বসন্তের আগমনে পর্ব-০১

0
1955

#বসন্তের_আগমনে💛🌸
#পর্ব_০১
#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মেয়েটার কোল থেকে পাঁচ বছরের ছেলেটাকে এক প্রকার জোর করেই নিয়ে নিলো আরহান।মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরহানের দিকে।আরহান রাগে ফুসছে।ছেলেটার গালে একটা চুমু দিয়ে মেয়েটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।মেয়েটাও চোখ রাঙিয়ে বললো,

“এভাবে বাচ্চাটাকে কেড়ে নিলেন কেনো?”

আরহান চিৎকার করে বললো,

“আমার বাচ্চাকে আমি যেভাবে ইচ্ছা কেড়ে নিতে পারি।আর আপনি কে!একজনের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করে দিলেন।তারপরে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেড়ে নিলাম কেনো!”

“ওহ্ তার মানে ছেলেটা আপনার।বাচ্চাটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে ছিলো আর আমি ওর কান্না থামালাম আর আপনি এমন বিয়েইভ করছেন!বাবা হতে হলেও যোগ্যতা লাগে।এভাবে জোরে চিৎকার করতে জানলেই হয় নাহ্।”

আরহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“জাস্ট সার্টআপ।আপনার জন্য কি এখন আমার বাবা হওয়ার সার্টিফিকেট আনতে হবে নাকি!”

“যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আনতে হবে।আপনি কেমন বাবা যে রাস্তার মাঝখানে বাচ্চাকে দাঁড়া করিয়ে চলে যান।”

“এই যে শুনুন….আলভিকে আমি রাস্তার পাশেই দাঁড়া করিয়ে গিয়েছিলাম।ও আইসক্রিম খাচ্ছিলো।তবে ওর হঠাৎ কান্নার কারণ যে আপনি সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারতেছি।হয়তো আপনি ও-কে জোর করে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন।আর আমি গিয়েছিলাম ওই পাড়ে একটা বৃদ্ধ মহিলাকে রাস্তা পাড় করিয়ে দিয়ে আসতে।মহিলাটা অনেকক্ষণ যাবৎ রাস্তা পাড় হতে পারছিলেন না।”

“খুব ভালো করেছেন জনসেবা করে।আর শুনেন ওর কান্নার কারণ আমি না।আপনি ও-কেই জিজ্ঞেস করুন ও কেনো কান্না করতে ছিলো।যত্তসব!মানুষের ভালোও করতে নেই।”

মেয়েটা হেঁটে চলে যেতে যাবে তখন আলভি পিছন থেকে ডাক দিলো,

“ঈশা আন্টি।”

ঈশা পিছনে ফিরে তাকালো।আলভি আরহানের কোল থেকে নেমে ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“সরি আন্টি আমার জন্যই তোমার অনেক বকা খেতে হলো।”

ঈশা আলভির গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“ইটস ওকে বাচ্চু তাহ্।”

আলভি আরহানের দিকে তাকিয়ে বললো,

“বাবাই আন্টি আমাকে কান্না করায়নি।আমি কান্না করতে ছিলাম আমার আইসক্রিম রাস্তায় পড়ে গেছিলো দেখে।আর আন্টিই তো আমাকে মজার মজার কথা বলে হাসালো।”

আরহান ঈশার দিকে তাকালো।ঈশা চোখ ফিরিয়ে আলভির দিকে তাকিয়ে বললো,

“আচ্ছা বাচ্চু আমি আজকে যাই।আল্লাহ চাইলে আমাদের আবার দেখা হবে।”

ঈশা কথাটা বলে চলে গেলো।আলভি এসে আরহানের হাত ধরে বললো,

“বাবাই তুমি আন্টিকে সরি বললে না কেনো?”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“সরি বলার মতো কিছুই হয়নি পাপাই।এইসব মেয়েদের আমি ভালো করে চিনি!প্রথমে আদর করে দ্যান কিডন্যাপ করে নিয়ে চলে যায়।এখন বাসায় চলো তোমার দিদুন না হয় চিন্তা করবে।”

আরহান আলভিকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালো।আরহান গাড়ি ড্রাইভ করে বাসায় আসলো।তার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় হাত মুথো করে বসে আছে।

“ওই মেয়েটা আমার সাথে এমন বিয়েইভ করলো।আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয়নি আরহান মির্জার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার।আর এই মেয়েটা!ও না হয় আলভির কান্না থামিয়েছে তাই বলে আমার সাথে এমন ভাব নিয়ে কথা বলবে।এই আরহান মির্জা আর যাই পছন্দ করুক ভাব নেওয়া একদমই পছন্দ করে নাহ্।ওই মেয়ের সাথে যেন আমার আর কখনো না দেখা হয়!”

আরহান উঠে দাঁড়িয়ে নেভি ব্লু শার্ট,কালো ব্লেজার আর কালো প্যান্ট পড়ে রেডি হলো।সে রুম থেকে বের হয়ে নিচে গিয়ে দেখলো হিয়া আলভিকে কোলে নিয়ে বসে আছে।যা দেখে আরহানের রাগ মাথায় উঠে গেলো।সে গিয়ে হিয়ার সামনে দাঁড়ালো।আরহানের দিকে তাকাতেই হিয়ার মুখটা শুকিয়ে গেলো।সে আলভিকে সোফায় বসিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আসলে আমি একটু আলভি কে দেখতে এসেছিলাম।”

“আপনাকে আমি একবার না হাজার বার নিষেধ করেছি এই বাড়িতে আসতে।আপনি তারপরেও এই বাড়িতে পা রেখেছেন।এখন কি আমি আপনার ঘাঁড় ধরে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবো!”

আরহান কথাগুলো বলে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।হিয়া কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে বললো,

“ছেলেটা আমারও!আমার সাথে এমন ব্যবহার করা বন্ধ করো।নাহলে তোমাদেরই ক্ষতি।”

আরহান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

“হ্যাঁ আপনার মিনিস্টার বাবাকে গিয়ে সবটা বলেন।তারপরে দেখি উনি কি করেন!”

হিয়া আর কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেলো।আয়েশা বেগম এসে আরহানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“এতো রাগ ভালো নাহ্ বাবা।এমন করতে হয় না মানুষের সাথে।”

“আমি এমনই আম্মু।আর আমাকে এমন করতে বাধ্য করেছে এই সমস্ত মানুষজনই।”

আরহান কথাটা বলে আলভিকে টাইট হাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেলো।আরহান যাওয়ার পরে আয়েশা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

আরহান গাড়ি ড্রাইভ করছে হঠাৎ আরহান দেখলো রাস্তার মাঝখানে একটা মেয়ে বসে আছে।আরহান কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।সে গাড়ি থেকে নেমে দেখে একটা মেয়েটা পায়ে হাত দিয়ে বসে আছে।তবে চুলের কারণে মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে নাহ্।আরহান মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আপনার কি কিছু হয়েছে?”

মেয়েটা আরহানের দিকে তাকাতেই আরহান মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।কারণ মেয়েটা আর কেউ নাহ্ ঈশা।আরহান চলে যেতে গেলে ঈশা চিৎকার করে বললো,

“এই যে মানবদরদী…..সবার জন্য তো এক নিয়ম হওয়া উচিত।একজন বৃদ্ধাকে রাস্তা পাড় করিয়ে দিতে পারেন আর একটা মেয়ে রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে বসে আছে তাকে দেখেও মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছেন!”

আরহান পিছনে না তাকিয়েই বললো,

“আমি যার তার সেবা করি নাহ্।”

“যার তার না করেন মানুষের তো করেন।”

ঈশার কথায় আরহান পিছনে ঘুরে তাকালো।ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“কি হয়েছে আপনার?এভাবে রাস্তার মাঝখানে বসে থাকলে তো গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাবে।”

“আরে একটা অসভ্য ছেলে আমার পায়ের উপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে চলে গেছে।এখন তো আমি হাঁটতেই পারছি নাহ্।”

“ঠিকই আছে।মানুষকে বেশি জ্ঞান দেন তাই এমন হয়েছে।”

“ও তার মানে আপনি বদদোয়া করেছেন।”

“আমার তো আর কাজ নেই যে আপনার জন্য বদদোয়া করবো!”

আরহানের কথায় ঈশা কিছু বলতে তার আগে আরহান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

“হাতটা ধরুন আর উঠে দাঁড়ান।”

“আগে বলেন দয়া করছেন নাকি সেবা?”

“ধরে নিন কোনোটাই নাহ্।নিজের যাওয়ার রাস্তা ক্লিয়ার করতেছি।”

ঈশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“আপনি মশাই মানুষ ভালো নাহ্।”

“সেটা আমি ভালো করেই জানি।আপনাকে কেউ বলতে বলেনি।”

ঈশা মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বললো,

“আমি আপনার থেকে সাহায্য নিবো নাহ্।”

আরহান হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে বললো,

“বেশ আমার থেকে সাহায্য নিতে হবে নাহ্।সো রাস্তা থেকে সরে যান।নাহলে আপনার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে বাধ্য হবো।”

ঈশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,

“আপনি এমন কেনো!”

“আপনাকে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি নাহ্।”

আরহান চলে আসতে গেলে ঈশা পিছন থেকে বললো,

“ওই শুনেন…..”

ঈশার ডাকে আরহান পিছনে ফিরে তাকালো।ঈশা আরহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

“একটু হাতটা ধরে তুলবেন।”

আরহান আর কিছু না বলে ঈশার হাত ধরে তাকে বসা থেকে দাঁড়া করালো।তবে ঈশা হাঁটতেই পারছে নাহ্।আরহান ঈশার পায়ের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো।পায়ের বেশখানিকটা জায়গা লালচে হয়ে আছে।হয়তো রক্ত জমাট বেঁধেছে।আরহান একটা নিশ্বাস ফেলে ঈশাকে কোলে তুলে নিলো।আরহানের এহেন কাজে ঈশা চমকে গেলো।সে হা হয়ে আরহানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে আরহানের চোখ গাড়ির দিকে।আরহান ঈশাকে কোলে করে নিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসালো।তারপরে নিজে গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং করা শুরু করলো।

“আরে আপনি আমাকে গাড়িতে এনে বসালেন কেনো?”

“আপনি তো হাঁটতেই পারছে না।যাবেন কি করে?”

“সে আমি কোনো ভাবে চলে যেতাম।”

“চুপ করে বসে থাকুন।আপনার পায়ের অবস্থা ভালো নাহ্।আপনাকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে।”

“আমার জন্য এতো কিছু করতে হবে না।”

“আমি মানুষের সেবা করতে পছন্দ করি।আর আপনি যদি এলিয়েন হতেন তাহলে ভেবে দেখতাম করবো নাকি করবো নাহ্!”

আরহান কথাটা বলে গাড়ি চালানোতে মন দিলো।

“আচ্ছা আপনি যে আমাকে এভাবে কোলে তুলে নিলেন ভাবি জানলে রাগ করবে না?”

আরহান ঈশার দিকে না তাকিয়েই বললো,

“কোন ভাবি?”

“আপনার বউ।”

“সেটা আপনার জানার দরকার নেই।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“ভাবের কারণে বাঁচে নাহ্।”

কথাটা বলে ঈশা মুখ ভেঙচি কেটে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো।

আরহান হসপিটালের সামনে গাড়ি থামালো।তারপরে টলিতে করে ঈশাকে ডক্টরের ক্যাবিনে নিয়ে গেলো।ডক্টর ঈশার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো আর কিছু ওষুধ দিলো।আরহান ঈশাকে এনে গাড়িতে বসিয়ে বললো,

“এই কয়দিন বেশি তিড়িংবিড়িং করবেন নাহ্।নাহলে কিন্তু আরো সমস্যা হবে পায়ে।”

ঈশাকে চোখ রাঙিয়ে বললো,

“ওই আপনি জানেন আমি তিড়িংবিড়িং করি?”

“আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়।এতো ডিটেইলসে জানা লাগে নাহ্।”

“আজকেই প্রথম দেখলো এতেই এতোকিছু বুঝে গেলো।”

আরহান কিছু না বলে গাড়ি চালানো শুরু করলো।

“ওই সাইকেল চালানো ছেলেটাকে খুঁজে পেলে মেরে হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙে ফেলবো।আমাকে খোঁড়া বানিয়ে দিলো ছেলেটা!”

আরহান ঈশার দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।তারপর বললো,

“বাড়ি কোথায় আপনার?”

ঈশা তার বাড়ির ঠিকানা বললো।আরহান ঈশার বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“একা একা হেঁটে যেতে পারবেন?”

ঈশা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বললো।আরহান কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে ঈশার হাত ধরে বললো,

“এখন হাত ধরেই নিয়ে যেতে হবে।তখন তো হিরো স্টাইলে কোলে তুলে নিয়েছিলাম।কিন্তু এখন কোলে তুলে নেওয়াটা ঠিক হবে নাহ্।যতই হোক বাড়িতে তো আপনার বাবা-মা আছে।”

“আমিও অন্যের জামাইয়ের কোলে উঠতেও চাই নাহ্।”

#চলবে…………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে