#বর্ষন_ছোঁয়ায়_মিষ্টি_রোদ💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
পর্ব-০৪
ছোঁয়ার অবস্থা খারাপ হওয়ায় ডক্টর ডাকা হয়।
ছোঁয়ার আম্মু পায়চারি করছে।
মেয়ের অবস্থা ধিরে ধিরে অবনতি হচ্ছে।
এই অবস্থায় কি করবে কি না করবে তা বুঝতে পারছে না ছোয়ার আম্মু।
এদিকে ছোঁয়ার বাবা বাসায় নেই।
এই অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে এক দম একা বাসায় ছোঁয়ার আম্মু।
ছোঁয়ার আব্বু বাইরে গেছে শহরের।
আজ চাইলেও ফিরতে পারছে না।
ছোঁয়ার আম্মু ডক্টর ডেকে নিলো।
ডক্টর এসে চেকাপ করছে,
–মিসেস চৌধুরী আপার মেয়ের অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগায় সমস্যা হয়েছে।
অনেক ভিজেছে বোধহয়।
আর ও কিছু নিয়ে ভয় পেয়েছে যার জন্য জ্বর টা আরো কড়া হয়েছে।
আজকের মধ্যে যদি না কমে তবে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে।
ডক্টর কিছু ঔষধ দিয়ে গেল।
কিন্তু ঔষধ আনবে কে?
বাসায় ছোঁয়ার আম্মু আর ছোঁয়া ছাড়া কেউ নেই।
ছোঁয়ার আম্মু উপায় না পেয়ে বর্ষন কে কল করে
–হ্যালো বাবা।
–হ্যাঁ আম্মু বলো।
–বাবা ছোঁয়া ভিশন অসুস্থ হয়ে পরেছে ডক্টর ঔষধ দিয়ে গেছে বাসায় তোর আঙ্কেল নেই কি করে ঔষধ আনবো বল তুই একটু আয়।
–আচ্ছা আম্মু তুমি অপেক্ষা করো আসছি।
বর্ষন ফোন কেটে দেয়।
কিছু সময়ের মধ্যে দরজার কলিংবেল বেজে ওঠে।
ছোঁয়ার আম্মু মনে করে বর্ষন এসেছে,
দরজা খুলে সামনে থাকা ছেলেটাকে দেখে চিনতে পারে না নয়লা বেগম(ছোঁয়ার আম্মু)
–কে তুমি বাবা?
–আন্টি আমি ছোঁয়ার সাথে একি ভার্সিটিতে পড়ি। আমার নাম রোদ।
শুনলাম ছোঁয়া নাকি ভিশন অসুস্থ।
–হ্যাঁ কিন্তু কার থেকে?
–আন্টি বর্ষার থেকে।
–ও বাবা আমায় একটা উপকার করবে?
–হ্যাঁ আন্টি অবশ্যই বলুন।
–আমার ছোঁয়াকে কিছু ঔষধ দিয়ে গেছে বাসায় তোমার আঙ্কেল নেই শহরের বাইরে গেছে তুমি যদি একটু এনে দিতে।
–আরে আন্টি এটা কোন কথা আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি।
রোদ ঔষধ আনতে যায়।
নয়লা বেগম মেয়ের কাছে বসে
কিছুক্ষণ পর আবার কলিংবেল বেজে ওঠে,
এবার বর্ষন এসেছে।
–আম্মু দেও কি ঔষধ আনতে হবে।
–একটু আগে ছোঁয়ার এক বন্ধু এসেছিল ওকে দিয়েছি আনতে।
–ছোঁয়ার বন্ধু কে?
–রোদ নাম বলল,
রোদের নাম শুনতে বর্ষনের রেগে যায়।। কিন্তু তাও নিজেকে কনট্রোল করে নয়লা বেগমের সমনে,
–আম্মু ছোঁয়া কই।। –
–ঘরে।
বর্ষন ছোঁয়ার কাছে যায়।
ছোঁয়া অচেতন হয়ে পরে আছে বিছানায়।
মায়াবী পরিটা আজ নিশ প্রাণ।
এর মাঝে রোদ ঔষধ নিয়ে আসে।
ছোঁয়ার রুমে আসতে বর্ষন এর দেখা পায়।
বর্ষন কে দেখে রোদ মাথা নিচু করে সালাম দেয়,
–আসসালামু আলাইকুম স্যার।
–ওয়া আলাইলুম সালাম। (গম্ভীর কন্ঠে)
–আন্টি ঔষধ।
–ধন্যবাদ বাবা কষ্ট কারার জন্য।
–না না ধন্যবাদের কিছু নেই।
–তুমি বসো আমি কিছু নিয়ে আসি।
–না না আন্টি আজ না পরে একদিন আজ আমি আসি।
–কিন্তু,
–আজ না আন্টি পরে এক দিন।।
রোদ বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে,
–আম্মু তুমি ঘুমাও যা-ও আমি ওর কাছে আছি।
–তুই পারবি?
–হ্যাঁ আম্মু আমার এমনি থেকেও ওকে রেখে ঘুম হবে না।
আর তুমি ত রাত জাগলে অসুস্থ হয়ে যাবা।
–কিন্তু বাবা ওর।
–ওর সম্পূর্ণ খেয়াল রাখবো আম্মু তোমার চিন্তা নেই।
বর্ষন এর কথায় নয়লা বেগম চলে যায়।
বর্ষন দরজা বন্ধ করে ছোঁয়ার পাশে বসে,
–কষ্ট দেই অনেক তোকে তাই না রে
আমি জানি আজ এই জ্বরটাও আমার জন্য এসেছে।
আমাকে ক্ষমা করে দে ছোঁয়া তোর উপর অনেক অন্যায় হয়ে যায়।
বর্ষন ছোঁয়ার হাত দু’টো নিজের হাতে ভাজে নিয়ে নেয়।
আজ এই মায়াবী চোখ গুলে বন্ধ হয়ে আছে।
মায়াবী মুখে নেই কোন হাসি।
শুধু মলিনতা।
হাতের ক্ষত গুলো স্পষ্ট।
কি ভিশন খারাপ ব্যাবহার করেছে বর্ষন ছোঁয়ার সাথে তা সে ফিল করতে পারছে।
ছোয়ার জ্বর বাড়ছে,
বর্ষন লবন পানির পটি দিচ্ছে ছোঁয়ার মাথায়।
–কষ্ট হচ্ছে না রে ঠিক হয়ে যাবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ছোঁয়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে।
ছোঁয়া অচেতনতার মধ্যে বর্ষন এর হাত দুটে আঁকড়ে ধরে।
বর্ষন ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
মাঝ রাতের দিকে বর্ষন এর চোখ দু’টো লেগে আসে,
এক হাত ছোঁয়ার মাথার উপর দিয়ে ছোঁয়াকে
আকড়ে অন্য হাত ছোঁয়ার বুকের মাঝে আঁকড়ে রেখে ঘুমিয়ে যায় বর্ষন।
আজানের আগে ছোঁয়ার ঘুম ভেঙে যায়।
নিজেকে কারোর বাহুডোরে আবদ্ধ পেয়ে ছোঁয়া নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে।
ছোঁয়ার আড়মোড়া তে বর্ষন এর ঘুম ভেঙে যায়।
–কি হয়েছে কিছু লাগবে?
–পানি(আধো শুরে)
বর্ষন উঠে পানি নিয়ে আসে
ছোঁয়াকে হাতের উপর শুইয়ে দেয়।
তার পর পানি খাইয়ে দেয়।
ছোঁয়া অস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে বর্ষন কে।
কিন্তু মাথা এতো ভার।
এতো কষ্ট হচ্ছে তাকাতে।
তাই আবার চোখ বন্ধ করে নেয়।
সারাটা রাত বর্ষন এর বুকের মাঝে কাটায়।
যদিও ছোঁয়া অনেক গরম ছিল।
জ্বরের তাপ বর্ষন এর সহনশীল না তাও বর্ষন ছোঁয়াকে এক বিন্দু ছাড়ে নি।
ফজরের নামা পড়ে ছোঁয়ার কপালে ফু দিয়ে দেয় বর্ষন।
ছোঁয়া এখনো অসুস্থ জ্বর পড়ে নি।
নয়লা বেগম মেয়ের রুমে আসে।
বর্ষন কে দেখে বুঝা যাচ্ছে ও সারাটা রাত ঘুমোয় নি,।
–বাবা তুই ঘুমো তোর ত সারা রাত ঘুন হয় নি।
–না আম্মু সমস্যা নেই।
— না বাবা তুই যা গিয়ে ঘুমো।
–না থাক
–বর্ষন আম্মুর কথা শুন যা।
নয়লা বেগম জোর করে বর্ষন কে ঘুমোতে পাঠায়।
নিজে মেয়ের কাছে বসে।
মেয়েটা এখনো অসুস্থ।
ছোঁয়ার অসুস্থতার কথা শুনে বর্ষনের আম্মু, আনিলা বেগম চলে আসে।
সকাল ১০ টা,
–কি করে হলো নয়লা এমন?
–জানি না রে আপু হটাৎ করেই এমন জ্বর।
–হটাৎ করে আসার কথা না।
–ও বৃষ্টি তে ভিজেছিলো গতকাল আবার তার আগের দিন। গতকাল আবাট বাথরুমে গিয়ে মেয়ে হাত কেটে নিয়েছে।
–আল্লাহ কি বলিস এতো কিছু হয়ে গেল আর এখন আমি জানতে পারছি।। —
–কি করব বল আমি ত বুঝতেই পারি নি।
–তোর খেয়াল রাখা হয় না নয়লা ওকে আমার কাছে দিয়ে দে।
–কি বলিস আমি কি করে থাকবো।
–তুই চুপ কর আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি তুই থাক।
–এমন বলিস ন বুবু একটা মাত্র মেয়ে আমার।
–তুই খেয়াল রখিস না কেন তাহলে।
–আম্মু।
হটাৎ ছোঁয়ার কন্ঠ পেয়ে আনিলা আর নয়লা বেগম মেয়ের কাছে চলে যায়।
–কি লাগবে মা।
–খুদা লাগছে মা।
–নয়লা কিছু আছে রান্না করা।। —
–নারে
–আমি রান্না করে এনে দিচ্ছি মা অপেক্ষা করো।
অনিলা বেগম রান্না ঘরে চলে যায় ।
ছোঁয়ার জন্য তরল খাবার এনে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়।
–বর্ষন এসেছিল রাতে।
ছেলেটা আমায় কিছু বলেই আসে নি।
তখন বললে আমি তখনি চলে আসতাম।
সকাল গড়িয়ে বিকাল হলো।
ছোঁয়ার অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
–আম্মু চলো তোমায় বাসায় দিয়ে আসি। (বর্ষন)
–আমার ত যেতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। (আনিলা বেগম)
–বাসায় ত বাবা একা মা তুমি চলো দিয়ে আসি।
–তুই থাক কিন্তু ভাইয়া না আসা পর্যন্ত।
–আচ্ছা আমি থাকছি আঙ্কেল না আসলে যাবো না।
–আচ্ছা।
আমি আসি তাহলে খেয়াল রাখিস ছোঁয়ার।
–আচ্ছা আপু আয়।
চলবে,