#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_৩৪
–আমি আমার জনকে সামলাবো মানে?আপনি বুড়ো মানুষটাকে কি বলেছেন? আমার তো এখন মনে হচ্ছে আপনি পুরো এলাকায় ঢোল পিটিয়ে বলেছেন আমি আপনার বউ। আপনার সাথে আর এক মুহূর্ত থাকা যাবে না। তাড়াতাড়ি আমার হাত খুলুন। আমি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাব।
এক নিশ্বাসে আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললাম। আলআবি ভাইয়া আমার দিকে একটু চেপে বসে বললেন,,,
–আমাকে এই আইডিয়াটা আগে কেন বললে না? তাহলে তো এত কষ্ট করতে হত না। চলো তাহলে এখনি আইডিয়া টা কাজে লাগিয়ে ফেলি।
কথাটা শেষ করে আলআবি ভাইয়া বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লেন।আমি হড়বড়িয়ে তাকে বললাম,,,
— কোথায় যাব? এখন আবার কোন অঘটন ঘটাতে চলেছেন?
–তুমি না একটু আগে বললে ঢোল পিটিয়ে পুরো এলাকাকে বলতে হবে।তোমার কথা ফেলি কি করে বলো?
–উফ! আপনি আসলেই একটা খবিশ।(আমি)
— তোমার তো দেখি আজকে ছাড়া পাবার কোন ইচ্ছে নেই।(আলআবি ভাইয়)
–কি বললেন?(আমি)
— আরও একবার খবিশ বলে ফেলেছ। আজকে দিনের মধ্যেও তোমাকে ছাড়ছি না,গজদন্তিনী।(আলআবি ভাইয়া)
–এই গজদন্তিনী উদয় হলো কোথা থেকে আবার? (আমি)
আলআবি ভাইয়া হুট করে ই আমার অনেক টা কাছে এসে কানে কানে ফিসফিসে গলায় বললেন,,,
— গজদন্তিনী! তুমি কি জানো তোমার গজ দাঁত বিশিষ্ট হাসি দেখলে তোমার গজদাঁতে আমার ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগে।কথাটা মনে আছে নিশ্চয়ই।এখন যদি আর একবার ছাড়া পাওয়ার কথা বলো তবে আমার এই ইচ্ছেটা পূরণ করতে বেশি সময় লাগবে না।
আলআবি ভাইয়া এভাবে কাছে আসলেই আমার হৃদপিণ্ড তার ধকধক শব্দ ধ্বনি কে তড়িৎ গতিতে বাড়িয়ে দেয়।আমার আঙুলের ডগা গুলো ঈষৎ শীতল হয়ে যায়।আলআবি ভাইয়ার ফিসফিসে আওয়াজ শরীরে চিকন এক শিহরণের দোলা দিয়ে যায়।আমি নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে আলআবি ভাইয়ার কাছ থেকে দুইকদম পিছিয়ে এলাম।মনের অভ্যন্তরে কেমন অনুভূতি অনুভব করছি তা নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না।কিন্ত এতটুকু বুঝতে পারছি যে লজ্জা আমাকে পূর্ণ রূপে গ্রাস করে ফেলেছে।যার কারণে চোখ তুলে তার দিকে তাকাতে অব্দি পারছি না।মাথা নিচু করে ওইভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম। এর মধ্যেই দেখলাম সিতারা বানুর সাথে আরেকটা পিচ্চি মেয়ে ভাত নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন।সাথে তরকারিও আছে।আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
–খাড়ইয়া আছো ক্যান?আমার ছোট চৌকিতে বইবার মন চায় না তাই তো?
–না না।এমন কিছু না।আপনি ভুল ভাবছেন।(আমি)
–তুমি আবার এগুলো এনেছ কেন?(আলআবি ভাইয়া)
–তোর লেইগা আনছি নাকি।তুই তো দিনে ১৪ বার কইরা আহোছ।জুইঁবুড়ি তো ১৪ বার আহে না।এই প্রথম আইলো।খালি মুখে কি রাহন যায় ওরে।(সিতারা বানু)
তার জুইঁবুড়ি ডাকটা অতি সামান্য হলেও কেন যেন আমার কাছে খুব ভালো লাগলো।আমি হাসি মুখ করে বললাম,,,
–এতো দিন আসিনি তবে এখন থেকে আসবো।আর কি এনেছেন আমার জন্য?খুব খিদে পেয়েছে। দুপুরে এখনো খাওয়া হয়নি।তাড়তাড়ি দিন।
আমার এইটুকু কথাতে তার মুখে খুশির হাসি ফুটে উঠল। তাকে দেখেই বুঝতে পারছি তিনি বেজায় খুশী হয়েছেন। খেতে বসে আমি আর আলআবি ভাইয়া পাশাপাশি বসে আছি।আমি আমার মতো খাওয়া শুরু করে দিলাম। কিন্তু আলআবি ভাইয়া চুপচাপ বসে আছেন।তাকে বসে থাকতে দেখে আমার যে কি পরিমাণ খুশি হচ্ছে। খুশির কারণ হলো হাতকড়ায় রয়েছে আমার বাম হাত কিন্তু আলআবি ভাইয়ার রয়েছে ডান হাত। বেচারার মুখ টা একেবারে দেখার মতোন হয়েছে। মনে মনে আমি হাসতে হাসতে কয়টা গড়াগড়ি যে খেয়েছি তার হিসেব নেই। সিতারা বানু সামনে আছেন বলে মন ভরে হাসতে পারছি না। আলআবি ভাইয়াকে না খেয়ে চুপ করে বসে থাকতে দেখে সিতারা বানু বলে উঠলেন,,,
–কি হইলো তোর?খাইতাছো না ক্যান?
–তোমার জুইঁবুড়ি ই তো খেতে দিচ্ছে না। (আলআবি ভাইয়া)
–ক্যান?আমার জুইঁবুড়ি তোরে কোন দিক দিয়া ধইরা রাখছে?(সিতারা বানু)
আলআবি ভাইয়া আমার আর তার হাতটা সামনে এনে দেখালেন।আলআবি ভাইয়া বললেন,,,
–চাবি আমার অফিসে রেখে এসেছি।
সিতারা বানু আমাদের দুজনকে দেখে হেসে ফেললেন। তারপর আমাকে বললেল,,,
–আমার নাতিডা একটু শয়তানি করে বেশি।এহন কি আর করবা।খাড়াও দেহি কি করা যায়।
তার কথা শুনে আমি হাসি হাসি মুখ করে আলআবি ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। সিতারা বানু রুম ত্যাগের আগেই আলআবি ভাইয়া বললেন,,,
–আমার কাছে কিন্তু উপায় একটা আছে।
–কি?(সিতারা বানু)
–আমাদের দুজনের হাত আটকানো কিন্তু তোমার হাত তো আর আটকানো না।তাই জলদি এসে আমাকে আর তোমার জুইঁ বুড়িকে খাইয়ে দাও।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়ার কথায় আমিও হাত ধুয়ে নিলাম।সিতারা বানু এসে আমাদের দুজনকে খাওয়াতে শুরু করলেন।রক্তের সম্পর্ক থেকে যে আত্মার সম্পর্ক বড় তার উদাহরণ এই সিতারা বানু। কতো যত্নে আমাদের দুজনকে খাওয়াচ্ছেন।
খাওয়া শেষ করে জানতে পারলাম এখানে মাগরিবের নামাজ এর পরে ছোট পরিসরে মিলাদ পড়ানো হবে।নিয়াজ ভাইয়াকে আমিই নিজে কল করে বলি আমি এখানে আছি। ভেবেছিলাম নিয়াজ ভাইয়া বলবে আমি এখানে কি করি বা এখানে আসলাম কি করে এসব জিজ্ঞেস করবে কিন্তু ভাইয়া এসব কিছুই জিজ্ঞেস করে নি। মনে একটা খটকা লাগলো।নিয়াজ ভাইয়া কিছু বলল না কেন?হাতকড়ার চাবি আনার জন্য শাফিন ভাইয়াকে পাঠানো হয়েছে।আলআবি ভাইয়াকে যখন বলেছি নামাজ পরতে হবে আলআবি ভাইয়া ও আর দেরি করেন নি।দ্রুত শাফিন ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।এর মধ্যেই হাতে টান পরলো।দেখি আলআবি ভাইয়া আমাকে ধরে টানছেন।তার দিকে তাকাতেই উনি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললেন,,,
–একটু ওয়াশরুমে যেতে হবে।
তার কথায় কেমন প্রতিক্রিয়া করবো বুঝতে পারছি না।তবে তাকে জব্দ কার ভালো সুযোগ পেয়ে গেলাম।আমি বললাম,,,
–তো যান।ধরে রেখেছি নাকি আমি?
–তুমি ভালো করেই জানো আমি কিসের কথা বলছি।(আলআবি ভাইয়া)
আমি একটু ভ্রু কুচকে বললাম,,,
–কিসের কথা বলছেন?
–তুমি এখানে খুঁটি গেড়ে বসে থাকলে আমি ওয়াশরুমে যাবো কি করে।(আলআবি ভাইয়া)
–তা আমি আপনার সঙ্গে এক সাথে ওয়াশরুমে যাব কি করে।(আমি)
আমার কথায় তিনি দমে গেলেন। তারপর শাফিন ভাইয়াকে কল করে তাড়াতাড়ি করে আসতে বললেন।আমি আলআবি ভাইয়া কে বললাম,,,
–অন্যের জন্য গর্ত করলে নিজেকেই পড়তে হয়।
বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যেই শাফিন ভাইয়া চাবি নিয়ে এসে পড়লেন। হাতটা ছাড়া পেয়ে যোহরের নামাজ আদায় করে নিলাম। নামাজ শেষে সিতারা বানু আর বাচ্চাগুলোর সাথে ভালোই সময় কেটে গেল।
বিকেলের দিকে নিয়াজ ভাইয়া, ভাবি আর বাবাকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম। তাদের থেকে জানতে পারলাম নিয়াজ ভাইয়া এ জায়গা সম্পর্কে আগেই অবগত ছিল। তবে ভাবি আর বাবা জানতে পেরেছে আজকে সকালে। সকালবেলা নাকি আলআবি ভাইয়া নিয়াজ ভাইয়া কে কল করে সবাইকে নিয়ে এখানে মিলাদ উপলক্ষে আসতে বলেছেন। আমাকে ভার্সিটি থেকে আলআবি ভাইয়া এখানে নিয়ে আসবেন সেটা নাকি আগেই নিয়াজ ভাইয়াকে বলে দিয়েছিলেন। নিয়াজ ভাইয়াকে যখন আমি কল করেছিলাম, তখন আমাকে চমকে দেয়ার জন্য ই নাকি বলেনি যে তারাও এখানে আসবে।
আলআবি ভাইয়ার বাবা এই জায়গার নাম দিয়েছেন “পরিবার”। এখানে ঢোকার আগে গেটে দেখেছিলাম একটা সাইনবোর্ড টানানো “পরিবার” নামে।
“পরিবার” থেকে আমরা প্রায় আটটার দিকে আমাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। চল্লিশ মিনিটের মত সময় লাগে ওখান থেকে আমাদের বাসায় আসতে। রাতে ঘুমানোর জন্য যখন বিছানায় শুয়ে পড়ি তখন ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। আমার জানা ছিল এই সময়ে কে ফোন দিতে পারে। তাই ফোনটা রিসিভ করার জন্য যখন হাতে নিলাম তখন ফোনের স্ক্রিনে বর্ষণ সঙ্গী নামটা দেখে আলআবি ভাইয়ার বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল—
” তোমাকে এখানে এনে আজকে ওই বাচ্চা ছেলে-মেয়ে গুলোকে না দেখিয়েই মিলাদ পড়িয়ে বিদায় দিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু বাচ্চা গুলোর কথা তোমাকে এই জন্যে বললাম যাতে তুমি জানতে পারো আমি কয়েকদিন ব্যস্ত থাকবো,তোমার সাথে হয়তো দেখাটাও করতে পারবো না। তাই প্লিজ যখন আমি দিন শেষে কল করব তখন কথা না বললেও অন্তত ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে রেখো। তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেই না হয় রাত পাড় করবো”
আমার ভাবনার মধ্যেই ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গিয়ে দ্বিতীয়বার বাজতে লাগল। ফোনটা রিসিভ করে কথা বললাম না। কেবল কানে ধরে রাখলাম। এই মুহূর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ওপাশ থেকে ভেসে আসা কন্ঠটা চুপচাপ শুনতে ইচ্ছে করছে। ওপাশ থেকে শান্ত কন্ঠে ভেসে আসলো -“হ্যালো, হ্যালো। শুনতে পাচ্ছ? হ্যালো। সত্যি কথা বলবে না “এরপর তার আর কোন শব্দ শোনা যায়নি তবে। আমরা কেউই কল টা কাটিনি।
এভাবে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো সেকেন্ড, অনেক গুলো মিনিট, অনেকগুলো ঘন্টা আর সেই সাথে কেটে গেছে পাঁচদিন। এই পাঁচ দিনে আমার সঙ্গে আলআবি ভাইয়ার কোনো দেখা সাক্ষাত হয় নি।কিন্তু প্রতিদিন রাতে সে কল করতো। তবে কেউ কোন কথা বলতাম না। আলআবি ভাইয়া কিছু সময় “হ্যালো হ্যালো” বলে চুপ হয়ে যেতেন।ওভাবেই কেটে যেত রাত। সকালে উঠে আমি কলটা কাটতাম।
ঘড়িতে রাত আটটা বেজে ত্রিশ মিনিট। আমি,নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি রেডি হচ্ছি। কারণ আমরা আজ বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা দিব। আমাদের বাস রাত সাড়ে নয়টায় ছাড়বে। নিয়াজ ভাইয়ার অফিস থেকেই বাস দেওয়া হবে। যে রিসোর্টের ওপেনিং সেলিব্রেশনে আমরা যাচ্ছি সেটা মূলত অন্য কারো নয়।ওটা আলআবি ভাইয়ার নিজের।তাই অফিসের প্রত্যেকটা স্টাফ কেই নেয়া হচ্ছে।বলতে গেলে কিছুটা পিকনিকের মতোও।অর্থ্যাৎ এক কাজে দুই কাজ হচ্ছে।
চলবে…………
#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_৩৫
বাস স্ট্যান্ডে সারি সারি তিনটা এসি বাসের সামনে আমি, নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি দাঁড়িয়ে আছি।ভাইয়ার কিছু কিছু কলিগও ইতোমধ্যে এসে পরেছে।ভাইয়ার সাথে কুশল বিনিময়ের পর্ব শেষ করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাসে উঠেও পরেছে।আমাদের দাঁড়িয়ে থাকার কারণ হলো আলআবি ভাইয়া। আমি যতটুকু জানি আলআবি ভাইয়ার সঙ্গে সজল ভাইয়া ও আসবে।
আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আলআবি ভাইয়া পুরো দুনিয়া উল্টে গেলেও তার শুভ্র বর্ণ কে কোনদিন ছাড়বেন না। অবশ্য দুনিয়া কখনো উল্টাবে না। এটা তো কথার কথা বললাম। তবে একটা কথা না বললেই নয় তা হলো আলআবি ভাইয়াকে পাঞ্জাবিতে সবচেয়ে বেশি মানানসই লাগে।আলআবি ভাইয়ার উপর চোখ পড়তেই উপলব্ধি করতে পারলাম তার ক্লিন শেভ করা ক্ষুদ্রতম দাড়ি, ঘনত্বের ছোঁয়া পেয়েছে। আজ অনেকদিন বাদে সেই চশমা পরিহিত আলআবি মাশরুখ কে দেখতে পাচ্ছি।যেই শাল নিয়ে এতো কাহিনী হয়ে গিয়েছিল সেই রকমই একটা কালো বর্ণের শাল তার গলায় বিদ্যমান।তাকে দেখে মোটেও কেউ বলবে না সে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন। তাকে দেখে বলবে সে কোনো সভায় নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন।
আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া একা আসেন নি। তাদের সঙ্গে রয়েছে আরও তিনটে অচেনা মুখ দেখা যাচ্ছে ।একজন ৩২-৩৩ বছর এর পুরুষ রয়েছে, তাসফি ভাবির সমবয়সি একটা আপু রয়েছে আর সেই সাথে রয়েছে কিশোরী বয়সের একটা মেয়ে।মনে হচ্ছে ১৫ কি ১৬ তে পদার্পণ করেছে।
সজল ভাইয়া আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,,,
–সরি গাইস লেট করানোর জন্য। আসলে এই দুই লেডিস এর জন্য লেট হয়ে গিয়েছে আমাদের।
পরিচয় পর্বে জানতে পারলাম কিশোরী বয়সের মেয়েটা (রেনুমা), আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়ার ফুফাতো বোন। বলে রাখা ভাল সজল ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়া দুজন কিন্তু চাচাতো ভাই। আর যে দুজন রয়েছে ওরা আলআবি ভাইয়ার বড় ভাই (ফারাবী) আর ভাবি (মিথিলা)।
সব কিছু চেক করে আমরা বাসে উঠে পড়লাম। ঠিক ৯:৪৫ মিনিটে আমাদের বাস বান্দরবানের জেলা শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। কিছু কিছু মানুষ আগেই বাসে উঠে যাওয়া তে আমরা সবাই একসাথে বসতে পারলাম না। অর্থাৎ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসতে হয়েছে। একেবারে সামনের দিকের সিটে বসেছে ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপু। রেনুমা মেয়েটা আর আমি একেবারে শেষের দিকে বসেছি।আমাদের ঠিক পিছনের সিটে আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া বসেছেন। নিয়াজ ভাইয়া আর তাসফি ভাবি বসেছেন আমাদের দুটো সিট আগে।
আমাদের বাস ছেড়েছে প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে। এই এক ঘন্টায় রেনুমার সাথে কথা বলে যা বুঝতে পারলাম তাতে মনে হলো রেনুমা অনেকটাই চঞ্চল স্বভাবের।মিশুক ও বলা যেতে পারে। তবে মেয়েটা কথা একটু বেশি বলে।ওর এই বেশি কথা বলাটা আমার কাছে মোটেও বিরক্ত মনে হচ্ছে না। কারণ আমিও কোন কথা বলার সঙ্গী পেলে পুরো রাজ্যের কথা বলে ফেলতে পারি। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে কথা আমিও বেশিই বলি। আমাদের দুজনেরই কথা বেশি বলার অভ্যাস আছে বলেই এই ষাট মিনিটের মধ্যে ই জানতে পারলাম রেনুমা সজল রোগে আক্রান্ত।মানে ফুপাতো বোন যখন মামাতো ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খায়।মেয়েটা সবে নবম শ্রেণীতে পা দিয়েছে। কিন্তু সপ্তম শ্রেণীতে থাকতেই নাকি সে সজল ভাইয়ের প্রেমে পড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ যখন সজল ভাইয়া ফ্রান্সে ছিলেন। রেনুমার এই প্রেমে পড়ার কথা ওদের কাজিন গোষ্ঠী সকলেরই জানা আছে।স্বয়ং সজল ভাইয়া নিজেও জানেন। শুধু বড়রা এ বিষয়ে অবগত নন। এ বিষয়ে সজল ভাইয়ার কথা হলো, সে বাবা মার পছন্দ মতে বিয়ে করবে।তাই রেনুমার থেকে দূরে দূরে থাকে সজল ভাইয়া।রেনুমার কথায় প্রথমে মনে হচ্ছিল এটা ওর কিশোরী মনের আবেগ। তবে এখন মনে হচ্ছে ও সজল ভাইয়া কে ভাল না বাসলেও অতিরিক্ত মাত্রায় পছন্দ করে। কে বলতে পারে হয়তোবা এই অতিরিক্ত মাত্রায় পছন্দ টাই ভালবাসায় পরিণত হবে।
বাস টায় জানালা খোলার কোনো ওয়ে নেই। মোটা কাচঁকে ভেদ করে ই বাইরের দৃশ্য দেখতে হচ্ছে। জানালার পাশে বসে যদি বাইরের দৃশ্য উপভোগ না করি তাহলে তো জানালার পাশে বসাই বৃথা। তবে এই মুহূর্তে বাইরের দৃশ্য দেখার চেয়ে চোখ বন্ধ করে রাখাটাই সমীচীন মনে করছি। কারণ ওই মোটা কাচঁ ভেদ করে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখ সহ মাথায় চিনচিন ব্যথা অনুভব করছি।একরাশ বিরক্তি নিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে দিলাম।
একটু পরেই নাকে একটা পরিচিত সুবাস এসে ভিড় জমাতেই ফট করে চোখ খুলে ফেললাম।আমার মস্তিষ্ক আমাকে যা জানান দিচ্ছে ঠিক তাই হয়েছে। আমার পাশে আলআবি ভাইয়া এসে বসেছেন।দ্রুত পিছনের সিটে তাকাতেই দেখি রেনুমা সজল ভাইয়ার সাথে বসে বসে বকবক করে যাচ্ছে। কিন্তু বেচারি হয়তো খেয়ালই করেনি যে সজল ভাইয়ার কানে ইয়ারপড লাগানো।
ইতোমধ্যে বাসের ভিতরে থাকা লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে ঘুমিয়ে ও পড়েছে। মাথার চিনচিনে ব্যাথাটা ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে। কথা বলতে মোটেই ইচ্ছে করছে না।তাই আলআবি ভাইয়াকেও জিজ্ঞেস করা হলো না সে এখানে কেন বসেছে।পুনরায় সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলাম। হঠাৎ করেই কপালে একজোড়া শক্তপোক্ত হাতের ছোঁয়াতে চোখ মেলে তাকালাম। দেখি আলআবি ভাইয়া আমার দিকে কিছুটা বাঁকা হয়ে বসে আমার মাথায় হাত দিয়ে টিপে দিচ্ছেন। আমি সোজা হয়ে বসে তার হাত সড়িয়ে দিয়ে হড়বড়িয়ে বলে উঠলাম,,,
–কি করছেন আপনি?
তিনি তর্জনী আঙুল টা তার দুই ঠোঁট যুগলের মধ্য বরাবর চেপে ধরে মুখ দিয়ে শব্দ করলেন,,,
–হুঁশশ!!!
তারপর আমার দুই বাহু ধরে আমাকে আগের মতো করে সিটে এলিয়ে দিলেন। কিন্তু আমি তড়িৎগতিতে আবার সোজা হয়ে বসে পরলাম। বসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
–এমন করছেন কেন?এখানে কি আপনার? আর আমার এই ছোট্ট মাথা টা আপনার ওমন দানবের মতো হাত দিয়ে চেপে ভেঙে ফেলবেন নাকি?
আমার কথাটা শেষ হতে ই আলআবি ভাইয়া হুট করে আমার হাত ধরে উপর পিঠে একটা চুমু খেয়ে বসলেন। ঘটনা টা এতো তাড়াতাড়ি হয়েছে যে আমি বুঝে ওঠার আগেই আমার হাতটা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। আমার হাতটা ছেড়ে দিতেই অনুভব করলাম হাতের উপর পিঠে কেমন যেন ভিজে ভিজে মনে হচ্ছে।যখন বুঝতে পারলাম আসলে ভিজে জিনিস টা কি তৎক্ষণাৎ হাতটা আলআবি ভাইয়ার বাহুতে পাঞ্জাবির সাথে ঘষতে ঘষতে বলে উঠলাম,,,
–ই ছিঃ! খচ্চর লোক!আপনি আমার হাতে থুথু লাগালেন কেন?
— তোমার ভাগ্য ভালো যে তোমার গালে লাগাই নি। এখন আমাকে আমার কাজ করতে না দিলে গালে যেটা লাগাইনি তাও লাগিয়ে দেবো।(আলআবি ভাইয়া)
কথাটা বলেই আর এক মুহূর্ত দেরি করলেন না। আমার দুই কানের উপর তার দুই হাত দিয়ে মাথাটা সিটের সাথে লাগিয়ে দিলেন। আমি তার দিকে আড়চোখে তাকাতেই এক হাত আমার চোখের উপর চেপে ধরে বললেন,,,
-নো মোর টক।
আমি আর কথা বাড়াতে গেলাম না।এমনিও মাথা ব্যাথা করছে। তাই চুপচাপ বসে রইলাম। আলআবি ভাইয়া মাথাটা টিপে দেওয়াতে আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করলো।একপর্যায়ে আমার চোখজোড়ায় গভীর ঘুম নেমে এলো।ঠিক কয় ঘন্টা ঘুমিয়েছি তা বলতে পারবো না।কারণ তখনকার সময় টা মনে নেই।কিন্তু এখন সময় ৪ টা বেজে ৭ মিনিট।এসি এখনও চালু আছে। আমি চোখ মেলতেই নিজের মাথা আলআবি ভাইয়ার কাধের উপর আবিষ্কার করলাম। আমার হিজাব পরিহিত মাথার তালু বরাবর আলআবি ভাইয়ার গাল এসে ঠেকেছে। তিনি এখনো ঘুমে বিভোর। খেয়াল করলাম তার কালো রঙা শালটা আমার উপরে কিছুটা কাঁথার মতো করে দেয়া। ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি তাই কিছু সময় এইভাবে চুপচাপ বসে রইলাম। আমাদের পাশের সিঙ্গেল সিটে যে ব্যক্তি বসেছে খেয়াল করলাম ঘুমাতে ঘুমাতে তার মুখ হাঁ হয়ে আছে। আমার দৃষ্টির সীমানা যতদূর যায় ততদূর চোখ বুলিয়ে পরখ করে দেখি সকলেই ঘুমানো। বাইরে এখনো আলো ফোটেনি।আমি আলআবি ভাইয়ার মুখমন্ডল দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু এই মুহূর্তটাকে আমার ভালো লাগার তালিকায় লিপিবদ্ধ করে নিচ্ছি। হাত ঘড়িটায় আরও একবার চোখ বুলাতেই দেখি ৪ টা বেজে ১৫ মিনিট। আমার মস্তিষ্ক হঠাৎ করে জানান দিল আমাদের দুজনের এই অবস্থায় থাকাটা অন্য কারো চোখে পড়লে অনেক দৃষ্টিকটু দেখাবে।তাই আমি খুব ধীরে ধীরে সতর্কতার সহিত আলআবি ভাইয়ার মাথাটা সিটের সঙ্গে এলিয়ে দিলাম।তার চোখের চশমা টা খুলে আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলাম।শালটাকেও তার গায়ে কাঁথার মতো জড়িয়ে দিলাম।যেই না শালটা জড়িয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে সরে আসতে নিলাম ওমনি আলআবি ভাইয়া হুট করে আমার হাত ধরে বসলেন। এমনটা হওয়ায় আমি হকচকিয়ে উঠলাম।আলআবি ভাইয়া আমার দিকে তার ঘুম মাখা ফোলা ফোলা চোখজোড়া দিয়ে তাকালেন।কোথাও একটা শুনেছিলাম দিনের অন্য সময়ের চাইতে নাকি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পরের মুহূর্তে মানুষের সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায়।কথাটা মোটেও আমার কাছে যুক্তিসংগত মনে হতো না। কারণ আমি ঘুম থেকে উঠে মুখে তৈলাক্ত ভাব ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাইনি কোনদিন। কিন্তু আজ এমুহূর্তে মনে হচ্ছে সেই কথাটা আলআবি ভাইয়া সত্যি বলে প্রমাণ করে দিয়েছেন। সত্যি সত্যি আজ এমুহূর্তে আলআবি ভাইয়া কে আমার কাছে সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ বলে মনে হচ্ছে। আলআবি ভাইয়ার কন্ঠ শুনে আমার সম্বিৎ ফিরে এলো।
— আমার ঘুমন্ত অবস্থায় সুযোগ নিতে যাচ্ছিলে?আমাকে বললেই তো পারো ইউ নিড অ্যা হাগ।কামঅন, আসো একটাই তো হাগ ব্যাপার না।
তার কথায় আমি রেগে গিয়ে বললাম,,,
–কি আমি সুযোগ নিতে যাচ্ছিলাম?বরং আপনিই তো সুযোগ নিয়েছেন। আপনিই তো এসে তখন আমার পাশে বসে মাথা টিপতে….
এটুকু বলেই থেমে গিয়ে আবারও বললাম,,,
–দাড়ান! দাড়ান!আপনি তখন আমার মাথা টিপছিলেন কেন?আর আপনি জানলেন কি করে আমার মাথা ব্যাথা করছে।
–এমনি এমনি বাতাসেই তো আর বড় হইনি। তুমি না বললেও তোমার চোখ আমাকে বলে দেয় তোমার কি প্রয়োজন।(আলআবি ভাইয়া)
কথা টা বলে আর এক মুহূর্ত দেরি করলেন না। আমার হাত থেকে তার চশমাটা নিয়ে পিছনের সিটে গিয়ে রেনুমাকে সামনে পাঠিয়ে দিলেন।আলআবি ভাইয়াকে যত দেখছি ততই মনে হচ্ছে তার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছি।আমার মস্তিষ্ক বলে তাকে কিছু সময়ের জন্য দূরে দূরে রেখে শাস্তি দেয়া দরকার। কিন্তু মন বলে জুইঁ তাকে আগলে আপন করে নে।তোকে ভালোবাসার মানুষ এর অভাব না হলেও তার মতো করে কেউ তোকে ভালোবাসবে না।
রেনুমা আমার পাশে আসার পর জানতে পারি ওর ভাষ্যমতে,আলআবি ভাইয়া ওকে সজল ভাইয়ার সাথে বসার সুযোগ করে দেয়ার জন্যই সামনে এসে আমার সাথে বসেছেন।
[বান্দরবানের সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এ সম্পর্কে জ্ঞান নিতান্তই কম রয়েছে। তাই কিছু কিছু জায়গায় আমি আমার মতো করে কল্পনা থেকে লিখব। আর কিছু কিছু জায়গায় সঠিক ইনফরমেশন দেওয়ার চেষ্টা করবো।যদি কোন ইনফরমেশনে ভুল হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]
ঘড়িতে যখন ঠিক পাঁচটা বেজে আঠারো মিনিট তখন আমরা বান্দরবানের জেলা শহরে এসে পৌঁছাই।এখান থেকে যে গাড়িগুলো যায় ও গুলোকে মূলত চান্দের গাড়ি বা চাঁদের গাড়ি বলা হয়। চাঁদের গাড়ীতে করে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা থাকার জন্য যে রিসোর্ট বুক করেছি সেখানে এসে পৌঁছালাম। এর মাঝে একবার চেকপোস্টে গাড়ি থেমে ছিল।রিসোর্ট থেকে একজন লোক এসে আমাদের রিসিভ করে রিসোর্টের ভিতর নিয়ে গেল। এই রিসোর্টায় মোট বিশটা সিঙ্গেল রুম রয়েছে। প্রত্যেকটা কে বলা হয় ভিলা। আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে একেকটা ভিলা স্থাপিত হয়েছে। প্রত্যেকটা ভিলায় দুইজন থেকে চারজনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এক নম্বর ভিলায় উঠেছে ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপু। দুই নম্বর ভিলায় আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া।তিন নম্বর ভিলায় আমি আর রেনুমা উঠেছি। আর চার নম্বর ভিলায় নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি কে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বাকিগুলোতে অন্যান্য কলিগদের দেওয়া হয়েছে।আমার কালকে আলআবি ভাইয়ার রিসোর্ট ওপেনিং এ যাবো।
আমরা যে যে যার যার ভিলায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করার জন্য বের হলাম। এখানে রিসোর্ট এর ভিতরে খাবারের জন্য ছোটখাটো একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যদি সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে চাই তাহলে ওরা সেই ব্যবস্থা করে দেবে অর্থাৎ বড় ডাইনিং টেবিলের মতো ব্যবস্থা করে দিবে আবার যদি চাই ছোট টেবিল এর ব্যবস্থা ও করে দিবে। তাই আমরা ৮জন একসঙ্গে খেতে বসলাম।অন্য টেবিলে নিয়াজ ভাইয়ার অফিসের কলিগ চারজন চারজন করে বসেছে। খাবার টেবিলে মিথিলা আপু আর ফারাবি ভাইয়ার সঙ্গে টুকটাক কথা হলো। ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপু নিয়াজ ভাইয়ার বোন হিসেবে নাকি আগে থেকেই আমাকে চেনেন। খাওয়ার আগে নিয়াজ ভাইয়া বাবাকে কল করে জানিয়ে দেয় আমরা এখানে পৌঁছে গিয়েছি।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে আমরা নিজ নিজ ভিলায় ফেরত আসলাম। আমরা যেই রিসোর্টে উঠেছি তা নীলগিরির খুব কাছেই। আমাদের ভিলার ছোট্ট বারান্দায় দাঁড়ালে নীলগিরির হেলিপ্যাড এর কিছু অংশ এখান থেকেই দেখা যায়। প্রত্যেকটা ভিলাতে ছোটখাটো একটা কিচেন রয়েছে, রাতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও যেন এখানে চা কফি বানিয়ে খেতে পারি। এখন বাজে ঠিক সকাল সাড়ে সাতটা। আমরা সবাই রেস্ট নিয়ে ঠিক বারোটার মধ্যে আমাদের দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নামাজের পরে নীলগিরি ঘোরার উদ্দেশ্যে রওনা দিব। যেহেতু আমরা এখানে পিকনিকের উদ্দেশ্য করে আসে নি সেহেতু অন্যান্য কলিগরা তাদের মতো করে ঘোরাফেরা করবে আর আমরা আমাদের মতো ঘোরাফেরা করব।
দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে সাদুকে কল দিয়ে জানিয়ে দেই আমরা খুব ভোরে এখানে এসে পড়েছি। ওর সাথে কথাবার্তা শেষ করে যোহরের নামাজ পরে আমরা সবাই নীলগিরির সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়ি।
নীলগিরি থেকে ঘোরাফেরা করে আসতে আসতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে যায়।নীলগিরিতে একটা হোটেলে আমরা বিকেলে হালকা পাতলা নাস্তা করে নিয়েছিলাম। নীলগিরি থেকে ফিরে বিশ্রামের পর রাত ৯ টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে সবাই ফারাবী ভাইয়া আর মিথিলা আপু ভিলায় জড়ো হলাম। কারন তাদের বারান্দাটা সবচাইতে বড় আর এখান থেকে ভিউ টাও খুব সুন্দর।সবাই মিলে বারান্দাতেই আড্ডার আসর বসিয়ে দিলাম। সবাই বলতে আমি আর রেনুমা বাদে। ভাইয়া,ভাবি আপু ওরা সবাই ওদের ভার্সিটি লাইফের কথা বলছে। মাঝেসাঝে অন্যান্য কথাও বলছে। আমি আর রেনুমা দু’একটা কথা বলছি মাঝখান দিয়ে। ওদের আড্ডায় বসে থাকতে খুব একটা ভালো লাগছে না আবার খারাপও লাগছে না। হঠাৎ করেই সজল ভাইয়া বলে উঠলো,,,
— আলআবি কিন্তু আমাদের ফ্যামিলি সিঙ্গার। আগে কলেজ লাইফে থাকতে মাঝে মাঝে যখন সব কাজিনরা এক হতাম তখন ও থাকতো আমাদের আড্ডার মধ্যমণি। তার কারণ ছিল ওর গান।
–আলআবি শুরু করে ফেল।(ফারাবী ভাইয়া)
–দোস্ত আজকে এই জায়গার মধ্যমনি হয়ে যা।নে শুরু কর।(নিয়াজ ভাইয়া)
ওদের জোরাজোরি তে আর টিকতে না পেরে আলআবি ভাইয়া কোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই খালি কন্ঠে গাইতে লাগলেন,,,
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকেই আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
আর দুটি নিয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও.. তোমাকে।
চলবে…………
[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]