বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
166

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৫

কোচিং সেন্টারের সামনে দাড়িয়ে আছে আবসার ওয়াসিমা কোচিং সেন্টারটা তাদের বাসার থেকে পায়ে হেটে দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত সকাল দশটায় ওয়াসিমার ক্লাস তাই আবসার তাকে নিয়ে আসে তাকে কোচিং সেন্টারে পৌঁছে দিয়েই চলে যাবে অফিসে সে

— মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করবি ওয়াসিমার মাথার হিজাব ঠিক করতে করতে বলল আবসারের কথা শুনে ওয়াসিমা হালকা হেসে মাথা নাড়ায়। আবসার ওয়াসিমাকে ক্লাসে পৌঁছে দিয়ে ম‍্যানেজারের সাথে কথা বলে আসে।
ক্লাসের মধ‍্যে বসে আছে ওয়াসিমা সে একাই বেঞ্চিটাতে বসে আছে এখানে মোটামুটি সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে নিজেদের মত গল্প করছে অচেনা জায়গায় ওয়াসিমার একটু খারাপ লাগে কিন্ত কিছু করার নেই সব পরিবেশে মানিয়ে নীতে হবে তাই ভেবেই চুপচাপ বসে থাকে এর মধ‍্যেই ক্লাসে শিক্ষক প্রবেশ করেন সবাই দাড়িয়ে তাকে সালাম দেয়

— আজকে তোমাদের প্রথম ক্লাস তাই আজকে কোনো ক্লাস নয় একটু পরিচিত হব একজন আরেকজনের সাথে পড়াশোনা করতে আসলে পরিচিত হলে বন্ধুত্ব হলে তোমাদের এবং আমাদের ভালো লাগবে। একে একে সবাই পরিচিত হয় সবার শেষে আসে ওয়াসিমার পালা আসে

— আসসালামু আলাইকুম আমি ওয়াসিমা ইস্তত স্বরেই বলল সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে ওয়াসিমার দিকে তাই তার অস্বস্তিটা আরেকটু বেড়ে যায় কিন্তু এসবের মাঝে একজন ব‍্যক্তি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে সেই দিকে তার ধ‍্যান নেই সে মাথা নিচু করে স‍্যারের সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে বসে পড়ে।

______________________

— আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন আসেননি কেনো
আবসার অফিসে ঢুকতে না ঢুকতেই কোথা থেকে জুলি এসে তাকে কথাটি বলল। জুলির কথায় বিরক্ত হয় আবসার তাকে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে নিতেও থেমে যায় অতঃপর গম্ভীর স্বরে বলল — আমি এই কম্পানির একজন এমপ্লই আমার সকল কাজের জবাব এম ডি স‍্যারের কাছেই দিব আর হ‍্যা এরকম হুটহাট আমার কেবিনে আসবেন না কোনো কিছুর দরকার হলে আপনার পি একে পাঠাবেন এখন আপনি আসতে পারেন বলেই আবসার নিজের মতো ফাইলে মুখ গুজে।
জুলি অনিমেষ আবসারের দিকে তাকিয়ে থাকে সে হেরে যাবার পাত্রী না সে যেকোনো ভাবেই আজকে আবসারকে নিজের মনের কথা জানাবেই
— আবসার আমি আজকে একটা জায়গা যাব তুমি একটু আমার সাথে যাবে প্লিজ তুমি গেলে অনেক হেল্প হবে অনুনয় ভঙ্গিতে বলে

— আমার অনেক কাজ জমা আছে মিস জুলি আমি প্রায় একসপ্তাহ পরে অফিস এসেছি অনেক কাজ জমা আছে শক্ত কন্ঠে বলল আবসার তারপরেও মিস জুলি যাচ্ছেনা দেখে আবার আবসার বলল — আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে বেতন দেয় না মিস আমি এখন কাজ করব আপনি আসুন। আবসারের কথা শুনে জুলি নিরাস হয়ে চলে যায়
মিস জুলি চলে যেতেই আবসার পিয়নকে ডাক দেয়

— আসব স‍্যার

— হ‍্যা আমার কেবিনের দরজা সহ পুরো ফ্লোর ভালো করে পরিষ্কার করবে বলেই আবসার বের হয়ে যায় কেবিন থেকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে — ব্লাডি স্ল‍্যাটার্ন সে কি ভেবেছে আমি তার উদ্দেশ্য জানিনা হিপোক্রিট গার্ল মনে মনে কিছু ভেবে সে ক‍্যান্টিনের উদ্দেশ্যে যায়।

_____________________

সাখাওয়াত ভিলার আলিশান ড্রইংরুমে বসে আছে এজাজ সাখাওয়াত একটু পরেই ইরিনা সিড়ি দিয়ে নামে সে এজাজ সাখাওয়াতের সামনে বসতেই তাকে এজাজ সাখাওয়াত গম্ভীর স্বরে বলল — কিছু নোটিশ পেয়েছিলেন আপনি

— হ‍্যা এবং সেই নোটিশের পরোয়া আমি করি না আইনত এখনো আমি তোমার স্ত্রী সেই হিসেবে তোমার সকল সম্পত্তির অংশীদার আমি এবং আমাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার অপরাধে আমি তোমাকে জেলেও দিতে পারি বলেই ইরিনা জামান হাসল। যেটা এজাজ সাখাওয়াতের কাছে গা জ্বালানো হাসি মনে হলো।
তিনি কিছু না বলে হাসল তার হাসির বিনিময়ে হাসি মুখেই বলল — যার জন‍্য এতো কিছু সেই তো এখন নেই
এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে হাসি মিলিয়ে গেলো ইরিনার। এজাজ সাখাওয়াত ইরিনার শুকনো মুখে তাকিয়ে তার ফোন বের করে কিছু দেখায়। যা দেখে ইরিনা সাথে সাথে দাড়িয়ে যায় ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে।সে এজাজ সাখাওয়াতের ফোনে একটা ছেলের গতি বিধী লক্ষ্যে করে কিছু ভিডিও ক্লিপস।
তার ভয়ার্থ মুখের দিকে তাকিয়ে এজাজ সাখাওয়াততের হাসিটা আরো চওড়া হয়

— সত‍্য কখনো লুকিয়ে থাকে না আকাশ চন্দ্র সূর্যের মতো প্রকাশিত সত‍্য যেটা হাজার চেষ্টা করলেও লুকানো যায় না আপনি কি ভেবেছেন আপনার যে একটা অবৈধ ছেলে আছে সেটা কেউ জানতে পারবে না।
এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনেও দমে যাওয়ার পাত্রী সে না তাই ঝাঝালো স্বরে বলল — তোমার কাছে কি প্রমান আছে এই ছেলেটা আমার ছেলে

— প্রমান আপনার চোখ যা মাতৃ স্নেহে জলজল করছে তারপরেও যদি আপনি বলেন যে এই ছেলেটা আপনার ছেলেটা না তাহলে তার আশে পাশেই আমার লোকজন ঘুরঘুর করছে মেরে ফেলি তাকে কি বলেন কে মরল কে বাচল তাতে তো আপনার কিছু যায় আসে না তাই না বলেই ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কল ডায়াল করে ইরিনা দৌড়ে এসে এজাজ সাখাওয়াতের হাতে থেকে ফোন নিয়ে জোরে আছার মারে ফ্লোরে ফোনটা দু টুকরো হয়ে যায়।

— চু চু এবার করো দেখি ফোন

— আপনি ভাঙবেন তবু মচকাবেন না বলেই ব্লেজারের পকেট থেকে আরেকটি ফোন বের করে

ইরিনা সেটাও নিতে গেলে হাত সরিয়ে দেয় এজাজ — আমি ফোন না দিলেও আধ ঘন্টা পর আপনার ছেলে বুম
তার কথা শুনে ইলিনা ধপ করে বসে পরে এই সুযোগে এজাজ তার সামনে ডিভোর্স পেপার রাখে ইরিনাও নিঃশব্দে সাইন করে দেয়।

ডিভোর্স পেপারে হাত বুলায় এজাজ এইতো তার মুক্তির সনদ। কাবিন নামা নামক একটা কাগজে সাইন করে এই মহিলাটি তার জীবনে দুর্বিষহ করতে দুবার ভাবেনি এইভাবেই তালাক নামায় সাইন করে সে মুক্তি পেয়েছে এখন সব ঠিক করার পালা এই মহিলার জন‍্য যত সম্পর্ক ভেঙেছে সব জোড়া লাগাবে সে একটু কষ্ট হবে কিন্তু সে হাল ছাড়বে না ভেবেই উঠে দাড়ায় যাওয়ার আগে ইরিনাকে দুই দিনের মধ‍্যে বাড়ি খালি করতে বলে যায় সে এই বাড়িতে নতুন ভাবে কাজ করাতে চায় পরসু দিনই লোকেরা এসে কাজ শুরু করবে।

এজাজ সাখাওয়াত যাওয়ার পরে নিঃশব্দে উঠে নিজের ঘরে চলে যায় ইরিনা।

____________________

ওয়াসিমা ছুটির পরে বাইরে আসতেই দেখে তার জন‍্য আরু দাড়িয়ে সেও আই এল টি এস করার জন‍্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে যেটা ওয়াসিমার কোচিং সেন্টারের দুই তলায়

— আপু তুমি এখনো বাসায় যাওনি আরো আগে না তোমার ছুটি হয়েছে

— না ভাবী যাইনি দুজন তো এক বাসায় যাব তো ভাবলাম একসাথেই যাই

— তাও এতক্ষণ দাড়িয়ে ছিলে শুধু শুধু

— সমস‍্যা নেই চলোতো বলেই ওয়াসিমার হাত টেনে নিয়ে যায় দুই ননদ ভাবী হাটতে হাটতে বাসার দিকে এগোয়

— একটা কথা বলি আপু
— হ‍্যা বলোনা জিজ্ঞেস করার কি আছে হাসি মুখে আরু বলল। ওয়াসিমা তাকায় তার দিকে তার মনে হচ্ছে হাসিটা নকল

— তুমি কি আমার ভাইয়াকে আগে থেকেই চিনতে

— হ‍্যা চিনতাম তো ভাইয়ার বন্ধু হিসেবে সিলেটে অনেকবার দেখা হয়েছে

— শুধু এইটুকুই সন্দিহান ভাবে বলল ওয়াসিমা

— হহ‍্যা কোনো রকম ভাবে বলল আরু
কিন্তু ওয়াসিমার কথাটা বিশ্বাস হলোনা সে সিলেটে থাকাকালীন দেখেছে অরিক আর লাবনীকে দেখে কেমন উদাসীন থাকত।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৬

আবসার যখন বাসায় ফিরে তখন সন্ধ‍্যা প্রায় ওয়াসিমা মাগরিবের নামাজ শেষ করেই রান্না চরিয়েছে এক চুলায় আরেকটি চুলায় হালকা কিছু খাবারের ব‍্যবস্থা করছে এর মধ‍্যেই কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেয়। ক্লান্ত আবসার হাতে বাজার নিয়ে দাড়িয়ে আছে বাজার দেখে ওয়াসিমার চোখ কপালে

— এতো বাজার কালকেই না বাজার করলেন ( আবসারের হাতের থেকে কিছু ব‍্যাগ নিতে নিতে বলল )

— কালকে মা বাবা আসবে সাথে অরিক তাই বাজার করলাম পরসু থেকে এইটু ব‍্যস্ত থাকব বাসায় কখন আসব ঠিক নেই তাই কয়েকদিনের বাজার একসাথে করে রাখলাম সোফায় বসতে বসতে বলল আবসার
ওয়াসিমা কিছু না বলে ব‍্যাগ গুলো ড্রয়িং রুমের ফ্লোরে রেখে রান্নাঘরে চলে যায় আবসারের জন‍্য শরবত করতে। আবসার এর মধ‍্যে কিছু ব‍্যাগ আলাদা করে আরুকে ডাক দেয়

— কখন আসছো ভাইয়া ঘরের থেকে বের হতে হতে বলল আরু

— একটু আগেই এসেছি এটা নে হাতে থাকা ব‍্যাগটা আরুকে দিয়ে বলে

— কি এতে

— এই পযর্ন্ত তো তোকে কিছু দেইনি আজ ভাবলাম কিছু দেই ভাইয়ের সাধ‍্য মতো দুই সেট থ্রি পিছ আছে আবসারের কথা শুনে আরু কিছু না বলে তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে
— এই কাপড় গুলো আমার কাছে অমূল্য ভাইয়া বলেই হু হু করে কান্না করে দেয় আরু
ওয়াসিমা রান্নাঘর থেকে আবসারের জন‍্য শরবত এনে দেখে আরু আবসারের বুকে কাদছে আর আবসার তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে

— কি হয়েছে আপুর কাদছে কেনো
আরুকে কান্না করতে দেখে বলল ওয়াসিমা তার কথা শুনে আরু আবসারের বুক থেকে মাথা উঠায় চোখ মুখ মুছে হাসির রেখা টেনে ওয়াসিমার চিবুকে হাত রেখে বলল — খুশিতে ভাবী তুমি আমাদের দুই ভাই বোনের জন‍্য সুখের চাবি কাঠি তুমি আসতে সব আস্তে আস্তে কেমন ঠিক হচ্ছে।
ওয়াসিমা আরুর কথার আগা মাথা কিছু বুঝে না তাই সে আবসারের দিকে তাকায় আবসার হালকা হাসে

— খুশী হোক আর যাই হোক আপু এখন না কেদেঁ এই কান্না জমিয়ে রাখো আরুর হাতে পাস্তার বাটি ধরিয়ে দিয়ে বলল। পাস্তার বাটি দেখে আরু ওয়াসিমাকে বলে — ভাবী একা একা করতে গেলে কেনো আমি বলিনি আমি আসছি।

— সে রাতের রান্না আর কালকের রান্নার সময় করো এখন এটা খাও আর আপনার জ ( বলে সামনে তাকাতেই দেখে আবসার নেই ঘরে চলে গেছে ভেবে আরুকে খেতে বলে ঘরে চলে যায় সাথে করে আবসারের জন‍্যও একবাটি পাস্তা নিয়ে যায় )
ঘরে ঢুকে আবসারকে পায়না সে ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসতেই বুঝে সে ওয়াশরুমে আছে সে ট্রেটা বেডের সাইটের টেবিলে রেখে আবার রান্নাঘরের যায় কিছুক্ষণ পরে আবসার বেড়িয়ে এসে ওয়াসিমাকে ঘরে না দেখে বিরক্ত হয় সে ইচ্ছে করেই তখন ঘরে চলে আসে যাতে ওয়াসিমাও তার পিছু পিছু ঘরে আসে কিন্তু দেখো এই মেয়ে এসে আবার চলে গেছে তাই সে কর্কশ শব্দে ওয়াসিমাকে ডাকল — ওয়াসু কই তুই ওয়াসু

আবসারের হাক ডাক শুনে আরু দ্রুত রান্নাঘরে আসে — ভাবী তুমি ঘরে যাও আমি দেখছি

— এই তো আপু ভাত গর দিয়েই যাই ভাতের মার ছাড়াতে বলল ওয়াসিমা
— আরে তুমি যাও তো বলেই ওয়াসিমাকে রান্নাঘর থেকে ঠেলে বের করে দেয় ওয়াসিমা চলে যায় নিজের ঘরে
— কি হয়েছে আর আপনি এখনো শরবতটা খাননি
আবসার কি না বলে তার পাশে বসতে বলে ওয়াসিমা আবসারের পাশে বাবু হয়ে বসে আবসার অর্ধেকটা শরবত নিজে খেয়ে বাকিটা ওয়াসিমা সামনে ধরে ওয়াসিমাও বীনা বাক্যে খেয়ে নেয় কারণ জানে বলেও লাভ হবে না তারপর দুজনেই একসাথে পাস্তা খেতে শুরু করে

— আপনি জানলেন কিভাবে কালকে আব্বু আম্মু আসবে

— অরিক ফোন দিয়েছিল ওর ট্রেনিং শেষ আবার ঢাকার মধ‍্যে একটা কলেজে ট্রান্সফার হয়েছে তাই আমি আমাদের বাসার বিল্ডিংয়ে একটা ফ্লাট ভাড়া করে রেখেছি চার তলায়

— সত‍্যি আবসারের কথায় উচ্ছসিত কন্ঠে বলল
আবসার কিছু বলে না শুধু মাথা নাড়ায় — আলমারিতে কতগুলো শাড়ি আছে সাথে কিছু থ্রি পিছ আর দুইটা বোরখা এনেছি বাইরে গেলে অবশ্যই বোরকা পরে বের হওয়া চাই।
খেতে খেতে মাথা নাড়ায় ওয়াসিমা — আমি আর খাব না এবার আপনি খান আমার রান্না চুলায় আমি যাই
আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমাকে বক্ষে মিশিয়ে নেয়

— বেশী কিছু করতে হবে না তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করে একটু রেষ্ট কর আর সারাদিনে পড়তে বসেছিলি। আর কোচিং কেমন লেগেছে

— হ‍্যা কোচিং ভালোই লেগেছে কিন্তু একা একা আনইজি ফিল হয় আর কোচিং থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই বিকালে ঘুম আসেনি তখন পড়তে বসেছিলাম।

— এইতো লক্ষী বউ বলেই আবসার ওয়াসিমার কপালে দীর্ঘ চুম্বন করে
আবসার ছেড়ে দিলে ওয়াসিমা চলে যায়। আবসার ও নিজের কাজে ব‍্যস্ত হয়ে পরে তার সাখাওয়াত গ্রুপ এন্ড কম্পানি ছাড়ার ইচ্ছা আছে সে আর চাকরি করতে চায় না নিজের প্রচেষ্টায় ব‍্যবসা দাড় করানো ইচ্ছা আছে তাই চাকরির পাশাপাশি একটু একটু করে নিজের পুজিঁ জমা করছে যাতে ব‍্যবসায় মূলধন হিসেবে ব‍্যবহার করতে পারে। সেই হিসেবে ছোট খাটো ব‍্যবসা সে আর অরিক মিলে শুরু করছে। মূলধনটা অবশ‍্য দুইজনের সমান কিন্তু অরিক আপাতত চাকরিটা ছাড়তে পারছে না সরকারি চাকরী বললেই তো আর ছাড়া যায় না।

_____________________

সাখাওয়াত ভিলায় নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে এই বাড়ির প্রত‍্যেকটা ফার্নিচার চেঞ্জ করা থেকে শুরু করে সব কিছুর পরিবর্তন করা হচ্ছে বাড়ির কাজের বুয়া থেকে শুরু করে দারোয়ান পরিবর্তন হয়েছে পুরো বাড়িতে সিসিটিভি ক‍্যামেরা ইনস্টল করা হয়েছে সব মিলিয়ে বর্তমানে কেউ দেখলে বলতেই পারবে না এটা আগের সাখাওয়াত ভিলা যেটা তারা দশ বছর আগে ছেড়ে চলে গিয়েছে এই বাড়ির বড় বড় তিনটা ঘর বাড়ির তিন ছেলে মেয়েদের জন‍্য তৈরি করা হয়েছে এজাজ সাখাওয়াত ভেবেই রেখেছে আবসারকে আর ভাড়া বাড়িতে থাকতে দিবে না তানিয়া বললে হয়তো আবসার এখানে এসে থাকবে তখনই এজাজ সাখাওয়াত ধীরে সুস্থে ছেলের অভিমান ভাঙ্গাবে। দিলরুবা সাখাওয়াত তো বলে দিয়েছে তারা যেদিন বাড়িতে যাবে সেদিন যেনো মিলাদের আয়োজন করা হয়।

সেদিন এজাজ সাখাওয়াত চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ইরিনা সাখাওয়াত বাড়ি ছাড়ে কারণ সে বর্তমানে কোনো ঝামেলা চাচ্ছে না তার ছেলের সেফটি তার কাছে আগে তখন মনে পড়ে আবসারও তো তার ছেলে কিন্তু সে তো কোনোদিন তার মা হয়ে পারেনি নাকি হওয়ার চেষ্টা করেনি । তার নামে একটা ফ্ল‍্যাট আছে বনানীতে সেখানেই গিয়েছে সাথে করে তার ছেলেকেও আসতে বলবে এখনতো কোনো লুকোচুরি নেই । কিন্তু ইরিনার চিন্তা অন‍্য জায়গাই এজাজ তার ছেলের খবর কোথায় পেলো এবং আজ কদিন ভিক্টোরের কোনো খোজ নেই সে কোথায় ভেবেই ফোন লাগায় ভিক্টরকে
ফোন দিতেই ওপাশ থেকে মধুর স্বরে রমনীটি বলল — আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মূহুর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না
তারপরও অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে ইরিনা

— তুমি এর জন‍্য পস্তাবে ভিক্টর আমি ভালো হলেও খারাপি কিন্তু ভুলে যাইনি আমি একবার হদিশ পাই তোমার ভেবেই মুখে কুটিল হাসি দিলো ইরিনা।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৭

রাত বারোটা ওয়াসিমা খাবার টেবিলে বসে আছে অপেক্ষায় আবসারের গত একসপ্তাহ ধরে আবসার খুব ব‍্যস্ত সেই সকালে যায় আর আসে রাতের বারোটা একটা বাজে। আবসারকে যাবে বাইরের খাবার না খেতে হয় সেই জন‍্য ওয়াসিমাও ভোরের দিকে নামাজ পরে আর শোয় না সকালের নাস্তা সহ আবসারের দুপুরের খাবারটাও প‍্যাক করে দিয়ে দেয়। তার সাথে আরুও উঠে হাতে হাতে সব কাজ এগিয়ে দেয়।

নিজের দক্ষতায় ছোটখাটো একটা কারখানা চালু করেছে আবসার রেডিমেড কাপড়ের কারখানা সেটা সেটআপ করতেই তার দিন পার হচ্ছে অলরেডি অনেক কিছু করে ফেলেছে কিছু কর্মী ও নিয়োগ দিয়েছে পাশাপাশি কিছু বেকার যুবকদের ও কাছে লাগিয়েছে সব মিলিয়ে স্টার্টিংটা ভালোই হয়েছে।

ঠিক বারোটা দশে কলিং বেল বেজে উঠলে ওয়াসিমা গিয়ে গেট খুলে দেয়

— আসসালামু আলাইকুম ( দরজা খুলেই হাসি মুখে সালাম দেয় ওয়াসিমা এটা সে প্রতিদিনই করে যেদিন সে দরজা খুলে সেদিনই সালাম দেয় )

আবসার সালামের উত্তর নিয়ে ওয়াসিমার ললাটে চুমু খায় ভিতরে ঢুকে সোফায় হাত পা ছাড়িয়ে বসে পরে ওয়াসিমা ফ‍্যান ছেড়ে প্রিড বাড়িয়ে দেয় ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি দিলে আবসার ঢকঢক করে পানিটা গিলে ফেলে
— ফ্রেশ হয়ে নেন ভাত দিচ্ছি
আবসার কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে চলে যায় ওয়াসিমা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে — লোকটার কি হয়েছে কোনো সময় তো এতো শান্ত আচরণ করে না মনে মনে ভেবে চলে যায় রান্নাঘরে খাবার গরম করতে। খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখে আবসার ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মাথা মুছছে
ওয়াসিমা খাবার রাখতেই আবসার নিঃশব্দে পাশে বসে পড়ে ওয়াসিমা তাকে খাওয়ানো শুরু করে। গত একসপ্তাহ ধরে এরকমই চলছে সারাদিনের ক্লান্তির পরে আবসারের আর শরীর চলে না তখন ওয়াসিমা খাইয়ে দেয়।
আবসার পাশাপাশি ওয়াসিমাও খায় এভাবেই দুজন নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে

— প্লেট বাটি ঘরেই থাক তুই ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে আয়
এতক্ষণে আবসারের এটা দ্বিতীয় কথা। ওয়াসিমা হাত ধুয়ে আসতেই আবসার তাকে বসিয়ে তার কোলে মাথা রাখে

— কি হয়েছে আপনার আবসারের মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বলে ওয়াসিমার প্রশ্নের জবাব দেয় না নিজের মতো বলল

— কালকে এক জায়গাই যাব সকাল সকাল রেডি থাকিস

— আপনার কালকে অফিস নেই

— হু আছে খুব একটা চাপ নেই তাই যাব আর অরিকরা কবে আসছে কিছু বলেছে সেদিন আসল না কেনো

— সেবার তো আসতে পারেনি ভাইয়া যেই র্ফাস্ট ইয়ার স্টুডেন্টদের প্রাইভেট পড়াতো তাদের তো পরীক্ষা হুট করে তো আসা যায় না ওদের ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা শেষ হলেই একেবারে আসবে

— কিন্তু আমি তো একমাসের ভাড়া এডভান্স দিয়ে দিছি

— পরসু আম্মু আব্বু আসবে তারাই থাকবে সমস্যা কি
— হুম বলেই ওয়াসিমার পেটে মুখ গুজে শিরশির করে ওঠে ওয়াসিমার সর্বাঙ্গ নড়াচড়া করতেই ধমকে ওঠে আবসার — ঘুমাতে দে এতো নড়িস কেনো

— অসভ‍্য বিড়বিড় করে বলল কিছুক্ষণের মধ‍্যেই আবসারের গভীর নিঃশ্বাসের মাধ‍্যমে বুঝল আবসার ঘুমিয়ে গেছে। ওয়াসিমা তাকিয়ে থাকে ঘুমন্ত আবসারের দিকে লোকটার আদলে অজস্র মায়া। সে শুনেছে মেয়েরা মায়াবী হয় কিন্তু ছেলেরাও যে মায়াবী হয় সেটা সে আবসারকে না দেখলে জানত না। আরো কত কিছু ভাবতে ভাবতে বেডের হেড বোর্ডের সাথে হ‍্যালান দিয়ে ঘুমিয়ে পরে সে নিজেও

___________________

আসসালাতু খইরুন মিনাননার – অর্থ ( ঘুম থেকে নামাজ উত্তম ) মুয়াজ্জিনের আযানের সুর কানে যেতেই ঘুম ভাঙ্গে ওয়াসিমার এটা তার রোজকার সময় কাজ তাই আজো ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে

— আযান দিয়েছে নামাজ পরবেন না বলেই ওয়াসিমাকে মিহি স্বরে ডাকতে শুরু করে নিভু নিভু চোখে তাকায় আবসার নিজের অবস্থান বুঝতে চেষ্টা করে এবং তরাক করে উঠে পরে

— ঘুমের পরে আমাকে শুয়িয়ে দিতে পারিস নি বসে বসে নিশ্চয়ই পা ব‍্যাথা হয়েছে আর এভাবে ঘুম হয়েছে ওয়াসিমার গালে হাত দিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞাসা করে আবসার।

— আমি ঠিক আছি আপনি চিন্তা করবেন না এখন উঠুন নামাজ পরতে হবে না আবসারের হাতের উপর হাত রেখে বলে ওয়াসিমা। আবসার মাথা উঠে যায় ওয়াশরুমে একেবারে ওযু করে বের হয় আবসার বের হলে ওয়াসিমাও যায় সে বের হলে দুইজন একসাথে নামাযে দাড়ায় আজকে আবসার আর মসজিদে যায়নি

— কয়টার দিকে বের হবেন
নামাজ শেষে জায়নামাজ রাখতে রাখতে ওয়াসিমা জিজ্ঞেস করল
— এগারোটার দিকেই বের হবো আমি যেতাম না কিছু ছোট মিয়া অনেক জোর করল তাই

— চাচ্চুরাও যাচ্ছে সেখানে
মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বোধক সম্মোধন করে আবসার
— আচ্ছা আপনি ঘুমিয়ে পরেন আমি আরু আপুকে ডেকে নিয়ে আসি
— হু কিন্তু এখন আবার রান্না করতে যাস না

— কেনো ব্রেকফাস্ট করা লাগবে না আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল

— হু কিন্তু আজকে দেরী করলেও সমস‍্যা নেই আরুকে ডেকে দিয়েই সোজা ঘুম দিবি আমি বসছি তুই আয়
ওয়াসিমা কিছু না বলে চলে যায় আরুকে ডাকতে

আরু দরজা খুলতেই তাকে নামাজের কথা বলে চলে যায় ওয়াসিমা আরুও ঘুমের তালে কথা না বাড়িয়ে চলে যায় ওযু করতে।
ওয়াসিমা ঘরে আসতেই দেখে আবসার মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে ওয়াসিমা পাশে শুতেই তাকে ঝাপটে ধরে আবসার গলায় নাক ঘসে ওয়াসিমা বুঝে যায় আবসারের মতলব

— আপনার না ঘুমে ধরছে
— উমম ঘুমনা এখন তোকে লাগবে বলেই অধর জোড়া মিলিয়ে দেয় পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তার এলোমেলো গভীর ছোয়া।

_________________________

সাখাওয়াত ভিলায় হুলস্থুল কান্ড আবসার ওয়াসিমা আরু বেলা বারোটায় এসে পৌছায় সাখাওয়াত ভিলায় তারা আসতেই আবসারের নাকে আসে তানিয়া সাখাতের হাতের সরিষার তেলের তেহারির গ্রান।
আরুকে ভিতরে পাঠিয়ে সদর দোরগোড়ায় দাড়িয়ে থাকে তারা

— বাড়ির ছেলে এতো দেরিতে আসলে চলে কোথায় তাড়াতাড়ি এসে হাতে হাতে কাজ করবে তানা মেহমানদের মতো আসছ গম্ভীর স্বরে বলল এজাজ সাখাওয়াত
আবসার কোনো জবাব দেয় না কিন্তু পাশ থেকে ওয়াসিমা মৃদু স্বরে সালাম দেয় সালাম শুনে এজাজ ওয়াসিমার দিকে তাকায় এজাজ সেও হাসি মুখে সালামের উত্তর নেয়

— কেমন আছো আম্মাজান
— আলহামদুলিল্লাহ্ আপনি
— আল্লাহ্ যেমন রেখেছেন বলেই আবসারের দিকে তাকায় এর মধ‍্যেই এহসান সাখাওয়াত আসে — কিরে বাবাই সকালে আসার কথা এখন আসছিস

— ছোট মিয়া কালকে অনেক রাত করেই অফিস থেকে এসেছি প্লাস ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে হাসি মুখে উত্তর দেয়

— আচ্ছা আয় আয় বউমাকে নিয়ে দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে আয় নিজের বাড়িতেও ঢুকতে ইস্তত বোধ করতে হয় বলেই আবসারের হাত ধরে টান দেয়। কিন্তু এক পাও নড়ে না আবসার

— না ছোট মিয়া আমি বাইরে লনে আছি আর মিলাদ কখন শুরু হবে লোকজন কাউকে কিছু বলনি

— না বেশী কাউকে কিছু বলিনি ঐ আরুর মামার বাড়ির লোকেরা আর ভাইয়ার শশুর বাড়ির লোকেরা আর মিলাদ বাদ যোহর শুরু হবে তুই ভিতরে আয় তো বলেই আবারো ভিতরের দিকে টানে তাকে

— উহু না ছোট মিয়া আমি বাইরে লনে বসছি হুজুর আসলে আমাকে ডেকে দিও

— তুই বাইরে বস বউমা আসুক

— থাক ওর যাওয়া লাগবে না আমি আর ওয়াসু লনে বসি তোমরা ফ‍্যামিলি প্রোগ্রাম কন্টিনিউ করো বলেই ওয়াসিমাকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় পিছন থেকে তানিয়া সাখাওয়াত আলিয়া সাখাওয়াত এজাজ সাখাওয়াত সব কিছুই দেখে আবসারের যাওয়ার দিকে থেকে নজর সরিয়ে আলিয়া সাখাওয়াতের দিকে তাকায় এজাজ সাখাওয়াত তিনি কিছু না বলেই আলিয়ার পাশ কাটিয়ে ধীর পায়ে চলে যায় ভিতরের দিকে ।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে