#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_৪৩
সকালে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করতেই হুড়মুড়িয়ে বসে পরলাম। উপলব্ধি করলাম আমি একাই রয়েছি বিছানায়। ডান পাশে দৃষ্টি পরতেই দেখি দরজায় আর জানালায় যে পর্দা ছিল সেগুলো একটা রশির সাহায্য টানিয়ে দেয়া।
মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগলো এসব পর্দা এভাবে টানিয়ে রাখা কেন?আর এখানে কিভাবে আসলাম আমি? আলআবি ভাইয়া কোথায়? তার না গতরাতে জ্বর এসেছিল?
বিছানা থেকে নেমে পর্দা সরাতেই দেখতে পেলাম আলআবি ভাইয়া চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছেন। তাকে এ অবস্থায় দেখে দ্রুত তার কাছে ছুটে গেলাম। প্রথমে তার কপালে হাত দিয়ে দেখে নিলাম জ্বর এখন অব্দি আছে কিনা।কপালে হাত রেখে টের পেলাম তার শরীরের তাপমাত্রা এখন একেবারে স্বাভাবিক। তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
এতক্ষণে উপলব্ধি করতে পারলাম পর্দা দেয়ার রহস্য কি।এরমধ্যে ই দেখি আলআবি ভাইয়া পিটপিট করে চোখ খুললেন। আমাকে তার সামনে দেখেই আলতো করে হেঁসে উঠলেন।এই নিয়ে দ্বিতীয় বার এর মতো তার ঘুম জরানো চেহারা দেখলাম। মনে হচ্ছে সেই দিনের মতো ই সেই স্নিগ্ধতা আজও বিরাজ করছে তার মুখমন্ডলে।তাকে নড়াচড়া করতে দেখে আমি হুঁশ ফিরে পাই।তাকে উদ্দেশ্য করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলা শুরু করি,,,
–আমরা এখানে আসলাম কখন?আপনার তো জ্বর ছিল। এর মধ্যে ই আপনার জ্বর ভালো হয়ে গেল?আর ভালো হলেও আপনি এভাবে চেয়ারে বসে বসে ঘুমিয়েছেন কেন?বেডেই তো…..
আমার কথার মাঝে ই তিনি ব্যাঘাত ঘটিয়ে বললেন,,,
–আরে আস্তে। এতো কথা মানুষ একসাথে কিভাবে বলে?
একটু থেমে গিয়ে আবার বললেন,,,
–কি যেন বললে?চেয়ারে বসে বসে ঘুমিয়েছি কেন?ইশ আগে কেন বললে না তুমি আমার সাথে বেডেই ঘুমাতে চাও।তোমার কোনে ইচ্ছে ই আমি অপূর্ণ রাখতে চাই না।এই ইচ্ছা টাও পূরন হবে।
আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি উনি মিটমিটিয়ে হাসছেন।তার হাসি দেখে অনেক লজ্জায় পরে গেলাম। এখন আর তার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না।আলআবি ভাইয়া আবারও বলে উঠলেন,,,
–শুধু বলেছি এতেই এতো লজ্জা?এই লজ্জা মাখা মুখটা তো এখন বারবার দেখতে ইচ্ছে করবে।এখন যদি আমরা বিবাহিত হতাম না, তাহলে আরো ভয়ানক লজ্জায় ফেলে দিতাম তোমাকে।
তার এমন লাগামহীন কথাবার্তায় মনে হচ্ছে শুধু আমি একা নই এই পুরো ঘরটাই লজ্জা পাচ্ছে। অন্য সময় হলে হয়তো আমি অনেক রেগে যেতাম।কিন্তু এখন আর তা পারবো না।কারণ কাল রাতে অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকেও বলে দিব আমি তাকেই বিয়ে করতে চাই।সারাজীবন তার সঙ্গে বেঁচে থাকতে চাই।
তার সামনে এখন আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হবে না।দ্রুত পায়ে দরজার কাছে আসতেই আলআবি ভাইয়া আমার আগে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পরলেন।আমার মাথা এখনো নত করা।তখনি আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,
–কোথায় যাও।আমার সব কথা শেষ হয়েছে নাকি? শোনো কাল রাতে আমি ই তোমাকে এই ঘরে এনেছি। তুমি ঘুমের মধ্যে ছিলে তাই হয়তো বুঝতে পারো নি। আর জ্বর এর কথা যেটা বললে,আসলে বৃষ্টির পানি আমার মাথায় পরলেই আমার জ্বর আসে।তবে সেটা কয়েক ঘন্টার জন্য আসে।বেশি হলে একরাত থাকে। এর থেকে বেশি আর থাকে না।
আলআবি ভাইয়া আমার সামনে থেকে সরে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে ইশারা করলেন এবার আমি যেতে পারি।
আমরা পাড়ার সবাই কে বিদায় জানিয়ে পাড়া থেকে বের হয়ে একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।এই গাড়ি টাই সরাসরি আমাদের গাজীপুর নিয়ে যাবে।আলআবি ভাইয়া নিয়াজ ভাইয়াদের সাথে কন্টাক্ট করে জানিয়ে দেয় তারা যেন আমাদের জন্য বসে না থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।আর এও বলে দেয় আমাদের দুজনের আসার ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছে।
গাড়ীর সামনে বসেছেন ড্রাইভার। আমি আর আলআবি ভাইয়া বসেছি পিছনে। উনি মোবাইলে কিছু একটা করছেন। আমি জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি রেখে ভাবতে লাগলাম আলআবি ভাইয়ার কাছ থেকে এখনো অনেক কিছু জানা বাকি।আমার কাছে তাকে অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই চোখটা লেগে এসেছিল।একপর্যায়ে ঘুমিয়ে ও পড়ি।
আমার ঘুম ভাঙ্গে কারো ডাকে। চোখ মেলতে ই দেখি আলআবি ভাইয়া আমাকে ডাকছেন আর বলছেন,,,
–জুইঁ!জুইঁ!নামতে হবে আমাদের।
গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে চোখ বুলাতেই টের পাই জায়গাটা আমার জন্য একেবারে ই অপরিচিত।তখনই আলআবি ভাইয়া পাশ থেকে আমার হাত ধরে সামনে একটা বহুতল ভবনের দিকে পা বাড়াতে লাগলেন।আমি তাকে প্রশ্ন করে বসলাম,,,
–এটা কোথায়?আপনি কোথায় এনেছেন আমাকে?
–বিক্রি করে দিতে।(আলআবি ভাইয়া)
–আমি ছোট বাচ্চা নই,যে বললেন আর বিশ্বাস করে ফেললাম। (আমি)
উনি আমার কথার পৃষ্ঠে কোনো কিছু বললেন না।আমি আবারও বললাম,,,
–বলুন না প্লিজ।
–কাজ আছে তাই এসেছি। (আলআবি ভাইয়া)
–এখানে আবার কি কাজ আপনার?(আমি)
কথা বলতে বলতে ই গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম আমরা।গেট দিয়ে প্রবেশ করতে ই মাঝ বয়সী একটা লোক আলআবি ভাইয়া কে সালাম দিয়ে বললেন,,,
–কি ব্যাপার এতোদিন পরে মনে পরলো এই বাড়ির কথা?
-আসলে এতোদিন বান্দরবান ছিলাম।(আলআবি ভাইয়া)
লোকটা আমাকে দেখে ই আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
–তা তোমার সাথে এইটা কে।?
–ধরে নেও তোমার বৌমা।(আলআবি ভাইয়া)
–বাহ্।বাহ্।সুখী হও তোমরা। (লোকটা)
লোকটা ভাবছে হয়তো আমরা বিবাহিত। আমি তারাহুরো করে বলতে নিলাম,,,
–না না।আমরা……
আলআবি ভাইয়ার জন্য আর বলতে পারলাম না।তিনি আমাকে টেনে নিয়ে আসলেন।লিফটের কাছে আসতেই আমি তার কাছ থেকে হাত ছুটিয়ে একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম,,,
–সবার কাছে আমি আপনার বউ বলে বলে ঢোল পিটিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?আমাদের এখনো বিয়ে হয়েছে নাকি?
উনি লিফটের বাটনে প্রেস করতে করতে বললেন,,,
–হতে কতক্ষণ? চাইলে তো আমি এখনি তোমাকে বিয়ে করতে পারি।সবাই জানে তুমিই আমার হবু #বর্ষণ_সঙ্গিনী।
–আমি কোনো কানা ব্যাটাকে বিয়ে করব না।(আমি)
এর মধ্যে ই লিফটের দরজা খুলে গেল।আমরা দুজন একসাথে লিফটে প্রবেশ করলাম।লিফটে প্রবেশ করে ই আলআবি ভাইয়া লিফটের ১৪ তে প্রেস করতে করতে বললেন,,,
–সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমি তো তোমাকে ই বিয়ে করব।
আহা! তার কথায় মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করে দিয়েছে। ইশ!বিয়ের কথা শুনে যেই মেয়ে আগে লজ্জা পেত।ভয় পেত।সেই মেয়ে এখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে।ভালোবাসার মানুষ টা নিজে এসে বলছে আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।এর থেকে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে।কিন্তু এখন তাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাই নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে বলে উঠলাম,,,
–আমি বিয়ে করব না।
–আমি করব।(আলআবি ভাইয়া।)
–করব না।(আমি)
–করব।(আলআবি ভাইয়া)
–না।(আমি)
–হ্যাঁ।(আলআবি ভাইয়া)
–না।(আমি)
–হ্যাঁ।(আলআবি ভাইয়া)
–না(আমি)
–না।(আলআবি ভাইয়া)
–হ্যাঁ(আমি)
আমার মুখ ফসলে হ্যাঁ বের হতেই আলআবি ভাইয়া অট্ট হাসিতে ফেটে পরলেন।হাসতে হাসতে বললেন,,,
–বলেছি না তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করব।এখন তো তোমাকে বিয়ে না করে ছাড়বোই না।
–আপনি আমাকে কনফিউজড করে মুখ থেকে হ্যাঁ বের করেছেন।আমি ইচ্ছে করে হ্যাঁ বলিনি।(আমি)
–যেভাবেই বলো না কেন।হ্যাঁ তো বলেছ।(আলআবি ভাইয়া)
আমাদের কথপোকথনের মধ্যে ই লিফট খুলে গেল।লিফট খুলতেই আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরে বা দিকে এগিয়ে হাঁটা শুরু করলেন।আমি তার থেকে হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম আর বললাম,,,
–আপনি কি আমার হাত না ধরে হাঁটতে পারেন না।
–না।কানা ব্যাটারা কারো হাত না ধরে হাঁটতে পারে না।সারাজীবন এভাবেই হাত ধরে হাঁটব। (আলআবি ভাইয়া)
আমার কথায় যে আমিই ফেঁসে গিয়েছি এখন তা খুব ভালো করে উপলব্ধি করতে পারছি।আলআবি ভাইয়া আমাকে নিয়ে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেড়িয়ে সোজা ছাঁদে চলে এলেন।ছাঁদে আসতেই আমি বলে উঠলাম,,,
–ছাঁদে আপনি কি কাজ করতে এসেছেন।
আমার কথার কোনো জবাব না দিয়েই উনি ছাঁদের এককোণে থাকা একটা রুমের দরজা খুলে আমাকে ভিতরে নিয়ে আসলেন।
রুমটায় প্রবেশ করেই বুঝতে পারলাম এটা সিঙ্গেল একটা রুম।পুরো রুমের চার দেয়ালের এক পাশে দেয়াল এর পরিবর্তে থাইগ্লাস লাগানো।এখান দিয়েও বের হওয়া যায়।এখান থেকেই থাইয়ের মোটা কাঁচ ভেদ করে পুরো ছাঁদটাকে পরখ করা যায়।দেখতে পেলাম একপাশে একটা দোলনা ঝুলছে আর রেলিং ঘেঁষে অনেক গুলো গাছ সারি সারি দাঁড় করানো।অবাক করা কান্ড হলো সব গুলো জুইঁফুলের গাছ।এখন বাজে ঠিক দুপুর তিনটা।সূর্যের তেজ এখনো কমেনি।হলদে রোদ এসে গাছ গুলোর সাথে লেপ্টে রয়েছে।
আলআবি ভাইয়ার কথায় আমার সম্বিৎ ফিরলো।উনি আমাকে ওয়াশ রুমের দিকে ইশারা করে বললেন,,,
–যাও বোরখা খুলে ফ্রেশ হয়ে নাও।এখান থেকে আমরা বিকেলের দিকে গাজীপুরের জন্য রওনা দিব।আমার অনেক ইম্পরট্যান্ট একটা কাজ আছে।আমাকে এখনি যেতে হবে আর তোমার দুপুরের লাঞ্চ টা আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। ফ্রেশ হয়েই কিন্তু খেয়ে নেবে।ভয় পাবে না এটা আমারই বাড়ি।
তার কথার মাঝে তার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা কেটে দিয়ে আমাকে ইশারা করে দেখিয়ে বলল,,,
–ওখানে টেলিফোন আছে। দরকার পরলে কল করো।
উনি কথা শেষ করে ই খুব ব্যস্ততার সহিত চলে গেলেন।তার ব্যস্ততা বলে দিচ্ছিল খুব দরকারি কোনো কাজ আছে তার। তিনি চলে যেতেই আমি পুরো রুমটায় চোখ বুলাতে লাগলাম। রুমটা মোটামুটি বড় ই।শুভ্র রঙা এই তিন দেয়ালের রুমের মাঝ বরাবর রয়েছে একটা বেড। বেডের দুপাশে মাথার কাছেই টেবিলে রয়েছে টেবিল ল্যাম্প।একপাশে রয়েছে ছোট সাইজের একটা সোফাসেট।বিনোদনের উপকরণ হিসেবে রয়েছে টিভি।আরেক সাইডে ছোট করে একটা বুকসেল্ফ ও আছে। মোটামুটি ভাবে রুমটাকে গুছানোই বলা চলে।
ওয়াশরুমে গিয়ে বোরখা খুলতে গিয়ে আশ্চর্যের চরম মাত্রায় পৌঁছে গেলাম। শাওয়ার নেয়ার স্পেসটুকুতে মাথার উপরে একে বারেই ফাঁকা। মানে মনের সুখে নীল আকাশ দেখে দেখে ই শাওয়ার নেয়া যাবে।ছিঃ!ছিঃ! এই খচ্চর ব্যাটার তো দেখি রুচিতে ও সমস্যা আছে। এভাবে কেউ কি করে শাওয়ার নিবে। ভালো করে পরখ করে দেখতেই মনে হলো এই বিল্ডিং টাই সবচেয়ে বড়।এখানে আর বোরখা না খুলে রুমে এসেই খুলে নিলাম। এরপর আবার গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলাম। রুমে এসে বেডের উপর বসতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি ১০-১২ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটা আমাকে বলল,,,
–এইডা বড় ভাই দিছে।খাইয়া লন।
ছেলেটার হাত থেকে খাবার এর প্যাকেট টা নিয়ে ওকে একটা মুচকি হাসি ফেরত দিয়ে দরজা পুনরায় বন্ধ করে এসে বেডে বসলাম।
আসরের নামাজ পরে রুম থেকে বের হয়ে ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লাম। চারপাশে যতদূর চোখ যায় ততোদূর পর্যন্ত শহরে জীবনের ছোঁয়া রয়েছে। আশেপাশে বড় বড় অট্টালিকা দাঁড়িয়ে আছে। তবে আমি যেখানে দাঁড়ানো এটা সবচেয়ে বড় অট্টালিকা। আমি ঠিক কোথায় আছি তা এখনো আমার অজানা। আলআবি ভাইয়া সেই যে গেছে আশার নামগন্ধও নেই। হেঁটে এসে পাশের দোলনায় বসে পরলাম। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই দেখতে পেলাম তিনজন লোক ছাঁদে উঠেছে। লোক বললে ভুল হবে বরং বলতে হবে যুবক।তিনজনকে দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো।কারণ এরা আমাদের ভার্সিটির সেই তিনটা ছেলে।এরা ই তো সেই রাকিব নামের ছেলেটার সঙ্গে ছিল।
ওদের দেখা মাত্র ই আমি দৌড়ে রুমে আসতে নিলাম। কিন্তু রুম পর্যন্ত আর আসতে পারলাম না। তার আগেই দুপাশ থেকে দুজন আমার হাত ধরে ফেলল। আমি চিৎকার করে বললাম,,,
–সমস্যা কি?আমার হাত ধরে রেখেছেন কেন এভাবে। ছাড়ুন আমাকে।
আমার কথা শেষ হতে ই আরেক জন এসে আমার গালে চড় বসিয়ে দেয় আর বলে,,,
–এই তেজে আজকে কোনো কাজ হইবো না।তোর জন্য যে কি অপেক্ষা করতাছে তা তুই কল্পনাতেও ভাবতে পারবি না।
হঠাৎ করেই মনে হলো আমার কাঁধে সূঁচালো কিছু একটা খুব জোড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতক্ষণে আমার হাত পা আর মুখ বেধে ফেলা হয়েছে। আমি তারপর ও ছোটাছুটি করে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নিজেকে মুক্ত করার জন্য।ওদের মধ্যে থেকে দুজন আমার বাহু ধরে আমাকে লিফট অব্দি টেনে টেনে নিয়ে এসেছে।
হঠাৎ করেই আমার মনে হচ্ছে আমি শরীরের সব শক্তি হারিয়ে ফেলছি। চোখের পাতা ভাড়ি হয়ে আসছে।আমি বারবার চোখ খুলে রাখার চেষ্টা করছি।আমার সম্পূর্ণ শরীর অবশ হয়ে এসেছে। হাত পা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে দিয়েছি।আমার সাথে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।কিন্তু এতোটুকু জানি ভয়ংকর কোনো কান্ড হতে যাচ্ছে। ঢুলু ঢুলু চোখে দেখতে পেলাম আমাকে একেবারে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নিয়ে আসা হয়েছে।তখনই আমার চোখ পরলো সেই লোকটার দিকে যাকে এবাড়িতে ঢোকার সময় দেখেছিলাম। লোকটা আমাকে দেখতে পেয়েই সামনে এসে ওদের বাঁধা দিতে লাগলো।সে মুখ দিয়ে কিছু একটা বলছে ওদের ,যা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। একপর্যায়ে ওদের তিনজনের মধ্যে থেকে একজন এসে লোকটার মাথা দেয়ালের সঙ্গে স্বজোড়ে বাড়ি মারলো।এখানেই আমার চোখের পাতা লেগে আসলো।আর খুলতে পারলাম না চোখের পাতাজোড়া।
চলবে…………
[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]