#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_২৬
— ভুল করেও ভাবিস না তোর সামনে পুরনো আলআবি দাঁড়ানো।
এরা দুজন যে কি নিয়ে কথাবার্তা বলছে তার আগামাথা ও বুঝতে পারছি না। তবে এইটুকু ধারণা হয়ে গিয়েছে যে দুজনেই পূর্ব পরিচিত। এর মাঝে রাকিব বলে উঠলো,,,
— পুরনো ক্ষত এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি?
কথাটা বললেই মাথা কিছুটা কাত করে আলআবি ভাইয়ার পিছনে অর্থাৎ আমার দিকে তাকাল। তারপর আবারো বললো,,,
— পরিবেশে কেমন যেন লায়লী-মজনু গন্ধ পাচ্ছি।
— কুত্তা সবকিছুর গন্ধ আগেই পায়।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়া এভাবে কেন কথা বলছেন? দেখে তো মনে হচ্ছে এদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। এদের দুজনেরই চোখ দেখলে যেকেউ মনে করবে চোখ দিয়েই দুজন যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। কিছু লোকের পায়ের শব্দে দরজার দিকে আমরা সবাই তাকালাম। দেখি সাত থেকে আট জন ছেলে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।একজন তাদের মধ্যে থেকে বলে উঠলো,,,
–বড় ভাই কোনো সমস্যা?
আলআবি ভাইয়া একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবার রাকিবের দিকে তাকালো।হঠাৎ করেই আলআবি ভাইয়ার কথা বলার ভঙ্গিমা পাল্টে গেল।কন্ঠে গম্ভীরতা টেনে বললেন,,,
–এখানে যখন এসেই পরেছিস আবারও দেখা হওয়াটা নিশ্চিত।
আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরে সাদুসহ বাইরে এসে পরলেন।পিছনে পিছনে সেই সাত-আট জন ছেলে গুলোও আসছে। মাঠ পেরিয়ে যখন ভার্সিটির গেটের দিকে যাচ্ছিলাম তখন কেউ কেউ আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আবার কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত ছিল।গেট দিয়ে বের হয়ে আলআবি ভাইয়ার থেকে হাত টা ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতেই হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন,,,
–এই মেয়ে!
ভয়ে আমি লফিয়ে উঠলাম।আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাদু। এমন এক বিকট আওয়াজে সাদুও লাফিয়ে উঠলো।আলআবি ভাইয়া পুনরায় বললেন,,,
–এরপর থেকে যদি বোরখা ছাড়া তোকে বাইরে ঢেংঢেং করতে দেখি তাহলে জন্মের মতো বাইরে বের হওয়া দেখিয়ে দিব।
তার এমন কথায় আমার কিছুটা খারাপ লাগলো। কারন আমার সাথে তুই তুকারি করে কথা বললে আমার খারাপ লাগে। আলআবি ভাইয়া যদি আগে থেকেই আমাকে তুই করে ডাকতো তাহলে মানা যেত। নিয়াজ ভাইয়া,সজল ভাইয়া, সাদু ওদের তুই ডাকের মধ্যে আর আলআবি ভাইয়ার তুই ডাক এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। উনি বোরখা পরার যেই বিষয়টা বলেছেন মানছি সেটা ভালো কথাই বলেছেন। আমার ভালোর জন্যেই বলেছেন। কিন্তু বলার ভঙ্গিমার মধ্যেও অনেক কিছু নির্ভর করে। আমাকে তো ভালোভাবে বুঝিয়ে বললেই পারতেন। আমি তো আর অবুঝ নই।আলআবি ভাইয়া হঠাৎ করে স্বাভাবিক কণ্ঠে ছেলেগুলোর মধ্য থেকে কোন একজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন
— শাফিন জুঁইয়ের বান্ধবীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়।
আমি বলে উঠলাম,,,
— আমরা আলাদা যাব কেন? এক সাথেই তো এসেছিলাম।(আমি)
–এক কথা আমি দু বার বলি না।(আলআবি ভাইয়া)
আমার হাত ধরে আমাকে সাদা রঙের একটা গাড়ির মধ্যে বসিয়ে দিলেন। আর নিজেও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলেন। দেড় বছর সময়ের ব্যবধানে যেমন পাল্টিয়েছেন তিনি তেমন পাল্টিয়েছে তার জীবন যাপনের ধরণ। বলতে গেলে এখন কিছুটা বিলাসিতা তার মধ্যে বিদ্যমান। এখন আর তাকে তার রয়েল এনফিল্ড বাইকে চড়তে দেখা যায় না। আমার ভাবনার সুতো কাটে তার ডাকে। তার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা পানির বোতল আমার সামনে ধরে বলছেন,,,
— টেক ইট
তার কথায় এখন তাকে অনেকটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। পানিটা খেয়ে পুনরায় তাকে ফেরত দিলাম বোতল টা। তখন আবার আলআবি ভাইয়া একেবারে শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলেন,,,
— আচ্ছা কখন নিজেকে তোমার খুব সাহসী মনে হয়?
তার এই ধরনের কথা বোধগম্য হলো না আমার। হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন করার মানে কি? তার দিকে আমি প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকালাম। তখন আলআবি ভাই ভাইয়া আবার বলে উঠলেন,,,
— উত্তর দাও।
আমি বললাম,,,
— গ্রামের বাড়ীতে ছোটো ছোটো পিচ্চি গুলোর সাথে খেলা করতে গিয়ে যখন ওরা কোন কিছু পারেনা কিন্তু সেটা আমি পারি তখন নিজেকে খুব সাহসী মনে হয়।
–তাহলে এরপর থেকে যদি কোনদিন আজকের মতো সিচুয়েশনে পড়ে যাও তাহলে তোমার সামনে থাকা মানুষগুলোকে তুমি তোমার গ্রামের পিচ্চি মনে করবে। মনে করবে ওদের শক্তি কম তোমার শক্তি বেশি। সব সময় রাকিবের মত খারাপ লোক গুলোকে বুদ্ধি দিয়ে ঘায়েল করবে। ওদের সাথে কখনো কথার পৃষ্ঠে ফটাফট জবাব দিতে যাবে না।(আলআবি ভাইয়া)
কথাগুলো বলে আমার হাতের পাঁচ আংগুলের মাঝের আঙ্গুলে টায় একটা রিং পরিয়ে দিলেন। আমি তাড়াহুড়ো করে তার হাত থেকে আমার হাত সরিয়ে নিলাম। ভালোভাবে পরখ করে দেখলাম ডিজাইনের বদলে রিংটার মধ্যে কেমন যেন ধারালো তিনটা কাঁটার মতো কিছু একটা রয়েছে । এখন আমি যদি হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে কারো শরীরে সজোরে একটা পাঞ্চ মারি তাহলে নির্ঘাত পাঞ্চ মারার স্থানটায় তিনটা ফুটো হয়ে যাবে। আমি একবার আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আর একবার আমার হাতের দিকে তাকাচ্ছি। তখন আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,
— এটা জাস্ট একটা ছোট সেফটি নিজের জন্য। সব সময় তো আর আমি তোমার সাথে থাকব না। নিজের সেফটির জন্য সবসময় সাথে কিছু একটা রাখতে হয় যেমন ধর ছোটখাটো স্টিলের ধারালো স্কেল, মরিচের গুঁড়ো, কাটা কম্পাস আরও কত কি।(আলআবি ভাইয়া)
লোকটার এরূপ দেখে এখন তাকে অনেকগুলো ধন্যবাদ দিতে মন চাইছে। মাঝে মাঝে তার মধ্যে আমি অনেকগুলো রূপ খুঁজে পাই। মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি বহুরূপী নামক উপাধিতে ভূষিত। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে কি মানুষ বহুরূপী হয়ে যায়? এর মধ্যে আমাদের মাঝে আর কোন কথাই হলো না।অবশেষে কিছুসময়ের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে গেলাম। বাসার মেইন গেটের সামনে এসে দেখি এখনও আলআবি ভাইয়া যান নি। তাই আবার পিছনে হেঁটে গিয়ে তাকে বললাম,,,
— ধন্যবাদ?
–কেন? (আলআবি ভাইয়া)
–ধন্যবাদ না দিলে তো আবার খোঁটা দিবেন। বলবেন ম্যানার্স নেই কোনো। (আমি)
বাসায় এসে সব কাজ নিজে একা করলাম। ভাবিকে কাজ করতে দিলাম না। অবশ্য ভাবি আগ বাড়িয়ে কাজ করতে এসেছিল। সন্ধ্যার দিকে ভাইয়া অফিস থেকে ফিরে এসে এমন খবর দিলো যার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। বিশেষ করে আমি।
ভাইয়ার ভাষ্যমতে, পরশু তার অফিসের কলিগের কোন একজন রিলেটিভ আমাদের বাসায় আসবে আমাকে দেখার জন্য। পছন্দ হলেই নাকি আংটি পড়িয়ে যাবে। এসব শুনে এই মুহূর্তে ভাইয়ার উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। কারন ভাইয়াই আমাকে একদিন বলেছিল আমি যদি কখনও কাউকে পছন্দ করি তবেই আমাকে বিয়ে দেবে। আর নয়তো আমি যদি সারা জীবনেও বিয়ে না করতে চাই তাহলে আমাকে বিয়ে দিবেনা। বাবা ও আমাকে একি কথা বলেছিল। কালকে অব্দিও ভাইয়া আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলেনি।আজকে হুট করে অফিস থেকে এসে এসব বলা শুরু করেছে। বাবা বলে উঠলো,,,
— জুইঁয়ের অভিভাবক এখনো আমি। আমি ওকে কোন মতেই এই মুহূর্তে বিয়ে দিব না। আর মনে রেখো তোমার অভিভাবক ও কিন্তু আমিই।
— আরে! আরে! তোমরা তো দেখছি আমাকে ভুল ভাবছো। ওদের পছন্দ হলেই হবে নাকি? আমাদের তো পছন্দ হওয়া লাগবে। আর দেখতে আসলেই আমার বোনকে আংটি পরাতে দিব নাকি। আসলে কলিগ বলে একসাথে কাজ করতে হয়। তাই আমি না বলতে পারি নি। ওরা জাস্ট কালকে আসবে আর আমরা না বলে দেবো। বলব আমাদের ছেলে পছন্দ হয়নি। আমি ভেবে রেখেছি ওদের কি বলবো।
আমি রুমে এসে সাদুকে কল করলাম। প্রথমবার কল করতেই ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে আমাকে বলে দিল কল এই মুহূর্তে ওয়েটিং এ আছে। নিশ্চয়ই এখন এই মেয়েটা বসে বসে সাদমান ভাইয়ার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে। ওদের প্রেমে আর ব্যাঘাত না ঘটিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। পূর্ণিমার চাঁদ টা বিলের পানিকে তার নিজস্ব আলো দিয়ে ঝকঝকে তকতকে করে তুলেছে।
বারান্দায় দাঁড়ানো অবস্থায় আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সাদু কল করেছে। কলটা রিসিভ করার পরে সাদু বলল,,,
— এতক্ষণ পরে আমার কথা আপনার মনে পরছে?
— হুম।সেম টু ইউ। (আমি)
–তা এতো বর্ষ পরে আমার কথা মনে হইলো কেন(সাদু)
–ফালতু আলাপের লেইগা কল দেই নাই তোরে।শোন পরশু বাসায় আসিছ।(আমি)
— কেন পরশু কি তোর বিয়া নাকি? (সাদু)
–না তোর দাদার বিয়া।(আমি)
–ছিঃ!ছিঃ!এইডি কইছ না বোইন।আমার দাদি শুনলে কবরের থেইক্কা আইয়া আমার দাদার লগে মারামারি কইরা যাইব। আফটার অল ওনাগো লাভ ম্যারেজ বইলা কথা ।(সাদু)
–তোর দাদা দাদি ও প্রেম কইরা বিয়ে করছিল?(আমি)
–হ।(সাদু)
— আচ্ছা তোর ফ্যামিলিতে কোন বান্দা টা প্রেম কইরা বিয়ে করেনাই নাই আমারে একটু ক তো?(আমি)
— শোন আমার দাদা দাদি, আমার বাপ মা, আমার চাচা চাচি সবাই প্রেম কইরাই বিয়ে করছে। প্রেম আমাদের রক্তে রক্তে শিরায় শিরায় বুচ্ছস। তাই তো আমিও এই পথ ধরছি।বংশের নাম রক্ষা করতে হইবো তো।(সাদু)
— তাইলে তোর জন্ম না নেওয়া বাচ্চা গুলিরে আগেই কইয়া দিছ যেন প্রেম কইরা বিয়ে করে।(আমি)
–না না এই রিক্স নিমু না। তাইলে দেখা যাইবো পেটের মধ্যে থাকতেই প্রেম শুরু করছে। (সাদু)
–ওই বলদ পেটে থাকতে আবার প্রেম শুরু করে কেমনে? এইবার আমার কথা শোন।(আমি)
–আচ্ছা ক।(সাদু)
সাদুকে নিয়াজ ভাইয়ার বলা সব কথাগুলো বললাম। বিয়ে যে হবে না তাও বললাম। সব শুনে সাধু বলল,,,
— দোস্ত তুই শিওর তো বিয়ে হবে না।
–দুইশো পার্সেন্ট সিওর।(আমি)
— আচ্ছা ঠিক আছে। তাইলে আমি পরশু দিন সকালেই তোর বাসায় হাজির হইয়া যামু। এবার খেলা হবে মামা। অনেকদিন ধইরা জীবনে কোনো বিনোদন পাই না।পরশু একটু বিনোদন পাওয়া যাইবো।(সাদু)
–কেমনে?(আমি)
–তোদের বাসায় আসলেই দেখবি “সাদু’স কেরামতি”।(সাদু)
–ঠিক আছে তুই তোর কেরামতি নিয়া থাক আমি ঘুমামু।(আমি)
–জানিতো কেমন ঘুম ঘুমাবা।(সাদু)
–জানছ যহন এতো কথা কছ কে?ফোন রাখ।(আমি)
আর কেউ জানুক আর না জানুক আমার এই প্রিয় মানুষ টা ঠিকি জানে আমি যে প্রতি রাতে একা একা আমার বর্ষণ সঙ্গীর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত থাকি।তাকে নিয়ে যে আমার কত পাগলামি তা এই মেয়ে টা খুব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানে।
আজ সকালে সাদু এসেছে। ওকে দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো পার্লারের মেয়ে এসেছে আমাকে সাজাতে।ইয়া বড় একখানা ব্যাগে করে ও ওর সব মেকআপ কিট নিয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে ও যদি পারতো তাহলে বস্তায় করে ওগুলো নিয়ে আসতো।
বিকেলের দিকে সাদু বসে পড়েছে আমাকে সাজাতে।কিন্তু আমাকে কিছুতেই আয়না দেখতে দিচ্ছে না।চোখ টা অব্দি খুলতে দিচ্ছে না। বারবার বলছে চোখ খুললে নাকি সব সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে।এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছি ও আমার হাতে পায়েও ঘষামাজা করছে। মানে বোধগম্য ভাষায় বলতে গেলে মেকআপ। প্রায় তিন ঘন্টা বাদে আমাকে সাদু ঘষামাজার থেকে মুক্তি দিল।মনে মনে ভাবছি সামান্য দেখাতে এতো মেকআপ কেন দিল?যাই হোক বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম নিজেকে দেখার জন্য। আয়নার সামনে যেতেই নিজেকে নিজে চিনতে না পেরে জোড়ে চিৎকার করে বসলাম।নিজেকে ভালো করে পরখ করে সাদুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।
চলবে…………
#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_২৭
–কি বেবি কেমন লাগলো আমার কেরামতি?
আমি সাদুকে কটমট করে বললাম,,,
–তোর এই কেরামতি ওয়ালা মাথার চুল যদি আমি একটাও রাখছি তো আমার নাম জুইঁ না।
ওকে কথাটা বলেই চুল ছেঁড়াছিঁড়ি অভিযানে নেমে পরলাম। ওর হিজাব টানাটানি করে খুলে ফেললাম। খাটের এপাশ ওপাশ করছি সাদুকে ধরার জন্য।একপর্যায়ে সাদু হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বলে উঠলো,,,
–শোন শোন।আমার কথাটা শোন।
ওর সাথে আমিও হাঁপিয়ে উঠেছি।তাই ছোটাছুটি বন্ধ করে বড় বড় দম নিয়ে ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললাম,,,
–কি শুনবো?
–আরে রিলেক্স।দেখ তোরে পেতনি সাজ মানে কালো বর্ণের সাজ দিয়া কিন্তু তোরই উপকার করলাম।যে বা যারা তোরে দেখতে আইবো তাদের মন মানসিকতা কেমন তা এই কালো বর্ণ আমাদের বুঝাইয়া দিব।তার উপর প্লাস পয়েন্ট হইলো তারা যদি ধলা চামড়ার মানুষ পছন্দ কইরা থাকে তোরে তো তাইলে এমনেও পছন্দ করবো না।তোরে যে ভালোবাসার সে তামাটে বর্ণের তুইটাকেই ভালোবাসবে। এহন তুই খালি ওনাগো সামনে তোর এই আঁকাবাকা দাঁত কয়ডা নিয়ে না ভেটকাইলেই হইলো। কি বুঝলি?(সাদু)
সাদুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি হেসে বললাম,,,
–এইটাই বুঝলাম যে তোর মাথায় সার ইদানীংব একটু বেশি বেশি পড়তাছে।
আমাদের কথার মাঝেই রুমে ভাবি আর ভাইয়ার আগমন হলো।ভাইয়া বলল,,,
–শোন ওরা সবাই আসবে না। ওরা চায় ছেলেমেয়েরা আগে একজন আরেক জনকে দেখুক।ছেলে মেয়ের একে ওপরকে পছন্দ হলেই বড়রা আগাবে।ছেলে এখন আপাতত একা মিট করবে।
–কেবল ছেলেই একা আসবে বাসায়?
–আরে বলদ ছ্যামরি কোনদিন দেখছোস পাত্ররে একলা ঢেং ঢেং করতে করতে পাত্রীর বাড়ী আইতে? নিশ্চয়ই বাইরে কোথাও দেখা করার কথা কইছে।তাই না নিয়াজ ভাইয়া?(সাদু)
–কারেক্ট কথা।জুইঁ তুই আমার বোন হইলে কেমনে?(নিয়াজ ভাইয়া)
–আরে এতো কিছু ভাইবা বলছি নাকি। (আমি)
–আচ্ছা তাহলে বের হয়ে পর এখন।তোদের ভার্সিটির পাশের ****ক্যাফের এড্রেস আমি ছেলেকে পাঠিয়ে দিছি।(নিয়াজ ভাইয়া)
–এই সাজেই যাবি নাকি? (ভাবি)
–হ্যাঁ।কোন সমস্যা? (আমি)
–একদমই নয়।(ভাবি)
–আচ্ছা তাহলে আর ১০ টা মিনিট পরে বের হই?(আমি)
–আচ্ছা। কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি করিস।(নিয়াজ ভাইয়া)
নিয়াজ ভাইয়া আর ভাবি চলে গেলো। সাদু আমার পিঠ চাপড়ে বলল,,,
–আরেকটু সাজাইয়া দিমু নাকি? (সাদু)
–হ।
বলেই আমি সযত্নে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা আমার শাড়িটা বের করলাম।আমার হাতে শাড়ি দেখে সাদু বলল,,,
–বোইন এমন কিছু কইছ না যেন যাতে আমার কান শুনতে পায় তুই এই শাড়ি ডা পড়বি।
–আহা এই না হলি তুই আমার পরানের বান্ধবী। (আমি)
–তুই কি এই শাড়িডারে ত্যানাত্যানা না বানাইয়া রেহাই দিবি না?(সাদু)
–বেশি কথা কবি না।এইটা পড়লে আমার সুখ সুখ লাগে। (আমি)
–ওরে কইতোরি বেগম তোমার সুখ সুখ লাগে না? আমার কানা কানা লাগে। (সাদু)
— কি লাগে তোর?(আমি)
–তোর এই শাড়ি ডা দেখতে দেখতে আমার চোখ দুইটাই নষ্ট হইয়া গেছে বুঝলি।(সাদু)
— ভালো হইছে। আমার জামাইর দেয়া শাড়ির দিকে নজর দিছোস কেন?(আমি)
–ওহোওওওওও।জামাই?(সাদু)
শুরু হয়ে গেল সাদুর আমাকে নিয়ে কথা বলা।ওর এতো এতো কথার কিছু ই আমার মাথায় ঢুকছে না।আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘোরাঘুরি করছে।তাহলো আমি মুখ ফসকে এই কথাটাই কেন বললাম। আমার বর্ষণ সঙ্গীর সাথে তো দেখাটা পর্যন্ত হয়নি।নানা বিষয়ে চিন্তা মাথায় নিয়ে বেরিশে পরলাম আমি আর সাদু।
— তুমি আসলে কি চাও বলতো?(ভাবি)
— একটা ছোট্ট ডোজ দিলাম। এইটা দরকার ছিল।(নিয়াজ ভাইয়া)
–মানে? (ভাবি)
— রুমে চলো বলছি।(নিয়াজ ভাইয়া)
রিকশার ভাড়া মিটিয়ে আমি আর সাদু ***ক্যাফেতে প্রবেশ করলাম। সমস্যা হলো পাত্রকে চিনবো কি করে? এখানে প্রায় সবগুলো টেবিলেই বসা আছে মানুষ। তখনি আমার মোবাইলের ম্যাসেজের টোন টা বেজে উঠে আমাকে জানান দিল কেউ হয়তো বা আমাকে স্মরণ করছে।তৎক্ষনাৎ ম্যাসেজ টা ওপেন করতেই দেখি নিয়াজ ভাইয়া মেসেজ করে একটা ফোন নাম্বার পাঠিয়েছে সেইসাথে বলেও দিয়েছে এটা পাত্রের নাম্বার।কল করার আগেই একটা ছেলে একেবারে কর্নার টেবিল থেকে আমাকে আর সাদুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইশারা করছে। দুই তিনবার ইশারা করার পর মনে হলো এটা হয়তো বা আমাদের কাঙ্খিত ব্যক্তি। আমি আর সাদু গিয়ে ছেলেটার সামনে দাঁড়ালাম।
ছেলেটার পরনে হালকা আকাশি বর্ণের একটা টি-শার্ট। সাথে কালো প্যান্ট। যে কেউ তাকে এক পলকে দেখলে ভদ্র বলেই মনে করবে। আমাকে উদ্দেশ্য করে ছেলেটা খুব নম্র ভাবে বলল,,,
–আমি যদি ভুল না করি তাহলে আপনি জুইঁ। ঠিক তো?
আমি সৌজন্যমূলক হাসি হেসে বললাম,,,
–জ্বি।
ছেলেটা মুচকি হেসে করদমর্ন করার উদ্দেশ্যে আৃার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,,,
— আমি রাইয়ান শেখ।
ভদ্রতার খাতিরে আমিও যখন হাত বাড়াতে যাবো ঠিক সেই সময় অন্য একটা হাত এসে রাইয়ান নামের ছেলেটার হাত ধরে ফেলল। আর সেইসাথে একটা পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসল,,,
–আমি ওর রিলেটিভ।
প্রচুর আগ্রগ নিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে পাশে তাকাতেই অনেকটা চমকে উঠলাম। কারণ এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে অসম্ভব ঘটনাটি ঘটেছে। আর তা ঘটিয়েছে আলআবি ভাইয়া। তাকে এখানে কোন কালেই আশা করিনি।সাদির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম সাদুও কিছুটা অবাক হয়েছে। এমন সময় রাইয়ান ছেলেটা বলে উঠলো,,,
–আসসালামু আলাইকুম বড় ভাই। আমাকে চিনতে পেরেছেন?
আলআবি ভাইয়ার দিকে লক্ষ্য করে দেখি তিনি মুচকি হাসলেন।আলআবি ভাইয়া কিছু বলার পূর্বেই রাইয়ান দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলে উঠলো,,,
–ওইযে ২৭ তারিখে ব্লাড দিয়েছিলাম। মনে আছে?
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।মনে থাকবে না কেন। মনে আছে। আরও ভালো করে মনে রাখতে আর মনে করাতে এখানে আসা।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়া কথা বলার সময় আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।একটা জিনিস খেয়াল করলাম সে আমার দিকে তাকিয়ে শেষের কথা টা বললেন।হুট করেই হাতে টান লাগায় খেয়াল করে দেখি আলআবি ভাইয়া আমার হাত ধরে আছেন।আর বললেন,,,
–চলো বসে কথা বলি।
বাক্যটা শেষ করতেই তিনি আমার হাত ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন।সাথে নিজেও পাশের চেয়ার টায় বসলেন।তার কাজে আর কথায় আজ বেশ অবাক হচ্ছি। কিন্তু পরমুহুর্তেই ভাবলাম হয়তোবা নিয়াজ ভাইয়া তাকে আমাদের এখানে অভিভাবক হিসেবে পাঠিয়েছে। কিন্তু নিয়াজ ভাইয়া আমাকে তো বলল না। আলআবি ভাইয়া যখন আসবে তখন আমাকে বললে কি হতো?
সাদু আর রাইয়ান এখনো আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্যাবড্যাব করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন আলাবি ভাইয়া ইশারা করল ওদের দুজনকে আমাদের সামনের দুটো চেয়ারে বসতে। ওরা ধীর পায়ে এসে বসে পড়ল। এই মুহূর্তে আমার পাশে বসা আলআবি হইয়া আর আমার সামনাসামনি বসা সাদু। সাদুর পাশে অর্থাৎ আলআবি ভাইয়ার সামনাসামনি বসা রাইয়ান।
আমরা চুপচাপ বসে আছি কেউই কোন কথা বলছি না। আলাবি ভাইয়া ফোন টিপছেন। নীরবতা কাটিয়ে রাইয়ান সর্বপ্রথম বলে উঠলো,,,
–জুই তাহলে আমরা কথা বাড়াই?
রাইয়ানের এই কথাটা শেষ হতে না হতেই আলআবি ভাইয়া উদ্ভট একটা কাজ করে ফেললেন। আমি চেয়ারের যে অংশে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছি সেখানে তার বাম হাত উঠিয়ে দিলেন অর্থাৎ আমার পিঠের পিছনে তার বাম হাত। আলআবি ভাইয়া এর এরকম একটা কাজে আমি কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে বসলাম। তখন রাইয়ান বলে উঠলো,,,
–আপনার ছোট বোন হয়?
–আমার বোন হয় কিনা বলতে পারছি না। কিন্তু তোমার যে বউ হবে না তা নিশ্চিত। (আলআবি ভাইয়)
তার কথা শেষ হতেই আমি তড়িৎগতিতে তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালেন। বর্তমানে আমাদের তিনজনের দৃষ্টি আলআবি ভাইয়ার দিকে। তার দিকে যখন তাকিয়ে আছে ঠিক তখন সে আমার অনেকটা কাছে এসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললেন,,,
— বলে দিব নাকি তোমার বর্ষণ সঙ্গীর কথা?
তার কথা শুনে আমার ভিতর চিকন সূক্ষ্ম একটা ভয় বয়ে গেল।আলআবি ভাইয়ার প্রত্যেকটা শব্দ উচ্চারণের সময় তার মুখ থেকে বের হওয়া হালকা উত্তপ্ত বাতাস আমার কানে গিয়ে বারবার ধাক্কা দিচ্ছিল।
চলবে…………
[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]