#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৬
— ও আপনার বাচ্চাকে মারেনি আন্টি!!
— তো কি আমার বাচ্চা মিথ্যে বলছে??
— অ্যাই বাচ্চা তোমাকে কি ওয়াসু মেরেছে?? রুমার উদ্দেশ্যে বলল আবসার
আবসারের কথা শুনে বাবার বুক থেকে মাথা উঠায় রুমা।
— হ্যা ওর কারনেই তো আমি ব্যাথা পেয়েছি।
— দেখেছো এবার ঝাঝালো স্বরে বলল কোকিলা মোদি
তার কথার উত্তর না দিয়ে রুমার দিকে তাকিয়ে বলল — তোমাকে ও হাত দিয়ে মেরেছে?? বলেই সবার অগোচরে মুচকি হাসল। এবার বাকী কাজটা ঐ ন্যাকা রানী করবে আবসার জানে।
— আরে না। হোয়েছে কি মাম্মা ওতো হাত দিয়ে মারেনি আমাকে!!
— তো অবাক স্বরে বলল কোকিলা মদি।
— দেখো আমি তোমাকে দেখাই বলে আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল — আবসার বেবী তুমি একটু ওকে তোমার পিছনে রাখো তো।
রুমার কথা মতো আবসার ওয়াসিমাকে নিজের পিছনে রেখে তার সামনে দাড়ায়।
— রাতে অনেক জোড়ে বেল বাজতে ছিলো। আমি ঘুমে গেট খুলি আবসারকে দেখেই অনেক খুশী হই তাকে জড়িয়ে ধরতে যেতেই আবসার বেবী এই মেয়েটাকে আমাদের মাঝখানে রাখে এই মেয়েটার থুতনিতে আমার কপালে লাগে আমি,,, আহহ,, ব্যাথা পাই কপালে হাত দিয়ে বলল।
রুমা এইটু আগের কাহিনীটা হুবহু ব্যাখ্যা করল। রুমার কান্ড দেখে কোকিলা মদির মাথায় হাত সে ভেবেছিল কি আর হয়েছে কি??
আর ওয়াসিমা থুতনিতে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে মাথা ঘুরিয়ে আবসারের দিকে তাকায়। আবসার মিটমিট করে হাসছে। তার হাসিতে বিরক্ত লাগে ওয়াসিমার।
নিজের মেয়ের বোকামি লুকানোর জন্য ব্যাপারটা ঘুরায় কোকিলা মদি,,,
— তো আবসার এখানে কি জন্য এসেছিলে???গম্ভীর স্বরে বলল কোকিলা মদি
কোকিলা মদির কথা শুনে মিটমিট করে হাসতে থাকা আবসারের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।
— ও হ্যা!! আন্টি সেদিন আপনি কি বলেছিলেন?? আমার বউ ডাক্তারী পড়ছে। অল্প বয়সী মেয়ে ভবিষ্যতে আমাকে ছেড়ে অন্য দিকে মন চলে যাবে ব্লা ব্লা,,,
— তো একটা কথাও মিথ্যা বলিনি আমি!!
— সেটা আমিও জানি তাই কিছু প্রুভ করতে এসেছি।।
— কি??
— একটু আগে তুমি যেই কথাটা বলেছ সেটা আবার একটু রিপিট করতো বউ পাখি,, ওয়াসিমার উদ্দেশ্যে বলল। আবসারের কথা শুনে অবাক ওয়াসিমা এখন এই বাহিরের লোক গুলোকেও প্রমান করতে হবে তার সম্পর্কের ভিত।
— তুমি কি আমার জন্য নিজের স্বপ্নকে বিসর্জন দিতে পারবে??
— অবশ্যই কেনো পারব না। যে আমাকে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। যে প্রথমে আমার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করলেও পরবর্তীতে কিছু কুচক্রী মানুষের কথা শুনে যার বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে গেছে। তার জন্য এইটুকু করতে পারব না,,, হাসতে হাসতে বলল ওয়াসিমা। এই হাসিতে কি ছিলো বুঝতে পারল না আবসার তাচ্ছিল্য নাকি অপমান। তবে আবসার না বুঝতে পারলেও কোকিলা মদির কাছে কথা গুলো অপমানই লাগলো।
— আপনার আমার কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে সেগুলো আমাকে বলতেন আমি আপনার সন্দেহ দূর করতাম। নাকি আমি সত্যি কথা বলতাম সেই বিশ্বাস টুকুও নাই। যাই হোক ধন্যবাদ আন্টি একটা সুন্দর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর জন্য শেষের কথা গুলো কোকিলার দিকে তাকিয়ে বলল।
ওয়াসিমা আর কিছু না বলে নিজের বাহু থেকে আবসারের হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।
— আমার ফ্যামিলি গসিপ থেকে দূরে থাকবেন আন্টি আর কোনো দিন যদি এই বিল্ডিংয়ে কারো কাছে আমার কোনো ফ্যামিলি ম্যাটার নিয়ে গসিপ করতে দেখি তাহলে খবর করে ছাড়ব আপনার। আপনি আমাকে চিনেন না এই বাড়ি ছাড়া করতে আপনাকে আমার দুই মিনিট লাগবেনা। এন্ড আই মিন ইট। বলেই চলে গেলো।
________________
প্রতিবেশী আত্মীয়ের পরে আমার আমাদের চারপাশে আরো কিছু লোক হলো প্রতিবেশী। এরা আমাদের ভালো কাজে যেমন হিংসা করে খারাপ কাজে তেমন বাতাসের বেগে ছড়িয়ে পরে তাদের কারণেই। বেশ রসিয়ে রসিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করে।
প্রতিবেশীদের কষ্টের ব্যাপারে -“” হযরত আবু হুরায়রা (র.) থেকে বর্ণিত -” রাসূল (স.) বলেছেন — যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও কিয়ামতে বিশ্বাস রাখে,, সে যেনো তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। “” অন্য হাদীসে বলেছেন,,, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়।
________________
এই কথা গুলো আমরা অনেকেই জানি কিন্তু মানি কজন কেউ না কারো ফ্যামিলি ম্যাটারে গীবত করাই যেনো প্রতিবেশীদের অন্যতম কাজ।
তার মধ্যে কিছু প্রতিবেশী এমন ও আছে যারা অন্যের ভালো দেখতে পারে না,, তার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে : রুমার মা কোকিলা উরফ ডুবলিকেট বাড়িওয়ালি।
সে আবসারকে নিজের মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ করে। ন্যাকা রানী রুমাও তাকে বেশ পছন্দ করে। শ্যাম বর্ণা পুরুষ চওড়া কাধ পেটানো শরীর যেকোনো মেয়ের জন্য আর্কষনীয় হতে পারে। আবসারের বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ না জানলেও এটুকু জানে আবসার বেশ বড় বাড়ির ছেলে। বাবা মায়ের সাথে রাগ করে এখানে থাকে আবার কিছু দিন আগে বিয়েও করেছে। সেটাই তাদের হিংসাত্মক আক্রমণের কারণ,, সে চেয়েছিল তার মেয়ের সাথে কোনোভাবে আবসারের গলায় ঝুলাতে তার প্রচেষ্টা ছিলো অনেক। ধনী ঘরের সন্তান তার মেয়ে রাজার হালে থাকবে। কিন্তু কঠোর আবসার একদিন তাদের এমন ভাবে শাষায় যা দেখে তারা মা বেটিতে আর সাহস করেনি আবসারের কাছে যাওয়ার।
তবে আবসার ওয়াসিমাকে এখানে আনার কয়েকদিন পরেই ওয়াসিমাকে আবসারের সাথে হাসতে হাসতে ঢুকতে দেখে জ্বলছিল তারা। তাই তাদের অগোচরে ওয়াসিমার খোঁজ খবর নিতে থাকে। একদিন ওয়াসিমাকে কোচিংয়ের সামনে ফাহাদের সাথে কথা বলতে দেখে ” সেই ব্যাপারটা বেশ মশলাদার করে আবসারের সামনে উপস্থাপন করে। সেদিন তার কথায় আবসার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করলেও। ওয়াসিমার ভর্তি পরীক্ষার দিন একটু সন্দেহ হয় কিন্তু তারপরও কিছু বলে না। তবে সেদিন ওয়াসিমার মেডিকেলের রেজাল্ট নিয়ে আসার সময় তার কানে খুব ভালোভাবে বিষ ঢালে আর এমন ভাবে ইফ্লুয়েন্স করে যেনো আবসার তার কথা ভাবতে বাধ্য হয়। কোয়েন্সিডেন্স ভাবে সেদিনি ফাহাদ ওয়াসিমার ফোনে কল করে তাকে শুভকামনা জানানোর জন্য। সেটাই আবসারের বিশ্বাসের ভিত্তকে নড়বড়ে করে দেয়।
কিছু কিছু মানুষ কথাগুলো এমন ভাবে বলে যা একটা সুস্থ সবল সম্পর্কও ভাঙতে বাধ্য হয়। অতি সর্তক অথবা চালাক মানুষও সেই জালে পরতে বাধ্য হয়।
___________________
আবসার সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ওয়াসিমা আগেই অন্য ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আবসারও কিছু বলে না তাকে নিজেকে সামলানোর জন্য সময় দেয়।
সে জানে এটা ওয়াসিমার জন্য অপমানিত হওয়া। তার চারিত্রিক দিক গুলোর দিকে আঙ্গুল তোলা।
কিন্তু সে কি করবে?? তার অতীতের ঘটনা গুলো এবং সিচুয়েশন গুলো তাকে ওয়াসিমাকে সন্দেহ করতে বাধ্য করে। সে ভাবে সে সামান্য একজন কাপড় ব্যবসায়িক আর ওয়াসিমা হলো ভবিষ্যত ডাক্তার। যদি পরবর্তীকালে সে আফসোস করে তার ডিসিশন নিয়ে। ফাহাদ ও তো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের টিচার সে যদি তাকে তার থেকে দূর করতে চায়। আবসারের মতো মানুষ যদি মানুষের কথায় তাকে সন্দেহ করে। তাহলে ওয়াসিমাতো সদ্য আঠারো শেষ করে উনিশে পা দেওয়া একটি মেয়ে।
সেতো তখন ফাহাদের সাথে তার উজ্জল ভবিষ্যত দেখবে। ঐ সবাই বলে একজন ডাক্তারের সাথে আরেকজন ডাক্তারকেই মানায়। তাইতো সে এই কয়দিন নিজের সাথে লড়াই করেছে কিন্তু ওয়াসিমাকে বলতে যেতেও পারেনি।
তবে ওয়াসিমার আজকের কথায়। তার এককথায় আবসারের বিশ্বাসটাকে আরো মজবুত করে তুলেছে। সে এখন ওয়াসিমার সামনে ভর্তির বিষয়ে কিছু বলবেনা। সে দেখতে চায় ওয়াসিমা আসলেই ডাক্তারি পড়া ছাড়তে রাজি হয়েছে কিনা।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিয়ায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৭
রাতে দেরিতে ঘুমানোর ফলে বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙ্গল আবসারের। অভ্যাসবশত ওয়াসিমাকে খুজলে পায় না। তাকে খুজতে খুজতে বাইরে আসলে ও পায়না। তখন তার মনে পরে ওয়াসিমা কাল রাতে অন্য ঘরে ঘুমিয়েছিল,, সে দ্রুত ঐ ঘরের দরজায় নক করে
— ওয়াসু,, ও বউ পাখি ”
আবসারের আদুরে ডাক শুনে ওয়াসিমার হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে সে থেমে যায় সে কোনো মতেই আবসারের মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না। আবসারের মুখোমুখি হওয়া মানে তার ভালোবাসার অপমান করা। সেই হয়তো আবসারের মনে তার প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি করতে ব্যর্থ ছিলো ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল। তার ধ্যান ভাঙ্গল আবসারের ডাকে। অনেক্ষণ ধরেই আবসার তাকে ডেকেই চলেছে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলো না বলা ভালো ওয়াসিমাই উত্তর দিলো না।
অনেক্ষণ দারজা ধাক্কিয়ে চলে যায় আবসার। ঘরে যেয়ে ফ্রেশ আবার ওয়াসিমার ঘরের দরজায় টোকা দিতেই কেউ মেইট গেটের বেল বাজায়।
আবসার গিয়ে দরজা খুলতেই নজরে আসে আকলিমাকে
— আসেন মা
— ওয়াসু কোই আব্বু। মেয়েটাকে সকাল থেকে ফোন করে চলেছি কল ঢুকেই না। ওর ফোন কই??
— মা ওর ফোন মনে হয় সমস্যা হয়েছে আমি দেখছি বলেই আবসার ঘরের দরজা সামনে দাড়িয়ে আঙ্গুল উচু করে নক করার আগেই ওয়াসিমা গেট খুলে বের হয়। আবসারের দিকে না তাকিয়ে সোজা তার মায়ের কাছে যায়। সে তার বাবা মাকে তাদের সমস্যার ব্যাপারে কোনো ধারনা দিতে চায় না কারণ আকলিমা সহ্য করতে পারবে না।
— কি হয়েছে আম্মা আমার?? ওয়াসিমার শুকনো চেহারায় হাত বুলিয়ে বলল।
— কিছু না আম্মু এমনিতে কালকে ঠাণ্ডা লেগেছে তাই এরকম লাগছে।
ওয়াসিমার কথা বিশ্বাস করে। আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল — আমাদের বাসায় একটু চলো!!
— কোনো মা??
— একটু কাজ আছে বলেই ওয়াসিমার হাত ধরে তাকে নিয়ে যায়। আকলিমার এভাবে ওয়াসিমাকে নিয়ে যাওয়া আবসারের মনে ভীতি সৃষ্টি কর। সেও কালবিলম্ব না করে চলে যায় তাদের পিছু পিছু।
_____________________
সকাল সকাল আরেকটা সারপ্রাইজ যে আবসারের জন্য অপেক্ষা করছে সেটা আবসার জানত না তার সামনে বসে আছে ইসমাত আরা ও দিলরুবা সাখাওয়াত। দুইজনেই খোশগল্পে মেতে আছে। আর তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরু এখন যোগ দিলো আবসার। দুই ভাই বোন একে অপরকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করল ঘটনা কি??
ইসমাত আরা উঠে নাতিকে জড়িয়ে ধরে। নানের জড়িয়ে ধরায় আবসার তার দিকে তাকায়। আবসারও তাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পরে দিলরুবা সাখাওয়াত এসে জড়িয়ে ধরে। এটা আবসারের কথা অকল্পনীয় যেনো। সে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের টিশার্টটা বুকের কাছে ভেজা ভেজা পায়। বুঝতে পারে দিলরুবা সাখাওয়াত কাদছে
— আমাকে ক্ষমা করে দে ভাই। আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম তুই কিছু করিস নি কিন্তু কিছু বলার আগেই এজাজ তোকে মারা শুরু করল। তুই নিজের ডিফেন্সে কিছু বলিস নি তাই আমার আরো রাগ হয়েছিল। আমি তোকে পরে ফিরিয়ে আনতে যেয়ে পাইনি। বলেই অঝোরে কাদতে শুরু করল।
— দাদীর কথায় আবসারের এতো দিনের ভুল ভ্রান্তি সব ভেঙ্গে যায়। সে বুঝতে পারে সেদিন তার জন্মদাতা বাদে কেউই তাকে বুল বুঝেনি। সবাই তার প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছে। আর সে ভেবেছিল যে কেউ তাকে বিশ্বাস করেনি।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নান ও দাদীকে একসাথে। তার খুব ভালো লাগছে।
— আমার একমাত্র উত্তরাধিকার আমার বাড়িতে থাকবে না তাহলে সাখাওয়াত ভিলার কোনো প্রয়োজন। সেই বাড়িতে যেকোনো অনুষ্ঠানই ফিকে হয়ে যায়।
— এতোই যদি আদর বুড়ি এতোদিন তাহলে কিছু বলোনি কেনো?? মুখ বেকিয়ে বলল আরু।
— কাউকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আর আমার ছেলেকে নিজের জীবনের ব্যর্থতা বুঝানোর জন্য। আমি দিলরুবা সাখাওয়াত নিজের ভুল যেমন ছেড়ে দেই না তেমন কেউ অন্যায় করলে তাকেও ছেড়ে দেইনা। ওর সাথে সেরূপ আচরণের কারণ হলো সেদিন প্রতিবাদ না করে মার খেয়ে বের হয়ে যাওয়া।।
আরু হা করে তাকিয়ে আছে দিলরুবা সাখাওয়াত এর দিকে ডেঞ্জারাস মহিলা।
— মাছি ঢুকে যাবে হা টা বন্ধ করো। বলেই অরিক আরুর হা করা মুখটা বন্ধ করে দেয়। আরু বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই সবাই একজোট হেসে দেয়।
অনেক ফ্যামিলি ড্রামার পর ঠিক হলো আরু ও অরিক এবং আবসার ও ওয়াসিমা যাবে সাখাওয়াত বাড়িতে।
________________________
দীর্ঘ সময় পর আরু ও আবসাররা সাখাওয়াত বাড়িতে ফিরে দুই ভাই বোনের চোখেই পানি। সবাই যখন আরুকে অবহেলা করত তখন কোনো কারণ ছাড়াই তার খারাপ লাগত সবার প্রতি অভিমান জন্মায় কিন্তু যখন সত্যি জানে তখন তার অভিমান ফুসস তবে অদেখা আবসার ভাইকে কখনও ঘৃণা করতে পারেনি।। কিন্তু পরে সত্যিটা জানার পর সে পরিস্থিতিকে মেনে নেয়।
উপর থেকে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আয়মান দেখল তার দাদুম একটা ছেলেকে আদর করে খাওয়াচ্ছে।
দুপুরে লাঞ্চ করছিল সবাই বসে। আজকে আয়মান একটু দেরী করে ফেলেছে। নামতেই দেখে আজকে তার জায়গাটা অন্য কারো দখলে। সে তার দাদুমের দিকে তাকায়। কিন্তু দিলরুবা সাখাওয়াত নির্বিকারভাবে আবসারকে গালে তুলে খাওয়াচ্ছে
— হোয়াট হ্যাপেন্ড দাদুম আমার জায়গায় তুমি যাকে তাকে বসিয়ে খাওয়াচ্ছ
আয়মানের কথা শুনে আবসার কিছু বলতে নিলে তাকে থামায় দিলরুবা।
— এতো যে সে না আয়মান। ও এই বাড়ির বড় ছেলে। তোমার এই বাড়িতে যতটা অধিকার আছে তার থেকে বেশী অধিকার বেশী আছে ।।
দাদুমের গম্ভীর কথায় খারাপ লাগে আয়মানের কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ খালি চেয়ারে বসে পড়ে। সে জানত তার একটা ভাই আছে কিন্তু কখনও দেখা হয়নি।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে একটা ভাত ঘুম না দিলেই নয়। তাই সবাই যে যার রুমে রেষ্ট নিতে চলে যায়। দিলরুবা সাখাওয়াত নিজে আবসারের রুমটা গুছিয়ে রাখে।
ওয়াসিমা আবসারের পুরো রুমে চোখ বুলায়। আভিজাত্য ভরপুর এই ঘরটা তার মনের ঝড় থামাতে পারছে না। তার বুকের ভেতরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
সে আর কিছু না ভেবে ডিভানে শুয়ে পরে ঐ নরম গদি তার জন্য না সে মধ্যবিত্ত মানুষ অল্পতেই সন্তুষ্ট।
আবসার ঘরে ঢুকে পুরো রুমে চোখ বুলায়। এখন ওয়াসিমার সাথে তার কথা বলা জরুরি। সারা সকাল কথা বলার জন্য উশখুশ করেছে কিন্তু সময় ও সুযোগ কোনোটাই পায়নি। ওয়াসিমাকে খুজে না পেয়ে বের হতে নিলেই চোখ যায় তার রুমের বারান্দার দিকে ওয়াসিমার ওড়নার এক কোণার অংশ।
ধীর পায়ে আবসার সেদিকে যেতেই দেখে। ডিভানে আরামছে ঘুমিয়ে আছে ওয়াসিমা তাকে বেশ মিষ্টি লাগছে। অবিনস্ত চুল গুলো মুখের উপর পরেছে।
আবসার আস্তের উপর তাকে কোলে নেয়। বেডে শুয়িয়ে নিজেও তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। প্রায় চার দিন পর আবসারের আরামের ঘুম আসে।
________________
নিজের ঘরে বসে রাগে ফুসছে আয়মান। হঠাৎই যেনো তাকে তার দাদুম দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
মাথায় কারো ছোঁয়া পেয়ে। হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয় আয়মান
— তুমি এখানে কি করছ মম
বিরক্তি কন্ঠে বলল
— আমার ছেলের কাছে আমি আসতে পারি না??
— নো মম ইয়্যু কান্ট আমি বড় হয়েছি আমার প্রাইভেসি বলতে একটা কথা আছে।
আয়মানের কথা শুনে আলিয়া সাখাওয়াতের চোখ জোড়া ছলছল করছে। এই ছেলের জন্য সে কত কি না করেছে। আর এই ছেলে সেদিন লিমাকে বিয়ে করার কথা বলতেই রেগে যায়। সেই আর এখন পযর্ন্ত আছে।
— বড় বউ আমার নাতিকে আমি মানিয়ে নিচ্ছি তুমি যাও। হাতে খাবারের থালা নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল দিলরুবা সাখাওয়াত। তখন রাগ করে আয়মান না খেয়ে চলে আসে তাই আলিয়া তাকে খাওয়াতে আসলে পাত্তা পায় না। তাই দিলরুবা সাখাওয়াত আসে। দাদুমকে দেখে মুখ ঘুড়িয়ে বসে আয়মান। তা দেখে হাসে দিলরুবা সাখাওয়াত।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩৮
মাগরীবের আযান শুনে আবসারের ঘুম ভাঙ্গে। উঠে ওয়াসিমাকে পায়না। বিড়বিড় করে নিজেকে কতক্ষণ গালি দিলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামল নামাযে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন এহসান ও ইরফান একসাথে নামাযে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে। নিজের শশুরকে দেখে অবাক হয়,,,
— ছোট মিয়া তোমরা কখন আসলা??
— এই তো ছয়টার দিকে।
— ওও
— তো চল একসাথে নামাজটা সেরেই আসি,, বলেই আবসারের পিঠে হাত দিয়ে নিয়ে গেলো। এর মধ্যে ইরফান একটা কথাও বলল না।
ওয়াসিমা রান্নাঘরে দাড়িয়ে আবসারের যাওয়া দেখে নিজেও দ্রুত ঘরে গেলো নামাজ পরতে। এতক্ষণ সে একাই রান্নাঘরে দাড়িয়ে ছিলো মাগরিবের নামাযের সময় কম দেখে। আযানের সাথে সাথে নামাযে সবাই চলে গেলেও ওয়াসিমা যায়না। সে আবসারের যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলো।
বিয়ের বাড়িতে হাজার কাজ। তাই আকলিমা বাদে বাকি সবাই রান্নাঘরে আছে। আকলিমা ইসমাত আরা ও দিলরুবা সাখাওয়াতের কাছে বসে গল্প করছে।
এহসান ও ইরফান নামাজ শেষ করে আসলেও আবসার অরিকের সাথে দেখা করতে গিয়েছে কারখানায়। কারখানায় কোনো কাজে অরিক আটকে গেছে তাই আরু আকলিমা ও ইরফানকে পৌঁছে দিয়েই আবার চলে গেছে বাড়ির ভিতরেও ঢুকে নাই।
_____________________
রাত আটটায় ভেনিসা সহ তার পরিবার ও আয়মান ও ভেনিসার কাছের কিছু বন্ধু উপস্থিত হয়। বিয়েটা যেহুতু এই বাড়ি থেকে হবে তাই ভেনিসারা সবাই আজকেই সাখাওয়াত ভিলায় উপস্থিত হয়। তাদের বাংলাদেশের কিছু আত্মীয় কালকেই আসবে একেবারে হলুদের সময়। দুই পক্ষের হলুদ একসাথে হবে। তাই সবার মাঝে আনন্দটাও বেশী।
সাখাওয়াত বাড়িতে আজ চাদেঁর হাট বসেছে। ভেনিসা ইতিমধ্যে ওয়াসিমা ও আরুর সাথে বেশ ভালো আড্ডা জমিয়ে ফেলেছে। ভেনিসার মা ইলা ও বাবা রাশেদ ও সবার সাথে মিশে গেছে।
এজাজ সাখাওয়াত বিজনেসের কাজের জন্য একটু ঢাকার বাইরে গিয়েছিল। একটু আগেই পৌছায়। ঢুকেই নিজের বাড়ির হল রুমের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
এরকম একটা দৃশ্য তার কাছে বিরল সে ভাবতেই পারেনি এরকম দৃশ্য কোনো দিন দেখবে বেচে থাকতে। বিশাল বড় হল রমের একপাশে। ছোটদের মানে ওয়াসিমা আরু ও ভেনিসা আর তার বন্ধুদের আড্ডা চলছে। অন্যদিকে বড়দের গল্প চলছে। আরেকদিকে ইসমাত আরা,, কায়সার ও দিলরুবা সাখাওয়াতের দখলে তারা তিনজন এমন ভাবে গল্প করছে যেনো কত দিন পর দুই বান্ধবী একসাথে হয়েছে।
এজাজ জানত তার আম্মা সিলেট যাচ্ছে আবসারের নানা নানিকে দাওয়াত দিতে কিন্তু এমন কিছু হবে সে ভাবতে পারেনি।
কথা বলতে বলতে হঠাৎই দিলরুবা সাখাওয়াতের নজর যায় তার বড় ছেলের দিকে। দিলরুবা সাখাওয়াত বুঝতে পারে ছেলের মনোভাব। ধীর পায়ে উঠে যায় তার কাছে। তার সাথে ইসমাত আরা ও কায়সারও উঠে দাড়ায় তারা নিজেদের ঘরে চলে যায় বিশ্রাম নিতে। মনে মনে তারাও কিছু ঠিক করে নেয়। এবং সেই বিষয়ে দিলরুবার সাথে কথা বলবে ঠিক করে।
— কি দেখছিস বড় খোকা??
— আমার দুয়ারে আসা এক মুঠো সুখ দেখছি আম্মা। এই সবার মধ্যে আমার ছেলেটাকে দেখছি না ওকি আসেনি?? দিলরুবা সাখাওয়াতের দিকে প্রশ্নাত্তক ভাবে তাকিয়ে বলল।
— এসেছে খোকা একটু অফিসের কাজে গিয়েছে।
— এখন ওর কি প্রয়োজন ঐ ছোট্ট কারখানাটা চালানোর ও তো সাখাওয়াত গ্রুপ অব কোম্পানিতে জয়েন করতে পারে।
— আস্তে আস্তে হবে খোকা একটু সবুর কর!! এখন যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নে।।
— না আম্মা এই সুখটুকু আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চাই। আমার সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। আমার বাড়ির এই আনন্দ উচ্ছ্বাসে।
এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে হাসে দিলরুবা।
সেদিকে কর্ণপাত না করে নিজের মতো করে বেয়াই বিয়ানের সাথে আলাপ আলোচনা করে ঘরে গেলো এজাজ। তার পিছু পিছু আলিয়া ও আসল।
আলমারি থেকে তোয়ালে বের করতে করতে হেসে ওঠে। সেই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে আলিয়া কি সুন্দর হাসি এই হাসিরই তো প্রেমে পড়েছিল আলিয়া। অনেক দিন পর স্বামীকে হাসতে দেখে ভালো লাগল আলিয়ার।
— নাস্তা এখানে নিয়ে আসব??
পিছন থেকে আলিয়ার কথা শুনে সদিকে তাকায় এজাজ।
— হু না আমি নিচে আসছি। তোমার আর কষ্ট করে নিয়ে আসতে হবে না।।
এজাজ ওয়াশরুমে ঢুকতেই আলিয়া নিচে নেমে আসে চলে যায় রান্নাঘরে। সেখানে গিয়ে ওয়াসিমাকে দেখে অবাক হয় উকি মারে ড্রয়িং রুমে না সবার মোটামুটি নাস্তা করা শেষ তাহলে। তাই ওয়াসিমাকে জিজ্ঞাসা করল — তুমি এখানে কি করছো??
— আঙ্কেল এসেছে তার জন্য নাস্তা রেডি করছি।।
আলিয়া অবাক হয় মাঝে মাঝে ওয়াসিমাকে দেখে। নিশ্চিত আবসারের বিষয়ে সব জানে এবং আলিয়ার কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জানে। কিন্তু দেখো এই মেয়ের কথায় কোনো রাগ নেই তেজ নেই কি সুন্দর বিনয়ের সাথে কথা বলে তার সাথে কথা বলছে। সেরকম ওয়াসিমার বাবা মায়েরও। দেখেই মনে হয় তারা মন ভালো মানুষ সহজ সরল।
____________________
রাতে ডিনারের একটু আগে আবসার ও অরিক সাখাওয়াত ভিলায় আসে। অরিকের হাতে ফলমূল মিষ্টির প্যাকেট আরু এগিয়ে এসে সেগুলো হাতে নেয়। এবং অরিককে নিয়ে যায় তাদের ঘরে ফ্রেশ হতে
— নিজের বাড়িতে এসে দেখি তোমার পাত্তাই পাওয়া যায়না “” ঝাঝালো স্বরে বলল অরিক।
অরিকের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে
— কি হয়েছে আপনার??
— কি হবে আর হলে তো কানতোই বলে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আরু ভাবতে ভাবতে ফোনে হাত দিয়ে দেখে বিশটা মিসড কল অরিকে নাম্বার থেকে।
— ওও এই জন্যই সাহেব রাগ করেছে
বলেই ফিক করে হেসে দিলো। আর মনে মনে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করল শশুর শাশুড়ি,, স্বামীর এতো ভালোবাসা তার কপালে লেখার জন্য।
— নে আরু এখন রাতে এই মহাশয়ের রাগ ভাঙ্গানোর প্রস্তুতি নে বিড়বিড় করে বলতে বলতে ঘরে থেকে বের হলো।
,,,,,,,,, সবাই একসাথে খেতে বসেছে পুরো টেবিলে চেয়ারে ভরপুর। বাড়ির বউরা খাবার বেড়ে দিচ্ছে তার মধ্যে হবু বধূ ভেনিসাও বাদ যাচ্ছে না। তবে তার মধ্যে ওয়াসিমা একা রান্নাঘরে। আবসার চারিদিকে চিরুনি তল্লাশি করে ও পায়না ওয়াসিমাকে।
সবাই খাচ্ছে আর একে অপরের সাথে টুকটাক গল্প করছে। তবে এই সবার মধ্যে দুইজন বিবস মুখে বসে আছে একজন হলো আবসার অন্যজন হলো আয়মান।
আবসার বসে আছে প্রতিরাতে সে তার বউয়ের সাথে টুকটাক রোমান্স করতে করতে তাকে খায়িয়ে দেয়। আজকে এই জনগণের কারণে পারছে না অন্যদিকে আয়মান বসে আছে সে বিকাল থেকে ভাই মানে আবসারের আশায় বসে আছে আর আবসার আসল একটু আগে এখন যেই জায়গায় রাতে জেগে একটু হবু বউয়ের সাথে আলাপ করবে সেই জায়গায় এখন ভাইয়ের মান ভাঙ্গানো লাগবে।
— আজকে আবসার ও আয়মান দুইজন একসাথে আবসারের ঘরে ঘুমাবে।।
দিলরুবা সাখাওয়াতের এই ঘোষণা শুনে আবসার হৃদয়টা লাফিয়ে ওঠে “” এটা কোনো কথা বউ ছাড়া থাকতে হবে এখন। দূর ভালো লাগেনা বিড়বিড় করে বলে। দিলরুবা সাখাওয়াতের কথার তীব্র বিরোধীতা করে বলে উঠল — আয়মান নতুন মানুষের সাথে ঘুমাতে নিশ্চয়ই কমফোর্টেবল না আর আমাকে ও খুব একটা চিনেও না তা কিভাবে হয় দাদি??
— সেটা আজ রাতে দুইভাই একসাথে শুলেই চেনা জানা সব হয়ে যাবে বলেই খাওয়া শেষ করে উঠে দাড়ায়।
— শা*লা আমি আছি আমার জ্বালায় বউটা সারাদিন রাগ করে একটা কথাও বলেনি আমার সামনে পযর্ন্ত আসেনি আর এখন এই গ্যারাকল,, দূর ভালো লাগে না।
#চলবে