বর্ষন ছোঁয়ায় মিষ্টি রোদ পর্ব-০৫

0
1363

#বর্ষন_ছোঁয়ায়_মিষ্টি_রোদ💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
পর্ব-০৫
আজ ৩ দিন হলো,
ছোঁয়া এখন সুস্থ।
এর মধ্যে রোদ এসে ছোঁয়ার খেয়াল রেখেছে অনেক।
বর্ষন সেই রাতের পরে আর আসে নি।
ছোঁয়ার চোখ দুটো যেন শুধু বর্ষনের খোঁজে ছিল।। কিন্তু প্রতিবার বর্ষন এর জায়গায় সে রোদ কে পেয়েছে।
সেদিন রাতের কথা ছোঁয়ার মনে নেই।
কিন্তু বর্ষনের কাছে ছিল সব থেকে সুমধুর রাত৷
বর্ষন ছোঁয়াকে দেখেছে দুর থেকে।
কাছে আসে নি।
এভাবে কাটে দিন।
রোদ অনেকটা নয়লা বেগমের মনের কাছে চলে আসে।
আর ছোঁয়ার থেকে দুরত্ব বাড়ে বর্ষন এর।
ছোঁয়ার দুটো চোখ প্রতিটা সেকেন্ড বর্ষন এর খোঁজে নিয়জিত থাকে।
কিন্তু আফসোস বর্ষনের দেখা নেই।
আজ ছোঁয়া সুস্থ পুরোপুরি সুস্থ।। আজ থেকে সে ভার্সিটিতে যাবে,
–মা খাবার দেও।
–এই ত খেয়ে যা।
আর তোর বাবা আজ তোর ভার্সিটির দিক দিয়ে যাচ্ছে বাব এগিয়ে দিবে তোমায়।
–আচ্ছা মা।
★★★
ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে সোজা ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছনায় গা এলিয়ে দেয় ছোঁয়া,
চোখ বন্ধ করতে হটাৎ হাতে টান পরে,
মৃদু চোখ খুলে ছোঁয়া তাকালো,
চোখ খুলে তাকাতে যেন ১০০০ ভোল্ট এর সক্ট খেলো ছোঁয়া বর্ষন দাঁড়িয়ে সামনে ছোঁয়ার হাত ধরে টানছে,
ছোঁয়া শুয়া থেকে উঠে বসলো।
কানের কাছে চুল গুঁজে বলল,
–কি হয়েছে?
–অসুস্থ নাকি আজকেও?
–না ত।
–তাহলে পড়ার কথা কি করে ভুলে খেয়েছো খুকি।
–খুকি(হতভাগ হয়ে)
–হ্যাঁ খুকি ওঠ উঠে পড়তে বস।
বর্ষন এমন ভাব করছে যেন কিছুই হয় নি।
যেন এতো দিন সব ঠিকঠাক চলছিল।
যেন প্রতিদিন ছোঁয়াকে পড়াতে আসতো।
এমন কেন এই মানুষ টা তা ছোঁয়া আজও জানে না।
ছোঁয়া উঠে বসে,
বর্ষন এর কাছে পড়তে বসে।
বর্ষন পড়াতে থাকে।
–নে এটা লিখে দে,
বর্ষনের দেওয়া প্রশ্ন টা ছোঁয়া লিখা শুরু করে।
হটাৎ বর্ষন এর পায়ে ছোঁয়ার পায়ের ছোঁয়া লাগে।
ছোঁয়া তখনি পা টা সরিয়ে নিতে চাইলে বর্ষন ছোঁয়ার পা টা চেপে ধরে।
ছোঁয়ার হাত থেকে কলম টা পড়ে যায় বর্ষন এর এমন কাজে।
এরি মাঝে ঘরে আসে ছোঁয়ার মা।
ছোঁয়া মাকে দেখে চুপ হয়ে যায়।
–কিরে বর্ষন পড়া কি কিছু হচ্ছে তোর ছাত্রী এর।। –
–হ্যাঁ আম্মু পড়া ত হচ্ছে সমান সমান দেখো ন প্রশ্ন দিয়েছি তা এখনো লেখা হয় নি।
,–কিরে ছোঁয়া কি বলে বর্ষন।
ছোঁয়ার মুখ আটকে গেছে গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
বর্ষন ক্রমশ ছোঁয়ার পা টা জোরে চেপে ধরে অন্য পা দিয়ে স্লাইড করতে আছে ছোঁয়ার পায়ে।
ছোঁয়ার কথাও আটকে গেছে সাথে কাজও।
–কি হলো ছোঁয়া নিরব থেকে সম্মতি দিচ্ছিস নাকি। (নয়লা বোগম রেগে)
–ইয়ে মানে মা (ছোঁয়ার বলা এবারো বন্ধ করে দিলো।
বর্ষনের কাজ)
–তোর বাবাকে আজ বলব দাড়া আদরে আদরে মাথায় উঠেছিস।
,– মা,
বর্ষন ছোঁয়ার পায়ে আরো বেশি ঘভীরে স্লাইড করতে থাকে।
ছোঁয়া এক দম চুপ হয়ে যায়।
আর নয়লা বোগম রুম থেকে চলে যায়।
নয়লা বেগমের যওয়ার পর পরেই ছোঁয়া পা সরাতে চায়।। কিন্তু বর্ষন শক্ত করে পা টা ধরে বসে,
–কি হচ্ছে কি ভাইয়া।
–কি হবে (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
–ছাড়ুন আমায়।
–আমি কি ধরে রেখেছি নাকি (স্লাইড করতে করতে)
–দ দেখুন,
–প্রশ্ন লিখা শেষ কর জলদি।
–ভাইয়া প্লিজ সব গুলিয়ে যাচ্ছে আমায় ছাড়ুন৷। –
–কেন গুলিয়ে যাওয়ার ত কথা না।
কাউকে ভালোবাসলে নয় গুলিয়ে যেত (আগের অবস্থায় থেকে)
ছোঁয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষন এর দিকে।
বর্ষনের কাজ গুলো সব সমশ ছোঁয়াকে ভাবায়।।
বুঝতে পারে না ছোঁয়া ঠিক চায় কি বর্ষন।
কিছু সময় এভাবে নিরবে কাটার পর বর্ষন উঠে দাঁড়ায়।
বিকালে রেডি থাকিস আম্মাকে বলা আছে তোকে নিয়ে বাসায় যাবো আম্মু তোরে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে।
ছোঁয়া এখনো স্টাচু হয়ে আছে।
চুপচাপ বর্ষনের কথায় মাথা নাড়ায়।
বর্ষন দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফেরত আসে।
–আর হ্যা।
–কি!
–এখন থেকে এগুলা মাছ ভাত অভ্যাস করে নে।
বর্ষন এর কথায় ছোঁয়ার হৃদয়ে হাজারো কম্পন সৃষ্টি হয়।
ছোঁয়া একটা বড়ো নিশ্বাস নেয়।
বর্ষন মুচকি হেসে চলে আসে।।
ছোঁয়া সেভাবেই বসে আছে।
কি আজব এই ছেলেটা চায় কি।
সমস্যা কি তার।
–ছোঁয়া।
–হ্যাঁ মা।
–গোসল করে এসো খেতে তোমার শুধু খালামনির বাসায় যাবা একটু পরে।
–আসছি মা।
ছোঁয়া উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে গোসল করে আসে।
চুলে গামছা পেঁচিয়ে বাইরে আসে।
মা বাবার সাথে খেয়ে নেয়।
–কিছুক্ষণ পর বর্ষন আসবে। তুই রেডি হয়ে থাকিস।
–আচ্ছা শুধু খালামনি কে আসতে বলো।
–তোর অসুস্থতার সময় তোর শুধু খালামনি এই বাড়ি থেকে এক পা নড়ে নি এখন আবার আসতে বলব।
–না আচ্ছা আমি যাবো।
ছোঁয়া রেডি হয়ে নেয়।
একটা বেবি পিংক কালারের থ্রি পিচ পরে চুল গুলোকে সামনে দিয়ে হালকা বেঁধে নেয়।
ওড়না জড়িয়ে হাতে ঘড়ি পরতে বর্ষন এর আগমন।
আয়নার ভেরত দিয়ে বর্ষন এর মুখটা দেখতে পায় ছোঁয়া।
লোকটালে বরাবরই সুন্দর লাগে।
কথায় আছে যাকে ভালোবাসা হয় তাকে নাকি সব সময় সুন্দর দেখায়।
কিন্তু ছোঁয়া কি ভালোবাসে বর্ষন কে।
ওর কাছে আসা ভালো লাগো ছোঁয়ার।
–কিরে হা করে কি দেখছিস।
বর্ষন এর কথায় ছোঁয়ার ধ্যান ফিরে,
–কিছু না।
–আজ মিষ্টি আসবে জানিস।
মিষ্টির নাম শুনে ছোঁয়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।।
গম্ভীর কন্ঠে বলে,
–কেন মিষ্টি কেন আসবে।
–ওকে তোর ভার্সিটিতে এডমিশন করিয়ে দিয়েছি।
এখন ও আমাদের বাসায় থেকে পড়াশুনা করবে।
এই কথা শুনে ছোঁয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।
(মিষ্টি হচ্ছে বর্ষন এর এক মাত্র ফুপাতো বোন। ছোঁয়ার সাথেই পড়ে।
ছোঁয়ার মিষ্টি কে একটুও পছন্দ না।
আসলে ঠিক মিষ্টি কে পছন্দ না তা কিন্তু না ওর মিষ্টির আসে পাশে বর্ষন কে পছন্দ নয়।
মিষ্টি কে বর্ষন কে পছন্দ করে তাও কিন্তু না।
মিষ্টি ছোঁয়ার সাথে সব সময় ভালো বন্ধুত্ব করতে চেয়েছে।। কিন্তু ছোঁয়ার মিষ্টিকে বর্ষন এর আসে পাশে একটুও পছন্দ নয়।)
–থাকবে মানে কয় দিন থাকবে।
–ওর গ্রাজুয়েশন কম্পিলিট না হওয়া পর্যন্ত থাকবে।
–না (চিৎকার করে)
বর্ষন অবাক দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
–মাইক এনে দিবো?
–ইয়ে মানে কেন থাকবে?
বর্ষন মুচকি হেসে ছোঁয়াকে কাছে টেনে নেয়।
–কেন থাকলে কি সমস্যা বউ টা।
–বউ (চোখ বড়ো বড়ো করে)
–বোন বলেছি বউ না।
–ছাড়ুন ত।
চলেন শুধু খালামনির কাছে যাবো।
কথাটা বলেই ছোঁয়া বেরিয়ে আসে
আর বর্ষন বাকা হাসি দেয়,
–এবার ত তোকে মুখ খুলতেই হচ্ছে ছোঁয়া।
বর্ষন বেরিয়ে আসে।
ছোঁয়াকে নিয়ে সোজা বাসায় আসে
।ছোঁয়া দৌড়ে অনিলা বেগম কে জড়িয়ে ধরে।
–শুধু খালামনি।
–হ্যাঁ মা বল।
–কি কি রান্না করেছো খেতে দেও।
–এই তুই না খেয়ে এসেছিস। (বর্ষন)

–হ্যাঁ ত আবার খাবো সমস্যা?
–না সমস্যা কি খা।
বর্ষন উপরে চলে যায়।
ছোঁয়া বসে বসে তার খালামনির সাথে গল্পে মেতে ওঠে।
অনিলা বেগম ছোঁয়ার কাছে ছোঁয়ার আরেক মা।
ছোঁয়া বেশ হাসি খুশি ছিল কিন্তু হটাৎ কলিংবেল বাজাতে রহিম চাচা দরজা খুলে দেয়,
রহিম চাচা বর্ষন দের বাড়ির পুরোন কাজের লোক।
রহিম চাচা দরজা খুলতে যার আগমন হলো তাকে দেখে ছোঁয়ার হাসি মুখ শুকনো কাঠে পরিনত হলো,
চলবে,
(এসে গেছে মিষ্টি মিঠাই 🙆‍♀️. গল্প সম্পর্কে সবার মতামত আসা করছি💖)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে