#বর্ষার_প্রণয়ের_কথা
#পর্ব_০৪
#নুর_নবী_হাসান_অধির
ক্লাস শেষে পাঁচ বন্ধু সেমিনারে আড্ডা দিচ্ছে৷ মূলত আড্ডা নয় নীরবতা পালন করছে৷ ধীরে ধীরে সবাই সেমিনার থেকে চলে যেতে থাকে৷ তাছাড়া ভার্সিটি বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে৷ দূরের ছাত্ররা সাধারণত বাসে যাতায়াত করে৷ সেমিনারে বসে আছে পাঁচ জোড়া চোখ৷ একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে৷ কারো মুখে কোন কথা নেই৷ মেঘ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোরা থাক। আমি চলে যাচ্ছি৷ বাসায় একটু কাজ আছে৷”
মেঘ চলে যেতে নিলেই সৌরভ মেঘকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে৷ ঘটনা এত দ্রুত ঘটে বুঝার উপায় নেই৷ মেঘ ভয়ে চিৎকার করার আগেই সৌরভ মেঘের মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“কোন কথা বলবি না৷ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে৷”
এমন ঘটনা ঘটতে পারে ছোঁয়া, ঋতু, রঙ্গন ভাবতেই পারেনি৷ সৌরভ তাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে মেয়ের হাত ধরে এক প্রকার টানতে টানতে নিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসে৷ ঋতু রঙ্গের বিয়ে দুইদিন হয়েছে৷ সেদিনের পর থেকে মেঘ একবারের জন্যও সৌরভের সাথে কথা বলেনি৷ যা সৌরভ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না৷ সৌরভ মেঘকে টানতে টানতে তৃতীয় বিজ্ঞান ভবন বর্তমান নাম স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ভবনের সামনে নিয়ে আসে৷ একপ্রকার রাগ নিয়ে বলল,
“আমার সাথে দুইদিন থেকে কথা বলিস না কেন? আমি কি দোষ করেছি? রঙ্গনের বিয়ের পর থেকে কথা বলিস না৷ আমার এসব ভালো লাগে না৷”
মেঘ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“আমার হাত ছাড়। ব্যথা পাচ্ছি৷ দরকার পড়লে তো কথা বলব৷ দুইদিন কথা বলার দরকার পড়েনি তাই কথা বলিনি৷”
“আমাকে তোর দরকারের ফেরিওয়ালা মনে হয়৷ কই বাকী তিনজনকে মনে হয়নি৷ তাদের সাথে তো দিব্যি কথা বলোস আমার সাথে কথা বললে কি হয়?”
“তুই এভাবে রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি ভুল কি করলাম? শুন ইদানীং আমার কিছুই ভালো লাগে না৷ একা থাকতে ভালো লাগে৷ বল মায়া বাড়িয়ে কি লাভ? কিছুদিন পর আমরা সবাই আলাদা জায়গায় থাকব৷”
সৌরভ ক্ষোভ নিয়ে কর্কশ গলায় বলল,
“কানের নিচে দিব দুইটা৷ শালিক পাখির মতো বেশি বুলি শিখে ফেলছিস! সেদিন রাতে তুই রিক্সা করে চলে আসলি কেন?”
“তোকে আর বিরক্ত করতে চাইনি৷ তাছাড়া তোর সাথে তোর বোন সুভা ছিল৷ সেজন্য আমি রিক্সা করে চলে আসছি৷”
“আমি তোকে চলে যেতে বলছিলাম৷ তুই চলে আসলি কেন? আমি তোকে বললাম দুই মিনিট দাঁড়া আমি আসতেছি৷ আমাকে এতটাই গুরুত্বহীন মনে হয়৷”
“তুই আমার কেউ না যে তোকে বলো আসতে হবে৷ আমার জীবনে মা বাবা ছাড়া সবাই গুরুত্বহীন৷ তোর কোন জায়গায় নেই৷”
“তোর কিসের এতো অহংকার? আজ তোর জীবন থেকে আমাকে বের করে দিলি৷ ভালোই বললি আমি কে? তোর জীবনে আমার কেন গুরুত্ব থাকবে৷”
মেঘ বিরক্তি স্বরে বলল,
“আমার এসব কথা ভালো লাগছে না৷ আমি গেলাম৷”
মেঘ কথা না বাড়িয়ে চলে আসে৷ সৌরভ মেঘকে আটকাল না৷ রঙ্গন, ছোঁয়া, ঋতু তাদের পিছু পিছু আসে৷ সৌরভ কোন ভুল করল কিনা দেখার জন্য৷ তারা জানে সৌরভ সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও মেঘের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না৷ সৌরভ ধপাস করে মাটিতে বসে পড়ে৷ রঙ্গন দৌড়ে এসে সৌরভকে ধরল৷ সৌরভ রাগ নিয়ে বলল,
“আমি কি করব? আমি মেঘকে খুব ভালোবাসি৷ মেঘ কি আমার ভালোবাসার সাড়া দিবে না? কিছুই কি বুঝতে পারে না? আমাকে সব সময় এড়িয়ে চলে৷ আমি কি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়?”
ছোঁয়া সৌরভকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তুই মেঘকে ভুলে যাহ৷ মেঘ তোর ভালোবাসার সাড়া দিবে না৷ আমার জানা মতে মেঘ মাহবুব নামে কোন এক ছেলেকে ভালোবাসে৷ মেঘ তার ভালোবাসায় এতটাই বিভোর যে তোর ভালোবাসা তার চোখে পড়েনি৷”
সৌরভের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ ছোঁয়ার কথায় তিন জোড়া শান্ত চোখ তীরের মতো তার দিকে নিক্ষেপ করে৷ যেন তিনজনই ভুত দেখেছে৷ সৌরভ চিৎকার করে বলল,
“ছোঁয়া তুই যদি মিথ্যা করে বলিস তোর জিহ্বা কেটে ফেলব৷ মেঘকে শুধু আমায় ভালোবাসে। অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না৷ কে মাহবুব? তাকে মেঘের আশেপাশে কোনদিন তো দেখলাম না৷ মেঘও কোনদিন শেয়ার করেনি৷”
রাগে সৌরভের চোখ লালচে বর্ণ ধারণ করেছে৷ ছোঁয়াকে এখনই খু ন করে ফেলবে৷ সাথে চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রঙ্গন ঋতু৷ তাদের চোখেও হাজারও প্রশ্ন৷ ছোঁয়া ভীত গলায় ভয়ে ভয়ে বলল,
“আমি কিছুদিন আগেই জেনেছি৷ সে ফোনে কথা বলছিল। তাকে ধরে ফেলার পর আমার সাথে শেয়ার করছে৷ মাহবুব ঢাকায় থাকে৷ তার বাবা ঢাকায় রামপুরা অবস্থিত৷ মেঘ কলেজ জীবন থেকে মাহবুবের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে৷ আমি সেদিন তোকে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মেঘ এসব কিছু কারোর সাথে শেয়ার করতে চাইনা৷”
সৌরভ হতাশ স্বরে বলল,
“মেঘ কি জানত না আমি তার প্রতি কতটা দুর্বল? হাসির ছলে তাকে কতবার প্রপোজ করছি, কখনও তো বাঁধা দেয়নি৷ কেন আমার মন নিয়ে খেলা করল? আমি তো কিছু চাইনি তার কাছে৷ আমি শুধু তার কাছ থেকে একটু ভালোবাসা চেয়েছি৷”
ছোঁয়া সৌরভের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“এখনও হারানোর কিছু নেই৷ আমি আরও একটা সত্য ঘটনা জানি৷”
সৌরভ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“আর কি জানিস? আমি সবকিছু জানতে চাই৷ আমার মেঘের বিষয়ে সবকিছু জানতে চাই৷”
ছোঁয়ার সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলা শুরু করল,
“মাহবুব মেঘকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেছে৷ মেঘের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে৷ যার জন্য মেঘ আত্মহত্যা করছিল৷ আল্লাহ সহায় থাকায় মেঘের কোন ক্ষতি হয়নি৷”
তিন জনের চোখ যেন আকাশ প্রাণে৷ মেঘ আত্মহত্যা করেছিল কেউ জানে না৷ সবার চোখে হাজারও প্রশ্ন ঘুরছে। ছোঁয় পুনরায় বলতে শুরু করল,
“অনেকদিন হসপিটালের ভর্তি থাকার জন্য সে রাজশাহীতে দেরি করে এসেছে৷ কেউ কি জানতে চেয়েছিলি, কেন দেরী করে আসছে? সে আমাদের বলছে তার কাজিনের বিয়ে৷ তার তো একটাই কাজিন৷ তার বিয়ে আরও আগে হয়ে গেছে৷ সে আমাদের মিথ্যা কথা বলেছে৷ মেঘের মন ভাঙার জন্য সে এখন একা থাকে৷ একাকিত্বকে বেছে নিয়েছে জীবন সঙ্গী হিসেবে। তা না হলে চঞ্চল মেয়ে কোনদিন শান্ত হতে পারে না।”
মেঘ চোখের জল মুছতে মুছতে বাসায় যাচ্ছে আর মনে মনে বলছে,
“আমায় ক্ষমা কর সৌরভ। তোকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ আমার জীবনে দ্বিতীয় বার বসন্ত আসবে কিনা জানা নেই৷ কিন্তু আমি নিজে থেকে বসন্ত নিয়ে আসতে পারব না৷ আমার জীবন থেকে সমস্ত রং হারিয়ে গেছে৷ আমার ভালোবেসে আর হারতে চাইনা৷ ভালোবাসার মতো বিষাক্ত মায়াজালে নিজেকে জড়াতে চাইনা৷”
______________________
ল্যাব ক্লাসে রক্তের ফোয়ারা বসে যাচ্ছে৷ দরজার বাহিরে জুড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য ছাত্র৷ অন্য ডিপার্টমেন্ট থেকেও ছাত্ররা এসে হাজির৷ যদিও ভার্সিটি জীবনে কে কি করছে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে না৷ কক্ষ পরিদর্শক দায়িত্বে যিনি আছেন ভয়ে ভয়ে তালা খুললেন৷ তিনিও ভীষণ ভয়ে আছেন৷ তাজা রক্ত কোথা থেকে আসল? গতকাল ভার্সিটি বন্ধের পর কপাট খুলেনি তাহলে তাজা রক্তের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে কেন? দেখে মনে হচ্ছে মাত্র কেউ রক্তের বন্যা বইছে৷ দরজা বন্ধ ভিতরে প্রবেশ করল কিভাবে?
ভয়ে ভয়ে কপাঠ ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল৷ ভিতরে প্রবেশ করেই সবার চক্ষু চড়কগাছ। সবে মাত্র ছয় টা কুকুর জবাই করেছে৷ এখনও কুকুরের শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে৷ কুকুরের মাথা ল্যাবের ড্যাক্সে উপর রাখা৷ প্রতিটি কুকুরকে পেটে সরল দোলকের সরু অংশ প্রবেশ করানো৷ নির্মমভাবে কে হত্যা করল? কেন কুকুরকে হত্যা করা হয়েছে? কাউকে ভয় দেখানোর জন্য হত্যা করা হয়নি তো৷
এতো পরিমাণে রক্ত দেখে ঘটনাস্থলে ঋতু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷ ছোঁয়া আর মেঘ তাকে ধরাধরি করে ক্লাস রুমে নিয়ে আসে৷ চোখে মুখে জলের ছিঁটা দিয়ে জ্ঞান ফিরায়৷ ঋতু জ্ঞান ফিরার পর রঙ্গনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
“সে কাউকে ছাড়বে না৷ সবাইকে মেরে ফেলবে৷ কাউকে বাঁচতে দিবে না৷ কারো সুখ সহ্য নয় তার৷”
চলবে…….
ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷ সবাই একটু রেসপন্স করবেন৷