#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
১০.
আকাশটা ধূসর রঙে ছেয়ে আছে। হালকা হালকা বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা বাতাস বইছে। চারপাশটা বেশিই স্তব্ধ হয়ে আছে। সবটা কেমন চুপচাপ। অনিমা অনেকটা মনমরা হয়ে জানালার সাথে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ বাইরের প্রকৃতির সাথে ওর মনে অবস্থাও মিলে গেছে। এখন ও পুরোপুরি সুস্হ আছে। শরীরের ব্যাথাটাও সেড়ে গেছে, তারসাথে ক্ষতগুলোও শুকিয়ে গেছে। কিন্তু মনে নতুন ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। আদ্রিয়ানের জন্যে মনের মধ্যে যেই ভরসার জায়গা খুঁজে পেয়েছিল সেটা আর নেই। ও বুঝে গেছে সব ছেলেই একরকম হয়। সবাই সুযোগ সন্ধানী হয়, এই ধারণাটা আবারও জেকে বসেছে ওর মনে। সেদিন আদ্রিয়ান অনিমার এতোটা কাছে আসাতে নিজেকে সামলাতে পারেনি ও। নিজের জ্ঞানে ছিলনা সেই মুহূর্তে। অনিমার চুলে নাক ঢুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে নিতে নিজের অজান্তেই অনিমার কাঁধে মুখ গুজে দিয়েছিল, আরো কাছে টেনে নিয়েছিল ওকে। আদ্রিয়ানের এমন আচমকা স্পর্শে কেঁপে উঠেছিল ও। এটার জন্যে মোটেও তৈরী ছিলনা। মেনে নিতে পারেনি আদ্রিয়ানের এরকম স্পর্শ। কিছুক্ষণ আগেও যেই লোকটার প্রতি মনে শ্রদ্ধা ছিল, এখন তার কাছেই অসুরক্ষিত আর অস্বস্তি লাগছে। কষ্টে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরেছিল সঙ্গে সঙ্গে। তাই ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল আদ্রিয়ানকে। অনিমার ধাক্কায় আদ্রিয়ানেরও হুস এসছিল। ও বুঝতে পারছিল যে কী করেছে। তাই অনিমাকে কিছু বলার আগেই অনিমা হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়েছিল আদ্রিয়ানকে। দৌড়ে ঐ রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে পাশের রুমে দরজাটা আটকে দেয়াল ঘেষে বসে প্রচন্ড কেঁদেছিল ও। এতোটা অসহায় কেন ও? ওর কেন নিজের কোন জায়গা নেই? যেখানে ও নির্ভয়ে কোন সংকোচ ছাড়াই স্বাধীনভাবে থাকতে পারে। ওর জীবনটা এমন কেন? সেদিন থেকেই অনিমার রুমটা আলাদা। আদ্রিয়ান ও খুব একটা ওর সামনে আসেনি এই দুদিন। ওর ঔষধ, খাবার আরো প্রয়োজনীয় সবকিছু সার্ভেন্টই দিয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের ওপরই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ও। মুখোশ গুলো হয়ত এমনই হয়। খুব দ্রুতই খসে পরে যায় মুখ থেকে। আদ্রিয়ানকে নিয়ে সবসময় খুব ভয়ে থাকে ও। কিন্তু ওরতো কিছুই করার নেই। বাধ্য হয়ে এখানেই থাকতে হচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে কারো কাশির আওয়াজে চমকে তাকাল অনিমা। তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা ভীত দৃষ্টিতে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান একটু এগিয়ে আসতেই অনেকটা গুটিয়ে বসল অনিমা। সাথেসাথে আদ্রিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে অনিমার কাঁধে হাত রাখতেই অনিমা একপ্রকার ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে দ্রুত উঠে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়াল। শরীর মৃদু কাঁপছে ওর। আদ্রিয়ানের এবার মেজাজটা খারাপ হল। কতক্ষণ সহ্য হয় এসব? ও রেগে পাশে রাখা ফ্লাওয়ার ভাসটা প্রচন্ত জোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারল। আচমকা এমন ঘটনায় ভয়ে দুকানে হাত দিয়ে একপ্রকার লাফিয়ে উঠল অনিমা। চোখ খিচে বন্ধ করে দুকানে হাত রেখে দেয়ালের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান রাগী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হনহনে পায়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। অনিমা দেয়াল ঘেষে ওখানেই বসে পরল। কান্নাও আসছে না এইমুহূর্তে। কিন্তু বুকের মধ্যে ভীষণ ভার হয়ে আছে, কাঁদতে ইচ্ছে করছে, ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
_____________
সোফায় বসে ওর নেক্সট গানটার লিরিক্স দেখে নিচ্ছে আদ্রিয়ান। কিন্তু মন বসাতে পারছেনা ঠিকভাবে। মন মেজাজ খুব ভীষণ খারাপ হয়ে আছে ওর। এই দুদিন যাবত অনিমা প্রচন্ডরকমভাবে ইগনোর করেছে ওকে। ওকে দেখলেই ভয় পেয়ে যায়, নিজেকে গুটিয়ে নেয়।যেটা এই মুহূর্তে প্রচন্ড বিরক্তি লাগছে ওর। কী ভাবে কী মেয়েটা? সবকিছুর তো একটা সীমা থাকে। ওকে দেখে কী রেপিস্ট মনে হয়? ও এরকম বাজে কোন ইচ্ছে থাকলে মেয়েটা এখনও সুরক্ষিত থাকত? কিন্তু ওকে দেখলেই অনিমা এখন বিহেভ করে জেন একটা হিংস্র জন্তুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কী করেছে কী ও? কিছুক্ষণ আগে ওর মামার সাথে কথা হয়েছে ওর। মামার কথা ভাবতেই হঠাৎ করে রিকের কথা মনে পরল। অনেকদিন হল কথা হয়না। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে রিকের নাম্বরে ডায়াল করল। বেশ অনেকক্ষণ বাজার পর ফোন রিসিভ করল রিক। আসলে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল ও । স্নিগ্ধার সাথে কথা হয়েছিল। স্নিগ্ধাও একই কথা বলেছে যে অনিমা ওর সাথে কথা বলতে চাইছেনা। ওও আর ফোর্স করেনি যা কথা বলার ওর সাথে বাড়িতে ফিরেই বলবে। জানতে চাইবে এরকম বাচ্চামোর কারণটা কী? কী করেছেটা কী ও? এখন ওর মনে হচ্ছে ওর বাবা আর মামা ঠিকই বলে। অনেক বেশি ছাড় দিয়ে ফেলছে মেয়েটাকে, সেইজন্যেই সাপের পাঁচপা দেখেছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ফোন বাজার আওয়াজ পেয়ে ভেতরে চলে এল ও। ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে আদ্রিয়ানের নামটা দেখে একটু হাসল এরপর রিসিভ করে বলল,
” আরিব্বাস! রকস্টার বাবুর হঠাৎ আমাকে মনে পরার কারণ?”
আদ্রিয়ান বলল,
” ডক্টর সাহেব তো আমাকে রোজ মনে করে। রাইট?”
” আচ্ছা মানলাম। কেমন আছিস সেটা বল?”
” চলে যাচ্ছে। আসবি কবে?”
” নেক্সট মান্থেই আসার কথা ছিল। কিন্তু এখন একটু আটকে গেছি আরও কয়েকটা দিন থাকা লাগবে।”
” তোর নীলপরীর কী খবর?”
” ওই ওটা আমার নীলপরী।”
” আরে ভাই তোরই বলেছি।”
রিক মুখ খানিকটা ছোট করে বলল,
” কথা হয়না এক সপ্তাহ যাবত।”
আদ্রিয়ান চরমভাবে অবাক হয়ে বলল,
” বাপড়ে! তুই এখনও বেঁচে আছিস?”
রিক বিরক্ত হয়ে বলল,
” মজা নিসনা তো! ভালোলাগছে না।”
আদ্রিয়ান খানিকটা হাসল। কিছুক্ষণ হাসার পর বলল,
” সত্যি ভাই, তোর মত রুড টাইপ মানুষও যে কারও প্রেমে এতটা পাগল হতে পারে বিশ্বাস হচ্ছেনা। মেয়েটাকে দেখার ইচ্ছে তো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। একটা ছবিও তো দিতে পারিস।”
” উমহুম, রিস্ক নিতে পারবোনা ভাই। যদি প্রেমে পরে যাস? তোর সাথে অন্তত ফাইট করার শখ নেই আমার। তাও আবার নীলপরীকে নিয়ে। তোকে তো টেনেও ঐ বাড়ি নিতে পারবোনা হয়ত। তাই আমাদের বিয়ের সময় দেখে নিস।”
” আচ্ছা আগে আয়।”
” খালা, খালু, জাবিন কেমন আছে?”
” হ্যাঁ সবাই ভালো আছে।”
” আচ্ছা রাখছি তাহলে। পরে কথা হবে।”
” হুম রাখছি।”
রিক ফোনটা রেখে লম্বা শ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাল রিক। এখানে থাকতে আর ভালোলাগছে না ওর। একটুও ভালোলাগছে না। দেশে গিয়েই হসপিটাল জয়েন করবে। আর তারপরেই তো অনিমার সাথে ওর বিয়ে হবে। দিনগুলো কাটছেনা কেন? প্রতিটা সেকেন্ড যেন ও টেনে টেনে পার করাচ্ছে।
_____________
আজ গানের রেকর্ডিং শেষ করতে বেশ রাত হয়ে গেছে। আদিব আর আশিসকে বিদায় দিয়ে আদ্রিয়ান আর অভ্র এখন আদ্রিয়ানের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। অভ্র ফ্রন্ট সিটে বসে আছে, ড্রাইভার ড্রাইভ করছে। আদ্রিয়ান পেছনের সিটে বসে ফোন স্ক্রোল করছে। আকাশ হালকা হালকা গুরুম গুরুম শব্দ হচ্ছে। আজ রাতে যে আবার জোরে বৃষ্টি হবে বোঝাই যাচ্ছে। অভ্র পেছন ঘুরে একবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” স্যার ম্যাম কেমন আছে?”
আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
” কোন ম্যাম?”
রিক বেশ অবাক হল। কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
” অনিমা ম্যাম?”
” আমি তোমার ম্যামের বডিগার্ড নই অভ্র। যে সারাদিন সে কেমন আছে সেটার খেয়াল রাখব। আমার যেটুকু ডিউটি ছিল করেছি, এবার ভালো থাকার দায়িত্ব তার। এতদিন অসুস্থ ছিল তাই সাথে থাকতে হয়েছে। এখন তো আর তা নয়?”
অভ্র অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের সেসবে কোন মাথাব্যথা নেই, ও ওর মতো আছে। অনেকটা সময় ইতস্তত করে অভ্র বলল,
” স্যার অাপনার কী ম্যামের ঝগড়া হয়েছে।”
আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
” তোমার ম্যাম কী আমার বউ লাগে না গার্লফ্রেন্ড লাগে যে ঝগড়া হবে?”
আদ্রিয়ানের ধমক খেয়ে অভ্র একদম ভদ্র ছেলের মত শান্ত হয়ে বসে রইল। আদ্রিয়ানও আর কিছুই বলল না। অভ্রর বাড়ির সামনে অভ্র নেমে গেল। আর তার আধ ঘন্টা পর আদ্রিয়ান ওর বাড়িতে। বাড়িতে ঢুকে সবার আগে নিজের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিল ও। বাইরে থেকে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। মাথাটাও হালকা ধরেছে। ডিনার করার কোন ইচ্ছা নেই। এইমুহূর্তে একটু কফি হলে ভালো হতো। হঠাৎ করেই অনিমার কথা মনে পরল। কী করছে এখন? খেয়েছে? যা খুশি করুক ওর তাতে কী? এসব ভেবে কিচেনের দিকে নিজেই গেল কফি বানাতে। এইমুহূর্তে সার্ভেন্টদের বিরক্ত করার ইচ্ছা নেই ওর।
অনিমা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু শীত শীত করছে বাইরের ঠান্ডা হাওয়ায়। তাই ঘুমের ঘোরেই কুকঁড়ে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই শরীরে উষ্ণতা অনুভব করতেই হুট করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান ওর দিকে ঝুকে আছে। এমনিতেই হঠাৎ ঘুম ভেঙেছে, আর আদ্রিয়ানকে নিয়ে ওর মনে এমনিতেই ভয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই দ্বিতীয়বারের মত আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দিল ও। যাতে আদ্রিয়ান একটু দূরে সরে গেল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমার এবার প্রচন্ড রাগ হল। ভেতরের সব চাপা কষ্ট রাগ হয়ে বেড়িয়ে এলো। ও হাফানো কন্ঠে বলল,
” দেখুন, এটা ঠিক যে আমি আপনার আশ্রয়ে আছি। তাই বলে আপনি আমার সাথে এরকম করতে পারেন না। একটা মেয়ে অসহায় হয়ে আপনার কাছে আছে বলে আপনি এভাবে সুযোগ নেবেন? আপনি হুটহাট আমাকে এভাবে টাচ করবেন না।”
আদ্রিয়ান সব ধৈর্যের সীমা এবার পেরিয়ে গেল। এতদিন অসুস্থ ছিল তাই সহ্য করেছে কিন্তু এখন আর সহ্য করা যাচ্ছেনা। ও অনিমার হাত চেপে ধরে টেনে নামালো বিছানা থেকে। এক টানে নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তোমার সুযোগ নেওয়ার বা তোমাকে টাচ করার ইচ্ছা যদি আমার থাকত তাহলে সেটা করতে আমাকে তোমার ঘুমের বা নিজে থেকে কাছে আসার সুযোগ নিতে হতোনা। আমি চাইলে তোমার সাথে তোমার পূর্ণ সজ্ঞানে যা ইচ্ছা করতে পারি। এন্ড আই সোয়ার তুমি আটকানো তো দূর নড়তেও পারবেনা।”
অনিমা মাথা নিচু করে আছে। ঠোঁট ভেঙ্গে আসছে ওর। যেকোন মুহূর্তে কান্না করে দেবে। আদ্রিয়ান অনিমাকে আরেকটু কাছে টেনে বলল,
” আর আসবো না তো কী করব বলো? বাড়িতে একটা পরপুরুষ থাকার পরেও এভাবে দরজা খুলে রেখে, পোশাক এলোমেলো করে ঘুমিয়ে ছিলে। কেন? নিশ্চয়ই আমাকে এট্রাক্ট করার জন্যে? তুমি চাইছিলে আমি তোমার কাছে আসি, রাইট? আর সেদিন নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে। কারণ নিশ্চয়ই তুমি চাইছিলে আমি তোমার সাথে কিছু একটা করি। তাহলে এখন আমার দোষ কেন দিচ্ছ? একটা ছেলেকে তুমি যদি নানাভাবে সিডিউস করা চেষ্টা করতে থাকো সেতো তোমার কাছে আসবেই।”
অনিমা এবার অবাক দৃষ্টিতে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। চোখ দিয়ে জমে থাকা অশ্রুগুলো গড়িয়ে পরল। ওর ঠোঁট দুটোও ভীষণ কাঁপছে। লোকটা এত জঘন্য কেন? এরকম নোংরা কথা কেন বলছে ওকে? অনিমাকে কাঁদতে দেখে আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে বলল,
” এই একদম চুপ! সত্যি কথা শুনতে খারাপ লাগছে তাইনা? আচ্ছা এবার বলোতো ঐ জায়গায় কেউ তোমাকে নিয়ে গিয়েছিল নাকি নিজের ইচ্ছাতেই ছিলে? হুম?”
অনিমা এবার প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। এর আগে কখনও কেউ ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলেনি। কিন্তু এই লোকটা কতটা চেনে ওকে? যে এভাবে বলছে? ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ভাঙা গলায় বলল,
” আপনি খুব খারাপ একটা লোক, বাজে একটা লোক। থাকতে দিচ্ছেন বলে যা খুশি বলবেন? থাকবো না আমি আপনার এই বাড়িতে। চলে যাবো আমি।”
আদ্রিয়ানের মেজাজ এতে আরো বেশি খারাপ হল। রাগে এবার সারা গা কাঁপছে ওর। ও রাগে গজগজ করে বলল,
” আচ্ছা! চলে যাবে? ভালোতো, আমি শুধুশুধু এসব উট্কো বোঝা নিজের ঘাড়ে কেন নিতে যাবো? শুভ কাজে দেরী কেন? চলো এক্ষুনি বেড় হও।”
অনিমা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। এই রাতেরবেলা চলে যেতে বলছে ওকে? আদ্রিয়ান জোরে বলল,
” কী হল যাও?”
অনিমা মাথা নিচু করে বলল,
” কাল সকাল অবধি..”
ও কথাটা শেষ করার আগেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,
” নো, আমি আর এক মুহূর্তও এই বাড়িতে এলাও করব না তোমাকে।”
অনিমা শুধু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। ও কী করবে বুঝতে পারছেনা। আদ্রিয়ান বলল,
” আচ্ছা চল আমি সাহায্য করছি।”
বলে অনিমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করল। অনিমা অবাক আর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমাকে মেইন ডোরের সামনে এনে দরজা খুলে গিয়ে বলল,
” বেড় হও!”
অনিমা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। মানুষটা কী এতটাই নির্দয়? কই এতোদিন তো ওর এরকম মনে হয়নি? চেঁচামেচিতে সার্ভেন্টরাও উঠে গেছে। সবাই আড়াল থেকে দেখছে। অনিমার জন্যে মায়াও হচ্ছে ওদের। এতোদিনে মায়া পরে গেছে মেয়েটার ওপর। কিন্তু আদ্রিয়ানকে তো কিছু বলতেও পারবেনা। আদ্রিয়ান রাগী গলায় বলল,
” আই সেইড গেট আউট ফ্রম মাই হাউজ।”
অনিমা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান এবার ঘর কাঁপানো আওয়াজ করে বলল,
” আউট!”
অনিমা কেঁপে উঠল। ভয়ে গুটিগুটি পায়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল। আদ্রিয়ান সাথেসাথেই সোজা অনিমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল। অনিমা অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রইল ওখানে। বাইরে পরিবেশ, আকাশের অবস্থা বলছে রাতে জোরে বৃষ্টি নামবে, ঝড়ও হতে পারে। কোথায় যাবে এখন ও? কার কাছে যাবে?
#চলবে…
#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
১১.
আদ্রিয়ান দরজাটা বন্ধ করার পরপরই অনিমা আবার কেঁদে দিল। খুব ভয় লাগছে ওর কারণ আকাশে একটু পরপর মৃদু গ্রুম শব্দ আর আলোর ঝলকানি দেখা দিচ্ছে। ও কাঁদতে কাঁদতে দরজার সামনের সিঁড়ির ওপর বসে পরল। বেশ অনেকটা সময় ওখানেই বসে রইল। ওর মনের কোথায় আশা ছিল যে একটুপর আদ্রিয়ান ঠিক এসে দরজা খুলে দেবে কিন্তু সেটা আদ্রিয়ান করল না। অনিমার মনে এবার একটু জেদ চেপে গেল। ও ছোটবেলা থেকেই ভীষণ জেদি। আর সবাই বলে ওর এই স্বভাবটা নাকি ওর বাবার মত। অন্যায়ের সাথে ও কখনও আপোষ করে না, আর মাথা নিচু করতেও পারেনা। যত কিছুই হয়ে যাক ও অন্যায়টা মেনে নিতে পারে না আর না কারো সামনে নিজেকে ছোট করতে পারে। আর ওর জীবনের সব সমস্যার মূল কারণ ওর এই স্বভাবটাই। অনিমা চোখ মুছে উঠে দাঁড়াল। তারপর ভাঙা গলায় বলল,
” থাকবোনা আমি আর এখানে। চলে যেতে বলেছেতো লোকটা? সত্যিই চলে যাবো। কারো করুণা নিয়ে থাকবোনা এখানে। যা হওয়ার হোক। ”
কথাগুলো বলে অজানা উদ্দেশ্যে হাটতে শুরু করল ও। কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানেনা কিন্তু যেতে তো হবেই কিছু করার নেই। যত এগোচ্ছে ততই ওর ভয় বেড়ে যাচ্ছে ওর। কারণ ও যেই রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। সেই রাস্তায় বেশ নিরব, লোকজন নেই বললেই চলে। ইতমধ্যে হালকা বাতাস প্রবাহিত হওয়া শুরু হয়ে গেছে। ও খুব ভয় লাগছে এইমুহূর্তে। কী করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। শুধু এদিক ওদিক তাকিয়ে হাটছে আর চোখ দিয়ে নিরব ধারায় অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় সেটাই হল। ধীরগতিতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। অনিমা ভিজে যাচ্ছে তাই আশেপাশে তাকাচ্ছে একটা দাঁড়ানোর জায়গা খোঁজার জন্যে। হঠাৎ করেই ওর চোখ পাশের বড় বটগাছে গোড়ায় ছাওনিসহ সিমেন্ট দ্বারা তৈরী করা বসার জায়গায় পরতেই বুক কেঁপে উঠল ওর। কারণ পাঁচটা ছেলে ওখানে বসে ড্রিংক করছে আর টাস খেলছে। এখন কী করবে ও? লোকগুলো তো ড্রাংক অবস্থাতে আছে। ওর সাথে খারাপ কিছু করবে না তো? কীকরে পাস করবে লোকগুলোকে। এসব ভাবতে ভাবতে ওদের মধ্যে একটা ছেলের চোখ পরল অনিমার দিকে। ছেলেটা বাকি ছেলেগুলাকেও অনিমাকে দেখাল। বৃষ্টি ইতিমধ্যে মাঝারি আকার ধারণ করেছে। অনিমা এবার শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ইচ্ছে করছে দৌড়ে পালিয়ে যেতে কিন্তু পারছেনা। সেই শক্তিটাও পাচ্ছেনা।
____________
বাইরে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাই রঞ্জিত চৌধুরীর সাথে কবির শেখ ও এই বাড়িতেই এলেন। মিসেস লিমাও স্বামীর ফেরার অপেক্ষা করছিলেন। স্নিগ্ধাও ওনার পাশে বসে আছে।দুজনে বাড়ি ফিরে ওপর থেকে একেবারে ফ্রেশ হয়ে নামতেই মিসেস লিমা দুজনকে টেবিলে বসিয়ে খেতে দিলেন। স্নিগ্ধাও হেল্প করছে। কিন্তু এই দুটো লোককে ও সহ্যই করতে পারেনা। দেখলেই ঘৃণায় গা রি রি করে ওঠে ওর। মিসেস লিমা বললেন,
” রিক ফোন করেছিল। বারবার মেয়েটার সাথে কথা বলতে চাইছিল কোনমতে সামলে নিয়েছি।”
রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ একে ওপরের দিকে তাকালেন। রঞ্জিত চৌধুরী মিসেস লিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
” কী বলেছ তুমি?”
মিসেস লিমা ভয় নিয়েই সবটা খুলে বললেন যে রিককে কী বলেছেন আর তাকে কী কী বলেছে। সবটা শুনে রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,
” হ্যাঁ তোমরা এখন এখান থেকে যাও। খাওয়া হলে ডেকে নেব।”
মিসেস লিমা কিছু না বলে চলে গেলেন। স্নিগ্ধা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। সেটা দেখে কবির শেখ ধমক দিয়ে বললেন,
” তোমাকে কী আলাদাভাবে বলতে হবে?”
স্নিগ্ধার এইমুহূর্তে ভীষণ রাগ হচ্ছে এদের ওপর। কিন্তু চুপ থাকতে হচ্ছে নিজের পরিবারের কথা ভেবে। তাই দাঁতে দাঁত চেপে ওখান থেকে চলে গেল। স্নিগ্ধা চলে যেতেই রঞ্জিত চৌধুরী কবির শেখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” এখন কী করব ভেবেছ? রিক এলে বলব টা কী?”
কবির শেখ চিন্তা করতে করতে বললেন,
” রিকের আসতে এখনও অনেক দেরী আছে। ভাবতে হবে দ্রুত।”
” কিন্তু ওর যাতে কোনমতেই আমাদের ওপর সন্দেহ না হয়।”
” সন্দেহ তো হবেই। তবে ব্যাপরটা যাতে ঘোরানো যায় সেই ব্যবস্হা করছি। তবে আমি আবারও বলল আমাকে না বলেই এমন একটা কাজ করা তোমার উচিত হয়নি।”
রঞ্জিত চৌধুরী বিরক্তি নিয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষণ নিরব থেকে কবির শেখ আবারও বললেন,
” আর আমি যাই করছি সবটাই আমার দুই ভাগ্নের জন্যে। ওদের ভালো থাকাটাই আমার কাছে সবার আগে।”
রঞ্জিত চৌধুরী একটু শক্ত গলায় বললেন,
” আরে যা হওয়ায তাতো হয়ে গেছে বদলাতে তো পারব না। এসব কথা বাদ দিয়ে এখন ভাবো।”
কবির শেখ চামচ নাড়াতে নাড়াতে বললেন,
” এতো ভাবাভাবির তো কিছু নেই, এমন কিছু বলতে হবে যাতে সাপও মরে লাঠিও না ভাঙে। বরাবরের মতই সব দোষ ঐ মেয়েটার ঘাড়ে দিয়ে আমরা সাধু হয়ে বসে থাকব। ”
” সাধু?”
” উমহুম। সাধু বাঘ।”
রঞ্জিত চৌধুরীর শব্দ করে হেসে দিলেন।কবির শেখ কিছুক্ষণ গম্ভীরভাবে ভেবে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলেন।
_____________
অনিমা ভিজে চুবচুবে হয়ে গেছে বৃষ্টিতে। পাঁচজন ছেলেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মনে হল না দাঁড়িয়ে থাকলে হবেনা। এখান থেকে যেতে হবে ওকে। ও দ্রুতপদে হাটতে শুরু করল। ছেলেগুলাকে পাস করে চলেও গেল কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করল ছেলেগুলোও ওর পেছনেই আসছে। ওর হৃদপিণ্ড জোরে জোরে স্পন্দিত হচ্ছে। ও নিজের পায়ের গতি যত বাড়াচ্ছে, ছেলেগুলো তারচেয়েও দ্রুত হাটছে। অনিমা বেখেয়ালিভাবে দ্রুত হাটতে গিয়ে রাস্তার একটা গর্তের মধ্যে পা পরে গেল। পায়ে চোট পেয়ে মৃদু চিৎকার করে ওখানেই বসে পরল। ছেলেগুলো এসে অনিমার চারপাশটা ঘিরে দাঁড়ালো। অনিমা পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল ওর পা দিয়ে রক্ত বেড়োচ্ছে। ও ভীত দৃষ্টিতে তাকাল সামনের দিকে। ছেলেগুলো কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। অনিমা নিজের পা ধরে কেঁদে দিল। ওদের মধ্যে একটা ছেলে বলল,
” এতো রাতে বৃষ্টির মধ্যে একা একা কোথাও চলেছো।”
” আরে এরকম জিনিসগুলো রাতে একা বেড় হয় বলেইতো আমাদের রাতটা এন্টারটেইনিং হতে পারে।”
বলে এরা অট্টোহাসিতে ফেটে পরল। অনিমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে পর পর দুবার চেষ্টা করার পর উঠে দাঁড়াতে পারল ও। কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,
” দেখুন আমাকে যেতে দিন।”
ওর কথা শুনে আবারও হাসল ছেলেগুলো। যেনো অনিমা কোন জোকস বলেছে। আরেকটা ছেলে বলল,
” যেতে দেবোতো আগে আমাদের এরিয়ায় এসছো আর আমাদের একটু খুশি না করেই চলে যাবে। এটা কী ঠিক তোরা বল?”
বাকি সবাই তাল মিলিয়ে বলে উঠল, ‘নাহ একদমই না’। অনিমা বুঝতে পারছে ওরা ওকে ছাড়বেনা। তবে কী আজকের বর্ষণ ওর কাছ থেকে আবার কিছু কেড়ে নেবে। ওর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটাই। একটা লোক ওর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই ও একটা ইটের টুকরো ছুড়ে মারল লোকটার দিকে। টুকরোটা লোকটার মাথায় গিয়ে লাগল। অনিমা পালাতে গেলে আরেকজন ওকে আটকে নিল। যার মাথায় ইটের টুকরো লেগেছে সে চেঁচিয়ে বলল,
” খুব বেশি সাহস না ওর? আমায় আঘাত করছে? তেজ দেখাচ্ছে। চল আজ দেখি ওর কত তেজ আছে।”
ইশারা করতেই অনিমার গায়ের ওড়না টেনে নিয়ে নিল ছেলেটা। অনিমা চেষ্টা করেও ওড়নাটা ধরে রাখতে পারল না। শুধু এটুকু করেই থামেনি ওড়নাটা দিয়ে নিজের মুখ মুছে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিসে দিল। অনিমা দুহাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করে শব্দ করে কেঁদে দিল। ছেলেটা এগিয়ে এসে অনিমাকে ছুঁতে গেলেই একটা গাড়ি এসে থামল ওখানে। হেডলাইটের আলোতে চোখ বন্ধ করে ফেলল অনিমা। কারণ পুরো হেডলাইটের আলোটা অনিমার চোখের ওপর পরেছে। চোখ খুলে তাকাতে পারছেনা। বেশ অনেকটা সময় পর হেডলাইটের আলো বন্ধ হতেই চোখ খুলে তাকাল অনিমা। তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল কারণ ওর সামনে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা ভয়ে শক্ত হয়ে গেছে পুরো। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ভুলে উঠতে পারছেনা ও। লোকগুলো কোথায় গেল।অভ্র এগিয়ে এসে বলল,
” ম্যাম, আপনি ঠিক আছেন?”
অনিমা ভীত চোখে চারপাশে একবার তাকিয়ে আটকে যাওয়া কন্ঠে বলল,
” ও-ওরা..”
কথাটা বলে আবার কেঁদে দিল। অভ্র ভালো করে তাকাচ্ছেনা কারণ অনিমার গায়ে ওড়না নেই তার ওপর ভিজে আছে। অভ্র বলল,
” আচ্ছা ঠিকাছে, আপনি আসুন আমার সাথে।”
অনিমা কিছু ভাবতে পারছেনা এই মুহূর্তে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছে তাই অভ্র যা বলছে তাই করল। অভ্র অনিমাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসল। গাড়িতে একটা পাতলা চাদর রাখা ছিল অভ্র সেটা নিয়ে অনিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” ম্যাম এটা গায়ে জড়িয়ে নিন।”
অনিমা তাড়াতাড়ি গায়ে চাদরটা জড়িয়ে নিল। কিন্তু এখনও ওর কান্না থামেনি হিঁচকি দিয়ে কেঁদে চলেছে ওর। অভ্র গাড়ি চালিয়ে গাড়িটা আদ্রিয়ানের বাড়ির সামনে এনেই দাঁড় করাল। অনিমা অবাক হয়ে চারপাশে তাকিয়ে বলল,
” এখানে?”
অভ্র একটু হকচকিয়ে গেল তবুও হাসার চেষ্টা করে বলল,
” আপনিতো এখানেই থাকেন তাইনা?”
অনিমা মাথা নিচু করে কান্নামাখা গলায় বলল,
” আমি ওখানে আর যাবোনা।”
” তাহলে কোথায় যাবেন?”
অনিমা কোন উত্তর দিতে পারলনা। সত্যিই তো কোথায় যাবে ও? কিন্তু এই বাড়িতেও যাবেনা। ওর যাওয়ার কোন জায়গা নেই বলে কী আত্মসম্মানও নেই নাকি? যেই লোকটা ওকে এত রাতে এভাবে বেড় করে দিল তারওপর একবার খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করলনা যে মেয়েটা আদোও বেঁচে আছে কী-না তার কাছে থাকবেনা ও।
অভ্র বলল,
” দেখুন ম্যাম আজকে রাতের জন্যে হলেও আপনাকে এখানেই থাকতে হবে। কিছু করার নেই।”
অনিমা নির্জীব গলায় বলল,
” আপনার স্যার রেগে যাবেন যদি জানে যে আপনি আমায় নিয়ে এসছেন।”
অভ্র কিছু না বলে হাসল। তারপর বলল,
” সেটা আমার ওপর ছেড়ে দিন।”
অনিমা চেয়েও কিছু বলতে পারছেনা বাধ্য হয়েই অভ্রর সাথে গেল। ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে উঠছে ও, তারসাথে কিছুক্ষণ আগে ঘটা ঘটনাটার ভয়তো আছেই। অভ্র পরপর তিনবার বেল বাজানোর পর দরজা খুলল আদ্রিয়ান নিজেই। একটা চিকন স্লিভের গেঞ্জি আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আছে গলায় ঝোলানো টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে সামনে তাকিয়ে ওদের দুজনকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলল। অনিমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই মেয়েটা এখানে কী করছে?”
আদ্রিয়ানের এরকম কথায় অনিমার আরো জোরে কান্না পাচ্ছে, লোকটা এমন কেন? অভ্র ইতস্তত করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদ্রিয়ান বলল,
” ভেতরে এসো।”
অভ্র অনিমাকে ইশারা করতে ইচ্ছা না থাকলেও ভেতরে গেলো ও। অভ্র বলল,
” স্যার আমি তাহলে আজ আসি?”
” ডিনার করেছ?”
” জি স্যার।”
” ওকে গো।”
বলে অভ্র চলে গেল। আদ্রিয়ান দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওর পা থেকে মাথা অবধি একবার স্কান করল। তারপর বলল,
” দাঁড়িয়ে আছেন কেন ম্যাডাম? ভেতরে আসুন? আপনারই তো গোটা রাজ্যপাট। আমরা তো সব আপনার বেতনমুক্ত দেহরক্ষী। চলুন? আপনার সেবার জন্যে সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।”
অনিমা মুখ ফুলিয়ে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান আবারও অনিমাকে স্কান করে বলল,
” চলে যাওয়ার শখ মিটেছে নাকি এখনও বাকি আছে? দেখা হয়ে গেছে বাইরের সেফটি জোন? মান সম্মান কিছু আছে নাকি সবটা খুইয়ে দিয়ে এসছেন কোনটা?”
অনিমা মনে পোষা অভিমানেল পাহাড়টা আরও উঁচু হল। আরো জোরে কান্না পাচ্ছে এই মুহূর্তে ওর। এই লোকটা কী দেখতে পাচ্ছেনা ওর অবস্থা। তবুও এভাবে কীকরে কথা বলছে সে?একটুও মায়া হয়না? হার্টলেস মানুষ একটা। কিন্তু এত রাতে শাওয়ার নিয়েছে কেন তাও এই ঠান্ডা আবহাওয়ায়? এই লোকটার মাথায় তো গন্ডগোল আছে তাই যা খুশি করতে পারে। সেখানে এটাঅবিশ্বাস্য কিছু না।
#চলবে…
[ রি-চেইক করা হয়নি। টাইপিং মিস্টেকস গুলো বুঝে নেবেন।]