয়ে খেয়ে দিন দিন পাটকাঠির মতো হয়ে যাচ্ছিস।তোকে তো আজকে খেতেই হবে!”
“আম্মু আমি যথেষ্ট খাই।আর তুমি পাটকাঠি বলছো আর তোমার আদরের অতিথি তো আটার বস্তা বলছে।”
মাসুমা বেগম বললেন,
“কে আরহান নাকি?”
“হ্যাঁ।”
“ও হয়তো মজা করে বলেছে।”
তৈয়ব সাহেব বললেন,
“আচ্ছা তোমরা মা-মেয়ে গল্প করো আমি গেলাম।”
তৈয়ব সাহেব ঈশার রুম থেকে চলে গেলেন।ঈশা আস্তে করে উঠে বসলো।
“আম্মু প্লিজ আমি খাবো না।”
“আজকে কোনো কথা শুনছি নাহ্।পায়ে ব্যথা পেয়ে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে খাওয়াতে গেলে এখন আর দৌড় দিতে পারবি নাহ্।”
“আম্মু তুমি আমার মা নাকি শত্রু?”
“তোর যা মনে হয়।”
মাসুমা বেগম জোর করে ঈশাকে খাইয়ে দিলো।তরপরে ওষুধ খাইয়ে রুম থেকে চলে গেলো।ঈশা চোখ বুজতেই তার ঘুম চলে আসলো।
–
–
–
আরহান’ আলভিকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ডিনার করিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিলো।তারপরে নিজে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে আরহানের ঘুম ভাঙলো মোবাইলে কল আসার কারণে।আরহান চোখ ডলতে ডলতে কল রিসিভ করলো।ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসলো।
#চলবে………………………