#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_১৪
প্রতিটি ভোরবেলাই স্নিগ্ধতার পরিচয় বহন করে থাকে। ভোরবেলা প্রকৃতি তার স্নিগ্ধতার চাদরে মুড়িয়ে রাখে পুরো পৃথিবীকে।এই স্নিগ্ধতা নিঃসন্দেহে সুখকর। কিন্তু তা স্থান,কাল আর পাত্র ভেদে। প্রতিটি ভোরবেলা সুখকর হলেও প্রতিটি মানুষের জন্য প্রতিটি ভোরবেলা সুখকর হয় না।যেমন টা জায়েফ এর বেলায়।
কাল রাতে মানবতার খাতিরে হলেও জায়েফ কে আমাদের বাসায় রাখা হয়। কাল যখন ভাইয়া কে নিশি আপুর চিঠি টা দেই ভাইয়াও চিঠি টা পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিল।রাতে আমরা কেউই নিশ্চিন্তের ঘুম ঘুমাতে পারি নি।ফজরের আযানের পর জায়েফ নিশি আপুর কবরের ধারে আসার জন্য অনেক পাগলামি শুরু করে।
বর্তমানে আমরা সবাই কবরস্থানে নিশি আপুর কবরের সামনেই দাঁড়ানো। জায়েফ কবরের সামনে হাটু মুড়ে একধ্যানে আপুর কবরটার দিকে তাকিয়ে আছে।বাবা আর নিয়াজ ভাইয়া তার পিছনে দাঁড়ানো। আমি তাদের থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছি।বলতে গেলে গেটের বাইরেই অবস্থান করছি ।মেয়ে মানুষদের নাকি সরাসরি কবরস্থানে প্রবেশ নিষেধ।জায়েফের অ্যাসিস্ট্যান্টকে দিয়ে নিয়াজ ভাইয়া নিশি আপু কে কোথায় দাফন করা হয়েছে সেই খবর নিয়েছে।
জায়েফের ভাষ্যমতে, নিশি আপু গত পরশু দিন ইন্তেকাল করেছে।আর জায়েফ চিঠি সহ তার ইন্তেকালের খবর পেয়েছে কালকে।জায়েফ খবর পেয়ে আমাদের বাসায়ই ছুটে আসে সর্বপ্রথম। জায়েফ এর দূরসম্পর্কের আত্মীয় স্বজনরা বাংলাদেশেই আছে তবে একেকজন একেক স্থানে।আমার জানা মতে জায়েফ হয়তো বা তাদের চেনেও না।জায়েফ এর বাসায় থাকতে আমেনা মা আর আমি মাঝে মাঝে গল্প করতাম।সেই সুবাদে জায়েফ এর আত্মীয় স্বজন সম্পর্কে কিছু কিছু জানি।তবে জায়েফ আপুর মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমাদের বাসায়ই কেন আসলো?হয়তোবা নিশি আপু ক্ষমা চাইতে বলেছে বলে সে এখানে এসেছে।
হঠাৎ দূরে থেকে দেখতে পাচ্ছি একটা বাইক আসছে।ভোরবেলা বলে রাস্তা ঘাট সব ফাঁকা। দুই একটা দূরপাল্লার ট্রাক শাঁইশাঁই শব্দে আসছে আর যাচ্ছে। অনেক সময় পর পর দু-একজন মানুষ দেখা যাচ্ছে। রাস্তা জনমানবহীন আর যানবাহন মুক্ত বলেই একে বারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আলআবি ভাইয়া গায়ে একটা কালো গেঞ্জি চাপিয়ে ছাই রঙা একটা জিন্স পেন্ট পরে তার বাইক নিয়ে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। তাকে দেখে অবাক তো অবশ্য ই হয়েছি।কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার মস্তিষ্ক জানান দিলো নিয়াজ ভাইয়া মনে হয় তাকে আসতে বলেছে।এই লোকটাকে আবার আসতে বলেছে কেন?সে আমাদের কি হয়?শুধুমাত্র ভাইয়ার ফ্রেন্ডই তো হয়।সাদু ও তো আমার ফ্রেন্ড। কই ওকে কি আমি বলেছি নাকি ঢেং ঢেং করে চলে আয়।আলআবি ভাইয়া এসে আমার সামনে বাইকটা দাঁড় করালো।বাইকটাকে আমার সামনে রেখে বাইকের উপরেই বসে রইলেন।তিনিও আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছেন না আর আমিও না।দুজনই মুখোমুখি হয়ে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম আর উনি বসে রইলেন।
একটু পরেই বাবা আর ভাইয়া জায়েফ কে নিয়ে বেড়িয়ে এলেন।জায়েফ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো।আর বলল,,,
–আমাকে কি এখনো ক্ষমা করা যায় না?তুমি ভেবো না নিশি বলেছে বলে আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি। নিশির বলার পূর্বেই আমি নিজে থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি।আমি অনুতপ্ত।প্লিজ আমায় মাফ করে দেও।আমি এভাবে অপরাধীর মতো আর থাকতে পারবো না জুইঁফুল।আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবো।
কথা গুলো বলে জায়েফ আমার সামনেই ধপ করে হাটু মুড়ে বসে পড়লো।কথা বলার সময় তার কন্ঠস্বর কাঁপছিল।হঠাৎ সে আমার দুহাত ধরে তার কপালের সাথে চেপে ধরে বলতে লাগলো,,,
–মাফ চাই!আমি মাফ চাই!দয়া করে আমাকে ক্ষমা করো।
তার কথার মাঝে সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে।তার এমন করুণ অবস্থা দেখে আমারও খুব খারাপ লাগছে।আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এমুহূর্তে আমার চোখে পানির ছিটেফোঁটাও নেই।কিন্তু ভেতরে ভেতরে বড্ড খারাপ লাগছে। আমি ধরা গলায় তাকে বলে উঠলাম,,,
–আপনি এমন করবেন না। আমি আপনাকে মাফ করে দিয়েছি।
সে আবারো বলে উঠলো,,,
–তুমি হয়তো আমাকে মন থেকে ক্ষমা করো নি। আমি তোমার মন থেকে ক্ষমা চাই।
–সত্যি বলছি আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আপনার প্রতি আমার কোনো রাগ ক্ষোভ নেই। আপনি একটু দাঁড়ান।(আমি)
তখন আলআবি ভাইয়া হুট করে এসে আমার হাত জায়েফ এর কপালের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে আমাকেও সামান্য পিছিয়ে আনলো আর বলে উঠল,,,
— হ্যাঁ! হ্যাঁ! করেছে। বলল তো মাফ করেছে।
এমনটা হওয়ায় আমি একটু চমকে উঠি। এক পলক আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে জায়েফের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। দেখালাম জায়েফ মাথা উঁচু করে আলআবি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে একটা মৃদু হাসি নিয়ে আসলো। যা ছিল একেবারেই ক্ষণস্থায়ী। হয়তোবা এক সেকেন্ডের মত হবে। সঙ্গে সঙ্গে জায়েফ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
— নিজের কাছে নিজেকে এখনও বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। আমি শাস্তি চাই। তুমি যে কোন শাস্তি আমাকে দিতে পারো আমি মাথা পেতে নেব।
এবার একটু গলা ঝেড়ে বললাম,,,
–অবশ্যই আপনাকে শাস্তি দিব। আপনি কাজই করেছেন শাস্তি পাওয়ার মত।
মুহূর্তেই দেখলাম বাবা, নিয়াজ ভাইয়া, আলআবি ভাইয়া, জায়েফ সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তারা হয়তো ভাবতে পারে নি আমি জায়েফকে এই পরিস্থিতিতে কোনো শাস্তি দিব। তাদের অবাক করা চাহনিকে আমি উপেক্ষা করে বলতে লাগলাম,,,
–আপনার শাস্তি হবে আপনি বাংলাদেশে থাকতে পারবেন না। যত দ্রুত সম্ভব আপনি আপনার বাবার কাছে চলে যাবেন। আপনার বোনদের সাথে আর বাবার সাথে লন্ডনে গিয়ে থাকেন।
কথাগুলো বলে সবার প্রতিক্রিয়া দেখবার জন্য একে একে সবাইকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। দেখি বাবা আর ভাইয়া দুজনেই ভ্রুকুটি করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আলআবি ভাইয়া কেমন একটা গাছাড়া ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। জায়েফ আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার মুখোভঙ্গিমাতে কোন কিছুই প্রকাশ পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে কোন অনুভূতিহীন মানব। জায়েফ আমাকে প্রতি উত্তরে বলল,,,
–আমি রাজি। তুমি যা বলবে তাই হবে।
জায়েফের এমন নির্লিপ্ত ভাবে উত্তর দেয়ায় কিছুটা আশ্চর্য হয়েছি। এক কথাতেই সে মেনে গেল কিভাবে?
আমাদের মাঝে তখন আলআবি ভাইয়া বলে উঠলো,,,
— এবার তাহলে বাসায় যাই সব তো মিটমাট।
তখন নিয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো,,,
— আলআবি তুই জুইঁ কে নিয়ে যা।সকালে আমরা কেউই নাস্তা করিনি। রাতেও ঘুম হয়নি কারো ঠিকমত। তুই ওকে তোর বাইক দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছে দে। আমরা ধীরে সুস্থে আসছি। আর জুইঁ শোন আসার সময় আমি নাস্তা নিয়ে আসব। বাসায় যেয়ে একটু রেস্ট নে ফ্রেশ হ।যা ওর সাথে চলে যা।
আমার ভাইটার মাথায় কি গন্ডগোল আছে নাকি? বোনকে কিভাবে একটা ছেলের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়? আর আমার বাবাও বলিহারি। জায়েফের সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরে আমার আর ভাইয়ার কোন কাজেই হস্তক্ষেপ করেন না। আমাদের ইচ্ছামত চলতে দেন। ধুর! আর ভালো লাগেনা। আমাকে কেউ আটকালো না কেন? এখন চশমাওয়ালা কানা বেটার সাথে আমাকে বাসায় যেতে হবে। এই লোকটাকে আমার এখন একদমই সহ্য হয় না।দেখা হলেই শুধু এই মেয়ে! এই মেয়ে! আর ক্লিন ইট! ক্লিন ইট করে।
বাইকে উঠতেই আলআবি ভাইয়া বাইক স্টার্ট দিলেন। এখন মনে হচ্ছে সকাল সাতটা কিংবা সাড়ে সাতটার মতো বাজে। রাস্তাঘাটে মানুষজনের আনাগোনাও বাড়তে শুরু করেছে। চারপাশটা এখনও একটু একটু শীতল রয়েছে। এখনো বুক ভরে তৃপ্তির দম নেয়া যায়। অথচ এই পরিবেশটাই আর দু এক ঘন্টা পর যানবাহনের জটলায় আর মানুষের কোলাহলে মিলিয়ে যাবে। একটু পরেই পরিবেশ টায় হই হই রই রই একটা ভাব চলে আসবে। সকালের এই সময়টায় বাইকে চড়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে মন্দ লাগছে না। আরো ভাল লাগতো যদি বাইকে বসা মানুষটি পছন্দের হত।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয় সবাই মিলে আমরা নাস্তা করি। জায়েফও আমাদের সাথে নাস্তা করে। নাস্তা বলতে জায়েফ এক গ্লাস পানি আর একটা ব্রেড পিছ খেয়েছে। আলআবি ভাইয়া আমাকে দিয়েই চলে যায়। আজ আর ভার্সিটি যাওয়ার কোনো চিন্তাভাবনা করলাম না। অ্যাসাইনমেন্ট আরো দুইদিন পরে জমা দিতে হবে তাই কোন টেনশন নেই। নিয়াজ ভাইয়াও অফিসে যায় নি আজ। বিকেল পর্যন্ত জায়েফ আমাদের বাসায়ই থাকলো। কিন্তু লোকটার লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে সে একেবারেই চুপচাপ হয়ে গেছে। বাসায় এসেও তার সঙ্গে আর কথা হয়নি। আমরাও তাকে আর বিরক্ত করিনি। বিকেলের দিকে নিয়াজ ভাইয়া কে জায়েফ নিজে থেকে এসে বলে সে তার বাসায় চলে যাবে। তখন নিয়াজ ভাইয়া তাকে ঢাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।
রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একমনে আকাশে উদয় হওয়ার অর্ধচন্দ্রের দিকে তাকিয়েছিলাম। যাকে বলে চন্দ্র বিলাস। মনে মনে ভাবছিলাম নিশি আপুর ভাগ্য অনেক ভাল ছিল। কারণ তাকে সত্যিকারে ভালবাসার একজন মানুষ ছিল। সাদুর ভাগ্যটাও অনেক ভালো। সাধু বুঝুক আর না বুঝুক আমি বুঝি সাদমান ভাই ওকে অনেক ভালোবাসে। জীবনে খাবারের স্বাদ, ঘুমানোর স্বাদ, বৃষ্টিবিলাস এর স্বাদ, বন্ধুত্বের স্বাদ ছাড়াও আরো নানা রকমের স্বাদ নিলেও কখনো ভালোবাসার সাধ টা নেয়া হয়নি। প্রথমে প্রথমে আমিও ভাবতাম আমি মনে হয় জায়েফ কে ভালোবাসি। কিন্তু ধীরে ধীরে আমার এই ভাবনাটা ভুলে পরিণত হতে থাকে। কারণ জাইফের প্রতি আমার মায়া বা টান ছাড়া অন্য কোন কিছু ছিল না। তার প্রতি ভালোবাসা গড়ে ওঠার আগেই আমাদের সম্পর্কটা ভেঙে যায়। আগে না বুঝলেও এখন বুঝি জীবনের এই সাড়ে আঠারো বছর বয়সেও কাউকে এখনো ওই ভাবে ভালোইবাসতে পারিনি।
হাসিখুশি, দুঃখ-বেদনা নিয়েই তো আমাদের জীবনটা। সুখ-দুঃখ জীবনে দুইটাই থাকবে। তাই বলে জীবন তো আর থেমে থাকবে না। আমাদের বাসা থেকে জায়েফ চলে গেছে চার দিন হয়ে গেল। আর নিশি আপুর মৃত্যুর হলো ছয়দিন।এর মাঝে সাদুকেও সব বলা হয়ে গেছে।
সকালে ভার্সিটির জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তখন নিয়াজ ভাইয়া এসে বলে জায়েফ কাল রাতের তিনটার টার ফ্লাইটে লন্ডন চলে গিয়েছে। কথাটা শুনে তার জন্য আফসোসে ভরা এক তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই বের হলো না। ক্ষণিকের জন্য মনে হলো সত্তিকারের ভালোবাসাই কেন পূর্ণতা পায় না? আজ জায়েফ আর নিশিও তো তাদের ভালোবাসার সংসার বুনতে পারতো।এমনটা না হলেও তো পারতো। যাইহোক, যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন আর আমি আমার অতীত নিয়ে আর ভাববো না। সব কিছুর পাশাপাশি একটা কথা ভেবে ভাল লাগছে যে অতীত আমার পিছু তো ছাড়লো।২-১দিন জায়েফের ঘটনাটা নিয়ে একটু আপসেট ছিলাম। তবে এখন সব স্বাভাবিক। শুধু স্বাভাবিক হতে পারেনি বাবা আর নিয়াজ ভাইয়া। এখনো কথা বলতে গেলে তাদের মধ্যে একটা জড়তা কাজ করে। তবে আগের মত নেই। এখন টুকটাক কথা তাদের মধ্যে হয় তবে তা খুবই কম।
ভার্সিটি শেষে আমি আর সাদু বাসায় ফিরছিলাম তখন সাদমান ভাইয়া আমাদের সামনে এসে হাজির। সাদু সাদমান ভাইয়াকে কিছুটা পছন্দ করে। তবে ওর ইগোর জন্য তা প্রকাশ করে না।আর সাদমান ভাই ইগো বলতে কিছু বোঝেই না।সারাদিন রাত সে সাদুকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে বেড়ায়।
সাদমান ভাইয়া আমাদের সামনে এসে বললো,,,
— কি খবর শালিকা আর বউ?
আমি এক গাল হেসে তাকে জবাব দিলাম,,,
— আলহামদুলিল্লাহ দুলাভাই। খবর আমাদের সেইই!
সাদুর দিকে তাকিয়ে দেখি ও রাগে ফেটে যাচ্ছে। তখন সাদমান ভাইয়া আবার বলল,,,
— শালিকা বউতো আমাকে আবার ব্লক মারছে।
সাদমান ভাইয়ের কথা শেষ হতে না হতেই সাদু চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,
–তুই জানছ গোসল করতে গেলেও এই ব্যাডার লেইগা কোনো শান্তি নাই।উঠতে, বইতে, খাইতে, ঘুমাইতে খালি বাবু খাইছো বাবু খাইছো মার্কা ডায়লগ দেয়।পরশু দিন আমি গোসলে ঢুকছি তখন আমারে ফোন দিয়া পায় নাই বইলা ডিরেক্ট আম্মুর কাছে কল করছে।আম্মু আইসা আমারে গোসলের তে টাইনা বাইর করছে।কিসের জন্য জানছ?এই খাম্বায় আম্মুরে কইছে উনি নাকি আমার সাথে নোট নিয়া কি গুরুত্বপূর্ণ কথা কইবো। আমার আম্মু আমারে অর্ধেক গোসল করা অবস্থায় বাইর কিইরা কয় নে কথা ক সাদমান নাকি কি জরুরী কথা বলবে তোরে।এখন ক এই ব্যাডারে আমি ব্লক মারমু না তো কি করমু?
–বাহ্।এতো সুন্দর প্রেম চালাছ। বাবু খাইছো বাবু খাইছো করছ আর আমারে এখনো কছ নাই? (আমি)
–আমি প্রেম করি কবে কইলাম।বেশি বুজছ কে?
সাদু এবার সাদমান ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,
–আপনি আমারে ৩০ দিনের মধ্যেও আর ফোন দিবেন না।বুঝতে পারছেন?
–এখনো তো একটাও ফোন কিনতে পারলাম না।(সাদমান)
–আমি ফোন কিনার কথা বলি নাই।কল দেওয়ার কথা বলছি।(সাদু)
–আচ্ছা ব্লকটা তাইলে খোলো।ফোন দিব না আর। এখন থেকে শুধু ম্যাসেজ দিব।(সাদমান)
–দেখছস কেমন ঘাড়তেড়া।(সাদু)
–হ তোর মতই।একেবারে খাপে খাপে মিল দুইজনের। (আমি)
বলেই সাথে সাথে আমি আর সাদমান ভাইয়া জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। আমার কথায় সাদু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। আমাকে রেখেই হাটা ধরল। আমিও তাড়াতাড়ি ওর পিছনে পিছনে হাঁটা ধরলাম।
বাসায় এসে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে আমার রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক কে নিউজ ফিড স্ক্রল করছিলাম তখন হঠাৎ পিপল ইউ মে নো তে দেখলাম একটা আইডি। সেখানে সুন্দর করে লেখা।”আলআবি মাশরুখ”। প্রোফাইলে তার সাদা একটা গেঞ্জির উপরে কালো কোর্ট পরিহিত ছবি দেওয়া। হঠাৎ করে ছবিটা দেখে কেন যেন তাকে আমার কাছে খুব ভালো লাগলো।ছবিটায় চশমা মেই চোখে। এতে তাকে অন্যরকম লাগছে । এহ! চশমা পরে নাই। দেখাতে হবে না আমি কানা না!তার আইডিতে ঢুকে কেবলমাত্র ওই একটি ছবিই দেখতে পেলাম।তার গায়ের বর্ণ শ্যাম বর্ণের না আবার একেবারে ধবধবে ফর্সাও না। তার গায়ের বর্ণ কে মূলত হলুদে ফর্সা বলা চলে। পুরো আইডি ঘেটে কয়েকটা বিল্ডিং এর ছবি ছাড়া আর কিছুই পেলাম না। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো তার ফলোয়ার্স সংখ্যা ৯ হাজারেরও বেশি (9k+)।তার ওই একটা ছবিতেই রিয়েক্ট এসেছে ৬ হাজার (6k)।রিয়েক্টে বেশির ভাগই মেয়েদের আইডি।তাও আবার সব বাংলাদেশি মেয়ে নয়।কিছু আমাদের দেশের বাইরেরও রয়েছে।এরই মাঝে হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো।
চলবে…………