#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১২
স্নিগ্ধ সকাল চারিদিকে হালকা কুয়াশার ছড়াছড়ি রাতে দেরী করে ঘুমানোর ফলে অরিক এখনো ঘুমে আছে অথচ তার বলিশের পাশে অনবরত ফোন বেজে চলেছে সেদিকেও খেয়াল নেই সে বেহুশের মতো ঘুমি আছে আর ঐ দিকে আরু লাবনী চিন্তায় বেহাল দশা।
— আপু তুমি এখানে বসো আমি ভাইকে ডেকে নিয়ে আসি বলেই লাবনীকে নিজের ঘরে বসিয়ে সে যায় আবসারদের ঘরের কাছে সেখানে গিয়ে নক করে
ভোর ছয়টা ওয়াসিমার আযানের সময় ঘুম না ভাঙ্গলেও কিছুক্ষণ আগেই তার ঘুম ভাঙ্গে সে গোসল করেই নামাজ পরে নেয় আবসারকে অনেক ঠেলাঠেলি করলেও উঠে না। নামাজের মাত্র সালাম ফিরিয়েছেন এর মধ্যেই দরজায় নক করার শব্দ আসে। ওয়াসিমা মুনাজাত শেষ করেই জায়নামাজ ভাজ করতে করতে গেট খুলতে নজরে আসে আরু নাক চোখ লাল মনে হচ্ছে বহু কষ্টে কান্না আটকানোর প্রচেষ্টা।
— কি হয়েছে আপু তোমার এই অবস্থা কেনো চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে ওয়াসিমা।
— ভাবী অরিক ভাইকে কোথাও খুজে পাচ্ছি না পুরো হোটেলে খুজে এসেছি কোথাও পাইনি
— ফোন দিয়েছিলে কোনো রকম কান্না আটকে বলে ওয়াসিমা
— হু রাত থেকে এই পযর্ন্ত অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছি সে ধরছে না এভার আরু কেদেই ফেলল আরুর কান্না দেখে ওয়াসিমাও কান্না আটকাতে পারে না সেও শব্দ করে কেদে দেয়। দুই রমনীর কান্না শুনে আবসারের ঘুম ভেঙ্গে যায় সে আড়মোরা ভেঙ্গে উঠে বসে হাতরে ওয়াসিমাকে খুজে এখনো চোখ খুলে তাকায়নি।
— ওয়াসু
আবসারের ডাক শুনে ওয়াসিমা আরুর কান্নার বেগ আরো বাড়ে কান্নার শব্দ শুনে সে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আরু গেটের ঐ পাশে আর ওয়াসিমা গেটের এই পাশে দাড়িয়ে কান্না করছে। তাদের কান্না দেখে ভরকে যায় আবসার তাড়াতাড়ি উঠে সে যায় তাদের কাছে — কি হয়েছে হ্যা দুইজন এই ভাবে কান্না করছিস কেনো নিজের দুই বাহুতে আরু ও ওয়াসিমাকে জড়িয়ে ধরে চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করে আবসার
— ভাইয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না নাকি রাত থেকেই হেচকি তুলে বলল ওয়াসিমা
ওয়াসিমার কথা শুনে আবসার সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে তাহলে এরা এতক্ষণে এর জন্যেই কাদছিলো
— ঐ শা*লার জন্যে এতোক্ষণ দুইজন মরা কান্না জুড়ে দিলে
— আমার ভাইয়া গায়েব আর আপনি হেয়ালি শুরু করেছেন রাগে ফুসে ওঠে ওয়াসিমা
ওয়াসিমার কথা শুনে আবসার তাদের হাত ধরে আরুর ঘরের সামনের ঘরে এসে দাড়ায় একটু পরেই একটা ওয়েটার এসে তাকে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে যায় সে কার্ড সোয়াইপ করে ঘরে প্রবেশ করেই উল্টো দিকে শুয়ে থাকা অরিকের পশ্চাৎ বরাবর ঠাসস করে একটা লাথি মারে। আবসারের লাথি খেয়ে অরিক বিছানা থেকে পরে যায়
— ও মাগো শা*লা আমার শান্তি কি তোর সহ্য হয়না নাকি একটা শান্তির ঘুম দিয়েছিলাম বিরক্তি ঝেরে তাকিয়ে দেখে ওয়াসিমা আরু তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
— কি হয়েছে বনু বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলে অরিক
এর মধ্যেই কোথা থেকে লাবনী এসে ঝাপটে ধরে অরিককে। অরিক হাত দুটো স্যারেন্ডারের মতো করে উচু করে রাখে।
আরুর অগ্নি দৃষ্টি অশ্রুসিক্ত হয় সে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায় আরু বেরিয়ে যেতেই আবসার তার দিকে তাকিয়ে হেসে অরিকের দিকে তাকায় অরিক আরুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লাবনীকে দ্রুত নিজের থেকে সরায়।
— নিজের সীমার মধ্যে থাকো তোমার সাথে হেসে কথা বলি তার মানে এই না যে সব সময় চিপকে থাকবে আমার সাথে কঠোরভাবে বলেই অরিক চলে যায় ওয়াশরুমে লাবনীও মাথা নিচু করে নিজের ঘরে চলে যায় আর ওয়াসিমা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে একবার অরিকের দিকে একবার লাবনীর যাওয়ার দিকে কিন্তু তার মাথা ঘুরছে আরুর দৃষ্টিতে কিছু তো ছিলো যা সে দেখতে পায়।
— এতো ভেবে সময় নষ্ট করিস না সময় হলে সব জানতে পারবি
— সেই সময় আসতে আসতে আমি পাগল হয় যাব
আবসার ওয়াসিমাকে কোলে তুলে নিজেদের ঘরে চলে আসে কাউকে এখন ডাকে না ঘরে এসে দেয়াল ঘড়িতে দেখে আটটা বাজে সে তাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও শুতে নিলেই তাকে আটকায় ওয়াসিমা — এখন না শুয়ে ফজরের নামাজটা পরে নেন
— ফজরের সময় তো শেষ বউ
— যদি কোনো কারণে ফজরের সময় না উঠতে পারি তাহলে ঘুম থেকে উঠেই ফজরের নামাজ আদায় করা উচিৎ ওয়াসিমার কথা শুনে আবসার আর কিছু না বলে চলে যায় ওয়াশরুমে একেবারেই গোসল করেই বের হয়ে নামাজে দাড়ায়।
ওয়াশরুমে বসে হাটুতে মুখ গুজে কান্না কান্না করছে তার কারণেই তো তার ভালোবাসা আজ অন্য কারো সে কি করত তখন যে তার কিছুই করার ছিলো না।
অনেক্ষণ পরেই বের হয় ওয়াশরুম থেকে এর মধ্যেই ফোন বেজে ওঠে তার হাতে নিয়ে দেখে তানিয়া সাখাওয়াত ফোন দিয়েছে আরু ধরে সালাম দেয় তানিয়া সালামের উত্তর দেয়
— আরু মা রাগ করেছিস মায়ের সাথে
— উহু রাগ করিনি আম্মু
— কেমন আছিস মা
— ভালো গতকাল আমরা শ্রমঙ্গল এসেছি এখান থেকে ঘুরে কাল ভাইয়া কোথায় নেয় জানিনা
— আরু তোর কি কিছু হয়েছে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞাসা করে তানিয়া
— উহু জায়গা পরিবর্তন হয়েছে তো তাই একটু ঠাণ্ডা ভাব এসেছে
— আরু তুমি না মাস্টার্স কারার জন্য বাইরের কান্ট্রিতে যেতে চেয়েছিলে
— হ্যা আম্মু কিন্তু তোমাদের ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা নেই আমার আর আমি চলে গেলে তোমাদের খেয়াল কে রাখবে
— আমাদের চিন্তা করতে হবে না তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে আমার আমি চাই তুমি হায়ার স্টাডিজের জন্য যাও দেশের বাইরে পরে সময় বুজে এখানের সব গুছিয়ে আমরাও চলে আসব বলে কল কেটে দেয়।
আরু তার মায়ের কথা শুনে অবাক আরু গ্র্যাজুয়েশন করতে চেয়েছিল বাইরে থেকে তখন তারা কেউ যেতে দেয় নি কিন্তু এখন হঠাৎই ডিসিশন চেঞ্জ হওয়ায় একটু অবাক সে তারপর তার জন্য ভালোই হয়েছে সে এই সবকিছুর থেকে দূরে থাকতে পারবে অরিকের পাশে কাউকে দেখা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
____________________
— আম্মা আমি আমার মেয়েকে এখন বিয়ে দিতে চাইনা আর ও বাহিরে যাবে উচ্চতর শিক্ষার জন্য যাবে আর এটা আমার মেয়ের স্বপ্ন
— না মেয়ে মানুষের এতো কিসের পড়া সেই তো শশুর বাড়িতে যেয়ে হাড়ি খুন্তি নারা লাগবে
— আপনিও তো শুরু থেকেই হাড়ি খুন্তি নেরেছিলেন আমাদের আব্বা মারা যাওয়ার পর থেকে ব্যবসায়িক দিকেই আপনাকে বেশী দেখা যেতো তাহলে তো আপনার ও ব্যবসায় সামলানোর উচিত হয়নি
— আমার বিষয়ে আলাদা তখন তোমার আব্বা বেচে ছিলেন না
— আমার ভাবতেই কষ্ট হয় আম্মা আপনি একজন উচ্চ শিক্ষিত মহিলা বলেই চলে যায় এহসান সাখাওয়াত। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসে ওঠে দিলরুবা সাখাওয়াত আজ সে আরুর বিয়ের কথা উঠাতেই এহসান এক কথায় না করে দেয় সে এখন মেয়ের বিয়ে দিবে না কারণ আরু এখন বিয়ে করতে চায়না সে আরো পড়তে চায়। এবং এহসান সাখাওয়াত ও চায় তার মেয়ে নিজের পায়ে দাড়িয়ে তার মায়ের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিক যে সে মেয়ে বলে অবহেলিত না সে একাই তার বাবা মায়ের খেয়াল রাখতে পারে।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৩
কেটে গেছে একসপ্তাহ আজকে ওয়াসিমারা নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবে সেখানে দুই দিনে থেকে সবাই আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে ওয়াসিমাকে আবসার একা রাখবে না প্লাস কোনো হোস্টেলেও রাখবেনা তাই তার সাথে আকলিমা রহমান ও ইরফান রহমানও যাবে এই কথাই হয়েছে তাদের অরিকও কিছু দিন পর ট্রন্সফার নিয়ে চলে আসবে ঢাকায়। এই একসপ্তাহ আরু বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে অরিক লাবনী আলাদা ঘরে ঘুমালেও অরিক আরুকে দেখিয়ে দেখিয়ে লাবনীর সাথে ভালোই ঘুরেছে যখনই আরু সরে যেতো সেও লাবনীর থেকে সরে যেতো লাবনী বুঝতে পারে আরিক আরুকে অনেক ভালোবাসতো ইভেন এখনো ভালোবাসে।
— লাবনী তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে কাল তোমার বাবা মাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে ও তুমি তো আমাদের সাথে থাকবে শুধু তোমার বাবা মাকে আসতে বলবে তাহলেই হবে
অরিকের কথা ভাবনা ভাঙ্গে লাবনীর সে কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নাড়ায় এমনিতেও তার কিছু ভালো লাগছে না কেমন দম বন্ধ লাগছে মনে হচ্ছে সে মারা যাবে নিঃশ্বাস না নিতে পারলে। কেমন ভয় লাগছে সবটা জানার পরেও সবার কি রিয়্যাকশন কি হবে
__________________
দীর্ঘ ঘন্টা জার্নির পর আলম নগর পৌছায় তারা ওয়াসিমা অরিককে বাসায় পৌছে দিয়ে আবসার আরুকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওয়াসিমা অনেক বললেও তাকে আর ঐ বাড়িতে নেয় না আবসার শেষে বাধ্য হয়ে ওয়াসিমা বাপের বাড়িতেই থেকে যায়।
সকাল সকাল বাড়িতে পৌছাতেই আলিয়া সাখাওয়াত সামনে পরে সে তাদের কাছে আসতেই আবসার তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে তাই আলিয়া সাখাওয়াত আরুর সাথেই কথা বলল — ঘুরাঘুরি কেমন কেটেছে আরু
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো বড় মা আমি আসি সারারাত জার্নি করেছি তো শরীর ম্যাচম্যাচ করছে বলেই আরু চলে যায় নিজের ঘরে সে ফ্রেশ হয়ে এসেই যায় তার বাবা মায়ের ঘরে তাদের সাথে কথা আছে
বিকেলের দিকে আরুকে নিয়ে আবসার আসে ওয়াসিমাদের বাড়িতে সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলো লাবনীর বাবা মা দাদী সহ পুরো পরিবার আকলিমা রহমান তাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত আশে পাশে উকি ঝুকি দিয়েও যখন ওয়াসিমাকে পায়না তখন রান্নাঘরে উকি মেরে দেখে ওয়াসিমা মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাজতেছে সে আর কিছু নি ভেবেই সবার সাথে পরিচয় হয় সবাই হাসি মুখে কথা বলছে।
এর মধ্যে অরিক এসে উপস্থিত সাথে একটা ছেলে যে অরিকের বয়সী হবে অরিক হাসি মুখে লাবনীর বাবা মায়ের সাথে পরিচয় হয় সবাই হাসি খুশী থাকলেও একজন থাকতে পারতেছে না সে হলো লাবনী। সে ভয়ে হাত দুটো মুঠোয় করে ক্রমাগত ঘষছে
— আঙ্কেল আন্টি আপনাদের সাথে আমার একটা জরুরী কথা আছে হঠাৎই অরিক লাবনীর বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলল
— কি কথা বাবা বলেন লাবনীর বাবা হাসি মুখে উত্তর দেয়
অরিক কিভাবে বলবে বুঝতে পারতেছে না সে চুপ করে আছে
— আঙ্কেল অরিক আর লাবনীর বিয়ে একটা ধোকা অরিককে ইস্তত করতে দেখে আবসার অকপটে বলে দিলো
— মানে অবাক কন্ঠে বলল লাবনীর বাবা মা
— আসলে আন্টি অরিক লাবনীকে বিয়ে করতে চায়নি কিন্তু আমার শশুর শাশুড়ি ক্রমাগত তাকে প্রেশার দেয় বিয়ে করার জন্য কারণ তারা তাদের চঞ্চল ছেলের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছিল না তাই তারা ভাবলেন অরিককে বিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু অরিক বিয়ে করতে রাজী না শেষে তার মা নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে তখন না পারতে অরিক বিয়ের জন্য রাজী হয় তখন তার বিয়ে ঠিক হয় লাবনীর সাথে
— এর সাথে তোমার কথার সম্পর্কে কি বুঝলাম না বাবা আবসারের কথার মাঝেই লাবনীর বাবা বলল
— লাবনীও চায়নি বিয়েটা করতে সেটা নিশ্চয়ই আপনি জানতেন লাবনীর মাকে উদ্দেশ্যে করে কথা বলল আবসার। আবসারের কথা শুনে লাবনীর বাবা দাদী তার দিকে অবাক হয়ে তাকায়
তাদের তাকানো দেখে লাবনীর মা মুখ নামিয়ে নেয়।
— আমার আর ওয়াসিমার বিয়ের পরেই যখন আমি লাবনী ঘরে যাই তখনই তাকে অসুস্থ থেকে বিষন্ন লাগছিল তাকে জিজ্ঞেস করলেও সে বলতে চায়না কিন্তু তার বান্ধবী আমাকে সব বলে কোনো রকম সংক্ষেপে বলে যে সে তারই কলেজের একজনকে পছন্দ করে কিন্তু আন্টিকে বলায় সে ছাফ না করে দেয় কারণ সে এখনো চাকরী পেয়ে উঠেনি। তখনই আমি বুদ্ধি করে কাজীকে সরিয়ে ডুবলিকেট কাজী আনি এর পর যাই হয় সবই নকল ইভেন তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারও নকল আপনারা হয়তো খেয়াল করেননি অরিক একবারও কবুল বলেনি হয়তোবা টেনশনে আর এখানে আমার একটা উদ্দেশ্য ছিলো যেটা পুরোন হয়েছে আর মেয়টাও আরেকজনকে ভালোবেসে অন্যজনের সাথে বিয়ের নাটক করতে পারছেনা তাই
— তাই তুমি আমার মেয়ের জীবনের সাথে এইভাবে খেললে ইরফান ভাই আমার আপনাদের থেকে অন্তত এইরকম কোনো আশা ছিলো না লাবনীর বাবা আবসারের কথা শেষ না হতেই ঝাঝালো স্বরে বলে উঠল
— আমি জানতাম না ভাই এরকম কিছু জানলে
ইরফানের কথা শেষ না করতে দিয়ে আবসার আবার বলল — অরিক আমি আর লাবনী ছাড়া আর কেউ এই বিষয়ে কিছু জানত না আঙ্কেল আর আপনি একবার ভাবেন তো বিয়েটা হলে চার চারটে জীবন নষ্ট হয়ে যেতো আপনার মেয়েও পারত না সুখী হতে তাই আমি এই পথ অবলম্বন করেছি জানি পথটা ভুল কিন্তু তখন যদি লাবনী পালিয়ে যেতো আপনাদের মান সম্মান থাকত সেতো পালিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছিল।
আবসারের কথা শুনে নরম হয় লাবনীর বাবা সে নরম স্বরেই বলল — এখন কি করব বাবা আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে এটা আত্মীয়দের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে
— আমার কাছে একটা উপায় আছে
— কি
— ওকে আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে দিন
— কিন্তু ছেলেটা বেকার মাঝখানে বলল লাবনীর আম্মু
— তুমি চুপ থাকো ছেলে শিক্ষিত আল্লাহ্ চাইলে চাকরী অবশ্যই হবে আর নাহলে আমি সাহায্য করব ব্যবসা করবে যেখানে আমার মেয়ে সুখী সেখানেই আমার সুখ বলতে লাবনী তার বাবাকে ঝাপটে ধরল তার বুকে মুখ গুজে কান্না করে দিলো।
— আম সরি বাবা আমি বুঝতে পারিনি আমার পক্ষে তাকে বিয়ে করা সম্ভব ছিলো না তাই আবসার ভাইয়ের কথাই শুনেছি তখন
— হুশ কাদে না মা আমাকে বলতে যদি আমি অবশ্যই তোমার দিকটা দেখতাম লাবনীর মাথা হাত বুলায়
এতসবের মাঝখানে সবাই এতক্ষণে নিরব দর্শক ছিলো কিন্তু এবার লাবনীর দাদি মুখ খুলল — কিন্তু ছেলের কোনো কিছু না জাইননা তো এমনেই মাইয়া কারো হাতে তুইললা দিতে পারি না এই ছেরা তোমার নাম কি
— জ্বি রাহাত
— কোথায় থাক বাড়িতে কে কে আছে
— আমার কেউ নেই আমি অনাথ বলেই মাথা নিচু করে ফেলল রাহাত
রাহাতের কথা শুনে লাবনীর মা দাদি দেনামনা করতে লাগল লাবনীর বাবা রাহাতের দিকে তাকায় যে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে লাবনীর দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে যেনো একটু ছোয়া লাগলেই কেদে দিবে।
— বিয়ে হবে এই মুহূর্তে হবে আবসার বাবা আপনি কাজী ডাকেন বলেই রাহাতের দিকে তাকায় তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল — আমার মেয়েটা আমার বাড়ির রাজকন্যা বাবা সে ভুল করলে একটু সুধরে নেওয়ার চেষ্টা করো
লাবনীর বাবার কথা শুনে রাহাত তাকে জড়িয়ে ধরে — আল্লাহ্ চাইলে এই দেহে প্রান থাকা পযর্ন্ত আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তাকে ভালো রাখার।
তাদের মিলন দেখে সবাই সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যে কাজী আসলে লাবনী আর রাহাতের বিয়েটা হয়ে যায় এবং লাবনীরা অরিকদের বাড়িতেই রাতে খাওয়া দাওয়া করে বিদায় নেয়।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_১৪
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর এই শহরে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম শহর। গুলিস্থানে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে এসে থামে বাসটি দীর্ঘ আড়াই ঘন্টার পরে তারা গুলিস্থানে পৌছায় এখান থেকেই মোহাম্মদপুর যাবে তারা সেখানে মাঝারী সাইজের দুই বেডের একটা ফ্লাটেই থাকত আবসার আপাতত ওয়াসিমাকে নিয়ে সেখানেই উঠবে সাথে করে আরুকেও নিয়ে এসেছে কারণ ওয়াসিমা প্রথম প্রথম একা থাকতে কষ্ট হবে আরেকটা কারণ হলো আরু সাইন্সের ছাত্রী আর আবসার কমার্সের ছাত্র যতই ব্রিলিয়ান্ট হোক না কেনো সে ওয়াসিমার গ্রুপ সাবজেক্ট বুঝতে হলে তার কিছু সময় প্রয়োজন কিন্তু ওয়াসিমার জন্য সেই সময় টুকুও অনেক মুল্যবান তাই তার আর দেরী করতে চায়নি সিলেট থেকে আসার পরের দিনই চলে এসেছে ঢাকা শহরে এবং আবসার তার পরিচিত একজন লোকের দ্বারা বাসার কাছাকাছি ওয়াসিমার জন্য একটা মেডিক্যাল এডমিশন কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।
ছিমছাম একটা ফ্লাট ড্রইংরুমে একটা সোফা সেট আর ডাইনিং রুমে চার চেয়ারের একটা ডাইনিং টেবিল পাশাপাশি দুইটা রুম দুই রুমে খাট একটা পড়ার টেবিল এবং একটা আলমারি আছে কিন্তু আবসারের রুমে আলমারির পাশাপাশি একটা ওয়্যারড্রোব আছে। ওয়াসিমা ঘুরে ঘুরে দেখছে পুরো ফ্লাটটা তার বেশ পছন্দ হয়েছে এই বাসাটা আবসার বাহিরে গেছে খাবার আনতে কারণ তারা সেই সকালেই ব্রেকফাস্ট করে বের হয়েছে আকলিমা খাবার রান্না করে দিতে চাইলে আবসার না করে দেয় কারণ সেখানে সে একাই থাকত দুইচারটা প্লেট বাদে আর কিছু থাকার কথা না তাই আবসার বাজারের গেছে বাসার জন্য কিছু কিনতে বিকেল বেলা ওয়াসিমাকে সহ প্রয়োজনীয় সব মালামাল কিনবে।
_________________________
টিবি ফ্রিজের শোরুমের সামনে দাড়িয়ে ওয়াসিমারা সন্ধ্যা হতেই ঘরের জিনিস পত্র কেনার জন্য বেরিয়ে পরে তারা প্রয়োজনীয় সকল হাড়ি পাতিল সহ আরো কিছু কিনে আবসার ওয়াসিমা এবং আরুকে বাসায় পৌছে দিয়ে আবার বের হয় হাটতে হাটতে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসে তার কেমন সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে হবেই না কেনো তার সুখ পাখিযে তার কাছে আছে ফোনের কর্কশ শব্দে আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে ফোনের দিকে তাকায়।
— তুমি এখনো আসলেনা কেনো তোমার না সন্ধ্যায় আসার কথা ছিলো
— আমি বাসে আছি মি. সাখাওয়াত দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব
— বাসে কেনো আসবে বাড়ির গাড়ি আছেনা তোমার সাথে
— এতো কথা এখন বলতে চাচ্ছি না আমি আসছি দশ মিনিট ওয়েট করুন বলেই ফোনটা কেটে দেয় আবসার সে টের পেলো এতক্ষণের সুখানুভূতী হঠাত গায়েব হয়ে গেলো তা বিষাদে পরিণত হলো।
ড্রইং রুমে বসা এজাজ সাখাওয়াত ও এহসান সাখাওয়াত। এর মধ্যেই এহসান সাখাওয়াত জিজ্ঞাসা করলেন — কি বলল আবসার
— আসছে সংক্ষিপ্ত শব্দে শেষ করে কথাটি বলল
এহসান ভাইয়ের মনোভাব বুঝে কিছু বলে না চুপচাপ থেকে রান্নাঘরে চলে যায় তার জন্য কিছু রান্না করতে আজকে সেও একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে
প্রায় দশ মিনিট পরে তাদের বাসার কলিং বলটি বেজে উঠল এজাজ সাখাওয়াত উঠতে উঠতে এহসান সাখাওয়াত দরজা খুলে দেয়
— বাবা আমার বলেই জড়িয়ে ধরল আবসার ও হাসি মুখে আলিঙ্গন করল
— কেমন আছো ছোট মিয়া
— ভালো বাবা তুই না ছোট বেলায় কত সুন্দর ছোট পাপা ডাকতি এখন ডাকিস না কেনোরে বাবা
— বাবা পাপা এই শব্দ গুলো আমার জন্য নিষিদ্ধ সেটা কিন্তু তোমার পরিবারের লোকজনই করেছিল। আবসারের কথা শুনে আর কিছু বলল না এহসান মুখে কোনো রকম হাসির রেখা টেনে তাকে ভিতরে প্রবেশ করতে বলে।
— তুই না বউমাকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিস শুনলাম
— হু ছোট মিয়া ওর ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং করাতে হবে তাই এনেছি
— তাহলে এখানে না এনে ভাড়া বাসায় উঠেছ কেনো এই বিল্ডিংয়ের যেকোনো একটা অ্যাপার্টমেন্টে উঠলেই তো পারতে
— আমার সাধ্য মতোই কাজ করি আমি আমি সামান্য বেতন ভুক্ত কর্মচারী আমার এতো বড় আলিশান বাসায় ঘুম আসবে না কথায় আছে না ছেড়া কাথায় শুয় লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা ঠিক না।
আবসারের কথা প্রেক্ষিতে আর কিছু বলার খুজে পেলো না দুই ভাই তাই চুপ থাকল তারা
— এই নিন বলেই হাত বাড়িয়ে একটা পেন ড্রাইভ এগিয়ে দেয়
— এটা দিয়ে কি হবে
— অনেক কিছুই এটার মধ্যে তার ছেলের কিছু ভিডিও ক্লিপ আছে যা দেখালেই আপনি আপনার মুক্তির সনদ পেয়ে যাবেন
— ভিক্টর এজাজ সাখাওয়াত বলে উঠল। এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসে আবসার
— তার কথা চিন্তা করতে হবে না সে এখন নিজের রঙ্গিন দুনিয়ায় আছে আর সে সাখাওয়াত বাড়ি ছেড়ে তার নিজস্ব ফ্ল্যাটে উঠেছে ঐ বাড়িতে এখন ইরিনা জামান একা থাকে। কথার মাঝখানে এহসান সাখাওয়াত আবসারের জন্য কফি আর কিছু খাবার নিয়ে আসে সাথে আবসারের প্রিয় সেমাই যেটা এহসান সাখাওয়াতের হাতে রান্না করা যা একসময় আবসারের খুব পছন্দ ছিলো
— আমি এখন উঠি ছোট মিয়া বাসায় আরু আর ওয়াসুকে একলা রেখে এসেছি বলেই দাড়ায় আবসার
— বাবা তোর জন্য সেমাই রান্না করেছি আমি নিজের হাতে তুই না পছন্দ করতি
— আমি এখন সেমাই খাইনা ছোট মিয়া মিষ্টি আমার সহ্য হয়না
— ছোট বেলার অনেক অভ্যাসই দেখি তোমার বদলে গেছে বলল এজাজ সাখাওয়াত
— যেখানে নিজের জীবনটাই বদলে গেছে সেখানে অভ্যাস বদলানো খারাপ কিছু না অন্য দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল আবসার
— আমাদের একটা ভুলের ক্ষমা কি করা যায়না
— আমার জন্ম নেওয়াটাই তো ভুল ছোট মিয়া বলেই আবসার চলে যায়
তার যাওয়ার দিকে এজাজ সাখাওয়াত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আজ চোখের সামনে তার সকল কর্মকাণ্ড ভেসে উঠছে — ভাইজান
এহসান সাখাওয়াতের ডাকে তার ধ্যান ভঙ্গ হয়
— তোমার সাথে কথা আছে
— কি কথা এহসান সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে
— আমি তানিয়া আরু সহ চলে যাচ্ছি
— মানে কি বলছিস কোথায় যাবি
— আরু কানাডাতে টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে সেখানে যাব
— হ্যা যাবে কিন্তু পড়তে যাবে আবার মাষ্টার্স করে চলেও তো আসবে
— আরু একা না সাথে আমরাও যাব আর আসব কিনা সেটা জানিনা উদাসীন ভাবে বলল এহসান সাখাওয়াত
— কেনো কোথাও যাওয়া হবে না আর এতো বড় ব্যবসা আমি একা সামলাতে পারব না কোনো ডিসিশন নেওয়ার আগে আমার সাথে আলোচনা করেছিস গম্ভীর স্বরে বলল এজাজ সাখাওয়াত
— কোনো সমস্যা হবে না আর আয়মান তো কিছু দিন পরেই চলে আসছে তখন তুমি আর আয়মান মিলেই ব্যবসায় সামলে নিও আরেকটি কথা তোমাদের ব্যবসায়ের থেকে একটা টাকাও নিব না তুমি তো জানো আমার ছোট খাটো নিজস্ব একটা রেস্টুরেন্ট আছে একটা ছয় তলা বাড়িও আছে যেগুলো আমি নিজের টাকায় কিনেছিলাম সেগুলোই বিক্রি করে দিব চিন্তা করোনা কোনোদিনও তোমাদের সম্পত্তিতে দখলদারি বসাতে আসব না তোমরা চাইলে লিখিত দিতে পারি বলেই এহসান সাখাওয়াত নিজের ঘরে চলে যায় আর এজাজ সাখাওয়াত শুণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
তার মনে হচ্ছে সব ঠিক হতে নিয়েও কেনো কোনো কিছুই ঠিক হচ্ছে না তার ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে ওঠে তার দেখে
আলিয়া সাখাওয়াত কল দিয়েছে ফোনটা ধরে এজাজ ওপাশ থেকে সালাম দেয় আলিয়া সাখাওয়াত সে উত্তর নেয়
— তুমি কিছু শুনেছ এহসান ভাই কিছু বলেছে
— হু একটু আগেই শুনেছি
— তুমি কিছু বললে না
— কি বলব একসময় তোমার ইনসিকিরিটি ফিল করার কারণে আবসারের সাথে জেনেও যে কাজটা করেছ সেই কাজের মূল্য এখন আমি আমার ভাই হারিয়ে দিচ্ছি আমার বড় সন্তান হারিয়ে দিচ্ছি শান্ত স্বরে বলল এজাজ সাখাওয়াত ফোনের ওপাশে শব্দ করে কেদে উঠল আলিয়া সাখাওয়াত। তার কান্নার শব্দ শুনে ফোন কেটে দিল এজাজ সাখাওয়াত তার এই কান্না এখন বিরক্ত লাগছে। কয়েকদিন আগেও যার কান্না তার হৃদয়ে তোলপাড় করত আজকে তার কান্না বিরক্ত লাগছে ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলল এজাজ সাখাওয়াত।
#চলবে