#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৭
বাসের জানালা ঘেসে বসে আছে ওয়াসিমা। পাশেই আবসার বসে প্রান প্রিয় বউয়ের অভিমানী চেহারা লক্ষ্য করছে। সে বুঝতে পারছে ঐ সময় হঠাৎই তার রিয়েক্ট করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু সেও বা কি করবে ঐযে কথায় বলে না -” চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও ভয় পায় “। আবসারের ও সেই অবস্থা জীবনের সেই নির্মম মুহূর্ত গুলো মনে পড়ে যায়। তাইতো ভয় পায়।
কিছুক্ষণ পরে বাসায় পৌছায় তারা। ওয়াসিমা গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকে আবসার রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে গেটের সামনে আসে, দেখে ওয়াসিমা দাড়িয়ে -” তুই বাসায় যা আমি একটু অফিস যাব ( ওয়াসিমার মাথা আলতো চুমু দিয়ে বলল )
ওয়াসিমাও চুপচাপ মাথা নাড়ায়। আবসার চলে যেতে নিলেই পিছন থেকে হাত ধরে ওয়াসিমা আবসার ফিরে তাকালে তাকে বলল — আপনিও কিছু খেয়ে নিয়েন।
— আচ্ছা! আর আমি একেবারে বিকালে আসব দুপুরে আম্মুর সাথে খেয়ে নিস
— আপনি আসলেই খাব। আপনি তাড়াতাড়ি আইসেন
ওয়াসিমার নির্ভেজাল আবদারে আবসার মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোধক সম্মোধন দিয়ে চলে যায়। ওয়াসিমা তাকিয়ে থাকে আবসারের যাওয়ার দিকে। সে যতই অভিমান করুক না কেনো স্বামীর প্রতি যত্ন নিতে ভুলে না। কিছুক্ষণ সেভাবেই দাড়িয়ে বিল্ডিংয়ের ভিতরে ঢুকে পরে ওয়াসিমা। নিজেদের ফ্ল্যাটে এসে কলিং বেল বাজায়।
ভিতরে ঢুকে দেখে এহসান সোফায় বসে দেয়ালে টানানো টিভির দিকে তাকিয়ে চিন্তিত মুখে বসে আছে। সাথে তানিয়া সাখাওয়াতেরও একই অবস্থা।
— কি হয়েছে মামনি ( ঘরে ঢুকেই তাদের চিন্তিত দেখে বলল )
— কিছু না মা তোমার পরীক্ষা কেমন হয়েছে
— আলহামদুলিল্লাহ্ মামনি চাচ্চু তোমরা খেয়েছো সকালে। সরি গো আমি তোমাদের একটুও খেয়াল রাখতে পারিনি।
— ধুর পাগলী মেয়ে। মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে হয় আর আকলিমা আপা আমাদের খেয়াল রেখেছে অনেক।
-” আম্মু কই গো মামনি
— তাদের ফ্ল্যাটে গিয়েছে গোসল করে নামাজ পরে আসবে। এখন তুইও যা ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নে ভাত খাবি সকালে কিছুই খাসনি
ওয়াসিমা কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো।
-” এটা কি হলো এহসান। ভিক্টোর হঠাত করে মিসিং হলো কিভাবে??
— তাতো জানিনা তানিয়া। আমার জানামতে তার অনেক শত্রু আছে তারাই কেউ হয়তো কিছু করেছে।
এহসানের কথা শুনে চুপ থাকে তানিয়া তার কেনো জানি মনে হচ্ছে কোনো বিপদ আবার আসছে নাতো।
____________________
নিজের কেবিনে বসে আছে আবসার। সামনের চেয়ারে অরিক বসা তাদের দুইজনের দৃষ্টি টেবিলের ল্যাপটেপ চালিত খবরে। যেখানে প্রত্যেকটা চ্যানেলে প্রকাশিত হচ্ছে ” টিউলিপ হসপিটাল ” এর মালিক মিষ্টার ভিক্টোর কাল রাতে নিজের বাসা থেকে কিডন্যাপ হয়েছে। কিন্তু এখন পযর্ন্ত কোনো রেসকেউ এমাউন্টের জন্য কিডন্যাপারের কল আসে নাই।
এটা সত্যি কিডন্যাপিং নাকি নিজস্ব কোনো শত্রুতা।
স্ক্রিন থেকে নজর সরিয়ে আবসারের দিকে তাকায় অরিক। অরিকে তাকানো দেখে আবসার তার দিকে তাকিয়ে বলল — হোয়াট আমার কি রুপ বাড়ছে নাকি??
— না কিন্তু অনেক দিন পর ভার্সিটি লাইফের সেই ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ আবসার সাখাওয়াতকে দেখছি তো তাই।
অরিকের কথা শুনে মুখ বাকিয়ে হাসে আবসার।
— যাই হোক ভিক্টোর কোথায়
— আছে ( উদাসীন ভাবে বলল আবসার ), আর যাই হোক এই রাজনীতি বিষয়ে কোনো কথা ওয়াসুর সামনে উঠাস না।
আবসারের কথা শুনে অরিক মাথা নাড়ে যে সে বলবে না।
___________________
চিন্তিত মুখে পায়চারি করছে ফাহাদ গতকাল থেকে তার বাবা উধাও আর এখন এই মহিলা তাকে বলছে,,
— আপনি কাল কোথায় ছিলেন
— আমি কালকে দানিশকে হোষ্টেলে দিয়ে আসতে গিয়েছিলাম ( ক্রন্দনরত ইরিনা বলল )
কিছুদিন আগেই ভিক্টোর ফিরে এসেছিল। তার কাছে মাফ চায় সব কিছুর জন্য। কূল হারানো ইরিনাও ভিক্টোরকে মাফ করে দেয় এবং দুইজনে বিয়ে করে আবার আগের মতো সংসার শুরু করে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছু বুঝতে পারছে না সে।
— হ্যালো ইন্তপেক্টর সাহেব কোনো খবর পেলেন।
ইন্সপেক্টর তারেকের সাথে হাত মিলিয়ে বলল ফাহাদ।
— নো মি. ফাহাদ আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কিন্তু এখনো কিডন্যাপারের কল না আসলে কিছু বলা যাচ্ছে না। আর আপনি কাল কোথায় ছিলেন??
— আমি এখানে থাকিনা ইন্সপেক্টর আমি আগারগাঁও একটা ফ্ল্যান ভাড়া নিয়ে থাকি।
— আমি এই বাসার দারোয়ানের সাথে কথা বলেছি তিনি বলছেন আপনি কাল রাত আটটার দিকে এখানে এসেছিলেন।
অফিসারের কথা শুনে ফাহাদ হালকা ঘাবড়ে যায়। তবে তাকে বুঝতে না দিয়ে আবারও বলল — আমি এসেছিলাম কিন্তু বাসায় উঠিনি নিচে দাড়িয়ে কথা বলেই চলে গিয়েছিলাম তা বলেনি।
অফিসার হালকা হেসে মাথা নেড়ে বলল -” শুনলাম আপনাকে নাকি টিউলিপ হসপিটালে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
— আমি নিজেই ঐ হাসপাতাল ছেড়েছি অফিসার ( গম্ভীর স্বরে বলল ফাহাদ )
— উনি কি আপনার নিজের মা ( পিছনে বসে থাকা ইরিনার দিকে ইশারা করে বলল )
— নাহ
— কিছু মনে করবেন না ডক্টর ফাহাদ। পুলিশ তো আমাদের কাজই হলো সব কিছু খতিয়ে দেখা ( অফিসারটি হালকা হেসে বলল )
— নো ইটস ওকে। এটা আপনার ডিউটি
__________________
দুপুর গরিয়ে বিকাল চারটা এখনো আবসার আসেনি। ওয়াসিমা খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই খেয়ে নিয়েছে। তানিয়া সাখাওয়াত ও এহসান সাখাওয়াতকে আজকে যেতে দেয়নি ওয়াসিমা বলেছে তাদের কাছে কিছু দিন থাকতে। তারাও না করেনি ওতো বড় বাড়িতে একা থাকতে তাদের ভালো লাগে না।
দুই বন্ধু কথা বলতে বলতে লিফ্টের বাটন চাপ দিলো একজন পাচঁ তলায় আরেকজন ছয় তলায়। অরিক দুপুর দুইটার দিকে নিজের ক্লাস শেষ করে আবসারের কাছে যায় বর্তমানে তারা সেখান থেকেই ফিরছে।
পাঁচ তলা আসতেই অরিক নেমে যায়। কলিংবেল বাজায় না। কারণ ইরফান ও আকলিমা দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু ঘুম দেয়।
ড্রয়িং রুম পেরিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে নজর পরতেই দেখে আরু খাবার টেবিলে বসে আছে। হাতে বিসি এস এর বই
— ঘরে না বসে এখানে বসে পড়ছিলে কেনো??
— তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম। তুমিতো প্রতিদিন দুইটার মধ্যেই আসো আজকে এতো দেরী??
— হ্যা একটু অফিস গিয়েছিলাম আবসার একা আর কতটুকু সামলাবে। ওয়াসিমাকে নিয়ে যাওয়া দিয়ে আসা আবার ব্যবসায় আমার শেয়ার থাকলেও সবদিকটা সে একাই সামলায় তাই আমি মাঝেমধ্যে যাই এই আর কি।
— হু ফ্রেশ হয়ে এসো খাবার দিচ্ছি
অরিক কিছু না বলে চলে যায় ঘরে। তার যে বড্ড খিদে পেয়েছে
ওয়াসিমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আবসার আবার ফাকে নিজেও খাচ্ছে। ওয়াসিমা অনেক বললেও কাজ হয় না তার এককথা আমি তো প্রতিদিন দুপুরে থাকি না যে দেখব কি খাস না খাস তাই এখন আমি খাওয়াই দিচ্ছি খা।
খাওয়া শেষে ওয়াসিমা এটো বাসন গুলো নিতে গেলে আবসারও তাকে সাহায্য করে।
— আপনি ঘরে যান আমি আসছি মাত্র একটা প্লেট ধুতে আর কি কষ্ট।
আবসার কিছু না বলে টেবিলের খাবারের বাটি গুলো একে একে ফ্রিজে রাখতে শুরু করে। ওয়াসিমাও এই ঘাড়ত্যাড়া লোকের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় না।
ঘরে যেয়ে আবসার শুতে নিলেই বাধা দেয় ওয়াসিমা — একটু পরেই আসরের আযান দিবে এখন শোয়া যাবে।
আবসার একটাই লম্বা হাই দিয়ে বিছানায় বসে।
-” আপনি বারান্দায় বসেন আমি আপনার জন্য চা আনছি ঘুম চলে যাবে।
আবসার বারান্দায় বসে। বারান্দাটা সুন্দর করে সাজিয়েছে ওয়াসিমা আবসারকে দিয়ে একটা দোলনা আনিয়েছে বর্তমানে সে এই দোলনায় বসা। একটু পরে ওয়াসিমা লাইট সুগারের এককাপ কফি আবসারের হাতে দিয়ে পাশে বসে। কফি খেতে খেতে দুজন এদিক সেদিক কত কিছুর গল্প করে।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৮
( এলার্ট ১৮+ )
মাঝরাতে হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে গেলো ওয়াসিমার। পাশ হাতরে আবসারকে খুজলেও পায়না। ওয়াশরুমের দরজায় তাকায় সেটাও বাইরে থেকে বন্ধ। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটা বাজে
— এই কোথায় গেলো লোকটা বলেই ঘর থেকে বের হয়। পুরো ডাইনিং এরিয়া ফাকা হঠাৎই ডাইনিং এর পাশে ব্যালকনির কথা মনে পড়ল সেখানে গিয়ে দেখে আবসার ফোনে কথা বলছে আর পায়চারি করছে
— কি হয়েছে আপনার ওয়াসিমার কন্ঠ শুনে ভরকে যায় আবসার তারপরেও নিজেকে শান্ত রেখে বলল — কিছু না তুই হঠাত উঠলি কেন??
— ঘুম ভেঙ্গে গেলো উঠে দেখি আপনি ঘরে নেই তাই আপনাকে খুজতে খুজতে এসেছি এখানে। আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কিছু কি হয়েছে??
— উহু চল তুই শুয়ে পড়বি ( ওয়াসিমার কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তাকে ঘরে নিয়ে আসে। ওয়াসিমাকে বুকে জড়িয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে,, আনমনে ওয়াসিমার মাথায় হাত বুলায়। ঘুম কাতুরে ওয়াসিমা কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌছে যায় ঘুমের কোলে )
ওয়াসিমার ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়তে দেখে আবসার উঠতে যেয়েও উঠে না । এতক্ষণ তার অশান্তি লাগলেও এখন তার শান্তি লাখছে। কারণ তার সুখ পাখি তার বক্ষে আছে। পকেট থেকে ফোন নিয়ে কাউকে মেসেজ করেই ফোন রেখে ঘুমের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু ঘুম আসে না এদিক সেদিকের চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করছে।
যায় জন্য তার বাল্যকাল নষ্ট হলো তাকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দিবে আবসার উহু কক্ষণো না সে এতটাও মহান না।
তার ভাবনার মাঝেই আযানের প্রতিধ্বনি শুনা যায়। ঘোর ভাঙ্গে আবসারের কখন যে ফজরের সময় হয়ে গেলো সে বুঝতেও পারল না। বুকের মাঝে ঘুমিয়ে থাকা ওয়াসিমাকে ধীমে স্বরে ডাকতে থাকে
— ওয়াসু ও বউ পাখি,,
আবসারের আদুরে ডাকে ঘুম ভাঙ্গে ওয়াসিমার সে পিটপিট করে তাকাতেই আবসার বলল-“- আযান দিয়েছে নামাজ পড়তে হবে না!
নামাজের কথা শুনে তড়াক করে উঠে বসে ওয়াসিমা। দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিতে নিলেই থামায় আবসার
— আস্তে আস্তে যা পড়ে যাবি তো
মাথা নাড়িয়ে চলে যায় । আবসার উঠে অন্য ওয়াশরুমে থেকে বাশি জামা কাপড় বদলে ওযু করে বের মসজিদের উদ্দেশ্যে।
আবসার নামাজ শেষ করে এসে দেখে ওয়াসিমা কুরআন তিলাওয়াত করছে। আবসার ঢুকতেই তার দিকে তাকায়
— আজকে এতো দেরী করলেন যে নামাজ থেকে আসতে??
— একটু হাটতে গিয়েছিলাম ( স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বলল )
আবসারের নির্মল হাসিতে মন প্রান জুড়িয়ে যায় ওয়াসিমার
— চা দিব
— এককাপ কড়া কফি চাই। মাথা ব্যাথা করছে।
কিছুক্ষণ পরে ওয়াসিমা কফি নিয়ে আসে। দেখে আবসার গভীর ঘুমে তাকে জাগায় না। নিশ্চুপ ভাবে ঘরে সব পর্দা গুলো টেনে দিয়ে লাইটটা বন্ধ করে গেট চাপিয়ে চলে যায় রান্নাঘরে।
ওয়াসিমা বুঝতে পারছে আবসার সারারাত ঘুমায় নি। কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে ছিলো কিন্তু বিষয়টা কি সেটা বুঝতে পারছে না। সে এটাও বুঝতে পারছে লোকটা তার কাছ থেকে লুকাচ্ছে কিন্তু কি??
__________________
ব্রেকিং নিউজ ” টিউলিপ হসপিটাল ” এর কর্ণধার মি. ভিক্টোরের লাশ তার বনানীর আরেকটি ফ্ল্যাটের মধ্যে পাওয়া গেছে। এবং এও জানা গেছে হাসপাতালে মানব সেবার নাম করে সেখান হিউম্যান ট্রাফিকিং সহ ওরগ্যান ট্রিফিকিংয়েও তিনি জড়িত ছিলেন। সবার অগোচরে সে তার হাসপাতালে গরিবদের সাহায্য করার নাম করে এই কাজ করত
বর্তমানে ” টিউলিপ হাসপাতাল ” সিজ করে দেওয়া হয়েছে। আর মি. ভিক্টোরের সকল সম্পত্তি সরকারের আন্ডারে নেওয়া হয়েছে।
এই খবর পুরো দেশবাসীকে নাড়িয়ে দেয়। সবাই ইরিনার ফ্ল্যাটে হামলা চালায় এবং পুলিশকে ভিক্টোরের লাশ নিয়ে যেতে দেয় না।
বহু কষ্টে লাঠিচার্জের পর পুলিশ বাহিনীরা ভিক্টোরের লাশ পোস্টর্মটেমের জন্য নিয়ে যায় তারা।
ইরিনার অবস্থা শোচনীয় তার থাকার কোনো স্থান নেই। কাল প্রথমে ভিক্টোরের নিখোঁজ তারপর তার আত্মহত্যা সব মিলিয়ে তার অবস্থা কাহিল। কিন্তু তার মাথায় এটা আসছেনা ভিক্টোর আত্মহত্যা কেনো করল। সে এমন একজন ব্যাক্তি অন্যকে মারবে কিন্তু নিজে মরার চেষ্টা করবে না।
ফাহাদ হাসপাতালে আছে সে তার বাবার লাশ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে তার মস্তিষ্ক এটা ধারন করতে পারছে না কি থেকে কি হয়ে গেলো।
কিছুদিন আগেই সে হাসপাতালের আড়ালে এই অসৎ কর্মকাণ্ডের সম্পর্কে জানতে পারে। তখন থেকেই সে আর ” টিউলিপ ” বসে না।
তার চিন্তা এটা যা এতো বছরে কেউ পারেনি তা এখন কে করেছে। তার সাথে কি তার বাবার পুরোনো কোনো শত্রুতা আছে।
সকাল দশটায় ঘুম ভাঙ্গে আবসারের। সে আজ খাবার টেবিলে না বসে সোফায় টিভি ছেড়ে সেখানে বসে খায় আর সংবাদ দেখতে থাকে।
আবসারের মুখে ফুটে ওঠে কুটিল হাসি,,,,,
চায়ের কাপ রাখতে রাখতে আবসারকে একা একা হাসতে দেখে ওয়াসিমা ভ্রু কুচকে তাকায়
— কি হয়েছে এভাবে হাসছেন কেনো
ওয়াসিমার কথার উত্তর দেয় না তাকে হ্যাচকা টানে নিজের কোলে বসায়। ওয়াসিমাও আবসারের গলা জড়িয়ে ধরে
— অরিক আর আরুর বিয়ের রিসিপশনে আমরা আবার বিয়ে করলে কেমন হয়? ( ওয়াসিমার গলায় নাক ঘসতে ঘসতে বলল )
— সত্যিই ( উচ্ছ্বসিত স্বরে বলল ওয়াসিমা )
— হু আমারো তো ইচ্ছা করে আমার এই পিচ্চি বউকে লাল টুকটুকে শাড়িতে বউ সাজে দেখার।
আবসারের কথা শুনে লজ্জা পায় ওয়াসিমা। লজ্জায় মুখ লুকায় আবসারের বক্ষে। আবসারও বুঝতে পেরে আলতো হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
— একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
— ভবিষ্যতে কোনো দিন অনুমতি নিবি না যা জিজ্ঞাসা করার সরাসরি করবি!!
“- আপনি কি নিয়ে টেনশনে ছিলেন সকালে,,
— কিছু না যা নিয়ে টেনশন করছিলাম তা মিটে গেছে।
মাথা নাড়ায় ওয়াসিমা হঠাৎই কিছু মনে পরতে আবার মাথা উঠায় — হঠাৎই বিয়ের কথা উঠালেন যে
— আমি না অরিক কয়েকদিন ধরেই বলছিল। আমি তোর মেডিক্যাল এক্সামের জন্য ওয়েট করছিলাম। তাতো শেষ
— আপনি আর কোনো ইউনিভার্সিটির ফর্ম উঠালেন না কেনো?
— কারণ আমি জানি আমার বউ ইনশাআল্লাহ মেডিক্যালেই চান্স পাবে
— এতো বিশ্বাস
— এর থেকে বেশী বিশ্বাস,,
কথার মাঝেই আবসারের মুড অন্য দিকে ঘুরে যায়। সে হাত গলিয়ে দেয় ওয়াসিমা কামিজের ভিতরে । কথার মাঝখানে আবসারের অবাধ্য স্পর্শে কেপে ওঠে ওয়াসিমা
— ককি করছেন ( কাপা স্বরে বলে ওয়াসিমা )
— আদর করছি। অনেক দিন ধরে বউ পাখিকে আদর করিনা আমার প্রান প্রিয় বউটা আদরের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে দেখছিস না।
— অসভ্য লোক সরেন সকাল সকাল শুরু কইরেন না ( বলেই উঠতে নিলেই আবসার আবার হ্যাচকা টানে কাছে আনে )
— এখন কোনো ডিস্টার্ব করবি না ” লেট মি লাভ ইউ ” বউ
( বলেই আর কোনো কিছুর সুযোগ না দিয়ে ওয়াসিমাকে কোলে তুলে চলল নিজের ঘরে )
ওয়াসিমাকে খাটে ফেলে তার ওষ্ঠ জোড়া দখল করে নিলো এক হাতে তার গায়ের ওড়না ফেলে অন্য হাতে তার ঘাড় ধরে কাছে এনে চুম্বন গভীর করে।
ওয়াসিমার দম বন্ধ হয়ে আসতেই মুখ ঘুড়িয়ে নেয় ওয়াসিমা। নেশাক্ত আবসার তা নিতে ততপর হতেই ওয়াসিমা তার ঠোটে হাত দিয়ে আটকায়
— দম বন্ধ হয়ে আসছে
আবসার কিছু না বলে ওয়াসিমা গলায় মুখ ডুবায়। আবসারের মাতোয়ারা স্পর্শে ওয়াসিমা নিমিষেই এলোমেলো হয়ে যায়।
আবসারের উম্মাদনা বাড়ে সেই সাথে বাড়ে গভীরে ছোয়া। ওয়াসিমাও ভেসে যায় আবসারের উম্মাদনায়।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৯
“” কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ “” এই কথাটা আজ হাড়ে মজ্জায় টের পেয়েছে ইরিনা।
আজ সে সর্বহারা হয়ে পথে পথে ঘুরছে স্বামীর লাশটাও একঝলক দেখার সুযোগ পায়নি। ফাহাদ তাকে দেখতে দেয়নি।
হঠাৎই পানি পিপাসা লাগলে এক সাইডে বসে পড়ে পা দুটো আর চলে না। নিজের বাবার বাড়িও যেতে পারবে না কারণ অনেক আগেই তারা তাকে পরিত্যক্ত করেছেন।
সে তাদের কাছে ঘৃণ্য আর মৃত তাইতো এতো বছরেও অন্ততপক্ষে মেয়ের খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করেনি। তার মতো মেয়ের জন্য এরকম করাই ঠিক তার জায়গা অন্য কোনো মেয়ে হলে নিজের সোনার সংসার নষ্ট হতে দিতো না। তাইতো তার বাবা মা তার সাথে উচিৎ কাজই করেছে।
ইরিনার মাথায় এখন অন্য চিন্তা। এই বিষাক্ত পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে সে তার ছেলে দানিশকে এখান থেকে দূরেই রেখেছে সব সময়। এখন দানিশের পড়াশোনার খরচ হোষ্টেল খরচ কিভাবে বহন করবে সে।
অনেক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর আবার উঠে দাড়ায় ইরিনা। হাটতে হাটতে সাখাওয়াত বাড়ির সামনে এসেই থেমে যায়। পুরো বাড়িটা আলোয় ঝলমল করছে। হড়েক রকমের মরিচ বাতি ও ফুল দিয়ে সাজানো বাড়ির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
এই বাড়িটাতে একসময় তার সংসার ছিলো। এই বাড়িতে পা রেখেছিলেন সে এজাজ সাখাওয়াতের হাত ধরে। বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও এজাজ সাখাওয়াত তাকে খুব ভালোবাসতেন। তার খুব সুখের সংসার ছিলো। বান্ধবীর মেয়ে আনায় দিলরুবা সাখাওয়াত ও তাকে একটু বেশি ভালোবাসত। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত আবসারের জন্ম সে চায়নি তবে মাতো তাই আস্তে ধীরে তার প্রতি মায়া চলে আসে। এরপর সব কিছু ভালোই চলছিল।
সেই সুখের সংসারে গ্রহণ হিসেবে এসেছিল ভিক্টর। ভিক্টোরের মোহে পরে সে নিজের হাতে সব ধ্বংস করেছে । হ্যা এটা সত্যি ভিক্টোরের মৃত্যুতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে ভাবছে দুনিয়ায় আরো একটু পাপের বোঝা কমল।
— আমাকে একটু পানি দিবে মা??
কেউ পানি চাওয়ায় পিছনে ফিরে তাকায় আবসার ওয়াসিমা। সন্ধ্যা বেলা আবসার ওয়াসিমাকে নিয়ে বের হয় অনেক দিন দুইজন একসাথে কোথাও ঘুরে না তাই। আবসারই জোড়াজুড়ি করে নিয়ে এসেছে।
একটা ফুচকার দোকান দাড়িয়ে ছিলো। সেখানে এক কর্ণারে বসে ছিলো তারা। পিছন থেকে কারো ডাকে ফিরে তাকায়,,,
আবসার একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহিলাটির দিকে। আভিজাত্যের ভরপুর এই মহিলাটি তার জন্মধাত্রী তাকে কিভাবে ভুলবে এই মহিলার জন্যই তার জীবন ছিলো বিভীষিকাময় যা তাকে প্রতি রাতে তাড়িয়ে বেড়াতো। কথায় বলে না মা মড়লে বাপ হয় তালই “” কিন্তু তার ব্যাপারে হয় উল্টো তার মা তাকে ত্যাগ করার পরপরই এজাজ সাখাওয়াতের ভালোবাসা থেকেও সে বঞ্চিত হয়।
— আন্টি আপনার মুখ শুকনো লাগছে কিছু খাবেন ( ওয়াসিমার কথায় ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে আবসার )
— না গো মা আমাকে একটু পানি দিলেই চলবে।
তার কথা শুনে ওয়াসিমা একটা নতুন পানির বোতল আর একটা বার্গার কিনে নেয়
— হ্যা এই নেন ( বলেই ওয়াসিমা একটা পানির বোতল আর একটা খাবারের প্যাকেট ইরিনার হাতে ধরিয়ে দেয় )
ইরিনা প্রথমে ইস্তোত বোধ করলেও পরে ওয়াসিমার জোরাজুরির কারণে নেয়।
— ওয়াসু হয়েছে?
— হ্যা এই আসছি ( বলেই আবসারের দিকে এগোয়। এতক্ষণ আবসার সামনের দিকে বসে ছিলো তার ইচ্ছে ছিলো না ঐ মহিলার চেহারা দেখার তাই ওয়াসিমা তাকে খাবার দিতে গেলে সে যায় না। )
সারা রাস্তা চুপচাপ ওয়াসিমার হাত ধরে বসেছিল আবসার। এখন তার বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না তার মনটা অশান্ত হয় আছে।
হাটতে হাটতে কখন যে বাসায় পৌছে যায় তারা বুঝতে পারেনা আবসার।
হাটার ফাকে ফাকে ওয়াসিমা নিজের স্বামীকে অবলকন করেছে ওয়াসিমা। একটু আগেও সে ঠিক ছিলো নির্লজ্জ আবসার রাস্তাতেও তাকে লজ্জা দিতে ভুলেনি। কিন্তু এখন কি হলো??
তার উজ্জল মুখে এমন আধার নেমে আছে কেনো। সে কি কোনো কিছু নিয়ে ডিস্টার্ব?? এর মধ্যে আরুর কল আসলে ওয়াসিমা তার সাথে কথা বলে রেখে দেয়। আবসারের সেদিকে খেয়াল নেই,,,
— শুনেন,,
— হু,,
— আরু আপু ফোন করেছে এখন মামনিদের বাসায় যেতে বলেছে।
— তাহলে কি এখন বাসায় ঢুকবি না?
— না পরে দেরী হয়ে যাবে এখনই চলেন। ওয়াসিমার কথা মতো আবসার মাথা নাড়িয়ে একটা সি এন জি ঠিক করে। এখন বাসে যাওয়ার মতো মন-মানসিকতা তার নেই।
____________________
ওয়াসিমারা যখন তানিয়াদের বাসায় তখন সবাই চা নাস্তার সাথে আড্ডায় ব্যস্ত।
— এই যে আমার মা এসে পড়েছে!
— কি হয়েছে আম্মু হঠাৎই ফোন দিয়ে এখানে ডাকাইলা??
— কিছু নারে মা তোদের আর অরিকদের ওয়ালিমার আলোচনা করছিলাম আকলিমার কথা শুনে ওয়াসিমা কিছু বলল না।
মুরুব্বিরা সবাই আবার নিজেদের কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সেই ফাকে আবসার একপলক সবার দিকে তাকিয়ে চলে যায় নিজের বরাদ্দ করা রুমে। ওয়াসিমাও আবসারের পিছু পিছু ঘরে যায়।
যেয়ে দেখে আবসার বারান্দায় গ্রিলে হাত রেখে একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াসিমা কিছু না বলে আস্তে করে স্বামীর বক্ষে মিশে যায়।
আবসার জড়িয়ে ধরে ওয়াসিমাকে চোখ বন্ধ করে প্রশান্তি অনুভব করে। এই মেয়েটাকে কিছু বলতে হয় না তার প্রত্যেকটা মুভমেন্টের উপর তার কড়া নজর রয়েছে।
______________________
বিয়ের সাজে সেজেছে সাখাওয়াত বাড়ি। এতো আয়োজনের কারণ বাড়ির পুত্র বধূর বরণ উদ্দেশ্যে। গতকাল আয়মান আর ভেনিসা এসেছে বাংলাদেশ এবং দুই দিন পর তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে।
— বড় বউ সব মেহমাদের কাছে কার্ড পৌছে গেছে
— জ্বি আম্মা
— আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের লোকজন কখন আসবে। বাড়ির ভিতরে সাজাতে হবে না শুধু বাইরে সাজালে হবে!
— আম্মা ওরা কাল সকালেই এসে নিজেদের কাজ শুরু করবে।
— হ্যা সাখাওয়াত বাড়ির উত্তরাধিকারের বিয়ে সেখানে কোনো প্রকার ক্রুটি চাইনা আমি বলেই লাঠি হাতে ঠকঠক পায়ে চলে যায়।
আলিয়া সাখাওয়াত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে মানতে পারছে না ঐ বিদেশীনিকে। কিন্তু ছেলে আর শাশুড়ির বিরুদ্ধে যাওয়ার উপায় তার কাছে নেই। ভেনিসাকে না মেনে নিলে তার ছেলে হারাতে হবে। সেই ভয়ে না চাইতে সব করতে হচ্ছে।
কালকে তার বাপের বাড়ির লোকজন আসবে তখন কি হব তার বোনের মেয়ের সাথে। সে এতো কিছু করতে চায়নি কারণ তার বোনের মেয়ে লিমা একপ্রকার পাগল আয়মানের জন্য এখন সে যদি এসে শুনে আয়মান বিয়ে করেছে তখন কি তান্ডব যে করে সেটা ভেবেই তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
— মিনু এককাপ চা দিস তো ( বাড়ির কাজের বুয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল আলিয়ার ভাই তারেক ও তার স্ত্রী বসে পড়ে
— কি ভাবছিস আপা
— হু কিছু না বড় আপা কাল আসবেরে
— হ্যা আপা আমি তো তাই জানি। প্রথমে আপা আসতে চায়নি কিন্তু পরে আবার রাজি হয়ে গেলো সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না।
আলিয়া সাখাওয়াত তার ভাই তারেকের কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পরে।
তার চিন্তিত মুখ দেখে তারেকের স্ত্রী তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল
— এতো ভাববেন না আপা এতে তো আপনার দোষ নেই ছেলে নিজের পছন্দে বিয়ে করলে আপনার কিছুই করার নেই তাইনা।
তার কথা শুনে আলিয়া সাখাওয়াত কিছু না বলে উঠে চলে যায় নিজের ঘরে।
#চলবে