#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_১২
কাক ভেজা হয়ে আমি আর সাদু দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের সামনে এক তিক্ত মেজাজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলাআবি। ভাইয়া হাতে তার ভেজা কালো কোর্ট। চশমাটা খুলে তার হাতে নেয়া। চুলগুলো ময়লা পানিতে ভিজে একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা। তার পরনের সাদা শার্ট টারও কিছু অংশ ভিজে গিয়েছে। বলতে গেলে আমরা তিনজনই এখন কাক ভেজা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের পাশেই সোফার উপর বসে নিয়াজ ভাইয়া হাত-পা ছুঁড়ে হাসাহাসি করতে করতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগে,,,
ময়লা পানি গুলো ফেলে যখন তৃপ্তির হাসি হাসছিলাম। তখন পরিচিত কন্ঠের চিৎকারে বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালাম। নিচে তাকিয়ে আলআবি ভাইয়া কে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তাকে দেখেই এখন বোঝা যাচ্ছে তার রাগ ১০৪ ডিগ্রি হয়ে আছে। আলআবি ভাইয়ার মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে আমার মুখের হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে মনে আর একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো। এই মুহূর্তে আলআবি ভাইয়া আমাদের বাসার নিচে কি করছে? আমার অবস্থা দেখে সাদু এগিয়ে এসে নিচে তাকালো। ও বলল,,,
–ঠিক হইছে এক্কেবারে ঠিক হইছে। অতি চালাকের গলায় দড়ি।তোরে কে কইছিল ময়লা পানি গুলি ফিক্কা মারতে?
–হা এখন তো দোষ আমার। তোরে কে কইছিল আমার ফোনটা নিয়ে একেবারে রকেটের বেগে আমার কাছে আসতে। মেসেজ দিছিল থাকতো দেখতে গেলি কেন?(আমি)
সাদু পাল্টা জবাব দেয়ার আগেই আমাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো আমরা। দুজনে গিয়ে ড্রয়িং রুমে দাঁড়ালাম। এর মধ্যে কমল আন্টিও দরজা খুলে দিয়েছে। দেখালাম হন্তদন্ত হয়ে আলআবি ভাইয়া বাসায় ঢুকলো। আমাদের দুজনের দিকে এক নজর তাঁকিয়ে সোজা নিয়াজ ভাই এর রুমে গট গট করে চলে গেল। আমি আর সাদু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি। আসলে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ময়লা পানি যেহেতু আলআবি ভাইয়ার উপর পড়েছে সেহেতু তার তো এখন এসে আমাদের একেবারে ধুয়ে দেয়ার কথা। আমাদের কোন প্রকার বকাবকি না করে সোজা ভাইয়ার রুমে চলে গেল কেন? আমরা দুজন কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ আমাদের পানি দিয়ে একেবারে গোসল করিয়ে দিল। ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখলাম আলআবি ভাইয়া দুই হাতে দুইটা বালতি। যার পানি গুলো এখন আমার আর সাদুর গায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
এখন এই মুহূর্তে আলআবি ভাইয়ার সাথে সাদুও আমার দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে। ওর ভাবভঙ্গিতেই বলে দিচ্ছে আমার জন্য আজ এই অবস্থা। হাসতে হাসতে নিয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো,,,
–জুইঁ পানি ফালানোর জায়গার কি অভাব পড়ছে? ওর মাথাটাই পাইলি তুই পানি ফলানোর জন্য।
বলেই নিয়াজ ভাইয়া আর একচোট হেসে নিল। তখন আমি নিজেই মনে মনে ভাবছিলাম উনি আবার না সেদিনের মতো বলে বসে “ক্লিন ইট”। আমার মনের ভাবনা শেষ হতে না হতেই আলআবি ভাইয়ার কথা শুরু হয়ে গেল। আমার হাতে তার কোর্ট টা ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,,,
–ক্লিন ইট!
তার এমন কথায় নিয়াজ ভাইয়ার সাথে সাদুও যোগ দিল।ওদের হাসাহাসি দেখে মনে হচ্ছে আমি মিরাক্কেলের কোনো পার্টিসিপেট আর ওরা দুজন বিচারক। এবার আমার অতিমাত্রায় রাগ উঠে গেলো। আমি কেন তার জামাকাপড় ধুবো? আমাকে দেখে জন্মগত ধোপা মনে হয় নাকি?একবুক সাহস নিয়ে জোর গলায় বলে উঠলাম,,,
— আমি কি আপনার জামা কাপড় ধুয়ে দেয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করেছি নাকি?
উনি দ্বিগুন জোরে বলে উঠলেন,,
–তো কি আমার মাথায় পানি ঢালার জন্য জন্মগ্রহণ করেছ?
এবার আমি একটু অনুনয়ের সুরে বলে উঠলাম,,,
–দেখুন এখানে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আর আপনার মাথায় পানি ঢালার জন্য আমি খুবই দুঃখিত। আই এম সরি!
–তোমার সরি দিয়ে যদি আমার জামা কাপড় শুকিয়ে যেত তাহলে সরি টা একসেপ্টেবল হতো।(আলআবি ভাইয়া)
–আসলে আমি বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম অন্য কেউ। (আমি)
–তা তুমি অন্যের মাথায় পানি ঢেলে বেড়াও কেন? তোমাকে কি কেউ এই চাকরি দিয়েছে নাকি?আজ কতো ইম্পর্টেন্ট একটা মিটিং আছে জানো তুমি?(আলআবি ভাইয়া)
তারপর নিয়াজ ভাইয়া আর আলআবি ভাইয়াকে সব খুলে বলতে লাগলাম। তাদেরকে শুধু লোকটার পাঠানো মেসেজ দেখিয়েছি। নিয়াজ ভাইয়া কে যখন লোকটার পাঠানো সেই বিকেল বেলার মেসেজ দেখালাম তখন হঠাৎ করে ভাইয়ার কাশি উঠে গেল। বুঝতে পারলাম না কি এমন হল যে মেসেজ দেখে তার কাশি উঠবে। ভাইয়াকে ধীরেসুস্থে বসিয়ে সাদু আর আমি পানি খাওয়াতে লাগলাম। তখন হঠাৎ করে খেয়াল করলাম আলআবি ভাইয়ার এসব নিয়ে কোন ভাবান্তর নেই। সে সোফায় বসে আরাম করে মোবাইলে কিছু একটা করছে। এরই মাঝে দ্বিতীয়বারের মতো কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখি বাবা এসেছে। আলআবি ভাইয়া বাবাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে পরল। সালাম দিয়ে বললেন,,,
–আঙ্কেল ভালো আছেন?
বাবা হাসিমুখে উত্তর দিল,,,
–আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি। তোমার কি খবর?তুমি কেমন আছো?
–জ্বী আঙ্কেল আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি।(আলআবি ভাইয়া)
–তো তুমি এতদিন পরে যে বাসায় আসলে? এর মাঝে আর আসলেনা কেন?(বাবা)
–আঙ্কেল আসলে অফিস আজকে একটা ইমপোরটেন্ট মিটিং ছিল তো তাই নিয়াজের সাথে কিছু ডিসকাস করার ছিল। এজন্য আজ আমরা প্ল্যান করেছি একসাথে অফিসে যাব। রাস্তায় ডিসকাস করতে করতে যেতে পারবো।(আলআবি ভাইয়া)
আলআবি ভাইয়া যতক্ষণ বাবার সাথে কথা বলেছি ততক্ষণ নিয়াজ ভাইয়া সোফায় গোমরা মুখ করে বসে ছিল। তারা দুজন অফিসে চলে গেলে আমি আর সাদু ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পড়ি। ভার্সিটিতেও আমি আমার সাদু আজকের সকালের এই পুরো ঘটনা নিয়ে সারাক্ষণ ঝগড়া করি। দিনে মানুষের তিনবেলা খাবার যেমন প্রয়োজন আমাদের তিন বেলা ঝগড়া প্রয়োজন। ভার্সিটিতে ক্লাস করে বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমিয়ে থাকি।
মাগরিবের নামাজের পর নুডুলস রান্না করে বাবাকে দিয়ে এসে আমি আমারটা আমার রুমে বসে খাচ্ছিলাম। এমন সময় ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। খেতে খেতেই ফোনটা হাতে নিলাম মেসেজ দেখার জন্য।
” আমার বর্ষণ সঙ্গিনী,
তুমি কি এখনো ছোট আছো বলো। এইসব কি ভাইয়াকে বলতে হয়? তুমি যতই ভাইয়াকে নালিশ করো তুমি তো আমার সারা জীবনের #বর্ষণ_সঙ্গিনী হয়েই থাকবে। আর আজকে সকালের কাজটা কিন্তু তুমি মোটেও ভালো করনি ।ওখানে আলআবি ছিল বলেই তুমি বেঁচে গিয়েছ।
তোমার বর্ষণ সঙ্গী ”
চলবে………..