বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-২১+২২+২৩

0
110

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২১

স্নিগ্ধ সকালের আলোয় ঘুম ভাঙ্গে ওয়াসিমার সে আড়মোরা ভাঙ্গতেই বুঝতে পারে সে আবসারের বাহু বন্ধনে বন্দীনি ঘুমের ঘোরেও হলে আবসার তাকে শক্ত আলিঙ্গনে বন্দীনি করে রেখেছে আবসারের থেকে নজর সরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সকাল সাতটা বাজে এরমধ্যেই আবার ঝনঝনিয়ে আবসারের ফোন বেজে ওঠে।

ফোনের রিংটোনে আবসারের ঘুম হালকা হয় অন‍্য হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে দেখে অরিক ফোন করেছে

— শা*লা কই গায়েব হয়ে বসে আছিস আমার বোনটাকে নিয়ে সকাল বেলা তোর বাসায় এসে দুয়ারের সামনে বসে থাকা লাগছে

— আরো একঘণ্টা বসে থাক আমি আসতেছি আর দারোয়ানকে ফোন দিয়ে বলছি আমি চেয়ার দিয়ে যেতে শুধু আমার শশুর শাশুড়ি বসবে চেয়ারে তুই যদি বসিস তোর বা*ম নিয়ে ভবিষ্যতে বসতে পারবি না বলেই অরিককে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয়।

ওয়াসিমাকে আরো একটু নিজের সাথে চেপে ধরতেই __ আমাকে কি ভর্তা বানানোর ইচ্ছা আপনার আর আপনি আমার ভাইয়ার সাথে এইরকম ভাবে কথা বলতে পারেন না ( চোখ ছোট ছোট করে গাল ফুলিয়ে বলল )

আবসার ওয়াসিমা ফুলা ফুলা গালে কতগুলো চুমু দিয়ে বলে — তোর ভাইয়ের আগে সে আমার বন্ধু আর বন্ধুর সাথে সব করা যায় বুঝিয়াছেন মহাশয়া

— জ্বী মাননীয় এবার আমাকে ছাড়েন আম্মু আব্বু এসে মনে হয় বাইরে বসে আছে

-” উহু আরো কিছুক্ষণ থাকো

— বললেই হলো ছাড়েন তো বলেই ছাড়াতে নিলে আরো জাপটে ধরে আবসার।
অনেকক্ষণ পরে বহু কষ্টে আবসারের থেকে ছাড়া পায় তখন ঘড়ির কাটা আটটা পার হয়ে গেছে।

সে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বের হয় ঘর থাকে রান্নাঘরে উকি দিতেই দেখে তানিয়া সাখাওয়াত বাসন মাজছে

— মামনি আমি করি

— উঠে গেছো মা তোমার কিছু করা লাগবে না আমি সব রেডি করে নিয়েছি নাস্তা আমাদের সহ বেয়াই বেয়ানের জন‍্য টিফিন ক‍্যারিয়ারে নিয়ে নিয়েছি তোমাদের ফ্ল‍্যাটে গিয়ে সবাই একসঙ্গে খাব।
ওয়াসিমা তার কথা শুনে একটা মিষ্টি করে হাসি দেয়। সবাই বেড়িয়ে পরে ওয়াসিমাদের বাসার উদ্দেশ্যে এহসান সাখাওয়াত ও আজকে অফিস যায়নি। বাসে বসে জানালার ধারে উদাসীন ভাবে তাকিয়ে আছে আরু হিজাবের এক অংশ বাতাসে উড়ছে আগে আরু হিজাব না পরলেও বর্তমানে ওয়াসিমাকে দেখে দেখে সেও হিজাব পড়া শুরু করে তার ভালো লাগে পরতে। আজ অনেক দিন পর আরু তার প্রিয়তমের দেখা পাবে তাকে দেখে তৃষ্ণা মিটাবে। সেদিন লাবনীর ব‍্যাপারটা মিটমাট হয়ে যাওয়ার পর থেকে অরিকের একদন্ড দেখা পায়নি আরু। অবশ‍্য প্রতিদিন একবার করে ফোন দেয় সে কিন্তু অরিক ফোন রিসিভ করে না। আরু ভেবে পায়না কিভাবে অরিকের মান ভাঙ্গাবে,,,

________________

বিরক্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে আছেন ইরফান
— এর মতো বেয়াদব আমি আজ পযর্ন্ত দেখিনি সেই কখন থেকে বসে আছি এখনো আসার নাম গন্ধ নেই,,

— ছেলেটা যদি বাসায় আসতে না আসতেই ওর সাথে লেগে যাও না তাহলে আজকে তোমাকে আমি ডাইনিংয়ে শোয়াব বলে দিলাম।

স্ত্রীর থ্রেড মূলক বার্তা শুনে চুপ হয়ে গেলেন ইরফান কিন্তু তার আদলের বিরক্তি ভাবটা গেলো না সে ভ্রু জোড়া কুচকে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে

বিশ মিনিট পর ওয়াসিমারা পৌছায় তাদের বাসায়। ওয়াসিমা বাবাকে দেখেই দৌড়ে যায় ঝাপটে ধরে বাবাকে। ইরফান সাহেব মেয়েকে স্নেহের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলায় বাবার আদর মাখা পরশে ওয়াসিমা ঝরঝরিয়ে কেদেঁ দেয়। পিছন থেকে আকলিমা আর অরিক একসাথে বলল — হো আমরা তো কেউনা চাইলে পাইনা। বাবাকে পেয়ে গেছেনা তাই আমাদের ভুলেই গেছে চলো আম্মু আমরা চলে যাই

ওয়াসিমা হালকা হেসে তাদের জড়িয়ে ধরে তারাও ওয়াসিমাকে দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। পারিবারিক এই মিলন মেলা এখানকার প্রত‍্যেকরই ভালো লাগছে।

— আসসালামু আলাইকুম ভাই সাহেব ভালো আছেন ( এহসান সাখাওয়াত ইরফান সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল )
ইরফান সালামের উত্তর নিয়ে নিজেও সালাম দেয় ঐ দিকে তানিয়া, আকলিমা নিজের মতো পরিচয় হয় গল্প শুরু করেছে।
— এবার বাকি গল্প ঘরের ভিতরে ঢুকেও করতে পারি ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল অরিক।
অরিকের কথা শুনে সবার হুশ আসে যে তারা বাইরে বসেই গল্প করছে
সবাই হেসে দেয় আবসার গেট খুলে দিলে সবাই ভিতরে ঢুকে

— মাহতারাম / মাহতারমা সবার সাথে পরে কথা হবে আগে আমাকে একটু নিদ্রা যাবার ব‍্যবস্থা করে দিন বলেই ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বলল — বনু আমাকে একটু ঘুমানোর জায়গা করে দে

-” চলো ভাইয়া আমি বিছানা ঠিক করে দিচ্ছি বলেই অরিককে নিয়ে পাশের রুমে চলে যায় ওয়াসিমা।
সবাই সোফায় বসে গল্প করছে আবসার চলে যায় নিজের ঘরে

— তা ভাই আমাদের অরিক বাবা কি করে

— ভাই আমার ছেলেটা সরকারি কলেজের টিচার ওর জন‍্যই ঢাকায় আসা এখানেই একটা সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে ট্রান্সফার হয়েছে

— ও তা বেশ ভালো বিয়ে সাদী দিবেন না মাশা-আল্লাহ আপনাদের স্টাবলিশ ( বললেন তানিয়া সাখাওয়াত )

— হ‍‍্যা আপা সেই চিন্তাতেই আছি আমার বড় আপা তার মেয়ের জন‍্য প্রস্তাব দিয়েছে আমরা যদি অরিক রাজী হয় তাহলে তাকেই আনব

আকলিমার কথা শুনে আরুর বুকটা ধক করে উঠল সে কিছুতেই মানতে পারল না অরিকের সাথে অন‍্য কারোর বিয়ের কথা।
তার কান্না আসছে কিন্তু এখানে কান্নাকাটি করা যাবে না আবার বড়দের পাশে থেকে উঠতেও পারছেনা।

রান্নাঘরে দাড়িয়ে ওয়াসিমা আরুর মুখের এক্সপ্রেশন পুরোটাই খেয়াল করেছে সে মনে মনে কিছু ভেবে হালকা হেসে নিজের কাজ করতে থাকে। ওয়াসিমাদের ছোট্ট ডাইনিং টেবিলে জায়গা হবে না দেখে সবাই সোফায় বসেছে আবসার টেবিলের চেয়ার গুলো এনে টি টেবিলের সামনে রাখে যেখানে দুইটা টি টেবিলে নাস্তার ছড়াছড়ি।
সবাই নাস্তা শুরু করলেও আরু কিছু মুখে দিতে পারছে না। সেটা আবসার ওয়াসিমা লক্ষ‍্য করে আবসার ওয়াসিমার দিকে তাকালে ওয়াসিমা হাসি বিনিময়ে করে আবসার চারপাশে একবার তাকিয়ে দেখে সবাই নিজের খাওয়ায় ব‍্যস্ত সে আলতো করে ওয়াসিমার হাত ধরে ওয়াসিমা আবসারের দিকে তাকাতেই তাকে চোখ মারে।
খুব জোরে বিষম লাগে ওয়াসিমার আবসার দ্রুত পানি দেয় পানি খেলেও কাশি থামে না কাশতে কাশতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে আকলিমা ওয়াসিমার মাথায় ফু দেয় আর পিঠে মাসাজ করে বলে — এখনো বড় হলি না বাচ্চাদের মতো খাস কি এতো তাড়া যে গবগব করে গিলতে হবে

— আমার মেয়েটার কি দোষ আশে পাশের মানুষেরা যদি বেয়াদবের মতো আমার মেয়েটাকে জ্বালায় তাহলে তার কি

ইরফান সাহেবের কথা শুনে ওয়াসিমা লজ্জায় লাল হয়ে যায় সে চা বানানোর বাহানায় দ্রুত উঠে পরে। আবসার ওয়াসিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তার পিছু নেয় খাবারের থালা নিয়ে। তারা যেতেই আকলিমা ইরফান সাহেবকে চোখ রাঙ্গানি দেয়

— কি যা সত‍্যি তাই বলেছি তোমার প্রান প্রিয় মেয়ের জামাই আমার মেয়েটাকে একদন্ড শান্তিতে থাকতে দেয়না।

আকলিমা আফসোসের নিঃশাস ছাড়ে আর বাকীরা মিটমিট করে হাসতে থাকে। তানিয়া সাখাওয়াতের ভালো লাগল ওয়াসিমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করে সে মনে মনে একটা পরিকল্পনা করে ফেলল এখন আবসারের সাথে কথা বললেই হয়ে যাবে। তাদের আবসারের প্রতি যে ভালোবাসা বিশ্বাস নিশ্চয়ই তারা আবসারের কথা ফিরিয়ে দিবে না।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২২

— আমি পারব না মামনি। তোমাদের স্ট‍্যাটাসের সাথে অরিকদের স্ট‍্যাটাস আলাদা আমাদের আরুর সাথে তার বিয়ের কথা কিভাবে বলো।

— মানে বাবাই তুই কি আমাকে কখনো দেখেছিস ঐ লোক দেখানো স্ট‍্যাটাসের বড়াই করতে

— তুমি করনা বলে তোমার মেয়ে করবে না এমন কথা তো কোথাও নেই।

— মানে তোর কথার কিছুই আমি বুঝলাম না

— তুমি আরুকে যেয়ে জিজ্ঞেস করো তাহলেই সব উত্তর পেয়ে যাবে। আবসারের কথা শেষ হতেই তানিয়া কোনো কথা না বলে অন‍্য ঘরে যায়। আরু বিছানায় বসে উদাসীন ভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে কারো ছোয়ায় সেদিক থেকে নজর সরিয়ে নেয়
— কি হয়েছে আম্মু
তানিয়া সাখাওয়াত কোনো কথা না বলে তাকে হিড়হিড় করে টেনে আবসারের ঘরে নিয়ে যায় আবসারের সামনে আরুকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে — এগুলো কি বলছে বাবাই আরু

— কি হয়েছে আম্মু ভাই কি বলেছে। ভাইয়া কি হয়েছে আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল

— তুমি কি কখনো স্ট‍্যাটাসের তুলনা করেছে কারো সাথে। তানিয়ার কথা শেষ হতেই আরু মাথা নিচু করে ফেলে
— এখন মাথা নিচু কেনো সত‍্যি করে বলোতো কি হয়েছে এমন কিছু নিশ্চয়ই হয়েছে যা আমরা জানি না অথচ তোমরা দুই ভাই বোন জানো

— আমি বলছি মামনি। আরু যখন প্রথম আমাকে আনতে সিলেট যায় তখন তার অরিকের সাথে দেখা হয় সেই প্রথম দেখাতেই অরিক তাকে পছন্দ করে। আমাকে বললে আমি মানা করে দেই কিন্তু সে হার মানেনি সে আরুর পিছনে লেগে থাকত আরু যখনই আসত তখনই আরুর পিছু পিছু ঘুরত। একবার তো আরুকে প্রোপোজ করে বসে আরু ফিরিয়ে না দিলেও মানা করেনি তারপরেও অরিক হাল ছাড়ে নি। এক সময় আরু একসেপ্ট করে নেয় অরিকের প্রোপোজাল ভালোই দিন কাটল। হঠাৎই একদিন আরু সিলেট আসে অরিককে ডাকে সেদিন আমাদের মাষ্টার্সের শেষ পরীক্ষা তাই আমিও যাই ওর সাথে কিন্তু আরু জানত না —,,,,,”–

-” হঠাৎই এতো ইমারজেন্সি আসলে যে
পার্কে বসে থাকা আরুর সামনে বসে হাপাতে হাপাতে বলল অরিক আবসার তখন পিছনেই মাত্র সে অরিকের সামনে আসতে নিবে তখনই আরুর কথা শুনে থেমে যায়

— আমি রিলেশনটা আর রান করতে চাচ্ছি না

— মানে এসব কি বলছ তুমি অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করল অরিক,,

— হু যা বললাম তাই সত্যি তোমার সাথে আমার কোনোভাবেই যায় না আমাদের স্ট‍্যাটাস আলাদা তোমাদের স্ট‍্যাটাস আলাদা তোমরা মধ‍্যবিত্ত তোমার ফ‍্যামিলিতে আমি কখনও সুখী হবো।

-” রিলেশনের এতোদিন পর স্ট‍্যাটাসের কথা মনে পরল। যাই হোক আমি অনেক পরিশ্রম করব দিনরাত হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে তোমার সব আবদার পুরোন করার চেষ্টা করব অনুনয় স্বরে বলেই আরুর গালে হাত দিতে নিলেই আরু সরে যায়।

-” একবার কথা বললে কথা কানে যায়না নাকি বলেছি না তোমার জীবনের ধরন আলাদা আমার জীবনের ধরন আলাদা সো স্টে অ‍্যাওয়ে ফ্রোম মি ওকে বলেই পিছন ফিরে পা বাড়াতে নিলেই অরিক তার হাত পিছন থেকে ধরে

— এমন করো না আরু জান আমার সাথে আমি মরে যাব প্লিজ আমি নিঃশেষ হয়ে যাব। কান্না করতে করতে বলল অরিক সেইদিন প্রথম আরু অরিককে কান্না করতে দেখেছিল পিছন ফিরে একবার অরিকের অশ্রুসিক্ত আদলে চেয়ে আবার সামনের দিকে ফিরে বলল — আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না আমার অন‍্য একজনের সাথে সম্পর্ক আছে তাকে আমি ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করব তার সাথে আমার সব দিক দিয়েই মিলে বলেই চলে গেলো। অরিক মাটিতে বসে চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিলো আরু চলে যেতেই অরিকের কাছে আবসার আসে। সেদিন থেকেই দুষ্টু অরিক শান্ত শীষ্ট হয়ে গেলো আবসার দশটা কথা বললে একটার উত্তর দিতো খাওয়া দাওয়ার ঠিক নেই আবসার প্রতি বেলা জোর করে খাওয়াতো। সারারাত বসে বসে কান্না করতো এইসব মেনে নিতে না পেরে আবসার তাকে নিয়ে অরিকের বাড়ি আসে। সেখান থেকে আরুর সাথে কথা বলার জন‍্য সাখাওয়াত বাড়ি যায় সেখানে গিয়েই জানতে পারে এইসব তাকে দিলরুবা সাখাওয়াত করতে বলেছে বিনিময়ে আবসারের জন‍্য সাখাওয়াত বাড়ির দরজা খোলা সারাজীবনের জন‍্য।

আবসারের কথা শেষ হতেই তানিয়া সাখাওয়াত ঠাসস করে থাপ্পর মারে আরুর গালে। আরু অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকায়,,,

— আম্মু

— তুমি যা করার নিজেই করলে হ‍্যা একবারও আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না,, আরু ঝাপটে ধর তানিয়া সাখাওয়াতকে অনবরত কান্না করতে থাকে আর বলতে থাকে -” ঐ লোকটাকে আমি অনেক ভালোবাসি আম্মু তাকে কষ্ট দিতে চাইনি আম্মু আমিও তো তাকে ছাড়া ভালো ছিলাম না তার পাশে তাও ভাই ছিলো আমার পাশে কাউকে পাইনি আর কাউকে বলতেও পারিনি। তানিয়া সাখাওয়াত বুঝেন মেয়ের পরিস্থিতি সে আবসারের দিকে তাকায়

— আমি কথা বলে দেখব মামনি কিন্তু এই বিষয়ে
অরিককে জোর করতে পারব না।
তানিয়া সাখাওয়াত মাথা নাড়িয়ে চলে যায় আরুকে নিয়ে। তারা যেতেই ওয়াসিমার ফোন আসে
-” মামনি কি বলল

— কি বলবে আর আরু জোরালো ভাবে একটা থাপ্পর পেয়েছে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল

-” ইয়া আল্লাহ্ মামনি আপুকে মেরেছে নাকি

-” আমি পারলে আরো দুই একটা মারতাম অরিকের সেই কষ্টের দিন গুলো দেখেছি আমি ওকেও ততটুকু কাদাব আমি বুঝেছিস। যাই হোক তোদের আসতে আর কতক্ষণ

— আর আধ ঘন্টা

— হু তাড়াতাড়ি আয় আমি রাখছি বলেই কেটে দেয় কলটা।
অরিকের জন‍্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে এই কথাটা আবসার আর ওয়াসিমার প্ল‍্যান ছিলো তারা এই ভাবে আরুকে জেলাস ফিল করিয়ে কথা বের করতে চেয়েছিল কিন্তু বিকেলে তানিয়া সাখাওয়াতের ইঙ্গিতে তাদের রাস্তা আরো সহজ হয়।
তাইতো সবাই যখন অরিকদের ফ্ল‍্যাটের জন‍্য মালামাল পত্র কিনতে বের হয় তখন আবসার থেকে যায় আর তানিয়া সাখাওয়াত থাকে আবসারকে তার মনের কথাটা বলতে যা আরু আর অরিকের বিয়ের ব‍্যাপারে।

_______________________

রাতের দিকে সবাই খাবারের টেবিলে বসলেও আরু নিজের ঘরেই থাকে।
আবসার সবার দিকে তাকায় দেখে সবাই চুপচাপ খাওয়াতে ব‍্যস্ত তার মনে হয় এটাই সঠিক সময়

— আম্মু আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে আপনারা সবাই খাবারের পরে একসাথে বসবেন

— কি কথা বাবাজি

-” সেটা নাহলে তখনই বলি। আবসারের কথার উত্তরে আকলিমা মাথা নাড়িয়ে আবার খাওয়া শুরু করে কিন্তু ইরফান সাহেব আবসারের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে আবসারও তার দিকে তাকিয়ে চোখ মারে

— বেয়াদব ছেলে বিড়বিড় করে বলে আবার নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই একসাথে বসে আছে আবসার কি বলে জানার জন‍্য এর এহসান ও তানিয়া জানলেও। আকলিমা আর ইরফান শুধু ধারনার মধ‍্যে আছে কিন্তু যাকে নিয়ে কথা সেই এখনো বাসায় আসে নাই ওয়াসিমা ফোন করেছিল বলল সে আসছে পাঁচ মিনিটের মধ‍্যে। একটু পরে কলিং বেলের শব্দ দরজা খুলল ওয়াসিমা

— এতো দেরী হলো ক‍্যান ভাই

— আজকে তো আবসার কারখানায় যায়নি তাই আমি গিয়েছিলাম সব গুছিয়ে আসতে আসতেই একটু দেরী হয়ে গেলো বলেই ওয়াসিমা মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে ঘরে ঢোকে।

— আম্মু তোমরা এখনো এখানে কেনো চলো ঘরে যাই ভিতরে আকলিমা আর ইরফানকে দেখে বলল।

— রিক এখানে বস

— কিছু বলবি আবসার

— হ‍্যা সবাই চাচ্ছে তোর আর আরুর বিয়ের দিতে।
আবসারের কথা শুনে বসা থেকে দাড়িয়ে যায় অরিক যাওয়ার আগে শুধু এইটুকুই বলল — সম্পর্ক হয় সমানে সমানে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৩

__ঘোর অমানিশায় ডুবে আছে আকাশ। প্রতিদিন আকাশে ছোট ছোট তারা রুপালি থালার মতো চাদঁ থাকলেও আজকে আকাশ কেমন থম মেরে আছে।

— আজকে আমার মতো তোমার ও মন খারাপ আকাশ “” ও আকাশ তুমি জানো সে তার পরিবার আজকে আমার সাথে তার বিয়ের কথা বলেছে। তুমি বলোতো তাকে সব ভুলে কিভাবে মেনে নেই,, যে আমাকে এতো কথা শুনানোর পরেও বেহায়ার মতো তাকে ফোন দিতাম সেটাও সে ইগনোর করত তাও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু সে যেদিন আমার বাবা মা তুলে গালি দিয়েছিল আমার আম্মু আব্বুর শিক্ষায় আঙ্গুল তুলেছিল সেই দিন থেকে মনস্থির করেছিলাম আর যাই হোক ঐ মেয়ের কাছে আর কোনোদিন ফিরে যাব না। ( আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলতে থাকে অরিক )

— মানুষ মাত্রই ভুল ভাইয়া
ওয়াসিমার কথা শুনে পিছনে তাকায় অরিক। ওয়াসিমা ভাইয়ের পাশে ভাতের থালা নিয়ে ভাত মাখিয়ে মুখের সামনে ধরে। অরিক নিঃশব্দে ওয়াসিমার হাতে খেয়ে নেয় এতক্ষণ চুপচাপ থাকলেও এখন মনে হয় খিদেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে,,

— তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাসো ভাইয়া

— এটা আবার কেমন কথা ওয়াসুমনি। তোকে আমি কতটা ভালোবাসি তুই জানিস না দুনিয়ার সব একদিকে তুই আরেকদিকে

— তাই বলে তোমার বন্ধু বলাতে এক কথায় তার সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজী হয়েছো

— কথাটা সেরকম না ওয়াসুমনি। আবসার তোকে অসম্ভব ভালোবাসে যার সাক্ষী আমি তোকে পাওয়ার জন‍্য ছটফট করেছে আর আমি জানতাম আবসার তোকে সুখে রাখবে

— আচ্ছা ভাইয়া তোমাকে বাবা যদি কখনো বলত আমার নিজের বোন আর বন্ধুর মধ‍্যে কাউকে বেছে নিতে তুমি কি করতে
( প্রশ্নটি করেই ওয়াসিমা হাতের লোকমাটা অরিকের মুখে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায় )
ভাত মুখে নিয়ে অরিক চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে উত্তর তার জানা কিন্তু বলতে পারছে না -” সে অবশ্যই তার বোনকে বেছে নিতো হ‍্যা বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়ায় তার কষ্ট হতো কিন্তু সে জানে সে তার বোনকেই বেছে নিতো যাকে সন্তানের মতো লালন করেছে তাকে কিভাবে ছেড়ে দিতো।

— বললে না ভাইয়া আর ভাত চিবাও গালে গুতো দিয়ে বলল ওয়াসিমা “‘ অরিক চুপ থাকলে আবার বলা শুরু করল — তুমি যেমন নিজের বোনকে বেছে নিতে আরু আপুও কিন্তু সেই কাজটা করেছে সে ভেবেছে তার দুঃখী ভাইটাকে যদি একটু পরিবারের সুখ দেওয়া যায়। তাহলে সে সর্বরকম চেষ্টা করবে তাই তোমাকে ছাড়তে দ্বিতীয়বার ভাবেনি।
অরিক মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে ওয়াসিমা হাতে খালি থালাটা নিয়ে দাড়িয়ে পরল যাওয়ার আগে সে শুধু অরিককে একটা কথাই বলল -” ভেবে দেখো ভাইয়া

“- মানলাম তোর কথাই ঠিক তারপরেও ওর কি উচিৎ ছিলো সব কিছু ঠিক হওয়ার পর একবার জানানো সবকিছু। সে কি একবারও চেষ্টা করেছে আমার সাথে যোগাযোগ করার,,,

— তা ঠিক আপু সেটা করেনি কিন্তু সে যদি করত চেষ্টা তুমি তাকে ক্ষমা করে তার কথা শুনতে

— আজকে শুনতাম না কালকে শুনতাম না কিন্তু একদিন ঠিকই শুনতাম কই তার দিক থেকে তো কোনো রকম প্রচেষ্টা আমি দেখিনি কখনও।

অরিকের কথা শুনে ওয়াসিমা ভাবে আসলেই তো আরুর কেনো প্রচেষ্টা কারোর চোখেই পরেনি ।

— আর বসে না থেকে ঘরে যাও ঘুমিয়ে পরো। আর ভাবী হিসেবে আমি আরু আপুকেই চাই আব্বু আম্মু মামনিদের হ‍্যা বলে দিয়েছে। বলেই ওয়াসিমা চলে হ‍্যা ইরফান আর আকলিমা বিয়ের জন‍্য রাজী হয়েছে তারা জানে অরিক আরুকে অনেক ভালোবাসে। অরিক বর্তমানে না করলেও পরে ঠিক হয়ে যাবে তাইতো তারা আর দেরী করতে চায়নি সামনের শুক্রবার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ঘরোয়া ভাবে আকদ করে পরে দুইজনের মান অভিমান ঠিক হলে ধুমধাম করে ওয়ালিমা করবে।

__________________

দরজার নব ঘুরিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে আবসার এক কাত হয়ে শুয়ে আছে। ওয়াসিমা পাশে শুতেই তরাক করে তাকে ঝাপটে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে পরে। ওয়াসিমা প্রথমে ভয় পেলেও পরে শান্ত হয়

-” আপনি কখনও শোধরাবেন না

-” উহু বলেই আরো শক্ত বাধনে বাধে
ওয়াসিমাও দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ‍্যে।

নিস্তব্ধ নগরীতে সবাই ঘুমিয়ে পরলেও পেচার মতো জেগে আছে দুটি নর-নারী। ছাদের দেয়ালের কার্নিশ ঘেসে দেয়ালে হ‍্যালান দিয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে তার মনে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে অর্ধেক আনন্দ অর্ধেক কষ্ট কোনটা প্রকাশ করবে ভেবে পায়না।

অন‍্যদিকে,,
আরু ঘরের জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে সে বিয়ের ঠিক হয়েছে এই কথাটা জানে না। সে জানে অরিকের সাথে তার সেই খালাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে সবাই তাকে তাই বলেছে। অরিক চাইছে বিয়েটা তাড়াতাড়ি করতে তাই সবাই সামনের শুক্রবার বিয়েটা ঠিক করা হয়েছে।
আরুর এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে সে অরিককে ভালোবাসে তার অন‍্যকারো সাথে বিয়ে হতে পারে না না
— ভাবী আমাকে সাহায্য করতে পারবে। আমি এখনই ভাবীর কাছে যাব বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলেই থেমে যায় আরু এখন রাত আর গিয়েই বা কি বলবে — যে তোমার ভাইকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি এতো কষ্ট দিয়েছি যে সে আমার হাত পা ধরতেও দ্বিধাবোধ করেনি। না না আমি বরং কাল সকালেই বলল হ‍্যা ভেবেই থেমে যায় অথচ আরু জানতো না কাল দিনটা তার বেশ ভারী যাবে।

______________

— আম্মা কাল আয়মান আসছে আলিয়া সাখাওয়াত রাতে সবাইকে খাবার দিতে দিতে বলল

— সেটা আসারই কথা তাকে ভালো লেখা পড়া করানো এবং তার ভালো ভবিষ্যতের জন‍্যই তো সব করা তাইনা।

— আমি এভাবে কিছু বলিনি আম্মা

— সে যাই হোক বড় খোকা আমি কালকে ছোটর বাড়িতে যাব আরুর বিয়ে তো তাই তোকে মনে হয় ফোন করেছিল।

— হ‍্যা আম্মা আমি তোমাকে সকাল সকাল দিয়ে আসব,,

— আরুর বিয়ে কই আমাকে কিছুতো বললে না কথার মাঝখানে আলিয়া সাখাওয়াত বলল

— হ‍্যা আমি আর আম্মা সকালে যাব তুমি যদি যাও তো রেডি থেকে ওহ তুমি আবার কিভাবে যাবে কালতো আবার আয়মান আসছে।

এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে আলিয়া সাখাওয়াত কিছু বললেন না আজকে তার শাশুড়ির কথাও বেশ অন‍্যরকম লাগল সে কি কিছু জানতে পেরেছে নাকি।
তার ভাবনার মাঝেই দিলরুবা সাখাওয়াতের খাওয়া শেষ হয়ে যায় সে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে নিজের ঘরে যায় যেতে যেতে সাখাওয়াত ভিলার চারিদিকে তাকায়। তার সর্বপ্রথম ভুল তানিয়াকে না মানা। দ্বিতীয় ভুল ইরিনাকে এজাজের বউ করে আনা তৃতীয় ভুল ছিলো সেদিন আলিয়ার সব কথা শুনে প্রতিবাদ না করা তাকে বিশ্বাস করা।
এবার থেকে আলিয়া বুঝবে যার জন‍্য করবে চুরি সেই বলবে চোর — অন‍্যের ছেলের জন‍্য কুয়ো খুরলে সেই কুয়োতে নিজেই পরতে হয় এবং সেই দ্বিতীয় কুয়োটা খুরেছে দিলরুবা সাখাওয়াত নিজে খুড়েছে ভেবেই হালকা হাসল দিলরুবা সাখাওয়াত।

— কাল আয়মান কখন আসবে খেতে খেতে বলল এজাজ সাখাওয়াত

— বলল তো সকাল ফ্ল‍্যাইট ল‍্যান্ড করবে

— হু আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো

— তুমি যাবে না

— কালকে আম্মাকে এহসানের বাড়িতে ছাড়তে যাব এককাজ করো তোমার ছোট ভাইতো আমাদের সাথে থাকে এখন তাকেই নাহয় বলো এয়ারপোর্ট যেতে বলেই উঠে পরে।
আলিয়া তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ইদানীং এজাজ কেমন যেনো তার থেকে দূরে দূরে থাকে কেনো কিছু ভেবে পায় সব যেনো এক ঝটকায় এলোমেলো হয়ে গেছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে