#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২৩]
নীরাকে দেখার পর থেকে বন্ধুদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া চলছিল।জন যখনি জানতে পেরেছে নীরার কথা ছেলেটা আর দেরি করেনি মিলানে এসে উপস্থিত সে।বন্ধুরা সকলে তাদের ঘুরাঘুরি অব্যাহত রাখলো শুধু থমকে রইল খুশবু।একমাত্র আরশাদের কারনে বাহারুল হক কিংবা অনিমা কাউকে এই ব্যপারে জানাতে পারছে না সে।আরশাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞা নীরার ব্যপারটা ভুলেও যেন পাঁচ কান না হয় বাধ্য হয়ে খুশবু আরশাদের কথা শুনছে।তার শরীর মন ক্রমশ বিষিয়ে উঠছে এমন এক আশ্চর্যজনক পরিস্থিতিতে এর আগে কি কেউ পড়েছে?হয়তো হ্যাঁ।
বাইরে থেকে খাবার কিনে ফিরেছে আরশাদ।স্যান্ডউইচ এবং জুসের বোতল টেবিলে রেখে খুশবুর পানে তাকালো এক পলক।
” হানি।”
“হু?”
” খেয়ে নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
” না ভালোলাগছে না।”
” ভালো লাগায় না লাগার সাথে খাবারের কি সম্পর্ক?”
” নীরা মেয়েটার কথা বাবাকে জানালে হয় না?আপনি জানেন কত চিন্তা,দুশ্চিন্তা আমার মাথায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।”
” তুমি নিজে চিন্তামুক্ত হতে তোমার বাবা মাকে চিন্তায় ভাসিয়ে রাখবে?”
” না তা নয়।কিন্তু… ”
” শুনো যা হবে দেশে গিয়ে দেখা যাবে।এসবের মোকাবিলা আমি দেশে গিয়ে করতে চাই।”
খুশবু আর দ্বিতীয়বার কথা বলার সাহস করে না শুকনো স্যান্ডউইচ মুখে পুরে ভাবতে থাকে নীরার কথা।
.
নীরা মেয়েটার সাথে আরশাদ অনেকবার যোগাযোগ করেছে,অনুরোধ করেছে বারবার তাদের যেন অন্তত এক ঘন্টা সময় দেয়।খুশবু নীরার সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু নীরা আরশাদকে প্রতিবার আশাহত করেছে।তার সময় নেই সে কি করে দেখা করবে?শেষ-মেষ উপায়ন্তর না পেয়ে খুশবু নীরাকে অনুরোধ করলো, একটা পর্যায়ে মেয়েটা কেঁদেই ফেললো।নীরা আর অমত করেনি দুপুরে আসবে বলে সে জানায়।
মিলান শহরের একটি নামিদামি রেস্টুরেন্টে বসে আছে আরশাদ এবং খুশবু।তাদের অপেক্ষা নীরার জন্য।নীরা এলো প্রায় বিশ মিনিট পর।মেয়েটাকে দেখেই চোখ সরালো খুশবু।মেয়েটা একটু বেশি স্টাইলিশ।নাহ এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো মেয়েটার পোশাক চালচলন ভীষণ অশালীন।খোলামেলা পোশাকে বুকের খাঁজটা সাদৃশ্যমান।আরশাদের সামনে বড্ড লজ্জায় পড়লো খুশবু।
নীরা চেয়ারে বসে বলে,
” সরি একটু দেরি হয়ে গেল।”
” ইট’স ওকে।”
শুকনো হেসে বললো আরশাদ।নীরা খুশবুর পানে তাকিয়ে আরশাদকে প্রশ্ন করে,
” বলো কি জানতে চাও?”
” তোমার আসল পরিচয় কী?”
” আমি নীরা রহমান।”
“খুশবুকে দেখার পর তোমার অনুভূতি কি?একই চেহারার জমজ বোন তোমরা।অথচ দু’জন দুই দিকে,দুই জীবনে।”
” আমার অনুভূতি শক্তি প্রখর নয়।আমরা জমজ বোন কি না আদৌ এর প্রমান আছে?”
” প্রমান!কিসের প্রমান?তোমাদের চেহারা মিল।”
” হুম তা ঠিক।তবে এসব নিয়ে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।আমি নীরা রহমান আমার আলাদা পরিচয় প্রফেশন আছে অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি করার ইচ্ছা কিংবা সময় নেই।”
” কিন্তু আমাদের তো জানতে হবে এসব কি হচ্ছে আমাদের সাথে!আমাদের আগ্রহ থাকা কি অস্বাভাবিক?”
” একদম না।এখন তোমাদের আমার সম্পর্কে কি জানার আছে?”
” তোমার বাবা অথবা মায়ের সাথে আমরা যোগাযোগ করতে চাই।”
নীরা ফিক করে হেঁসে ফেললো।তার হাসি স্থায়ী হলো।খুশবু কিছুটা অবাক হয়ে তাকালো আরশাদের পানে।নীরা তার হাস্যজ্বল মুখ ধরে রেখে বলে,
” আমার বাবা মায়ের সাথে আমার যোগাযোগ নেই।তারা কোথায় আছে আদৌ বেঁচে আছে কি না আমি জানি না।”
” উত্তরটা পছন্দ হলো না।”
“তোমার পছন্দ না হলে আমার আর কি করার আছে?আমি সত্যিটা বললাম।”
” যেহেতু আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে ফেঁসে গেলাম সেহেতু নীরা প্লিজ আমাদের সাহায্য করো।তুমি তোমার সম্পর্কে আদি থেকে অন্ত সবটাই আমাদের খুলে বলো।”
” শুনো আমি এখানে ক্লাইন্ট নিয়ে এসেছি।ওই ছেলেটা আমার সময় টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে সেই হিসেবে তোমাদের এক ঘন্টা সময় দিয়েছি এতেই সন্তুষ্ট হও।”
” আমরা বুঝতে পারছি সেসব।কিন্তু প্লিজ তুমি তোমার সম্পর্কে আমাদের জানাও।”
নীরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।অতীত ঘাটতে তার ভালোলাগে না কিন্তু আজ আর কি করার?
” আমি নীরা রহমান।আমার বাবা মোশারফ রহমান।মা সীমা খাতুন।আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলাম তাই কোন দিক দিয়ে আমাকে খুশি রাখার যত্ন করার ক্রুটি ছিল না।শহরের সবচেয়ে নাম করা স্কুল থেকে পড়ছিলাম।বাবার ছিল ছোট্ট একটা ব্যবসা।সংসারে টানপোড়ন ছিল তবে চোখে লাগার মতো নয়।আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ছি তখনি আমার মা স্ট্রোকে মারা যান।এর তিন বছরেও বাবা বিয়ে করেননি আমার কথা ভেবে।
আমি যখন এসএসসি দিচ্ছিলাম রাত জেগে পড়ছি হঠাৎ দেখলাম বাবা একজন আন্টিক নিয়ে এলেন।সাথে ছিল আমার ফুফু চাচা চাচিরা।তারা জানালেন ওই আন্টিটা আমার সৎ মা।
সৎ মাকে যে আমি মেনে নিতে পারিনি তা কিন্তু নয় খারাপ লাগলেও আমি ভীষণ খুশি ছিলাম অন্তত এবার আর আমাকে একা চলতে হবে না।
আমার ভাবনা চিন্তারা বরাবরি ভুল বিয়ের চার মাসে বাবা পালটে যান।আমাকে কলেজে ভর্তি করানো হলো রাখা হলো হোস্টেলে।হোস্টেলে থেকে রুমমেটদের সাথে আমার ছিল ভীষণ ভাব।তারা সবসময় তাদের প্রেমের গল্প শোনাতো আমার উড়ুউড়ু মনে লেগে গেল প্রেমের বাতাস।ব্যস সকল ভয় দূরে ঠেলে একটা ছেলের সাথে রিলেশনে গেলাম।
প্রেমের এক বছর পর আমাদের মাঝে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।সেই ছেলেটা আমাকে ছেড়ে চলে যায়।এরপর আবার প্রেম করলাম ঠিক আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো।
এদিকে বাবা আমার হাত খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পড়াশোনার খরচটা অনেক ঝামেলা করে আনতে হতো।ভার্সিটিতে পড়া কালীন আমার সৎ মায়ের বোনের ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠে।প্রেমের সম্পর্ক নয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।তার সাথে অনেক অনেক ঘুরেছি সমাজের হাই সোসাইটির ছেলেমেয়েদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় তার মাধ্যমে।এরপর ক্লাবে যাওয়া,ছন্নছাড়া চলা ফেরা সব মিলিয়ে বাবা আমাকে ত্যাজ্য করেন।আমার এই পরিস্থিতির জন্য আমার কাপুরুষ বাবা কি দায়ী না?
যাই হোক কলগার্ল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে এখন আর আমার খারাপ লাগে না।এক কথায় বলতে গেলে আমি টাকার বিছানায় ঘুমাই।আমার জীবনে সব আছে সব শুধু ভালোবাসা নেই,ভালোবাসা আমার প্রয়োজন নেই।”
” সব তো বুঝলাম তবে তোমাদের দুজনের রহস্য কী?খুশবু তোমার কী হয়? ”
” নিশ্চয়ই আমার বোন হয় তবে এর সত্যতা খুশবুর বাবা মা ভালো জানেন।এই মেয়েটা আমার কে তা জানার আগ্রহ আমার নেই,আমি যদি এই মেয়েটার আপন কেউ হই সে সমাজে আমাকে আপন বলে পরিচয় করাতে পারবে না।অন্তত ভদ্র সোসাইটিতে আমাকে কেউ মানবে না।আজ বরং আসি।”
নীরা উঠে দাঁড়ালো।খুশবুর ব্যথিত মনটা সে বুঝতে পারছে।খুশবুর গাল টেনে সে বলে,
” ইউর লুক সো প্রিটি।”
খুশবু নীরার হাত ছুঁয়ে ধরে এবং হঠাৎ হুহু শব্দে কেঁদে উঠে।
” আপু আমি যখনি আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাইবো করবেন?”
আপু!বুকে লাগলো নীরার।অনুভূতি শূন্য নীরার মনটা হঠাৎ ছলকে উঠলো।
” যখন ইচ্ছে হবে ফোন করবে।”
” আপনি সত্যি আরশাদ ইহসানকে চেনেন না?”
” আর কতবার বলবো?উনাকে আমি এবারি প্রথম দেখলাম।”
খুশবু মাথা নাড়ালো।এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছে তার নিজের মাথায় নিশ্চয়ই কোন সমস্যা আছে।কি হচ্ছে এসব?আরশাদের প্রেমিকা সে নয় অথচ নীরা বলছে সে আরশাদকে চেনে না।মেয়েটার চোখেমুখে মিথ্যার ঝলক নেই।কি হচ্ছে এসব?
রেস্টুরেন্টের সামনে জনের গাড়ি থামলো।ছেলেটা হুড়োহুড়ি করে প্রবেশ করলো রেস্টুরেন্টে।নীরা জনকে দেখেই চিনে ফেলেছে।জন এগিয়ে এসে বলে,
” হ্যালো নীরা।”
” জন!তোমাকে এখানে পাব ভাবিনি।”
” তোমার জন্য রোম থেকে মিলানে এসেছি।এবার বলো কবে সময় দেবে আমায়?”
” দুইদিন পর।চলবে?”
” ইয়েস বেব।আই নিড ইয়ু।”
জন নীরাকে জড়িয়ে চুমু খেল।দুজনের এমন আচরনে খুশবু হতভম্ব।আরশাদ নজর ঘোরালো অন্যদিকে।নীরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে জন দাঁড়ালো আরশাদের মুখোমুখি।
“আরশাদ ইহসান আমাকে মে রে তো সত্যকে মিথ্যা বানাতে চাইলে।এখন প্রমান পেলে?”
” কিন্তু আমার ফ্লুজিতো সেই মেয়ে নয়।আঙুল আমার ফ্লুজির দিকে তোলা হয়েছে।”
” আমি কী করে জানবো গোড়ায় গন্ডোগোল।”
” শুরু যখন হয়েছে এর সমাধন চাই।”
” আমি আমার সমাধান পেয়ে গেছি এবং অপেক্ষায় আছি কখন আমার জীবনে আবার মধুচন্দ্রিমা আসবে।”
.
আরশাদ রোমে ফিরলো সন্ধ্যায়।নিজ ভিলায় ফিরে খুশবুকে বিশ্রাম নিতে বলে চলে গেল আরিবের সঙ্গে দেখা করতে।
নীরার সব ঘটনা আরিব যখন শুনলো তখন মন চাইলো না বিশ্বাস করতে।
খুশবুর জমজ বোন আছে!তাও কি না কেউ কাউকে চিনে না।আরশাদ চায়নি তার পরিবারের কাউকে কিচ্ছু জানাতে কিন্তু আরিবের মন মানলো না।আজ হোক কাল হোক সবার সামনে সত্যিটা প্রকাশ পাবেই।
আরশাদ পরিবারের সবাইকে সবটা জানালো,প্রতিবার আরশাদকে সবাই সাপোর্ট করলেও খুশবুর ব্যপারে এমন এক সত্য জেনে ক্রুদ্ধ হলেন আফরোজ।ইমরান ইহসান এসব নিয়ে কথা বাড়ালেন না মূলত তিনি চান না জল ঘোলা হোক।যা হবার হয়েছে এখন আর এসব নিয়ে কথা তুলে কি হবে?আরশাদ যাকে চেয়েছে তাকে তো পেয়েছে দিক বেদিক নিয়ে ভাবতে গেলে তাদের দম্পত্য জীবনে প্রভাব পড়বে ইমরান ইহসান তা কখনো চান না।
আফরোজের চোখে মুখে আগুন জ্বলছে।আরশাদের দিকে তাকিয়ে বলেন,
” বিয়ে করবে, তোমার খুব তাড়া তুমি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ পাগল হয়ে উঠলে।তোমাকে নিয়ে আমার ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি কত কি করলে এখন বলছো তোমার বউয়ের মতো দেখতে আরেক মেয়ে…ছিহ!এই মেয়ের বংশের খোঁজ নিয়েছিলে?”
” আমার ওয়াইফকে নিয়ে আমি হ্যাপি আছি।সেসব ছাড়ো, আমার যা জানানোর দরকার আমি জানিয়েছি।”
” কি জানিয়েছো তুমি?এসব জানার জন্য বসে ছিলাম?খুশবুর অতীত ঘেটে দেখো এই মেয়ে কি আসলেই বাহারুল হকের মেয়ে?”
ইমরাহ ইহসান আফরোজকে বাঁধা দিলেন।অনেক বছর পর আরিব মায়ের এমন রাগ দেখলো।মায়ের রাগটা আরশাদের পছন্দ হলো না।ইমরান ইহসান আফরোজের চুলে হাত বুলিয়ে বলেন,
” শান্ত হও তুমি।হতেই পারে খুশবু বাহারুল হকের দত্তক নেওয়া মেয়ে।এটাও হতে পারে নীরা নামের মেয়েটাও উনার মেয়ে হয়তো বা অতীতে এমন কিছু হয়ে…”
” তুমি চুপ করো।আমাকে আর বোঝাতে হবে না।”
আরশাদ আরিবের দিকে তাকালো চোখ গরম করে।যত ঝামেলা করার এই ছেলেটাই করেছে।কে বলেছে এত সত্যবাদী হতে?
আরশাদ সবাইকে শেষ বারের মতো বললো,
” মম ড্যাড আমি সবার উদ্দেশ্যে বলছি,যা হচ্ছে যা হয়েছে এসব নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই।তোমরা কি চাও?নিশ্চয়ই আমাকে ভালো দেখতে চাও?আমি ভালো আছি প্লিজ এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি চাই না।”
.
আরশাদ নিজ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার অর্ডার করলো।নিজ ভিলায় ফিরে খুশবুকে না পেয়ে মুচড়ে উঠলো তার কলিজা।মেয়েটা কোথায়?আরশাদ সারা ভিলা তন্ন তন্ন করে খুঁজলো খুশবু কোথাও নেই।কোথায় গেল মেয়েটা?আরশাদের শ্বাস আটকে আসছে,কাঁপছে তার দেহ।মেন্টালি এত প্রেসার না নিতে পেরে কি মেয়েটা চলে গেছে?পাগলের মতো সারা ঘর ছুটলো ছেলেটা।নিচ তলায় এসে স্টোর রুমে প্রবেশ করতে কানে আসে পানির শব্দ।
পাশের ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে কেন?আরশাদ দ্রুত গেল ওয়াশরুমে।বাথটবে হাটু মুড়িয়ে বসে আছে খুশবু।মেয়েটা পানি নিয়ে খেলছে আর কিছু বিড়বিড় করছে।এই তো দেহে প্রাণ ফিরলো আরশাদের।
” ফ্লুজি। ”
” এক মাছলি পানি মে গায়েই ছাপাক!”
” হোয়াইট?”
” উহ,এক মাছলি পানি মে গায়েই ছাপাক।”
খুশবুর বেতাল কথায় আরশাদ অবাক হলো।নজরে এলো খুশবুর হাতে থাকা ওয়াইনের বোতল।সর্বনাশ,তার মানে খুশবু ছাইপাঁশ গিলে মাতাল হয়েছে?আরশাদ খুশবুকে টেনে তোলার চেষ্টা করে কিন্তু খুশবু হাত ঝেরে বলে,
” এইই ছাড়।”
” জান একি অবস্থা তোমার।পানি থেকে উঠে আসো।”
” না না ছাপাক।”
” তোমাকে আমি খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তুমি ছাপাক ছাপাক করছো।উঠে আসো জান।”
ডোর বেল বেজে উঠতে আরশাদ খুশবুকে রেখে উঠে দাঁড়ায়।নিশ্চয়ই রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার এসেছে।খাবারের প্যাকটগুলো নিয়ে খুশবুর কাছে পুনরায় ফিরে আরশাদ।ভেজা শরীরটা টেনে নিজের পাঁজা কোলে উঠায় সে।সিড়ি বেয়ে দোতলার ঘরে ফিরে মেয়েটাকে কপট রাগ দেখায়।
” ওয়াইন গেলার সাহস কি করে করলে?”
” এই কি বলিস?বল ভালোবাসি।”
” বাসিতো জান।তুমি যা করলে কাজটা কিন্তু ঠিক হলো না।”
” আমি ভালো না তাই না?”
খুশবু আচমকা কেঁদে উঠলো আরশাদ হতভম্ব চাহনিতে তাকিয়ে রইল।
” জান কাঁদছো কেন?”
খুশবু কান্না থামালো।আরশাদের বুকে ভেজা মাথা লুটিয়ে আদুরে গলায় বলে,
” আরশাদ।”
” বলো জান।”
” গ্র্যানি কি বলেছে জানো?”
” কি?”
” বাচ্চা…”
” বাচ্চা?”
“জানি না।”
” কি হয়েছে বলতো।”
খুশবু কিছুই বললো না।আরশাদ তোয়ালে নিয়ে মেয়েটার ভেজা চুল মুছতে লাগলো।নেশাগ্রস্ত খুশবু নিজের দিশ ভুলে দ্রুত আরশাদের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে।আরশাদ বাঁধা দিতে গেলে তার উন্মুক্ত বুকে কামড় বসায়।ব্যথাত কুঁকড়ে উঠে আরশাদ। সে পুনরায় বাঁধা দিতে গেলে গলায় কামড় বসায়।মেয়েটার হাত বিচরনের করে ছেলেটার সারা মুখে।আরশাদের গলায় ঝুলে ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।আরশাদ খুশবুকে বাঁধা দিতে গিয়ে নিজে অবাধ্য হয়ে যায়।
” ভেবেছিলাম বাংলাদেশে যাব এলাম তোমার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।এখন তো তুমি আমায় অন্য দেশে নেওয়ার মতলব আঁটছো।লেটস গো জান।”
চলবে…
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ২৩ বাকি অংশ]
ব্যথায় শরীর টনটন করছে মাথাটা কেমন ঝিম ধরে আছে খুশবুর।হঠাৎ আলোর ছটাক চোখে আসতে মাথা ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকে।চোখে খুলে তাকানোর সাহস করেনি সে।অপরদিকে আরশাদ তার সহিত লেপ্টে আছে।আরশাদের ভার নেওয়ার মতো সামর্থ্য তার হয়নি কিন্তু এই আরশাদ তো তার বুকে মাথা চেপে না শুয়ে ঘুমাবেই না।অবশ হওয়া পা’টা টানটান করার চেষ্টা করলো খুশবু।পিটপিট চোখে তাকানোর চেষ্টা করতে নজরে আসে আরশাদের পিঠ কাঁধ।দ্বিতীয়বার পর্যবেক্ষণ করতে দেখতে পায় সারাটা রুম এলোমেলো,কাল কে তান্ডব চালিয়েছিল?আরশাদকে সরাতে গেলে চোখে আসে ছেলেটার ফর্সা চামড়ায় লাল ছোপ ছোপ দাগ।কিছু স্থানে রক্ত জমাট বেধে কালো কালচে রঙ ধারণ করেছে।আরশাদের বাদামী দাঁড়িতে হাত বুলায় খুশবু ছেলেটার হঠাৎ কি হয়েছে?আঘাত কি করে পেল?খুশবু অস্থির হয়।এলোমেলো হাতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে আরশাদের দেহ।কামড়ের চিহ্ন দেখে পিলে চমকে উঠে সে।ছেলেটাকে সরাতে উদ্যত হয় মুহূর্তে।কিন্তু আরশাদের দেহটাকে উপড়ে ফেলতে পারে না মেয়েটা।হাঁপিয়ে উঠে বাধ্য হয়ে বলে,
” একটা পানির জগ আমার মা আমাকে তুলতে দেয়নি তার ধারণা এত ভার সহ্য করবো কি করে,আর এখন আমি ৭৮ কেজির ভার সামলাই।”
খুশবু হতাশ হলো আরশাদকে সরিয়ে উঠে বসলো সে।আরশাদের ঘুম আর স্থায়ী হলো না খুশবুর সাথে সাথে সেও উঠে বসে।ঘুম ঘুম চোখে ছেলেটা প্রশ্ন করে,
” কি হয়েছে ফ্লুজি?”
” কিছু না।উঠুন বেলা হয়েছে।”
” গত রাতে এটা কি করলে তুমি?”
” কি করেছি?”
” ওয়াইন খেলে কোন সাহসে?”
নিজের মতি ভ্রমের কথা মাথায় আসতে থমকে যায় সে।আসলেই তো কোন সাহসে এই অকাজটা সে করলো?মাথাটা এখনো কেমন ধরে আছে।আরশাদ উঠে দাঁড়ালো বিভ্রান্ত খুশবুর পানে তাকিয়ে চলে গেল কিচেনে এবং লেবুর শরবত নিয়ে ফিরলো সে।
” এটা খাও।”
” না খাব না।”
” আমাকে খাবে?”
” কি!”
” কিছু না।”
আরশাদ শরবতের গ্লাসটা ঠেসে ধরলো খুশবুর মুখে।ছেলেটার রাগান্বিত কার্যক্রম ঠিকি ধরতে পারলো খুশবু।
” আরশাদ রেগে আছেন?”
” আছি তো।কোন সাহসে ওয়াইনের বোতলে হাত দিলে?”
” আমার আসলে হুশ ছিল না।একা ঘরে ছিলাম চিন্তায় আমার পাগল পাগল লাগছিল ক্ষুদাও বেড়েছে তাই কিচেনে গেলাম।ওয়াইনের বোতল দেখে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো,এসব খেলে নাকি চিন্তা দূর হয়।ব্যস আর কিছু জানি না।”
” জানো না?আমার শরীর দেখে বুঝতে পারছো না কি করেছো তুমি।এই রুমের হালচাল দেখো একবার।”
জিভে কামড় বসালো খুশবু।লেবুর শরবত শেষ করে আরশাদের পিঠে বুকে নজর ঘুরালো।
” আরশাদ বেশি চোট লেগেছে তাই না?”
“তোমার চুনোপুঁটি শক্তি আমার কিচ্ছু করতে পারবে না”
খুশবু চুপ হয়ে যায় আরশাদের রাগি রাগি ভাবটা এখনো কাটেনি।
” আমরা কাল সকালে বাংলাদেশ যাব।তোমার অনেক কিছু কেনা বাকি দ্রুত শাওয়ার সেরে এসো বের হতে হবে।”
দেশে যাওয়ার কথা শুনে থমকে গেল খুশবু।মা বাবার কথা মাথায় আসতে আবেগে আপ্লুত সে।কিন্তু দেশে যাওয়ার পর কোন সত্যের মুখোমুখি হবে?
.
খুশবু কিছু বিষয় লক্ষ করেছে আজ।
আফরোজের সেই দোয়ায় ভরা আদুরে হাত দুটো দিয়ে খুশবুর মাথায় হাত বুলালেন না।কেমন যেন বিরক্তিতে ঘেরা দায়সারা ভাব।সবটা খুশবুর নজরে এলো মুখ ফুটে যদিও কিছু বলতে পারলো না।প্লেনে নিজের নির্ধারিত আসনে বসে চিন্তায় মগ্ন মেয়েটা।আরশাদ খুশবুর হাত চেপে ধরে,
” জান কী ভাবছো?”
” মা আমার সাথে কোন কিছু নিয়ে রাগ?তিনি কেমন যেন আচরণ করলেন।”
” না না।মমের কর্মস্থলে কিছু ঝামেলা চলছে তো তাই আরকি উনি খুব চিন্তিত।”
অনায়াসে মিথ্যা বললো আরশাদ।সে চায় না ফ্লুজি সে রাতের ঝামেলার কথা জানুক।জেনে কি হবে?শুধু শুধু মন খারাপ করা ছাড়া কোন উপায় তো আর নেই।
.
রাতের রান্না চুলায় বসিয়ে টিভি দেখতে বসলেন অনিমা।একা একা ঘরে এখন আর ভালোলাগে না।যদিও একা থাকা তার অভ্যস হয়ে গেছে।মাঝে মাঝে মনে হয় বাহারুল হক ঠিকি বলেছেন মেয়েকে তিনি দূরে পাঠাবেন না।একমাত্র মেয়ে কী করে পারবেন দূরে সরাতে?আবার আরশাদের আদর যত্নে মুড়ানো খুশবুর কথা ভেবে নিজের একাকিত্বকে বুড়ো আঙুল দেখান।
ডোর বেলের শব্দে টিভির রিমোট রেখে উঠে এলেন তিনি।নিশ্চয়ই বাহারুল হক এসেছেন।তবে আজ এত তাড়াতাড়ি কেন?দরজা খুলে চমকে গেলেন অনিমা।শিউরে উঠলো আর সমস্ত দেহ।অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে পিছিয়ে গেলেন দু’কদম।দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে খুশবু হাসলো। আজ যে তারা দেশে আসবে এই কথা কাউকে জানানো হয়নি।সম্পূর্ণ ব্যপারটা সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছে তারা।
” আমার মা, আমার কলিজা তুই!”
” কেমন আছো আম্মু?”
খুশবু জড়িয়ে ধরলো তার মা’কে।মা মেয়ের কান্নায় কোনঠাসা হয়ে দাঁড়ালো আরশাদ।
” আমি যে এসেছি কারো কি চোখে লাগেনি?”
অনিমা আরশাদকে বুকে জড়ালেন।মেয়েকে ফিরে পেয়ে সারা বাড়ির যেন প্রাণ ফিরলো।মা’কে ছেড়ে খুশবু সারাটা ঘর ঘুরলো।হ্যাঁ সবটাই আগের মতো আছে তার চিরচেনা রুম বারান্দা কোন কিছুর সাজসজ্জা পালটায়নি।অথচ সময় পাল্টেছে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব পাল্টেছে।
.
রাতের খাওয়া শেষে আজ আর আড্ডা দেওয়ার ধৈর্য নেই খুশবুর।টানা জার্নি শেষে এখন শুধু ঘুমের প্রয়োজন।অনিমা রুমটা পরিষ্কার করে খুশবুকে ঘুমাতে পাঠালেন।আরশাদ বেশ কিছুক্ষণ বাহারুল হকের সহিত আলাপচারিতা করলো।কিছুক্ষণ বাদে আরশাদ নিজেও কক্ষে এলো।ভেবেছিল খুশবু হয়তো ঘুমে কিন্তু না মেয়েটা জেগে আছে।সিলিংএ চোখ রেখে ভাবনায় মত্ত মেয়েটা।
” ফ্লুজি কী ভাবছো?”
” সময় অপচয় হচ্ছে আরশাদ।বাবা মাকে নীরার কথা জিজ্ঞেস করা উচিত।”
” এখনি? ”
” হুম।”
” মোটেও না।অতীত টানলে নিশ্চিয়ই এমন কিছু হবে না তুমি স্থির থাকবে না তোমার বাবা মা।এটা স্বাভাবিক কোন ইস্যু নয় তাই এত তাড়াহুড়োর দরকার নেই আগামীকাল সময় পরিস্থিতি বুঝে যা করার করবে।”
” না না আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।আমি আর পারবো না।সমাধান আমি চাই।”
” অধৈর্য হলে চলবে না।”
আরশাদ খুশবুকে টেনে কাছে আনে।গায়ের উপর কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাতে ইশারা করে।মেয়েটার মাথায় চলতে থাকা এত দুশ্চিন্তার আনাগোনা আরশাদ ভালোভাবেই বুঝতে পারে।কিন্তু সে চায় না তার ফ্লুজি এখন এসব নিয়ে ভাবুক জীবন যেভাবে চলছে চলতে থাকুক।
অন্ধকার মাড়িয়ে আলোর দেখা মিললো।বহুদিন পর বাংলাদেশের সকালটা দেখে মনটা ভরে যায় খুশবুর।চিরচেনা ছন্দ ফিরে এসেছে জীবনে।
সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই এক সঙ্গে নাস্তা সারলো।নাস্তা শেষে অনিমা চা আনলেন।খুশবু তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
” বাবা আমার কী কোন জমজ বোন আছে?”
বাহারুল হক অবাক হলেন।হাত থেকে চায়ের কাপ সরিয়ে বলেন,
” হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”
” জিজ্ঞেস যখন করেছি এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন না কোন কারণ আছে তাই না?”
” আমি তোমার প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।”
” তুমি রেগে যাচ্ছ কেন?আমার প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ নাকি না তা অন্তত বলো।”
” না নেই তোমার কোন বোন।”
বাবা মেয়ের তর্ক অনিমা নিরবে দেখলেন।খুশবু এর আগে তাকেও এমন প্রশ্ন করেছিল কিন্তু মেয়েটার মাথায় হঠাৎ এসব ঘুরছে কেন?অনিমা খুশবুর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়েন।
” তোর মাথায় কি ভূত ঢুকলো বলতো?আমাকেও ঘুরে ফিরে একই কথা জিজ্ঞেস করিস।”
খুশবু প্রত্যুত্তর করলো না।দ্রুত নীরার ছবি নিয়ে দেখালো বাহারুল হককে।বাহারুল হক স্কিনে নজর রাখতে দেখতে পেলেন খুশবুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি দেখতে হুবহু তার মতো।বাহারুল হক থমকে গেলেন দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লেন দ্রুত।অনিমা উত্তেজিত হলো।আরশাদের পানে তাকিয়ে বলে,
” এই মেয়েটা কে?”
” নীরা।”
” তার চেহারা আমার মেয়ের মতো কেন?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।খুশবুর বাবা তুমি বলো এই মেয়েটা কে?”
” কেউ না অনিমা।তুমি এসবে কান দিও না।”
” কান দেব না মানে?এই মেয়েটা কে?আমার খুশবুর মতো দেখতে কেন?”
বাহারুল হক সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালেন আরশাদের পানে।তার মেয়ের মাথায় এসব নিশ্চয়ই আরশাদ ঢুকিয়েছে!আরশাদ অনিমা এবং বাহারুল হক দুজনকে নিরবে জহুরি চোখে পরখ করলো এবং আদি অন্ত ভেবে যা বুঝলো এই রহস্যের সমাধান বাহারুল হকের কাছেই আছে।
” আমার কাজ আছে আমি গেলাম।আর খুশবু এসব মাথা থেকে ঝেরে দাও এই মেয়েটা কে আমি এবং তোমার মা কেউ জানি না।”
বাহারুল হক পালিয়ে বাঁচতে চাইলেন কিন্তু খুশবুতো ছাড়ার পাত্রী নয়।দেশে আসার মূল উদ্দেশ্য নীরার পরিচয় খুঁজে বের করা সেখানে বাহারুল হকের এড়িয়ে যাওয়া সে কি এতটা সহজে মানবে?
” আব্বু কোথাও যাবে না।আমার প্রশ্নের জবাব আমি চাই নীরা মেয়েটা কে?”
” বললাম তো জানি না।”
আরশাদ উঠে দাঁড়ালো।অভয় দিয়ে বলে,
” আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন কেন?সত্যটা প্রকাশ করুন।সত্য লুকিয়ে থাকার নয় একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই।”
” আমার মেয়েকে তুমি উস্কে দিয়েছো তাই না?”
” একদমি না।যা হয়েছে যা হচ্ছে এসব তার জানা জরুরি।আপনি ভয় পাবেন না খুশবুর যেকোন বিপদ আপদে আমি পাশে আছি।”
বাহারুল হক ঢোক গিললেন।অনিমার ঝাপসা চোখ এখনি তাকে দূর্বল করে দিচ্ছে সত্যটা জানার পর কী হবে?যা হবার হবে এখন আর লুকিয়ে রাখার সময় নয়।বাহারুল হক বলেন,
” অনিমার সাথে আমার বিয়ের আট বছর চলছিলো তখনো আমাদের ঘরে কোন সন্তান নেই।অনিমার প্রেগ্ন্যাসির ২ মাস ৩ মাসে তিনটা বাচ্চা নষ্ট হয়।সবাই বলছিল আমি যেন দ্বিতীয় বিয়ে করি এবং অনিমাকে তালাক দি।আমি এত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।মূলত নেওয়ার সাহস করিনি।আমি একটি এনজিওতে চাকরি করতাম।আমার আব্বা আম্মার সাথে ঝগড়া করে অনিমাকে নিয়ে চলে আসি চট্টগ্রামে।সেখানে অনিমাকে নিয়ে নতুন বাসায় উঠি।ভাগ্যক্রমে সাত মাসের মাথায় অনিমা কনসিভ করে।সেইদিনের খুশি আর ধরে রাখতে পারিনি।একটা সন্তানের আশায় যত যা করতে হয় সব করেছি।অনিমাকে চোখে চোখে রেখেছি বাড়ির কাজ করতে আলাদা কাজের লোক রেখেছি।সব মিলিয়ে আট মাস পেরিয়ে গেল।একদিন ডাক্তারের চেকাপ সেরে আসার পথে আমাদের রিক্সায় পেছন থেকে ট্রাক ধাকায় দেয়।অনিমা ছিটকে পড়ে রাস্তায়।মাঝ রাস্তায় পড়ায় অনিমার উপর দিয়ে চলন্ত সিএনজির চাকা উঠে যায়।এরপর কি হয় তা না বলি।আশা করি বুঝতেই পারছো তোমরা।সেই বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেল না অনিমা তখন জীবন মরানের সন্ধিক্ষণে।বাচ্চার জন্য অনিমা যে পাগল হয়ে উঠবে আমি জানতাম।কি করবো তখন ভেবে পেলাম না।অনিমার জ্ঞান ফিরলে সে আমাদের সন্তান দেখতে চায় আমি এবং নার্সরা মিথ্যা বলে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম।
সেদিন রাতে একজন আয়া আমাকে জানালো যেদিন অনিমাকে হসপিটাল ভর্তি করা হলো সেদিন রাতে সেই হসপিটালে সিজারে এক দম্পত্তির নাকি জমজ বাচ্চা হয়েছে দরিদ্র পরিবারে তারা একটা বাচ্চা মানুষ করতেই হিমশিমে পড়বে তাই তারা বাচ্চা বিক্রি করতে চায়।ব্যস আমি আর নয় ছয় না ভেবে লক্ষ টাকার বিনিময়ে মেয়েটাকে কিনে নিয়েছিলাম।যেহেতু আমি চট্রগ্রাম একাই ছিলাম তাই এই তিক্ত সত্যটা কেউ জানলো না।শুধু আমি সবটা জেনেও ভুলে গেলাম খুশবুর জন্মদাতা পিতা আমি নই।
চলবে….