#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৪
সকাল সকাল মায়ের ডাকে আরুর ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে সকাল ছয়টা বাজে। বিরক্ত হলো আরু বিরক্ত স্বরেই বলল
— কি হয়েছে মা এতো সকাল সকাল ডাকছ কেনো
— বাসায় চল এখানে আর এক মূহুর্ত না ( গম্ভীর কন্ঠে বলল তানিয়া সাখাওয়াত )
— কেনো আর হঠাৎই বা এতো সকালে যাব কেনো কি হয়েছে
তানিয়া কোনো কথা না বলে আরুকে উঠিয়ে ওয়াশরুমে পাঠায় ফ্রেশ হতে। কিছুক্ষণ পরে আরু বেড়িয়ে আসতে তানিয়া নিজেই তোয়ালে দিয়ে তার মুখ মুছে তোয়ালেটা ফেলে আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে গেটের কাছে নিয়ে যায়।
আরু যেতে যেতে পুরো ফ্ল্যাটে নজর বুলায় কাউকে দেখতে পারছে না। এমনিতে শুক্রবার সবাই একটু দেরিতে ওঠে তাই এখন কাউকে আশা কারাটাও বোকামি বই কিছু না।
আরুরা বেড়িয়ে যেতে ঘর থেকে বের হয় ওয়াসিমা।
_________________
সকাল সকাল আরুদের বাসায়। আয়োজনের ধুম পরেছে দিলরুবা সাখাওয়াত নাস্তা সেরেই চলে এসেছেন সাথে এজাজ সাখাওয়াত। এজাজ সাখাওয়াত এসেই ভাইয়ের সাথে কাজে হাত মিলায়। বিয়েটা যতই ঘরোয়া ভাবে হোক তাদের ও তো কিছু কর্তব্য আছে কিছু কাছের আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়েছে আরুর মামা বাড়ির থেকেও লোকজন এসেছে।
সব মিলিয়ে সকাল দশটার মধ্যেই আরুদের বাসায় হুলস্থুল কান্ড বয়ে চলছে। তবে এইসবের মাঝে আরুর মনে ঝড় উঠছে কারণ বাসায় আয়োজন দেখে সে বুঝেছে আজকে তার বিয়ে,,,
সে দ্রুত ফোন নিয়ে ঘরে যায় কল লাগায় ওয়াসিমাকে। অনেক্ষণ ধরে ওয়াসিমাকে অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু ফোন ধরার কোনো নাম গন্ধ নেই
— প্লিজ ভাবী পিক আপ দ্যা ফোন বলতে বলতে ফোন করছে আর পাইচারি করছে। কিন্তু তার কাজে বিগ্ন ঘটাতে আগমন ঘটে তার মামাতো বোন তানহার
-” কি আপ্পি বিয়ের কনে ফোন নিয়ে বসে আছো বলেই আরুর হাতের ফোনটা কেড়ে নেয়।
— তানু ফোনটা দে বলছি আমি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছি বলেই ফোনটা নিতে গেলে তানহা হাত সরিয়ে ফেলে। এভাবে ফোন কাড়াকাড়ির মধ্যে তানিয়া সাখাওয়াত ও আরুর মামি ঘরে প্রবেশ করে। আরুকে একটা শাড়ি দিয়ে আরুকে বলল — এটা পরে পাচঁ মিনিটের মধ্যে রেডি হও,,
আরু কিছু বলতে নিলেই তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে তিনি গম্ভীর স্বরে বলল — এখন কোনো কথা শুনব না তোমার বাবার মান সম্মানের ব্যাপার। আর বাকিটা তুমি চিন্তা করো!
চলে যায় তারা। আরু শাড়িটার দিকে তাকায় শাড়ি সহ প্রয়োজনীয় সব জিনিস আছে,,
— এই আপ্পি তাড়াতাড়ি রেডি হও হলুদের সময় হচ্ছে তো।
তানহার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গে আরুর সে আর কিছু না বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। শাড়িটা পরে বেড়িয়ে আসতে তানহা তাকে হালকা সাজিয়ে দেয়। তার কিছুক্ষণ পরেই তাকে হলুদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। তবে যাওয়ার পথে ওয়াসিমাকে দেখে সেদিকে যেতে নিলে তানহা যেতে দেয় না। সে টেনে তাকে ছাদের অন্য প্রান্তে নিয়ে যায় যেখানে ছোট করে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।
— কংগ্রাচুলেশন আপু ( আরুর গালে হলুদ ছোয়াতে ছোয়াতে বলল ওয়াসিমা )
— ভাবী আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে আরু ওয়াসিমার হাত ধরে বলল
-” হ্যা সব কথাই হবে পরে আপাদত আমার অনেক কাজ আছে। ওয়াসিমাকে কোথা থেকে ডাক দিলে সে সেখান থেকে চলে গেছে। আরু একরাশ হতাশা নিয়ে বসে থাকে
_________________
আরুকে হলুদ দিয়েই ওয়াসিমা চলে যায় তাদের বাসায় এই দিকে অনেক মানুষ থাকলেও। তাদের বাসায় কেউ নেই শুধু তার আম্মু আর তার বড় খালা তার নানার বাড়ির থেকে দাদার বাড়ির থেকে কেউ আসেনি। সবাইকে বলা হয়েছে হঠাৎই শর্ট নোটিশে দাওয়াত দেওয়ায় কেউ আসতে পারে নি। তাই তারা ওয়াদা করেছে ওয়ালিমার সময় তারা আবার করে সব অনুষ্ঠান করবে
বাদ জুম্মা বিয়ের কার্যক্রম শুরু হবে তাই সবাই আযানের সাথে সাথেই বেড়িয়ে পরে।
— কিরে শা*লা বিয়ে করবি একটু হাসবি তো
-” আমি তোর মতো না যে থ্রেট দিয়ে বিয়ে করব আর আমার বোন যতটা শান্ত তোর বোন ততটা না সে তো জানেনা যে বিয়েটা আমার সাথে হচ্ছে। যদি জানে তাহলে আমাকে কি যে করবে
-” কি আর করবি বাসর রাতে বিড়াল না মেরে বউয়ের হাতে দুই চারটা কিল ঘুসি খাবি। আবসারের কথা শেষ হতেই পিছন থেকে ইরফান বলল — অসভ্য ছেলে এই আকলিমা এই ছেলেকে চুপ করতে বলোতো এখানে যে শশুর শাশুড়িরা বসে আছে সে চিন্তা কি আছে??
— শশুর আব্বা বিয়ে সবাই করেছে বাসর সবাই করেছে আপনি এতো রিয়্যাক্ট করছেন কেনো ( অরিকের দিকে তাকিয়ে চোখ মারে। অরিক শশুর জামাইয়ের যুদ্ধে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে,, সব সময় সবাই বউ শাশুড়ির যুদ্ধ দেখেছে আর তারা শশুর জামাইয়ের যুদ্ধ দেখে ইরফান রহমান যেমন আবসারের কথা শুনে ক্ষেপে যায়। আবসারও তেমন আরো ইরফান রহমানকে রাগিয়ে আরো মজা পায়।
_________________
আরু পাথরের মতো শক্ত হয়ে বসে আছে। সামনে কাজী সাহেব সহ আরো কিছু সাক্ষী দাড়ানো অনেক্ষণ ধরে তাকে কবুল বলার জন্য বলা হচ্ছে কিন্তু সে মুখে দিয়ে এখন পযর্ন্ত একটা শব্দ উচ্চারণ করেনি।
পাশ থেকে এহসান সাখাওয়াত হাতে চাপ দিলেই। বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে কোনো রকম কবুল শব্দটা উচ্চারণ করে।
— আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠল সবাই একসাথে আরুর কান্নার জোর আরো বেশী হলো।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করেই বিদায়ের তোড়জোড় শুরু করা হলো। আরুর সেই যে কান্নাকাটি শুরু হয়েছে এখনো থামে নি তার সাথে তানিয়া সাখাওয়াত ও আলিয়া সাখাওয়াতও যোগ দিয়েছে আরু কান্না করতে করতে দিলরুবা সাখাওয়াতের সামনে দাড়ায়।
দিলরুবা সাখাওয়াত কিছু না বলে শুধু তার মাথায় হাত বুলায়। আরু এতো কান্নার মাঝেও অবাক নয়নে তাকায় তার দাদীর দিকে। এই প্রথম দিলরুবা সাখাওয়াত আরু মাথায় স্নেহের পরশে হাত বুলায়।
অবশেষে বিদায় নিয়ে আরু চলল শশুর বাড়ি নিজের দুঃখের জন্য তার পাশে বসা স্বামীর দিকেও তাকায় নি। আরুর এই নিরবুদ্ধিতায় বিরক্ত মনে মনে আরুকে আহাম্মক বলে আক্ষায়িত করল।
বিকাল পাচঁটার মধ্যেই তারা পৌছে যায় বাসায়। আর নির্বোধ আরু নিজের দুঃখে এতোটাই ভেসে রয়েছে চেনা বাসাটাও চিনতে পারছে না।
আরুর এই নির্বোধের মতো কাজের ফয়দা লুটল ওয়াসিমা সে তার আম্মুকে মানা করে দিলো আরুকে বরণ করতে সে তার খালামনিকে দিয়ে আরুকে বরণ করে।
ওয়াসিমার খালা যখন আরুকে বরণ করে তখন আরু আরো জোরে কান্না করা শুরু করে। আরুর এই মরা কান্নায় সবাই মিটমিট করে হাসলেও বিরক্ত লাগছে অরিকের সে গগন কাপানো এক ঝাড়ি দেয় আরুকে
— কখন থেকে দেখছি মরা কান্না শুরু করেছ এখানে কেউ মরেছে নাকি। আম্মু এই আহাম্মকে ওদের বাড়িতে পাঠিয়ে দাও বলেই হনহন পায়ে ভিতরে চলে যায়।
— কি ভাবী সাহেবা কেমন লাগল সারপ্রাইজ আরুকে এক সাইডে জড়িয়ে ধরে বলল
আর আরু হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার হতবাক দৃষ্টি দেখে আকলিমা এগিয়ে আসে
-“- কি আম্মু আমাদের ছোট্ট নতুন সংসারটা কি তোমার পছন্দ হয় নাই। ভিতরে আসছ না যে
আরু কিছু না বলে ওয়াসিমার হাত ধরে ধীর পায়ে প্রবেশ করে।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৫
বাসর ঘরে বসে আছে আরু। উহু ঘরটা বাসর ঘরও বলা চলে না কারণ ঘরে ফুলের ছিটেফোটা নাই। ছিমছাম ঘর মাঝারী সাইজের ঘরে প্রয়োজনী সকল ফার্নিচার রাখা আছে।
সামনের দেয়ালে টানানো দেয়াল ঘড়ির দিকে নজর পরল। ঘড়িতে এখারোটা বেজে দশ মিনিট
আরুর চিন্তা হলো অরিক এখনো আসছে না কেনো। সেই যে তাকে রেখে গেলো তারপর ফ্রেশ হয়ে আবসারের সাথে গেছে কারখানায় কি যেনো কাজ পড়ে গেছে তাই।
অরিক যাওয়ার পর আরুর সময়টা বেশ ভালোই কাটে ভারী বেনারসি ছেড়ে হালকা মনিপুরি তাতের একটা শাড়ি পরে নেয়। তবে সন্ধ্যাটা তার বেশ ভালোই কাটে বাবা মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে। ওয়াসিমা ও আকলিমার সাথে মাগরিবের নামাজ পরে। আকলিমা বেগম সন্ধ্যার হালকা নাশতা বানায় সেগুলো চায়ের সাথে উপভোগ করা। সব মিলিয়ে ভালোই যায় সময়টা রাত দশটার দিকে যখন আবসার আসে তখন ওয়াসিমা আরুকে হালকা সাজিয়ে ঘরে পৌছে দিয়ে চলে যায়।
তার বাসর ধরার ইচ্ছা থাকলেও কিছু করার নেই সে জানে তার ভাইয়ের বর্তমান মনে অবস্থা ভালো নেই।
________________
ওয়াসিমা ঘরে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে যায় খাটটা ফুল দিয়ে সাজানো। কোনো কৃত্রিম আলো জালায়নি। চারিদিকে সুগন্ধি মোম বাতির আলোয় বেশ ভালো আলোকিত হয়ে আছে,,
এই হালকা আলোতেই ঘরটা বেশ সুন্দর লাগছে। ফুলের আর মোম বাতির গ্রান মিশে অদ্ভুত একটা গ্রান তৈরী হয়েছে। যা এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলছে।
ওয়াসিমার পুরো ঘর দেখার ফাকে কখন যে আবসার রুমে প্রবেশ করে টের পায়না ওয়াসিমা।
আবসারের পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে তার ঘোর ভাঙ্গে। কিন্তু ইরফানের ভাষ্য মতে অসভ্য বেয়াদব আবসার কি থেমে থাকে??
তার হাত গলিয়ে দেয় ওয়াসিমার শাড়ি ভেদ করে উন্মুক্ত উদরে।
বিয়ের দুই মাস পরেও ওয়াসিমা আবসারের ছোয়ায় নুয়ে পরে লাজুকপাতার মতো। অসভ্য আবসার তা টের পেয়েও আরো এলোমেলো ছোয়া দিতে থাকে ওয়াসিমাকে। ওয়াসিমার কন্ঠনালী ভেদ করে কোনো কথা বের হয় না আবেশে সে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
-” বিয়ের পর বাসর কথা হয়নি আজ জমিয়ে বাসর করব
আবসার ফিসফিসিয়ে কথা শুনে তড়াক করে চোখ খুলে তাকিয়ে সামনে ফিরে। আবসারের দুই কাধে হাত রেখে বলল — মানে আপনি কি বলছেন
— হু বিয়ের পর এরকম ফুলের সাজানো ঘরে বাসর করা হয়নি আজকে তোর ভাইয়ের বাসর ঘর দেখে আমারও বাসর করার ইচ্ছা জাগল।
তবে আমি বিড়াল কিন্তু আগেই মেরেছি কি বলিস ( চোখ মেরে বলে )
“- ছি নির্লজ্জ চুপ থাকেন। ওয়াসিমা লজ্জায় হাসফাস করতে করতে বলে
-” এই যে তোর লাজুক রাঙ্গা আদল আমাকে ঠিক থাকতে দেয় না। বলেই ওয়াসিমাকে কোলে তুলে ধীর পায়ে বেডের কাছে যায়। তাকে আলতো করে শুয়ে দিয়ে নিজের পুরো ভার ছেড়ে দেয় ওয়াসিমার উপর গলদেশে মুখ ডুবিয়ে দিতেই আবসার চুল খামচে ধরে ওয়াসিমা। সেখান মুখ উঠিয়ে। অধর জোড়া মিলিতে করে তাল মেলায় ওয়াসিমা সেও তো স্বামীর ভালোবাসা নিতে উন্মুখ।
__________________
ঘড়ির কাটা বারোটার ঘরে যেতে অরিক ঘরে ঢোকে। খাটে বসা আরু দিকে একপলক তাকিয়ে ওয়ারড্রোব থেকে কাপড় নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। আরু তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। একটু পর অরিক বের হয়ে আলমারি থেকে একটা চাদর নিয়ে খাটের পাশে যায় আরু তখনও ভাবছে এই বুঝি অরিক তার সাথে কথা বলবে কিন্তু অরিক তাকে কিছু না বলে চুপচাপ একটা বালিশ নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
ঝকঝকে বারান্দার ফ্লোরে চাদর খানা বিছিয়ে বালিশ রেখে শুয়ে পরে অরিক। ভিতর থেকে সবই দেখে আরু। তার কান্না আসছে ঠোট কামড়ে কান্না আটকে বারান্দার দরজার সামনে দাড়ায়
— তুমি ঘরে যাও খাটে ঘুমিয়ে পড় আমি এখানে ঘুমাব। আমার সাথে যেহুতু এক বিছানায় থাকতে তোমার সমস্যা
— আপনি খাটেই ঘুমান আমি এখানেই ঠিক আছি। আপনি বড় ঘরের মেয়ে ফ্লোরে শোয়ার মতো অভ্যাস নেই তাইনা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
আরু বসে ঝাপিয়ে পড়ে অরিকের বুকে — তুমি যতবার বলবে ততোবার মাফ চাইব। তুমি চাইলে তোমার পা ধরে মাফ চাইব তারপরও আমার সাথে এরকম করো না আমি প্রতিনিয়ত জ্বলছি। এই জ্বলন সহ্য হয়না
হঠাৎই আরুর কর্মকাণ্ডে ভরকে যায় অরিক। আরুকে ধরতে নিয়ে ধরে না
— যে অন্যকে জ্বালায় তার তো জ্বলার কথা না সে নিজেই তো অনল,,
— ঐ সময় শুধু আমার মাথায় ভাইয়ে কথাই এসেছে আমি দিগবেদিকে শুণ্য হয়ে আমার ভাইকে পারিবারিক একটু সুখ দিতে উঠে পরে লেগেছিলাম
— তাই আমাদের ভালোবাসার বলিদান দিলে। এই তখন তোর মাথায় এটা ছিলো না যে ঐ পরিবারের আবসার ফিরবে কিনা আর তুই আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর আমার কি পরিণতি হতে পারে একবার ভেবে দেখেছিলি।
( আরুর কথা মাঝেই অরিক তার বাহু ধরে তার মুখের সামনে এনে শক্ত কন্ঠে বলল )
— যাই হোক তোর যা মনে হয় তুই তাই করছিস এখন কইফিয়ত কেনো দিচ্ছিস। চাই না তোর কইফিয়ত বলেই আরুকে হালকা ধাক্কায় ছেড়ে দেয়।
আরু সেখানে বসেই কান্না করতে থাকে। অরিকের ধাক্কায় থাইয়ের সাথে লাগে কপালে ব্যাথা পেলেও সেটা আমলে নেয় না। বতর্মানে তার শারীরিক ব্যাথার চেয়ে মনের ব্যাথাটাই বেশী।
আরুর কান্না শুনে অরিকের মনে তুফান বইছে সে চাইছে আরুকে ঝাপটে ধরে বুকের মধ্যে চেপে কান্না থামাতে কিন্তু কোথাও এক মন বাধা দিচ্ছে সে বলছে — না অরিক এই মেয়েটা তোকে সর্বোচ্চ কষ্ট দিয়েছে তাকে এতো সহজে ক্ষমা করবি না।
আবার অন্য মন বলছে — ভালোবাসার মানুষকে যদি ক্ষমাই না করতে পারো তাহলে কিসের ভালোবাসলে ” অরিক শেম অন ইউর লাভ ”
অরিক দুই সত্তার চাপাচাপিতে দ্বিতীয় সত্তার কথাই শুনল -” সত্যিই তো ভালোবাসার মানুষকে ক্ষমা যদি নাই করতে পারো তাহলে কিসের ভালোবাসা। আর যদি সে অনুতপ্ত হয় তাহলে তো আরো দ্রুত ক্ষমা করা উচিৎ।
অরিক কিছু না বলে ক্রন্দনরত আরুকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলায়। স্বামীর আহ্লাদ পেয়ে আরু আরো আহ্লাদী হয় অরিকে টিশার্ট খামচে ধরে ডুকরে কেদে ওঠে অরিকের বুকে আরো মুখ গুজে
অরিক আরু মুখ উঠায় বুকের কাছ থেকে চোখের পানি মুছে কপালে দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খায়।
— শুসস কাদে না আরু পাখি। আমি রেগে ছিলাম না অভিমান করে ছিলাম তুমি যদি এসে একটি বার ভালোবার দাবী নিয়ে দাড়াতে আর সব অভিমান গায়েব হয়ে যেতো।
অরিকের কথা শুনে আরো জোড়ে কান্না করে দেয় আরু। মনে মনে ভাবে -” এই লোকটা এতো ভালো কেনো তাকে এতো ভালোবাসে কেন। এতো সহজে তার ভুল গুলো ক্ষমা করে দিলো। কাদতে কাদতে যে কখন ঘুমিয়ে গেলো সে নিজেও টের পেলো না।
বুকে ঘন ঘন নিঃশ্বাস পরতেই অরিক বুঝতে পারে আরু ঘুমিয়ে গেছে। সেভাবেই ঘুমন্ত আরুকে কোলে তুলে নেয়। বিছানায় শুয়িয়ে শরতে নিলেই আরু তার টিশার্ট খামছে ধরে অরিক ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারে না। কথায় আছে না ঘুমিয়ে থাকা মানুষকে জাগিয়ে দেওয়া যায়। জাগিয়ে থাকা মানুষকে নয়। অগত্যা অরিক উপায় না পেয়ে সেই বালিশেই আরুকে বুকে জড়িয়ে পাড়ি দেয় ঘুমের দেশে। অরিকে অলক্ষ্যে আরুর ঠোটের কোণে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি।
#চলবে
#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_২৬
কেটে গেছে দুই মাস আজকে ওয়াসিমার মেডিক্যাল এন্ট্রান্স এক্সাম। তাইতো সকাল থেকেই সবাই তাদের ফ্ল্যাটে হাজির।
বারোটার দিকে পরীক্ষা তাই দশটার দিকেই বের হয়ে যাবে।
আরুও আই এল টি এস পড়াটা বাদ দিয়ে দিয়েছে। অরিক অনেকবার না করেছে তার সাফ কথা — তোমার যেটা করতে মনে চায় সেটাই করো আমার বা আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না।
আরু নিজের ইচ্ছাতেই উচ্চ শিক্ষার জন্য বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই সে পরিস্থিতির থেকে দূরে যাওয়ার জন্যই সেখানে যেতে চেয়েছিল এখন তার প্রয়োজন নেই। তাই সে মাষ্টার্সে ভর্তি হয়েছে পাশাপাশি ঘরে বসেই টুকটাক বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাতে তানিয়া ও এহসান সাখাওয়াত ও সমর্থন দিয়েছে।
___________________
— এই ওয়াসু আর কতক্ষণ মা
— এই তো আম্মু রেডি হিজাবের পিন লাগাতে লাগাতে বলল ওয়াসিমা
— চল ( একসাথে তিনজন বলল )
ওয়াসিমা বাবা, স্বামী ও ভাইয়ের দিকে তাকায়।
— তোমরা সবাই যাবা
— হ্যা আম্মা কোনো সমস্যা
ইরফান ভ্রু কুচকে বলল
— না আব্বু কোনো সমস্যা নেই কিন্তু একজনের সাথে এতোজন গেলে কেমন দেখায় না ( বোকা হেসে বলল ওয়াসিমা )
— কিন্তু আম্মাজান তুমি তো জানো তোমার প্রত্যেক পরীক্ষার প্রথম দিন আমি তোমাকে দিয়ে আসি
আড়চোখে আবসারের দিকে তাকিয়ে বলল ইরফান।
— প্রত্যেক পরীক্ষায় গিয়েছেন এবার যাওয়া লাগবে না আমি নিয়ে যাচ্ছি ( শশুরের কথার প্রতিবাদ করে বলল আবসার )
-“- প্রত্যেক বার আমি যাই এই বারও আমি যাব ( ওয়াসিমার হাত ধরে বলল )
আবসার ও কম যায়না সে ওয়াসিমার অপর হাত ধর বলল — এবার আমিই নিয়ে যাব দেখি আপনি কিভাবে আটকান। বলেই ওয়াসিমাকে নিজের দিকে টান দেয় ইরফান ও ত্যাড়ামি করে বলল -” নিয়ে যাব তো আমিই
— আমি
— না আমি
দুইজনের টানাটানিতে ওয়াসিমার মনে হচ্ছে হাত জোড়া ছিরে পড়ে যাবে সে করুন নয়নে অরিকের দিকে তাকায় যার অর্থ -” ভাই আমাকে বাচাও ”
— চুপ চুপ চুপ একদম চুপ তোমাদের কারোই নেওয়া লাগবে না আমি ভাইয়ের সাথে চলে যাচ্ছি বলেই জোর করে তার হাতে ছাড়িয়ে অরিকের হাত ধরে হনহন করে চলে যায়।
— আম্মাজান দাড়াও আমি আসছি বলেই ইরফান পিছনে পিছনে যায়। তার পিছনে আবসার ও দৌড় মারে।
এতক্ষণ ঘরে থাকা সবাই তাদের শশুর জামাইয়ের দিকে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। গম্ভীর আবসার যে কারো সাথে এরকম ঝগড়া করতে পারে তা এহসান ও তানিয়া সাখাওয়াত জানত না। কিন্তু আরু আর আকলিমাকে দেখে মনে হচ্ছে এগুলো তাদের কাছে নতুন না। আকলিমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রান্নাঘরে যায়,, সকালে মেয়েটা কিছু মুখে দেয়নি তাই আবসারও মুখে দেয়নি। আকলিমা জানে পরীক্ষা দিয়ে এসেই খাওয়া খাওয়া করে পাগল করে ফেলবে। তাই দ্রুত রান্না চাপায়।
— এই আরু এই কোন আবসার কে দেখলাম
— এটাই সত্যি মা আমিও প্রথমে অবাক হয়েছিলাম পরে বুঝতে পারি এই শশুর জামাইয়ের সম্পর্ক সাপে নেউলে তারা একে অপরের সাথে মিলে মিশে থাকতে পারে না প্রতিদিন ভাবীর জন্য তাদের দুইজনের মধ্যে খুটিনাটি লাগতে থাকেই। তা আমরা সবাই উপভোগ করি আম্মু যাও আটকাতে যায় তোমার জামাই তো আরো এককাঠি উপরে সে তাকে আটকাতে দেয় না। আরু হাসতে হাসতে জবাব দেয়।
আরুর কথা শুনে তানিয়া ও এহসান সাখাওয়াতের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে। তারা বুঝতে পারে তাদের ছেলে মেয়ে দুটো আল্লাহর রহমতে ভালোই আছে।
______________________
সকাল সকাল সাখাওয়াত বাড়িতে সবাই নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে। সবাই চুপচাপ এর মধ্যেই এজাজ সাখাওয়াত মুখ খুলল
— আয়মান তুমি দেশে এসেছো আজ দুইমাস এখন পযর্ন্ত অফিস জয়েন করছো না কেনো
— ওহ পাপা আমি এখন কোনো অফিস টফিস জয়েন করতে পারব না। আর আমার এ দেশে থাকার কোনো ইচ্ছাই নেই আমি তো মমকে বলেও দিয়েছি আমি আবার অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাব ( বিরক্ত সহকারে বলল আয়মান )
আয়মানের কথা শুনে এজাজ সাখাওয়াত অবাক দৃষ্টিতে তাকায় আলিয়া সাখাওয়াতের দিকে।
আলিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে তাদের কথা শুনে দিলরুবা সাখাওয়াত হাসে কিছু বলে না।
— কেনো দাদু ভাই বাংলাদেশ কি ভালো লাগছে না আর তুমিই তো সাখাওয়াত গ্রুপ অব কোম্পানির একমাত্র উত্তরাধিকার তুমি ছাড়া কে দেখাশোনা করবে এসব।
— না দাদুম আমি সেখানে ভেনিসাকে রেখে এসেছি। তাকে সেখানে রেখে আমার বাংলাদেশে থাকা পসিবল না।
— প্রয়োজন পরলে তাকেও নিয়ে আসো
— সত্যি দাদুম
উচ্ছ্বাস স্বরে বলে আয়মান। দিলরুবা সাখাওয়াত মাথা নাড়ায়। দুই দাদি নাতির কথা শুনে এজাজ ও আলিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
— আমু তুই বিয়ে করেছিস। আর আম্মা আপনিও জানতেন
— ইয়েস মম এতো অবাক হওয়ার কি আছে। আর দাদুমকে আমি কাল বলেছি তাই কেউ জানত না
আয়মানের খাওয়া শেষ হতেই সে উঠে যায়।
আয়মানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আলিয়া শাশুড়িকে প্রশ্ন করল — আম্মা আপনি সব জেনেও কিছু বলেননি কেনো??
— তোমার কানে হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে বড় বউমা একটু আগেই তো দাদুভাই বলল আমাকে কালই সব জানিয়েছে
— না আম্মা আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না আপনার কথা আমি বুঝতে পেরেছি আপনি শুরু থেকেই সব জানতেন
আলিয়ার কথার মাঝখানে এজাজ বাধা দিয়ে বলল — আলিয়া মুখ সামলে কথা বলো আম্মা বলছে না সে কিছু জানত না আগে থেকে
— না এজাজ আম্মা আগে থেকেই সব জানতো আম্মাকে বলতে বলো ঝাঝিয়ে বলল আলিয়া।
— যদি আগে থেকেই সব জানি তো তুমি কি করবে আমাকে কিচ্ছু করতে পারবে না।
বলেই হাসি দিয়ে চলে গেলো তার হাসিতে তাচ্ছিল্য নাকি উপহাস বুঝা গেলো না। দিলরুবা সাখাওয়াত নিজের ঘরে চলে গেলো এজাজ সাখাওয়াত ও নিজের কাজে চলে গেলো। তবে আলিয়া সাখাওয়াত নিজের স্থানে স্থির ভাবে দাড়িয়ে আছে সে বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে। সেতো তার বোনকে কথা দিয়ে রেখেছে তার আয়মানের জন্য তার বোনের মেয়ে লিমাকে আনবে।
— আপা এখন কি করবি। তুই তো লিমার বাইরে সেটেলড হওয়ার ইচ্ছা দেখে আয়মানকেও বাইরে যাওয়ার কথায় রাজি হয়েছিলি। এখন বড় আপাকে কি বলবি
— জানিনা আমি কিচ্ছু জানি না ভাই বড় আপা লিমাকে নিয়ে কাল আসছে বলেই চেয়ারে বসে পড়ে মাথায় হাত দিয়ে।
_____________________
পরীক্ষার হল থেকে বের হতেই পিছন থেকে কেউ ডাক দিলো ওয়াসিমাকে। পিছন থেকে ডাক দেয়ায় বিরক্ত হলো ওয়াসিমা পিছনে ফিরে দেখে তার কোচিংয়ের ফাহাদ স্যার। সে খুব একটা ক্লাস নিতো না সপ্তাহে একটা ক্লাস নিতো। হঠাত তাকে ডাক দেওয়ায় অবাকই হয় বইকি
— আপনার এক্সাম কেমন হয়েছে মিস ওয়াসিমা
— মিস না স্যার মিসেস ওয়াসিমা হবে। আর পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো হয়েছে।
— ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পাবে তো
-“- সেটা আল্লাহ্ ভরসা স্যার এখন আমি আসি বলেই পিছন ফিরতে দেখে আবাসার অগ্নি চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াসিমার পিছনে থাকা ফাহাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াসিমার হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়ে যায়।
ওয়াসিমা ব্যাথা পেলেও কিছু বলে না চুপ করে থাকে।
— কি বলছিলো ঐ লোকটা
মাঠের এককোণে ফাকা জায়গাই দাড় করিয়ে বলল -” কি জিজ্ঞেস করেছিল ঐ লোকটা
— সে আমাদের কোচিংয়ের স্যার পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চেয়েছিল ( ছলছল চোখে বলল )
ওয়াসিমার ছলছল চোখ দেখে আবসারের হুশ আসে সে ওয়াসিমার হাত ছেড়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
#চলবে