#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_অন্তিম_পর্ব
ওয়াসিমার উন্মুক্ত উদরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবসার। কিছুক্ষণ আগেই তাড়া হসপিটাল থেকে এসেছে তারা নিজেদের ফ্ল্যাটে না গিয়ে অরিকদের বাসায় ঢুকে। ঢুকতেই সকলে কি হয়েছে জানতে হামলে পরে
— কিরে কিছু বলছিস না কেনো??
অরিকের বিরক্তিমাখা স্বরে আবসারের ধ্যান ভাঙ্গে।
— কি বলব তুই মামা হবি নাকি চাচ্চু হবি ডিসাইড কর আমি আমার বউ নিয়ে বাসায় যাই। বলেই ওয়াসিমাকে টেনে নিয়ে নিজেদের বাসায় যায়। ওয়াসিমা তো লজ্জায় কোনো কথা বলতে পারছে না। তখন কোনো রকম বাসায় ওয়াসিমাকে পাজা কোলে তুলে ধীরগতিতে বেডে শুয়িয়ে দেয়। ওয়াসিমার পেটের অংশের কামিজ সরিয়ে সেখানে অজস্র চুমু দেয়। তখন থেকেই একদৃষ্টিতে তার উন্মুক্ত উদরের দিকে তাকিয়ে থাকে
তাদের এ নিরবতা অনেক্ষণ ধরেই চলছে। নিরবতা ভেঙ্গে ওয়াসিমা বলল — কি দেখছেন এভাবে??
— দেখছিনা বউ ভাবছি,, এতটুকু পেটে দুই দুইটা বেবী তুই কিভাবে ক্যারী করবি আমারতো এখনই চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে।। বেশ করুন স্বরেই বলল আবসার
আবসারের কথা শুনে ওয়াসিমা হাসে কিছু বলে না। তাদের কথোপকথনের মাঝখানে ধরাম ধরাম গেট বারির শব্দ আসে। বিরক্ত হয় আবসার বউয়ের সাথে একটু সময় কাটাচ্ছে সেটাও বোধহয় শান্তিতে করার মতো সুযোগ নেই।
— আরে গন্ডার আসছি আস্তে দরজা ভেঙ্গে যাবে।।
বলতে বলতে দরজা খুলে দেয়। তার পিছনে ওয়াসিমাও আসে
— কি কথা শুনাইলিরে বন্ধু কি কথা শুনাইলি,,
এমন খুশির খবর দিয়া পরানটা জুড়াইলি
— কাক কখনও কোকিল হয়না জানিস তো,, ছাড় তোর এই কাকের কন্ঠে গান শুনে আমার কানের পর্দা ফেটে গেলো
— আজকে তোর অপমানের বদলা নিলাম না আজকে আমি অনেক খুশী কংগ্রাচুলেশন দোস্ত আবসারকে জড়িয়ে ধরে বলল
— আমার পিচ্চিটা কবে যে বড় হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম
অরিকের কথা শুনে তাকে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয় ওয়াসিমা
— ইশশ তুমি কি গো আমার ভাবীটাকে এই অবস্থায় কাদাচ্ছো বলেই আরুও ওয়াসিমাকে জড়িয়ে ধরে
— আমরাও আছি
অরিকের পিছন পিছন পুরো সাখাওয়াত ফ্যামিলি হাজির সবাইকে খবরটা আরু দিয়েছে। আয়মান ভেনিসা তো পারেনা উড়ে উড়ে আসতে
সবাই অনেক খুশী সাথে করে মিষ্টির প্যাকেট হাজির পুরো বিল্ডিংয়ে ইতিমধ্যে মিষ্টি বিলানোর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।
এজাজ অফিসের সবাইকে মিষ্টি দিয়ে নিজের আনন্দের ভাগিদার করছে। আশেপাশে পাড়া প্রতিবেশী কেউই বাদ যাচ্ছে না।
_______________________
ইরফান আকলিমা দুইজন মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বসে আছে তাদের সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ কত বড় হয়ে গেছে সে মা হচ্ছে
— এখন আমি কোনো কথা শুনব না বউমা। এবার আমাদের সাথে যেতেই হবে
আলিয়া সাখাওয়াতের কথায় সবাই সেদিকে তাকায়। তাদের তাকানো দেখে এজাজ সাখাওয়াত বললেন — আমার ঘরের লক্ষিকে আমি দ্রুত আমার বাড়িতে নিতে চাই সেখানে সবার সাথে থাকবে সবাই তার খেয়াল রাখবে
— কেনো বেয়াই সাহেব আমরা কি আমাদের মেয়ের খেয়াল রাখতে পারিনা
ইরফান গম্ভীর কন্ঠে বলল
— আমি সেটা বলিনি বেয়াই সাহেব আপনার মেয়েটা আমাদের বাড়ির আলো তো তাই তাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি আমাদের সাথে
এজাজ সাখাওয়াতের নমনীয় কথা শুনে ইরফান কিছু বলল না।
— ওয়াও ভাবী সত্যি যাবে আমাদের বাসায়
— চলোনা ভাবী
আয়মান আর ভেনিসার বাচ্চাদের মতো আবদার শুনে ওয়াসিমার আবসারের দিকে তাকায়। দেখে আবসার চুপচান দেয়ালে হ্যালান দিয়ে দাড়িয়ে আছে ওয়াসিমা বুঝল আবসার যেতে দিবে না।
— আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারছিনা ভাইয়া আপু উনাকে জিজ্ঞেস করো।
আয়মান ভেনিসা এবার আবসারকে ঝাপটে ধরে। তাদের মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে আবসারকে রাজি না করিয়ে খ্যান্ত হবে না।
— না না না,, আমি সারাদিন অফিস করে এসে আবার বউয়ের দেখা পাবো না সেটা চলবে না।
— তুমি কি ভাবছ ভাইয়া তোমাকে বাসায় ঢুকতে দিব না আরে সেরকম না তোমাকেও থাকতে দিব সমস্যা নাই আমাদের বাসায় অনেক গুলা গেষ্ট রুম আছে সেখানেই থাকবে।
মিটমিট করে হাসতে হাসতে বলল আয়মান
তার কথা শুনে সবাই হাসছে। আর আবসার বিরক্ত হচ্ছে
— কি নিজের বউ বাচ্চার সাথে থাকতে পারব না এখন তো আরও যাব না বলেই আবসার নিজের ঘরে চলে গেলো আয়মান ভেনিসাও তার পিছু গেলো।
— বিয়ান সাহেবা আরেকটি কথা
— কি কথা ভাই সাহেব
— আরু অরিক বাবাজি সহ আপনারাও আমাদের সাথে কয়েকটি দিন থেকে আসতেন যদি
— এখন তো হবে না বেয়াই সাহেব আমরা কিছু দিন পর একটু গ্রামে যাবো আমাদের জমিজমা সংক্রান্ত কিছু কাজ আছে। আপাতত অরিক আরুমা যাব পরে আমরা নাহয় একবার যেয়ে ঘুরে আসব।
ইরফানের কথায় রাজি হয় এজাজ সাখাওয়াত।।
পুরো একঘণ্টা প্যানপ্যানির পরে আবসার রাজি হয় সাখাওয়াত বাড়িতে যাওয়ার তার কোনো ইচ্ছাই নেই সেখানে যাওয়ার। সে যাচ্ছে শুধু অরিক আর আরু সহ সেখানে যাচ্ছে,,তার কাছে ঐ বাড়িটা মানেই তার দূর্বিষহ অতীত যেখানে আছে তার অজস্র কষ্ট।
এজাজ সাখাওয়াত সবাইকে নিয়ে রওয়ানা দেয় সাখাওয়াত বাড়ির উদ্দেশ্যে।
___________________
কয়েকদিন পরে সাখাওয়াত বাড়িতে ওয়াসিমা বেশ ভালোই আছে তানিয়া সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতের যত্নে। ওয়াসিমা এখন পুরো দমে কলেজে যাওয়া শুরু করেছে। পড়াশোনার চাপ তার উপর আবার প্রেগনেন্সিতে ঠিক মতো খেতে পারে না তাই বেশ ক্লান্ত থাকলেও আলিয়া সাখাওয়াত যেনো তাকে মাথা তুলে রাখে। ওয়াসিমার পরিস্থিতি দেখে আবসার আবার নিজের বাসায় যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছে। কারণ বর্তমানে ওয়াসিমার যা পরিস্থিতি তাতে তাকে নিয়ে আলাদা থাকার চেয়ে এখানেই থাকা ভালো। আবসারও যতটা পারে বাসায় থেকে ওয়াসিমার খেয়াল রাখে। সেই সাথে আয়মান ভেনিসা তো আছেই আর মাঝেমধ্যে আরু অরিক আসে ইরফান ও আসে। এর মধ্যে তারা কয়েকবার এসে ওয়াসিমাকে দেখে গেছে। ইরফানের ভালো লাগে না ওয়াসিমাকে প্রতিদিন না দেখতে পেয়ে।।
স্বামী সংসার সব নিয়ে ওয়াসিমা বেশ ভালোই আছে। কিন্তু একদিকে সমস্যা গোয়ার আবসার এখনও এজাজ সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতের সাথে কথা বলে না। তারপরেও তাদের আক্ষেপ নেই এই নিয়ে তারা দুইজন এইভাবেই বেশ ভালো আছে।
_________________________
পাচঁ বছর পর,,,,,,,,,
সাখাওয়াত বাড়িতে হইচই চলছে। পুরো বাড়িতে রমরমা অবস্থা সাথে আনন্দের ঢেউ কারণ আজকে ফাইনাল্লি ওয়াসিমা ইন্টার্নশিপ শেষ হয়েছে পুরো কলেজের মধ্যে টপ করেছে ওয়াসিমা। সেই সেরেমনিতে যাবে তারা,,,,,,,,
আয়নার সামনে দাড়িয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করছে পিছন থেকে একটা হাত এসে কোমরে গোজা কুচি এলোমেলো করতেই বিরক্ত হয় ওয়াসিমা তার হাতে আস্তে থাপ্পর মেরে বলে — আপনি আবার শুরু করেছেন,,
— কি করব বউ তোকে দেখলে আমার নিজের প্রতি কন্ট্রোল ছুটে যায়।
— দুই বাচ্চার বাপ হয়ে গেছেন তিন নাম্বার আসছে তারপরেও আপনার রোমান্স গেলো না
— উহু আমিতো একটা ফুটবল টিমের প্ল্যান করেছি
— মাফ করেন ভাই আপনার এইসব প্ল্যানে আমি নাই বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারও আবসারের করা এলোমেলো শাড়ির কুচি ঠিক করছে। আবসার ওয়াসিমার কথা শুনে নিরাস হয় আবার তাকে ধরতে যাবে তার আগেই কারো শব্দ শুনে থেমে যায়
— মাম্মা দুই বাচ্চা এসে ওয়াসিমার সামনে দাড়ায়।
আনাবিয়া ওয়াহিদ,, আবসার ওয়াসিমার দুই জমজ সন্তান
— মাম্মা আমাকে কেমন লাগছে??
— না মাম্মা আগে বলো আমাকে কেমন লাগছে?
বলতে দেরী একজনের সাথে আরেকজনের মারামারি লাগতে দেরী নেই। ছেলে মেয়ের মারামারি দেখে আবসার সুযোগ বুঝে ওয়াসিমার গালে চুমু খেতেই ধমকে উঠল বাচ্চা দুইজন
— হেই পাপা ডোন্ট কিস মাই মাম্মা
দুইজন একসাথে বলে উঠল
— মাম্মা কি বাচ্চি তোদের মা আমার বউ
— আমাদের মাম্মা
— আমার বউ
দুই ছেলে মেয়ে ও বাপের ঝগড়ার মধ্যে ওয়াসিমা আলমারি থেকে পাঞ্জাবী বের করে আবসারের হাতে ধরিয়ে তাকে ঠেলতে ঠেলতে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। পিছন থেকে দুই বিচ্ছু খিলখিল করে হাসতে থাকে।
ওয়াসিমা চোখ গরম দিতেই দুইজন নিচে দৌড় দেয়। ওয়াসিমা জানে এই বিচ্ছুদল এখন যাবে আয়মানের কাছে।
ভেনিসা নিজের ভরা পেটটা নিয়ে আস্তে ধীরে নামছে। সে সাত মাসের প্রেগনেন্ট আরু ও অরিকের ঘর আলো করে এসেছে পুত্র সন্তান যে আনাবিয়া ও ওয়াহিদের থেকে ছয় মাসের ছোট।
ইতিমধ্যে অরিকরা এসে হাজির। অরিকের ছেলে আরভ চলে গেছে ওয়াহিদের কাছে।
ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে বেলা এগারোটায় তারা বের হবে এবং আজকে সবাই এখানেই থাকবে ।
পুরো বাড়িতে চোখ বুলায় এজাজ সাখাওয়াত তার বাড়িতে বর্তমানে কানায় কানায় সুখ ভর্তি।
_____________________
ট্রাফিক জ্যামে আটকে বসে আছে আবসার একটু আগেই তারা অনুষ্ঠান থেকে বের হয়েছে। বাড়ির উদ্দেশ্যে বিরক্তি ভঙ্গিতে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখে
নোংরা কাপড়ে একটা পাগলি কুকুরের মুখের খাবার নিয়ে দৌড় দিয়েছে।
আবসারের মহিলাটিকে চিনতে বিন্দুমাত্র কষ্টে হয়নি যে ঐ মহিলাটি তার জন্মধাত্রী ইরিনা।
সেদিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে আবসার কথায় বলেনা পাপ বাপকেও ছাড়ে না। তাদের জীবনের সকল কষ্টের মূলেই ছিলো এই ইরিনা জামান।
— কি হয়েছে কি দেখছেন জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে গাড়ি স্টার্ট দেন
আবসার কিছু না বলে গাড়ি চালাতে শুরু করে। স্বামীর মুখের দিকে তাকায় ওয়াসিমা। তার কাধে মাথা রাখে। আবসার পিছনে বসা তার দুই বিচ্ছুর দিকে তাকায়। দেখে তারা ঘুম তৎখনাত ওয়াসিমাকে জড়িয়ে ধরে ওয়াসিমা ফিক করে হেসে দেয়।
— হাসলেও লাভ নেই এই যে বক্ষ দেখছিস এই বক্ষপিঞ্জিরায় তুই এমন ভাবেই সারা জীবন বন্দীনি হয়ে থাকবি।
______সমাপ্ত________