বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব-২৪+২৫

0
1622

#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_২৪

–আমার শাল দেওয়ার কথা ছিল কালকে।এখন অব্দি পাইনি কেন?

ফোনে আলআবি ভাইয়া এমন রাগীভাবে কথা গুলো বললেন মনে হয় তার ওই শালের অভাবে সে শীতে মরে যাচ্ছে। আবার এও মনে হচ্ছে যে আমি কোনো ডেলিভারি ম্যান।পন্য দিতে দেরি হচ্ছে বলে আমাকে রাগাচ্ছেন। এহ্,এতো শাল শাল যে করছে তার শালটা কি আমি চাঁদের দেশে গিয়ে দিয়ে আসব নাকি? উনি কোন দেশে থাকে সেই ঠিকানাই তো আমি জানিনা। আমি রাগের বশে তাকে বললাম,,,

–আপনার শাল নিয়ে আমি শালবন বিহারে গিয়ে ফুলশয্যা করে এসেছি।

নাউজুবিল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! এগুলো কি বললাম আমি? কি থেকে কি বলে ফেললাম তা উপলব্ধি করা মাত্রই ফোনটা কেটে দিলাম সাদু কেও দেখি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

আসলে ব্যাপার হলো আজ পরীক্ষা দিয়ে আমি সাদুর সাথে ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন আলআবি ভাইয়া আমাকে কল করেন।আর শাল শাল করতে থাকেন। এর মাঝেই ফোনটা আবারও বেজে উঠলো। কলটা রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে আলআবি ভাইয়া একেবারে শান্ত গলায় বলে উঠলেন,,,

— তুই এই মুহূর্তে যেই জায়গায় দাঁড়ানো তার সামনে একটা সাদা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কোন প্রকার টু শব্দ করা ছাড়া একা একা গাড়িতে উঠবি। গাড়িতে না উঠলে তোর খবর আছে।

আলআবি ভাইয়া তুই তুকারি করে কোন দিন তো কথা বলেন নি। হঠাৎ কি হলো? বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। তার ওই ভাবে কথা বলায় কিছুটা ভয়ও লাগছে। এমন হঠাৎ করে পাল্টে গেলেন কেন উনি? সাদুকে তার বলা কথাগুলো বলতেই সাদু বলল আমাকে একা একা গাড়িতে উঠতে। পিছনে পিছনে সাদু একটা সিএনজি নিয়ে আমাদের গাড়িটা কে ফলো করবে। আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আমি গাড়িতে উঠে বসলাম।

গাড়ি প্রায় আধা ঘণ্টার মতো রাস্তা পেরিয়ে একটা বহুতল ভবনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। গাড়ি থেকে নেমে এপাশ-ওপাশ ভালোভাবে পরখ করে নিলাম। বিল্ডিংটার নিচ থেকে দাঁড়িয়ে গুনে নিলাম মোট বারো তলা বিশিষ্ট এই বিল্ডিং টা। যেই লোকটা গাড়ি ড্রাইভ করেছিল সেই আমাকে ভিতরে নিয়ে গেল। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে হাতের বামে দেখলাম আনুমানিক দশটা থেকে বারোটা টা কম্পিউটার। আর তার সামনে বসে কাজ করেছ অনেকে। ভেতরটায় কিছুটা অফিসের মত।ডান পাশে কাঁচ দিয়ে আবদ্ধ রুমে চোখ বুলালে দেখা যাবে একটা সুবিশাল লম্বা টেবিল। দেখেই বোঝা যায় এটা কোন মিটিং রুম। লোকটা আমাকে নিয়ে সোজা গিয়ে একটা স্বচ্ছ কাঁচের দরজা ঠেলে আমাকে ভিতরে যাওয়ার জন্য ইশারা করলেন। ভিতরে প্রবেশ করে দেখি আলআবি ভাইয়া টেবিলের উপর দুই কনুইতে ভর দিয়ে দুই হাত এক করে তাতে থুতনিটার ভর ছেড়ে দিয়েছেন। পড়নে তার সেদিনের মতোই একটা শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি। তার একটা জিনিস খেয়াল করলাম কালকে আর আজকে। তা হলো আগের মত চশমাটা তার চোখে নেই। চশমা নেই কেন? চোখে কি এখন বেশি দেখে নাকি? তার দৃষ্টি দরজায় দাঁড়ান মানুষটি অর্থ্যাৎ আমার দিকেই। আমি দরজা থেকে একটু সামনে এগিয়ে এসে ডানদিকে কিছুটা কাচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পরলাম। দরজা থেকে সামনে যখন ডান দিকে এগিয়ে এসেছি তখন খেয়াল করলাম আলআবি ভাইয়ার চোখের মনিও হালকা ডান দিকে কাত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছেন মনে হয় আমি কোন ফাঁসির আসামি। নীরবতা ভেঙ্গে আলআবি ভাইয়া আগে বলে উঠলেন,,,

— তখন কি বলেছিলে?

আমি একবার তার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে তো আর আরেকবার ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছি। তিনি আবার বলে উঠলেন,,,

–ফুলশয্যা? এর মিনিং জানো? ফারদার যদি কোন উল্টাপাল্টা কথা তোমার মুখ থেকে শুনেছি তো জিভ কেটে দিবো।এন্ড আই রিয়েলি মিন ইট।

আসছে রিয়েলি মিন ইট! কি এমন বললাম আমি? গালিগালাজ করেছি নাকি এখনো?
আলআবি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে আমি বলে উঠলাম,,,

–আমি উল্টাপাল্টা কি কথা বললাম? এখন পর্যন্ত গালিও দেই নি কোনো।

— দিতে চাও নাকি?(আলআবি ভাইয়া)

— না! না! না!গালি কেন দিবো? (আমি)

–শাল দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদায় হও।(আলআবি ভাইয়া)

— থাকতে ও আসেনি(আমি)

ব্যাগ থেকে শালটা বের করে তার টেবিলের উপরে রাখলাম। তারপর একটু হাসি দিয়ে তাকে বলে উঠলাম,,,

–এইটা আমার ভাগেরটা।

এরপর আবার ব্যাগ থেকে আরেকটা শাল বের করে টেবিলের উপর রেখে বললাম,,,

–এইটা সাদুর ভাগের টা।

আলআবি ভাইয়া ভ্রুকুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে অবুঝ ভঙ্গিতে বললেন,,,

–হোয়াট?

–আরে আপনাকে একটার সাথে আরেকটা ফ্রি তে দিলাম। আপনি তো আবার কাউকে ফ্রি তে কিছু দেন না। কিন্তু আমার দয়া-মায়া একটু বেশিই। কাউকে ফ্রিতে কিছু না দিলে আমার আবার ভালো লাগেনা।(আমি)

কিছু একটা ভেবে আলআবি ভাইয়া আমার সামনেই শাল দুইটার ভাঁজ খুলে ফেললেন। এমনটা আমি মোটেও আশা করিনি। ভেবেছিলাম আমি চলে যাওয়ার পর সে এগুলো দেখবে। কিন্তু এখন তো নিজের করা গর্তে নিজেই পড়ে গেলাম। কারণ আমার তো আর ঠেকা পড়ে নি যে তাকে আমি শাল ফ্রিতে ফ্রিতে দিয়ে যাব। আসলে আমি তো তার শালটাকেই কেটে দু’ভাগ করে ফেলেছি। আলআবি ভাইয়ার রিয়েকশন দেখার জন্য তার দিকে তাকালাম। তার দিকে তাকিয়ে আমি আঁতকে উঠলাম। দেখি তিনি অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।মনে হচ্ছে পারলে শালটার মত আমাকেও এই মুহূর্তে দু ভাগ করে ফেলবেন। আলআবি ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে বললেন,,,

— এমন করেছো কেনো?

তাকে এই মুহূর্তে আমার ভয় তো লাগছে ঠিকই কিন্তু তাকে আমার ভয় দেখালে চলবে না। এতে করে সে আরো বেকে বসতে পারে। তাই তার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়েই বললাম,,,

— আপনিইতো বলেছিলেন দুজনে ভাগ করে গায়ে জড়িয়ে নিও। তাই আমরা দুজনে ভাগ করে গায়ে জড়িয়ে নিয়েছি।

কথাগুলো বলা শেষ করে তার দিকে তাকালাম। তাকিয়েই দেখি আলআবি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তখন তিনি শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,,,

— এই দুই ভাগ এখন জোড়া লাগিয়ে দিবে। কিভাবে জোড়া লাগাবে তা তুমিই ভালো জানো।

–আপনার মাথা জানি। আমার কাছে কি আলাদিনের চেরাগ আছে, যে বললেন আর হয়ে যাবে। (আমি)

খেয়াল করলাম উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এইতো ফাঁক পেয়েছি। তাড়াহুড়ো করে দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধরে টেনে খোলার চেষ্টা করলাম। প্রথমবারে ব্যর্থ হলাম। পরেরবার আবার চেষ্টা করলাম। এবারও ব্যর্থ হলাম। এরপর বারবার দরজার হাতল ধরে টানছি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। হঠাৎ মনে হলো দরজা লক করা নাতো? এমন সময় পেছন থেকে আলআবি ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

— একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে আর একটা প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে একই ছাদের নিচে একইসাথে একই রুমে আটকে পড়ল। এরপর যা হলো তা…

এতোটুকু শুনেই আমি তাড়াতাড়ি আলআবি ভাইয়ার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আলআবি ভাইয়া অতটুকু বলেই চুপ হয়ে গেলেন। তারপর হুট করেই চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে আবার বলতে লাগলেন,,,

— এ সম্পর্কে তোমার কোন ধারনা আছে?

আমি অবুঝের মতো বললাম,,,

— কি?

তখন আলআবি ভাইয়া আবার ধীরে ধীরে বলতে লাগলেন,,,

–প্রাপ্তবয়স্ক একটা ছেলে আর প্রাপ্তবয়স্ক একটা মেয়ে একসাথে থাকলে কি হয়?

হঠাৎ করে আলআবি ভাইয়ার এমন পরিবর্তনে একটু ভয় পেয়ে গেলাম। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,,,

— কিক… কি হয়?

উনি আবারও বললেন,,,

— একটা গান আছে না,” হাম তুম এক কামরেমে বন্ধ হো অর চাবি খো যায়ে ”

বলেই কেমন একটা বিটকেল মার্কা হাসি দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে আবারও বললাম,,,

— আমি আপনার শুধু শাল কেন,শালসহ জুতা-মোজা, প্যান্ট ছেঁড়াফাটা যত কাপড়চোপড় আছে সব জোড়া দিয়ে দিবো।

এরপর তাড়াতাড়ি করে টেবিলের উপর থেকে দুভাগ শাল হাতে নিয়ে আবার দরজার সামনে এসে হাতল টানাটানি করতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই খুলছে না। অসহায় দৃষ্টিতে আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। দেখি তিনি আয়েশী ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলে আমার কর্মকান্ড দেখছেন। আমি বললাম,,,

–খুলছে না কেন এটা?

তখন আলআবি ভাইয়া বললেন,,,

–খুলছে না যেহেতু তাহলে এখানে বসেই জোড়াতালির কাজ শুরু করে দাও।

— মানে? (আমি)

তখন তিনি আমার সামনে একটা বক্স রেখে বললেন,,,

— এখানে সুইঁ সুতা সবই আছে।

এরপর হাতের ইশারায় সোফা দেখিয়ে বললেন,,,

— ঐখানে গিয়ে সুন্দর মত করে জোড়া তালি দিতে থাকো। যাও। এটা তোমার পানিশমেন্ট।

আমি সোফাই গিয়ে বসে ঘট ঘট করে দ্রুত সেলাই করে দিলাম। যে সুন্দর সেলাই করেছি তাতে মনে হয় ধরলেই ছুটে যাবে।আলআবি ভাইয়ার টেবিলের সামনে গিয়ে শাল টা রাখতেই খেয়াল করলাম সে ফোনে কাউকে বললেন,,,

–তোর বোন কে এসে নিয়ে যা।

কথাটা তার বলতে দেড়ি তবে রকেটের বেগে রুম থেকে ছুটে চলে যেতে দেড়ি হলো না তার।তার চলে যাওয়ার পরেই সাদু হুট করে ঢুকে পরলো।ওকে দেখেই বললাম,,,

— কোন চিপায় গেছিলি তুই?

–আরে বইন আমারে কেউ ঢুকতে দিতাছিল না।একটু আগে দেখলাম আলআবি ভাইয়া আর কয়েকটা পোলা হন্তদন্ত হইয়া কই যেন যাইতাছে। তখন আলআবি ভাইয়া আমারে দেইখা ঢুকতে দিতে কইছে।(সাদু)

–আচ্ছা সাদু তোর কি মনে হয় না আগের আলআবি ভাইয়া আর এই আলআবি ভাইয়ার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। (আমি)

–হ।কথা ঠিক কইছোস। আলআবি ভাইয়া তো মারপিট করার মানুষ না। হঠাৎ কইরা এমন হইলো কেন?আর দোস্ত আরেকটা জিনিস খেয়াল কর,ভাইয়া কিন্তু একজন আর্কিটেক্ট। তাইলে ওনার এই জায়গায় কি কাজ?(সাদু)

–হুমম।এইটা দেইখা তো অফিসই মনে হয়।কিন্তু কিসের অফিস এইটা?(আমি)

আমরা যখন গভীর গবেষণায় মগ্ন তখন দেখি

চলবে…………

#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_২৫

–সার্থক ভাইয়া আপনি?

আমি আর সাদু যখন গবেষণা করছিলাম তখন আগমন ঘটে সার্থক ভাইয়ার।আর তখনি সাদু তাকে এই কথাটা বলে।তাকে এখানে এই মুহূর্তে আমরা আশা করিনি। সার্থক ভাইয়া বলে উঠলেন,,,

–আমারও তো একি প্রশ্ন।

তারপর ভাইয়ার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম আমাদের দেখা টা কাকতালীয় ভাবে হয়ে গিয়েছে। সার্থক ভাইয়া নাকি আলআবি ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছিল।আলআবি ভাইয়া সার্থক ভাইয়া আসার আগেই বেড়িয়ে পরেছে বলে আমাকে আর সাদুকে সার্থক ভাইয়াই বাসায় দিয়ে আসবে বলেছেন।একটা কথা বারবার মাথায় ঘুরছে। আলআবি ভাইয়া ফোনে কাউকে বলছিলেন “তোর বোনকে নিয়ে যা”।কথার ধরনে মনে হচ্ছিল আমার কথাই বলছিলেন নিয়াজ ভাইয়ার কাছে। কিন্তু নিয়াজ ভাইয়া তো এলো না।বরং তার বদলে সার্থক ভাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল।

আমি আর সাদু সার্থক ভাইয়ার গাড়িতে বসে আছি।আলআবি ভাইয়ার ওখান থেকে বের হয়ে কিছুদূর আসতেই সার্থক ভাইয়ার একটা কল আসে।তাই ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে ফোনে কথা বলছে। সাদু বসে বসে মোবাইলে একটা ফেসবুক পেজ থেকে ড্রেস দেখছে আর একটু পর পর আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলছে “এইটা সুন্দর না? দেখ দেখ এইটাও সুন্দর কিন্তু “। ওর এমন কাজে প্রথমে বিরক্ত না লাগলেও এখন বিরক্তি ভাব চলে এসেছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি সামনের একটা সরু চিকন গলিতে কয়েকজন মিলে জটলা পাকিয়েছে। এখানে এদের মধ্যে যুবক সংখ্যাই বেশি। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে না স্বাভাবিক। কারণ দেখে বোঝা যাচ্ছে কোন একজনকে সবাই মিলে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। জটলার ফাঁকফোকর দিয়ে আবছা আবছা দেখতে পেলাম যেই ছেলেটাকে সবাই মিলে কিছু একটা বলছিল সেই ছেলেটাকে কেউ একজন এসে কলার ধরে দুই গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিল। চড় দেয়া লোকটাকে দেখে মনে হল কিছুটা পরিচিত। হঠাৎ করেই একটা নাম মাথায় খেলে গেল, তা হলো আলআবি ভাইয়া। যখনই সাদুকে ডাক দিয়ে বলতে যাব তখনি আমাদের গাড়িটা ওখান থেকে প্রস্থান করলো। এর মধ্যে সার্থক ভাইয়া কখন গাড়িতে এসে বসেছে তা টেরও পাইনি।

মনে মনে ভাবছি ওইটা তো আলআবি ভাইয়া নাও হতে পারে। কারণ যাই হোক না কেন আলআবি ভাইয়া এমন গুন্ডাগিরি করবে না কোনদিন। কিন্তু তার পড়নের শুভ্র পাঞ্জাবি তো আমার মস্তিষ্ককে জানান দিচ্ছে এটা হয়তো বা আলআবি ভাইয়া। ধুর ছাতার মাথা! ভার্সিটিতে আলআবি ভাইয়াকে দেখার পর থেকেই আমার অর্ধেক মাথা ব্যথা হয়ে যায় তাকে নিয়ে গবেষণা করতে করতেই।

আমার দৃষ্টির সামনে থাকা বিলের পানিতে টুপটাপ করে বৃষ্টির জলকণা পড়ে নীরব বিলটার পানিকে কে কাঁপিয়ে তুলছে বারবার। বিকেল হওয়া সত্বেও মেঘের দলেরা আকাশে তাদের অধিকার বিস্তার করে চারপাশকে সন্ধ্যার রূপ দিয়েছে। পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজ তিন দিন হলো। কাল আমাদের ভার্সিটির সুবর্ণ জয়ন্তী। সেই সুবাদে সকল সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরাও আমন্ত্রিত কালকের অনুষ্ঠানে। ভাবছি, সকল সাবেক ছাত্র ছাত্রী অর্থাৎ পঞ্চাশ বছরের পুরনো ছাত্র-ছাত্রীরাও এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে নাকি? বেঁচে থাকলে হয়তো বা এখন বার্ধক্য তাদের ছুঁয়ে গিয়েছে। তাদের ছেলে-মেয়েদের হয়তো বা বিয়েও হয় গিয়েছে। আর ছেলে-মেয়েদের সন্তান সন্ততিও হয়ে গিয়েছে হয়তো বা। মানে এখন তাদের নাতি পুতি ও আছে। বাহ কি মজা! ছেলে মেয়ে নাতিপুতি নিয়ে তারা ভার্সিটিতে আসবে। যখন আমাদের ভার্সিটির বর্ষপূর্তি হবে ইনশাল্লাহ তখন আমি আর সাদুও বার্ধক্যের ছোঁয়া নিয়ে ভার্সিটির সেই চিরচেনা গেট অতিক্রম করে ধীরে ধীরে লাঠি ভর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করব। তখন হয়তো বা মাঠ প্রাঙ্গণে দৌড়াদৌড়ি করতে পারব না কিন্তু সাদু আর আমি ঝগড়া তো করতে পারব। আমার চিন্তা ভাবনায় আমি নিজেই মনে মনে হেসে উঠলাম।

এতোদিনে আলআবি ভাইয়ার পরিবর্তনের কারণ না জানলেও তার কাজ সম্পর্কে জানা হয়ে গিয়েছে। তা হলো সমাজসেবা আর রাজনীতি। তাকে হঠাৎ করে রাজনীতিতে কেন যুক্ত হতে হলো তা বুঝতে যাওয়া আর আমার অন্ধকারে সূচঁ খোঁজা একই কথা। তার একটা নিজস্ব “স্ট্যান্ড ফর জাস্টিস”(কাল্পনিক) নামক সংস্থা রয়েছে। তার সংস্থা মূলত গরিব-দুঃখীদের ন্যায়ের জন্য অধিকারের জন্য লড়ে থাকে।আলআবি ভাইয়ার সংস্থা টার কথা জানতে পেরে খুব ভালো লেগেছিল। তার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা বোধ কাজ করে এখন। কিন্তু তার মারামারি-কাটাকাটির ব্যাপারটা মোটেও ভালো ভাবে নিতে পারছিনা। সে তো সারাদিন সংস্থা নিয়েই পড়ে থাকতে পারেন।তা এখানে রাজনীতি করার দরকারটা কোথায়?

সন্ধ্যার দিকে দুই হাতে দুটো শাড়ি নিয়ে ভাইয়ার রুমে অগ্রসর হলাম। উদ্দেশ্য হলো কোন শাড়িটা কালকে অনুষ্ঠানে পড়ে যাব। সাদু কে বলেছিলাম কোন শাড়িটা পড়লে ভালো হবে। ও আমাকে বর্তমানে আমার হাতে থাকা দুইটা শাড়ি থেকে যেকোন একটা পড়তে বলেছে। কিন্তু এখন আমি নিজেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি কোনটা রেখে কোনটা পড়বো। দুটো শাড়িই আমার খুব পছন্দের। কারণ দুটো শাড়িই আমার দুজন প্রিয় মানুষ আমাকে দিয়েছে। একটা আমার বর্ষণ সঙ্গীর দেওয়া। আরেকটা নিয়াজ ভাইয়ার দেওয়া।

ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখি তাসফি ভাবি সন্ধ্যেবেলা তেও মাথায় হাত রেখে শুয়ে আছে। ভাবি কে দেখে একটু অবাক হলাম। কারন সচরাচর সন্ধ্যাবেলায় তো ভাবি শুয়ে থাকে না। মনে মনে ভাবলাম হয়ত শরীর খারাপ লাগছে। ভাবি শুয়ে আছে বলে দরজায় নক করে বললাম,,,

— ভাবি আসবো?

ভাবি কাঠগলায় জবাব দিল,,,

— না।

এরকমভাবে না বলায় কিছুটা আশ্চর্য হই। তারপর ভাবিকে আবার বলি,,,

–কেন ?

–অপরিচিত কাউকে আমি রুমে ঢুকতে দেইনা।(ভাবি)

— মানে?(আমি)

–মানে হলো যে ভাবে বললি আসবো সেভাবে অপরিচিতরা বলে। এবার ভনিতা না করে এক দৌড়ে খাটে এসে বসে পড়।(ভাবি)

ভাবির কথায় হেসে দিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর দুইটা শাড়ি ই দেখালাম। ভাবি শাড়ি দুইটা টা থেকে আমাকে আমার বর্ষণ সঙ্গীর শাড়িটা বেছে দিল। ভাবি এই শাড়িটা পছন্দ করায় মনে মনে একটু বেশিই খুশি হলাম। তবে এই খুশি ভাবির বলা পরবর্তী কথাটায় হার মানতে বাধ্য হলো। কারণ ভাবি সুখী নামক রোগে রোগআক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের নতুন অতিথি আসছে। ভাবি মা হতে চলেছে, ভাইয়া বাবা হতে চলেছে, আমি ফুপি হতে চলেছি আর বাবা দাদা হতে চলেছে। খুশিতে ভাবিকে জড়িয়ে ধরলাম। ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম ভাইয়া কিছু জানে কিনা। ভাবি বলল এখন অব্দি বলেনি। খুশিতে একেবারে দৌড়াতে দৌড়াতে বাবার কাছে গিয়ে খবরটা দিলাম। ভাবি আমাকে বলতে মানা করছিল। তার নাকি লজ্জা লাগে।সে নাকি আরো পরে বলবে। কিন্তু আমি তো খুশি ধরে রাখতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে বলে ফেললাম। বাবা ও শুনে খুব খুশি হলো। তৎক্ষণাৎ বাবা বেরিয়ে গেল মিষ্টি আনতে। রাতে ভাইয়া আসার পরে আমি আর বাবা প্ল্যান করে ভাইয়ার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। ভাবি কেও শিখিয়ে দিলাম যেন কথা না বলে। ভাবি ও আমাদের মত কথা বলল না। ভাইয়া শেষমেষ না পেরে আমাদের তিনজনকে ড্রয়িং রুমে ডেকে নিয়ে আসলো তারপর বলল,,,

— কি সমস্যা তোমাদের কথা বলছো না কেন। কি এমন করলাম আমি? আমার ভুলটা তো বলবে।

তখন বাবা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,

— আমাকে এত দেরীতে দাদা বানানোর জন্য এটা তোমার শাস্তি ছিল।

বলেই বাবা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে রুমে চলে গেল। বাকি রইলাম আমি আর ভাবি। ভাইয়া একবার আমার দিকে আরেকবার ভাবির দিকে তাকাচ্ছে। হয়তোবা বুঝতে একটু সময় লাগছে। কিছু সময় পরেই তাসফি আপু কে উদ্দেশ্য করে ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি নিয়ে বলল,,,

–সত্যি?

ভাবির অবস্থা দেখে বুঝলাম লজ্জা পাচ্ছে ।তাই আমি ধীরে ধীরে কেটে পরলাম।

সকালে শাড়িটা পড়ে হাত ভরতি সাদা চুড়ি পড়ে নিজেকে পরিপাটি করে সাজিয়ে গুজিয়ে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। অপেক্ষায় আছি সাদুর। একটু পর সাদু আসলে ওকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলি,,,

— তোরে এত সুন্দর শাড়ি দিলো কেরে?

–কে দিব আবার?আমার কি জামাই আছে? (সাদু)

–সাদমান ভাই তো আছে। (আমি)

সাদু একটু বাঁকা হেসে বলল,,,

— এইটা সাদমান এরই দেওয়া।

–তাইলে যে কইলি তোর জামাই নাই।(আমি)

–ঠিকই তো কইছি।সাদমান আমার জামাই নাকি?(সাদু)

–সাদমান তোমার জামাই না তাই না?তাইল এনগেজমেন্ট করলি কোন ব্যাডার লগে।(আমি)

–এহ্। হইছে তো মাত্র এনগেজমেন্ট।জামাই তো আর হয় নাই।

— যাই হোক, হবু জামাই তো?

সাদু আর আমি কথা বলতে বলতে ভার্সিটিতে এসে পড়লাম। ক্যাম্পাস টাকে় খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। এইরূপেও ভার্সিটি টাকে বেশ সুন্দর
লাগছে। আশেপাশে পরিচিত-অপরিচিত মুখের অভাব নেই। চতুর্থ বর্ষ আর মাস্টার্সের ছাত্র ছাত্রীরা আজকে একটু বেশিই ব্যস্ত। এখানে যেমন বোরকা পড়া রমণী দেখা যাচ্ছে, থ্রিপিস পড়া রমণী দেখা যাচ্ছে, শাড়ি পড়া রমণী দেখা যাচ্ছে ঠিক তেমন পাঞ্জাবি পরিহিত যুবকদের দেখা মিলছে, শার্ট প্যান্ট পড়া যুবকদের দেখা মিলছে আবার ছেঁড়াফাটা নামক ফ্যাশনওয়ালা যুবকদের ও দেখা মিলছে।

মানুষের ভিড়ে এক পলক আলআবি ভাইয়াকে দেখার ভাগ্য হয়েছিল। এখন আলআবি ভাইয়াকেও সাদুর স্টাইলে বলতে ইচ্ছে করছে” মাদার তেরেসার মেল ভার্সন”। কারণ আমাদের আলআবি ভাইয়া সাদা ছাড়া মনে হয় কোন রং ছুঁয়ে ও দেখেনা। এই পর্যন্ত তাঁকে সাদা রঙের পাঞ্জাবি ছাড়া আর কোন কিছুই গায়ে চাপাতে দেখিনি। তবে আজকে একটু ভিন্নতা দেখেছি। তা হলো কালো রংয়ের একটা মুজিব কোর্ট স্টাইলের জ্যাকেট পড়েছেন।

অনুষ্ঠানের মাঝপথে আমাদের একজন এসে বলল আমাদের ডিপার্টমেন্ট হেড আমাদের নাকি ডাকছেন। আমাদের দোতালায় যেতে হবে। আমাদের ক্লাসরুমে গেলেই নাকি স্যার কে পাব। আমি আর সাদু অনেকটাই আশ্চর্য হই। আমাদের কেন ডাকবেন? ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছিল কিন্তু তারপরও স্যার যখন ডেকেছে একবার না হলে গিয়ে দেখে আসি।

আমি আর সাদু দোতলার দিকে সিঁড়ি বেয়ে উঠে আমাদের ক্লাস রুমে যাওয়ার আগের যেই ক্লাসরুম সেটা ক্রস করার সময় আমাদের ডাক পড়ে। আশেপাশে তাকিয়ে খেয়াল করলাম আমাদের ক্লাসরুমের আগে ক্লাসরুমটায় পাঁচজন ছেলে হাই বেঞ্চের উপর বসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা কোন সভ্য মানুষ নয়। একেকজনের কানে টপ গলায় কুকুরের বেল্টের মতো চেন আর চুলে আগুন ধরার মতো রং মানে কালার করা। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন বসে বসে সিগারেট ফুঁকছে। এদের মধ্যে থেকে দুজনকে চিনতে অসুবিধা হলো না। কারন যে দুজনকে আমরা চিনি ওরা আমাদের ভার্সিটির মাস্টার্স পড়ুয়া ছাত্র। তবে এদেরকে কোনোকালেই ক্লাস করতে দেখা যায় না। কেবলমাত্র পরীক্ষার সময় এদের চাঁদ মুখখানা দেখা যায়। সাথে আরও যে তিনজন ছেলে তারা আমাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত। এখানে এসে মনে হচ্ছে আমরা কোন ভুল করে ফেললাম। সাদু আর আমি একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ওদের কথায় কান না দিয়ে সামনে পা বাড়াতেই একজন বলে উঠল,,,

— এই যে সোনামনিরা! এদিকে এদিকে। আমরাই তোমাদেরকে ডেকেছি।এদিকে আসো।

ওদের কথা শুনে আমরা আমাদের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম। তখন সাদু বললো,,,

–দোস্ত দেখ এই মাঝখানের ছেলেটাকে আমি চিনি।

— কিভাবে?(আমি)

— আরে রাফিদা আপু আর সার্থক ভাইয়ার বিয়েতে এসেছিল ছেলেটা। একেবারেই ভালো নয়। আসলে বিয়ের আগের দিন সার্থক ভাইয়া আমাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল যেন বিয়েতে ছেলেদের সঙ্গে কোন প্রকার কথা না বলি। বিয়ের আগের দিন তো আমাকে তিনটা ছেলের ছবিও দিয়েছিল আর বলেছিল এই তিনজনের থেকে যেন একশো হাত দূরে থাকি। কারণ রাজনীতির সুবাদে সার্থক ভাইয়া আর তার আব্বুকে সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়।সেই কারণে ওদের কেও না পেরে বিয়েতে দাওয়াত দিতে হয়েছিল আর ওই তিনজনের মধ্যে এই ছেলেও ছিল। সম্ভবত রাকিব নাম।

— আচ্ছা তাইলে এখন কি করবি?(আমি)

–চল কোনো খারাপ কিছু করার আগে যাইয়া সার্থক ভাইয়ার পরিচয় দিয়া আসি।(সাদু)

–ভিতরে ঢোকার দরকার কি? চল এই জায়গা থিকাই কাইটা পরি।(আমি)

–গুড আইডিয়া চল চল।(সাদু)

যখনই আমরা দুজন পিছনে ঘুরে চলে যেতে নিলাম তখন আমাদের ভার্সিটির ছেলেদের এসে আমাদের হাত ধরে ফেলল। একপ্রকার টেনে নিয়ে গেল। রুমের ভিতর নিয়ে হোয়াইট বোর্ডের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। একজন বলে উঠল,,,

–কিগো পাখিরা এতো ফুরুত ফুরুত তো ভালো না। তখন সাদু বলল,,,

–আসসালা মুয়ালাইকুম রাকিব ভাইয়া।

ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে সাদুর দিকে তাকালো।সাদু আবার বলল,,,

— আমাকে চিনতে পারেননি? সার্থক ভাইয়ার বোন আমি।

তখন ওই রাকিব নামের ছেলেটা চোখের ইশারা দিয়ে আমাকে দেখিয়ে বলল,,,

–ফ্রেন্ড হয়?

ও বলল,,,

— জ্বি।

— দেখো এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলার মানুষ আমি না। তুমি যেহেতু বলেছ তুমি সার্থকের বোন তাই আমি কথা আরো সোজাসোজি বলব। কথা হল, তোমার ফ্রেন্ডকে ভালো লাগছে।

আমি আর সাদু দুইজনেই তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম। তখন পুনরায় ছেলেটা বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,,,

–আমি ওকে প্রপোজ করবো এখনই।ওকে এক্সেপ্ট করতে বলো। আর সেই সাথে রাইট নাও ওর থেকে একটা কিস চাই আমি।

ছেলেটার লাস্ট কোথায় এতক্ষণ ভয় না হলেও এখন মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। মুহূর্তেই চোখে জলকণারা ভিড় জমালো।আমি সাদুর হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলাম। সাদু বলে উঠলো,,,

— ভাইয়া আসলে ও একটু অন্যরকমের। আমার কাছে আরও সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে আপনি চাইলে আমি বলতে পারি ওদের কথা।

— তোমার ফ্রেন্ড অন্যরকমের তাইতো ভালো লেগেছে। ওকে, প্রপোজ বাদ দাও। ওইসব প্রপোজ ট্রপোজ আমারও ভালো লাগে না। তাই নো প্রপোজ নো একসেপ্ট। জাস্ট একটা কিস হলেই হবে।(রাকিব)

কথাটা বলেই সে আমার দিকে আগাতে লাগল। ভয়ে আমি জবুথবু অবস্থায় হোয়াইট বোর্ড এ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। মাথা নিচু করে আছি তাই দেখতে পেলাম লোকটার পা ক্রমশ আমার দিকে এগুচ্ছে। সেই সময় হুট করেই কেউ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরল অর্থাৎ আমার আর রাকিব নামের ছেলেটা ঠিক মাঝখানে। পরিচিত একটা নাম ভেসে আসলো কানে।

“বড় ভাই!”

তড়িৎ গতিতে উপরের দিকে মাথা তুলে তাকালাম। দেখি সামনে আলআবি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখমন্ডল আমি দেখতে পাচ্ছি না। আলআবি ভাইয়া রাকিবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে তার পিঠ আমার দিকে।রাকিব বলে উঠলো,,,

–হোয়াট অ্যা কোইন্সিডেন্স!শত্রুকে যে এইভাবে দেখব ভাবিই নি।

–তুই তোর শত্রুর খবর নাই রাখতে পারিস। কিন্তু আমি বন্ধুর খবর না রাখলেও শত্রুর খবর ঠিকই রাখি।(আলআবি ভাইয়া)

— তা তুই কি বড় ভাই? আই মিন আলআবি ওরফে বড় ভাই।(রাকিব)

চলবে…………

[বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক। অনুগ্রহ করে বাস্তবিক অর্থ খুজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না আর লেখিকা কে ও বিভ্রান্ত করবেন না]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে