#পর্ব_০১
#বর্ষন_ছোঁয়ায়_মিষ্টি_রোদ💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
ভার্সিটির সবার সামনে দিয়ে ছোঁয়া কে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে বর্ষন।
এদিকে ভীষন জোরে বিদ্যুৎ চমকে পড়ছে মাটিতে বিদ্যুৎ এর ঝলকানিতে ছোঁয়া কেঁপে উঠলেও মনের মাঝে সামনে বর্ষনের ভয়টা ভীষন ভারি ভাবে গ্রাস করেছে।।
একটা ফাঁকা রুমের মাঝে ছোঁয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো বর্ষন।
রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছোঁয়ার দিকে এগোতে লাগলো।
বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে আছে ছোঁয়া।
ভয়ে পেছনে পিছতে পিছতে দেয়ালে ঠেকে গেল।
বর্ষন ছোঁয়ার মুখের কাছে মুখ এনে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো,
–রোদের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক ছোঁয়া?
সত্যি বল ছোঁয়া আমায়। একটা মিথ্যা তোর সারা জীবনের কান্নার কারণ হবে বলে দিলাম আমি।।
–ভাইয়া বিশ্বাস,
–বিশ্বাসের কথা তুই বলবি না ছোঁয়া (চিৎকার করে)
আমার মাথা নিচু হয়ে গেছে আজ সবার সামনে। (প্রচন্ড রেগে)
–যা ভাবছে সবাই তা না।
–যা ভাবছে সবাই না ত কি ছোঁয়া (দাঁতে দাঁত চেপে)
চাইলে এখনি তোকে ভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারি শুধু মাত্র খালার মেয়ে বলেই না বেঁচে গেলি। (রেগে)
–আমি,
–আর কথা বলবি না একটা কথাও না।
আমি আর একটা কথাও শুনব না।
–আমাকে,
–বাসায় যা এখনি আমার চোখের সামনে থেকে সর নাহলে তোকে আমি গিলে খাবো (দাঁতে দাঁত চেপে)
ছোঁয়া বর্ষন এর ভয়ে চলে গেল সেখান থেকে।
এসে সোজা বাসার দিকে চলে এলো।
সারা রাস্তা বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় পৌঁছালো ছোঁয়া।
বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে।
ছোঁয়ার মা অবাক হয়ে গেল ছোঁয়ার কাজে।
ছোঁয়া কখনো এমন করে না।
ভার্সিটি থেকে ফিরে আগে বাইরের ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পরে নিজের রুমে যায়৷।
ছোঁয়া অনেকটা সময় গোসল শেষ করে বাইরে আসে।
চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে বসে।
–কি এমন করেছি আমি হে আল্লাহ কেন এমন করলে আজ আমার সাথে।
ছোঁয়া কান্না করছে আর নিজে থেকে কথা বলছে।
ভার্সিটির দৃশ্য গুলো ভেসে আসছে চোখের সামনে।
,
প্রজেক্ট করতে আজ সিনিয়র আর জুনিয়র সবাই এক জায়গায় হয়েছে ডিপার্টমেন্ট এর।
রোদ হলো ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।
আর ছোঁয়া সবে মাত্র ফার্স্ট ইয়ার।
ছোঁয়ার ধ্যান জ্ঞান অন্য মানুষ গুলো থেকে একটু অল্প।
আবার ভীষন আলাদা বটে।
ছোঁয়া প্রজেক্ট এর কাজে নিয়জিত হয়।
সবাই মিলে কাজ করছে আজ।
হটাৎ প্রিন্সিপাল এসে বলল,
–আমাদের পুরাতন প্রজেক্ট এর ফাইলটা স্টোর রুমে আছে।
তোমাদের ভেতর থেকে দু’জন গিয়ে নিয়ে এসো।
সবাই স্যার এর কথায় সম্মতি জানায়।
ছোঁয়া আর রোদকে পাঠানো হয় ফাইল আনার জন্য।
স্টোর রুমে পুরাতন ধুলার বাজে গন্ধ।
আর অন্ধকার ভীষন।
ছোঁয়ার ধুলায় ফোবিয়া আছে।
শ্বাস আটকে যায় ধুলা নাকে গেলে।
কাইন্ড অফ এজমা বলা যায়।
ছোঁয়া ভেতরে গিয়ে রোদকে বলে,
–ভাইয়া চারিদিকে অনেক ধুলায় ভরা।
আপনি এক কাজ করেন আপনি একটু ভেতরে গিয়ে খুঁজবেন।
–ঠিক আছে ছোঁয়া তুমি এদিকে খুঁজো।
ছোয়া খোজা শুরু করলো।
একটা ফাইল হাতে নিয়ে দেখতে হটাৎ রোদ এসে পেছন থেকে অন্য একটা ফাইল হাতে ছোঁয়ার সামনে ঝাড়ি দিলো,
ভীষন এক ধুলার হাওয়া ছোয়ার নিশ্বাসের সাথে মিশে যেতে ছোঁয়ার নিশ্বাস আঁটকে যায়।
হটাৎ ছোঁয়া অসুস্থ হয়ে পড়ায় রোদ হতবাকক হয়ে যায়।।
ছোঁয়ার ঠিক কি হয়েছে তা বুঝতে পারে না রোদ।
ছোঁয়াকে কোলের উপর বসিয়ে ছোঁয়ার নিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে।
রোদ এর মনে হচ্ছে ছোঁয়ার নিশ্বাস আঁটকে যাচ্ছে।
রোদ বুঝতে পারছে না কি করবে।
এ অবস্থায় চিৎকার করলেও কেউ আসছে না।
রোদ আর ছোঁয়াকে বেশ কাছে থেকে দেখতে পায় পিয়ন।
ওদের দেরি হওয়ায় পিয়ন কে পাঠানো হয় ওদের ডেকে আনতে।
পিয়ন এ দৃশ্য দেখে বাজে কথা বানিয়ে টিচার কে বলে।
সবাই সেখানে উপস্থিত হয়।
আর সবার মনের মাঝে বাজে ধারনা জন্ম নেয়
কেউ শুনতে চায় না ছোঁয়া আর রোদের কথা।
ওদের গার্ডিয়ান কল করা হয়।
ছোঁয়ার খালাতো ভাই বর্ষন ভার্সিটির প্রফেসর তাই তাকে ডেকে উল্টো পাল্টা বলা হয় ছোঁয়ার নামে।
আফসোস এটাই ছোঁয়া বা রোদের কথা কেউ শুনতে চায় না।
হটাৎ দরজা ধাক্কার শব্দ শুনে ছোঁয়ার ধ্যান ফিরে,
–ছোঁয়া এই ছোঁয়া কিরে খাবি না।
–মা আসছি।
চোখ মুছে দরজা খুলে মায়ের থেকে খাবার টা নেয় ছোঁয়া।
–কিরে কি হয়েছে তোর?
–কি হবে মা।
–কিছু ত একটা হয়েছে এভাবে ভার্সিটি থেকে ফিরে দৌড়ে ঘরে চলে গেলি।
–মা পুরো ভিজে ছিলাম তাই।
–ও বর্ষন আসবে পড়াতে একটু পরে গিয়ে পড়া করে নেও খেয়ে।
–হ্যাঁ মা।
ছোঁয়া খাবার টা নিয়ে আবার দরজা টা আঁটকে দিলো।
খাবার টা টেবিলে রেখে বেলকনি তে চলে এলো ছোঁয়া।
–বর্ষন ভাইয়া তুমি এমন কেন একটা বার প্রশ্ন করলে না আমার কি দোষ আদও আছে।
কেন করলে না।
ছোঁয়ার বারান্দায় কিছু ফুল গাছ আছে।
সেখানে বসে সে সব সময় মন খারাপ হলে
আজও ব্যাতিক্রম নয়।
বসে বসে ভাবছে কি হয়ে গেল আজ
তাও হটাৎ করে।
কিছুই বুঝতে পারছে না ছোঁয়া।
প্রায় ১ ঘন্টা সময় কাটানোর পর ছোঁয়া রুমে এলো।
রুমে আসতে বর্ষন এর দেখা পেলো।
ছোয়ার টেবিলে ছোঁয়ার বই ঘাটাঘাটি করছে।
বর্ষন এলো কখন ছোঁয়াকে ত ডাক ও দিলো না।।
বর্ষন ত এমন কখনো করে না।
হয়ত অতিরিক্ত অভিমান করেছে
ছোঁয়া মাথা নিচু করে বর্ষন এর দিকে এগিয়ে যায়।
বর্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
–বস।
ছোঁয়া চুপচাপ বসে পরে,
–পড়া হয়েছে আজ সব।
ছোঁয়া চুপচাপ বসে রয়।
তার আসলে আজ কোন পড়াই হবে না।
কারন মনেই আসছে না কোন পড়া।
মাথা নিচু করে বর্ষন এর কথায় শুনা আর শাস্তি পাওয়া ছাড়া আজ হয়ত আর কোন উপায় নেই।
বর্ষন এক জন প্রফেসর বলে ছোঁয়ার মায়ের করুন রিকোয়েস্ট এ বর্ষন ছোঁয়াকে পড়ায়।
ছোঁয়াকে চুপচাপ দেখে বর্ষন রাগান্বিত কন্ঠে বলে,
–আজকেও পড়া হয় নি তোর তাই না।
–ইয়ে মানে স্যার।
–এই চুপ একটা কথাও বলবি না।
তোকে আজ খুব কঠিন শাস্তি পেতে হবে ছোঁয়া।
–ভাইয়া বিশ্বাস করো,
–চুপ, একটাও কথা না।
–তোর এই রংতুলিতে আকা কাগজ গুলো এখনি দেয়াল থেকে নামা।
–কেন ভাইয়া ওগুলা আমার ভিশন প্রিয় অনেক কষ্ট করে এঁকেছি।
–হ্যাঁ জানি কিন্তু নামাতে তোকে হবেই আমি বলেছি তাই।
যদি না নামাস তাহলে আজ আঙ্কেল কে বলে তোর সমস্ত রং ফেলে দিবো তুই জানিস তোর আকা আঙ্কেল এর পছন্দ না।
–ভাইয়া এমন শাস্তি দিও না প্লিজ।। —
–ছোঁয়া এক কথা দুইবার বলতে পছন্দ করি না।
যে ঘরে ছবি থেকে সে ঘরে ফেরেশতা আসতে পারে না।
তুই এক্ষুনি ফেলবি।। –
–এমন একটা শাস্তি,
–ছোঁয়া যতো কথা তত শাস্তি দ্বিগুণ।
ছোঁয়া ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সামনের মানুষ টাকে তার দানব মনে হচ্ছে।
মানুষ এমনও হয়।
পড়া না পারায় কেউ এমন শাস্তি দেয়।
কখনো ভাবে নি ছোঁয়া।
বর্ষন এর চরিত্র টা ছোঁয়ার কাছে ভীষন অসহ্য ধরে।
কেন এমন ঘরে জন্ম নিলো সে যেখানে বর্ষন এর মতো কেউ আছে।
ঠিক এটা ভেবেই নিজের কপাল কে দোষ দিতে দিতে দেয়াল থেকে ছবি গুলো নামিয়ে ফেলে।
বুকটা ফেটে কান্না পাচ্ছে কিছুই করতে পারছে না ছোঁয়ার হাত পা যে বাঁধা।
বর্ষন ছবি গুলো নামানো হলে কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,
চলবে,