বর্ষণ সঙ্গিনী পর্ব-০৮

0
1814

#বর্ষণ_সঙ্গিনী
#হুমাশা_এহতেশাম
#পর্ব_০৮

–এই মেয়ে! বুদ্ধিশুদ্ধির ছিটেফোঁটাও নেই? মাথায় কি নিয়ে চলো?

কিছুক্ষন আগে,,,

অনেক সময় নিয়ে ধীরে ধীরে মই বেয়ে উঠে ছাদে উঠলাম।আমাদের ছাদের সিঁড়ি হলো করিডরের শেষ মাথায়। আমরা দুজন গিয়ে নানুর ড্রয়ার থেকে তাসিফা আপুর রিংটা নিয়ে আবারও ছাদে আসি।আগের মতো করেই আলআবি ভাইয়া আগে অর্ধেক মই পর্যন্ত নামেন তারপর তার হাত ধরে আমি নামতে থাকি।যখন আমার নামতে আর তিন ধাপ বাকি তখন আলআবি ভাইয়া খালি পায়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে ছিল। তাড়াতাড়ি নামতে পারবো ভেবে মইয়ের তিন ধাপ থেকেই দেই জোড়ে এক লাফ।আমার অতিরিক্ত পাকনামির কারণে আমার পা গিয়ে পরে আলআবি ভাইয়ার পায়ের বৃদ্ধা আঙুলের উপর।

আমার এমন বুদ্ধিমানের মতো কাজের জন্যই বর্তমানে আমাকে পুরষ্কার দেওয়া হচ্ছে।ইশ! বেচারা আসলেই ব্যাথা পেয়েছে।নিজের কাছেই এখন গিল্টি ফিল হচ্ছে। আমি মাথা নিচু করেই বললাম,,,

–সরি ভাই! আমি বুঝতে পারিনি! আই এম রিয়েলি সরি!

তার মুখের ভাব ভঙ্গি দেখেই যে কেউ বলবে সে ব্যথা পেয়েছে একটু আগে।আমিও ঠিকই নিজের করা বোকামি তে উপলব্ধি করতে পারছি লোকটা আসলেই ব্যথা পেয়েছে। তিনি আমাকে আর কিছু বললেন না।

বাড়ির মূল দরজার সামনে তিন ধাপের সিঁড়ি দেওয়া রয়েছে। সেখানে আলআবি ভাইয়া বসে তার জুতোর ফিতা বাঁধতে লাগলেন। ফিতা বাধা শেষ হলে আমার দিকে একবার তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হন হন করে বাইকের দিকে ছুটে চললেন। আমিও তাকে অনুসরণ করে পিছু পিছু গিয়ে বাইকে উঠে বসলাম। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল আলআবি ভাইয়া বাইকের স্পিড কমিয়ে চালায়। এতটা স্পিড কমে চালাতে আমি কাউকে দেখিনি। কেবলমাত্র আংটি নিতে আসার সময় একটু দ্রুত চালিয়েছিল

তাসিফা আপুদের বাড়িতে গিয়েও আরেক দফা কথা শুনতে হয়েছে ভাইয়ার কাছে। তাসিফা আপুদের বাড়ি থেকে আমাদের ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ৮ টার মত বেজে গেল। ভাইয়ার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে আরো একমাস পরে। ভাইয়া নিজ ইচ্ছাতে একমাস পরে তারিখ দিতে বলেছে। তাসিফা আপুর বর্তমানে ভার্সিটিতে পরীক্ষা চলছে।পরীক্ষার মাঝখানে তো আর বিয়ে দেয়া যায় না। তাই অনেক দিনের একটা গ্যাপ নিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ক্লান্ত না হলেও সবাই কিছুটা তো ক্লান্ত ছিল। ক্লান্তি বোধ থেকেই অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে গেলাম।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে সুবহা আর জুনায়েদের সাথে বাড়ির পিছনে এসেছি।আমার নানাভাই নিজ হাতে অনেক রকমের গাছ লাগিয়েছেন বাড়ির পিছনে। এখানে অনেক বড় বড় আম গাছও আছে। গাছের নিচে দাঁড়িয়েই দেখা যাচ্ছে গাছে ছোট বড়, মাঝারি ধরনের আম ঝুলে আছে। আমরা তিনজন যখন এখানে হাটাহাটি করছিলাম তখন সুবহা বলে উঠলো,,,

— আপু জানো আমি কিন্তু গাছে উঠতে পারি।

তখন জুনায়েদ বলে উঠলো,,,

–এখানে সবচেয়ে বড় আম গাছে আমি উঠতে পারি।

আমি একটু ভাব নিয়ে ওদের সামনে বলে উঠলাম,,,

–ঘোড়ার ডিম পাড়ছ।তোদের দুজনের থেকে আমি লম্বা বেশি। তার মানে কি হলো? আমি সবচেয়ে উঁচু ডালে উঠতে পারি।

আন্ডা বাচ্চার সামনে ভাব না নিলে হয় নাকি?
জুনায়েদ তখন বাহানা ধরল আমাকে সব চেয়ে উঁচু ডালে উঠতেই হবে। আমাদের তিনজনের কথার মাঝেই কারো অট্টহাসির আওয়াজে পিছে ঘুরে দাঁড়ালাম।দেখি আলাআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া দুজনের দাঁড়িয়ে হু হা করে হাসছে। তাদের হাসির ধরন দেখে মনে হচ্ছে গিনেস বুকে রেকর্ড করে ছাড়বে আজকে। সজল ভাইয়া হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,,,

–তুই ওদের থেকে লম্বা বলে যদি সবচেয়ে উঁচু ডালে উঠতে পারিস তাহলে আমরা দুজন কোথায় উঠবো?

বলেই আবার তিনি আবার অট্টহাসিতে মেতে উঠলেন। তখন আলআবি ভাইয়া কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে উঠলেন,,,

–সিরিয়াসলি!!! চাপা মারারও একটা বয়স লাগে। তোমার তো সেই বয়সও হয়নি এখনো। কালকেই আমার দেখা হয়ে গিয়েছে তুমি কত উপরে উঠতে পারো।

তার এমন কথায় রাগ করবো নাকি অপমানিত বোধ করব বুঝতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে এখন রাগটাই বেশি করা উচিত। উনি তো আমাকে ডিরেক্টলিই অপমান করছেন। রাগে কটমট করে আমি বলে উঠলাম,,,

–আপনি এতই যখন উপরে উঠতে পারেন, তাহলে যান আকাশে উঠে বসে থাকুন। যত্তসব!!!

কথাগুলো বলে আমি দ্রুত পায় তাদের দুজনকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লাম।

গ্রামের বাড়ি ভালই আনন্দ করে কাটিয়ে আসলাম আমরা।তবে আলআবি ভাইয়ার একটা জিনিস খুব ভালোভাবে খেয়াল করতে পেরেছে। তা হল এই দুইদিনে উনি নিজে থেকে আমার সাথে শুধু ঝগড়া বাধিয়ে দিত।আমাকে পিন্চ করতো। দুই দিনে আমরা অনেকটা ফ্রি ও হয়ে গিয়েছে।দুই দিনে যে কীভাবে কীভাবে আমরা একজন আরেকজনের সাথে খুব ফ্রী ভাবে কথাও বলেছি তা আমাদেরও জানা নেই।

গ্রাম থেকে আমরা এসেছি প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহর মতো হয়ে গিয়েছে।আজ আমরা তাসফি আপুর জন্য বিয়ের শপিং করতে যাবো। বড়রাই আমাদের বলেছে নিজেদের ইচ্ছামত কেনাকাটা করতে। তাদের পছন্দ আর আমাদের পছন্দ নাকি এক হবে না। আমি, নিয়াজ ভাইয়া, তাসফি আপু, আলআবি ভাইয়া আর সজল ভাইয়া যাচ্ছি শপিংয়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে তাসফি আপু যে আমাদের সাথে যাবে তা আমরা ছাড়া আর কেউ যানে না। তাসিফা আপুদের বাড়ির কেউ জানেনা। আমাদের বাড়িতেও কেউ জানে না। সবাই জানে তাসিফা আপু এখন নিজের হোস্টেলে পরীক্ষার জন্য মনের সুখে প্রিপারেশন নিচ্ছে। আমি আর ভাইয়া বাসা থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে এসে মেইন রাস্তায় দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আলআবি ভাইয়া আসলো। আমরা সবাই একসাথে শপিং মলের সামনে এসে একত্রিত হলাম। সাদু কে আসতে বলেছিলাম। ওর নাকি আবার কোন আত্মীয়র বেবি হয়েছে তাই বলে দিয়েছে আসবেনা।

প্রথমেই হলুদের অনুষ্ঠানের জন্যে একটা শাড়ির দোকানে ঢুকলাম। এখান থেকে হলুদের শাড়ি কিনে অন্য দোকানে গিয়ে বিয়ের শাড়ি দেখা শুরু করলাম শপিংমলে এসে মনে মনে খুব খুশি লাগছে। তার একটাই কারণ, ফ্রিতে আলআবি নামের একজন বডিগার্ড পেয়ে গিয়েছি। তার কানে সবসময় সালমান খানের বডিগার্ড মুভির মত ব্লুটুথ থাকে।এতক্ষণে বোঝা হয়েগিয়েছে আলআবি ভাইয়া গম্ভীর হলেও মিশুক টাইপের। ভাইয়া বলেছিলো সে নাকি কথা কম বলে। কিন্তু কথা কম বলেও সে সবার সাথে মিশতে পারে।

হঠাৎ করে আলআবি ভাইয়া বলে উঠলো তার নাকি ক্ষুধা পেয়েছে। আমার আবার ভালো গুণ হচ্ছে মানুষের ক্ষুধা পেয়েছে শুনলে নিজের পেটের ক্ষুধা লেগে যায়। কখনো আমি খাবার দেখলে আর না করতে পারি না। লজ্জা লাগে না করতে।

আমি আর আলআবি ভাইয়া একেবারে নিচে চলে আসি এখানে নিচে এক সাইডে ফুডকোর্টের ব্যবস্থা আছে। এই শপিং মলের নিচ তলায় অনেক মানুষের আনাগোনা। আলআবি ভাইয়া একেবারে একটা কর্নার সাইটের টেবিলে আমাকে বসিয়ে রেখে খাবার অর্ডার করতে গেলেন। বসেছিলাম তখন সাদু হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেয়ে বাবুর ছবি পাঠাল। দেখেই মনে হচ্ছে এক থেকে দুই দিনের নবজাতক শিশুর ছবি।বুঝতে পারলাম এটা ওর আত্মীয়র সেই বেবি। বসে বসে বাবুটার ছবি দেখছিলাম। মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে! হঠাৎ করেই এক পরিচিত কন্ঠ কানে ভেসে আসতে আমার আত্মা কেঁপে উঠল

–জুইঁফুল!মানুষের টা আর কতো দেখবে?কয়দিন পর আমাদের বেবির টাই দেখ।

চলবে………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে