বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-০৮

0
1993

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৮.

আদ্রিয়ানের বাড়ির ড্রয়িং রুমের সোফায় আদ্রিয়ান, আদিব আর আশিস তিনজন বসে আছে। আদ্রিয়ান সিঙ্গেল সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে হেলান দিয়ে ভ্রু কুচকে দেখছে ওদের। আদিব আর আশিস দুজনেই বড় সোফায় বসে মাত্রাতিরিক্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে। আসলে ওরা কী বলবে আর কী দিয়ে শুরু করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ করে চমকে দেওয়ার মত কিছু দেখলে বা শুনলে এরকমই হয়। কী করবে বা কী বলবে সেটা বুঝে উঠতে পারছেনা। কথামতো বিকেলবেলা আদ্রিয়ানের বাড়িতে এসে সোজা ওর বেডরুমে ঢুকে একটা মেয়েকে দেখা ছিল ওদের প্রথম চমক। কিছুক্ষণের জন্যে ওরা স্টাচু হয়ে গিয়েছে। কারণ আদ্রিয়ানকে ওরা চেনে। মেয়েজনিত কোন নেশা বা আকর্ষণ আদ্রিয়ানের নেই সেখানে একটা মেয়েকে ওর রুমে ওর বেডে হেলান দিয়ে বসে বসে বই পড়তে দেখে চরম অবাক হয়েছিল। আশিস তো আদিবকে খোঁচা মেরে বলেই বসেছিল, ‘ভাই আদ্রি কী এখন আমার স্টার্টিজি এপ্লাই করা শুরু করল না-কি?’ কিন্তু আদিবের চোখ রাঙানিতে থেমে গেছে। আদ্রিয়ান জানতো ওদের রিঅ্যাকশন এরকমই হবে। তাই ওর ভাবমূর্তিতে তেমন পরিবর্তন হয়নি। অনিমার সাথে ফরমালি একটু আলাপ করিয়ে ওদের দুজকে নিয়ে নিচে চলে এল। এরপর ওদের প্রশ্নকরা শুরু হলো। তাই ওদের শান্ত করতে সবটা খুলে বলল ও। আর সেসব শুনে দ্বিতীয় দফা চমকেছে ওরা। একটা বেশ দীর্ঘসময়ের নিরবতার পর নিজেকে সামলে নিয়ে আদিব বলল,

” মানে তুই মেয়েটাকে সোজা নিজের বাড়িতে নিয়ে এলি?”

আশিস অবাক হয়েই বলল,

” ভাই তুই তো গাড়ির ফ্রন্ট সিটেও কোন মেয়েকে এলাও করিস না। সেখানে কেমনে কী? তারওপর মেয়েটার জন্যে তিনদিন যাবত বাড়ি বসে আছিস? তুমি কেসটা যতটা নরমাল বলছ এতটাও নরমাল না গুরু।”

আদিবও এবার আশিসের কথায় সায় দিয়ে বলল,

” সেটাই, সামথিং ইজ দেয়ার!”

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে ‘চাহ’ টাইপ আওয়াজ করে বলল,

” এতো বেশি বুঝিস কেন? নাথিং ইজ দেয়ার। একটা মেয়ে বিপদে পরেছে। আমি জাস্ট সাহায্য করেছি। নাথিং ইলস।”

আদিব ভ্রু উচু করে বলল,

” তাই বলে এতটা হেল্প?”

” তো কী করতাম? রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতাম না-কি?”

আদিব, আশিস দুজনেই হাসল। ওরা জানে যে আদ্রিয়ান চাইলেই পুলিশের দায়িত্বে অনিমাকে রেখে ফিরে আসতে পারত। কিন্তু ও রেখে আসেনি। কিন্তু এখন আদ্রিয়ানকে ঘাটানোও ঠিক হবে না তাই চুপচাপ মেনে নিল। আশিস বলল,

” তোরই কপাল। এভাবে যদি আমার..”

আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আশিস থেকে গেল। আদ্রিয়ান হালকা রাগী কন্ঠে বলল,

” অন্যসব জায়গায় যা খুশী করিস। কিন্তু ওর দিকে তাকাবিও না।”

আশিস অবাক হয়ে বলল,

” নাউজুবিল্লাহ! আমি তো ওকে ওলরেডি ভাবী বলে মেনে নিয়েছি। কী সব বলিস তুই।”

আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে আশিস এর দিকে তাকিয়ে বলল,

” একটু বেশিই দূরে চলে গেছেন আপনি, এতটাও ভাবতে বলিনি।”

আদিব এবার মজা করা বন্ধ করে সিরিয়াসলি বলল,

” হ্যাঁ এখন বলত নেক্সট প্লান কী? মানে কী করবি ওকে নিয়ে?”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে বলল,

” এখনও কিছু ভাবিনি। যেভাবে চলছে আপাতত চলতে থাক। পরের টা পরে দেখা যাবে। এখন এসব ছাড় কফির সাথে কী খাবি বল?”

আশিস উৎসাহ নিয়ে বলল,

” চিকেন ফ্রাইটাই বেটার একটু ঝাল ঝাল করে।”

আদিব আশিসের পেটে একটা গুতো মেরে রেগে গিয়ে বলল,

” দুপুরেই তো ভুরিভোজ করে এলি। এত খাই খাই করিস কেন? খালি গিলতেই জানিস?”

আদ্রিয়ান হেসে দিল, আদিবও হাসল। আশিস মুখ ফুলিয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছ। আদ্রিয়ান হাসতে হাসতেই বলল,

” আচ্ছা ছাড়।”

বলে সার্ভেন্টকে ডেকে কফি আর ঝাল করে মাংস ভাজা নিয়ে আসতে বলল। আদিব বলল,

” মেয়েটার কী যেন নাম? হ্যাঁ অনিমা। ওকেও ডাক।”

আদ্রিয়ান একবার ওপরের দিকে তাকিয়ে বলল,

” নাহ থাক। সন্ধ্যার পরপরই খাবার দেব ওকে। আপাতত বই পড়ছে, পড়ুক।”

আদিব আর আশিসও কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পর খাবার চলে আসতেই আদিব আর আশিস খাওয়া শুরু করল। আদ্রিয়ান শুধু কফিটা খেল। কারণ সন্ধ্যায় অনিমার সাথেই খাবে তাই। খেতে খেতে তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দিল। খাওয়া শেষ করে ওরা তিনজন কথা বলছিল এমন সময় অনিমা নিচে নেমে এল। অনিমা দেখে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে গেল। উঠে গিয়ে অনিমার কাছে গিয়ে বলল,

” কিছু লাগবে তোমার?”

অনিমা মাথা নেড়ে না করে বলল,

” আসলে ওপরে একা একা ভালো লাগছিল না তাই নিচে চলে এলাম।”

” ভালো করেছ, বসো।”

অনিমা গুটিগুটি পায়ে ওপর সিঙ্গেল সোফায় গিয়ে বসল। আদিব আর আশিসকে দেখে ওর আনইজি লাগছে তাই মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। আদ্রিয়ানও কিছু বলছে না ফোন দেখছে ও। আদিব অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” অনিমা?”

অনিমা হালকা চমকে গিয়ে আদিবের দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় বলল,

” জি ভাইয়া?”

” আমাদের দুজনকে নিজের বড় ভাই মনে করতে পারো। এত নারভাস হওয়ার কিছু নেই। হুম?”

” জি।”

আশিস বলল,

” আর আমরা কিন্তু মোটেও এত সিরিয়াস পার্সন নই। তাই ফ্রিলি আমাদের সাথে কথা বলতে পারো। যদিও আদ্রিয়ান আমাকে বাদর বলে আমি কিন্তু মোটেও তা নই। পিওর মানুষ আমি।”

অনিমা আশিসের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে দেখছে অনিমাকে। মেয়েটা হাসেনা কেন? ওর তো দেখতে ইচ্ছে করে মেয়েটাকে হাসলে কেমন লাগে? ওর হাসির আওয়াজ কেমন? কিন্তু এই তিনদনে মেয়েটা হাসেও নি।

আরো কিছুক্ষণ গল্প করে সন্ধ্যার আগে আদিব আর আশিস চলে গেল আদ্রিয়ানও অনিমাকে ওর রুমে যেতে বলে আদিব আর আশিসের সাথেই একটু বেড়োলো।

_____________

স্নিগ্ধা নিজের রুমের বিছানায় বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছে। খুব অসহায় লাগছে এখন নিজেকে। যখন একটা মানুষের সামনে এত ভয়াবহ, অমানবিক, নৃশংস অন্যায় হতে থাকে আর তার চুপ করে সবটা মেনে নেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকেনা আর চেয়ে বড় অসহায়ত্ত্ব আর কিছু হতেই পারেনা। স্নিগ্ধা অন্যায় মেনে নেওয়ার মতো মেয়েই না কিন্তু আজ তাকে সবটা মেনে নিতে হচ্ছে, তাকে বাধ্য করা হচ্ছে।

বিকেলে মিসেস লিমার মুখে সবটা শুনে টুলে বসে কাঁদতে কাঁদতে সিগ্ধা ভাবছিল রিককে ফোন করে সবটা বলবে। অনিমার সাথে রঞ্জিত চৌধুরী কী করেছে। এখনও খুব বেশি দেরী হয়নি। রিককে বললে ও ঠিক অনিমাকে ঐরকম জায়গা থেকে বেড় করে নিয়ে আসতে পারবে। স্নিগ্ধা এসব ভাবতে ভাবতেই মিসেস লিমা বললেন,

” রিককে কিছু জানাস না। ও জানলে ভয়ংকর কিছু হয়ে যাবে। ওর বাবা মানুষ না। নিজের স্বার্থে যত নিচে নামা যায় নামতে পারেন উনি।”

স্নিগ্ধা চোখ মুছে বলল,

” এটা অন্যায় হবে মামনী। আমি এখনই রিকদাকে সবটা জানাচ্ছি।”

সিগ্ধা ফোন তুলে কল করতে গেলে মিসেস লিমা আবার বলল,

” তুই বুঝতে পারছিস না এই লোকটা সব করতে পারে।”

স্নিগ্ধা কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে পুরুষ কন্ঠে কেউ বলে উঠল,

” ঠিক বলেছো আমি যা খুশি তাই করতে পারি।”

স্নিগ্ধা আর মিসেস লিমা চমকে তাকালো পেছন দিকে। রঞ্জিত চৌধুরী শয়তানী হাসি দিয়ে এগিয়ে এসে বললেন,

” ঠিক সেইজন্যে আমাকে না ঘাটানোই ভালো। একদম চুপ থাকবে। এইকথা জেনো আর কেউ না জানতে পারে।”

স্নিগ্ধা চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” আর যদি বলি?”

” তোমার নিশ্চয়ই অনিমা যেখানে আছে সেখানে যাওয়ার কোন শখ নেই?

মিসেস লিমা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলেন। উনি কিছু বলার আগেই স্নিগ্ধা বলল,

” তো আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?”

” যদি তোমার সেটা মনে হয় তো তাই।”

” আর আমি যদি বলি আমি একদমই ভয় পাইনি তাহলে?”

রঞ্জিত চৌধুরী রাগে ফুসতে ফুসতে চাঁপা গলায় বললেন,

” বেশি সাহস দেখানো একদম ভালো না। তোমাদের মত চুনোপুঁটিদের তো একদমই না।ঐ মেয়েটাও দেখিয়েছিল। কিন্তু পরিণতি কী হয়েছে দেখেছ?”

চলো তোমাকে কিছু দেখানোর আছে। বলে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ড্রয়িং রুমে। কবির শেখও আছেন ওখানে। স্নিগ্ধাকে নিয়ে ওখানে দাঁড় করিয়ে ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে ইশারা করল। স্নিগ্ধা ল্যাপটপ স্ক্রিনে তাকিয়ে চমকে উঠল। কারণ ওর বাবাকে দেখাচ্ছে। অফিসে বসে কাজ করছেন উনি। রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,

” ভালো করে তাকিয়ে দেখ। আমার একটা কলের সাথে সাথেই তোমার বাবার মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়া হবে। তুমি কী সেটা চাইছ?”

স্নিগ্ধা কেঁদে দিয়ে বলল,

” নাহ প্লিজ।”

কবির শেখ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

” তাহলে চুপচাপ সেটাই করো যেটা তোমাকে করতে বলা হচ্ছে। বাবাইকে যা বলার আমরা বলব। তুমি শুধু নিজের মুখটা বন্ধ রাখবে। মনে থাকবে?”

এসব কথা চিন্তা করে আরও জোরে কাঁদছে স্নিগ্ধা। ওদের কথা মানতে বাধ্য হয়েছিল ও। এখন আফসোস হয় পড়াশোনার জন্যে এখানেই কেন থাকতে এল ও? যদি এখানে না আসত তাহলে আজ আর যাই হোক ওকে এসব জঘন্য লোকজনদের দেখতে হত না। কিন্তু এখন চাইলেও এখান থেকে বেড়োতে পারছেনা ও।

_____________

সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই অনিমা বসে বসে সেই বইটা পড়ছে আর আদ্রিয়ানের আসার অপেক্ষা করছে। আদ্রিয়ান কেন আসছেনা? এত দেরী করছে কেন? নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হল অনিমা। যেই লোকটাকে ও তিনদিন আগে অবধি চিনতোই না, সে কিছুক্ষণ না থাকাতে ওর ভালো লাগছেনা কেন? এই তিনটা দিন আদ্রিয়ান অনিমার আশেপাশে ছায়ায় মত লেগে ছিল। ওর কখন কী লাগবে, কোন সমস্যা হচ্ছে কি-না, সবরকম খেয়াল রেখেছে। তাই হয়ত ওর এরকম লাগছে। দরজা খোলার আওয়াজে অনিমা তাকিয়ে আদ্রিয়ান দেখল আদ্রিয়ান চলে এসছে, ওর হাতে মাংস ভাজা আর কফির দুটো মগসহ ট্রে। অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এগিয়ে ট্রে টা বিছানার ওপর রেখে বলল,

” চল অনেক বই পড়েছ, এবার খেয়ে নাও।”

অনিমা বইটা পাশে রেখে বলল,

” এসবের কী দরকার ছিল?”

” দরকার ছিল। সেই দুপুরে কিছু খেয়েছ। এখনও তো আর কিছুই খাওয়া হয়নি তোমার।চল নেও শুরু কর। আমারও খিদে পেয়েছে।”

বলে একটা মাংসের পিছ নিয়ে খেতে শুরু করে দিল। অনিমাও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা পিছ নিয়ে দাঁত দিয়ে ছিড়ে মুখে নিল। পর পর দু তিনবার নিয়ে বেশ অনেকখানি মাংস মুখে পুরেই চিবোতে শুরু করল। চিবোনোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওর ঝালে মুখ জ্বলতে শুরু করল। ও কোনমতে গিলে ঝালে অস্হির হয়ে মুখ হা করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। আদ্রিয়াধ ভ্রু কুচকে তাকাল অনিমার দিকে। ওকে এরকম করতে দেখে দ্রুত ট্রে তে মাংসটা রেখে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,

” কী হয়েছে অনি? কোন প্রবলেম?”

অনিমা জোরে শ্বাস নিতে নিতে হাফানো কন্ঠে কোনমতে বলল,

” ঝাল!”

অনিমার নাক লাল হয়ে উঠেছে, চোখ দিয়ে জ্বল বেড়োচ্ছে ইতমধ্যে। আদ্রিয়ান দ্রুত পানির গ্লাসটা নিয়ে অনিমার মুখের সামনে ধরল। ও ঢকঢক করে সবটুকু জ্বল খেয়ে নিল। কিন্তু এতে ওর ঝাল কমল না। আদ্রিয়ান দ্রুত সার্ভেন্ট কে ফোন করে বলল মধুর বোয়াম টা নিয়ে আসতে। কিন্তু ঝালে অস্হির হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ানের অনিমার এই অবস্থা কোনমতেই সহ্য হলনা। ও কিছু না ভেবেই অনিমার ঘাড়ের পেছনে হাত রেখে ওর মুখে ফুঁ দিতে শুরু করল। ও নিজেও জানেনা ও এই অপ্রয়োজনীয় কাজটা কেন করছে। কিন্তু করছে। অনিমা যখন খেয়াল করল যে আদ্রিয়ান ওর এতটা কাছে চলে এসছে ও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ান। ঝালে কষ্ট পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তবুও আদ্রিয়ানকে দেখছে। আদ্রিয়ানও অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এতোটাই গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যে আদ্রিয়ানও এই দৃষ্টিতে হারিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে কারো গলা ঝারার আওয়াজে চমকে তাকাল দুজনেই। দরজার কাছে সার্ভেন্ট হাতে মধুর বোয়াম আর চামচ নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান দ্রুত অনিমাকে ছেড়ে ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়িয়ে গলাটা হালকা ঝেড়ে গিয়ে মধুর বোয়ামটা নিয়ে ওনাকে যেতে বলে দরজাটা লক কর দিয়ে অনিমার কাছে এসে চামচে মধু নিয়ে বলল,

” হা করো।”

অনিমা বাধ্য মেয়ের মত দ্রুত ‘হা’ করল। আদ্রিয়ান এক চামচ ভরাট করা মধু অনিমার মুখে দিয়ে দিয়ে বলল,

” সময় নিয়ে ধীরে ধীরে গেল।”

অনিমা মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান ভাবছে মাংসটা বেশ ঝাল ঠিকই। কিন্তু এতোটাও তো না। তারমানে কী মেয়েটা একদম ঝাল খেতে পারেনা? আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুমি একদমই ঝাল খেতে পারোনা তাইনা?”

অনিমা একদম বাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে ডায়ে বায়ে মাথা নেড়ে বোঝাল যে না। আদ্রিয়ান হেসে দিল। তারপর বলল,

” সরি, আমি আসলে জানতাম না ব্যাপারটা। আমার বোনটাও কিন্তু পুরো এরকম। একদমই ঝাল খেতে পারেনা।”

অনিমা বলল,

” আপনার ফ্যামিলিতে কে কে থাকে? আর তারা কোথায়?”

” বাবা, মা আর ছোট বোন। সবাই আপাতত চট্টগ্রাম আছেন। ”

” ওহ।”

” টিনেজ বয়সে আমি কী করতাম জানো?”

অনিমা ভ্রু নাচালো। আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” আমার সব পছন্দের খাবারে বেশি করে ঝাল মিশিয়ে রাখতাম যাতে আমার বোন খেতে না পারে। ওর সে কী কান্না। খামচে আমার হাত পা লাল করে ফেলতো।”

অনিমা মুচকি হাসলো। আদ্রিয়ান খেয়াল করল হাসলে অনিমার ডান গালে সুন্দর একটা টোল পরে, বা গালেও পরে কিন্তু একেবারেই ছোট। আবার নতুন করে বুকে ধাক্কা লাগল আদ্রিয়ানের। এভাবে হাসল কেন মেয়েটা? এখন ওর ভেতরে যে ঝড় শুরু হয়েছে সেটা থামানোর দায়িত্ব কী এই মেয়ে নেবে? যাই হোক মেয়েটাকে হাসাতে পেরেছে তাতেই খুশি ও।

_____________

ক্লাবের এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে ড্রিংক করছে রিক চৌধুরী। মিনিস্টার রঞ্জিত চৌধুরীর একমাত্র ছেলে সে। যার মনে হয় সে চাইলেই সব পেতে পারে। সে কোনকিছু চাইবে আর সেটা পাবেনা সেটা কল্পনা করাও যেন পাপ। আজ অবধি এমন কোনদিনও হয়নি যে সে চাওয়ার পরেও কিছু পায়নি। এমনি এমনি না পেলে জোর করেই নিজের করে নিতে জানে সে। ক্লাবে এমনিতে সবাই মেয়েদের সাথে ডান্স করছে কিন্তু রিকের মেয়েদের প্রতি কোন আগ্রহ নেই। আগেও ছিলোনা। তবে ধনী বাপের উচ্চবিলিশী ছেলে হওয়ায় আগে একটা অবাধ মেলামেশা ঠিকই করত। কিন্তু যেদিন থেকে নীল রঙের গ্রাউন পরা অনিমা নামক শ্যামবর্ণের একটা মেয়ের মায়ায় নিজেকে জড়িয়েছে সেদিন থেকে এসব অর্থহীন লাগে। ওর তো শুধুই ওর নীলপরীকেই চাই। আর কাউকে দিয়ে কী করবে? কতদিন ওকে দেখেনি। চোখটা যে বড্ড তৃষ্ণার্ত নীলপরীকে দেখার জন্য। বড্ড অস্হির লাগছে ওর। স্নিগ্ধা গেছে তো ঐ বাড়িতে অনিমার কাছে? ফোন করছে ধরছেনা কেন? পাঁচদিন যাবত অনিমার গলার আওয়াজটা শুনতে পায়না ও। ওখানে আর ভালো লাগছে না। তাই আধমাতাল অবস্হাতেই ওখান থেকে বেড়িয়ে এল ও। টলতে টলতে নিজের রুমে এসে চেঞ্জ না করেই শুয়ে পরল বিছানায়। শুয়ে পরার সাথেসাথেই চোখে ঘুম ভর করল চোখে। অর্ধঘুমন্ত অবস্থায় বিড়বিড় করে বলল,

” মিসিং ইউ সো মাচ নীলপরী।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে