#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_১৩
এই লোক আলআবি ভাইয়াকে কি করে চেনে?আমি কি করি তাও জানে।ভাইয়াকে কি বলেছি তাও সে জানে কি করে?সারাদিন কি আমায় ফলো করে? না তাহলে বাসার ভিতরে কিভাবে ফলো করবে?ধুর আমি তো পাগলই হয়ে যাবো ভাবতে ভাবতে।আমি একা কেনো পাগল হবো?সাদু কে নিয়েই পাগল হবো। ওকেও আমার সাথে ভাবিয়ে ভাবিয়ে পাগল বানিয়ে ছাড়ব।যাই হোক, হয় তো আমার বেস্টুই।দুজনের মিল না থাকলে চলে নাকি?ফোনটা নিয়ে সাদুকে দিলাম কল।প্রথমবার রিং হতে হতে কেটে গেলো।দ্বিতীয়বারের সময় দুইবার রিং হতে ফোনটা ধরলো।
–ওই থাকোছ কোন দেশে?এতো সময় লাগে ফোন ধরতে?(আমি)
–চা খাইতেছিলাম। এখন ক।ভার্সিটিতে ঝগড়া কইরা মন ভরে নাই?আরেকটু করবি?(সাদু)
–ঝগড়া পরে করমু।এখন শোন কি হইছে, সকালে যেই লোকরে ভাইবা আলআবি ভাইয়ার মাথায় পানি ঢালছিলাম ওই লোক তো আবারও মেসেজ দিছে।জানছ কি কইছে?(আমি)
–না কইলে জানমু কেমতে?(সাদু)
–আরে আমি যে ভাইয়ার কাছে বইলা দিছি তা ওই লোক জানল কেমনে?আমারে কয় আমি কি এখনো ছোট নাকি।আমি ভাইয়ার কাছে বললাম কেন?আর তো আর সে আলআবি ভাইয়ারেও চেনে।(আমি)
–তোর চিঠি প্রেমিক দেখি তোর সব খেয়াল রাখে। আচ্ছা তোরে মেসেজ দিয়া কয় নাই তুই দিনে কয়বার বাথরুমে যাছ।(সাদু)
ওর কথা শুনে রাগে কটমট করে বলে উঠলাম,,,
–তুই যদি আমার সামনে থাকতি সত্যি সত্যি কইতাছি তোর একটা চুলও আমি রাখতাম না তোর মাথায়।(আমি)
–সরি সরি।বেশি রাগ করিছ না। আচ্ছা সিরিয়াসলি কথা বলি।(সাদু)
–তারমানে এতক্ষণ তুই সিরিয়াসলি আমার কথা গুলা নেছ নাই।(আমি)
–আচ্ছা এখন নিচ্ছি তো।তুই যেই কথাগুলো আমাকে বললি তাতে মনে তো হচ্ছে তোর বাসার কেউই ওই লোকটাকে সাহায্য করছে।দেখ তুই যখন নিয়াজ ভাইয়াকে লোকটার কথা বলছিলি তখন কিন্তু তুই, আমি, নিয়াজ ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়া ছাড়া কেউ ছিল না।কমলা আন্টি রান্না ঘরে ছিল।(সাদু)
ওর ভাষার কি হইলো।ওহ তার মানে ও সিরিয়াস ভাবেই কথা বলছে।ওর ভালো গুন হলো সিরিয়াস মোমেন্টে বা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে ও শিক্ষিত মহিলা হয়ে যায়।আবার আমার মন খারাপের সময়ও শিক্ষিত নাগরিক হয়ে ওঠে। আমি ওকে বললাম,,,
–ঠিক কথা। আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম। লোকটা যখনই আমাকে মেসেজ দেয় তোর খুশির আর শেষ থাকে না।আর তুই ই তো আমার কাছে রকেটের বেগে এসেছিলি যেদিন পানি ঢালাঢালি করলাম।ব্যাপারটা কি দাড়ালো? তুই ই ওই ব্যাটাকে খবর পাঠাছ।(আমি)
–তোর বা* পাঠাই।আমিই তো প্রেম পিরিতি পছন্দ করি না তোরে কোন দুঃখে করামু।আমি কি কইতে চাই শোন তুই।ওখানে ছিলাম আমি। আমি কখনই কাউকে এমন কিছু করতে সাহায্য করবো না।বাকি ছিল নিয়াজ ভাই।সেও তোর আপন ভাই।সে এমন করবে না। আর ছিল আলআবি ভাইয়া। খেয়াল করেছিলি সে কিন্তু চুপচাপ বসে ছিল।আমার তো তাকে নিয়ে ডাউট হচ্ছে। মনে হচ্ছে তার মধ্যে গন্ডগোল আছে। লোকটাও নাকি আলআবি ভাইয়া কে চেনে।(সাদু)
–এতো সিওর কীভাবে তুই? আর আলআবি ভাইয়া তো মোটেও এমন না।তার কি বেনিফিট এগুলো করে?(আমি)
–আরে শোন আমি যখন আজকে বাথরুমে হাগতে বইছিলাম ওইসময় আমার মাথায় আলআবি ভাইয়ার চুপচাপ থাকার বিষয়ডা ধরা পরলো।তুই তো জানছ আমি হাগতে মুততে বইয়া তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে কি হইবো তাও ভাইবা ফালাইতে পারি।আর আমার বাথরুম থট্স বেশির ভাগই মিললা যায়।তোরে যাস্ট একটা লজিক দেখাইলাম।(সাদু)
–ঠিক কইছোস। তোর হাগা মুতার লজিকও মাঝে মাঝে মিললা যায়।(আমি)
–আমার লজিক রে সম্মান দে।(সাদু)
–তোর হাগা মুতার লজিক মাইনষের কাছে কইয়া বেড়াইছ না।তাইলে কয়দিন পর তোরে দেখতে আমার পাবনা যাওয়া লাগবো।(আমি) [গল্পের সুবিধার্থে পাবনা ব্যবহার করা হলো।পার্সোনালি কেউ মাইন্ডে নিবেন না]
–আমার পাশেই তোর সিট রাখতে কমুনে।পড়ে দুইজন একসাথে পাগলাগারদ টা ঘুইরা ঘুইরা দেখমু।(সাদু)
–তোর জামাই রে নিয়া দেখিছ।আমার এতো শখ নাই।(আমি)
–দোস্ত আইডিয়া টা জোস দিছোস।মানুষ জামাই নিয়া কতো জাগায় ঘুরতে যায় আমি আর তুই পাগলাগারদ ঘুরতে যামু।কেমন হইবো?(সাদু)
–বাসায় জানে?(আমি)
–কি?(সাদু)
–তাগো ছোট মাইয়াটা যে পাগল হইয়া গেছে।(আমি)
–তুই তো আছোস কইয়া দেওয়ার লেইগা।(সাদু)
–ফোন রাখ তুই।একটু পর পাগল হইয়া দৌড়াইতে হইবো।(আমি)
সাদুর সাথে কথা বলে ভার্সিটির এসাইনমেন্ট নিয়ে বসেছি। রাত সাড়ে আটটার দিকে ভাইয়া বাসায় আসলো।ভাইয়া এসে বললো,,,
–জুইঁ আজ একটু আগে খাবার দেতো।ব্যস্ত ছিলাম বেশি দুপুরে খাওয়া হয়নিরে।
–ঠিক আছে যাও। ফ্রেশ হও আমি আসছি। (আমি)
রাতে আমাদের সাড়ে নয়টার দিকেই খাওয়া দাওয়া শেষ হলো।ড্রয়িং রুমেই আমি এসাইনমেন্ট নিয়ে বসলাম আর ভাইয়া পাশে তার ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।বাবা পুরো বাসা জুরে পায়চারি করছে।রাতে খাবার খেয়ে বাবা বাসার মধ্যেই ১৫-২০ মিনিট হাটাহাটি করে।এমন সময় বাসায় কলিং বেল বেজে উঠলো।বাবা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।দরজা খোলার শব্দের সাথে সাথেই বাবার হুংকার শোনা গেলো।
–কি চাই তোমার? (বাবা)
আমি আর ভাইয়া দ্রুত দরজার কাছে এগিয়ে আসলাম।দরজায় দাঁড়ানো ব্যাক্তিকে দেখে আশ্চর্য হওয়ার কথা। কারণ দরজায় জায়েফ দাঁড়ানো।তবে তার বেশভূষায় অতিরিক্ত মাত্রায় আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না।তাকে আমি এই পর্যন্ত পাঞ্জাবি পরিহিত রূপে কখনো দেখিনি।তাও আবার সাদা। মাথায় একটা সাদা রুমাল বেধে চুল গুলো ঢেকে রাখা।বলা যেতে পারে টুপির বদলে সে রুমাল পড়েছে।তাকে বিধস্ত দেখাচ্ছে ভিষণ।ভাইয়া বাবা কে দরজা থেকে সরিয়ে তেড়ে গিয়ে জায়েফের কলার ধরে বলতে লাগলো,,,
–তোর সমস্যা কি?আমার বোনের সাথে তোর কি?এ বাসায় তোর কি?
ভাইয়া প্রথম কথা গুলো দাঁতে দাঁত চেপে বললেও শেষের কথা টা হুংকার দিয়ে বলে উঠলো।
জায়েফ মাথা নিচু করে এক ক্লান্তি ভরা নিস্তেজ কন্ঠে বলল,,,
–আমি শুধু জুইঁফুল এর থেকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এসেছি।ও আমাকে ক্ষমা না করা অবধি আমি এখান থেকে এক পা ও যাবো না আজ।
ভাইয়া আগের চেয়ে দ্বিগুণ জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,
–জুইঁফুল কি হ্যা?জুইঁফুল কি।ওরে জুইঁ বলবি।আর তুই জুইঁ বা বলবি কেন?ওর নামই তুই মুখে নিবি না।
জায়েফ আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে নিয়াজ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল।নিয়াজ ভাইয়া স্তব্ধ হয়ে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো।আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।একজন মানুষ এভাবে কান্না করতে পারে?তার উপর জায়েফ তো একজন পুরুষ মানুষ।ছেলেরাও এভাবে শব্দ করে কান্না করে?নিয়াজ ভাইয়া জায়েফ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই ধীরে ধীরে পিছিয়ে এসে সোফায় জায়েফ কে বসালো।বাবা বলে উঠলো,,,
–নিয়াজ এই আপদকে বিদায় কর।
আর তুমি।তোমার কি লজ্জা শরম নেই? তোমার জন্য আমার ছেলে মেয়ে এর সাথে সম্পর্ক ভালো নেই। তোমার জন্য আমার ছেলেটা আমার সাথে কথা বলে না।
–জুইঁ তাকে বলে দে এই পর্যন্ত সব তার জন্য হয়েছে।(নিয়াজ ভাইয়া)
এর মধ্যেই জায়েফ ভাঙ্গা গলায় বলে উঠলো,,,
— আমার নিশিকে ওরা একটা বারের জন্য দেখতে দেয় নি।ওরা আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলো না কেন? আমাকে ওরা কেন বলল না?
নিশি শব্দ টা শুনে আমি তড়িঘড়ি করে বলে উঠলাম,,,
–মানে?কি বলছেন আপনি?
আমার কথায় তিনি আমার দিকে মাথা তুলে তাকালেন।কান্না করার ফলে তার চোখ ফুলে উঠেছে।ঈষৎ লাল দেখাচ্ছে তার চোখ।তার অবস্থা দেখে, কি হয়েছে তা জানার কৌতূহল বেড়ে চলছে। আজ আমার সামনে অদ্ভুত অপরিচিত এক জায়েফ কে বসা দেখছি।নিয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো,,,
–কি বলার আছে বলে বিদায় হও।
–নিয়াজ আমাকে একটু ******কবরস্থানে নিয়ে যাবে?এখন এই মুহূর্তে।(জায়েফ)
জায়েফের কথা বলার সময় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে অনেক কষ্টে তার ভিতরে কান্না টা চেপে রাখছে।তার কথা শুনে আমি আশ্চর্যের উপর আশ্চর্য হচ্ছি। নিয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো,,,
–তোমার পা আছে তুমি পরিপূর্ণ সুস্থ সবল একজন মানুষ।চলে যাও যেখানে খুশি।
–ভালো নেই আমি। আমি সুস্থ নেই। (জায়েফ)
কথাটা বলেই পকেট থেকে একটা কাগজের মতো কিছু বের করে আমার দিকে উঁচু করে ধরলো।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজ টা আমার হাতে নিলাম।ধরে বুঝতে পারলাম এটা আসলে একটা চিঠি। আমি জায়েফ এর দিকে প্রশ্নসূচক চাহনি দিতেই জায়েফ বলে উঠলো,,,
–একটু পড়বে এটা?
তার কথায় অনুরোধ স্পষ্ট। তার এমন অবস্থা দেখে তার জন্য কিছুটা খারাপ লাগছে।তিনজোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর বিলম্ব না করে দুই ভাজের চিঠিটা খুললাম।প্রথমেই চোখে পড়লো ভাঙ্গা হাতে একটু বড় করে লেখা,,,
–“ভালোবাসার জায়েফ”
এরপর নিচের লেখায় চোখ বুলাতে শুরু করলাম।
“এই লেখাটা যখন তোমার অব্দি পৌঁছাবে তখন নিশি নামক মেয়েটার অস্তিত্ব হয়তোবা এ পৃথিবীতে থাকবে না।আবার থাকতেও পারে।বুঝতে পারছো না হয় তো তাই না?বুঝিয়ে বলি একটু।
কেউ কেউ বলে জীবনের গন্ডিটা অনেক বড়। পুরো জীবনটাই তো এখনো পড়ে আছে। এখনো অনেক কিছু দেখার বাকি ।আবার কেউ কেউ বলে জীবনের গণ্ডি টা অনেক ছোট। এই ছোট সময়ের মধ্যেই নাকি অনেক কাজ করতে হয়, অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। ছোট জীবনটাতেই নাকি অনেক চাওয়া-পাওয়া পূরণ করে ফেলতে হয়। কিন্তু আমার কাছে তো এর কোনটাই মনে হয় না। কারণ সৃষ্টি কর্তা একেক জনকে একেক জীবনের গণ্ডি প্রদান করেছেন। এরমধ্যে হয়তোবা আমি মাঝারি ধরনের গন্ডিতে পড়ি।
জীবনের অনেকটা অংশ পার করে আসার পরে এখন মনে হচ্ছে আরো কয়েকটা দিন তোমার সাথে কাটানো উচিত ছিল। মনে হচ্ছে আরো কয়েকটা রাত তোমার সাথে ফোনে কথা বলে কাটানো উচিত ছিল। তোমার সাথে হয়তবা আমি ঝগড়া না করলেও পারতাম।তোমাকে প্রতিটা ভোরবেলা ফোন করে জ্বালাতে ইচ্ছে করে। তোমার ঘুম মাখা কন্ঠে ধমক খেতে ইচ্ছে করে।এখন তীব্র ইচ্ছে জাগে তোমার হাতে তৃপ্তি করে কয়েক লোকমা ভাত খেতে। প্রত্যেক বার খাওয়ার সময় হলে তোমাকে ফোন দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে বাসার খাবার খাবে ফাস্টফুড খাবে না। বাবাকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিটা বিকেল এখন তোমার সাথে লুকিয়ে দেখা করতে ইচ্ছে করে।আমার বার বার হাজার বার বলতে ইচ্ছে করে- ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি।ভালোবাসি আর শুধুই ভালোবাসি তোমাকে।
আচ্ছা জায়েফ তুমি কি জানো এখন আমি কোথায়?দাঁড়াও আমি বলছি তোমাকে। বর্তমানে আমি সিঙ্গাপুরের একটা হসপিটালে বিগত পাঁচ মাস ধরে ক্যামো নিচ্ছি। জানো কি ক্যামোটা কেন নিচ্ছি? কারন আমার শরীরে নাকি ব্লাড ক্যান্সার নামক কিছু একটা হানা দিয়েছে। সে আমার শরীরে এসে জানান দিয়েছে আমি নাকি বাঁচবো না। তার জন্যই তো তোমার থেকে দূরে চলে আসা। তোমাকে আমি আসার সময় বলে এসেছি আমেরিকায় চলে যাচ্ছি। নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য। দেখো তুমিও সেটাই বিশ্বাস করে নিলে। আমি তোমাকে বলেছি আমার জীবনে সবচেয়ে প্রথমে ক্যারিয়ার তারপর অন্য কিছু। সেটাও তুমি বিশ্বাস করে নিলে। কিন্তু সত্যিটা তো আর এটা না। তোমাকে আমি সত্যিটা জানতে দিইনি বলে তুমি জানোনি।
তোমার সাথে কথায় কথায় ঝগড়া করতাম, খারাপ ব্যবহার করতাম নিজের অনিচ্ছায়। তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতাম নিজের অনিচ্ছায়। আমি জানতাম আমি তোমার জীবনে ক্ষণস্থায়ী। আমি জানতাম তোমাকে মিথ্যে সুখের আশা দেখিয়ে কোন লাভ নেই। তাই ধীরে ধীরে তোমার কাছ থেকে দূরে সরে আসছিলাম। আমি চাইতাম তুমি আমার অবর্তমানে কাউকে নিয়ে সুখে থাকো। দিনশেষে তুমিও যেন তৃপ্তিময় সুখের হাসি হাসো।
জীবনে আঘাত খুব কমই পেয়েছি। কিন্তু বড় আঘাত পেয়েছি যখন শুনেছি তুমি নাকি বিয়ে করেছ। সেটা তো মেনে নিয়েছিলাম। কারণ আমি তখনই বুঝে গিয়েছিলাম আমি আর বেশি দিন নেই। চেয়েছিলাম তুমি ছোট্ট পরীটার সাথে জীবনটা উপভোগ করো। কিন্তু যখন জানতে পারলাম তুমি আমার জন্য ছোট্ট একটা পরীকে কষ্ট দিয়েছ তখন আরো বেশি আঘাত পেয়েছিলাম। আমেনা আন্টি আমায় সব বলেছে জায়েফ। তুমি যদি ছোট্ট পরীটার কাছ থেকে ক্ষমা না চাও আর ক্ষমা না পাও, তাহলে আমার আত্মা কোনদিন শান্তি পাবে না। ছোট্ট পরী টা কে বলবে আমি অনুরোধ করছি তোমাকে যেন সে মাফ করে দেয়। আমি কিন্তু এটাও জানি তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে।
জানো এই চিঠিটা একটা ওয়ার্ড বয় কে অনেক রিকোয়েস্ট করে তোমার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। বাবা তো কোনোদিনই তোমার আর আমার সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি হয়নি। হয়তো বা ভবিষ্যতেও হতোনা। তাইতো ওয়ার্ড বয়ের কাছে হাত জোড় করা।
সারাদিন অনেক মানুষই থাকে আশেপাশে। তাই তোমার সঙ্গে খাতা-কলমে কথা বলতে পারিনা। এখানে এখন রাত। রাত বলেই তো তোমার সঙ্গে এখন কথা বলতে পারছি।জানিনা তুমি কবে পাবে এটা। তবে চিঠিটা পাওয়ার পর যদি আমার শ্বাসক্রিয়া চলতে থাকে, যদি আমার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে থেকে থাকে একটা বার দেখতে এসো? আমি আমার প্রাণ ভরে তোমাকে একটু দেখে নিতে চাই। আমার চোখের শেষ পলক টা তোমাকে দেখে ফেলতে চাই। তোমাকে এখনো অনেক কথা বলা বাকি। তোমার সঙ্গে অনেক ইচ্ছের স্বাদ নেয়া এখনো বাকি। এই বাকিটা বাকিই থেকে যাবে। আরো অনেক লিখতে চাইছি এই মুহূর্তে। কিন্তু লিখতে পারছিনা। শরীরটা কেমন নিস্তেজ হয়ে আসছে। দুর্বলতা গ্রাস করছে আমাকে ধীরে ধীরে। শেষ বেলায় এসে এতোটুকুই বলে যাব-
অনেক ভালোবেসে ছিলাম প্রিয় আজও অনেক ভালোবাসি প্রি
এখানেই সমাপ্ত নিশির লেখা চিঠি। মেয়েটা প্রিয় কথাটাও সম্পূর্ণ লিখতে পারেনি। লেখাগুলো পড়তে পড়তে কখন যে নিজের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে বুঝতে পারিনি। চিঠিটার হাতের লেখা শেষের দিকে যাচ্ছেতাই অবস্থা। লেখার মাঝে মাঝে কিছু জায়গায় অক্ষর গুলো লেপ্টে গিয়েছে। সম্ভবত তা চোখের পানি।
চলবে…………