বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৭+৮+৯

0
141

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৭

পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয় ওয়াসিমা গেট পেরিয়ে বের হতেই অরিক পেছন থেকে ডাকে

— ওয়াসু মনি
ভাইয়ের ডাকে পিছনে ফিরে ওয়াসিমা — কিছু বলবা ভাইয়া

-” হুম তুই অফিস রুমে একটু বস ভাইয়া কাজ শেরে একসাথে বাসায় যাব

— কেনো ভাইয়া প্রতিদিন তো রিক্সা ঠিক করে দাও আমি তাতেই চলে যাই তো আজকে কি হয়েছে

— আজকে শেষ পরীক্ষা তাই ভাইয়া নিয়ে যাই বলেই ওয়াসিমাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে অরিক অফিস রুমে যায় সেখানে তার কিছু কাজ শেষ করেই ওয়াসিমাকে নিয়ে বের হবে।

ওয়েটিং রুমের বেঞ্চে বসে মাথা দেয়ালে হ‍্যালান দিয়ে বসে আছে এর মধ‍্যেই আবসারের ফোন আসল ওয়াসিমা রিসিভ করেই সালাম দিলো ঐ পাশ থেকে সালামের উত্তর নিয়ে জিজ্ঞাসা করল — পরীক্ষা শেষ হয়েছে

— হু
— বাসায় পৌছেছিস
— না ভাইয়া বসতে বলেছে ভাইয়া নিয়ে যাবে
— ওহ তো বাসায় যেয়ে ফোন দিবি কথা আছে
— হু বলে আবার সালাম দিয়ে ওয়াসিমা কেটে দিলো খুব সাধারণ ওয়াসিমা একটা সাধারণ জীবন চেয়েছিল যেখানে কোনো ঝুট ঝামেলা নেই কিন্তু তার কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে কোনো জটিলতায় জড়িয়ে যাচ্ছে কেমন যেনো সব খাপছাড়া মনে হচ্ছে আবসার তাকে বিয়ে তো করল কিন্তু তার কাজ সম্পর্কে কিছু জানেনা ইভেন তাকে এখন পযর্ন্ত বাপের বাড়িতে রেখেছে অথচ তার পরীক্ষার হল থেকে তার শশুর বাড়ি কাছেই খুব দ্রুত যাতায়াত করা যায় অথচ সে বাপের বাড়ি থেকে আসে যায়। আবসারও সেই যে পরীক্ষার প্রথম দিন এসে দেখা করে গেছে এর মধ‍্যে শুধু আরু ছাড়া আর কেউই আর একটা খোঁজ খবর নিলো না শশুর বাড়ী কি আসলেই এরকম ভেবে পায়না ওয়াসিমা।

_____________________

নিজের কেবিনে বসে কাজ করতেছিল হঠাৎই সেখানে বীনা অনুমতিতে মিস জুলি প্রবেশ করে গরগর করে আবসারকে জিজ্ঞাসা করে — মি. এ এস তুমি নাকি অফিস থেকে লিভ নিচ্ছো ওয়ান উইকের ( জুলিয়ানার ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা শুনে বিরক্ত মুখে সে তার দিকে তাকায় )

— আই থিংক কারো কেবিনে প্রবেশ করতে হলে নক করতে হয় এই ম‍্যানারটা অন্ততপক্ষে আমি আপনার থেকে আশা করেছিলাম এন্ড আমি কি করব না করব তার কইফিয়ত তো আপনাকে দিতে বাধ‍্য নই রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠল আবসার।

আবসারের কথাটা জুলির মাইন্ডে লাগলেও কিছু বলল না সে ঠাণ্ডা স্বরেই বলল — একচুয়ালি আমি বাংলাদেশে এসেছি অনেক দিন হলো তুমি প্লিজ আমাকে একটু বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দেখাবে

— আম সরি মিস মার্টিন আমার কাজ আছে আপনি আপনার পি এ কে বলেন বলেই নিজের মতো কাজ করতে লাগল। জুলিয়ানা আবসারের দিকে তাকিয়ে রয় অপলক আর কি করলে এই লোকটা তাকে নোটিশ করবে এই আবসারের জন‍্য সে দিনের পর দিন বাংলাদেশে পরে রয়েছে বাংলা ভাষা শিখেছে পুরোপুরি না পারলেও মোটামুটি বাঙ্গালী পোশাক পরার চেষ্টা করে এতো কিছু করার পরেও আবসার তার দিকে ফিরেও তাকায় না কেনো ভেবে পায় না জুলিয়ানা।

— মিস মার্টিন আপনার আর কিছু বলার আছে থাকলে বলতে পারেন নাহলে যেতে পারেন। আবসারের কথায় ধ‍্যান ভাঙ্গে জুলিয়ানার সে আর কিছু না বলে চুপচাপ চলে যায় নিজের কেবিনে

_____________________

— ভিক্টর ইদানীং দেখেছি তুমি খুব রাত করে বাসায় ফিরো

— উফফ এতো বকবক করো নাতো এই একদম বউয়ের মতো অ‍্যাক্টিং করবি না বউ না তুই আমার
বলেই সামনের রমনীটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে নিজের ঘরে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রমনীটি
একটু পরেই বাড়ির সদর দরজা দিয়ে আরেকজন পুরুষ প্রবেশ করে বেশ সুদর্শন হাতে সাদা এপ্রোন তাকে দেখেই এগিয়ে যায় রমনীটি হাসি মুখেই সুধায় — এসে পড়েছ বাবা ফাহাদ

— আপনাকে আমার খেয়াল করতে হবে না মিস ইরিনা বলেই চলে যায় ফাহাদ
ফাহাদের যাওয়ার দিকে ক্ষোভ নিয়ে তাকিয়ে আছে ইরিনা — একবার শুধু সব সম্পত্তি আমার ছেলের নামে করি তারপরেই তোর কিচ্ছা খতম করব দাত কিড়মিড় করতে করতে বলে ইরিনা।

_____________________

সাখাওয়াত গ্রুপ অব কম্পানিতে তোড়জোড় চলছে আজকে প্রায় বিশ বছর পরে কম্পানির আরেকজন মালিক তার নিজস্ব চেয়ারম্যান পদ গ্রহন করবে
একটা ব্লাক কালারের গাড়ি অফিসের সামনে থামে গাড়ি থেকে নামে এজাজ সাখাওয়াত। সে নামতেই এহসান সাখাওয়াত তাকে জড়িয়ে ধরে — ভাইজান স্বাগতম

এজাজ সাখাওয়াত আলিঙ্গন ভেঙ্গে অফিস ভাবনটির দিকে তাকায় তার বাবার কষ্টের অর্জিত এই ব‍্যবসা তার বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের মা সামলায় তারপর তারা বড় হওয়ার পর তারা দুই ভাই মিলেই সামলায় অথচ মাঝখানে সব শেষ করে দিয়েছে এক কাল সাপীনি নারী। হ‍্যা গুরুজনরা ঠিকই বলে একজন নারী চাইলে সব কিছু করতে পারে একজন ব‍্যাক্তির জীবন সঙ্গীনি হিসেবে থেকে তাকে উচ্চতার শিখরে নিয়ে যেতে পারে আবার অন‍্য দিকে কোনো পুরুষের ধ্বংসের জন‍্য শুধু একজন নারীই যথেষ্ট।

____________________

সাখাওয়াত ভিলায় রাতের খাবার খাচ্ছে সবাই সেখানে আলিয়া সাখাওয়াত শুধু ভাতের প্লেট নাড়াচাড়া করছে তানিয়া সাখাওয়াত পাশে তাকিয়ে দেখে আলিয়া সাখাওয়াত কিছু ভাবছে

— আপা আপা
তানিয়ার ডাকে ঘোর ভাঙ্গের তার — কি হয়েছে তানিয়া

— খাচ্ছো না কেনো কখন থেকে নাড়াচাড়া করেই যাচ্ছো খাও টেনশন করো না ভাইজান ঠিক আছে তোমাকে কল করেছিল

— হুম তানিয়া কথা হয়েছে সে ঠিক মতো পৌঁছে গেছে আবার আজকে সকালে অফিস ও জয়েন করেছে

— তাহলে চিন্তা করোনা আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যাবে মনে রেখো আল্লাহ্ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা
আলিয়া সাখাওয়াত তানিয়া সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে খাওয়া শুরু করে তাদের দেখে দিলরুবা সাখাওয়াতের চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল তার ভাগ‍্য আসলেই আল্লাহ্ তায়ালা ভালো লিখেছেন নাহলে এই বয়সে এসে দুইটা ছেলেই তার বাধ‍্য আবার ছেলের বউ দুইটাও ভালো তাদের মিল দেখে মানুষ ভাবে দুই বোন তারা।

— বড় বউমা কালকে আবসার আসবে

— জ্বী আম্মা কালকে এসেই পরসু দিন ওর নানী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবে আবসার রাতের বাসে উঠেছে কাল সকালে এসে পৌঁছে যাবে

— ঐখানে যাওয়ার কি দরকার অন‍্য কোথাও যাক এর মধ‍্যে শুনলাম আয়মান দাদুভাই ও আসবে তাকে ও নিবে

— আয়মান এখন আসবে না আম্মা এই বছরটা গেলেই আসবে
দিলরুবা সাখাওয়াত আর কিছু বলে না চুপচাপ নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে যায় চেয়ারের পাশ থেকে লাঠি নিয়ে ঠকঠক শব্দ পায়ে নিজের ঘরের দিকে যায়।
তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি মারে আরু বিড়বিড় করে বলে শয়তান বুড়ি বিড়বিড় করে বললেও তানিয়া সাখাওয়াত শুনে ফেলে সে চোখ রাঙ্গায় মেয়ের দিকে আরু মায়ের চোখ রাঙ্গানিতে চুপসে যায় কিছু না বলে চুপচাপ খেতে শুরু করে।

— তোমায় আলিঙ্গন করার জন‍্য এই বুক তৃষ্ণার্ত শুভ্রময়ী আসছি আমি আমার তৃষ্ণা মিটাতে জানিতো আমার শুভ্রময়ীর মনে অভিমান জমে আছে ভালোবাসা দিয়ে সব মিটিয়ে নিবো।
বাসে জানালার পাশের সীটে বসে আবসার নিজের শুভ্রময়ীর কথা ভাবছে আর ভাবছে কিভাবে তার মান ভঙ্গন করবে

অপরদিকে ওয়াসিমা বারান্দায় বসে চাদ দেখছে আর আবসারের নামে অভিযোগ জমা করছে যার সাক্ষী এক মাত্র তার মন ও আকাশ।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৮

আকাশে থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে সারারাত হালকা বৃষ্টি থাকলেও ভোরের দিকে তার প্রলেপ বেড়ে যায় চারিদিকে আযানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে আবসারের কানে আযানের ধ্বনি যেতেই ঘুম ভাঙ্গে তার বাস এখনো চলছে এতক্ষণ তো বাস চলার কথা না আরো আগে পৌঁছে যাওয়ার কথা ভেবেই সুপারভাইজারকে ডাক দেয়

— বাস এখনো চলছে কেনো এটা তো চারটার মধ‍্যে পৌঁছে যাওয়ার কথা

— আরে ভাই বাইরে জোরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই একটুপ দেরী হইছে আরকি এইতো আর দশ মিনিটের মধ‍্যেই বাস থামব বলেই লোকটি চলে যায়
আবসার তাকায় বাইরের দিকে তার বৃষ্টির পানির ঝাপটা ভালো লাগছে ঠিক দশ মিনিট পরেই বাসটা থেমে যায় সব শেষেই আবসার নামে বৃষ্টির বেগ হালকা কমলেও যেই বৃষ্টি আছে এই বৃষ্টির মধ‍্যে বের হলেই নিশ্চিত ভিজে যাবে তারপরও নেমে গেলো আবসার একটু সামনে যেতেই অটোরিকশা স্ট‍্যান্ড পেলেও অটো পেল না তাই অগত‍্যা অরিককে ফোন দিলো ছাউনির নিচে দাড়িয়ে।

— আমি বাস স্ট‍্যান্ডে দাড়িয়ে আছি এসে নিয়ে যা বলেই কল কেটে দিলো।
ঘুম ঘুম চোখে অরিক ফোনের দিকে তাকিয়ে একবার বাইরের দিকে তাকায় বাইরে বৃষ্টির ঠাণ্ডা পেয়ে একটা জম্পেস ঘুম দিয়েছিল নামাজ পরতেও আজকে মসজিদে যায়নি সেই এখন যাওয়াই লাগবে তাই কোনো রকম মুখ ধুয়েই ছাতা নিয়ে বের হয় সামনের বাড়ি থেকে অটো ড্রাইভার করিমকে উঠিয়ে তাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরে।
আধ ঘন্টা পর আবসারকে নিয়ে বাসায় আসে তারা বাসায় আজকে এখনো কেউ উঠেনি কালকে শুক্রবার তাই সবাই ঘুম। আবসার কিছু না বলে সোজা ওয়াসিমার ঘরে যায় অরিক আবসারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে — শা*লা অকৃজ্ঞ

পাতলা একটা নকশিকাঁথা গায়ে দিয়ে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে ওয়াসিমা লম্বা কেশরাশি গুলো ছড়িয়ে আছে আবসার আস্তে করে চুল গুলো গুছিয়ে একপাশে রেখে কাথার ভিতর ঢুকে নিজের জায়গা করে নেয়।
সারারাতের জার্নি প্লাস ক্লান্ত থাকায় আবসার সহজেই ঘুমিয়ে যায়

_______________

সকাল সাতটা ওয়াসিমা নড়তে নিলেই বুঝতে পারে সে কারো বাহু বন্ধনে আবদ্ধ ওয়াসিমার বুক ধরফর করে উঠল সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই আবসারের ঘুমে ব‍্যাঘাত ঘটায় সে মুখ কুচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল
— উমম ঘুমাতে দে শুভ্রময়ী বলেই ওয়াসিমার ঘাড়ে মুখ গুজে আবারও ঘুম দেয়

আবসারের কন্ঠ শুনে ওয়াসিমা সস্তি পেলেও তার ঘাড়ে মুখ গুজতেই সর্বাঙ্গ কেপে ওঠে ওয়াসিমার সে কাপা স্বরে কোনো রকম বলে — আমাকে ছাড়েন আমি উঠি

— উহু বলেই আবসার আরো ঝাপটে ধরে এর মধ‍্যেই তাদের নক করার শব্দ আসে

— এবার ছাড়েন না দেখি কে এসেছে
আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমার দিকে বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকাতেই দেখে আরক্ত মুখে নজর নিচু করে রেখেছে

— বেশী লজ্জা পাস না তাহলে সকাল সকালেই শুরু করে দিব আমার রোমান্স
বলেই ওয়াসিমাকে ছেড়ে দেয় ওয়াসিমা উঠে গেট খুলে কথা বলেই বাইরে চলে যায় আবসার ও আর ঘুমায় না উঠে চলে যায় ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে অরিককে খোজার উদ্দেশ্যে বের হয় অরিককে খুজতে খুজতে আবসার ছাদে চলে যায়।
বর্তমানে আকাশ মেঘলা হলেও বৃষ্টি নেই তাই ইরফান রহমান ছাদের চারিদিকে জমে থাকা পানি গুলো পরিষ্কার করছিল গত কালই তিনি টিভিতে সংবাদ দেখেছে বৃষ্টির কারণে গরম কমলেও বাড়তে পারে এডিস মশা তাই সবাইকে নিজের আঙ্গিনায় জমে থাকা পানি পরিস্কার করার আহ্বান করেছে। ইরফান রহমান ভয়ে আছে ওয়াসিমাকে নিয়ে ওয়াসিমার একবার ডেঙ্গু হয়ে মরা মরা অবস্থা তাই তিনি আগে থাকতেই সচেতন থাকছে।

আবসার ছাদে প্রবেশ করেই অরিককে না পেলেও ছাদের কর্নারে কাউকে দেখে
— কে ওখানে
আবসারের ডাকে ইরফান রহমান পিছন ফিরে তাকায় আবসারকে দেখেই মুখটা এমন করে যেনো তার সামনে তিতা জাতীয় কোনো অখাদ্য কুখাদ‍্য রেখেছে
আবসার তাকায় ইরফান রহমানের দিকে তার পরনে লুঙ্গি আর সাদা সেন্টু গেঞ্জি আবসার তাকানো দেখে ইরফান নিজের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে সে জামাইয়ের সামনে বেফাঁস কাপড় পরে আছে তাই একটু লজ্জা পায়। আবসার ইরফান সাহেবের লজ্জা দেখে মুখ বাকিয়ে হাসে
— আজকাল দেখছি বুড়ো লোকেরাও দেখি মেয়েদের মতো লজ্জা পেতে থাকে

— অসভ‍্য ছেলে মুখে লাগাম দাও আমি বর্তমানে শশুর হই তোমার

— তা শশুর মশাই রাতে ঘুম ভালো হয়েছে তো আপনি কিন্তু যথেষ্ট ইয়াং আছেন চাইলে আমার একটা শালা অথবা শালী আনার ব‍্যবস্থা করতে পারেন

— বেয়াদব অসভ‍্য ছেলে মুখে লাগাম নেই এই জন‍্যই আমি এই ছেলের কাছে আমার বাচ্চা মেয়েটার বিয়ে দিতে চাইনি রাগে কটমট করে বলতে বলতে ছাদ থেকে বেরিয়ে যায় ইরফান রহমান। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবসার হাসে লোকটাকে তার জ্বালাতে বেশ ভালোই লাগে সে সচারচর কারো সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া না করলেও শশুরের সাথে করে। তাদের প্রথম সাক্ষাতে কথা মনে করেই আবসার হেসে উঠল যাকে বলে প্রান খোলা হাসি যেই হাসিতে শব্দ না থাকলেও আছে স্নিগ্ধতা।
দরজার সামনে দাড়িয়ে ওয়াসিমা পুরো ঘটনাই দেখল সে অবাক ঐ মুখচোরা গম্ভীর লোকটা কেমন তার বাবাকে রাগিয়ে দিয়ে নিজে কি সুন্দর হাসছে

— বাবার সাথে কি আপনার আগে থেকেই পরিচয়

— হুম আবসার হাসি মুখে উত্তর দেয়

— কবে থেকে আর কিভাবে

— সে অনেক কথা এখন বলোতো অরিক কই

— ভাইয়া তো ঘুমিয়ে আছে আসেন ঘরে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করবেন

— আমি হাত মুখ ধুয়েই বের হয়েছি চল আগে অরিককে জাগিয়ে নেই বলেই আবসার অরিকের ঘরের উদ্দেশ্যে যায় ওয়াসিমাও তার পিছু পিছু নামে কিন্তু সে যায় রান্নাঘরের দিকে সেখানে আকলিমা সহ পাশের বাড়ির করিমের বউ আছে তাকে সাহায্য করার জন‍্য।

___________________

ইরিনা স্তব্দ চোখে হাতে ধরে রাখা কাগজের দিকে তাকিয়ে আছে যেখানে স্পস্ট ভাষায় লেখা গুলো জলজল করছে তালাক নামা সাথে সাখাওয়াত ভিলা এক সপ্তাহের মধ‍্যে ছাড়ার লিগ‍্যাল নোটিশ
ডিবোর্স পেপার দেখে ভিক্টর কিছু না বললেও লিগ‍্যাল নোটিশ দেখে ভিক্টরের রাগের পারদ মাথায় চড়ে যায় সে বসে থাকা ইরিনাকে টান দিয়ে উঠিয়ে ঠাসস করে থাপ্পড় মারে রাগে হিসহিসিয়ে বলে — এই তুই না বলেছিলি এই বাড়ির অর্ধেক তোর নামে তাহলে এজাজ সাখাওয়াত তোর নামে লিগ‍্যাল নোটিশ পাঠায় কিভাবে হ‍্যা

— আমি তার স্ত্রী সুত্রে এই বাড়ির মালিকানা পেয়েছি ভিক্টর
ভিক্টরের থেকে দ্বিগুণ চেচিয়ে বলে ইরিনা

— এই এই আওয়াজ নিচে আমাকে এজাজ পাস নাই যে তোর রাগের ধারধারি বলেই ইরিনার চিবুক চেপে ধরে
— আমি ব‍্যাথা পাচ্ছি ভিক্টর ছাড়ো চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে ভিক্টর তবুও ছাড়ে না

— আর তুই যদি ঐ ডিবোর্স পেপারে সাইন করেছিস না তাহলে আমি তোকে দিন তারা দেখিয়ে আনব মনে রাখিস স্ল‍্যা*টানা কোথাকার বলেই ইরিনাকে ধাক্কা মেরে সেখান থেকে চলে যায়।
মুখে হাত দিয়ে শব্দ করে কেদে দেয় ইরিনা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না এতদিন সব ঠিক থাকলেও ইদানিং ভিক্টর তাকে একদমি দেখতে পারে না কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে সেদিন তো হাটু বয়সী একটা মেয়ের সাথে ফোনের ম‍্যাসেঞ্জারে চ‍্যাট করতে দেখেছে।
সে বুঝতে পারছে তার মোহ কেটে যাচ্ছে ভিক্টরের।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৯

সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করেই ওয়াসিমা ও আবসার নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায় ওয়াসিমাদের বাসা থেকে যেতে আধ ঘন্টার রাস্তা বাইকে বা অটোতে। প্রায় পয়ত্রিশ মিনিট পর তারা পৌছায় সেখানে আবসার ওয়াসিমাকে দেখে সবাই এগিয়ে আসে সবাই ড্রয়িং রুমেই ছিলো আবসার কাউকে কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে যায় ওয়াসিমা আবসারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে সে ভেবে পায়না লোকটা তাদের বাসায় নরমাল বিহেব করলেও এখানে কেমন গম্ভীর মনে হয় একটা কথাও মেপে মেপে বলে।

— কেমন আছো মা
আলিয়া সাখাওয়াতের কথায় তার দিকে তাকায় ওয়াসিমা তাদের সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে।
— ভাবী কোথা থেকে আরু এসেই ওয়াসিমাকে ঝাপটে ধরে ওয়াসিমা পরতে নিলেও সামলে নেয়

— ভালো আছ আপু

— হু খুব ভালো আমি অনেক খুশী ভাবী জানো আমরা ফাইনাল্লি অনেক দিন পর বিশেষ করে আবসার ভাইয়ের সাথে

— কেনো আপু আমরা কোথাও যাচ্ছি
— হ‍্যা তুমি জানো না
— নাতো উনি কিছু বলে নি
— ও আচ্ছা এখন চলো তো বলেই ওয়াসিমাকে নিয়ে যায় নিজের সাথে
— এই আরু মেয়েটা মাত্র আসল একটু রেস্ট নিতে দে পিছন থেকে তানিয়া বলল আরু কি আর করো কথা শুনে সে চলল ওয়াসিমাকে নিয়ে নিজের ঘরে।

আবসার ঘরে ঢুকেই গোসলে ঢোকে প্রায় অনেক্ষণ পরে গোসল থেকে বের হয়ে ঘরে ওয়াসিমাকে না পেয়ে তাকে ডাকতে ডাকতে বের হয় আবসার
— ওয়াসু ওয়াসু
— ওয়াসিমা তো আরুর কাছে আলিয়া সাখাওয়াত এসে বলল। এর মধ‍্যেই আবসারের ডাক শুনে আরুর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে
— ডেকেছেন
— হু কোথায় গিয়েছিলে
— আমি তো আরু আপুর সাথেই ছিলাম
আবসার আর কিছু না বলে চুপচাপ ওয়াসিমার হাত ধরে ঘরে নিয়ে যায় পিছন থেকে আলিয়া সাখাওয়াত তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে ছেলেটার বড্ড অভিমান এই পরিবারের প্রতি

— বড় বউমা শুনলাম বড় দাদু ভাই বউ সহ এসেছে কই
দিলরুবা সাখাওয়াত নিজের ঘর থেকে বের হতে হতে বলল
— এসেছে আম্মা আপনি তো আপনার নাতি চিনেন সে মেয়েটাকে একটু সময়ের জন‍্যও একা ছাড়ে না

— কেনো একা ছাড়বেনা তার বউকে কি কেউ খেয়ে ফেলবে নাকি আর ঐ মেয়েটাই কেমন সারাদিন স্বামীর পিছু ঘোরা ছাড়া আর কিছু পারে না নাকি গলা ছেড়ে চিল্লাচিল্লি করে বলে দিলরুবা সাখাওয়াত।

— থামেন মা ছেলেটা খুব একটা বাড়িতে আসে এখন অশান্তি করবেন না দয়া করে

— আমি অশান্তি করছি নাকি সে নিজের মন মর্জি মতো চলছে হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসল আবার সে না থাকলে তার বউকেও তার শশুর বাড়িতে রাখে কেনো

— থামেন আম্মা আলিয়া সাখাওয়াত অনেক কষ্টে দিলরুবা সাখাওয়াতকে শান্ত করে নিজের সাথে নিয়ে যায়। দিলরুবা সাখাওয়াতকে শান্ত করে ঘর থেকে বের হতেই সামনে পরে তানিয়া ও আরু

— বড় আম্মু তুমি তাকে কিছু বললা না ক‍্যান সে যাতা আমার ভাইয়ের ব‍্যাপারে বলে গেলো এই তোমাদের আশকারা পেয়েই সে এতো কিছু বলার সাহস পায় সব সময় দেখি আমার বন্ধু বান্ধবীদের দাদী দাদারা অনেক আদর করে কিন্তু আমার আর ভাইয়ের ভাগ‍্য দেখো ঐ মহিলা আমাদের সহ‍্যই করতে পারে না আমি নাহলে মেয়ে কিন্তু আবসার ভাই সেতো ছেলে তাকে ক‍্যানো ভালোবাসে না বলতে পারো ও তুমি কেনো বলবা তোমার ছেলেকে তো সে ঠিকই ভালোবাসে আদর যত্ন করে তোমরা সবাই সার্থপর

কথা শেষ হতে না হতেই তানিয়া আরুর গালে থাপ্পর মারে আরু গালে হাত দিয়ে নিজের মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে দৌড়ে চলে যায়।
তানিয়া সাখাওয়াত আরুর পিছনে যেতে নিলেই তাকে থামায় আলিয়া সাখাওয়াত

— থাক তানিয়া বাচ্চা মানুষ
— না ভাবী সে বাচ্চা না একুশ বছর হয়েছে তার পরের সংসারে যেতে হবে এরকম মুখ চালালে তো সংসার করতে পারবে না।
আলিয়া জাকে ঠাণ্ডা করার জন‍্য তাকে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়

________________
ছলছল নয়নে ওয়াসিমা বসে আছে আবসারের সামনে সে বার বার উঠে ঘর থেকে বের হতে চেয়েছে কিন্তু আবসার বার বার তাকে আটকেছে শেষে না পেরে ছলছল চোখে বসে আছে সে

— এক ফোটা পানি চোখ থেকে পরলে আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন বলেই বেরিয়ে যায় ঘর থেকে আর যাওয়ার আগে ওয়াসিমাকে শাষিয়ে যায় যেনো ঘর থেকে একপা বাইরে রাখলে তার খবর করে ছাড়বে।
আবসার নিজের ঘর থেকে বের হয়ে সোজা আরুর ঘরের সামনে যায় এতক্ষণে তারা বাহিরের সব কথাই শুনেছে

— আরু
বালিশে মুখ গুজে কান্না করছিল আরু ভাইয়ের কথা শুনে উঠে গেট খুলে দেয়
— দশ মিনিট সময় দিলাম এর মধ‍্যেই যা যা লাগে গুছিয়ে রেডি হ আর কান্নাকাটিও বন্ধ কর সে আমাদের কেউ না তার কথা আমাদের কাছে কোনো ম‍্যাটার করে না ওকে বলেই আরুর চোখের পানি মুছে দেয় আরুও মাথা নাড়ায় আরুর সাথে কথা শেষ করে বের হতেই মুখোমুখি হয় আলিয়া সাখাওয়াতের তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই আলিয়া সাখাওয়াত বলে — তুমিও কি তাই ভাব আমাকে সার্থপর

আবসার আলিয়া সাখাওয়াতের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে চলে যায় আবসারের শান্ত ভাব যেনো আলিয়ার কান্না যেনো বাড়িয়ে তোলে সে শাড়ির আচল মুখে গুজে আবার নিজের ঘরে চলে যায়।

দশ মিনিট পরেই আবসার আরু ও ওয়াসিমাসহ বেরিয়ে যায় বাসা থেকে বাস স্ট‍্যান্ডে আসতেই দেখে সেখানে আগে থেকে অরিক আর লাবনী উপস্থিত ওয়াসিমা ভাবীকে দেখে তার কাছে যায় কুশল বিনিময় করে বিয়ের পর এই প্রথম লাবনীর সাথে দেখা তার আরু সাথেও পরিচয় করায় অরিক বোনকে পাশে ডাকে
— ভাইকে না বলে চলে এলি কেনো আবার একটু আগে আবসার ফোন করে বলল ইমার্জেন্সি লাবনীকে নিয়ে আসতে
ভাইয়ের কথা শুনে ওয়াসিমা তাকায় আবসারের দিকে
— আরে তিনটা মেয়ে নিয়ে রাতের বেলা এতো পথ জার্নি করা ঠিক হবে না তাই ভাবলাম তুই ও বাসায় আছিস আর আজকের দিনটা ওয়েস্ট করতে চাইনি
আবসারের কথা বিশ্বাস করে অরিক কিন্তু আরুর দিকে তাকিয়ে দেখে তার মুখটা ভার করে রেখেছে

— এই যে বিয়াইন সাব ভাব নিয়েন না এতো সুন্দর বিয়াই কি দেইখাও দেখেন না

— আপনার মতো পেচা মুখো বিয়াই কি ভুলতে পারি আমি আরু হাসি মুখে বলল
আরুর কথা শুনে অরিক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবসার এসে বাসে উঠার তাগাদা দেয়।

বাসে উঠার পরেও আরু অরিক একে অপরের সাথে দুষ্টুমি করছে আর লাবনী তাদের দিকে তাকিয়ে জ্বলছে আর পুরির মতো ফুলছে।
বাস ছাড়তেই যে যার সীটে বসে পড়ে আরুর বাসে উঠেই ঘুমানোর অভ‍্যাস সে নিজের মতো কানে হেডফোন গুজে চোখ বন্ধ করে আছে।

— আপনার বিয়াইন সাহেবার সাথে রসের আলাপ শেষ হয়েছে দাতে দাত চেপে বলল লাবনী

— এভাবে দাত চেপো না দাত ভেঙে গেলে পরে আমারই সমস্যা সবাই আমাকে বুড়ির বর বলে ডাকবে আমার মতো এতো হ‍্যান্ডসাম একটা ছেলেকে বুড়ির বর বলে ডাকাটা রীতিমতো অপমান হয়ে যাবে না

— আপনি ঐ হ‍্যান্ড মানে হাত আর সাম মানে কিছু ঐ হাত আর কিছুই আছে আপনার মধ‍্যে দেখতে লাগে চোরের মতো হ‍্যান্ডসাম আসছে হু বলেই মুখ ভেংচি মারে লাবনী অরিক তো অবাক এই মেয়ে রীতিমতো তাকে অপমান করছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে