বক্ষপিঞ্জিয়ায় তুই বন্দীনি পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
180

#বক্ষপিঞ্জিয়ায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩০

জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে ওয়াসিমা। অবিনস্ত চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে।

রাত এগারোটা আবসার ধীর পায়ে ঘরে ঢুকলে কোথাও ওয়াসিমাকে পায় না। ওয়াশরুমে চেক করলেও দরজা খোলাই পায় বাহির থেকে। চিন্তিত হয় আবসার প্রতিদিন রাতে খাবার টেবিলে বা ড্রয়িং রুমেই বসে থাকে তাহলে আজকে কোথায় গেলো। তাই চিন্তিত স্বরেই ডাকতে থাকল,,,,,,

— ওয়াসু,, ওয়াসু,,

— জ্বী ( বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে )

— কিছু হয়েছে ( ওয়াসিমা মুখ দুই হাতের তালুতে নিয়ে বলল )

— কিছু হয়নি। আপনি কখন আসলেন??

— একটু আগেই কলিং বেল দেইনি। এক্সট্রা চাবি দিয়েই খুলেছি,,,,,,
আবসারের কথা শুনে ওয়াসিমা মাথা নাড়ায়। কোমর ছাড়ানো চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে বলল -” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি খাবার গরম করছি।

আবসার ওয়াসিমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াসিমার শান্ত স্বাভাবিক কন্ঠস্বরে ও যেনো আজকে অস্বাভাবিক ঠেকছে -” কি হয়েছে ভাবতে ভাবতে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।

ফ্রেশ হয়ে খালি গায়ে তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে খাবার টেবিলে বসে আবসার। চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে। ওয়াসিমা কিছু না বলে চুল মুছতে শুরু করে। ওয়াসিমার এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো আবসারের বেশ লাগে। চুল মুছে পাশে বসতেই আবসার ওয়াসিমার মুখের সামনে লোকমা ধরে ওয়াসিমাও বীনা বাক্যে খেয়ে নেয়

দুইজন চুপচাপ খাওয়া শেষ করে। কিন্তু ওয়াসিমা এই নিশ্চুপতা আবসারের মনে ভয় সৃষ্টি করে। প্রতিদিনই তো অফিস থেকে আসলে তোতা পাখির মতো সারাদিনের সব কথা উগরে দেয়। আজ কি হয়েছে???

ওয়াসিমা টেবিল গুছানো শুরু করলে আবসারও হাতে হাতে সব এগিয়ে দেয়। প্রতিদিন ওয়াসিমা বাধা দিলেও আজ কিছুই বলল না। বেশ অবাক হয় আবসার।
ঘরে ঢুকে আবসার ওয়াশরুমে ঢুকলে ওয়াসিমা শুয়ে পরে

— কি হয়েছে বউ পাখির ( ওয়াসিমাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে বলল )

— কিছুনা আপনি সারাদিন অফিস করে এসেছেন ক্লান্ত নিশ্চয়ই ঘুমান।

— ঘুমাব তো অবশ্যই তুই আগে বল কি হয়েছে ( ওয়াসিমাকে জোড় করে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল )

— জুলিয়ানা মার্টিন কে। উনার সাথে আপনার সম্পর্ক কি??

— তুই মিস জুলিয়ানার কথা কিভাবে জানলি ( অবাক স্বরেই বলল )

— কিভাবে জেনেছি সেটা বিষয় না। উনি কে?? সেটা বিষয় ( দৃঢ় স্বরে বলল ওয়াসিমা )

ওয়াসিমার দৃঢ় স্বর শুনে যারপরনাই অবাক আবসার। এই ওয়াসিমাকে সে চিনেনা। তার ওয়াসিমা তো কোমলমতি নম্র ভদ্র।

— তুই কি জানতে চাস ( শোয়া থেকে আবসার উঠে ওয়াসিমাকেও উঠায় )

— অবৈধ সম্পর্ক হারাম। আপনার যদি তাকে ভালো লাগে তাহলে এরুপ অবৈধভাবে মেলামেশা না করে। তাকে বিয়ে করে ফেলেন আমি আপনাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিলাম আর যদি তাতেও না হয় তাহলে তালাকের ব‍্যব,,,,,,
আর কিছু বলতে পারল না তার আগেই — ঠাসসস করে থাপ্পরের শব্দ পাওয়া যায়।

থাপ্পড়ের চোটে ওয়াসিমা বসা থেকে পড়ে যায়

— অনেক বড় কথা বলে ফেলেছিস। কোনো কিছু না জেনে না বুঝে কিছু বলা তোর উচিৎ হয়নি ( ওয়াসিমার বাহু চেপে হিসহিসিয়ে কথা গুলো বলে ঘর বের হয়ে যায় )

ওয়াসিমা সেখানেই শুয়ে কান্না করে দেয়।
কোনো অচেনা অজানা মেয়ে এসে যদি তার কাছে তার স্বামীর দাবি করে সে কিকরে ঠিক থাকতে পারে।

আজ সকালে আবসার যাওয়ার পর ওয়াসিমা ঘর গুছাচ্ছিল। তখন কলিং বেল বেজে ওঠে ওয়াসিমা ভাবে তার আম্মু এসেছে তাই সে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করেই দরজা খুলে দেয়। তবে সামনে অচেনা কোনো রমনীকে দেখে ভরকে যায় তাকে মৃদু স্বরে সালাম দেয় তবে অপরদিকে থেকে কোনো উত্তর আসে না তাই সে জিজ্ঞেস করে
— কাকে চাই??

— এটা কি আবসারের বাসা ( মেয়েটির ভাঙ্গাচুরা বাংলা শুনে ওয়াসিমা ভ্রু কুচকে তাকায়। আর তার আপাদমস্তক দেখে বুঝতে পারে এই রমনীটি বিদেশীনি )

— জ্বী,, কিন্তু আপনি কে?

— হাই আম জুলিয়ানা মার্টিন। আই অ‍্যাম আবসারস ফিয়‍্যন্সে

— মানে আপনি ওনার কি হোন

— আবসারের সাথে আমার প্রায় দুই বছর ধরে রিলেশন। তার সাথে আমার একটু ঝগড়া হয়েছে তাই সে ফোন রিসিভ করছিল না। তুমি ওকে একটু ডেকে দাওনা।

— উনি বাসায় নেই।

— তুমি আবসারের কি হও??

— ওনার ওয়াইফ

-” মানে আবসার বিয়ে করেছে তাহলে আমার সাথে কেনো এতোদিন নাটক করল ( বলেই কান্নার ভান করল আড়চোখে ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দেয় )

— উনার সাথে যে আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা আমি বিশ্বাস কেনো করব?? ( দুই হাত বুকে বেধে বলল গম্ভীর কন্ঠে বলল )

— হেয়ার ইজ দ‍্যা প্রুফ ( বলেই কিছু ছবি ওয়াসিমার সামনে রাখে। যেখানে আবসার আর জুলিয়ানার বেশ ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি পাওয়া যায় )

— এই ছবির মাধ‍্যমে কিছুই প্রমান হয়না। আপনার যদি সৎ সাহস থাকে তো কালকে সকাল নয়টার মধ‍্যে আসবেন উনাকে পাবেন। এখন আপনি আসতে পারেন ( হাত উচু করে গেটের দিকে দেখিয়ে বলল )

জুলিয়ানা এইটুকু মেয়ের দৃঢ়তা দেখে অবাক সে ভেবেছিল অল্প বয়সী মেয়ে সহজেই কাজ হয়ে যাবে কিন্তু হয় উল্টো। এই পুচকে মেয়ের অপমান সহ‍্য হলোনা তার সে আর কিছু না বলে হনহন করে চলে যায়।
জুলিয়ানা যাওয়ার পর গেট লাগিয়ে। দরজা ঘেসে বসে পরে ওয়াসিমা। একনজরে তাকিয়ে থাকে টি টেবিলে থাকা ছবি গুলোর উপর।

তখন থেকেই মনে ঝড় নিয়ে সারাদিন কোনো রকম পার করে ওয়াসিমা।

__________________

কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে যায় ওয়াসিমা টের পায়না।
হঠাৎই রাত তিনটার দিকে তার ঘুম ভাঙে। ঘুমঘুম চোখে পাশ ফিরে হাতরে আবসারকে খোজে।
হাতরে না পেয়ে তরাক করে চোখ খুলে তাকায় তখন তার রাতের কথা মনে পড়ে যায়।
সে আবার হাটুতে মুখ গুজে কান্না করে দেয়। কান্না করতে করতে তার হঠাত মনে হয় আবসার এখনো বাসায় আসেনি। তাই সে উঠে ফোন নিয়ে আবসারকে ফোন দিতে থাকে।

___________________

ছাদে বসে আছে আবসার । ওয়াসিমার ফোন দেখেও তোলার প্রয়োজন মনে করে না। সে অপেক্ষায় আছে সকাল হওয়ার প্রথমে ঐ জুলিয়ানাকে শিক্ষা দিবে তারপর তার বউ পাখিকে তাকে অবিশ্বাসের ফল ভোগ করতে হবে। ভেবেই আবার ফোনের দিকে তাকায়। ওয়াসিমা অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে কোনো থামাথামি নেই। আবসার ফোন উঠানোর জন‍্য হাত এগিয়ে নিয়েও থেমে যায় — সে ফোন ধরে না

বর্তমানে তার অবস্থা নাজেহাল প্রান প্রিয় বউয়ের কাছে যেতেও পারছেনা। আবার অভিমান নিয়ে থাকতেও পারছেনা। মনটা বট্ট ছটফট করছে ওয়াসিমার কাছে যাওয়ার জন‍্য

এখন তার হুমায়ূন আহমেদের পরিচালিত শ্রাবণ মেঘের দিন ঐ ছবিতে যে সোনার কন‍্যা গান আছে সেটার কিছু লাইন মনে পরছে যেখানে মাহফুজ সাহেব গেয়েছিলেন “” সবুজ বরণ লাউ ডগায় দুধ সাদা ফুল ধরে,,
“” ভুল করা কন‍্যার লাগি মন আনচান করে “”

-” – আমার মন আনচান করে -“-

এখন তারও এরকম তার “-” ভুল কন‍্যার লাগি মন আনচান করছে “-”
সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩১

ভোরের দিকে আবসার যখন ঘরে ঢুকে তখন ওয়াসিমা মাত্র নামাজের সালাম ফিরিয়েছে। ওয়াসিমার দিকে একপলক তাকিয়ে প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে আবার চলে যায়। ওয়াসিমা পিছন থেকে অনেকবার ডাকলেও শুনে না।

ওয়াসিমা আবার হুহু করে কেদে দেয়। সে বুঝতে পারছে না জেনে, না বুঝে সে একটা ভুল করে ফেলেছে। এখন এই রাগী সাহেবের রাগ ভাঙ্গাবে কিভাবে।
সেই চিন্তায় তার মাথা ব‍্যাথার উপক্রম।

____________________

আয়েশী ভঙ্গিতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিলো জুলিয়ানা। হঠাৎই বাহুতে কোনো শক্ত পক্ত হাতের খামচিতে ঘুম হালকা হয়ে গেলো সে ভ্রু কুচকে পিটপিট করে তাকাতেই দেখল। একজন বিশাল দেহী মানবী তার দিকে ঝুকে আছে।
ভয় পেয়ে যায় জুলিয়ানা। হুরমুর করে উঠতে ঐ মানবীর হাতে এক থাপ্পড়ে বিছানা থেকে নিচে পড়ে যায় জুলিয়ানা। ঠোটের কোণটাও কেটে যায়

ঠোটের কোণ চেপে সামনে তাকাতেই দেখে আবসার। চেয়ারে বসে মুচকি হাসছে,,,,,,,

— হাই ( হাত নাড়িয়ে বলল ), অ‍্যা ভেরী গুড মর্নিং মাই লাভলি ফিয়য়‍্যন্সে ( টেনে বলল কথাটা )

আবসারের কথা শুনে ভরকে যায় জুলিয়ানা। সে বুঝতে পারে আবসার সব জানতে পেরেছে তারপরও নিজের সাইড নিয়ে বলল — হোয়াট অ‍্যা ইয়‍্যু সেয়িং এ.এস

— কেনো বুঝতে পারছেন না মিস জুলিয়ানা। আপনার সাথে আমার দুই বছরের রিলেশন আপনি আমার অ‍্যা গ্রেট ফিয়‍্যন্সে তাইনা ( মুখটা বাকিয়ে বলল )
আবসারের কথা শুনে এদিক সেদিক তাকায় জুলিয়ানা দেখে সেই বিশাল দেহী মানবী তার দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে।
আবসার মহিলাটিকে ইশারা করতেই মহিলাটি জুলিয়ানার চুলের মুঠি ধরে আবসারের সামনে আনে। ব‍্যাথায় কুকরে ওঠে

— ওপেন ইয়োর আইস মাই লাভলি ফিয়‍্যন্সে
জুলিয়ানা তাকাতেই দেখে হিংস্র আবসারকে। রাগে কপালের শিরা গুরো দৃশ্যমান

— খুব বড় ঝুকি নিয়ে ফেলেছিস। আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছিস তুই কি ভেবেছিস আমি জানি না যে তুই আমার বাড়িতে গিয়েছিস। আমার ওয়াসুর দিকে হাত বাড়ানো হাতটা কেটে টুকরো টুকরো করতে দুইবার ভাবব না।

— তোমার ওয়াইফ বর্তমানে তোমার উপর অবিশ্বাস করে আছে তাকে কিভাবে মানাবে ( বাকা হেসে বলল )

— আমার বউ আমার চিন্তা তুই নিজের চিন্তা কর,,, ( ভাবলেসহীন ভাবে বলল ) গার্লস টেক হিম এন্ড ট্রিট হিম ওয়েল বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
আবসার রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে ঐ মহিলাটির মতো বিশাল দেহী আরো দুজন মহিলা ঘরে ঢুকে

— প্লিজ লিভ মি! ( পিছাতে পিছাতে বলল )
যেতে যেতে চর থাপ্পড়ের শব্দ পায় আবসার। সাথে জুলিয়ানার গগন কাপানো আর্দনাত।

_____________________

— মিষ্টার এজাজ সাখাওয়াত ( আবসার সাখাওয়াত ভিলার হলে দাড়িয়ে চিল্লিয়ে ডাকে এজাজ সাখাওয়াতকে )
এহসান সাখাওয়াত ও তানিয়া সাখাওয়াতকেও আবসার সাথে নিয়ে এসেছে।

— এটা ভদ্র ফ‍্যামিলির বাড়ি এখানে আওয়াজ উচু নয় নিচু করে কথা বলবে ( সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বলল এজাজ )

— আপনাদের সাথে আর যাই হোক শান্ত ভাবে কথা বলা যায় না

— কি হয়েছে আবসার ( রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আলিয়া সাখাওয়াত জিজ্ঞাসা করে )
আবসার তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার এজাজ সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল -” স্টে অ‍্যাওয়ে ফ্রোম মাই লাইফ এন্ড মাই ওয়াইফ

— যদি না থাকি কি করবে?( দুই হাত বুকে গুজে ছেলের সামনে দাড়িয়ে বলল এজাজ ) সাখাওয়াত বাড়ির বড় ছেলে তুমি তোমাকে সামান্য মধ‍্যবিত্ত মেয়ের সাথে জীবন কাটানোর কোনো প্রয়োজন নেই। মেয়েটাকে ছেড়ে দাও যদি প্রয়োজন হয় তো কিছু টাকা দিয়ে দাও। মিস জুলিয়ানা তোমাকে ভালোবাসে তার সাথে তুমি সুখে থাকবে। ( এজাজ সাখাওয়াতের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। তানিয়া ও এহসান ঘৃনায় মুখ ঘুড়িয়ে নেয় )
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবসার ঘর কাপিয়ে হেসে ওঠে। যেনো এজাজ সাখাওয়াত কোনো সলিড জোক্স বলেছে,,,

— বড় ছেলে হ‍্যা বড় ছেলে। এই বড় ছেলেকে যখন কোনো কিছু যাচাই বাছাই না করে এই আপনি মারতে মারতে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তখন এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো যখন মায়ের অবহেলা পেয়ে একটু আদরের জন‍্য আপনার কাছে গিয়েছিলাম আপনি আমাকে দূর দূর করতেন । কোথায় ছিলো এই টান হ‍্যা যখন ঐ টুকু বয়সে না খেয়ে তিনদিন ট্রেন স্টেশনে বসে ছিলাম। ছ‍্যাহ আপনাদের এই ভালোবাসা থু থু ছিটাই ( বলেই এক খাবলা থু ফ্লোরে ফেলল )
মধ‍্যবিত্ত তাই না ঐ মধ‍্যবিত্ত ফ‍্যামিলির লোকেরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে আমাকে আমার নানা নানির কাছে সেফলি পৌছে দিয়ে তার ছেলে অরিক আমার সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন‍্য আমাকে ডিপ্রেশন থেকে বের করার জন‍্য দিনের পর দিন ঐ অচেনা শহরে ঐ টুকু বয়সে আমার সাথে ছিলো। হ‍্যা কোথায় ছিলো এই টান । ( আবসারের প্রচুর রাগ উঠতেছে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক পায়চারি করল তাও কমছে না উপায় না পেয়ে হাটু ভেঙ্গে ফ্লোরে বসে সর্বশক্তি দিয়ে ফ্লোরে এক ঘুসি মারে হালকা চির ধরে টাইলসে আবার আরেকটি ঘুসি মারতেই টাইলসটা ভেঙ্গে যায় গরগর করে রক্ত বের হয় আবসারের হাত থেকে। হাতটা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়ায় )

— দূরে থাকবেন আমার পরিবারের থেকে। আপনারা আমার কেউ না। ( বলেই হনহন করে বেড়িয়ে যায় সাখাওয়াত ভিলা থেকে এহসান একবার বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আবসারের পিছু পিছু দৌড় দেয় )

আবসারের যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এজাজ সাখাওয়াত। আজকে আবসার তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে চরম সত‍্যিটা বলে দিয়েছে।। হ‍্যা আবসার যা বলেছে তা এক বর্ণ মিথ্যা না তাইতো কোনো প্রকার প্রতিবাদ করতে পারেনি। ধীর পায়ে নিজের ঘরে চলে যায়। তানিয়া সাখাওয়াত কিছু না বলে বের হতে নিলে পিছন থেকে ডাকে আলিয়া সাখাওয়াত,,,,,,

— তানি তুই কি আমার সাথে রাগ করেছিস??

— না ভাবী রাগ করব কেনো। আমরা কোনো কিছু নিয়ে রেগে নেই। আজ আসি হ‍্যা ছেলেটা অনেক রেগে বেড়িয়ে গেছে না জানি কোনো অঘটন ঘটায়।

____________________

পার্কে বেঞ্চিতে বসে আছে আবসার উদাস চোখে ঝলসানো রোদ্দুর মাখানো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ জ্বালা করছে তাও তাকিয়ে আছে কিছুক্ষণ পর কেউ পাশে বসলে চোয়াল শক্ত করে পাশে তাকাতেই শান্ত হয়ে যায় আবসার। ক্রন্দনরত ওয়াসিমা আবসারের কাটা হাত ড্রেসিং করছে আর ফু দিচ্ছে। এমন ভাবে ফু দিচ্ছে যেনো ব‍্যাথাটা আবসার না সে পেয়েছে অথচ আবসার নির্বিকারভাবে বসে আছে।

কাপা কাপা হাতে ড্রেসিং করেই। প্রথমে ওয়াসিমা মুখ খুলল -” আম সরি আমাকে মাফ করে দেন আমি বুঝতে পারিনি।
আমার স্বামীকে তার বাগদত্তা বলায় আমার রাগ হয়েছিল তাই তখন ঐ কথা গুলো বলেছি। আমি ভুল করেছি আমাকে,,,, ( কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গেছে )
আবসারের আর সহ‍্য হলোনা সে ওয়াসিমার মাথাটা বুকে জড়িয়ে নেয়।

— হুসসসসস কাদে না বউ পাখি আমি রেগে নেই। আমি জানি আমার বউটা আমাকে বিশ্বাস করে তাইতো ঐ সময় তাকে কড়া কথার জবাব দিয়েছে।

— আপনি কিভাবে জানলেন ( আবসারের বুক থেকে মাথা তুলে অবাক স্বরে বলে )

— ইটস ম‍্যাজিক ওয়াইফি ( হালকা হেসে বলল )
ওয়াসিমা কিছু না আবার আবসারের বুকে মুখ গুজে দেয়। আবসার ওয়াসিমার মাথা হাত বুলিয়ে কথা বলতে থাকে।

#চলবে

#বক্ষপিঞ্জিরায়_তুই_বন্দীনি
#সাদিয়া_আক্তার
#পর্ব_৩২

ওয়াসিমা আবসার বাসায় এসে সোজা চার তলায় ওয়াসিমার বাপের বাড়িতে যায়। কারণ অরিক তাকে ফোন দিয়ে সেখানেই যেতে বলেছে।
তারা ঘরে ঢুকতে দেখে তানিয়া ও এহসান মাথা নিচু করে বসে আছে। আকলিমা রহমান কান্না করছে আর ইরফান রহমান থমথমে মুখে বসে আছে। ওয়াসিমা আবসার একে অপরের দিকে তাকায় চোখের ইশারায় অরিককে জিজ্ঞেস করে “” কি হয়েছে “”। অরিক কাধ নাড়ায় সে কিছু জানে না।

— কি হয়েছে আম্মু ( আকলিমাকে জিজ্ঞাসা করল ওয়াসিমা )
আকলিমা কিছু না বলে মেয়ের বাম গালে হাত বুলায়। মেয়েটার গালে পাচঁ আঙ্গুলের দাগ পরে গেছে। এই ছেলে মেয়ে দুইটা তার বড়ই লক্ষি এই পযর্ন্ত কোনো বিচার বা কোনো প্রকার অভিযোগ আসে নাই কারো কাছ থেকে। সেই মেয়েকে আবসার থাপ্পড় মেরেছে এটা আকলিমা মেনে নিতে পারছেনা কিন্তু কি হয়েছে না জেনেও কিছু বলা ঠিক না,,,,,,

— আব্বু ( আবসারকে উদ্দেশ্য করে বলল আকলিমা )
আকলিমার ডাক শুনে তার পায়ের কাছে হাটু গেরে বসে আবসার। পাশে ওয়াসিমা বসে আছে

— কি হয়েছে মা

— আমার মেয়েটা আমার অনেক আদরের আব্বু। তুমিও আমার কম আদরের না। আমি আমার অরিকের মতোই তোমাকে ভালোবাসি। তবে কোনো দিন যদি মনে হয় ওয়াসু তোমার কাছে বিরক্তির কারণ বা তার সাথে থাকা যায় না তাহলে নির্ধিদায় আমাদের বলবে। আমার মেয়েটার দ্বারা কোনো ভুল হলেও তাকে বুঝিয়ে বলো। ( আবসারের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল )

আকলিমার কথা শুনে আবসার কিছু ধারনা করতে পারে। তাই সে আকলিমার হাত জোড়া নিজের মুঠোয় ভরে ওয়াসিমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবসার আকলিমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
— মা তোমার মেয়েটা আমার অক্সিজেন। মানুষ সব কিছু ছাড়া বাচতে পারলেও। অক্সিজেন ছাড়া কোনো দিনও বাচতে পারেনা কালকে ওকে আমি ভালো মতোই জিজ্ঞেস করেছিলাম। যে কি হয়েছে ?? কিন্তু ও এমন একটা কথা বলেছে যা আমার সহ‍্য হয়নি তাই রাগের ঠেলায় হাত উঠে গেছে আমার এর জন‍্য আমি কোনোদিন ওকে সরি বলব না। এটা ওর প্রাপ‍্য ( শেষের কথাটা ওয়াসিমার দিকে তাকিয়ে বলল )
তাদের কথা শুনে ওয়াসিমা গাল ফুলায়।

— তোমাদের বাসার টি টেবিলে কিছু ছবি পেয়েছি সেগুলো বিষয়ে কিছু বলবে ( পাশ থেকে ইরফান গম্ভীর স্বরে বলে উঠল )

— ঐগুলো সব মিথ‍্যা শশুর আব্বা সব কিছুই এডিট করা
ইরফান আর কিছু বলে না সে জানে আবসার এরকম কিছুই করেনি। কিন্তু ঐ যে মনের খটকা তাই একটা মেয়ের বাবা হিসেবে তার ভয়টা জায়েজ আছে।

— ওকে ওকে অনেক হয়েছে শোক পালন করা এখন সবাই নাস্তা করি। এখন সকাল এগারোটা বাজে কারোই খাওয়া হয়নি ( ডাইনিং টেবিলে খাবারের বাটি রাখতে রাখতে বলল )
আরুর কথা শুনে সবাই হালকা হাসল। আবসার ওয়াসিমা গেলো ঘরে হাত মুখ ধুতে। আকলিমাও হাতে হাতে আরুকে সাহায্য করতে থাকল। কাজ করতে করতে দুই শাশুড়ি বউ গল্প করছে। সেদিকে অপলক তাকিয়ে থাকে তানিয়া,,,,

সে জানে টাকা পয়সার উর্ধে হলো মানুষের মন মানুষিকতা। সেই দিক দিয়ে ইরফান ও আকলিমার মন অনেক ভালো। তাদের মতো মানুষ বর্তমানে খুব কমই পাওয়া যায়। আজকে তো আবসারের কথা শুনে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরো বেড়ে গেলো।

— আসেন আপা ভাই নাস্তা করবেন আমাদের সাথে ( আকলিমার কথায় তানিয়ার ঘোর ভাঙ্গে )

— আসেন আপা আজকে আপনার মেয়ের হাতের রান্না খেয়ে দেখেন। আমাদের আরু মা খুব ভালো রান্না করে ( ইরফান ডেকে বলল )

— ভাই সাহেব এই প্রথম মেয়ের হাতে রান্না খাব তা কিকরে না করতে পারি

এহসানের কথা শুনে ইরফান হেসে উঠল। তার হাসি দেখে এহসানও হাসে।

ওয়াসিমা ও আবসার ফ্রেশ হয়ে আসতেই সবাই খেতে বসে।
এইতো জীবন কখনও হাসি কখনও কান্না এই নিয়েই তো জীবন।
কাল রাত থেকে সকাল পযর্ন্ত আবসার ওয়াসিমার ভারী গেলেও বর্তমানে তারা আনন্দে আছে। সুখ দুঃখে একে অপরের সাথে থাকাই তো একজন সঙ্গীর দায়িত্ব।।।

_________________

রকিং চেয়ারে বসে আছে এজাজ সাখাওয়াত। আজকে আবসার তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে তার ভুল গুলো।
হ‍্যা সে দোষী। তার জীবনে কোনো ডিসিশন সে ঠিক মতোই নিতে পারেনি এটা তার ব‍্যর্থতা। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল এজাজ। এর মধ‍্যেই নিচে থেকে চিল্লাচিল্লি শুনতে পেয়ে সে নিচে নামে,,,,,

— কি হয়েছে আলিয়া ( সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করে )

আয়মান কথা বন্ধ করে বাবার দিকে তাকায়। তার কাছে যায় — দেখো ড‍্যাড মম কি বলে??

— কি হয়েছে আলিয়া
আলিয়া মাথা নিচু করে ফেলে সে কি বলবে স্বামীকে। লোকটা তো তার বোনের মেয়েকে দেখতেই পারে না। তার মতে মেয়েটা চরম বেয়াদব,,,,

— মম কি বলবে আমি বলছি। ভেনিসার হঠাৎই সেমিষ্টার শুরু হয়ে যাওয়ায় সে অষ্ট্রেলিয়া চলে গেছে। এই জন‍্য আমি বিয়েটা একমাস পোষ্টপন্ড করেছি সেটা আম্মুকে বলতেই সে বলল বিয়েটা একমাস পরে করো ঠিক আছে কিন্তু তার বড় বোনের মেয়ে ড‍্যাম লিমাকে বিয়ে করতে বলে।

আলিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে। এজাজ সাখাওয়াতের দিকে তাকানোর মতো সাহস তার নেই।

— আয়মান এগুলো কি বলছে আলিয়া???

— আমি বড় আপাকে কথা দিয়েছি

— তোমার সাহস কিকরে হয় আমার ছেলের জিবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার ( চিৎকার করে বলল )

এজাজ সাখাওয়াতের চিৎকারে আলিয়া সাখাওয়াত কেপে ওঠে কান্না করে দেয়।

— চুপ একদম চুপ। আর আয়মান গত পরসু এঙ্গগেজমেন্ট গিয়েছে এখন বিয়েটা যত দ্রুত সম্ভব করে নেয়া উচিত। তুমি এইবার ভেনিসা সহ ওর বাবা মাকে ও নিয়ে আসতে বলো। ( আয়মানের দিকে তাকিয়ে বলল )
এজাজ কথাটা বলেই নিজের ঘরে চলে যায়। আয়মান ও বাহিরের দিকে চলে যায়।
তারা যেতেই চেয়ারে ধপ করে বসে পরে আলিয়া সে কি করবে ভেবে পায়না। লিমার সাথে যদি তার আয়মানের বিয়ে না দেয় তাহলে তার বড় আপা তার লুকায়িত চরম সত‍্য প্রকাশিত করবে। কি করবে দিশেহারা হয়ে যায়।

দিলরুবা সাখাওয়াত উপর থেকে সবটাই দেখে। তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে জানত লিমা আরো কয়েক বছর আগে লিমার সাথে আয়মানের বিয়ের কথা বলেছে। তাইতো তার ফুপাতো বোনের নাতনিকে আয়মানের পিছে লাগিয়েছে। তাকে দিয়ে আয়মানের মন জয় করিয়েছে।

তার ভ্রক্ষেপ হতো না যদিও ভেনিসা তাকে ছেড়ে দিতো কিন্তু। নাটক করতে করতে ভেনিসাও তাকে ভালোবেসে ফেলে তাইতো তাকে বিয়ে করার জন‍্য উঠে পরে লাগে। এতে দিলরুবা সাখাওয়াতের কোনো সমস্যা নেই। ভেনিসা ভালো মেয়ে। বিদেশে থাকলেও বাংলাদেশের সংস্কৃতি ভুলে যায়নি। সে মার্জিত ভাবেই চলা ফেরা করে। তাইতো আয়মান দ্রুতই তার প্রেমে পরে।।

— বড় বউ আমার দাদু ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তুতি কেমন চলছে। সামনের মাসেই বিয়ে। আমি কিন্তু ভেনিসা দাদুমনি আসলে আর দেরী করব না। ( চলেই নিজের মতো চলে গেলো )

তার কথা গুলো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে। হাতে আর একটা মাস আছে যে করেই হোক এই বিয়েটা আটকাতে হবে। নাহলে তার সংসার ভাঙ্গবে এই বয়সে এসে সংসার ভাঙ্গার মতো লজ্জা সে বহন করতে পারবেনা।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে