#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_২৮
“বর্ষণ সঙ্গী” নামটা শুনেই বুকের বা পাশে দুই ইঞ্চি গভীরে থাকা বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে বলে হৃদপিণ্ড,তার মধ্যে ধুকধুক শব্দটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে।কিছু টা সময় শূন্য দৃষ্টিতে টেবিলে রাখা টিস্যু বক্সটা এর দিকে তাকিয়ে রইলাম।বুক কাঁপানো এই ধুকধুক শব্দটা তীব্র কষ্টের কারণ না হয়ে এমুহূর্তে আমার তীব্র সুখ এর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনের সবচেয়ে ভালো লাগার মুহূর্তকে কাটিয়ে আলআবি ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।সাদু আর রাইয়ানের দৃষ্টি আমাদের দুজনের উপরই। এই মুহূর্তে আমি ওদের দেখা বা বিশেষ করে রাইয়ান আমাদের দুজনের ফুসুরফুসুর করে কথা বলায় কি মনে করবে বা করছে তা ভাবার প্রয়োজন বোধ করছি না।আমার মন আর মস্তিষ্কে কেবল একটা শব্দ ই বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে।তা হলো “বর্ষণ সঙ্গী”।আলআবি ভাইয়ার বলা কথাটা মস্তিষ্কে প্রেরণ হতেই মনে হলো আমি আমার বর্ষণ সঙ্গীকে পেয়ে গিয়েছি। আমার এই মুহুর্তের অনুভূতিটা বলে প্রকাশ করার মত নয়।
অন্যের সামনে কানে কানে কথা বলাটা খুবই দৃষ্টি কটু দেখায়।কিন্তু এমুহূর্তে আমার চুপ থাকলে হবে না।আমি একটু আস্তে করেই আলআবি ভাইয়াকে বললাম,,,
–আপনি তাকে চেনেন?
আলআবি ভাইয়া পুনরায় আমার কাছে এসে আস্তে করে বললেন,,,
–আমার সঙ্গে তোমার বর্ষণ সঙ্গীর আত্মার সম্পর্ক।
তার এমন বারবার আমার কাছে চলে আসায় আমার শরীরের লোম কেমন যেন ঝংকার দিয়ে উঠছে।এভাবে তার সাথে কথা বলা সম্ভব নয়।আর রাইয়ান ছেলেটাকেও তো সব বলতে হবে।আমি কালবিলম্ব না করে মনে একরাশ উৎসাহ নিয়ে হাসি হাসি মুখে জোরেই বলে উঠলাম,,,
–সে নিশ্চয়ই আপনার বন্ধু তাই না?
কথাটা বলেই শেষ মুহূর্তেও মুখে হাসি বজায় রাখলাম। আমার এরূপ উৎফুল্লতা দেখে সাদু ওর আগ্রহ মনে চেপে রাখতে না পেরে বলে উঠলো,,,
–কার কথা বলছিস।
–বর্ষণ সঙ্গী।(আমি)
সাদু কে কথাটা বলেই চোখ পরল ওর পাশে অবুঝের মতো নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় বসে থাকা রাইয়ানের দিকে। বেচারার আমাদের কথার “ক” টাও যে বোধগম্য হচ্ছে না তা চেহারায় খুব সূক্ষ্মভাবে ফুটে উঠেছে।রাইয়ানের দিকে যখন তাকিয়ে ছিলাম তখন রাইয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,,
–জুইঁ আমি একটু তোমার সাথে কথা বলতে পারি?
–ওদিকে নয় এদিকে। আমার সাথে কথা বলো।(আলআবি ভাইয়া)
–জ্বি ভাই।(রাইয়ান)
–ব্লাড ডোনেশন করেছ ভালো কথা তা অন্যের বউ নিয়ে টানাটানি করো কেন?(আলআবি ভাইয়া)
— ঠিক বুঝলাম না ভাই।(রাইয়ান)
–বোঝার বয়স হয় নাই মেয়ে দেখতে এসে পরেছ।(আলআবি ভাইয়া)
–ভাই একটু ক্লিয়ার করে বলবেন আসলে কি বিষয়ে বলছেন? (রাইয়ান)
–শোনো সোজা কথা হলো ও তোমাকে বিয়ে করবে না।এই দেখা পর্যন্তই শেষ।ওর হাসবেন্ড আছে। (আলআবি ভাইয়া)
উনার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে ও নয় একেবারে চাঁদের দেশ থেকে পড়লাম। উনি যে গন্ডগোল পাকাতে এখানে এসেছেন তার আভাস পেয়েছি আগেই। কিন্তু এতো বড় গন্ডগোল পাকাতে কে বলেছে ওনাকে?আমি তড়িৎ গতিতে বললাম,,,
–না না আমার তো…..
আর বলতে পারলাম না। আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আলআবি ভাইয়া বললেন,,,
–হ্যাঁ তোমার তো হাসবেন্ড আছে।
আমি অবাকের উপর অবাক হচ্ছি।সাদুর দিকে তাকিয়ে দেখি ওরও একি অবস্থা। রাইয়ান বলে উঠলো,,,
–কিন্তু নিয়াজ ভাই যে বলল জুইঁয়ের…..
আলআবি ভাইয়া আমার মতো রাইয়ানকেও কথা শেষ করতে না দিয়ে থমথমে গলায় বলে উঠলেন,,,
–একবার না বললাম ওর হাসবেন্ড আছে।
–কিন্তু…. (রাইয়ান)
–বাইরে যাওয়ার রাস্তা ওইদিকে।(আলআবি ভাইয়া)
এতোদিনে বুঝে গিয়েছি আলআবি ভাইয়া রেগে গেলেই কিছু টা গম্ভীর আর থমথমে হয়ে কথা বলেন।রাইয়ান আর কিছু না বলেই চলে গেল। রাইয়ান চলে যাওয়ার পর মুহূর্তেই আমি আলআবি ভাইয়াকে বললাম,,,
— আপনি কি আমার বর্ষণ সঙ্গীর সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারবেন? আচ্ছা সে এখন কোথায় আছে? কেমন আছে সে? আর আপনার সাথে পরিচয় হলো কীভাবে? আপনার সাথে তো নিয়াজ ভাইয়ার বন্ধুত্ব খুব ভালো। বলতে গেলে বেস্ট ফ্রেন্ড এর মতো। তাহলে আমার বর্ষণ সঙ্গীর সঙ্গে আপনার আত্মার সম্পর্ক হয় কি করে? তাহলে কি আপনার দুইটা বেস্ট ফ্রেন্ড?
কথাগুলো একদমে বলে তারপর নিশ্বাস ছাড়লাম। এতক্ষণ এই প্রশ্নগুলো আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে খেতে মাথা ব্যথা বানিয়ে ফেলেছিল। মনে হচ্ছে কথাগুলো বলে এখন একটু প্রশান্তি পাচ্ছি। আমার কথা শেষ হতেই আলআবি ভাইয়া বললেন,,,
— তোমার কি এই শাড়িটা ছাড়া আর কোন শাড়ি নেই? ছেলেদের সামনে শুধু একটাই শাড়ি পড়ে ঘুরঘুর করো কেন?
আমি প্রশ্ন করলাম কি আর সে উত্তর দিল কি। এতগুলো কথাই আমার বেকার গেল। তার বলা উত্তরে আমার প্রচন্ড রাগ হল। কত সময় ধরে জানতে চাইছি তার থেকে। কিন্তু সে আছে তার ভাব নিয়ে। আমি একটু ঝাঁঝালো কন্ঠেই বলে উঠলাম,,,
— আপনার কি শোনায় সমস্যা?
আলআবি ভাইয়া আমার দিকে চোখ পাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন,,,
–কী?কী বলতে চাও?
–শোনায়! শোনায়! আপনার কি শোনায় সমস্যা?আই মিন শুনতে পান তো? এতগুলো কথা বললাম এতগুলো প্রশ্ন করলাম আপনাকে। আপনি উত্তর কি দিলেন আমাকে?(আমি)
— তোমার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মুডে এখন আমি নেই। যখন হবে তখন বলব। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। একটাই শাড়ি কেন পরো তুমি বারবার?(আলআবি ভাইয়া)
–সেম টু ইউ। এখন মুড নেই যখন মুড হবে তখন বলব।(আমি)
আমার কথাটা শেষ হতেই উনি হুট করে দাঁড়িয়ে কোথায় যেন হেঁটে চলে গেলেন। তার প্রস্থানের সাথে সাথেই সাদু এসে আমার পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল আর বলল,,,
–দোস্ত তাইলে তোর ভাগ্য খুইলা গেল। প্রেমিক পুরুষ এর লগে দেখা করার জন্য আর বেশি দিন দেরি করা লাগব না।কি আমি বলছিলাম না আলআবি ভাইয়াই নাটের গুরু।সে তোর বর্ষণ সঙ্গী কে চিনে।কি দেখলি তো আমার বাথরুম থট’স টাই ঠিক।
ওর কথায় আমি এক গাল হেসে বললাম,,,
–সত্যি আজ মনে হচ্ছে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। বাসায় যাইয়া নিয়াজ ভাইয়ারে একটা থ্যাংক ইউ দিতে হইব। যদি নিয়াজ ভাইয়া রাইয়ান নামের ছেলেটার সাথে দেখা করার জন্য এখানে না পাঠাই তো তাইলে তো আলআবি ভাইয়ার সাথে দেখা হইতো না আর আমার বর্ষণ সঙ্গীর কথাও জানতে পারতাম না। শোন! শোন! নিয়াজ ভাইয়ার জন্যে তার পছন্দের ডোনাট নিয়া যামু নে।
–বাহ বাহ।এমনে ফাল পাড়তাছোস মনে হয় তোর প্রমিক পুরুষ এর লগে বিয়ে ঠিক হইয়া গেছে।(সাদু)
— চুপ থাক তোর নাক চাঁপলে এখনো ঝোল পড়ে। তুই এইডি বুঝবার পারবি না।(আমি)
–বোইন আমার নাক দিয়া ঝোল পরুক,ঘি পরুক,দুধ পরুক।যা ইচ্ছা পরুক।আমার দেখার টাইম নাই।এখন খালি খাওয়ার টাইম।আগে কিছু অর্ডার কর বোইন।তোর বাতিল হওয়া হবু জামাই যে কিপটারে পানিও শেষ কইরা থুইয়া গেছে।দেখ!
ওর কথায় আমি হেঁসে উঠলাম। তারপর আমরা কফি অর্ডার করলাম। সাথে এখানে চকলেট রোল পাওয়া যায়। দুইটা চকলেট রোল অর্ডার করলাম। আমি আর সাদু গল্প করছিলাম আর মনের সুখে আয়েশ করে কফি খাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝে সাদু ছবি তুলছিল। আমার মগের কফি যখন অর্ধেক হয়ে এলো তখন সামনে চোখ পড়তেই দেখি আলআবি ভাইয়া তার দলবল নিয়ে ভিতরে ঢুকছেন। তাকে দেখে বুঝতে পারছি না রেগে আছেন নাকি শান্ত ভাবে আছেন। তবে এইটুকু বুঝতে পারছি এই ব্যক্তি নিজের বিয়ের দিনেও সাদা পাঞ্জাবি পড়ে ঘুড়ে বেড়াবে। একটু আগে যখন আমাদের সাথে বসে ছিল তখনও সেই সাদা পাঞ্জাবিই গায়ে ছিল।
তিনি সোজা দলবল নিয়ে আমাদের টেবিলের সামনে এসেই দাঁড়িয়ে পরলেন। কোন প্রকার টু শব্দ ছাড়াই আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে দাড় করিয়ে দিলেন। তার কাজে কিছুটা বিরক্ত হয়েই ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালাম। কোনো কথা না বলে যন্ত্রমানবের মত আমাকে নিয়ে গট গট করে হেঁটে চললেন।আমি বারবার পিছনের দিকে তাকাচ্ছি। দেখলাম সেই দিনের শাফিন নামের ছেলেটা সাদুর সঙ্গে কি যেন কথা বলছে।
আলআবি ভাইয়া আমার ডান হাত তার বাম হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন। তাই আমি আমার হাত ছুটানোর জন্য আমার বাম হাত দিয়ে তার হাত সরানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।হাত কিছুটা ছুটতেই আবার পর মুহূর্তেই আলআবি ভাইয়া আরো জোরে বল প্রয়োগ করে হাত ধরে ফেলেছেন এমন করতে করতে গিয়ে আমরা তার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। গাড়ির সামনে এসে আমি তাকে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললাম,,,
— কি সমস্যা আপনার? এমন করছেন কেন?
–অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেড় বছরে অনেক উরেছ। এখন আর কোন ছাড়াছাড়ি নেই।(আলআবি ভাইয়া)
–মানে?(আমি)
— তোমার বর্ষণ সঙ্গীর তরফ থেকে কথাগুলো আমিই বলে দিলাম।(আলআবি ভাইয়া)
— আপনি জানলেন কিভাবে? আপনার কাছে নিশ্চয়ই তার নাম্বার রয়েছে। তাড়াতাড়ি আমাকে তার নাম্বার দিন।(আমি)
— তোমার তো দেখছি আইকিউ লেভেল খুবই কম। তখন তো আমি তোমাকে বলেই দিলাম, তোমার বর্ষণ সঙ্গীর সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমাদের কথা বলতে কোন মোবাইলের দরকার হয় না বুঝলে।(আলআবি ভাইয়া)
আমার হাতটা সে এখনো ধরে আছেন।তাই হাতের দিকে ইশারা করে বললাম,,,
— আমার বর্ষণ সঙ্গী হাতটাও নিশ্চয়ই এভাবে ধরে রাখতে বলেনি আপনাকে।
আমার বলা কথাতেও তিনি আমার হাত ছাড়লেন না। বরং হাত ধরে আমাকে গাড়ির মধ্যে বসিয়ে দিলেন। তারপর নিজে এসে আমার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন। আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না। সে যেহেতু আমাকে এর আগেও বাসায় পৌছে দিয়েছিলেন তাই আজও ভেবে নিলাম আমাকে হয়তোবা বাসায়ই পৌঁছে দেবেন। একমনে আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট ফেলে আমরা এগিয়ে চলছি।বাইরে দৃষ্টি রেখে রাস্তাঘাট মানুষজন দেখতে দেখতে চোখটা বারবার লেগে আসছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি ঘুমাতে চাচ্ছি না। তাই জোরপূর্বক চোখের পাতা দুটো কে মেলে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ করে আমার চলমান অবস্থা স্থির হয়ে যাওয়ায় ঘুম ঘুম ঘোর টা কেটে গেলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখি এটা আমাদের বাড়ি নয় বরং একটা শপিং মল। আমি পাশে আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি তিনি ইতিমধ্যে গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছেন। আমিও শীঘ্রই সিট বেল্ট টা খুলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। নেমে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
–আমরা এখানে কেন? আপনি না আমাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন?
— কখন বললাম আমি তোমাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।(আলআবি ভাইয়া)
— তাহলে আমরা এখানে কেন?(আমি)
— বিয়ে করতে এসেছি।(আলআবি ভাইয়া)
–কি? কি উল্টাপাল্টা বলছেন এসব। শপিংমলে কি কেউ বিয়ে করতে আসে? (আমি)
–নিজেই যখন জানো তাহলে এতো কথা বলছো কেন?(আলআবি ভাইয়া)
পুনরায় তিনি আমার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে শপিংমলে ঢুকলেন।আমার মস্তিষ্ক কোন ভাবেই চিন্তা করে কোন কিছুই মিলাতে পারছেনা।হঠাৎ করেই আলআবি ভাইয়ার কি হলো? আর সে আমার বর্ষণ সঙ্গীর কথাই বলছে না কেন আমায়?
আলআবি ভাইয়া শপিংমলে ঢুকে ঘুরছেনতো ঘুরছেনই থামার কোনো নামই নেই। অবশেষে একটা বোরখা হাউজের ভিতরে ঢুকে পড়লেন। তখন মনে হল লোকটাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেই। আমাকে বললে কি হতো যে তিনি বোরখা হাউজ খুঁজছিলেন। আমাকে বললেই তো হতো। এখান থেকে আমি আর সাদু বেশিরভাগ শপিং করে থাকি। এই বোরখা হাউজ টায় বোরখার সাথে সাথে হিজাবজ বিক্রি করে। এখান থেকেই আমি আর সাদু বেশিরভাগ হিজাবগুলো কিনে থাকি।
আমার কৌতূহল মেটানোর জন্য আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে বসি,,,
–কার জন্য বোরখা কিনবেন?
–আমি তো আর বোরখা পড়বো না তাই না।তোমাকে সাথে যেহেতু এনেছি তাই নিশ্চয়ই তোমার জন্যই নিব।(আলআবি ভাইয়া)
–না না আমার লাগবে না।(আমি)
–হ্যাঁ তা কেন লাগবে। যদি শাড়ি কিনে দেয়ার কথা বলতাম তাহলে তো লাফিয়ে লাফিয়ে শাড়ি নিতে। ছেলেদের সামনে তো শাড়ি পড়ে শুধু ঘুরঘুর করতে ইচ্ছা করে তোমার।(আলআবি ভাইয়া)
আমি তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথানিচু করে বললাম,,,
— আমার বাসায় বোরখা আছে। তাই কিনতে বারণ করেছিলাম।
এরপর আর কোন কথা বললাম না। আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকালামও না। তার কথাটায় খুব খারাপ লেগেছে আমার। না জেনে শুনে আমার নামে খারাপ একটা কথা বলবেন কেন তিনি? তাই তার সাথে আর কোন প্রকার কথা বলতে ইচ্ছে হলো না। এখন বুঝলাম সে মনে মনে আমাকে ভালো মেয়েদের কাতারে দেখেনা। আলআবি ভাইয়া নিজের পছন্দমত একটা বোরখা আর তার সাথে হিজাব কিনে নিলেন। তারপর আগের ন্যায় আমার হাত ধরতে আসলে আমার হাত ধরতে দিলাম না। আমি গটগট করে শপিং মল থেকে বের হয়ে সোজা গাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লাম। আলআবি ভাইয়া গাড়ির সামনে আসলে আমরা দুজনে গাড়িতে উঠে বসলাম। আমার এই নীরবতা আর ভাঙলো না। বাসাযর সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে বোরখা না নিয়েই দ্রুত পা ফেলে চলে আসলাম। বাসার দরজার সামনে এসে কলিংবেল চাপতেই নিয়াজ ভাইয়া দরজা খুলে দিল। ভাইয়া কে দেখেই আমার ডোনাটের কথা মনে পড়ে গেল। ওই আলআবি নামের খবিশ টার জন্য আমি ডোনাট টাও কিনতে পারিনি। ড্রইংরুমে দেখলাম বাবা বসে বসে চা খাচ্ছে আর টিভিতে খেলা দেখছে।পাশে আরেকটা চায়ের কাপ থাকায় বুঝতে পারলাম বাপ-ছেলে দুজন মিলে খেলা দেখছে আর চা খাচ্ছে। ভাইয়ার সাথে কথা না বলে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।
ওইদিনের ঘটনার পর আরো দুইদিন চলে গিয়েছে। আমাকে ভাইয়া কেবল জিজ্ঞেস করেছিল আলাবি ভাইয়া সেদিন ক্যাফেতে এসেছিল কিনা? আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমি বাসায় আসার পর নিয়াজ ভাইয়া আমাকে আর রাইয়ানের সম্পর্কে কিছুই বলেনি। কিন্তু রাইয়ানের সাথে দেখা করে আসার পরের দিন নিয়াজ ভাইয়া শুধু এতোটুকুই বলেছিল “রাইয়ানকে নিয়ে আর কোন চিন্তা নেই। আলআবি আমাকে সব বলেছে”।
সাদুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছিলাম শাফিন নামের ছেলেটা আলআবি ভাইয়ার সেক্রেটারি। আর ওই ছেলেটাই সাদুকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিল। রাতে ঘুমানোর আগে ওয়াশরুমে এর বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভালোভাবে মুখটা ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিচ্ছিলাম। ঠিক তখন মনে হলো কেউ আমার ঘরের মধ্যে বসে গিটার বাজিয়ে গান গাইছে।
Khairiyat poocho
Kabhi to kaifiyat poocho
Tumhaare bin deewane ka kya haal hai
Dil mera dekho
Na meri haisiyat poocho
Tere bin ek din jaise sau saal hai
Anjam hai tai mera
Hona tumhein hai mera
Jitni bhi ho dooriyan filhaal hain
Yeh dooriyan filhaal hain….
আমি একটু তাড়াতাড়ি করে মুখটা ধুয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসলাম এসে রুমে কারোই অস্তিত্ব পেলাম না। কিন্তু গানটা এখনো আমার কানে বেজে যাচ্ছে। দ্রুত বারান্দায় গিয়ে দেখতেই আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। কারন বারান্দায় বসে আলআবি ভাইয়া এক মনে আকাশে উদিত হওয়া চকচকে থালার ন্যায় চাদঁটার পানে তাকিয়ে আছেন। এই মুহূর্তে আলআবি ভাইয়াই কেন কোনো মানুষেরই আমার বারান্দায় আসা অবাস্তব একটা ঘটনা। কিন্তু চোখের সামনে যা দেখছি তা মিথ্যেও দেখছি না।হঠাৎ মনে হলো এটা হয়তো বা আলআবি ভাইয়ার রূপ ধারণ করে কোন জিন পরী এসেছেন। পরে দেখই আলআবি রূপি জিনটা বসে বসে গান গাইছে তাই যত দোয়া-দুরুদ আছে পড়তে লাগলাম। আল্লাহাফেজ ভাইয়ার ঝিম বৃষ্টি যখন আবার ওপর পরল তখন জোরে জোরে কি কি যেন দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম কি পরিচিত আমি নিজেও বুঝতে পারছি না
চলবে…………
#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_২৯
আলআবি ভাইয়া রূপি জিনের দৃষ্টি যখন আমার ওপর পরল তখন জোরে জোরে কি কি যেন দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম। কি পরছি আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।ধীর গতিতে জিনটা গিটার টা পাশে রেখে আমার দিকে আগাতে নিলেই জোড়ে “আ” মূলক একটা চিৎকার দিয়ে বসলাম। সাথে সাথে এক জোড়া শক্তপোক্ত হাত এসে আমার মুখ চেপে ধরল।এক হাত দিয়ে আমার ঘাড়ের পিছনের দিকে চেপে ধরা আরেক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরা।
দাতেঁ দাঁত চেপে একটা ফিসফিসে আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো।
–চুপ!চুপ!একদম চুম!
পরিচিত কন্ঠ টা শুনে মনের মধ্যে একটা স্বস্তির বাতাস বয়ে গেল।নিশ্চিত হলাম আমার সামনে থাকা লোকটা আলআবি ভাইয়া ।আমার সাথে এখনো কোন অস্বাভাবিক কিছু হয়নি।তার মানে এটা আসল মানুষ ই।জিন পরী হলে এতক্ষণে আমার বারোটা তেরোটা বাজিয়ে দিত। মুখের উপর থেকে তার হাত টা সরানোর চেষ্টা করতেই তিনি হাতটা সরিয়ে নিলেন।আমি ছাড়া পেতে ই হড়বড়িয়ে বললাম,,,
–আপনি এখানে কেন?আর এতো রাতে আমাদের বাসায় কি করছেন? তার থেকে বড় কথা হল আপনি আমার বারান্দাতেই বা কি করছেন?
–গিটার বাজাতে এসেছি।(আলআবি ভাইয়া)
কথাটা বলেই তিনি ইবলিশ রূপি একটা হাসি হাসলেন।পূর্নিমার আলো এসে তার মুখমন্ডলে লুকোচুরি খেলা খেলছে।তার পুরু ঠোটের হাসি বাম গালে থাকা ঈষৎ গর্তের অর্থ্যাৎ টোলের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। হাসির দরুন তার চোখ জোড়া ঈষৎ সংকুচিত হয়েছে। তার গাল ভর্তি থাকা চাপ দাঁড়ি যে বিলীন হয়ে গিয়েছে তা এই পূর্নিমার আলো আমার চোখ জোড়ায় স্পষ্ট তুলে ধরেছে।আজও পড়নে তার সাদা পাঞ্জাবির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। শুনেছি কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। তবে আলআবি ভাইয়ার ক্ষেত্রে এই কথাটা এখন একেবারে অপ্রযোজ্য। মনে হচ্ছে সে যদি সাদা পাঞ্জাবি না পড়ে অন্য বর্ণের পাঞ্জাবি পড়তো তাহলে তা মানানসই হতো না। কেন যেন তাকে এই রূপে দেখতে অদ্ভুত রকমের ভালো লাগছে। তাকে পর্যবেক্ষণ করার এক পর্যায়ে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমার সম্বিত ফিরে এলো তখন, যখন দেখলাম সে তার গিটারটার কাছে পুনরায় ফিরে যাচ্ছে। যেখানে গিটার রাখা সেখানে উবু হয়ে তাকে কিছু একটা নিতে দেখলাম। তারপর সে আবার আমার কাছে ফিরে আসলো। আলআবি ভাইয়ার হাতের দিকে দৃষ্টি দিতেই একটা শপিং ব্যাগের মতো দেখতে পেলাম। আমার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,
–তুমি ছেলেদের সামনে বিনা বোরখায় ঘুরঘুর করলে তা তোমার বর্ষণ সঙ্গীর মোটেও ভালো লাগে না।
“বর্ষণ সঙ্গী” নামটা শুনলেই মনের মধ্যে হাজার ও ভালোলাগার অনুভূতিরা কড়া নেড়ে যায়। একজন ব্যক্তির আসল নাম বাদ দিয়ে ছদ্মনাম নাম শুনলেই যখন এতটা ভাল লাগে তখন ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই তার সংস্পর্শে এলে আমি কখনোই খারাপ অবস্থায় থাকবো না। আমি আলআবি ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম,,,
— এই বোরখা তো আপনি কিনেছেন। আমি আপনারটা কেন নিব? নিতে হলে আমার বর্ষণ সঙ্গীর টাই নিব।
–তোমাকে এক কথা বারবার কেন বলা লাগে বলতো?তোমার বর্ষণ সঙ্গীই তো আমাকে বলল “আমার বর্ষণ সঙ্গিনীকে গিয়ে বোরখা কিনে দিয়ে আয়”।সেদিন তুমি এটা আমার কাছেই রেখে এসেছিলে। তাই তোমার বর্ষণ সঙ্গী তোমার বাসায় আসতে আমাকে বাধ্য করলো।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়ার কথা শেষ হতে না হতেই আমি তার হাত থেকে খপ করে ব্যাগ টা নিয়ে নিলাম।তারপর বললাম,,,
–আমার জানা মতে আমার বর্ষণ সঙ্গী না কানা,না কালা আর না ই বা পঙ্গু। আর তার থেকে বড় কথা হলো আপনার মতো লোক কোন কালেই কারো চামচামি করবে না।তাই এবার আমাকে তারাতাড়ি বর্ষণ সঙ্গীর আসল পরিচয় দিন।সে কে, কোথায় থাকে সব কিছু বলতে হবে।বলুন।
আলআবি ভাইয়া হামি তুলতে তুলতে বললেন,,,
— আজ অনেক কথা বলে ফেলেছি। এখন ঘুম পাচ্ছে খুব। যাও তুমিও ঘুমাও গুড নাইট।
বলেই তিনি বারান্দার রেলিং টপকে নিচে নামাতে শুরু করলেন। কেবল এক পা রেলিং এর বাইরে দিয়েছেন তখন আমি তাড়াতাড়ি করে তার সামনে গিয়ে বললাম,,,
–আপনার না ঘুম পেয়েছে।তাহলে সুইসাইড করতে যাচ্ছেন কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর আপনি সুইসাইড করতে যান। আগে আমার উত্তর দিন।
–এই বাড়িটা যেই আর্কিটেক্ট বানিয়েছে তার মাথায় কোন ঘিলু নেই। যদি একটু মাথা খাটিয়ে তোমার বারান্দার পাশেই পাইপ লাগানোর স্পেস রাখতো তাহলে আমাকে এত কষ্ট করতে হতো না। পাইপ বেয়ে ই উপরে উঠে যেতাম আর নেমে যেতাম।আমাকে আর কষ্ট করে দুই টা মই একসঙ্গে বেধে এই তিন তলায় উঠতে হতো না।(আলআবি ভাইয়া)
তার এমন বেহুদা কথাবার্তায় আমি চটে গেলাম। একটু শব্দ করেই বলে উঠলাম,,,
–হ্যাঁ আপনার মাথা তো ঘিলুতে ভরা। মাথায় এতই যখন বুদ্ধি তে ভরা তাহলে চাকরিটা ছেড়ে ছিলেন কেন? নিশ্চয়ই দেড় বছর আগে কোন না কোন গণ্ডগোল পাকিয়েছিলেন। তাই আপনাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছিল।
আমার কথায় আলআবি ভাইয়ার মুখের রং পাল্টে গেল। আধো আধো আলোয় ঠিকই তার অগ্নিমূর্তি রূপ দেখতে পেলাম। আমার অন্তর আত্মা কাপিয়ে বলে উঠলেন,,,
–যে বিষয়ে অবগত নও সেই বিষয়ে কোনো কথা ভুলেও মুখে আনবে না।
সে যে খুব রেগে আছেন তা কথার সুরেই বলে দিচ্ছে। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে স্থান ত্যাগ করলেন। তাকে নিচে নামতে দেখে মনে পড়ল সে এখান থেকে যাবে কিভাবে? আমার জানা মতে তো কোন রাস্তাই নেই এখানে। আমি দ্রুত নিচে তাকালাম কিন্তু কোনো মানুষেরই অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না।আলআবি ভাইয়া নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেলেন। তার টিকিটারও দেখা পেলাম না।
রুমে এসে আলআবি ভাইয়ার ব্যাপারে কিছু সময় ভাবাভাবি করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম হাতে মোবাইলটা নিয়ে। প্রায় সময়ই বর্ষণ সঙ্গী আর আমার পুরনো মেসেজ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাই। আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না।
সকালে এলার্ম এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো। উঠে ফজরের নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজটা শেষ করতেই বাইরে ঝুম বৃষ্টি পড়তে লাগলো। কিছু সময় বারান্দায় গিয়ে মনোযোগ সহকারে বৃষ্টিবিলাস করে পুনরায় রুমে ফেরত আসলাম। হঠাৎ করে মনে হলো এখন বাসায় ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে ভুনা খিচুড়ি রান্না না হলে বৃষ্টিরাজিরা অভিযোগ জানাতে দলে দলে ছুটে আসবে। মনের এই অদম্য ইচ্ছা টাকে আর পুষে রাখতে পারলাম না। চলে আসলাম খিচুড়ি রান্নার অভিযানে। রান্না ঘরে এসে দেখি ভাবি ও এইমাত্র রান্নাঘরে এসেছে। যেদিন থেকে জানতে পেরেছিলাম আমাদের বাসায় নতুন অতিথির আগমন ঘটবে সেদিন থেকেই ভাবিকে বেশি কাজ করতেন দেইনা। রান্নার কাজ তো একেবারেই করতে দেই না। ভাবী এখন শুধু বাসায় ঘুরে ঘুরে এই ঘর ওই ঘর গুছিয়ে রাখে। কমলা আন্টি এখন আর সকাল সকাল আসে না। যখন আমি ভার্সিটিতে চলে যাই সেই সময়টা এসে ভাবিকে সঙ্গ দেয়।ভার্সিটিতে আমার তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছিল আমাদের সুবর্ন জয়ন্তীর পরের দিনই। সেদিন থেকে কমলা আন্টি আমার অনুপস্থিতিতে ভাবির সঙ্গে থাকে। আমি আসলে কিছু সময় পরে ডিউটিতে চলে যায়। আমার মত ভাবির ও ইলিশ মাছ পছন্দ। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইলিশ মাছ ভেজে চলেছি আর পাশেই ভাবি আমার সঙ্গে গল্প করে চলেছে। ইদানিং ভাবির আচরণে অনেক কিছুরই পরিবর্তন লক্ষ করতে পারছি।হুটহাট করেই একেকটা ইচ্ছে পোষণ করে বসে। তবে তা খুবই ছোট ছোট ইচ্ছে।একেই বুঝি বলে প্রেগনেন্সি সময় এর মুড সুইং।
সকালবেলা আমি, ভাবি আর বাবা হালকা-পাতলা নাস্তা করলেও নিয়াজ ভাইয়ার ভাষ্য মতে, সকালে খেতে হবে রাজার হালে দুপুরে খেতে হবে সেনাপতির হালে আর রাতে খেতে হবে প্রজার হালে। আমার রান্না খিচুড়ি বরাবরই ভাইয়া আর বাবার পছন্দের।এই খিচুড়ি টাও একসময় ভালো রাঁধতে পারতাম না।আর দশ-পাচঁ টা মায়ের মতো আমাকে আমার মা রান্না শেখায় নি।আমার কমলা আন্টি আমাকে রান্না শিখিয়েছে।সে আমাকে কম আদর স্নেহ করে না।কিন্তু ওই যে একটা কথা আছে না মা তো মা ই।মায়ের সমতুল্য আর কেউ হয় না। আমার রান্নার হাতে খড়ি মাকে দিয়ে শুরু হয়নি সেই জায়গায় একটা আফসোস রয়েই গিয়েছে।
খাওয়া-দাওয়া করে রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বাইরে থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এই পরিবেশে বাইরে বের হতে একটুও ইচ্ছে করছে না।ভার্সিটি যাওয়া তো বাদই দিলাম। এমনিতে আমি আর সাদু ভার্সিটিতে অনিয়মিত নই।খুব কমই ক্লাস মিস করি। কিন্তু বর্ষাকাল এসে আমার সকল নিয়ম ভেঙে দেয়। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কাঁথা মুড়ি দিয়ে কোন একটা নাটক বা মুভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ি। মোবাইল চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগে। যদিও এটা একটা বদভ্যাস কিন্তু তাও আমার ভালো লাগে। সাদু কে একটা মেসেজ করে জানিয়ে দিলাম আজকে আর ভার্সিটি যাব না। এরপর কাঁথা মুড়ি দিয়ে মনপুরা ছবিটা মোবাইলে চালু করে দিয়ে দেখতে লাগলাম।কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারলাম আমার পক্ষে আর চোখের পাতা খুলে রাখা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে ঘুমের রাজ্যের সঙ্গে সখ্যতা গড়তে পারি জমালাম ঘুম রাজ্যে।
ঘুম ভাঙতেই সর্বপ্রথম চোখে পড়ল আমার ডান পাশে পড়ে থাকা মোবাইল টার দিকে। শোয়া থেকে উঠে বসে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ১১টা বেজে ৩৭ মিনিট। মোবাইলে চলতে থাকো মুভিটা ও শেষ হয়ে গিয়েছে এতক্ষনে। আমার রুম থেকেই কয়েকজন মানুষের অট্টহাসির আওয়াজ পাচ্ছি। আন্দাজ করে বুঝতে পারলাম হয়তোবা ড্রয়িংরুমে চার-পাঁচজন মানুষ বসে কথা বলছে। সেই সাথে আবার হাসির আওয়াজও ভেসে আসছে। কে এসেছে তা পরখ করার জন্য বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এর পর মাথায় ভালোভাবে ওড়না দিয়ে রুমের বাইরে পা বাড়ালাম। ড্রইংরুমের দৃশ্য চোখে ভেসে উঠতেই মনে হলো আমার চোখের সামনে কোন দৃশ্য ই স্বাভাবিক নয়।
চলবে…………
[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]