ফ্লুজি পর্ব-১৯

0
613

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৯]

রাগে টগবগ করছে আরশাদের শরীর।আগুনের ফুলকি আজ যেন তার চোখে ভাসছে।সেই ফুলকিতে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে খুশবুকে।আরশাদের চোখের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয়বার কথা বলার সাহস পেল না খুশবু।পুরুষ মানুষের এই হিংস্র রাগটাকে সে একটু বেশি ভয় পায়।যতই বাবার আদরের দুলালি থাক না কেন বাহারুল হক কোন ভুল ত্রুটি দেখলে বুঝিয়ে বলতেন পালটা সেই ভুল আবার হলে ওনার রাগ সংবরন করা মুশকিল।

খুশবু ওড়নার কোনায় আঙুল গুটিয়ে আমতা আমতা স্বরে কিছু বলতে প্রস্তুত হলে তার পাশে দাঁড়ানো এলিনা বলে,

” ব্রো ভাবি আমার সাথেই গিয়েছিল তুমি এতটা হাইপার হইও না।”

” এলিনা দূরে সরো আমি তোমার ভাবির সাথে কথা বলছি তোমার সাথে নয়।”

আরশাদ ধমক সুরে কথা বলে তাকালো খুশবুর পানে।মেয়েটার চোরা চাহনি আরশাদের নজর এড়ায় না।
আরশাদ কঠিন গলায় ফ্লুজির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,

” কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”

” এলিনার সাথে এই তো সামনের রাস্তায় হাটতে।”

” সামনের রাস্তায় হাটতে তিনঘন্টা সময় লাগে?”

” আমরা একটা কফি শপে বসেছিলাম।”

” বাইরে বেরিয়েছিলে কার পারমিশনে?”

” এলিনার সাথেই তো গিয়ে…”

” এলিনা তোমার হাজবেন্ড?শ্বশুর? নাকি শাশুড়ী?সে তো গার্জিয়ান নয়, তাহলে কেন গিয়েছিলে তার সাথে?”

আরশাদের ধমকে কেঁপে উঠলো খুশবু।তার গলা শুকিয়ে চৌচির।এই মুহূর্তে তার নিজেকে এই দেশে সবচেয়ে একা একা লাগছে।মায়ের কড়া শাসনের আড়ালে আদরে মুখটার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।খুশবুর চোখ ঝাপসা হলো আরশাদ সেই পর্যায়ে থমকে গেল।তবুও নিজের অগ্নিশর্মার রেশ ধরে রইল।

” কি হলো প্রশ্ন করেছি জাবাব কে দেবে?”

” আপনারা ছিলেন না বলে এলিনা আর আমি একটু হাটতে বেরিয়েছি ব্যস এইটুকুই।”

আরশাদ আর ফ্লুজিকে কিছু বলে না।এলিনার দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলে,

” তোমার ভাবিকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাও আমার ভিলায় তার স্থান নেই।সে যখন আমাকে না বলে এতদূর গিয়েছে তখন আমি তাকে আমার কাছে রাখতে চাই না।”

চকিতে তাকালো খুশবু।আরশাদ ভিলার দ্বার রুদ্ধ করলো।এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেললো খুশবু।

সন্ধ্যার পর আরশাদ,আরিব সহ বাড়ির সবাই যে যার কাজে বাইরে চলে যায়।বাড়িতে থেকে যায় এলিনা।একা একা দুজনে বাড়িতে বসে বিরক্ত হচ্ছে বিধায় এলিনা বললো বাইরে থেকে ঘুরে আসতে।খুশবু প্রথমে বারণ করলো জানাতে চাইলো আরশাদকে কিন্তু এলিনা তাড়া দেখাল আধা ঘন্টা থাকবে বলে বাইরে কাটিয়ে দিল তিন ঘন্টা।বাইরে থেকে এসে আরশাদের ভিলার তালা খোলা দেখে খুশবু ভয় পেল।তার ভয়টাকে সত্যি করে আরশাদ পরপর এতগুলো কথা শুনিয়ে দিল তাকে।

এলিনার সাথে ঘরে ফিরে নিরবে কাঁদলো খুশবু।তার ফোলা ফোলা চোখের দিকে তাকিয়ে এলিনার মনটা বিষণ্ণে ভরে গেল।

” আ’ম সরি ডিয়ার।আমি জানতাম না আরশার ভাইয়া এতটা রিয়েক্ট করবে।”

” ইট’স ওকে।”

” তুমি একদম কান্না করবে না প্লিজ।আমার কষ্ট হচ্ছে।”

খুশবু চুপ হয়ে যায়।এলিনা এটা ওটা কত কি বলে খুশবুর মন ভালো করার চেষ্টা করে।কিন্তু এই মন কি ভালো হয়?আরশাদ তার প্রিয় মানুষ।প্রিয় মানুষের একটা ফোড়ন মনে যেন দশটি ফোড়ন সৃষ্টি করে।

কিয়ৎক্ষণ বাদে আরশাদ ভিলায় এলো এলোমেলো পায়ে।তার পরনে সাদা শার্ট বুকের উপর তিনটে বোতাম খোলা যার দরুনে লোমশ বুকখানি উঁকিঝুঁকি মারছে খুশবুর পানে।বাদামী চোখ জোড়া খুশবুর পানে একবার তাকিয়ে যেন কড়া শাসনে কিছু বললো।আরশাদ এলিনাকে বলে,

” এচি ডাল্লা স্টেঞ্জা।”(রুম থেকে বের হও)

এলিনা রুম থেকে চলে যেতে আরশাদ দরজা বন্ধ করলো।হাতে থাকা প্যাকেট খুশবুর হাতে ধরিয়ে আরশাদ বসে চেয়ারে।খুশবু ভীতু চাহনিতে একবার আরশাদের পানে আবার প্যাকেটটির দিকে নজর ঘুরালো।

” শাড়িটা পরো।”

খুশবু দ্রুত প্যাকেট থেকে শাড়িটি বের করলো।সাদা শাড়ির উপর স্টোনের কাজ।

” শাড়ি কেন পরবো?”

” তোমাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি তৈরি হও।”

খুশবু ভয়ে কেঁদে ফেললো।হাতের প্যাকেটটি ছুড়ে আরশাদের হাত ধরে বসে পড়লো মেঝেতে।

” এমন করছেন কেন আপনি?ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এমন কেন করছেন?”

” কৈফিয়ত দিতে চাই না।”

” আরশাদ প্লিজ।”

খুশবুর হাত টেনে দাঁড় করায় আরশাদ।ফ্লুজির অশ্রু ভেজা দু’গাল চেপে ধরে সে বলে,

” যা বলছি করো।”

” না আমি পরবো না।আমি যাব না আমি আপনার সাথেই থাকবো।”

” আমি তোমাকে আমার সাথে রাখতে চাই না।যে ভুল একবার করলে সে ভুলের শাস্তি পেতেই হবে।”

আজ খুশবুর কান্নায় আরশাদের মন গলালো না?ছেলেটা এতটা কঠিন হলো কেন?

” আরশাদ এমন করছেন কেন?”

” কেন করছি তুমি জান না?”

” আমার ভুল ছিল আমি অনুতপ্ত এরপরেও…”

” এরপরেও বলছি শাড়ি পরে তৈরি হও।”

” আমি একবার গেলে আর কিন্তু ফিরবো না, জোরাজোরি করলেও না।”

” আমি জোরাজোরি করবো না।”

খুশবুর মনে জেদ চাপলো।মেঝে থেকে প্যাকেট তুলে চলে গেল ওয়াশরুমে।আরশাদ তাকে টেনে বের করলো এবং চেয়ারে বসে কঠিন স্বরে বলে,

” আমার সামনেই পরবে।”

” হোয়াট!”

” ইয়েস।”

” বাড়াবাড়ি করছেন কেন?”

“লজ্জা লাগছে?লজ্জা তো আগেই ভেঙে দিয়েছি।শুরু করো।”

খুশবু জেদ ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।আরশাদ তার শার্টের আরেকটা বোতাম খুলে রিল্যাক্স হয়ে বসলো।

” হানি ডু ইট প্লিজ।”

খুশবু আরশাদের কথা গায়ে মাখলো না।সে শুধু ফুঁপিয়ে কাঁদছে।ঘড়ির দিকে নজর বুলালো আরশাদ।এগিয়ে এসে নিজ হাতে খুলতে শুরু করে খুশবুর টপস।গায়ের জামা উদর ছাড়িয়ে বক্ষ ভাজে উঠতে খুশবু ছিটকে দূরে সরলো।কড়া চোখে আরশাদের দিকে তাকিয়ে শাড়ি নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
.
এলোমেলো খোলা চুল তার মাঝে সাদা শাড়িতে খুশবুকে অদ্ভুত লাগছে।না না অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।আরশাদ হাসে খুশবুর চুলে হাত বুলিয়ে বলে,

” ইয়ু লুক লাইক হন্টেড হাউজ কুইন।”

আরশাদ খুশবুর হাত টেনে আনলো।খুশবু মনে মনে প্রস্তুত হলো আজকেই আরশাদের সাথে তার শেষ বোঝাপড়া।আজকের পর আর কোন সখ্যতা রাখবে না সে।

আরশাদ খুশবুর হাত ধরে এগিয়ে গেল নিজের ভিলার দিকে।অন্ধকার গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে খুশবু।আরশাদ তার হাত ধরে আছে বলে নিজেকে সংযত রাখছে তা না হলে এতক্ষণে মেয়েটা চিৎকার চেচামেচি করে জ্ঞান হারাতো।নিজের গায়ে সাদা শাড়ি তার নিজেকেই নিজের কাছে লাগছে ভুতের বউ।

স্টোর রুম শেষে নিচ তলায় প্রবেশ করতে আচমকা আলো ছিটকে আসে খুশবুর চোখে।নিরবতা ছিন্ন করে একে একে ফাটতে থাকে বেলুন।তার মাথায় পড়ছে ঝিলমিল কাগজের টুকরো।খুশবু হতভম্ব,হতবিহবল!কি হচ্ছে তার সাথে?সারা ঘর আলোতে পরিপূর্ণ।একে একে দেখা দিল ইমরান ইহসান,আফরোজ,আরিব,গ্র‍্যানি, গ্লোরিয়া, এলিনা।সবাই চেচিয়ে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।আজ তার জন্মদিন!খুশবু দেয়াল ঘড়িতে তাকালো ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁয়েছে।

” কেমন সারপ্রাইজ দিলাম ভাবি?”

এলিনার প্রশ্ন মাথা ঢুকলো না খুশবুর।আরিব খুশবুর ভেজা চোখ দেখে বলে,

” ভাবিকে অনেক জ্বালানো হয়েছে আর কেউ জ্বালাবে না।আসো ভাবি কেকটা কাটো।”

আফরোজ জড়িয়ে ধরলেন খুশবুকে।চোখ মুছে এগিয়ে নিলেন।

” তোমাকে ভয় দেখানো হয়েছে মেয়ে।তোমার জন্মদিনের আয়োজন করতে আমরা এতকিছু করলাম।”

খুশবু দাঁতে দাঁত খিচে তাকালো আরশাদের পানে ছেলেটা চুল চুলকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।ইমরান ইহসান খুশবুকে বুকে জড়ালেন।

” আমার মেয়ে নেই তুমি আমার আরেক মেয়ে।তোমাকে আজ খুশি করতে গিয়ে কাঁদিয়ে ফেলেছি।এসব কুবুদ্ধি সব আরশাদের মাথায়।আমরা কেউ কিন্তু সম্মতি জানাইনি।”

” আমাকে মে রে ফেলার পরিকল্পনা।”

” ছেলেটাকে আমি বকে দেব।আসো মা কেক কাটবে।”

খুশবু সবাইকে নিয়ে কেক কাটলো।একে একে সবাই খুশবুকে উপহার দিল।আফরোজ ডায়মন্ডের একটি নেকলেস খুশবুর গলায় জড়িয়ে বলে,

” গত জন্মদিনে গোল্ডের গহনা দিয়েছি, বলছিলাম আগামীবার ডায়মন্ড দেব।কি দেখলে তো কথা রেখেছি।”

আফরোজের কথায় চমকে গেল খুশবু।গত জন্মদিনে গোল্ডের গহনা!কি বলছেন উনি?খুশবু আমতা আমতা করে বলে,

” গত জন্মদিন?”

” এই রে মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে সব ভুলে গেছে।গতবার যে গোল্ডের গহনা পাঠিয়েছিলাম মনে নেই?তুমি তো ভীষণ পছন্দ করেছিলে।”

খুশবু প্রত্যুত্তর করলো না।গত জন্মদিন সে পরিবারের সহিত পালন করেছে অথচ উনি এসব কী বলছে?এক মুহূর্তের জন্য খুশবুর মনে হচ্ছে তার নিশ্চয়ই স্মৃতি হারিয়েছে আর না হয় তার জমজ কোন বোন আছে।আরশাদ যাকে অতি প্রিয় সম্বোধনে ফ্লুজি বলে ডাকে সেই মেয়েটি তবে কে?চিন্তার জগৎ-সংসারে আরেকবার হারিয়ে যায় খুশবু।

জন্মদিন উপলক্ষে আজ বাইরে থেকে খাবার আনা হয়েছে।আরশাদের ভিলায় সবাই আনন্দ সহকারে ডিনার সারলো।সবাই যেতে দরজা বন্ধ করে আরশাদ দাঁড়ালো তার ফ্লুজির সম্মুখে।

” আ’ম সরি জান।তোমাকে কাঁদাতে চাইনি।”

” আমি দেশে ফিরতে চাই।আমাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।”

” রাগ করে না জান।”

” রেগে বলছি না সজ্ঞানেই বলছি আমি চলে যাব।”

খুশবু মুখ ফেরালো।মেয়েটার অভিমানি দু’চোখের ভাষা আরশাদ বুঝে।দ্রুত হাতে খুশবুকে কোলে তুললো সে।

” চলো ভালোবাসার জগৎতে হারিয়ে যাই।”

” আপনার রোমান্টিক মুড আপনি আরেকটা বউ খুঁজুন আমি এখন রোমান্টিক মুডে নেই।আমি বাড়ি যাব।”

আরশাদ হাসে।দ্রুত পায়ে চলে যায় দোতলার কক্ষে।
দ্বিতীয় বারের মতো আরশাদের কক্ষ আজ সাজানো হয়েছে।সফেদ চাদরে গোলাপের লাল পাপড়ি গুলো খুশবুর মনোযোগ টানছে।আরশার খুশবুকে বিছানায় বসায়।মেয়েটার নগ্ন পা বিছানায় তুলে ঝুকে যায় খানিকটা।

” আরশাদ আজকের দিনটার কথা আমার মনে নেই।আপনি আমাকে একটু ইঙ্গিতো দিলেন না আমার জন্মদিন আজ।”

” সারাটা দিন সারাটা সময় তুমি আমার মাথায় ঘুরছো তোমার এই বিশেষ দিন আমি ভুলে যাব?ইট’স রিডিকিউলাস।”

” কিন্তু আমাকে কাঁদালেন কেন আরশাদ?আপনি জানেন আমি কতটা ভয় পেয়েছি?”

” সরি জান।এমন না করলে তোমার আকুতি দেখতাম কী করে?”

” জানেন আজ একটা কান্ড হলো।রেস্টুরেন্টে আমাদের একটা ছেলের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে,ছেলেটা ইন্ডিয়ান।”

” তো?”

“ছেলেটা বুঝতে পারেনি আমি বিবাহিত এলিনার কাছে একটা নাম্বার দিয়ে গেছে।”

” তো?”

” সে আমার সাথে সম্পর্কে যেতে চায়।হা হা হা আমরাও কিচ্ছু বলিনি আমি যে বিবাহিত আমরা শুধু মজা নিয়েছি।”

আরশাদ থমথমে মুখে তাকিয়ে থাকে খুশবুর পানে।আনন্দের মাঝে ছলকে উঠে তার রক্ত।শিরায় উপশিরায় বয়ে চলে ভয় আর হিংসা।আরশাদ খুশবুর হাত টেনে ধরে।ছেলের পাগলামি চোখের পলকে বেড়ে যায়,

” এইজন্য তোমাকে একা ছাড়ি না।তুমি.. তুমি আমার চোখে চোখে থাকবে।”

খুশবু জিহবায় কামড় বসায়।কোথায় কি বলেছে ফেলেছে সে!

” তুমি কার?বলো তুমি কার?”

” আরশাদ আপনি…”

” জান আমার ভালো লাগছে না।আমি পানি পানি..”

আরশাদ উঠে দাঁড়ালো জগ থেকে পানি নিয়ে দ্রুত গলা ভেজালো।ছেলেটা পাগলের মতো বিলাপ করছে।ফ্লুজির হারিয়ে যাওয়ায় আরশাদের মাঝে যে প্রভাব ফেলেছে তার রেশ যেন আবার ফিরে আসছে।আরশার উন্মাদ হলো, খুশবুকে জড়িয়ে রাখলো শক্ত করে।

” ছেলেটার সাথে তুমি কি কথা বলেছো?”

” না না এলিনা বলেছে।”

” আই কিল হিম।”

” আরশার আপনি এতটা উত্তেজিত হচ্ছেন কেন?এটা শুধুই মজা।”

আরশাদ খুশবুর চোখে চোখ রাখলো।ঠোঁটে ঠোঁট মেশালো মুহূর্তে।এলোমেলো হলো আরশাদের ছোয়া।খুশবুর শরীর থেকে শাড়ির আঁচল সরাতে মেয়েটা লজ্জায় সংকুচিত হয়।খুশবু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

” আরশাদ আমি প্রস্তুত নই।”

আরশাদের রক্ত ছলকে যায়।চোখ রাঙিয়ে তাকায় খুশবুর পানে মেয়েটাকে ধাক্কায় বিছানায় ফেলে হাতের ভাজে হাত গুটিয়ে বলে,

” আমাকে আর ভালো লাগে না?আমার ছোঁয়া ভালো লাগে না?আমাকে ভালোবাসতে আর ভালো লাগেনা?”

” আরশাদ এসব কি বলছেন?”

” ফ্লুজি আই নিড ইয়ু।আই বেডলি নিড ইয়ু।”

আরশাদের উন্মদনা বাড়ে।খুশবু আর বারণ করে না।এলোমেলো হয় আরশাদের হাতের ছোঁয়া।আরশাদ যে সুস্থ স্বাভাবিক নেই খুশবু বুঝতে পারে।প্রতিহিংসার বশে ডুবে এই রাতটা খুশবুর জাহান্নাম করে ছাড়বে।খুশবু ভয় পায় আরশাদের কোমল ছোঁয়া গুলো ধীরে ধীরে হিংস্র হয়ে উঠে।খুশবু কৌশলে আরশাদকে জড়িয়ে নেয় ছেলেটার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

“আরশাদ আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যেয়ে চাই না।আমি আমৃত্যু আপনার সাথে থাকতে চাই।রাখবেন আমায়?”

আরশার মুখ তুলে তাকালো।আগুনে জল পড়লে যেমন সব থেমে যায় তেমনি থেমে গেছে আরশাদ।তার ভয় কেটেছে।খুশবু সেচ্ছায় আরশাদের ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।এলোমেলো ছোঁয়ায় উত্তাল হয় দু’টো শরীর।আরশাদের ছোঁয়ায় ক্রমশ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায় খুশবু।আরশাদ কৌশলে বিছানার হেডবোর্ডে খুশবুর হাত বেধে দেয়।মেয়েটার নগ্ন দেহ নিজের দেহের ভাজে আড়াল করে হাসে।খুশবু ভয় পায় নিজের হাত ছাড়াতে চাইলে আরশাদ মেয়েটার ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।আরশাদ হাঁপিয়ে উঠে।তার ফ্লুজির মুখে আসা চুল কানে গুজে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।

” ফ্লুজি আমার জান,বেটার ফিল করছো?”

” আপনি এমন করছেন কেন?আমার হাতটা ছাড়ুন।”

” পালাবে?অন্য কার কাছে যাবে?তোমার হাসিতে নিশ্চয়ই ছেলেটার হৃদয়ে আন্দোলন করেছে অথচ আমার যে জখম লেগেছে।”

” আরশাদ প্লিজ ভুল বুঝবেন না। আপনার কি চাই বলুন।

” তুমি কি সুখ হবে?শুধু আমার।”

চলবে….

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৯ বাকি অংশ]

মৃদু বাতাসে নগ্ন গায়ে কাটা তুললো খুশবুর।পেটে ভারি অনুভব হতে মাথা তুলে তাকালো একবার।এ আর নতুন কী?প্রতিটা সকাল খুশবুর এক ভাবেই শুরু হয়।হয় আরশাদ তার সারা দেহ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আর না হয় আরশাদের বুকের পাটায় বন্দি সে।বিছানায় দুমড়ে মুচড়ে থাকা গোলাপের পাপড়িগুলোতে হাত বুলিয়ে দেখলো খুশবু।গত রাতের কথা মাথায় আসতে ঠোঁট বাকায়।তার মনে হয় আরশাদ একটা পাগল, না না শুধু পাগল নয় বুঝদার পাগল।এই পাগলের পাগলামি শুধুমাত্র তাকে ঘিরে।

আরশাদের চুলের দরুনে খুশবুর পেটে সুড়সুড়ি লাগতে খুশবু কুচকে যায়।নিজেকে ছাড়াতে ছেলেটাকে যতটা সম্ভব পারা যায় সরিয়ে দিতে চায়।ধাক্কায় আরশাদের ঘুম ভেঙে যায় ঘুমঘুম দৃষ্টিতে চমকে তাকালো খুশবুর পানে।

” ফ্লুজি কি হয়েছে?জান ঠিক আছো?”

আরশাদের আকুল কণ্ঠে খুশবু চুপসে যায়।আরশাদের চাহনিয়ে লজ্জায় পড়ে দ্রুত হাত রাখে উন্মুক্ত বক্ষ ভাজে।আরশাদ হাসে মেয়েটার চোখে চোখ রেখে বলে,

” লজ্জা পায় না জান।আর কতবার লজ্জা ভাঙতে হবে?”

” আরশাদ সরে যান উঠতে হবে।”

আরশাদ সরে না বরং উঠে এসে নিজের বুকের কোনে জড়িয়ে ধরে খুশবুকে।মেয়েটার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,

” জান যাবে?”

” কোথায়?”

” ভেনিস!স্বপ্নের শহরে।”

” সত্যি?”

” হুম।তৃতীয় বাসর ওখানে করতে চাই।”

” এসব ছাড়া কি আর কোন কথা নেই আপনার?”

“আর কি বলবো?ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর কথা বলবো?তাতেও তো আবার সেই কথা।”

” আরশাদ।”

” বলো জান।”

” আমাকে উঠতে দিন।”

আরশাদ শরীর বাকিয়ে উঠে বসলো।হাত টেনে ধরলো তার ফ্লুজির।মেয়েটা উন্মুক্ত দেহে দ্রুত চাদর টেনে নিজেকে আবৃত করল।আরশাদ মৃদু হেসে কোলে তুলে নেয় তার ফ্লুজিকে।পূর্ব আকাশে সূর্যটা উঠতে শুরু করেছে।নীল আকাশ তার মাঝে মৃদু বাতাস জানান দিচ্ছে ইতালির বসন্ত।ব্যাক ইয়ার্ডে সবুজ ঘাসে হেলেদুলে নৃত্য করছে সাদা ডেইজিরা।আরশাদ জানলার সম্মুখে দাঁড়ালো শীতল সমীরে খুশবুর গায়ে কাটা দিল সহসা।আরশাদের বাদামী চোখের তাকিয়ে খুশবু হারিয়ে যায় বারংবার।খুশবুর হাত আপনা আপনি ছুঁয়ে গেল আরশাদের চুলে।আরশাদ হেসে বলে,

” আরেক বার চলবে?”

” মানে?”

” লুক এট মি জান।”

” তাকিয়ে কি হবে?”

” তুমি গলে যাবে?”

” গলে কি হবে?”

” গলে তুমি নিজেই বাধ্য হবে আমার কাছে নিজেকে উজাড় করতে।”

” আমি উজাড় করি আর না করি আপনি তো এক ধাপ এগিয়ে আমাকে সিডিউস করতে।”

” আমি জোরাজোরি করে কিছু কর‍তে চাই না।জোরাজোরি করে করার চাইতে তোমাকে সিডিউস করা বেটার অপশন, তাই না জান?”

খুশবু ঠোঁট কুচকায়।আরশাদ তার ফ্লুজির কানের লতিতে চুমু খেয়ে ছুটে চলে যায় ওয়াশরুমে।

” একটা হট শাওয়ার দরকার জান।”

” ওকে আপনি যান।আমি পরে যাব।”

” তুমি ছাড়া শাওয়ার হবে তবে হট হবে না।”

আরশাদ তার ফ্লুজিকে নামালো না।বরং কোলে নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।
.
আরিবের ক্লাস শেষ হতে দুপুর হয়ে গেল তার ইউনিভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়া থেকে কফি নিয়ে ফিরে এলো মাঠে।আরিব তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিল হঠাৎ তার সম্মুখে উপস্থিত হয় ডিলান, অ্যাডেন, কডি এবং এলোন।
তাদের সকলের পেছন এসে দাঁড়ায় জন।আরিব তার হাস্যজ্বল মুখ ধরে রেখে বলে,

” হ্যালো ব্রো।”

ডিলান কিঞ্চিৎ হেসে প্রশ্ন করে,

” কেমন আছো আরিব?”

” ফাইন।হঠাৎ এখানে?”

” তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।”

” আমার সাথে?”

কডি আরিবের কাঁধে হাত রেখে বলে,

” তোমার সাথে কথা আছে আরিব প্লিজ আমাদের কিছুটা সময় দাও।”

আরিব ঘাবড়ে গেল।তার ভাইয়ের বন্ধুরা এভাবে কখনো একা আসেনি।

” কিছু কি হয়েছে?”

” কিছু হয়েছে কি না জানি তবে তোমাকে কথা গুলো জানানো জরুরি।”

” কি হয়েছে?”

” ক্যাফেটেরিয়ায় বসি?”

” শিওর।”

সবাই মিলে চলে গেল ক্যাফেটেরিয়ায়।আরিবের বুকের ভেতরটায় ধুকপুক করছে।কোন ভনিতা ছাড়া জন বলে,

” আমাকে চিনতে পেরেছো?”

” জি না।”

” আমি এলোনের কাজিন।আরশাদের সিনিয়র।”

” ওকে।”

” সমস্যাটা আরশাদকে নিয়ে।সরাসরি এই কথাটা আরশাদকে বলা মানে আমরা সবাই লা শ হওয়া।তাই আমরা চাই না কেউ বলতে।”

” কি হয়েছে ভাইয়া?”

” আরশাদের ফ্লুজি অর্থাৎ সেই মেয়েটা একজন প্রফেশনাল কলগার্ল।”

” হোয়াট!”

” ইয়েস।”

” এতটা বাজে কথা বলার সাহস কি করে পেলেন?ভাবি যথেষ্ট ভালো মেয়ে সে ভালো ফ্যামিলির মেয়ে।”

” ভালো মেয়ে মাই ফুট।”

” কোথাও কোন ভুল হচ্ছে।ফ্লুজি ওমন মেয়ে নয়।”

” প্রুভ লাগবে?প্রুভ ছাড়া কথা বলতে আসিনি।”

জন তার ফোন বের করে সব ছবি দেখাল।আরিবের গা শিউরে উঠলো।বিশ্বাসের আয়না ভেঙে চুরমার হয়ে গেল মুহূর্তে।ঘৃণায় বিষিয়ে উঠলো মন।

” বিশ্বাস হয়?”

” হোয়াট দা হেল।আরশাদ ভাইয়া জানলে…”

“আরশাদকে এসব যে জানাবে সেই বিপদে পড়বে তাই তো তোমার কাছে এলাম।”

” আপনারা এসব ছবি কোথায় পেলেন?”

জন হাসে।গা ছেড়ে বসে বলে,

” বাংলাদেশ গিয়েছিলাম আমার সিনিয়রদের সাথে সেখানে একটি বিলাসবহুল হোটেলে এক রাতের জন্য সবাই তোমার ভাইয়ের ফ্লুজিকে বুক করে।মেয়েটার চার্জ জান?পুরুষের মনরঞ্জের এক্সপার্ট।আরশাদ তো প্রতিদিনি ভোগ বিলাশ করছে।”

আরিব চোখ বন্ধ করে লজ্জায় বিষিয়ে যচ্ছে তার শরীর।

” আমাকে এখন কি করতে হবে?কোন প্রমান ছাড়া আমার ভাইয়ের সংসার ভাঙতে হবে?”

আরিবের কথায় ভ্রু কুচকে ফেললো কডি।ছেলেটা টেবিলে আঘাত করে বলে,

” প্রমান?আরো প্রমান চাই?এসবে হচ্ছে না।”

” না হচ্ছে না।”

” বোকা ছেলে তুমি কি চাও তোমার ভাইয়ের জীবন এভাবে নষ্ট করতে?শুনো আরশাদ আমাদের বন্ধু আমরাও আরশাদের ভালো চাই।তুমি ওর ভাই ওঁকে সহজে বোঝাতে পারবে।আমাদের কথা কোন কালে আরশাদ গায়ে মাখেনি।”

আরিব হ্যাঁ না কোন কথাই বললো না।ছেলেটা মূঢ় হয়ে বসে রইল।আরিবকে আরো বুঝিয়ে সবাই চলে গেল।ছেলেটা নিজের দিশা হারালো এতটা বাজে সত্যের মুখোমুখি তাকে কেন হতে হলো?আরশাদ সুখে আছে থাক না সুখে কেন আচমকা প্রলয় এসে ছিন্ন করছে তার জীবন।
.
সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আসলো আরশাদ।নিজের ভিলায় ফির‍তে গ্র‍্যানি আর এলিনাকে বিছানায় দেখলো।সবার মাঝে খুশবু শুয়ে।মেয়েটার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন আফরোজ।আরশাদ উত্তেজিত হলো দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বলে,

” কী হয়েছে ফ্লুজির?”

আফরোজ চিন্তিত হয়ে বলেন,

” হঠাৎ মেয়েটার জ্বর এলো কেন?”

আরশাদ ঢোক গিললো।আবেগে পড়ে তখন দুজনে মিলে মিশে ভিজে একাকার হয়েছিল।ঘন্টার পর ঘন্টা আবেগকে স্বীকৃতি দিয়ে এই অঘটন ডেকে আনলো।আরশাদ দ্রুত বসলো তার ফ্লুজির কাছে মেয়েটার জ্বরে গা পুড়ছে।

” চলো ডাক্তারের কাছে যাই।”

আফরোজ বলেন,

” ওষুধ আনা হয়েছে আজ রাতটা দেখো কাল যদি জ্বর না সারে তবেই যেও। ”

” না না আজ যাব এক্ষুনি যাব।”

” মেয়েটা জ্বরে দাঁড়াতেই পারছে না তুমি এখন ‌কীভাবে যাবে?”

” কোলে নিয়ে যাব।”

গ্র‍্যানি পাশ থেকে বলেন,

” এত উতলা হতে হবে না।ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে জলপট্টি দিয়েছে অসুখ সেরে যাবে।”

” যদি না সারে?”

” যদি সেরে যায়?”

গ্র‍্যানির পালটা প্রশ্নে আরশাদ প্রত্যুত্তর করলো না।সে একমনে চেয়ে রইল খুশবুর দিকে।তখন রুমে এলো আরিব, ছেলেটা শুকনো মুখে বলে,

” মম ড্যাড তোমায় ডাকছে।”

” কেন?দেখো তার কিছু লাগবে কি না।”

” জিজ্ঞেস করেছি বললো তো আর্জেন্ট।”

আফরোজ উঠে দাঁড়ালেন।আরশাদের পানে তাকিয়ে বলেন,

” শুনো মেয়েটাকে ঘুমাতে দাও।প্রপার রেস্টের প্রয়োজন।ওষুধ যা খাওয়ানোর আমি খাইয়ে গেছি।রাতে আরেকটা ওষুধ আছে।তুমি গরম গরম স্যুপ করো।আমি গেলাম।”

আফরোজ চলে গেলেন সেই সাথে গ্র‍্যানিও চলে গেলেন।এলিনা সব কিছু এড়িয়ে অবাক হয়ে তাকালো আরিবের পানে।আরিবের হঠাৎ কি হলো?সারাক্ষণ ছেলেটা ভাবি ভাবি বলে অস্থির অথচ ভাবি আজ জ্বরে পুড়ছে ছেলেটা দেখেও আগ্রহ দিল না!কিন্তু কেন?
.
আরশাদের সারাটা রাত গেল দুশ্চিন্তা।তার ফ্লুজির সুস্থতা রাতের ঘুম কেড়েছে।ঘুমন্ত ফ্লুজির গালে কপালে কত বার যে চুমু খেয়েছে তার হিসেব নেই।ছেলেটার ভয় বাড়লো অতি জ্বরে তার ফ্লুজির না আবার কোন ক্ষতি হয়ে যায়।

রাত পেরিয়ে ভোর হলো।আরশাদের শরীর ততক্ষণে ঝিমিয়ে এসেছে।ঘুমন্ত ফ্লুজিকে জড়িয়ে রেখে বিড়বিড় করে বলে,

” আমার সুখ অসুখে পুড়ছে আমি সুখে থাকবো কেন?”

আরশাদের মনে হঠাৎ জেদ চাপলো।ছুটে গেল ওয়াশরুমে।ঝরনার নব ঘুরাতে ঝিরঝিরে পানি ভিজিয়ে দিল তাকে।মনের জেদে ঘন্টার পর ঘন্টা সে দাঁড়িয়ে রইল।আসুক আজ জ্বর সেও তার সুখ অসুখে সে কেন থাকবে সুখে?
চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে