#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৮
ওয়াসিমাকে বুকে জড়িয়ে থরথর করে কাপছে আবসার তারা লনের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে এখানে বসা মাত্রই আবসারের কাপুনি টের পেয়েছিল ওয়াসিমা তাকে ডাক দিতেই আবসার তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় শক্ত করে যেনো ছেড়ে দিলেই কেউ ছিনিয়ে নিবে। ওয়াসিমাও কিছু না বলে চুপচাপ মিশে থাকে তার বক্ষে সে বুঝতে পারছে আবসারের বাবা মায়ের সাথে তার একটা তিক্ত স্মৃতি রয়েছে কিন্তু কি সেটা তাকে জানতে হবে কিন্তু কার কাছ থেকে জানবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না ।
তার ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে ডাক আসে এহসান সাখাওয়াতের
— বাবাই মাওলানা সাহেব এসে পরেছে তুমি কি আসবা
— হু হু ছোট মিয়া আমি আসছি বলেই উঠে দাড়িয়ে আবার পরতে নিলে ওয়াসিমা কোনো রকম ধরে ফেলে ইশারায় রিল্যাক্স হতে বলে
— এক থেকে দশ পযর্ন্ত গননা করে লম্বা একটা শ্বাস নিন
আবসার ওয়াসিমার কথা মতোই কাজ করল তারপর উঠে দাড়ায় ওয়াসিমাও হাসি মুখে আবসারের হাত ধরে দাড়ায়।
পিছন থেকে সবটাই লক্ষ্য করেছে এহসান সাখাওয়াত তার মুখে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি
— যাক কেউতো একজন এসেছে যে আমার জনম দুঃখী বাবাইকে সামলাতে পারবে মনে মনে ভেবেই চলে যায়
ওয়াসিমা আবসার দরজার সামনে থেকেই মিলাদে সামিল হয় আরু কোথা থেকে দুইটা চেয়ার জোগাড় করে আবসার ওয়াসিমাকে বসতে দেয় আবসার না বসলেও ওয়াসিমাকে জোড় করে বসিয়ে দেয় কিন্তু নাছোড়বান্দা ওয়াসিমা বসে না অগত্যা আবসারও বসে পরে প্রায় আধা ঘন্টা পরে মিলাদ শেষ হয়। এর পরে আসে খাবার দাবারের পালা মাওলানা সাহেবরা এখানে খাবেননা তাদের জন্য মসজিদে এক ড্যাগ বিরিয়ানি পাঠানো হয়েছে তাই তাদের কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করা হলো এবার শুধু রইল ফ্যামিলির লোকজন সেখানে আবসার কিছুতেই সামিল হবে না তাই চলে আসতে নিলেই পিছন থেকে তানিয়া সাখাওয়াত ডাক দেয়
— পাচঁ মিনিট একটু মেইন দরজার সামনে দাড়া বাবাই আমি আসছি
আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় মেইন গেটের সামনে। তানিয়া সাখাওয়াত ঝটপট একটা বাটিতে তেহারি আর কিছু সালাদ সহ সবজি নিয়ে একটা ব্যাগে ভরে আরুর মামাদের উদ্দেশ্যে বলে — ভাই ভাবী খাওয়া হয়েছে
— হ্যারে তানি আমাদের শেষ তুই খেয়েছিস শুনলাম আবসার এসেছে কই সে
— আছে ভাই চলো আমার বাসায় যাবা এখানে আর থাকা লাগবে না
তানিয়া সাখাওয়াতের কথা শুনে তার ভাই ভাবী বিনা বাক্যে বাসা থেকে বের হয় সবার থেকে বিদায় নিয়ে সবাই আর কিছুক্ষণ থাকতে বললেও তারা থাকেনা।
— আম্মা ভাইয়া ভাবী আমরা তাহলে যাই
— মানে তোমরা কোথায় যাবে অবাক স্বরে বলল আলিয়া সাখাওয়াত
— আমাদের বাসায় তানিয়া হাসি মুখে বলে
— মানে এটা তোমাদের বাসা না এই এহসান তানিয়া কি বলছে গম্ভীর স্বরে ভাইকে জিজ্ঞেস করল এজাজ সাখাওয়াত
— ভাইয়া আমাদের আগেই পরিকল্পনা ছিলো আমরা এই বাসায় থাকব না আমি আমার নিজের বাসায় থাকব
— এটা কি আপনার নিজের বাড়ি না এহসান ভাই
আলিয়া সাখাওয়াতের কথা শুনে এহসান হাসল কিছু বলল না
— যাই হোক ভাই আসি মেয়েটা বাইরে দাড়িয়ে আছে আসি আম্মা বলেই এহসান সাখাওয়াত তার মায়ের কপালে চুমু খায়
দিলরুবা সাখাওয়াত কিছু না বলে চুপচাপ ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। চলে যায় এহসান ও তানিয়া তাদের যাওয়ার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় তিনি
— বড় বউ আয়মান দাদু ভাই আর এখন ভীন দেশে পরে থাকবে কেনো তাকে আসতে বলো এই ব্যবসায় সহায় সম্পত্তি এখন থেকে তো তাকেই সামলাতে হবে বলেই জোড় কদমে চলে যায় পড়ে আলিয়া সাখাওয়াত আর এজাজ সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতের বাপের বাড়ির লোক।
___________________
তানিয়া সাখাওয়াত এহসান সাখাওয়াত বাইরে বের হয়ে দেখে তার ভাই ভাবী আবসারের সাথে আলাপচারিতা করে ফেলেছে ওয়াসিমার সাথেও পরিচয় হয়েছে
— চলো হাসি মুখে বলল তানিয়া সাখাওয়াত
— আচ্ছা মামা আমরা আসি বাই ছোট মিয়া এহসান সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে বলেই ওয়াসিমার হাত ধরে যেতে নিলেই পিছন থেকে আবসারের হাত ধরে তানিয়া সাখাওয়াত
— এতোটাই অভিমান যে মামনির সাথেও কথা বলা যায় বাবারে আমরা জানি আমাদের দোষটা অনেক বেশী আমি তোমার কাছে মাফ চাই বাবাই প্লিজ বলেই হাত জোর করতে নিলেই তাকে থামিয়ে দেয় আবসার
— তুমি আমার মামনি তোমার উপর আমার কোনো রাগ নেই কিন্তু তুমিই আমার সাথে কোনো কথা বলতা না অনেক চেষ্টা করার পরেও বললা না তাই তো আমিও হাল ছেড়ে দিলাম
— তুই যেহেতু মামনির উপর রেগে নেই তাহলে আজকে মামনির বাসায় চল
— না মামনি এই বাসার প্রত্যেকটা কোনা আমার জন্য যন্ত্রণাদায়ক প্লিজ এই বিষয়ে অন্তত কিছু বলো না
— এই বাসা নারে বাবা আমাদের নিজের বাসা তোর চাচ্চুর আলাদা নিজের বাসা বলেই হালকা হেসে আবসারের দিকে তাকিয়ে থাকে আশা ভরা নয়নে। আবসার কিছুক্ষণ ভাবে তারপর হ্যা বলে দেয় আবসারের রাজী হওয়াতে সবাই বেশ খুশী হয় তারা সবাই একসাথে রওনা দেয় মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে সেখানে এহসান সাখাওয়াতের নিজস্ব বাড়ি আছে। দোতলায় দাড়িয়ে নিচের সবকিছুই নজরে পরে এজাজ সাখাওয়াতের।
ঢাকা শহরের দীর্ঘ জ্যাম কাটিয়ে এহসান সাখাওয়াতের মোহাম্মদপুরের বাসায় পৌছায় সবাই তখন দুপুর চারটা তানিয়া সাখাওয়াতের ভাই ভাবী খেয়ে আসলেও তারা কেউই খেয়ে আসেনি তাই তানিয়া সাখাওয়াত দ্রুত রান্নাঘরে যেয়ে খাবার গরম করে তার পিছু পিছু আরুও যায়
দুই মা মেয়ে মিলে হাতে হাতে সব গুছিয়ে টেবিলে খাবার দেয়
খাবার টেবিলে বসে আবসার একপলক সবার দিকে তাকিয়ে নিজের প্লেটে মনোনিবেশ করে কত বছর পর সে তার মামনির হাতের রান্না খাচ্ছে তার চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল।
ওয়াসিমা নিবিড় চোখে আবসারের সব গতিবিধি লক্ষ্য করছে এই রকম মনমরা সে দেখেনি বিশেষ করে ঐ বাড়িতে তার আরো অবাক লাগছে আবসার তার বাবা মায়ের থেকে খুব দূরে দূরে থাকে কোনো কথার জবাব দেয় না কিন্তু কেনো
— তেহারি মজা হয়নি মা
— জ্বী চাচী মা অনেক মজা হয়েছে
— তাহলে খাচ্ছো না কেনো
তার কথা শুনে ওয়াসিমা আর কিছু না ভেবে খাওয়া শুরু করে তানিয়া সাখাওয়াত ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার মনে অনেক প্রশ্ন জমা হয়েছে সে ওয়াসিমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবে অবশ্যই দিবে এই দুঃখী ছেলেটার জীবনে এই মেয়েটাই যে একমাত্র সুখ পাখি
কোনো ভাবে সে অন্য কারো কাছ থেকে অন্য ভাবে শুনলে ভুল বুঝতে পারে।
অনেক দিন পর আবসারকে খুব খুশী দেখা গেলো সে আরুর মামা ও এহসান সাখাওয়াতের সাথে সাচ্ছন্দে গল্প করছে। আজকে তারা এখানেই থাকবে তানিয়া সাখাওয়াত যেতে দেয়নি। বর্তমানে সবাই মাগরিবের নামাজ শেষে গল্প করছে আর নাস্তা করছে ওয়াসিমা তানিয়া সাখাওয়াতের সাথে রান্নাঘরে আছে সে বাড়ীর বউ হিসেবে বসে বসে খেতে পারে না তাই তার পিছু পিছু রান্নাঘরে দাড়িয়ে আছে কিন্তু তানিয়া তাকে কিছু করতে দিচ্ছে না
— একটা প্রশ্ন করি চাচীমা
ওয়াসিমার কথা শুনে তানিয়ার হাত থেমে যায়
— আবসার আমাকে মামনি ডাকে তুমি আমার আবসারের বউ তুমিও আমাকে মামনি ডাকলে খুশী হবো ওয়াসিমা চিবুকে হাত রেখে অন্য হাত তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৯
— বউ হিসেবে আমিই প্রথমে পর্দাপন করেছিলাম সাখাওয়াত বাড়িতে আরুর বাবার সাথে পালিয়ে বিয়ে হয়েছিল আমাদের ভাই ভাবীর সংসারে বোঝা হিসেবে ছিলাম তাই আমি চলে যেতেই তারা যেনো হাফ ছেড়ে বাচল। বিয়ের পর যখন সাখাওয়াত বাড়িতে উঠলাম মানতে চাইল আমার শাশুড়ি আমার স্বামী আমাকে নিয়ে চলে আসতে নিলেই সে মেনে নেয় । সে তার ছেলেদের জন্য উচ্চ বংশের থেকে মেয়ে আনতে চেয়েছিলেন তারপরেও আমার ঠাই হয় সাখাওয়াত বাড়িতে কারণ তিনি ছেলে হারাতে নারাজ। তারপর থেকে আমার উপর অনেক বিষয়ে অত্যাচার করতে শুরু করেন এহসান সব দেখেও চুপ থাকে কারণ সে তখন মাষ্টার্সের ছাত্র চাকরী বললেই তো আর হয়ে যায় না। তখন শাশুড়ির সারাদিনের অত্যাচার রাতে স্বামীর বুকে অশ্রু দিয়ে ব্যক্ত করতাম লোকটা আমাকে বুঝত কিন্তু কিছু বলার ছিলো না তার।
বিয়ের একবছর এভাবেই কাটল সমস্যা শুরু হলো তখন যখন আমি সন্তানস্বম্ভবা হলাম। আমার শাশুড়ি মানতে চাইল না ছোট ছেলের থেকে সংসারের প্রথম সন্তান তারপরও শত বাধা বিপত্তির মধ্যে জন্ম দিলাম আমার সন্তানকে জানো মা আমার এইটুকু ছেলেটা জন্মের তিন দিনের মাথায় মারা গেলো। সন্তান শোকে আমি পাগল পারা তাই হয়তো তার মায়া জন্মেছিল আমার উপর সে আমাকে সামলায় সাহস জোগায় আস্তে ধীরে আমিও সুস্থ হলাম এর পরে থেকেই শাশুড়ির সাথে আমার সখ্যতা হয় একদিন হঠাৎই আম্মা বলল বড় ভাইকে বিয়ে করাবে পাত্রী তার বান্ধবীর মেয়ে। বড় ভাই নাকচ করলিও শুনল না আম্মা বিয়ে তিনি দিবেই। ধুম লাগল বড় ভাইয়ের বিয়ের আম্মার বান্ধবীর মেয়ের সঙ্গে।
যথারীতি নিয়ম মেনে বিয়েও হলো কিন্তু বিয়ের একমাস যেতে না যেতেই তাদের সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হলো প্রথম প্রথম অশান্তি তাদের ঘরের চার দেয়ালে থাকলেও তার বাইরে এলো যখন আবসারের জন্মের খবর আসে ইরিনা জামানের প্রেগনেন্সির বিষয়ে আমরা সবাই জেনে যাই বিশেষ করে আম্মা অনেক খুশী হয়। সবাই তাকে বাচ্চাটা রাখতে বলে কিন্তু সে রাজী না তার এক কথা সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে এর মধ্যেই সে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে নিজের জীবন নষ্ট করতে পারে না সেদিন সবার বিপক্ষে গিয়ে ইরিনা বাচ্চাটাকে এবোর্শন করাতে যায় এবং জানতে পারে বাচ্চা এবোর্শন করাতে হলে তার লাইফ রিক্স আছে তাই নিজের জীবনের ক্ষতি করে সে আর বাচ্চাটা এর্বোশন করে না আস্তে ধীরে তিনিও মেনে নেয় সব কিছু আবার ভালোই চলছিল কিন্তু ঝড় নেমে আসে আবসারের প্রথম জন্ম দিনের পর সেখানে তার পরিচয় হয় ভিক্টরের সাথে যিনি ইরিনার প্রাক্তন প্রেমিক ছিলো তখন এজাজ ভাইয়ের বিজনেস পার্টনার। সেখান থেকেই পুরোনো প্রেম আবার জেগে ওঠে বাসায় ঘন ঘন ভিক্টরের আসা যাওয়া আম্মার নজরে পরল সে ভিক্টরকে আসতে না করলে সেদিন ইরিনা যাচ্ছে তাই বলে অপমান করে আম্মাকে এবং বাড়ী থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এতো অপমান আম্মার সহ্য হলোনা সে অসুস্থ হয়ে পরল সেদিন বাড়িতে কোনো পুরুষ ছিলো না যে তাকে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাই অনেক কষ্টে দারোয়ানের মাধ্যমে। সেদিনই আম্মাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসি অতিরিক্ত টেনশনে প্রেশার হাই হয়ে গিয়েছিল। তার পরের দিন এজাজ ভাই ও এহসান অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফেরে
এজাজ ভাই বাসায় আসলে তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বুঝায় আরো অনেক কথাই ভুল বুঝায় কিন্তু কি সেটা আমরা জানি না
সে রাতের বেলা আম্মাকে দেখতে আসে তখন আম্মা তার কাছে সব বলতে নিলেই বড় ভাই বলল — আম্মা ও তানিয়া না ও ইরিনা তানিয়ার সাথে যেটা করতে পেরেছ ওর সাথে পারবেনা তাই ভালো হয় তুমি নিজের মতো চুপচাপ থাকো তার কথা শুনে আম্মা শুধু একটা কথাই বলেছিলো — আমি আমার স্বামীর ভিটেয় যাব
পরের দিন আম্মা চলে গেলেন গ্রামে তার সাথে একটা কাজের লোক পাঠানো হলো আম্মা যাওয়ার পর ইরিনা আরো বিশৃঙ্খলা শুরু করল আমি বা এহসান কেউ কিছু বলতে পারতাম না। ছেলেটার খোঁজ খবর নেওয়াও বন্ধ করে দিলো সারাদিন কান্না করত ছেলেটা শেষমেষ না পেরে আমার কাছে রাখতে লাগলাম এভাবেই কেটে গেলো পাচঁ বছর। ভিক্টর তো প্রতিদিন আসত এজাজ ভাইও মনে মনে সন্দেহ করতে লাগল খারাপ কাজ আর কতদিন লুকিয়ে রাখবে প্রকাশিত হবেই একদিন
আমার আজো মনে পরে একটা মা কি রকম পশু হতে পারে নিজের সার্থের জন্য
সেদিন আবসার স্কুল থেকে এসে দেখে ভিক্টর আর ইরিনা একসাথে ঘরে ঢুকে গেট বন্ধ করছে কেউ বাসায় ছিলো না আমি আর এহসান গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে তাই ছেলেটা একাই বাসায় আসে সেই কথাটি আবসার বড় ভাই আসলে তাকে বললে বড় ভাই ইরিনাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সরাসরি না করে দেয়। তখন ভাই স্ত্রীকে বিশ্বাস করে আবসারকে বুঝায় যে মিথ্যে বলা ভালো না আবসার কিছু বলল না কারণ তার এজাজ ভাইয়ের সাথেও যথেষ্ট দূরত্ব ছিলো সারাদিন অফিস থেকে আসলেই ভাবীর এটা সেটা নিয়ে বিচার শুরু হতো তাই সে আবসারকে সব সময় শাষনের উপর রাখত।
তার পরের দিন যখন সবাই অফিসে গিয়েছিল আমি কোনো একটা কাজে ঘরে ঢুকতেই আমাকে ভিতরে রেখে বাহির থেকে দরজা আটকে দেয় সেদিন ইরিনা আবসারকে অমানুষের মতো মারে ছেলেটাকে ওর চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘর থেকে বের হতেই দেখি দরজা বাহির থেকে বন্ধ। প্রায় একঘণ্টা পরে ছেলেটার চিৎকার কমে আসে আমাকেও সারাদিন ঘর বন্দি রাখায় না খাওয়া তার উপর কয়েক দিন ধরেই শরীর অসুস্থ ছিলো সব মিলিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরলাম
যখন জ্ঞান ফিরল তখন রাত আটটা পাশে এহসান বসা হুরমুর করে উঠেই প্রথমে আবসারের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি গম্ভীর স্বরে জবাব দিলো — আগে নিজের কথা চিন্তা করো এই অবস্থায় এতো চিন্তা করা ঠিক না
— মানে তুমি এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলছ কেনো আবসার কই ছেলেটা ঠিক আছে তো ভাবী যে এতো খারাপ সেটা আজ বুঝতে পারলাম
— কালকে আমরা অন্য বাসায় যাচ্ছি আমাদের প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র গুছিয়ে নাও বলেই বের হয়ে গেলো আর কিছুক্ষণ পরে ফিরল খাবারের থালা নিয়ে
— আমি এখন খাব না
— সারাদিন না খাওয়া ছিলে নিজের খেয়াল নাই রাখো যে আসছে তার খেয়াল তো রাখতে পারো
এহসানের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই সে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করে সেদিন অনেক দুঃখের মাঝেও সুখ পেয়েছিলাম মা হওয়ার সুখ।
তার পরের দিনেই আমরা সাখাওয়াত বাড়ি ছাড়ি একটা ভাড়া বাসায় উঠি ঠিকই কিন্তু মন থেকে আবসারের দুশ্চিন্তা সরাতে পারিনি সারাদিন মন মরা হয়ে থাকি এই ভাবে এহসান আমাকে দেখতে না পেরে একসপ্তাহ পরে নিয়ে আসে আবসারকে সেদিন আবসারকে দেখে অঝোরে কেদেঁছিলাম একসপ্তাহে ছেলেটা কেমন জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছিল শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিলো গায়ে অজস্র মারের দাগ আমাকে দেখেই বুকে ঝাপিয়ে পরেছিলো তাকে বুকে নিয়ে একসপ্তাহের হাহাকার মিটে গেলো। পরে এহসানের থেকে জানতে পারলাম ছেলেটা এই একসপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। আবসারকে আমি আমার কাছেই রাখতে লাগলাম।
খালি বাড়িতে ইরিনার বেহায়াপনা আরো বৃদ্ধি পেলো যা এজাজ ভাইয়ের চোখেও পরল এই নিয়ে আরো অশান্তি শুরু হলো বড় ভাই ঘরে আসা বন্ধ করে দিলো ঢাকা থেকে চলে গিয়ে চট্টগ্রামের অফিসে অফিস করতে লাগল। সেখানেই তার পরিচয় হয় আলিয়ার সাথে তিনি বর্তমানে বড় ভাইয়ের স্ত্রী।
সঙ্গীহিন এজাজ ভাইকে ভাবী সাপোর্ট করে আস্তে আস্তে সেও তার প্রতি দূর্বল হয়ে তাকে বিয়ে করে নেয়। প্রায় একবছর সব গোপনে থাকলেও এজাজ ভাই আম্মার অসুস্থতার খবর পেয়ে গ্রামে আসলে তার কোনো খোজ খবর না পেয়ে বড় ভাবী গ্রামের বাড়িতে ওঠে ছোট্ট আয়মান তখন তার কোলে আমার আরুর ছয় মাস।
আমরা সবাই একটা ধাক্কা খাই । না পারতে তাকে থাকতে দেয় আম্মা কথা হয় আমিও গ্রামে থাকব এভাবেই কেটে যায় তিন বছর আমরা সবাই সব কিছুতে আবসারকে প্রায়োরিটি দিতাম বেশী সেটা ভাবীর সহ্য হতোনা কিন্তু কিছু বলতে পারত না। সেবার ঈদে সবাই আমরা একসাথে হই সাখাওয়াত বাড়িতে সবাই যাওয়া বন্ধ করে দেই ঈদের আমেজে সবাই খুশী আমি রান্নাঘরের ব্যস্ত থাকায় আবসার আরুকে গোসল করিয়ে দেয় সেটা নিয়ে বড় ভাবী হাঙ্গামা শুরু করে আমার যে আবসার —-“” বলতেই থেমে যায় তানিয়া সাখাওয়াত।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২০
তানিয়া সাখাওয়াত থেমে যেতেই ওয়াসিমার জোরালো কান্নার শব্দ পায়।
তার মাথা হাত বুলিয়ে দেয় তানিয়া মনে মনে ভাবে আবসারের দুঃখী কপালে সুখ হিসেবে ওয়াসিমা আল্লাহর প্রদত্ত।
— এখনই এতো কাদলে চলে আম্মু এখনো তো আরো কথা বাকী আছে,
— আর শোনার মতো শক্তি আমার বাকী নেই মামনি আমার মনে হচ্ছে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে বলেই থেমে যায়। আবার বলে — এমন কেনো হচ্ছে মামনি
— এটাই তো বন্ধনরে মা স্বামী স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন যাকে বলে যার উপর বিশ্বাস রেখে তুমি তোমার বাবা মাকে চিরচেনা ঘর ছেড়ে এসেছো। জানোতো আমরা মেয়েরা মাটির মতো তাদের যেকোনো আকারে গড়া যায় এই যেমন কোনোকালে না দেখা আমিও বর্তমানে তোমার আপন তার কোলে মাথা রেখে নির্দিধায় কথা বলতে পারছ।
তানিয়া আবার বললেন :
— এখন কান্নাকাটি থামাও তো এতো মায়াবী মুখে অশ্রু বেমানান বলেই ওয়াসিমা চোখ জোড়া নিজের হাতে মুছে দেয়।
এর মধ্যেই কলিং বেল বাজে — এখন আবার কে আসল ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বলে বর্তমানে বাসায় কেউ নেই আরুও নেই তার আজকে একটা ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে তাই সে বেড়িয়ে যায়! ওয়াসিমা আজকে ক্লাসে যায়নি কাল তার ক্লাস টেস্ট আছে তাই তার কোচিং চলাকালীন তানিয়া সাখাওয়াত তাদের সাথে থাকতে রাজী করায় আবসারকে।
আবসার প্রথমে গাইগুই করলেও তানিয়া সাখাওয়াতের জেদের কাছে হেরে থেকে যায় তারা। তাই ওয়াসিমাও সবাই যাওয়ার পরে জেদ ধরে আবসারের ব্যাপারে সব শুনবে বলে তানিয়া সাখাওয়াতের কাছে বসে পরে।
অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও তানিয়া সাখাওয়াত কে আসতে না দেখে ওয়াসিমা ঘর থেকে বের হয়,
— কে এসেছে মামনি
বলেই সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়
-” দাদী বিড়বিড় করে বলে
দিলরুবা সাখাওয়াত ঘরের চারিদিকে দেখছে চোখ ঘুরিয়ে তিন তলার পুরোটা ফ্লোরেই তানিয়া নিজের মতো বানিয়েছে পাচঁটা রুম ড্রইংরুম ডাইনিং রুম কিচেন আবার প্রত্যেকটা রুমের সাথে এটাচ ওয়াশরুম বারান্দা প্রত্যেকটা ঘরই ছিমছাম ভাবে সাজানো তার ভালোই লাগল,,,,,,
-“- বসেন আম্মা
— হু বসছি তা তোমাদের গুনধর কি এখানেই আছে গম্ভীর স্বরে বলল দিলরুবা সাখাওয়াত।
— জ্বী আম্মা কাল মেয়েটার পরীক্ষা আর খালি বাসায় থাকার অভ্যাস নেই তো তাই আজ রেখে দিয়েছি কাল আবসারের শশুর শাশুড়ি আসলেই ওরা চলে যাবে ”
— সেই আবার শশুর বাড়ির লোকদের নিজের কাধে বসিয়ে খাওয়াবে তা ছাড়া আর কি কাজ আছে ওর মা বাবা ভাই বোন মনে হয় চোখেই পরে ওর
— আমি এতিম এই পৃথিবীতে যেখানে আমার জন্মটাই ভুল বলা হয় সেখানে অন্তত আমার কোনো আত্মীয় থাকার কথা না আর আমার জন্য ঐ লোক গুলো কি তা আমি তোমাদের বোঝাতে পারব না তোমরা আমার আপন হলেও আমাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছো আর ঐ লোক গুলো আমার পর হয়েও আমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে আশ্রয় দিয়েছিল ,, পিছন থেকে আবসার বলল
— তা সেই ঋণ পরিশোধ করতেই কি তাদের মেয়েকে বিয়ে কথা তাদের মতো মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েকে বিয়ে কথা
দিলরুবা সাখাওয়াতের কথা শুনে মুচকি হেসে বলল -” এই মধ্যবিত্ত জন্যই তুমি আজ ছেলের কামাই খেতে পারছ এনেছিলে না বড় ঘরের মেয়েকে কি হলো উল্টো সব ধ্বংস করে দিলো এখন আমি যদি বলি সকল নষ্টের মূলে তুমি তাহলে।
আবসারের কথা শুনে তানিয়া সাখাওয়াত হাসিটা আরো বিস্তৃত হয়। আর আবসারের সাথে কথায় না পেরে চুপ মেরে যান দিলরুবা সাখাওয়াত কিন্তু তার মন যানে আজ তিনি কতটা খুশি।
— আম্মা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে এসেছেন নাহলে বসেন আমি ভাত দেই খেয়ে যান
-” আমি খেয়ে এসেছি ছোট বউ এহসান কই
-“- আপনার ছেলেতো অফিস গিয়েছে তার আন্ডারে একটা প্রোজেক্ট ছিলো সেটা হ্যান্ড ওভার না করতে পারলে চাকরিটা ছাড়তে পারছে না
— এহসান সেখানে চাকরি করে না বউ সে ঐ কম্পানির উত্তরাধিকার
তার কথার উত্তরে তানিয়া আর কিছু বলল না
— মামনি খেতে দাও খুদা লেগেছে
— হ্যা বাবাই তুই হাত মুখ ধুয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি বলেই তিনি রান্নাঘরে চলে গেলেন ওয়াসিমা ও তানিয়া সাখাওয়াতের পিছু পিছু চলে যায়
— মামনি তুমি দাদীকে নাস্তা দাও আমি উনার খাবার গরম করি
তানিয়া হালকা হেসে দিলরুবা সাখাওয়াতের জন্য চা বসায় আদা দিয়ে রং চা। আর সাথে হালকা কিছু খাবার।
আবসার হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে বসতেই ওয়াসিমা খাবার বেড়ে দিতে লাগল তানিয়া শাশুড়ির জন্য চায়ের ট্রে নিয়ে যায় ড্রয়িং রুমে
— তুই খেয়েছিস
— হ্যা আমি আর মামনি একসাথে খেয়েছি আপনি যে আসবেন জানাননি তো
— হ্যা কাজ দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই এসে পরেছি বলতে বলতে ওয়াসিমার মুখের সামনে ভাতের লোকমা ধরে
— আমি খেয়েছিত আপনি খান বলেই ড্রয়িং রুমের দিকে ইশারা করে
— একটু খেলে কিছু হবে না বলেই আবরো হা করতে ইশারা করে
এবার আর কিছু বলে না ওয়াসিমা চুপচাপ ভাতের লোকমাটা মুখে নেয়
একদৃষ্টিতে সামনের দিকে দিলরুবা সাখাওয়াতকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানিয় সাখাওয়াত পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আবসার ওয়াসিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। তারপর আবার শাশুড়ির দিকে তাকায় তানিয়া দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল দিলরুবা সাখাওয়াতের অধর জোড়ায়
— মাশা-আল্লাহ দুজনকে বেশ মানিয়েছে তাইনা আম্মা
-” হু বউ তোমার শশুর ছিলো এইরকম আমারে প্রতিবেলা গালে তুলে খাওয়াই দিতো।
তানিয়া দেখল দিলরুবা সাখাওয়াতের মুখে হাসি থাকলেও নয়ন জোরা চিকচিক করছে মনে হচ্ছে পলক পরলেই পানি গড়িয়ে পরবে। তানিয়া কিছু বললেন না তিনি জানেন আবসার তার শাশুড়ির কতটা জুরে আছেন সে ওয়াসিমাকে হেয়ো শুধু এই কারণেই করে যাতে আবসার তার জবাব দেয় কারণ সে এইটুকু অন্তত বুঝেছে ওয়াসিমা দিলরুবা সাখাওয়াতের মুখের উপর কোনো জবাব দিবে না অথবা আবসারই দিতে দেয় না কে জানে।
সে শুধু চায় আল্লাহ্ তায়ালা তার ছেলেটাকে এই মেয়েটার সাথে সুখে রাখুক তারা ভালো থাকুক।
________________________
নিস্তব্ধ বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরছে আলিয়া সাখাওয়াত বাড়ি তার কাছে যেনো গলার কাটা এতো বড় বাড়িটা সুচের মতো বিধছে তিনি আরো ভয়ে আছে যখন এজাজ সাখাওয়াত অফিস থেকে এসে দেখবে দিলরুবা সাখাওয়াত নেই তখন তিনি তান্ডব শুরু করবেন তখন সে কি করবেন দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিতে গেলে ফিরে এসে দিলরুবা সাখাওয়াতকে পায় না পুরো বাড়ি তন্নতন্ন করে খুজলেও পায়না ইদানীং কেমন যেনো হয়ে গেছে এজাজ সাখাওয়াত আগে সে এই আফসোসে থাকত যে আলিয়াকে একটা সুখী পরিবার দিতে পারেনি কিন্তু যেদিন থেকে সে জেনেছে যে সেদিন আবসারের কোনো দোষ ছিলো সেই সবার কাছে আবসার আর আরুর বিষয়টি ভুল ভাবে উপস্থাপন করেছে সেই সবাইকে বুঝিয়েছে যে আবসার আরুকে খারাপ ভাবে ছুয়েছে তার সাথে জবরদস্তি করতে চেয়েছে তার কাজ আরো সহজ হয়েছিল আরুর কান্নাকাটি করা দেখে তাইতো সেদিন কেউ কিছু না বললেও এজাজ তাকে মারতে মারতে বের করে দিয়েছিল বাড়ি থেকে সাথে এটাও বলেছিল তার জন্মটাই ভুল তাদের জন্য অভিশাপ।
সেইযে যায় ছেলেটি আর ফেরে না তারপর আরু ইন্টারে যখন পরে তখন ফিরিয়ে আনে এরপর থেকে আসলেও সেখানে খুব একটা থাকত না ঢাকায় থাকত বেশী। তারপর আবসার নিজেই সাখাওয়াত গ্রুপ অব কোম্পানিতে জয়েন হয়।
#চলবে
ভুলক্রুটি ক্ষমা প্রার্থী।