বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ৫৬

0
2847

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ৫৬
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
কবির শেখ হকচকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

— ” এসবের মানে কী হ্যাঁ?”

আদ্রিয়ানও মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

— ” সে কী মামা? আপনি ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েও চেকমেট মানে জানেননা? কাম অন। তবুও যখন আপনি বুঝতে পারছেন না তখন বলেই দিচ্ছি। চেকমেট মানে হলো আপনার খেলা শেষ আর সাথে আপনার সমস্ত প্লান ও শেষ।

আদ্রিয়ানের কথা শুনে কবির শেখ বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন যে ওনার বিরুদ্ধে কোনো না কোনো প্রুভ আদ্রিয়ান পুলিশের কাছে দিয়েছে তাইতো পুলিশ ওনাকে ঘিরে ধরেছেন। এসব ভেবে উনি রেগে আদ্রিয়ানের একদম কাছে গিয়ে ধীর কন্ঠে আস্তে আস্তে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান? আমাকে এখনো পর্যন্ত চেনোনা তুমি। এদের আমায় যেতে দিতে বলো। এটা ভুলে যেওনা যে তোমার প্রাণভোমরা টা আমাদের হাতেই আছে। এখানে আমার সাথে কিছু হলে অনিমার সাথে কী হবে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো?”

আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে তাকালো কবির শেখ এর দিকে। হঠাৎ করেই ওখানে রঞ্জিত চৌধুরী এসে বলল,

— ” কী ব্যাপার অফিসার। এখানে এভাবে আসার মানে কী?”

অফিসার একবার কবির শেখ আর একবার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললেন,

— ” মিস্টার চৌধুরী এন্ড মিস্টার শেখ। ইউ বোথ আর আন্ডার অ‍্যারেস্ট।”

কবির শেখ একটু চেচিয়ে বলল,

— ” হোয়াট?”

মিস্টার রঞ্জিত ও অবাক হয়ে গেলেন। অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ওয়েট অফিসার, আপনারা এখানে এসে হুট করে আমাদের হ্যারাস করতে পারেন না। আপনাদের সকলের জব শেষ করে দেবো আমি। আপনারা জানেন না আপনারা কাকে অ‍্যারেস্ট করতে এসছেন?”

অফিসার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” আমাদের কিছু করার নেই স্যার উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে আমাদের অ‍্যারেস্ট করতেই হয়।”

মিস্টার রঞ্জিত একটু ঘাবড়ানো কন্ঠে বলল,

— ” ক্ কী প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?”

আদ্রিয়ান এতোক্ষণ চুপচাপ এনাদের কথা শুনছিলো এবার মুচকি হাসি দিয়ে বলল,

— ” আরে সবকিছুই জানতে পারেন একটুতো অপেক্ষা করুন।”

মিস্টার রঞ্জিত এবার খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলো যে বড়সর কোনো ব্যালান্ডার হয়ে গেছে। পুলিশ এসে ওনাদের ঘিরে ধরার সাহস এমনি এমনি করেনি। তাই এবার মুক্ষম চালটা চালতে হবে। তাই উনি ওনার ফোন থেকে কাউকে মেসেজ করতেই। রিক এলো ভেতরে তবে একা নয় সাথে অনিমাও আছে। রিক অনিমার গলায় ছুড়ি ধরে আছে। রিক অনিমাকে ধরে এনে বলল,

— ” ওদের সবাইকে সরতে বলো আদ্রিয়ান নইলে অনিমার গলা কাটতে আমার দু মিনিট লাগবেনা।”

আদ্রিয়ান একবার রিক আর একবার অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— ” রিক ওকে ছেড়ে দাও।”

রিক একটু হেসে বলল,

— ” ছাড়বোতো। আগে আমার বাবা আর মামাকে যেতে দাও।”

অনিমার মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে। একটু নড়লেই ওর গলা কেটে যাবে। কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী দুজনেই নিজেদের মধ্যে শয়তানী হাসি দিচ্ছেন। আদ্রিয়ান বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

—- ” কী করছো কী? তুমি জানোনা যে ওনারা কেমন? তবুও তুমি..”

রিক আদ্রিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” হ্যাঁ তবুও কারণ ওরা আমার বাবা আর মামা। ওরা যেমনি হোক না কেনো আমি প্রটেক্ট করবোই। কী মামা এন্ড বাবা? এটাই তো ভাবছিলে তোমারা তাইনা?”

এটুকু বলে অনিমার গলা থেকে ছুড়িটা নামিয়ে নিলো। রিক ওনাদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে বলল,

— ” এরকমি মনে হয়েছিলো তোমাদের আমাকে? তাইনা? সারাজীবন তোমারা আমাকে ইউস করে যাবে আর আমি বোকার মতো সবটা মেনে নেবো তাইতো? ”

আদ্রিয়ান বাঁকা হাসলো আর অনিমাও নিজের চোখ মুখে একটা শ্বাস নিলো। কবির শেখ অবাক হয়ে বললেন,

— ” বাবাই কী বলছো কী তুমি? আমা..”

কবির শেখকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে রিক চিৎকার করে বলল,

— ” শাট আপ। জাস্ট শাট আপ। বাবাই বলে ডেকোনা আমায় প্লিজ।”

মিস্টার রঞ্জিত রেগে বললেন,

— ” কী করছো কী তুমি রিক? ভুলে যেওনা যে আমি তোমার বাবা। নিজেরই বাবার সাথে এরকমটা করবে তুমি?”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” খারাপ লাগছে নাকি? আমারও লেগেছিল। এরচেয়েও বেশি খারাপ লেগেছিলো আর কষ্টও লেগেছিলো। বাই দা ওয়ে অফিসার অ‍্যারেস্ট দেম।”

অফিসার এগোতে আসলেই কবির শেখ রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” দাঁড়ান। কীসের জন্যে এরেস্ট করছেন আপনারা আমাদের? আর তার কী প্রমাণ আছে আপনাদের কাছে?”

আদ্রিয়ান যেনো এই প্রশ্নটার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো এতোক্ষণ যাবত। আদ্রিয়ান দরজার দিকে তাকিয়ে কাউকে ইশারা করতেই সাথেসাথে হুরমুর করে অনেক লোক ভেতরে ঢুকে গেলো। প্রত্যেকেই সাংবাদিক। ওনারা এসেই রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখকে ঘিরে ধরে নানারকম প্রশ্ন করতে লাগলেন। একজন সাংবাদিক রঞ্জিত চৌধুরীকে বললেন,

— ” স্যার সবাই আপনাকে এতোদিন একজন সৎ আর ভালো একজন জননেতা হিসেবেই জানতো। অথচ আজ আপনার যেই আসল চেহারা সারা দেশের সামনে এলো এটা নিয়ে আপনার কী মতামত?”

আরেকজন কবির শেখ কে উদ্দেশ্যে করে বললেন,

— ” স্যার আপনার স্মাগলিং এর বিজনেস সম্পর্কে আমরা যেটুকু তথ্য পেয়েছি তা কতোটা সত্যি?”

অন্য একজন বললেন,

—- ” আমরা এতোক্ষণ লাইভ যেই জিনিগুলো এবং কবিল শেখ এর স্বীকারোক্তি দেখলাম তারপর কী হাসান কোতয়াল এর মার্ডার নিয়ে আপনাদের কিছু বলার আছে?”

কবির শেখ আর মিস্টার রঞ্জিত কী বলবেন ওনারাতো হতভম্ব হয়ে বসে ভাবছেন যে ওনাদের সাথে ঠিক কী হচ্ছে। এরমধ্যে আদিব আশিস, অরুমিতা, তীব্র, স্নেহা, স্নিগ্ধা ওরা সবাই চলে এলো। আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে ওনাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

— ” কী কিছুই বুঝতে পারছেন না তাইতো?”

রিক ও একটু হেসে বলল,

— ” না বোঝারই কথা চলো ওনাদের একটু শুরু থেকেই এক্সপ্লেইন করা যাক। নইলে জেলে গিয়েও শান্তি পাবেনা বেচারারা রা।”

একটু থেকে রিক একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে প্রেসের লোকেদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনারাও সব ভালোকরে রেকর্ড করুন কারণ সব তো আপনাদেরও জানা উচিত তাইনা? সবটা রেকর্ড করুন।”

— “এটাই ভাবছো তো যে যেই ছেলেটা তোমাদের কথায় উঠতো বসতো তোমারা যা বোঝাতে তাই বুঝতো তাহলে হঠাৎ আজ কী হলো যে পাল্টি মেরে পুরো পুলিশের হাতে তুলে দিলো? তোমাদের আসল রুপটা তো আমি সুইডেনেই দেখে নিয়েছিলাম। মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর পথের কাটা যদি তার নিজের ছেলে হয় তাহলে সেই কাটা উপড়ে ফেলতেও সে দুবার ভাব্বেনা তাইনা ড্যাড? ”

মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী অবাক হয়ে গেলেন। রিক একটা হাসি দিয়ে বলল,

— ” কী ভাবছো? আমি কীকরে জানলাম তাইতো? কারণ তোমারা যখন এসব কথা বলছিলে তখন আমি সুইডেনে বসে সেটার লাইভ শো দেখছিলাম। আর সেই কথা শুনে আমার প্রাণপ্রিয় মামার মুখের হাসিটাও দেখেছিলাম। এন্ড অল থ্যাংকস টু আদ্রিয়ান। ও না থাকলে আমি জানতেই পারতাম না আমার বাবা আর মামা আমায় এতোটা ভালোবাসে।”

আদ্রিয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো আর সেদিনের কথা ভাবতে লাগল

____________________

আদ্রিয়ান ল্যাপটপ টা বের করে খুলে একটা সিডি ইনপুট করে ওটা চালু করে রিকের সামনে ধরলো। এতে রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ বলা কথাগুলো দেখালো। রিক কিছু না বলে দুহাতে মুখ চেপে ধরল। আদ্রিয়ানও কিছু না বলে চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পর দেখলো রিক হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে। আদ্রিয়ান রিকের কাধে হাত রেখে বলল,

— ” নিজেকে শক্ত করো। আমি জানি তোমার ভেতর দিয়ে কী যাচ্ছে বাট এটা ভেঙ্গে পরার সময় নয়।”

রিক একটা লম্বা শ্বাস টেনে সোজা হয়ে বসে বলল,

— ” আমায় কী করতে হবে?”

আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

— ” একটু নাটক।”

রিক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

— ” মানে?”

আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” দেখো আমাদের কাছে যেটুকু প্রমাণ আছে তা যথেষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হবে ওনাদের মুখের স্বীকারক্তি। আর সেটা তোমাকেই করাতে হবে।”

রিক ও উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” প্লানটা কী?”

— ” তোমাকে ওনাদের সামনে এমন বিহেভ করতে হবে যে তুমি ওনাদের সাথেই আছো। আর কথায় কথায় নিজেদের দোষ ওনারা স্বীকার করবেই আর তোমাকেও সেই কথাটাই রেকর্ড করতে হবে প্রমাণ হিসেবে। আর বাকিটা আমি বলে দেবো।”

রিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

— ” আমাকে একটু ভাবতে দাও।”

বলে বেডে বসে দুহাতে আবার মুখ চেপে ধরল। আদ্রিয়ানও ওর পাশে বসে বলল,

— ” ওকে টেইক ইউর টাইম।”

_________________________

কবির শেখ আর মিস্টার রঞ্জিত তো অবাকের শেষ পর্যায়। আদ্রিয়ান বলল,

—- ” এরপরের দিনই রিক আমার কাছে এসে বলল যে ও রাজি এসব করতে কারণ যতই আপন হোক না কেনো এরকম মানুষদের শাস্তি পাওয়টা খুব জরুরী। আর এরপরে যা হয়েছে তা আপনাদের প্লান অনুযায়ী নয় আমাদের প্লান অনুযায়ী হয়েছে। আপনারা আমাদের নাচাচ্ছিলেন না বরং আমরা আপনাদের নাচাচ্ছিলাম। ”

কবির শেখ অবাক হয়ে বললেন,

— ” তারমানে সুইডেন থেকে এসে রিক সবকিছুই নাটক করছিলো?”

আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” দাঁড়ান দাঁড়ান। আগেতো কিছু ঝলক আপনাদের দেখিয়ে নেই। লাইক ঝালাক দিক লাজা।”

বলে আদ্রিয়ান একটা অডিও সমস্ত মিডিয়া আর সমস্ত পুলিশ দের সামনে প্লে করলো।

( — ” ও তারমানে জার্নালিস্ট মিতাকে তোমরাই খুন করেছো?”

— ” আরে হ্যাঁ। ঐ মেয়েটা আমাদের গোডাউনের স্মাগলিং এর ছবি তুলেছিলো কাউকে যাতে দিতে না পারে সেইজন্যেই তো ওখান থেকে পালানোর আগেই আমাদের লোক দিয়ে খুন করিয়েছিলাম।”

— ” শুনেছিলাম ওনাকে নাকি রেইপ ও করা হয়েছিল।”

— ” হ্যাঁ ঐ জোয়ান ছেলেপেলে তো তাই..”

— ” হুমম। তারমানে সেটাও তোমাদের লোকই করেছে?”

— ” হুমম হঠাৎ এগুলো জ্ঞিজ্ঞেস করছো?”)

অডিও শুনে কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী দুজনেরই ঘাম বেরোতে শুরু করলো। সেটা দেখে রিক হেসে দিয়ে বলল,

— ” এটুকু দেখেই ঘাবড়ালে হবে? ঝটকা খাওয়া এখনো তো অনেক বাকি। আদ্রিয়ান..”

আদ্রিয়ান ইশারা করতেই কিছু লোক আতাউর কে ধরে নিয়ে এলো। আতাউর কে দেখেই চমকে গেলো ওনারা দুজন। আতাউরকে জিজ্ঞাসা করতেই সব সত্যিটা বলে দিলো মিডিয়ার সামনে। রঞ্জিত চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন,

— ” ক্ কিন্তু ওর খবর তোমরা কীকরে…”

রিক বাঁকা হেসে বলল,

— ” মনে আছে ড্যাড আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কে ইনফরমেশন দিতো তোমাদের?”

— ” হ্যাঁ সেটা তো সাবধান করতে তাইনা?”

রিক এবার শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল,

— ” কাম অন ড্যাড? এখনো বোঝোনি? আসলে আমি খবর দিচ্ছিলাম না নিচ্ছিলাম যে এক্সাক্টলি কাজটা কে করেছে।”

ওনারা কিছু ফলফেন সেই ভাষাটাই নেই। সাংবাদিকরা সব কিছুই ভিডিও করছে আর লাইভ দেখানো হচ্ছে সব চ্যানেলে। এবার আদ্রিয়ান মিতার পাঠানো সেই স্মাগলিং এর ছবি আর সেই আর্টিকেলের খন্ডাংশ ও পুলিশের হাতে দিলো। সেটা দেখে কবির শেখ চমকে গিয়ে বললেন,

—- ” এটা কীকরে সম্ভব? এগুলোতো আমরা নিজের হাতেই পুরিয়েছি। রিক তো নিজেই আমাদের হাতে দিয়েছিলো এগুলো।”

আদ্রিয়ান কবির শেখের কথা শুনে একটু হেসে বলল,

— ” আরে মামা এতো ব্যাকডেটেড হলে হবে? কপি আর প্রিন্ট বলেও যে একটা ব্যাপার থাকে সেটা ভুলে যাচ্ছেন?”

বলেই আদ্রিয়ান আর রিক দুজনে হাইভাইব করলো। অনিমা হাত ভাজ করে মিটমিটিয়ে হাসছে। বাকি সকলের মুখেই হাসি। কবির শেখ চোখ বন্ধ করে একটা আপসোস এর শ্বাস নিলেন। রিক এবার একটু সিরিয়াস হয়ে কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” বলেছিলাম না মামা আমি তোমার শিক্ষায় বড় হয়েছি, আর আমার শরীরে কবির শেখ এর রক্ত বইছে? আর সেই কারণেই পেছন থেকে ছুড়ি মারা আর কাছের মানুষদেরকে আঘাত করা দুটোই খুব ভালোভাবে শিখেছি। তাই তো সেটা তোমাদের ওপরেই এপ্লাই করলাম।”

কবির শেখ রেগে বললেন,

— ” বিশ্বাসঘাতক একটা।”

রিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

— ” ছোটবেলা থেকে নিজের বাবা মার থেকেও বেশি ভালোবাসতাম আমি তোমাকে। তোমার সব কথা শুনতাম। ঠিক ভুল বিচারও করিনি। কিন্তু তোমরা কী করেছো আমাকে শুধু ইউস করেছো নিজেদের স্বার্থে না তুমি কোনোদিন আমাকে ভালোবেসেছো আর না মুল্য দিয়েছো।”

কবির শেখ চোখ সরিয়ে নিলেন। রিক মিস্টার রঞ্জিত এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আর আমার বাবা? তার কথা আর নাই বা বললাম। প্রয়োজনে আমাকে দুনিয়া থেকে সরাতেও তো সে দুবার ভাববে না।”

মিস্টার রঞ্জিত ও কিছু না বলে চুপ করে আছেন, মিডিয়ার সামনে তো আজ ওনার সব শেষ হয়েই গেছে কিছু বলা আর না বলা সমান। আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বলল,

— ” আর হ্যাঁ হাসান আঙ্কেল মানে অনিমার বাবাকে কীভাবে মেরেছেন কেনো মেরেছেন তার স্বীকারোক্তি লাইভ শো পুরো দেশ দেখেছে।”

মিস্টার রঞ্জিত হকচকিয়ে বললেন,

— ” মানে? কীভাবে? কীসব হচ্ছে এখানে?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকাতেই অনিমা ওর লং শার্টের বোতাম থেকে একটা ছোট্ট ক্যামেরা বের করে বলল,

— ” ঠিক এইভাবে।”

মিস্টার রঞ্জিত রাগে দাঁত করমর করে বললেন,

— ” তারমানে তখন তোমার ভয় পাওয়া কান্না করা পুরোটাই নাটক ছিলো?”

অনিমা একটু হেসে বলল,

— ” কেনো? আপনি করেন নি নাটক সাত বছর আগে? পুলিশ মিডিয়ার সামনে? আমিতো জাস্ট নাটকটা ফেরত দিলাম মাত্র।”

আদ্রিয়ান এবার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” তবে আপনি আপনার যেই শালক মহাশয়ের ওপর এতো ভরসা করেন। সেই আপনার পিঠে ছুড়ি মারার অপেক্ষায় ছিলো সেটাকি জানেন?”

কবির শেখ হকচকিয়ে গেলেন। মিস্টার রঞ্জিত অবাক হয়ে বললেন,

— ” মানে?”

আদ্রিয়ান কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওনার প্লান ছিলো আপনারি হাতে আপনার ছেলেকে মারিয়ে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে পার্টিতে আর আপনার সম্পত্তিতে দখল নেওয়া। এন্ড আমি মিথ্যে বলছিনা। জিজ্রঝেস করুন।”

কবির শেখ চেচিয়ে বললেন,

— হ্যাঁ হ্যাঁ আমি এটাই চেয়েছিলাম আমার এতোদিনের পরিশ্রমের একটাই উদ্দেশ্য ছিলো এই সব সম্পত্তি আর পার্টিতে নিজের অধিকার করা কিন্তু সব ভেস্তে গেলো। তবে ছাড়বোনা কাউকে কিছুতেই না। আমার দুই ভাগ্নে মিলেই আমায় শেষ করলো তো? আজ আমি ওদেরই শেষ করবো।”

দুই ভাগ্নে শুনে রিক বেশ অবাক হলো। কবির শেখ চেঁচিয়ে বললেন,

— ” ওর জন্যেই সব শুরু হয়েছে আগে ওকেই শেষ করবো।”

বলে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে বন্দুক বের করে আদ্রিয়ান এর দিকে শুট করলো। মুহুর্তেই পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটলো যে কেউ কিছু বুঝেই উঠতে পারলো না। কিন্তু গুলিটা আদ্রিয়ানের গায়ে লাগেনি লেগেছে অনিমার গায়ে। কারণ অনিমা সাথে সাথেই আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গেছিলো আদ্রিয়ান বেঁচে গেলেও ওর গায়ে গুলি লেগে যায়। কবির শেখ আবার শুট করার আগেই রিক ওনার হাতে শুট করে দেয় আর বন্দুকটা পরে যায়। ওর ইচ্ছে করছিলো মাথায় করতে কিন্তু এত সহজ মৃত্যু ওনার পাওনা নয়। এরকম কিছু হবে উপস্হিত কেউ ভাবতেই পারেনি। অনিমা ঢলে পরতেই আদ্রিয়ান ওকে ধরে বসে পরলো। আদ্রিয়ান কিছু বলবে সেই শক্তিও পাচ্ছেনা হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে অনিমা কিছু বলতে চেয়েও পারলোনা শুধু চোখ দিয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পরল আর আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলল।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে