বর্ষণের সেই রাতে ❤ পর্ব- ১৮

0
3053

বর্ষণের সেই রাতে ❤
পর্ব- ১৮
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
অনিমার কাশি থামার নামই নিচ্ছেনা সেটা দেখে আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে বলল
— ” আরে আরে এবার থামো, নাহলে পাবলিক তোমাকে যক্ষা রোগী ভাববে।”
আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমার কাশি আটোম্যাটিক্যালি থেমে গেলো। কাশি থামিয়ে একদম চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে নখ দেখতে লাগল। সত্যিই জীবণে ও কারো কাছে এতোটা লজ্জা পায়নি যতটা এই ছেলেটার কাছে পেয়েছে, ছেলেটা সবসময় ওকে এতো লজ্জায় কেনো ফেলে? কী শান্তি পায় এরকম করে? সেটাই বুঝতে পারেনা ও। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো যে অনিমা লজ্জা পাচ্ছে তাই মুচকি হেসে বলল
— ” থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা। আসছো তো?”
অনিমা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল
— ” হ্যা আসবো তো।”
— “আমায় একটু আগে যেতে হবে তাই আমি তোমাকে পিক করতে আসতে পারবোনা। আমি তীব্রকে এড্রেস মেসেজ করে দিয়েছি ও তোমার ফ্লাটের সামনে থেকে তোমাকে পিক করে নেবে। এনি প্রবলেম?”
— ” না চলবে।”
— ” তো বিকেলে দেখা হচ্ছে।”
— ” হুম।”
— ” ওকে বাই ”
— ” বাই”
ফোনটা রাখতেই মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো অনিমার। তারপর মনে পরলো তীব্রর আর স্নেহার ব্যাপারটা। নাহ এই দুটোর কিছু করতে, এদের মান অভিমানের পালা এবার শেষ হওয়া উচিত। ফোনবুকে অনেকক্ষণ খুজে স্নেহার নাম্বারটা পেলো, অনেকদিন কথা হয়না মেয়েটার সাথে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই স্ক্রিণে তাকিয়ে অনি নামটা দেখেই স্নেহা ফোনটা তুলে জিবে কামড় দিলো, তীব্র কথা না বলায় মনটা এতোটাই খারাপ ছিলো যে মেয়েটার কথা ভূলেই গেছিলো ও। তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে বলল
— “হ্যালো এতোক্ষণে ফোন করলি?”
— “তুই কোনসা এসেই দশবার ফোন করে ফেলেছিস?”
অনিমার এই কথার কোনো উত্তর পেলো স্নেহা, হঠাৎ যে অনিমা এভাবে বলে ফেলবে ও ভাবেই নি। স্নেহাকে চুপ থাকতে দেখে অনিমা বলল
— ” তো মিস লাইলি, মজনুর সাথে মান অভিমান এখোনো শেষ হয়নি তাইনা?”
স্নেহা মন খারাপ করে বলল
— “তোর বন্ধুতো কথাই বললোনা আমার সাথে।”
এটা শুনে অনিমা হেসে বললো আরে
— ” নো চাপ আমি আছিতো, কেস পুরো সালটে দেবো।”
স্নেহা তো বড়সর ঝটকা খেলো অনি এভাবে কথা বলছে? তবুও নিজেকে সামলে বলল
— ” কী করবি?”
— শোন তুই আমার ফ্লাটে চলে আয় বিকেলে একটা জায়গায় যাবো।”
— ” কোথায়?”
— ” আয় তারপর সব বলছি।”
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

বিকেলে অনিমা খাটে পা ঝুলিয়ে আর স্নেহা আসাম করে অনিমার ফ্লাটে বসে আছে। স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা স্নেহাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচালো, স্নেহা তাড়তাড়ি নিজেকে সামলে বলল
— ” এডি তোর সাথে এসব করেছে? আর ও তোর এতো ভালো বন্ধু হয়ে গেছে?”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে কোমরে হাত দিয়ে বলল
— ” আমি কোথায় তোদের লাইলি মাজনুকে কীকরে মেলাবো সেই টেনশনে আছি আর তুই এসব ফাউল চিন্তা করছিস।”
স্নেহা মাথাটা একটু চুলকে বলল
— ” আসলে অনেক বড় ফ্যান তো তাই।”
— ” চুপ কর তো ভাবতে দে, তুই কিন্তু যাচ্ছিস আমাদের সাথে।”
স্নেহা চিন্তিত মুখ করে বলল
— ” তীব্র যদি আমাকে দেখে যেতে না চায়?”
অনিমা এস ইউসয়াল দাত দিয়ে নখ কাটছিলো। স্নেহার কথা শুনে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— ” ঐ তোর মুখ দিয়ে কী ভালো কথা বের হয়না? বি পসিটিভ ইয়ার এমন কিচ্ছু হবেনা।”
সেন্হা আরো একবার অবাক হলো অনিমার পসিটিভিটি দেখে। ও তো এমন ছিলোনা? এমন পসিটিভ ভাবনা ওর মধ্যে কীকরে এলো? একটু পরেই তীব্র মেসেজ করলো যে ও এসে গেছে। অনিমা স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলল
— “তোমার মজনু এসে গেছে। চলো।”
স্নেহা অসহায়ভাবে তাকালো অনিমার দিকে। অনিমা বুঝতে পেরে ওর হাত ধরে বলল
— ” আরে টেনশন নট চল।”
এরপর দুজনেই নিচে নেমে গেলো, তীব্র গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর ওদের দেখে অরুমিতা ফ্রন্ট সিট থেকে নেমে পেছনে চলে গেলো। অনিমার সাথে স্নেহাকে দেখেই তীব্রর ভ্রু কুচকে গেলো, বিরক্তিকর কন্ঠে বলল
— ” ও এখানে কী করছে?”
স্নেহা মাথা নিচু করে আছে, অনিমা তীব্রর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলল
— “ওও যাচ্ছে আমাদের সাথে।”
তীব্র কিছু বলবে তার আগেই অনিমা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
— ” দেখ তোরা যদি ভেবে থাকিস যে দুজন মুখ গোমড়া করে দুদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকবি, আর আমি ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘জান নিসার’ গান বাজাবো দেন ইউ গাইস আর রং। এতো সময় নেই আমার হাতে চুপচাপ চল নইলে আমি একদম ভেতরে গিয়ে গিয়ে দরজা লক করে রাখব কিন্তু, সেটা ভালো হবে?”
তীব্র আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো। অনিমা স্নেহাকে চোখ মেরে সামনের সিটে বসতে বলল, স্নেহা অবাক হয়ে এই অনিমার সাথে দেড় বছর আগের অনিমাকে মেলানোর চেষ্টায় আছে, মেয়েটা এতোটা বদলে গেলো? কোথায় সেই শান্ত নম্র মেয়েটা? অনিমা খোচা মারতেই স্নেহা সামনে গিয়ে বসল, তারপর অনিমা ব্যাক সিটে অরুমিতার পাশে বসে ওকে থামবস আপ দেখালো অরুমিতাও মুচকি হাসি দিলো। সারারাস্তা তীব্র স্নেহা দুজনেই চুপ করে ছিলো তবে আড়চোখে দেখেছে দুজন দজনকে।
গাড়িটা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামতেই অনিমারা ভেতরে গিয়ে দেখে আদ্রিয়ান ওরা বসে আছে। ওদের দেখে রাইমা এগিয়ে এলো। অনিমা রাইমাকে টাইট একটা হাগ করে বলল
— ” কনগ্রাচুলেশনস আপু”
— ” থ্যাংক ইউ সোনা।”
এরপর সবাই একে একে আদিব আর রাইমাকে কনগ্রাচুলেট করলো। অনিমা স্নেহার সাথে আদ্রিয়ানের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল
— ” ও স্নেহা আমার আরেক বুন্ধু।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— “হাই স্নেহা।”
স্নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, অনিমা স্নেহাকে খোচা মারতেই ওর হুস এলো ওর, হকচকিয়ে বলল
— ” হ্যালো স্যার আই এম ইউর বিগেস্ট ফ্যান। দেড় বছর বিদেশে বসেও আপনার গান শুনেছি। আপনাকে কখোনো সামনাসামনি দেখবো ভাবতেও পারিনি।”
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
—- ” আচ্ছা হয়েছে আগে একটু শ্বাস নিয়ে নাও।”
অনিমা চোখ গরম করে তাকালো স্নেহার দিকে স্নেহাও বুঝতে পারল যে এক্সাইটমেন্টে বেশিই বকে ফেলেছে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” তুমি অনি, অরুমিতা আর তীব্রর ফ্রেন্ড, মানে আমাদেরও তাই স্যার না ডেকে আদ্রিয়ান বা আদ্রিয়ান ভাইয়া বলে ডেকো।”
স্নেহা হেসে মাথা নাড়লো। সবাই মিলে হৈচৈ করে খাওয়া দাওয়া করে, বাইরে যে যার মতো আলাদা আলদা কথা বলছে, এক জায়গাতেই তবে একটু দূরে দূরে। আদ্রিয়ান আর অনিমা একটা সিড়ির ওপর বসে কথা বলছে। কথার মাঝে অনিমা এক্সাইটেড হয়ে বলল
— ” আমিতো ভাবতেই পারছিনা রাইমা আপু মা হবে, একটা ছোট্ট বেবি আসবে, ছোট ছোট হাত পা নিয়ে খেলবে, খিলখিলিয়ে হাসবে। ওয়াও।”
অাদ্রিয়ান গালে হাত রেখে বলল
— ” এমনভাবে বলছো যেনো তোমার নিজেরই বেবি আসছে।”
অনিমা হেসে দিয়ে বলল
— ” আসলে তো খুব ভালো হতো কিন্তু বিয়েটাই তো হলোনা।”
আদ্রিয়ান এবার অনিমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলল
— ” নিজেই বাচ্চা সে আবার বাচ্চার মা হবে।”
অনিমা মুখ ফুলিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— “আমি বাচ্চা? আপনি জানেন ঠিক সময় বিয়ে হলে আমার এখন হাফ ডজন বাচ্চা থাকতো?”
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকালো অনিমার দিকে, এই মেয়ে নিজেই লাগাম ছাড়া কথা বলে পরে নিজেই পরে লজ্জায় কুকড়ে যায়, হলোও তাই একটু পরেই অনিমা ব্যাপরটা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান বিড়বিড় করে বলল
— “আগে বিয়েটা হোক তারপর দেখবো কয়বছরে হাফ ডজন দিতে পারো।”
অনিমা ভ্রু কুচকে বলল
— ” কিছু বললেন?”
আদ্রিয়ান একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল
— ” নাহ। বাই দা ওয়ে এই তীব্র আর স্নেহা মধ্যে কী হয়েছে? দুজনেই মুখটা গোমড়া করে রেখেছে সেই এসে থেকে কেসটা কী?”
অনিমা তীব্র আর স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কেস জন্ডিস।”
— ” মানে।”
— ” অনেক ঘটনা বলবো পরে একদিন।”
এদিকে স্নেহা অরু একসাথে বসে কথা বলছে। হঠাৎ স্নেহা অরুকে বলল
— ” এডি আর অনির মধ্যে কিছু চলছে?”
— ” চলছে তো অনেককিছুই কিন্তু ওদের দুজনে কেউ কাউকে সরাসরি কিছুই বলেনি।”
স্নেহা অনিমা আর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কিন্তু অনির এতো পরিবর্তন কীভাবে? মানে দেড় বছর আগেতো অনিমা ঠিকমতো হাসতোও না আর এখন?”
অরু হেসে বলল
— “এক ম্যাজিশিয়ান এসে ওর জীবণে ম্যাজিক করে দিয়েছে।”
স্নেহা বুঝতে না পেরে বলল
— ” মানে?”
— ” সবেতো এলি কদিন থাক বুঝতে পারবি।”
স্নেহা ভাবছে কে এই ম্যাজিশিয়ান? আর কী এমন ম্যাজিক করেছে? যে এতো ভীতু নরম মেয়েটা এতোটা চঞল আর দুষ্ট হয়ে গেলো?
____________

আজকে রাতেও অনিমা ল্যাপটপে রঞ্জিত চৌধুরীর এগেইনস্টে আরো সামন্য কিছু প্রুভ এড করে, যেই বিছানায় শুতে যাবে ঠিক তখনি টুং করে ওর ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। হাতে নিয়ে দেখে আদ্রিয়ানের মেসেজ। মেসেজটা ওপেন করে দেখলো ওখানে লেখা আছে, “যেভাবে আছো ওভাবেই নিচে চলে এসো ফাস্ট। এন্ড ইয়েস কোনো প্রশ্ন করবে না।” অনিমা একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলল এই ছেলের আবার কী হলো? অনিমা একটা এস কালার হাফ হাতা টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স পরে আছে আছে তাও টাকনুর অনেক ওপরে ফোল্ড করা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বিশ। এতোরাতে নিচে যাবে? কী আর করার কথা না শুনলে যে ঘরে এসে তুলে নিয়ে যাবে সেটাতো সিউর। তাই শুধু ফোনটা হাতে নিয়ে ফ্লাটে তালা দিয়ে নিচে গেলো। কিন্তু নিচে কাউকে দেখতে না পেয়ে বেশ ঘাবড়ে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে আদ্রিয়ান ফোন করবে তার আগেই কেউ ওর মুখ চেপে ধরল পেছন থেকে, ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর চোখ বেধে দিলো। মুখ চেপে ধরে আছে তাই কিছু বলতেও পারছেনা। লোকটা অনিমা পেট জরিয়ে নিজের পিঠের সাথে ঠেকিয়ে বলল
— “হুসসস, ডোন্ট শাউট।”
অনিমা ওর ছটফটানি থামিয়ে দিলো, কারণ কন্ঠটা চিনতে ওর একটুও দেরী হয়নি, এটা আদ্রিয়ান। অনিমা বলল
— ” কী হচ্ছে চোখ বেধেছেন কেনো?”
আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল
— ” সারপ্রাইজ। আর একটা কথাও বলবেনা এখন আর বললেও এনসার দেবো না। সো কিপ কোয়াইট। ”
এটুকু বলেই অনিমার হাতও পেছনে নিয়ে বেধে অনিমাকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। অনিমা কিছুই বুঝছেনা, এভাবে বেধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? রাস্তায় অনেকবার অনি জিজ্ঞেস করেছে কী করছে? কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? কিন্তু কোনো জবাব দেয়নি আদ্রিয়ান। একটা অনাথ আশ্রমের সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো। অাদ্রিয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তারপর কাউকে ফোন করে বলল
— “সব রেডি?”
ওপাশ থেকে কেউ কিছু বললো তার উত্তরে আদ্রিয়ান ওকে বলে অনিমাকে নিয়ে ভেতরে গেলো। তারপর ঐ আশ্রমের মাঠের মাঝখানে দাড় করিয়ে। কাউন্ড করা শুরু করলো আদ্রিয়ান আর ওর সাথে তাল মিলিয়ে আশপাশ থেকেও কাউন্টিং এর শব্দ শুনতে পাচ্ছে অনিমা।
— ” টেন, নাইন, এইট, সেভেন, সিক্স, ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান।”
কাউন্ট করতে করতে হাতের বাধন খুলছিলো, আর ওয়ান বলার সাথে সাথেই আদ্রিয়ান অনিমার চোখের বাধনও খুলে দিলো। আর চেচিয়ে সবাই বলে উঠল
— ” হ্যাপি বার্থ ডে।”
অনিমা হা করে সামনে তাকিয়ে আছে, অনেকগুলো বাচ্চা লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে তাদের সবার হাতে একটা করে ওয়ার্ড, মানে ওরা একেকেটা ইংলিশ ওয়ার্ড হাতে নিয়ে দাড়িয়ে হ্যাপি বার্থে বানিয়েছে। সবাই স্মাইল ইমুজি মুখোশ পরে আছে। আর আশেপাশে অনেকগুলো বাচ্চা বেলুন নিয়ে দাড়িয়ে আছে, আশ্রমের সঞ্চালকরাও দাড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। সারা মাঠ বেলুন আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো। ওর আজ বার্থডে সেটাতো ওর মনেই ছিলোনা। কীকরে থাকবে? ছয় বছর যাবত তো সেলিব্রেটই হয়না ওর বার্থডে, লাস্ট ওর আব্বুই সেলিব্রেট করেছে ওর বার্থ ডে এরপর কেউ না। যদিও তীব্র অরু অনেকবার জানতে চেয়েছে কিন্তু বলেনি ও।
কিন্তু অনিমার আব্বুই তো ওকে এই আশ্রমে নিয়ে এসে প্রতিবার বার্থডে সেলিব্রেট করতো। অনিমা অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে ঘুরে তাকালো, আদ্রিয়ান মুচকি হেসে একটা ফুল অনিমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
— ” হ্যাপি বার্থডে ম্যাডাম।”
ফুলটা নিয়ে অনিমা অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, সব হুবহু একরকম করে সাজানো, ফুল,বেলুন,মাস্ক সব একরকম। আদ্রিয়ান এসব জানলো কীকরে? এমনিই মিলে গেলো? দুটো মানুষের এতো মিল কীকরে হয়? সবিই কী কাকতালীয় নাকি.. আর কিছু ভাবার আগেই অরু,তীব্র, স্নেহা, আদিব, রাইমা, আশিস সবাই বেড়িয়ে এলো সবাই ওকে উইস করলো। অরুমিতা বললো
— ” শয়তান মেয়ে এডিকে বলতে পারলি আমাদের বলতে পারলিনা তোর বার্থ ডে কবে?”
অনিমা অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে ও ভাবছে ও তো বলেনি আদ্রিয়ানকে ওর বার্থডে তাহলে? অনিমা আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে ওকে কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান ওকে সামনের দিকে তাকাতে ইশারা করল, অনিমা সামনে তাকিয়ে একটা মহিলাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো, মুখে হাসি আর চোখের কোণে পানি চলে এলো ওর, একমুহূর্ত না দাড়িয়ে ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরল ওনাকে। মহিলাটিও হেসে জরিয়ে ধরে বলল
— ” হ্যাপি বার্থডে মাই চাইল্ড।”
— ” কেমন আছো মাদার?”
— ” খুব ভালো তুমি কেমন আছো?”
অনিমা মাদারকে ছেড়ে দিয়ে বলল
— ” ভালো, খুব মিস করি তোমাকে।”
— ” হ্যা তাইতো দেড় বছরেও মনে পরলোনা এই বুড়িকে।”
— ” তুমিতো জানো মাদার আমি কেনো আসতাম না।”
— ” আই নো, নাউ ইনজয় ইউর ডে।”
এরপর আদ্রিয়ান বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতে সব বাচ্চারা একে একে এসে অনিমাকে ফুল আর বেলুন দিয়ে উইস করল আর অনিমাও এক এক করে সব বাচ্চাদের চুমু দিয়ে ওদের থেকে ফুল আর বেলুনস নিলো। এর মধ্যেই সাংবাদিকরাও এসে গেছে কারণ তারা জানতে পেরেছে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কোনো মেয়ে জার্নালিস্টের বার্থডে সেলিব্রেট করছে। আদ্রিয়ান প্রথমে এদের দেখে অবাক হলেও পরে পাত্তা দেয়নি। জার্নালিস্টরা এসে আদ্রিয়ানকে আর অনিমাকে নানারকম প্রশ্ন করতে লাগল, আদ্রিয়ান কেনো অনিমার বার্থডে সেলিব্রেট করছে? ওদের মধ্যে কী সম্পর্ক? ব্লা ব্লা। আদ্রিয়ান অরুমিতাকে ইশারা করলো অনিমাকে নিয়ে যেতে, অরুমিতা নিয়ে গেলো ওকে। তারপর আদ্রিয়ান জার্নালিস্টদের বলল
— ” দেখুন এখন এখানে একজনের বার্থডে সেলিব্রেট হচ্ছে আগে সেটা করি তারপর আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেবো। এক্সকিউস মি।”
বলে আদ্রিয়ান ওখান থেকে সরে অনিমা নিয়ে কেকে এর কাছে গেলো। অনিমা কেক কাটলো, প্রথম বাইট মাদারকে দিতে গেলে মাদার আদ্রিয়ানকে বলল অনিমা তাই করল , চারপাশে একবার তাকিয়ে অনিমা নিঃশব্দে কেদে দিলো। ওর আব্বু চলে যাওয়ার পর কেউ এভাবে ওর জন্মদিন সেলিব্রেট করেনি, খুব মিস করছে ওর আব্বুকে ও। অনিমাকে কাদতে দেখে আদ্রইয়ান এসে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর চোখ মুছে দিলো আর অনিমা নিজেকে আটকাতে না পেরে জরিয়ে ধরল আদ্রিয়ানকে। জার্নালিস্ট রাও প্রতি মুহূর্তের ছবি তুলে নিউস বানিয়ে যাচ্ছে।
স্নেহা এবার বুঝতে পারছে অনিমার বদলে যাওয়ার রহস্য, ও হেসে অরুমিতাকে বলল
— ” তুই ঠিকি বলেছিলি অনিমার জীবণে সত্যিই একজন ম্যাজিশিয়ান এসছে। উনি সত্যিই ম্যাজিক জানে।”
অরুমিতা শুধু মুচকি হাসলো। তীব্র, স্নেহা, অরু, আশিস,আদিব,রাইমা সবাই খুব খুশি কারণ ওদের সবার প্রাণ অনিমা আজ খুব খুশি, আদ্রিয়ানের কথা বিশেষ করে আর বলার দরকার নেই।
অনিমা বাচ্চাদের সাথে দুষ্টুমি করে খেলছে, বেলুন মাস্ক নিয়ে মজা করছে আর আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে সেই দৃশ্য দেখছে এক অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছে ও অনিমাকে এতো খুশি দেখে। হঠাৎ মাদার এসে আদ্রিয়ানের কাধে হাত রাখল, আদ্রিয়ান ঘুরে তাকাতেই বলল
— “গড ব্লেস ইউ মাই চাইল্ড। তুমি জানোনা তুমি কী করেছো। একসময় ওকে দেখে আমিতো ভেবেছিলাম এই মেয়টার জীবণ থেকে সব হাসি হারিয়ে গেছে, সেই দুষ্টুমিষ্টি হাসিখুশি মেয়েটা হারিয়ে গেছে, হয়তো কোনোদিন সেই অনিমাকে ফিরে পাবোনা। বাট আই ওয়াস রং। তুমি পেরেছো ওকে আগের মতো করতে, ওর অন্ধকার জীবণের আলো হতে, ওর রংহীন জীবণের রং হতে, একটা কথাই বলবো, এভাবেই সবসময় আগলে রেখো ওকে, এই অল্প বয়সেই জীবণে চরম সত্যিগুলোর মুখোমুখি হয়েছে ও, অনেক কষ্ট পেয়েছে, অনেক কেদেছে। ওকে আর কষ্ট পেতে দিওনা, সব কষ্ট থেকে দূরে সরিয়ে রেখো, আই নো তুমি পারবে ।”
আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো, তারপর অনিমার দিকে তাকিয়ে ভাবলো পারতেতো আমাকে হবেই মাদার, আই এম কমিটেড টু সামওয়ান, কীকরে ভূলবো সেই ওয়াদা? আর এখন তো আমি ওকে ভালোবাসি নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি।
হঠাৎই জার্নালিস্টরা বলে উঠল
— “স্যার কোনো সেলিব্রেশন হচ্ছে আর আপনার একটা গান হবেনা সেটা হয়? আমরা সবাই আপনার গান শুনতে চাই আর সেটা বার্থডে গালকে ডেডিকেট করে।”
আদ্রিয়ান একটু অবাক হয়ে বলল
— ” বাট..”
— ” প্লিজ স্যার।”
আদিব,আশিস, অরু,তীব্র সবাই সায় দিলো। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিমাও তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সবার অনেক জোরাজুরিতে আদ্রিয়ান বলল
— ” ওকে ফাইন আশিস গিটারটা নিয়ে আয় তো গাড়ি থেকে।”
সবাই হাতেতালি দিলো ও রাজী হওয়ায়। আশিস গিটার এনে দিলো আদ্রিয়ানের হাতে। অনিমা এখোনো তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে আর ভাবছে কী গান গাইবে আদ্রিয়ান? যেটা শুধুই ওর জন্যে? কিছুক্ষণ গিটারে টোন বাজিয়ে আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করল
.
তুমতো দারয়াসাল খাবোকী বাত হোওও
চালতি মেরে খেয়ালো মে তুম সাথ সাথ হোও
মিলতি হ্যা জো আচানাক ও সোয়াগাত হো
তুমতো দারয়াসাল মিঠি সি পিয়াস হোওও
লাগতা হ্যা ইয়ে হামেসা কী তুম আসপাস হোও
ঠ্যাহরা হ্যা যো লাবো পে ও এহসাস হো
তেরে আদা আদা সে মারতি ম্যা
ওয়াফা ওয়াফা সি কারতি কিউ
হাদোসে হু, গুজারতা ম্যা
জারা জারা জারা
তুমতো ডারয়াসাল সাসোকি সাজ হোওও
দিলমে মেরে ছুপা যো ওহি রায রায হোও
কাল ভি মেরা তুমহি হো মেরা আজ হো
কালভি মেরা তুমহি হো মেরা আজ হো
.
বারিশ কা পানি হো তুম, কাগজ কি কাসতি হু ম্যা
তুঝম্যা কাহি ম্যা বেহ যাতা হু
হোওওও মিলনে হু তুমসে আতা, ওয়াপাস নেহি যা পাতা
থোরা ওহি ম্যা রেহ যাতা হুউউ
তুমতো দারয়াসাল এক ন্যায়া নূর হোওও
মুঝমে ভি হো জারা সি জারা দূর দূর হোও
যেইসি ভি হো হামেশা হি মানজুর হো
যেইসি ভি হামেশা হি মানজুর হো
.
হোতা হ্যা এইসা আকসার, ডিল ইয়ে কিসিকো দে কার
লাগতা হাসি সারা শেহের।
হোওওও আব দেখ তেরা হো কার, কেয়া আসার হ্যা মুঝ পার
হাসতা রাহু আটো পেহের
হোওও তুম তো দারয়াসা ইস্ক হো পেয়ার হোওও
আতি মেরি ফাসানো মে তুম বার বার হোও
ইনকার মে যো ছুপি হ্যা ও ইকরার হো
ইনকার মে যো ছুপি হ্যা ও ইকরার হো
ইনকার মে যো ছুপি হ্যা ও ইকরার হো
.
সকলেই হাততালি দিয়ে উঠলো, পুরোটা গান আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে ওর আশপাশ দিয়ে হেটেই গেয়েছে, যেনো এই গানের প্রত্যেকটা ওয়ার্ড ওর জন্যে ছিলো। আর অনিমা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, সামনাসামনি এই প্রথম আদ্রিয়ানের গান শুনলো ও। আচ্ছা সত্যিই এই গানটা আদ্রিয়ান ওর জন্যে গেয়েছে? এই কথাগুলো অনিমার প্রতি সত্যিই ফিল করে আদ্রিয়ান? সেটা যদি না হয় তাহলে এই গানটাই কেনো গাইলো।
.
#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে