বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-৭২+৭৩

0
1995

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৭২.

শহরের বেশ নিরব গলির পাঁচতলা একটা বিল্ডিং এর একটা ফ্লাটের রুমে মুখোমুখি বসে আছ আদ্রিয়ান আর মাদার। দুজনে বিছানার দুই প্রান্তে বসে আছে। গত দুইবছর যাবত আদ্রিয়ান মাদারকে এখানে রেখেছে। সেটা হাসান কোতয়াল আর আদ্রিয়ান ছাড়া কেউ জানেনা। মাদারের কাছে এমন অনেক ডকুমেন্ট আছে যেটা কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী দুজনের জন্যই বিপদজনক। যদি সেটাকে সঠিকভাবে সঠিক সময় কাজে লাগাতে পারে তবেই। এই কারণেই মাদারকে এখানে নিরাপদে রেখে দিয়েছে আদ্রিয়ান। আর এতোগুলো দিন উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করেছে। মাদার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আজ হঠাৎ কাগজগুলো চাইছো যে?”

আদ্রিয়ান লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আর সময় নষ্ট করা যাবেনা মাদার। অনির অবস্থাটাতো বললাম তোমাকে। এখন একেকটা মুমেন্ট খুব ইম্পর্টেন্ট আমাদের জন্যে। মেয়েটার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ওকে কীকরে সামলাচ্ছি শুধুমাত্র আমি জানি। আমাদের বাচ্চাটা আসার আগে কিছু করতেও পারছিনা আমি। আমাদের কেয়ারফুল থাকতেই হবে! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ঝামেলা থেকে বের হতে হবে।”

” কিন্তু তুমিতো বলেছিলে এই কাগজগুলো ব্যবহার করার সঠিক সময় আসেনি তাহলে?”

” সঠিক সময় তৈরী করতে নিতে হবে। রিস্ক নিতেই হবে। অন্তত অনি আর আমার বাচ্চার জন্যে।”

মাদার কিছুক্ষণ নিরব থেকে একটা গম্ভীর শ্বাস ফেললেন। তারপর উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা ব্যাগ বেড় করে আদ্রিয়ানের হাতে দিলেন। আদ্রিয়ান প্যাকেট টা হাতে নিয়ে বলল,

” আর্জু শর্মার মা তোমাকে কিছু বলেছিল এ বিষয়ে আর?”

মাদার কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,

” না, ওর মা এই বিষয়ে বিশেষ কিছুই বলেনি। শুধু বলেছিল এগুলো কোন বিশ্বাসযোগ্য জার্নালিস্টের হাতে তুলে দিতে। আসলে ঐসময় উনি এই কেসটা নিয়েই কাজ করছিলেন। কিন্তু পুরোটা পুরোটা সলভ করার আগেই তো ওনাকে__”

এটুকু বলে মাদার থামলেন। আদ্রিয়ান বুঝলো ব্যপারটা। আসলে হাসান কোতয়ালের সাথে যোগাযোগ হতো আর্জুর মায়ের। কিন্তু রাজশাহীর ঐ এক্সিডেন্টটাই সব ভেস্তে দেয়। আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” আসছি মাদার। অনেক কাজ আছে এখন। সাবধানে থাকবেন।”

মাদার মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। মাদারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরল আদ্রিয়ান। এখন আবার যেতে হবে ওদের গ্যাং এর অফিসটাতে। সবার আগে রুণাকে খুঁজতে হবে এখন। ওকে দিয়েই আস্তে আস্তে পৌঁছতে হবে কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরীর কাছে।

__________

আবরার মেনশনের ড্রয়িংরুমে বসে আছে বাড়ির সবাই। সবার মুখেই একরাশ গাম্ভীর্যতা। মাঝে কেটে গেছে আরও একটা মাস। এই একমাসে অনিমার অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়েছে। আদ্রিয়ান এতোদিন ব্যপারটা গোপন রাখতে চাইলেও আর সম্ভব হয়নি। যদিও এটা হওয়ারই ছিল। আর আদ্রিয়ান নিজেকে প্রস্তুত করেই নিয়েছিল আজকের দিনের জন্যে। আজ দুপুরবেলা খাবার টেবিলে হঠাৎই অনিমা ভীষণ রেগে গিয়ে খাবারের প্লেট ছুড়ে ফেলে আর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। সমস্যা ছিল যে মাংসে ঝাল বেশি পরে গেছিল। আর অনিমা ঝাল একদমই খায়না। আর এই সামান্য কারণে অনিমার এরকম উত্তেজিত হয়ে যাওয়া। তারওপর এরকম ব্যবহার করা যেরকম ব্যবহার ওনাদের চেনা অনিমা করতেই পারেনা। মানিক আবরার, রিমা, লিমা হতভম্ব হয়ে গেছিল এরকম ব্যবহার দেখে। এতোদিন যেটুকু সন্দেহ ছিল তখন সেটা বিশ্বাসে পরিণত হয়ে গেল। আর যাই হোক অনিমা স্বাভাবিক অবস্থায় এরকম ব্যবহার করবে না। অনিমা এখন রুমে আছে। সন্ধ্যায় আদ্রিয়ান ওরা সবাই বাড়ি ফিরতেই মানিক আবরার সবাইকে ডাকলেন বসার রুমে। আদ্রিয়ানকে সবটা বলতেই আদ্রিয়ান বুঝতে পারল যে আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব না। আজ বলে দিতেই হবে। তাই সেটাই করল ও। সবটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলেন তারা। নিরবতা ভেঙ্গে মানিক আবরার বললেন,

” এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলেনা?”

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে রেখেই বলল,

” আ’ম সরি বাবা। কিন্তু আমি তোমাদের টেনশনে ফেলতে চাইনি।”

মিসেস রিমা বললেন,

” তাই বলে বলবিই না? আর এতো বড় রিস্ক নেওয়ার আগে কাউকে জানালি পর্যন্ত না। যদি বাচ্চাটা আসতে আসতে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়? যত দিন যাচ্ছে ওর সুস্থ হওয়ার চান্স কমে যাচ্ছে। বাচ্চা কী ভবিষ্যতে আর আসতো না আদ্রি?”

আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,

” তো কী করতাম কী আমি? মেরে ফেলতাম আমার বাচ্চাটাকে? আমার অস্তিত্বের অংশকে? একটা কথা বলোতো মা আজ যদি তোমাকে জাবিন বা আমার মধ্যে কোন একজনকে মেরে ফেলতে বলা হয়। পারবে মারতে?”

মিসেস রিমা চমকে উঠলেন। আদ্রিয়ান বলল,

” চমকালে কেন মা? তোমার একজন সন্তানতো থাকবেই আরেকজনকে মেরে ফেলতে সমস্যা কী?”

মিসেস রিমা ধমকে বললেন,

” কী বলছিস এসব?”

আদ্রিয়ান মুচকি এক হাসি দিয়ে বলল,

” খারাপ লাগল তো? ওও আমার সন্তান মা। শুধুমাত্র এখনো অবধি পৃথিবীতে আলো দেখেনি বলে, ওকে এখনো দেখতে পাইনি বলে, ছুঁতে পারিনি বলে ওর মূল্য আমার কাছে কম হবে সেটা কে বলল তোমাকে?”

মিসেস লিমা বললেন,

” আর অনির মূল্য? বাচ্চাটা আসতে আসতে অনি যদি সম্পূর্ণভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে? আর যদি সুস্থ না হয়? তাহলে? পারবে ওকে নিয়ে সারাজীবন কাটাতে?”

আদ্রিয়ান নিজের খালামনির দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমাকে পারতে হবে। আমি পারব। আমার বাচ্চাটাকে আসতে দাও। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব অনিকে সুস্থ করার। আর যদি ও সুস্থ না হয় ও যেমনই থাকুক আমি তেমনভাবেই ওকে আগলে রাখব। পরিস্থিতি যেমনই হোক ওকে আমি ছাড়বোনা।”

মানিক আবরার বললেন,

” ব্যাপারটা ততটাও সহজ নয় আদ্রিয়ান।”

” ভালোবাসাটা যদি সবসময় সহজ সময়ের জন্যেই বরাদ্দ থাকে তাহলে সেটা ভালোবাসা কোথায় বাবা?”

কথাটা বলতে বলতে আদ্রিয়ানের গলা হালকা কেঁপে উঠেছিল। মানিক আবরার মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন নিজের ছেলের দিকে। আজ সত্যিই গর্ব হচ্ছে ওনার। এমন এক রত্নের জন্মদাতা উনি। সত্যিই উনি বুক ঠুকে বলতে পারেন, ও আমার ছেলে। মিসেস রিমাও ছেলের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট। আর রিক একমনে শুনছিল আদ্রিয়ানের কথাগুলো। আদ্রিয়ানের ভালোবাসা যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে ও কী পারতো আদ্রিয়ানের মত করে অনিকে ভালোবাসতে? হয়তো না। এরকম প্রেমিকপুরুষ তো ঘরে ঘরে হয়না।

__________

অনিমা বিছানায় হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে আর আদ্রিয়ান খাইয়ে দিচ্ছে ওকে। কিছুক্ষণ আগে স্নিগ্ধা চেকআপ করে গেছে ওকে। এমনিতে কোন সমস্যা নেই সব ঠিকই আছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,

” আজ কী করেছো তুমি? বাবা-মার সামনে খাবারের প্লেট ছুড়ে ফেলে দিয়েছো? এটা ঠিক হয়েছে?”

অনিমা মুখ ফুলিয়ে বলল,

” ঝাল দিয়েছ কেন মাংসতে এতো। আমি খেতে পারিনা। আর আমিতো বাবা মামনীর ওপর রাগ করিই নি। আমিতো মনির ওপর রাগ করেছি।”

আদ্রিয়ান অনিমার চুল ঠিক করে দিতে দিতে বলল,

” দেখো, ভূলতো মানুষই করবে তাইনা? ভুল করে পরে গেছে। এরজন্য এরকম করতে হয়? কাউকে এসব ছোটখাট বিষয়ে হার্ট করতে নেই। এটাতো তুমিই একসময় আমাকে বলতে তাইনা? যখন আমি মাঝেমাঝে সার্ভেন্টদের ওপর রেগে যেতাম। আমাকে দিয়ে দুবার সরিও বলিয়েছো। ভুলে গেছো?”

অনিমা মাথা নিচু করে লজ্জিত কন্ঠে বলল,

” সরি।”

আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় চুমু দিয়ে বলল,

” সরিটা আমায় না। কালকে মনিকে গিয়ে বলবে। আর বাবা-মাকেও। মনে থাকবে?”

অনিমা বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান এবার চট করেই অনিমার পেটে মাথা রেখে বলল,

” আজকে এখনো অবধি আমার চ্যাম্পের সাথে কথা বলাই হয়নি। আমার চ্যাম্পটা কী করছে এখন?”

আদ্রিয়ান নিজে নিজেই কথা বলছে আর নিজেই উত্তর দিচ্ছে। মাঝেমাঝে পেটের ওপর ছোট ছোট চুমু দিচ্ছে। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগছে অনিমার কিছুক্ষণ পরপরই খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে ও।

কিন্তু ঘুমাতে যাওয়ার সময় হল আরেক বিপদ বিছানার চাদর অনিমার পছন্দ হচ্ছেনা। এটা বদলাতে হবে। অথচ আজ সকালেই মনি এসে নতুন চাদর বিছিয়ে দিয়ে গেছে। আদ্রিয়ান বলল,

” অনিমা চাদরটাতো সুন্দর দেখো। নতুন চাদর। প্লিজ শুয়ে পরো সোনা। অনেক রাত হয়েছে।”

কিন্তু অনিমা নাছোড়বান্দা এই চাদরে ও শোবেনা। অবশেষে আদ্রিয়ানকে কাবার্ড থেকে নতুন আরেকটা চাদর এনে নিজের হাতে বিছিয়ে দিতে হলো এরপর অনিমাকে শোয়াতে পারল। এটুকু করতে একপ্রকার যুদ্ধই করতে হলো আদ্রিয়ানকে।

রাত তিনটার দিকে হলো আরেক ঝামেলা। অনিমা জেগে আদ্রিয়ানকে ডাকতে শুরু করল। এমন সময় অনিমার ডাক শুনে দ্রুত উঠে বসল। প্রথমে ভেবেছিল অনিমার কোন সমস্যা হয়েছে। কিন্তু অনিমা যেটা বলল তাতে ও হাসবে নাকি মাঝরাতে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদবে সেটাই ভাবছে। অনিমা মুখ ফুলিয়ে বায়না করল ওর ক্ষিদে পেয়েছে। বিরিয়ানি খাবে। এই রাত তিনটে বাজে আদ্রিয়ান বিরিয়ানি কোথায় পাবে সেই চিন্তাতেই আদ্রিয়ানের মাথা ধরার যোগার হয়েছে। আদ্রিয়ান বেশিক্ষণ হয়নি ঘুমিয়েছে। কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়া তারওপর অনিমার এমন বায়না। মেজাজ খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক বরং না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। আদ্রিয়ান নিজেকে শান্ত করে বলল,

” অনি, কাল সকালে খাও? দেখ রাত তিনটে বেজে গেছে। এমন সময় আমি বিরিয়ানি কোথায় পাব?”

অনিমা জেদ ধরে বলল,

” কোথায় পাবেন মানে? বানিয়ে আনুন? আমি এখনই খাবো মানে খাবো!”

আদ্রিয়ান আবারও হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল অনিমার দিকে। অনিমার চিন্তা করার ক্ষমতা বা মানসিক অবস্থা যদি স্বাভাবিক হতো তাহলে হয়তো বোঝানো যেতো। কিন্তু এখন অনিমা বুঝবেনা। কারণ ওর মস্তিষ্ক স্বাভাবিক আচরণ করাবেনা ওকে দিয়ে। তারওপর সাতমাসের গর্ভবতী ও। আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেল কিচেনে। একা অনেক থেকেছে তাই মোটামুটি সব রান্নাই জানা আছে ওর। রাত তিনটা বাজে হাই তুলতে তুলতে বউয়ের জন্যে বিরিয়ানি রান্না করেই ফেলল অবশেষে। রুমে গিয়ে নিজের হাতে করেই খাইয়ে দিল অনিমাকে। অনিমাতো এখন বিরিয়ানি পেয়েই খুশি বাকি কোনদিকে নজর নেই। খাওয়ানো শেষ করে অনিমাকে ঘুম পারিয়ে তবেই শান্তি মিলল। ক্লান্ত চোখে একবার অনিমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে ফেলল আদ্রিয়ান। কী অবস্থাই না করছে এই একটা মেয়ে ওর। অনিমার এরকম অদ্ভুত আচরণ ওকে রোজই সহ্য করতে হয়। মাঝরাতে খাওয়ার বায়না, পা ফুলে গেছে এখন, পায়ের ব্যাথায় কষ্ট পেলে পায়ে তেল মালিস করে দেওয়া, টিপে দেওয়া, মাঝেমাঝে এসিতেও অনিমার কাজ হয়না গরমে কষ্ট পায় তখন আদ্রিয়ান প্রায় সারারাত জেগে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া দেয়। আর এমনিতে বাকিসব পাগলামো তো আছেই। বাইরের এতো প্রেশার সহ্য করে বাড়িতে এসে আবার অনিমার দেওয়া এরকম প্রেশার নিতে যে ওর ভালো লাগে তা-না। মাঝেমাঝে বেশ বিরক্ত হয়, রেগেও যায়। কিন্তু অনিমাকে বুঝতে দেয়না। কষ্ট হলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখে। কেনো রাখবেনা। অনিমা যখন সুস্থ ছিল তখন আদ্রিয়ান ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সমস্ত ছোট ছোট বিষয়গুলোতেও খেয়াল রাখত। সকালে রেওয়াজের সময় নিয়মিত আদার চা এনে দেওয়া, জগিং এর পর জুস দেওয়া, নিজের হাতে খাবার বেড়ে দেওয়া, বেড়োনোর সময় পোশাক বেড় করে দেওয়া, রেডি হতে সাহায্য করা, বাড়ি ফিরলেই শরবত এনে দেওয়া, ক্লান্ত থাকলে নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া, আদ্রিয়ানের চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া। সবটাই করত অনিমা। কিন্তু এখন মেয়েটাতো অসুস্থ, তারওপর ওর সন্তানকে পৃথিবীতে আনার জন্যেই তো অনিমার চিকিৎসা বন্ধ করল ও। সেই মেয়েটার জন্যে এইটুকূ ত্যাগ করতে পারবে না ও? যে মেয়েটা ওকে ভরসা করে ওর হাত ধরে নিজের পরিবার ছেড়ে ওর কাছে এসেছে ওর স্ত্রী হয়ে এসেছে। সুস্থ থাকতে সবসময় ওর সব খেয়াল রেখেছে। সেই মেয়েটার জন্যে এইটুকু না করতে পারলে ও স্বামী হওয়ার যোগ্যই না। আদ্রিয়ান এটা মানে আর বিশ্বাসও করে।

_________

আদ্রিয়ান ওর নিজের ক্যাবিনে বসে কিছু একটা ভাবছে খুব গভীরভাবে। ওর ঠিক পাশেই বসে আছে নাহিদ। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ও কী ভাবছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ ভাবার পর আদ্রিয়ান বলল,

” কী বুঝলি?”

নাহিদ একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

” অবস্থাটা মোটেই ভালো নয় আদ্রিয়ান। বাচ্চাটা আসতে এখনো প্রায় দেড় থেকে দু-মাস। এতগুলোদিন___ কী করব বুঝতে পারছি না।”

আদ্রিয়ান স্হির কন্ঠে বলল,

” চান্স কতটুকু?”

নাহিদ কিছুক্ষণের জন্যে চুপ হয়ে গেল এরপর মাথা নিচু করে বলল,

” এখনো অবধি টুয়েন্টি পার্সেন্ট।”

আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই দরজায় নক পরল। ওরা তাকাতেই অভ্র বলল,

” স্যার, রুণা এসছে আপনার সাথে দেখা করতে সাথে একটা মেয়েও আছে।”

আদ্রিয়ান চেয়ারে হেলান দিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

” পাঠিয়ে দাও।”

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৭৩.

বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে অনিমা। হাতে একটা ফলের প্লেট। একটা একটা করে ফলের টুকরো মুখে নিচ্ছে আর মুখ ফুলিয়ে চিবোচ্ছে। মাঝেমাঝে আদ্রিয়ানের দিকে বিরক্তি মিশ্রিত চোখে তাকাচ্ছে। দেখতে কিউট লাগছে বেশ। পেট বড় হওয়ার সাথেসাথে কিছুটা গুলুমুলু টাইপ হয়ে গেছে। অরুমিতা, তীব্র আর স্নেহা পাশে দাঁড়িয়েই মিটমিট করে হাসছে। আদ্রিয়ান চেয়ারে বসে একটা হতাশ শ্বাস ফেলে বলল,

” দেখ? এমনভাবে তাকাচ্ছে আর খাচ্ছে যেনো পৃথিবীর সবচেয়ে অখাদ্য এনে খেতে দিয়েছি আমি ওকে।”

অনিমা রাগী কন্ঠে বলল,

” এটাকে আপনার ভালো খাবার বলে মনে হয়?”

আদ্রিয়ান কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। অন্যসময় হলে চোখ রাঙানোই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এখন এই মেয়েকে ঘাটানো একদম ঠিক হবেনা। যখন-তখন যা ইচ্ছা করে ফেলতে পারে। ভালোভাবে ব্যাপারটা সামলাতে হবে। তাই জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল,

” একদম! আসলেই এটা বাজে খাবার। কিন্তু কী বলোতো আমাদের বাচ্চাটার জন্যেতো এটা দরকার। কদিন পর যখন ও চলে আসবে তখন আর তোমাকে এসব খেতে হবেনা।”

অনিমা কিছুই বলল না। বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিল। বেশ অনেকটা সময় অনিমার কাছে থাকার পর অরুমিতা, তীব্র, স্নেহা বেরোনোর জন্যে উঠে দাঁড়াল। আদ্রিয়ানও এখন বাইরে যাবে তাই ওদেরকে বলল ড্রপ করে দেবে। অনিমাকে মনি আর বাবলীর কাছে রেখে ওদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ল আদ্রিয়ান। বাবলী মেয়েটা মাস দুই আগেই এসেছে। আদ্রিয়ান নিজেই ওকে এনেছে। অনিমার যত্ন ঠিকভাবে নেওয়ার জন্যে বাড়তি লোক দরকার।

তীব্র আর স্নেহাকে নামিয়ে দেওয়ার পর গাড়িতে শুধু আদ্রিয়ান আর অরুমিতা রইল। কিছুটা পথ যাওয়ার পর আদ্রিয়ান বলল,

” বিয়ের কথা কিছু ভেবেছো?”

অরুমিতা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবছিল। আদ্রিয়ানের কথায় চট করে হুশ ফিরল ওর। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” বাড়ি থেকে বারবার বলছে। অয়ন স্যারের বাড়ি থেকেও ফোন করেছিল কয়েকবার।”

আদ্রিয়ান সোজাসাপ্টাভাবে বলল,

” তোমার কী ইচ্ছা?”

অরুমিতা কিছুক্ষণ চুপ রইল। এরপর কম্পিত কন্ঠে বলল,

” আমি জানিনা ভাইয়া। আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।”

” আশিসকে আমাদের কাছ থেকে সরে যেতে বললেও ওর সব খবর রেখেছি আমি। ও বদলেছে, সম্পূর্ণ বদলেছে। নিজের করা অন্যায়ের জন্যে অনুতপ্ত তো ও ছিলোই আর যথেষ্ট শাস্তিও পেয়েছে। আমি তোমাকে বলব না আগের সব ভুলে যাও, ওকে মেনে নাও বা ফিরিয়ে নাও নিজের জীবনে। শুধু এটুকুই বলব যেটাই করবে ভেবে করো। আবেশের বশবর্তী হয়ে এমন কোন সিদ্ধান্ত নিও না যার জন্যে ভবিষ্যতে পস্তাতে হয়। বাকিটা সম্পূর্ণ তোমার ইচ্ছে। তবে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিও।”

অরুমিতা মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ানও আর কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর অরুমিতা বলল,

” ভাইয়া, অনি সুস্থ হয়ে যাবেতো?”

আদ্রিয়ানের মুখে আবার গাম্ভীর্যতা দেখা দিল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

” আর কয়েকদিন পরই ডেলিভারী। এ-কদিন ধৈর্য্য ধরতেই হবে। এরপর আমি নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করব ওকে সুস্থ করার।”

অরুমিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আদ্রিয়ান নামক এই মানুষটার ধৈর্য্যশক্তি, দায়িত্ববোধ আর ভালোবাসার প্রশংসা করতে ও বাধ্য। গত ছয়টা মাস যাবত অনিমাকে যেভাবে সামলেছে। ওর সব পাগলমী, অহেতুক আবদার, অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড যেভাবে সহ্য করেছে সেটা কজন স্বামী পারতো ভেবে দেখার বিষয়। আদ্রিয়ানের পরিবারও যথেষ্ট সাহায্য করেছে ওকে। রিমা, লিমা, স্নিগ্ধা আদ্রিয়ানের অনুপস্থিতে ওরাই অনিমার সবরকম খেয়াল রেখেছে। ওনাদের কাছে রেখে আদ্রিয়ান নিশ্চিন্তে বাড়ি থেকে বের হতে পারতো।

__________

হালকা অন্ধকার একটা ঘরের মধ্যে কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী বসে আছেন। সারারুমে শুধু একটা হলদে লাইটের আলো আছে। একটা টেবিল আর চারটা চেয়ার ছাড়া রুমটাতে কিছূই নেই। রঞ্জিত চৌধুরী বলল,

” যা করার আজই করে ফেল। আদ্রিয়ান, হাসান কোতয়াল আর আমার ঘরশত্রু বিভীষণ ছেলে। একজনের ওপরেও বিশ্বাস নেই আমার। যেকোন সময় যা খুশি করে বসতে পারে।”

কবির শেখ গম্ভীর স্বরে কিছুক্ষণ ভাবল। এরপর বলল,

” কথাটা ভুল বলোনি। হঠাৎ করেই তিনটা লাইনে যোগাযোগ করতে পারছিনা। বাকি লাইনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ-ই অদ্ভুত ব্যবহার করছিল। ঝামেলা কিছুতো একটা আছেই।”

” সেইজন্যই বললাম।”

কবির শেখ পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করলেন এরপর একটা নাম্বারে ডায়াল করলেন। ফোন বাজতেই একটু চমকে উঠল বাবলী। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে কবির শেখের ফোন। অনিমার দিকে একপলক তাকিয়ে দেখল ও সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে টিভি দেখছে। একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই কবির শেখ বললেন,

” ওদিকে সব ঠিক আছে?”

বাবলী ফিসফিসে গলায় বলল,

” হ্যাঁ সব ঠিক আছে।”

” অনিমার ডেলিভারী ডেটতো কয়েকদিন পর তাইনা?”

” জি স্যার।”

একই ভঙ্গিতে বলল বাবলী। কবির শেখ বলল,

” তাহলে আজই কাজটা করে ফেলো। যেকোনভাবে মেরে ফেলো বাচ্চাটাকে। আজই। এমনভাবে কাজটা করবে যাতে মনে হয় এক্সিডেন্ট। আর সাথে যদি ঐ মেয়েটাও মরে যায় তবে খুব ভালো। আর এটা করার অনেক উপায়ই আছে। সেগুলো নিশ্চয়ই বলে দিতে হবেনা তোমাকে?”

” না স্যার।”

” কাজটা হয়ে গেলে সাথেসাথে ফোন করে আমাকে জানাও।”

কবির শেখ ফোনটা কেটে দিলেন আর বাবলী অনিমার দিকে তাকিয়ে একটু ঢোক গিলল। রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

” তো? এবারের প্লান কী?”

” বাবলীর ফোন এলেই আমরা আমাদের লোক নিয়ে গোডাউনে চলে যাবো। ওদিকে আদ্রিয়ান ওরা সবাই অনিমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। আর আমরা ওগুলো নিয়ে চলে যাবো ওখান থেকে। আপাতত আবার গা ঢাকা দিতে হবে আমাদের। এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”

প্রায় দুই ঘন্টা পার হয়ে গেল। কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী ওনাদের গোডাউনে বসে অপেক্ষা করছে বাবলীর ফোনের। ফোন পেলেই নিজেদের কাজ শুরু করবে। কাজটা ঠিকঠাক মত না হলে যে বিশাল ঝামেলা হয়ে যাবে। পাঁচ মিনিট পরেই কবির শেখের ফোন বেজে উঠল। হ্যাঁ বাবলীই ফোন করেছে। কবির শেখ দ্রুত ফোন রিসিভ করে বলল,

” কাজ হয়ে গেছে?”

ওপাশ থেকে বাবলী কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

” জি স্যার। কাজ হয়ে গেছে। বাচ্চাটার বাঁচার আর চান্স নেই।”

কবির শেখ উত্তেজিত হয়ে একহাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছে নিয়ে বলল,

” আর অনিমা?”

বাবলী আগের মতো করেই বলল,

” অবস্থা ভালো না। জানিনা কী হবে। বাড়ির সবাই ওনাকে নিয়ে হসপিটালে গেছে। আদ্রিয়ান স্যারও।”

” ভেরী গুড।”

কথাটা বলে কবির শেখ ফোনটা রেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

” কাজ হয়ে গেছে?”

” হ্যাঁ, চলুন! তাড়াতাড়ি সব করে বের হতে হবে।”

নিজের লোকেদের ইশারা করতেই ওরা বস্তা আর ব্যাগগুলো উঠিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করল। প্রায় দশমিনিট পর যখন অলমোস্ট সব গোছানো হয়ে গেছে। কবির শেখ কিছু করছেন না দাঁড়িয়ে আছেন তবুও হাঁপিয়ে গেছেন দেখতে দেখতে। এমন সময়ই কেউ বলে উঠল,

” কিছু না করেই হাঁপিয়ে গেলে মামা? এরপর কী করবে?”

কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী চমকে তাকালেন আওয়াজ অনুসরণ করে। আর যা দেখলন তাতে জমে গেলেন ওনারা। আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। শুধু আদ্রিয়ান নয় রিক, হাসান কোতয়াল দুজনেই আছে। কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর কবির শেখ বললেন,

” তোমরা? তোমাদের তো…”

রিক কবির শেখকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

” অনিমার কাছে হসপিটালে থাকার কথা ছিল, তাইনা?”

রঞ্জিত চৌধুরী বলল,

” কিন্তু এটা কীকরে সম্ভব? এই জায়গার কথাতো আমরা ছাড়া আর কেউ..”

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে হালকা হাসল তারপর সামনে তাকিয়ে বলল,

” তোমাদের এই একটা দোষ। সবসময় প্লানটা খুব সুন্দর করলেও কিছু কিছু জিনিসে নজর দিতে একদম ভুলে যাও। আর সেইজন্যই একদম লাস্ট মোমেন্টে এসে তোমাদের সব প্লান ভেস্তে যায়। সেটা মিস্টার সিনিয়রকে মার্ডারের প্লান হোক বা আমার বাচ্চাকে। তুমি ভাবলে কীকরে যে রুণা আমার এতো বড় একটা ক্ষতি করে দেওয়ার পরেও আমি অন্যএকটা মেয়েকে আবার আমার বাড়িতে ঢোকাবো। তাও এমনি এমনি?”

কবির শেখ অবাক কন্ঠে বলল,

” তুই জানতি যে রুণাই.__”

আদ্রিয়ান আবারও বাঁকা হাসল। আসলে দু-মাস আগে রুণাকে খুঁজে বের করেছিল আদ্রিয়ান। ওকে নিজের গ্যাং এর অফিসে উঠিয়ে এনে প্রাণে মারার ভয় দেখাতেই সবটা স্বীকার করে নেয়। আর এটাও বলে যে কবির শেখ এখানেই থামছে না ওনার আরও ভয়ানক একটা পরিকল্পনা আছে। আর তাই আদ্রিয়ানও একটা পরিকল্পনা করলো।

__________

দুই মাস আগে-

আদ্রিয়ান এর সামনের চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে রুণা। ওর ঠিক পাশেই ওরই বয়সী একটা মেয়ে বসে আছে। দুজনেই আদ্রিয়ানের ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে। আদ্রিয়ান শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করল,

” কী নাম তোমার?”

মেয়েটা জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,

” বাবলী।”

আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল,

” তো তোমাকে আমার বাড়িতে পাঠানোর একটা ছোট্ট চেষ্টা করা হবে আমারই বাচ্চাটাকে মারার জন্যে?”

বাবলী ভয় পেয়ে গিয়ে বলল,

” বিশ্বাস করুন স্যার আমি কিচ্ছু করব না।”

” করবে।”

আদ্রিয়ানের কথায় অবাক হল বাবলী। করবে মানে কী? লোকটা কী নিজেও নিজের বাচ্চাকে মারতে চায় নাকি? বাবলীর ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে আদ্রিয়ান বলল,

” তুমি কবির শেখের কথায় আমার বাড়িতে যাবে। আমি নিজেই নিয়ে যাব তোমাকে। কিন্তু কাজ করবে আমার কথামতো। আর সেটা যাতে কবির শেখ জানতে না পারে।”

________

এরপর থেকে আদ্রিয়ানের কথামতোই কাজ করেছে বাবলী। আর কবির শেখ কোথা থেকে কল করছে। কী বলছে। সবকিছুই আদ্রিয়ান জানতে পারতো ট্র্যাকার এর মাধ্যমে। বাবলীর কাছে যখনই ফোন আসতো তখনই লোকেশন ট্র্যাক করতো আদ্রিয়ান। বাবলীকেও পুরোপুরি বিশ্বাস করেনি ও সবসময় নিজের লোক দিয়ে ওর ওপরেও নজর রাখতো।

কবির শেখ অবাক হয়ে বললেন,

” তারমানে কিছুক্ষণ আগেও বাবলী আমাকে মিথ্যে বলেছে?”

আদ্রিয়ান হাসল শুধু। কবির শেখ আফসোসের একটা শ্বাস ফেললেন। রঞ্জিত চৌধুরীও রাগে ফেটে পড়ছেন একপ্রকার। সত্যি ভুল হয়ে গেছে। আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল ওনাদের। বোঝা উচিত ছিল যে যার সাথে খেলছে সে আদ্রিয়ান। রিক নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

” ভেবেছিলাম জেল থেকে বেরিয়ে অন্তত শুধরে যাবে কিন্তু… আফসোস হচ্ছে খুব যে তোমার সন্তান হয়েই কেন জন্মালাম।”

হাসান কোতয়াল বললেন,

” কিছু কিছু মানুষের স্বভাব রক্তে মিশে যায়। কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয়না। সেই স্বভাবগুলোও যায়না।”

রঞ্জিত চৌধুরী রাগে ফুসতে ফুসতেই চোখ সরিয়ে নিলেন। কবির শেখ কোনভাবে বের হওয়ার একটা উপায় খুঁজবেন কিন্তু তার আগেই বুঝতে পারলো যে চারপাশে পুলিশ এসে ঘিরে ফেলেছে ওদের। আর কোনভাবেই বের হওয়া সম্ভব নয়। খুব বেশিই হালকাভাবে নিয়ে ফেলেছিল আদ্রিয়ানকে যেটা ঠিক হয়নি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কাল হয়েছে ওনার।আদ্রিয়ান কোথাও একটা ফোন করে বলল,

” সোহাগ, ভেতরে চলে আয়।”

সোহাগ ফোর্স সহ ভেতরে চলে এলো। কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরীকে অ‍্যারেস্ট করা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আদ্রিয়ান সোহাগের দিকে তাকিয়ে বলল,

” বলেছিলাম না ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে?”

সোহাগ হেসে বলল,

” ডকুমেন্টগুলো সব আছে আমার কাছে। এবার আর ওরা বাঁচবে না।”

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। ফোনটা বাড়ি থেকেই এসেছে। এই সময় বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে কপাল কুঁচকে ফেলল আদ্রিয়ান। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে যা শুনলো তাতে আদ্রিয়ান থমকে গেল। শরীর মৃদু কাঁপতে লাগল ওর। সব তো ঠিক হয়েই যাচ্ছিল এখনই এটা হওয়ার ছিল?

#চলবে…

[ রি-চেইক করা হয়নি।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে