বক্ষপিঞ্জিরায় তুই বন্দীনি পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
116

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৯

আবসার পুরো বাড়ি খুজেঁ ও ওয়াসিমার দেখা পায়না। রাতে ওয়াসিমা কোন ঘরে ঘুমিয়েছে সেটাও জানে না। তাই বেশ কয়েকটা করে উকি ঝুকি মেরেছে তাতেও সন্ধান মিলেনি। মেয়েটা যেনো গায়েব হয়ে গেছে। ওয়াসিমা যেনো তার সাথে চোর পুলিশ খেলছে “”
শেষে না পেরে ফোন দিয়েছে তাও রিসিভ করছে না,,,
— শিট ড‍্যাম,, রাগ করেছিস রাগ ভাঙ্গানোর মতো সুযোগ তো না দিবি না তা করবে কেনো উধাও হয়ে বসে আছে ।

সিড়ির একদিকে দাড়িয়ে আছে আবসার তার পিছনে বেশ বড়সর একটা পিলার আছে। সেখানে দাড়িয়ে ওয়াসিমা আবসারের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। তার বেশ হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসাও যাবে আর ঐ শুকনো মুখ দেখে মায়াও লাগানো যাবে না। নাহলে এই লোকের শিক্ষা হবে না– মানুষের কথা শুনে নিজের বউকে সন্দেহ করা এইবার বুঝো ঠেলা “” বিড়বিড় করে বলে আবসারের অলক্ষ‍্যে অন্ধকার দিয়ে চলে যায় তাদের ঘরে। যেখানে ভেনিসা ওয়াসিমা ও তার কয়েকজন বান্ধবীকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। সবাই এতোক্ষণ বসে গল্প করছিল। কিন্তু ওয়াসিমার রাতে পানি খাওয়ার অভ‍্যাস। তাই পানি আনতে গিয়েছিল সেখানে আবসারের অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে তার।

— কি হয়েছে ভাবী মিটমিট করে হাসছ কেনো???

— কিছুনা আপু এমনি,, হাসি থামিয়ে বলল ওয়াসিমা।

— ওহ তো আমি ঘুমাই কাল অনেক কাজ বলেই একবার ফোনের দিকে অভিমানি চোখে তাকাল। যেনো কোনো কিছু ইগনোর করার চেষ্টা।

____________________

আবসার যখন ঘরে ঢুকল তখন বেডের একসাইটে আয়মান বসে আছে। ফুল এসির নিচে বসেও কলকল ঘামছে সে।
আবসার তার পা থেকে মাথা পযর্ন্ত তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখে পরনে ফুল স্লিভ গোল গলার টিশার্ট ট্রাউজার। তার পোশাক আশাক দেখে মনে শীতকাল এসে পরেছে।

— আয়মান তুমি কি আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছো

আবসারের কথা শুনে কেপে ওঠে আয়মান। কোনো রকম পিছনে ফিরে তাকায়। অন‍্য মনস্ক হয়ে কিছু ভাবছিল আয়মান। আবসারের সাথে কিভাবে কথা শুরু করবে। কি বলবে আবসার তার সাথে কথা বলবে কিনা এই বিভিন্ন হাবিজাবি।

— নননা লজ্জা পাবো কেনো?? হাত দিয়ে ঘাড়ের ঘাম মুছতে মুছতে বলল।

— ওও তা এই গরমেও এরকম টিশার্ট পরে বসে আছো কেনো। “” পরোক্ষণে কিছু ভেবে আবার বলল — ও মাই গড আয়মান তুমি কি গে?? দাদীর চাপে পরে বিয়েটা করছ। যদি করে থাকো তাহলে বলব ভুল করছ,, বলেই আয়মানে অলক্ষ‍্যে মুচকি হাসল।

— না না ভাইয়া তুমি আমাকে ভুল ভাবছ। আর দাদুম কোনো চাপ দেয় নি বিয়ের জন‍্য আমি ভেনিসাকে ভালোবেসেই বিয়ে করছি,, একটানা বলে থামল আয়মান।

— ওহ বাচালে ভাই আমি ভাবলাম কি?? মাঝপথে থেমে গেলো
আয়মান আবসারের কথা থেমে যাওয়া দেখে তার দিকে মুখ তুলে তাকায়। তাকিয়ে দেখে আবসার ঠোট চেপে হাসছে,,,

— তুমি আমার খিল্লি উড়াচ্ছো ভাইয়া
মেয়েদের মতো অভিমান স্বরে বলল আয়মান

— তো কি করব ঘরে এসে দেখি তুমি মেয়েদের মতো লজ্জা পাচ্ছো। যেনো তুমি নতুন বউ বলেই শব্দ করে হেসে দেয়।

আবসারের হাসি শুনে আয়মান গাল ফুলিয়ে পরে নিজেও হেসে দেয়। হাসি থামিয়ে আয়মান বলল

— আসলে আমি কিভাবে তোমার সাথে কথা শুরু করব সেই চিন্তায় ছিলাম সেই কারণে একটু নার্ভাসে কি পোশাক পরেছি সেই দিকে খেয়াল করিনি।

— নো নো ইটস ওকে বলেই আয়মানে মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে বারান্দার দিকে পা বারায়।

— কি হয়েছে ভাইয়া আমার সাথে ঘুমাবে না একই বেডে??

— আমি তো গে না আয়মান। আমার বউ আছে কয়দিন পরে আল্লাহ্ দিলে একটা বাচ্চার বাবাও হবো। আমি ঐরকম না তুমি বিশ্বাস করো।

— ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু আমি সেরকম না। আমারও বিয়ে হচ্ছে ইনশাআল্লাহ বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তুমিও বড় বাবা হয়ে যাবা বুঝছ।

— হু বুঝেছি তাইতো নিজের হবু বউ ছেড়ে আমার ঘরে পরে আছো। মুখ বেকিয়ে বলল আবসার।

এতক্ষণে আয়মান বুঝল আসল কাহিনী কোথায়।
— ওও তাহলে বউয়ের সাথে থাকতে না পারায় আমার ভাইয়ের রাগ হয়েছে???

— বুঝেছ যেহেতু এখন একটু আমার বউয়ের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দাও। বেচারা আমি বউটার বিরহে শুকিয়ে যাচ্ছি ” করুন চেহারা করে বলল

— কি করতে হবে ভ্রু উচু করে বলল আয়মান

— কিছু না একদম সহজ ভেনিসাকে ফোন দাও,, আবসারের কথা শুনে আয়মান ভেনিসাকে কল দেয় কিন্তু অপর পাশ থেকে কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়না।

— কি হয়েছে??,

— নো রেসপন্স

— শিট বলেই হাতটা ঘুসি মারার মতো ঝাড়া দিলো।

দরজার অপর প্রান্ত থেকে দুই ভাইয়ে খুনসুটি সবটাই লক্ষ্য করেছে দিলরুবা সাখাওয়াত। সে চায় এই দুই ভাই যেনো মিলে মিশে থাকে। যেনো আপন না হয়েও পরম আপন।

_________________

ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে ভেনিসা আয়মানের ফোন কেটেছে একটু আগে পরপর পাচঁটা মিসড কল স্ক্রিনে ভেসে উঠছে।
সে উঠায়নি। সে ভেবেছে এবার ফোন দিলে উঠাবে। কিন্তু আয়মান তাকে নিরাশ করে আর ফোন দেয়না। একটু আগে অভিমান কমে এলেও সেটা আবার গাঢ় হয়
— বা**লের বয়ফ্রেন্ড তুমি। কোথায় গার্লফ্রেন্ড ফোন ধরছে না দেখে সারারাত অনবরত ফোন দিতেই থাকবে। তা না করে পাচঁ বার কল দিয়ে খাল্লাস। কোন কুলক্ষণে যে এই ছেলের প্রেমে আমি পরেছিলাম বিড়বিড় করে নিজেকে আরো কয়েকটা গালি দিলো।
সকাল হলে এই ছেলেকে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে মনে মনে পণ করে ঘুমিয়ে গেলো।

_____________________

বারান্দায় হতবম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে আরু। বারান্দা ও ঘরের সাথে লাগোয়া দরজাটা বন্ধ অরিক তাকে ঘরে থেকে বের করে দিয়েছে। তার ভুল ছিলো অরিকের ফোন না ধরা।
ঠোট উল্টে কাদোকাদো মুখে দাড়িয়ে থাকে আরু সে জানে অরিক পাচঁ পরেই তাকে ঘরে নিয়ে যাবে। অরিক তাকে মাঝে মধ‍্যে এমন উদ্ভট শাস্তি দেয়। সেদিন তো অরিক ডাকলে আরু দশ মিনিট পরে আসলে তাকে আরো দশ মিনিট মুরগি বানিয়ে রেখেছিল,, ছি ছি ছি,, কি লজ্জা কি লজ্জা।
কান্নাকাটি করেও শাস্তি থেকে মওকুফ মিলেনি সেদিন পরে আবার নিজেই যত্ন করে আদর দিয়ে মান ভঞ্জন করেছিল।

গেট খোলার শব্দে বাস্তবে ফিরে আরু। অরিক তাকে কিছু না বলেই কোলে তুলে নেয়।
আরুকে বিছানায় শুইয়ে দেয় ধীরে খুব ধীরে। আরুর উপর নিজের ভর ছেড়ে ঠোট ডোবাতে নিলে আরু মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

— এখন আসছে সোহাগ করতে
আরুর অভিমান টের পায় অরিক — তো কি করব ভুল করেছ শাস্তি দিয়েছি,, আরুর নাকে আলতো কামড় দিয়ে বলল — শাস্তি আমার কল না ধরার

— এই জন‍্যই কলেজ টিচারকে বিয়ে করতে নেই তারা কথায় কথায় বউকে শাস্তি দেয়।।

আরুর কথা শুনে হাসে অরিক — এই টিচারকে বিয়ে করার জন‍্যই নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়েছিলেন মহাশয়া।

— নিজে যে ধোকা দিয়ে বিয়ে করেছেন তার বেলা,,,

— কেউ তোকে ধোকা দেয়নি নিজে যদি ব/ল/দ হোস তাহলে কি আর করা।
বিয়ের সময় যখন কাজী আমার নাম আমার বাবার নাম সহ সব বলেছিল তখন ধ‍্যান কই ছিলো ব/ল/দী।

— এই একটা কথার খোটা আর কত দিবেন

— আজীবন বলেই আরুর ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দেয়। আরুও ভেসে যায় স্বামীর ভালোবাসায়। সাড়া দেয় অরিকের মাতাল করা স্পর্শে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪০

সকাল সকাল কাজে লেগে গেছে সবাই। বিয়ে বাড়িতে হাজার কাজ রয়েছে। তাও বাচা গেছে শুধু হলুদের অনুষ্ঠানটি বাসার ছোট্ট পরিসরে করা হবে কাছের আত্মীয়দের নিয়ে।
সেজন্য লনে স্টেজ সাজানো হচ্ছে। বাড়ির মেয়েরাও সকাল সকাল কাজে লেগে পরেছে।

পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে। চারিদিকে হইচই সবাই হলুদের প্রিপারেশন নিচ্ছে। হলুদের ড্রেস কোড ঠিক করা হয়েছে,, ছেলেদের ল‍্যাভেন্ডার কালারের পাঞ্জাবী আর মেয়েদের সাদা আর ল‍্যাভেন্ডার সংমিশ্রণের শাড়ী।

কিন্তু এর মধ‍্যে আয়মান, আবসেরের অবস্থা খারাপ দুই ভাইয়েরই প্রেরসীরা তাদের পাত্তাই দিচ্ছেনা। ভেনিসা আয়মানকে ইগনোর করলেও। ওয়াসিমার তো দর্শন পাওয়াও মুশকিল বলা চলে। আবসার রাগে দাতে দাত চেপে বসে আছে এতোগুলো মানুষের মধ‍্যে কিছু বলতেও পারছে না কিন্তু যখন তখন ফেটে যেতে পারে সেটার কোনো গ‍্যারান্টি নেই।
এর মধ‍্যে অরিক আছে আরামে। তার জন‍্য বর্তমানে শশুর বাড়ি মধুর হাড়ি। শত ব‍্যস্ততার মাঝেও আলিয়া তানিয়া ও দিলরুবা সাখাওয়াতের হাত থেকে নিস্তার পাইনি। তাকে জামাই আদর নামক অত‍্যাচার করিয়ে ছেড়েছে।

— আল্লাহ্ এই বাড়িতে আমি আর আসব না খাইতে খাইতে জীবনডাই বেদনাময় হইয়া গেলো হল রুমের সোফায় বসতে বসতে বলল

অরিকের সুখ সহ‍্য হলোনা আবসারের সে ঝাঝিয়ে উঠল তাই ঝাঝালো স্বরেই বলল,,,,
— একটু চুপ থাকতে পারিস না

— আমি কি করলাম ইয়ার???

— তুই কি করবি করেছে তো তোর প্রানের বোন

— সেটা তোরাই বোঝ মুখ বেকিয়ে বলে নিজের ঘরে চলে গেলো অরিক বতর্মানে এখানে থাকা মানে আবসারের রোসানলে পড়া। যা অরিক চায়না। কারণ কথায় কথা বাড়ে,,,

_________________

সারা সকাল হইচই করা বাড়িটা এখন কেমন নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে। আলিয়া সাখাওয়াত মাথা নিচু করে অনবরত কেদে যাচ্ছে। এজাজ সাখাওয়াত সোফায় বসে আছে নিস্তব্ধ চেহারায়।

আয়মান হাটু ভেঙ্গে বসে আছে তাকে জড়িয়ে ভেনিসা কত কথাই না বলছে তার একটাও আয়মানের কানে যাচ্ছে না।

ছেলের অবস্থা দেখে আলিয়া সাখাওয়াতের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আয়মান দৌড়ে আসল আলিয়া সাখাওয়াতের কাছে তার সামনে দাড়িয়ে বলল

— মম মম ও মম উনি কি বলছে হ‍্যা বলতো,,, আআমি নাকি নাযায়েজ সন্তান। আমি নাকি তোমার পাপের ফসল এগুলো কি বলছে মম। তুমি কিছু বলছো না কেনো মম “” চিৎকার করে ওঠে বলল

আয়মানের কাতরতা শুনে সবার চোখে পানি আসলেও পৈশাচিক হাসছে আলিয়া সাখাওয়াতের বড় বোন আর তার মেয়ে লিমা।

— কিছু তো বলো মম। বলো আমি আমার ড‍্যাডের সন্তান বলোনা,,, কারত স্বরে বলেই হাটু গেরে বসে পড়ল। তা দেখে শব্দ করে কেদে দিলো আলিয়া সাখাওয়াত। ছেলের দিকে তাকিয়ে কথা বলার মতো সৎ সাহস তার নেই কি বলবে তিনি,, যে তুই আমার জীবনের একটা রাতের করা ভুলের মাশুল। উহু তার জীবনের ছিল ছিলনা সেদিন তো তাদের বিয়েও হয়েছিল তাহলে ভুল হলো কিভাবে চোখের পানি মুছে বড় বোনের সামনে দাড়ায় আলিয়া সাখাওয়াত

— এখানে দাড়িয়ে আমার চরিত্রে আঙ্গুল তুললে সত‍্য মিথ্যা কত কথাইতো বললে। এই যে এতো গুলো কথা বললে আপা। তার একটাও কি সত‍্যি আপা???

আলিয়া সাখাওয়াতের প্রতিবাদি কন্ঠে ভরকে যায় তার বড় বোন আম্বিয়া

— ততুই কি বলতে চাস আলিয়া??

— কেনো আপা আয়মানের বাবার সাথে আমার যখন লুকিয়ে বিয়ে হয় সেখানে সাক্ষী হিসেবে তুমিই তো ছিলে

— তোমার এর আগে আরেকটি বিয়েও হয়েছিল?? দিলরুবা সাখাওয়াতের কথায় তার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে আবার আম্বিয়ার দিকে তাকায়

— আমার বিয়ের একসপ্তাহের মাথায় যে উনি রোড এক্সিডেন্ট করে মারা যায় সেটাও তো তুমি জানতে তাই না আপা।

আলিয়ার কথা শুনে আম্বিয়া কিছু বলতে পারল না চুপ করে রইল।
— তুমি আমার বড় আপা। আমাদের মায়ের পর তোমাকেই সেই সম্মানটা আমরা দুই ভাই বোন দিতাম। নিজের সার্থ হাসিলের জন‍্য এতো বড় একটা মিথ্যা বললে।
তাচ্ছিল্যের সাথে বলে পিছন ফিরে এজাজের সামনে দাড়ায়
— আমার অনার্স পড়া কালীন নাজমুলের সাথে পরিচয় সেখান থেকেই প্রেম ভালোবাসা তারপর দুইজনই পরিবার থেকে লুকিয়ে বিয়ে করি। কারণ তার পরিবার আমাকে মানতে রাজী নয়। সেই বিয়ের সাক্ষী হিসেবে শুধু আপাই জানত আমাদের বিয়ের কথা। বিয়ের একমাসের মাথায় নাজমুলের রোড অ‍্যাক্সিডেন্ট হয় তখন আমি মাত্র সাত দিনের অন্তর্সত্তা। তখন বিগবেদিকে হারিয়ে সন্তান রক্ষার জন‍্য তোমার হাত ধরি। কারণ সমাজ আমাদের বিয়ের কথা জানত না। আর না আমার কাছে কোনো প্রমান ছিলো এই বাচ্চার পিতৃ পরিচয়ের। তাই,,,

— আমাকে ব‍্যবহার করলে,,, আলিয়াকে বলতে না দিয়ে বলল।
এজাজের কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো আলিয়া সাখাওয়াত। এজাজ আর কিছু না বলে আয়মানের সামনে দাড়ায়। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল — তুমি আমার ছেলে এর জন‍্য কোনো রক্তের বন্ধন লাগবে না আর নাই বা কোনো পরিচয়। তুমি সাখাওয়াত বাড়ির ছোট ছেলে এই কথাটা যেনো সবাই নিজের মাইন্ডে গেথে নেয়… শেষের কথাটা আম্বিয়া ও লিমার উদ্দেশ্যে বলল।

— ড‍্যাডহ বলেই এজাজকে জড়িয়ে ধরল আয়মান।
— রাশেদ ও ইলা তোমাদের কি কোনো আপত্তি আছে এই বিয়েতে??

— আমরা সব কিছু জেনেই এগিয়েছি ভাইজান
রাশেদের কথা শুনে সবাই অবাক হয়। আবার রাশেদ বলল — খালাম্মা আমাদের সব কিছুই জানিয়েছে শুরু থেকেই

— আম্মা আপনি সব জানতেন অবাক হয়ে বলল আলিয়া

— হ‍্যা জানতাম প্রথমে মানতে না চাইলেও পরে মেনে নিয়েছি। এবং এই কথাটি আমাকে তোমার বোনই জানায়। আমার বিশেষ পাত্তা না পেয়ে সে তোমার কাছে তোমাকে ব্ল‍্যাকমেইল করতে থাকে অথচ এজাজ বাদে এই পরিবারের প্রত‍্যেকেটা সদস্য জানত এই বিষয়ে।

— আবসার,,,

— হ‍্যা
আলিয়া তাকায় আবসারের দিকে। এই ছেলেটা সব জেনেও চুপ ছিলো।

আলিয়া সাখাওয়াতের চোখের দৃষ্টি বুঝে আবসার। কিন্তু কথা অন‍্যদিকে ঘুরানোর জন‍্য বলে
— যাই হোক অনেক ফ‍্যামিলি ড্রামা হলো এখন অনুষ্ঠানটা শেষ করি। একটা ভালো কাজ কর্ম চলছিল তা শেষ করি,,,

আবসার কথায় তাল মেলায় আবার শুরু হয় হলুদের অনুষ্ঠান।

— দাড়াও
দিলরুবা সাখাওয়াতের কথায় সবার আনন্দে আবার ভাটা পরে। তার দিকে প্রশ্নাত্তক দৃষ্টিতে তাকায়
— আগে এই কুচক্রী দুটোকে বিদেয় করার ব‍্যবস্থা করা হোক আগে

দিলরুবা সাখাওয়াতের কথায় সবাই তাল মিলিয়ে বলল — হ‍্যা হ‍‍্যা
মাঝখানে আরু চঞ্চল পায়ে হেটে এসে বলল
— এদের পুলিশে দেই কি বলো দাদী

পুলিশের কথা শুনে দুই মা মেয়ে ভয় পেয়ে যায়। মানে মানে সেখান থেকে কেটে পরে। আরু আবার পিছন ফিরে তাদের কিছু বলতে যাবে। তাকিয়ে দেখে তার নেই। ফিক করে হেসে দেয় তার সাথে সবাই হেসে দেয়। এতোক্ষণ যে এখানে দুঃখের ঝড় বয়ে গেলো তার রেশ কারো মনেই রইল না। শুধু অভিমান আছে আবসারের মনে বাবার ভালোবাসা না পাওয়ার।
আর এজাজের মনে ক্লেশ নিজের ছেলেকে কষ্ট দেওয়ার জন‍্য বাবা হিসেবে সে ব‍্যর্থ । আর আলিয়ার মনে অনুশুচনা আবসারকে নিজের পরিবারের থেকে দূরে সরানোর জন‍্য।

তবে সকলের অগোচরে দিলরুবা সাখাওয়াত হাসে। সে চেয়েছিল আয়মানকে আলিয়া সাখাওয়াতের থেকে দূরে রাখার। কিন্তু তার ভরা পরিবার আনন্দ হাসি দেখে সেটা পরিবর্তন করে ফেলে তাই আলিয়ার বড় বোনকে নিষেধ করে কোনো ভেজাল না করতে কিন্তু দিলরুবা সাখাওয়াতের কথা না শুনে আম্বিয়া হিংসাত্মক হয়ে সবার সামনে আংশিক সত্য ও বাকিটা মিথ্যা বলে চালায়। সে জানত না এখানে উপস্থিত কয়েকজন বাদে বাকিরা সবকিছুই জানত। তাহলে হয়তো এদিকে পা বাড়াতো না।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৪১

আজকে আয়মানের বিয়ে। সকাল থেকেই নানা কাজের জন‍্য প্রায় সকলেই ব‍্যস্ত বিয়েটা যতই কমিউনিটি সেন্টারে হোক আরো নানান কাজ থাকে। তাদের হলুদ তেল ইত্যাদি দিয়ে গোসলের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে। বিশাল লনের একদিকে ভেনিসার গোসলের ব‍্যবস্থা হয়েছে। আবার বাড়ির ছাদের দিকে আয়মানের গোসলের ব‍্যবস্থা করা হয়েছে।

— আন্টি হলুদ, তেল, দুধ, নিয়েছি আর কি কি নিবো??

— আমাকে কি শাশুড়ি হিসেবে মানা যায় না আম্মু। মানলাম সৎ শাশুড়ি কিন্তু শাশুড়ি তো।। সেই হিসেবেই মা না ডাকো তানিয়ার মতো মামনি ডেকো।।

আলিয়া সাখাওয়াতের কথায় তার দিকে তাকায় ওয়াসিমা। তার নিস্তেজ চেহারা দেখে মায়া লাগল ওয়াসিমা সে দ্রুত নিজের সমর্থনে বলল — না না মামনি সেরকম কিছু না,,,

— তাহলে আম্মু মামনিই ডেকো
আলিয়া সাখাওয়াতের কথায় ওয়াসিমা মাথা নাড়ায়। কাল রাত থেকে আলিয়া সাখাওয়াত একটু সময়ের জন‍্য দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি। তার কেমন জানি লাগছিল। অস্থির লাগছিল তার পূর্বের কর্ম চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। তাই সারারাত ছটফট করেছে। এজাজ পাশে থাকলেও তার দিকে ফিরেও তাকায়নি। সেটা দেখে ফিকরে কেদেঁ ওঠে আলিয়া। দীর্ঘ পচিঁশ বছরের সংসারে এই প্রথম এতো অবহেলা পলো আলিয়া।

— আলিয়া একটা কলসিতে ভরে পানি নিয়ে নিও ইসমাত আরার কথায় ঘোর ভাঙ্গে আলিয়ার।

— জ্বি খালাম্মা
বলেই কলসিতে পানি ভরে। সকল মহিলারা মিলে ছাদে ওঠে আয়মানকে গোসল দেওয়ার জন‍্য।

______________________

সকাল বেলা আবসার বাসায় ছিলো না সে আর এহাসান কমিউনিটি সেন্টারে গিয়েছিল। কাজ কতদুর এগিয়েছে সেটা দেখার জন‍‍্য ইরফান আর অরিক অন‍্য একটা কাজে বাইরে গিয়েছিল। এজাজ ঘর থেকেই এখনো বের হয়নি তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে সে এই বাড়ির মেহমান।

বাইরে থেকে আসতেই তাদের নাস্তা বেরে দিলো তানিয়া সাখাওয়াত। খেতে খেতে চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে ওয়াসিমাকে খুজেঁ আবসার।

— আয়মানকে নিয়ে সবাই ছাদে গিয়েছে
তানিয়া সাখাওয়াতের কথায় সেদিকে তাকায় আবসার।
— তোমরা নাস্তা বাকিটা নিজেরা নিয়ে নাও আমি ছাদে যাই। তানিয়ার কথা শুনে এহসান সাখাওয়াত মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা সম্মোধন দিতেই তানিয়া চলে যায়।

আবসার যখন ছাদে যায় তখন আয়মানের গোসল শেষ। আবসার উকি ঝুকি মেরে ওয়াসিমাকে খুজতে থাকে। পেয়েও যায়। আজকে ওয়াসিমা একটা শাড়ি পরেছে। সী গ্রিন কালারের একটা শাড়ি। মাথায় ঘোমটা দেওয়া। প্রথমে না চিনতে পারলেও পরে ওয়াসিমা পিছনে ঘুরে দুধের বাটি হাতে নেয় তখন দেখতে পায়। রোদের আলোতে নাকের ঘামটা চিকচিক করেছে ঢোক গিলল আবসার। আজকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে তার বউকে
— এই মেয়েটা আমার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে নেশা জাগানো সাজ সাজে।।
বিড়বিড় করে বলে ঘরে যায়। এখন অপেক্ষা ওয়াসিমা কখন রেডী হতে ঘরে আসে।

গোসল টোসল শেষে ভেনিসা চলে গেছে পার্লারে তার সাথে গিয়েছে আরু। ভেনিসা অনেকবার ওয়াসিমাকে বললেও সে যায় না। তাই ভেনিসা আরু ও ভেনিসার দুই বান্ধবী চলে যায় পার্লারে।
যাওয়ার আগে তাদের পইপই করে বলে দিয়েছে দ্রুত ফিরতে এমনিতেই সকাল দশটা বেজে গেছে। বাদ জুমা বিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

____________________

দুপুর দুইটা বাজে বরযাত্রী সহ আয়মান আসে কমিউনিটি সেন্টারে। ভেনিসার পক্ষ থেকে তার বান্ধবীরা ও আরু গেট ধরেছে
— এই আরু তুই না আমার বোন গেট ধরেছিস কেনো??

— ওরা বেচারী ভিনদেশের ওরা কিছুই পারেনা তাই গেট আমি ধরেছি।।

— তো তুই তো বর পক্ষ এদিকে আয়,,, বিরক্তি স্বরে বলল আবসার।।

— না ভাইয়া আজকে আমি মেয়ে পক্ষ। অ‍্যাই ওয়াসু আজকে আমাকে একবারও ছেলে পক্ষের সাথে দেখেছিস

— নাহ একবারও না

— এখন কোনো কথা নাই চুপচাপ আমাদের ডিমান্ড পূরণ করো। আরুর সাথে ভেনিসার বান্ধবীরাও তাল মেলায়।

— তো কত টাকা চাই আপনার বিয়াইন সাহেবা??

— এইতো পঞ্চাশ হা… সামনে অরিককে দেখে থেমে যায়। এই কাজটা আবসারই করেছে। অরিক সেন্টারে আগে থেকেই পৌঁছে যায় তখন আরুরা গেট ধরেনাই। তাই আবসার এখন অরিককে ফোন করে আনে

— কত চাই বিয়াইন সাহেবা পঞ্চাশ টাকা ওকে। আয়মান ওদেরকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে দাও।

— না না মানব না। আমরা কষ্ট করে এতো আয়োজন করলাম তার বেলা।
অরিক আবসার টেবিলের দিকে তাকায়। সেখানে শরবত মিষ্টি রয়েছে।

— একগ্লাস শরবতের দাম দশ টাকা আর একটা মিষ্টির দাম বিশ টাকা। মোট ত্রিশ টাকা সেখানে আমরা উদার মনের মানুষ তোদের আরো বিশ টাকা বাড়িয়ে দিলাম তাই না।

অরিকের কথা শুনে সবাই মিটমিট করে হাসছে। এখানে শুধু বাড়ির ছোটরাই আছে।

— আরু তাড়াতাড়ি ওদের ছার কাজী সাহেব তাড়া দিচ্ছে। এহসান পিছন থেকে বলল

— আমাদের ডিমান্ড তোমার জামাইকে পূরণ করতে বলো
এহসান এমন ভাবে চলে গেলো যেনো আরু কি বলছে যেনো কানেই শুনেনি।

— এই নেও তোমার পঞ্চাশ টাকা একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলে টেবিলে রাখা কেচিটা নিয়ে নিজেরাই ফিতে কেটে শরবত মিষ্টি নিয়ে খেয়ে নেয়। আরুর এই অন‍্যায় সহ‍্য হয় না তাই কিছু বলতে নিলেই অরিক শাষায়,, আরুর কানে কানে বলে — তোমার মুরগী হওয়ার ভিডিওটি এখনো আমার কাছে আছে। লাগবে নাকি??? বাকা হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে চলে যায়। আরু মুখটা ফাটা বেলুনের মতো করে রাখে।

— থাক মন খারাপ করো না আপু

— তোমার ভাই একটা খাটাশ ভাবী। আরু জোরে বলতে নিয়েও আস্তে বলে পাছে যদি অরিক শুনে ফেলে। তাহলে আজ রাতে তার মুরগী হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না।

বিরষ মুখে আরু খামটা নাড়তেই দেখে বেশ ভারী খামটা। সেখা খুলে দেখে এক হাজারের কত গুলো নোট গুনে দেখে সেখানে মোট পঞ্চাশ হাজার টাকাই আছে ফিক করে হেসে দেয় আরু।
মনে মনে ভাবে তাকে বোকা বানানোর মজা আজকে অরিককে বুঝাবে

______________________

তিন কবুলের মাধ্যমে আয়মান ও ভেনিসার বিয়ে শেষ হয়। সবাই মুনাজাতে নব দম্পতির জন‍্য দোয়া করতে ব‍্যস্ত। দোয়া শেষে সুন্নত হিসেবে খেজুর দেওয়া হয়। তারপর দুপুরের খাওয়া শুরু হয়।
বিদায় পালা শেষ করে ভেনিসার বাবা মা তার এক আত্মীয়র বাড়িতে চলে যায় তাদের সাথে।
সব মিলিয়ে আসতে আসতে সন্ধ‍্যা সাতটা বেজে যায়। আলিয়া নব বধূকে বরণ করে তুলে।

রাত দশটায় তাকে বাসর ঘরে দেওয়া হয় আরু বাদে কারো বাসর আটকানোর আগ্রহ না থাকায় সে কিছু করতে পারে না। ওয়াসিমাকে টানলে সেও বলে সারাদিন কাজ করে সে ক্লান্ত তার পায়ের গোড়ালি জোরা ব‍্যাথা করছে এখন যেতে পারবে না বলেই ঘুমিয়ে যায়।

রাত এগারোটায় আবসার ঘরে ঢোকে বিরষ মুখে। তার ঘরেই আসতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তাই না এসেও উপায় নেই। কিন্তু এসে বেডের দিকে নজর যেতেই চমকে যায় আবসার। ওয়াসিমা এলোমেলো অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে বিছানার মাঝখানে।
সস্থির নিঃশাষ ছাড়ে আবসার যাক আজকে অন্তত বউকে বুকে নিয়ে ঘুমাতে পারবে। কালকে বাসায় গিয়ে নাহয় আদরে আদরে বউয়ের অভিমান ভাঙ্গানো যাবে।

________________________

রাত এগারোটায় বাসর ঘরে ঢুকে আয়মান। ভেনিসা দিলরুবা সাখাওয়াতের শিখানো অনুযায়ী আয়মানকে সালাম দেয়। আয়মানও সালামের উত্তর নেয়

— ভেন্যু তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
আয়মানের গম্ভীর স্বরে ভরকে যায় ভেনিসা। কি এমন কথা বলবে যা এমন গম্ভীর স্বরে বলতে হবে????

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে