#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৭ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য]
সোফায় পা গুটিয়ে বসে আছে খুশবু।তার পরনে লং শার্ট চুলগুলো ছড়িয়ে আছে পিঠ জুড়ে।আরশাদ আয়নায় দাঁড়িয়ে আড় চোখে দেখলো মেয়েটাকে।তার ফ্লুজির ডাগর ডাগর চাহনি তাকে বরাবরি আকৃষ্ট করে।
” ফ্লুজি এভাবে বসে না থেকে যা বলছি তাই করো।”
” আমি যাব না আরশাদ।”
” জান তোমার কথা আমি শুনতে চাইছি না।যা বলছি করো।”
” আমি নতুন জায়গায় সহজে এডজাস্ট হতে পারিনা।আমার ঘর থেকে বের হতে কেমন কেমন জানি লাগে।গ্র্যানি,গ্লোরিয়া ফুপ্পি,এলিনা এরা আমার সাথে মেশার জন্য পা গ ল তারা কথা বলতে চায় কিন্তু আমি তাদের কথা আয়ত্তে আনতে পারছি না।”
” একটা সময়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমাদের বাংলাও কিন্তু কম কঠিন নয়।”
” আপনি যান আরশাদ আমি যাব না।”
আরশার কিছুই বলে না।গায়ের শার্টটা ঠিকঠাক করে খুশবুর কাছে এগিয়ে যায় এবংমেয়েটাকে সোফা থেকে কোলে তুলে নেয়।খুশবুর দু’পা বেঁধে যায় আরশাদের পিঠে।নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আরশাদের গলা জড়িয়ে ধরে সহসা।
” যদি এখন বাইরে না যাও আমিও যাব না।যেহেতু আমার কোন কাজ নেই সেহেতু এখন অন্যকিছু হবে।”
” অন্যকিছু কি আরশাদ?”
আরশাদ হাসে।ফ্লুজির উন্মুক্ত গলায় নাক ঘষে হালকা কামড় বসায়।খুশবু শিউরে উঠে আরশাদের ঘাড় খামচে ধরে চোখ পাকায় সে।
” এইই।”
“এইইই কি হুম?শার্টের উপরের বোতাম দু’টো খোলা কেন?আমাকে সিডিউস করছো?”
” আমি…”
” হানি তোমাকে দেখলেই আমি সিডিউজ হয়ে যাই।”
” নিয়ন্ত্রণহীন যুবক।
” নিয়ন্ত্রণে আছি বলেই বিয়ের বছর ঘুরে আসছে অথচ তুমি আমি ভার্জিনের তকমা লাগিয়ে চলছি।দিস ইজ আনফেয়ার জান।
আরশার ফ্লুজিকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় বসায়।নিজের শার্টের বোতাম খুলে ফ্লুজির শার্টের বোতামে হাত দিতে হাত আটকে ধরে মেয়েটা।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে সে বলে,
” আরশাদ কি করছেন?”
” তুমি যাবে না তাই তো অন্যকিছু করতে চাইছি।”
ফ্লুজি ঢোক গিলে দ্রুত নিজের শার্টের বোতাম লাগিয়ে উঠে দাঁড়ায়।চুল আঁচড়ে মাথায় জড়িয়ে নেয় হিজাব ওড়না।আরশাদ হাসে।খুশবু ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে আরশাদকে বলে,
” আমি তৈরি এবার চলুন।”
” আমি তো তৈরি নই জান।”
” এই তো সব ঠিক ছিল এখন আবার কী হলো?”
” কাছে আসো জান।”
খুশবু সহসা কাছে আসে আরশাদ তাকে আদেশ করে বলল,
” হানি শার্টের বোতাম লাগিয়ে দাও।”
” নিজে খুলেছেন নিজে লাগাবেন।আমাকে বলছেন কেন?”
” একটুতো রোমান্টিক হও জান।সব কি আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে হবে?”
” সেদিন কি বলেছেন মনে নেই?সামলে যাও জান,তুমি নিজেকে কন্ট্রোলে না আনলে এখন আমার কি হবে।তবে এখন এসব বলছেন কেন?”
” এখন কোন বাঁধা আছে?এখন চাইলে হ্যাঁ না চাইলেও হ্যাঁ।”
খুশবু ঠোঁট বাঁকায়।আরশাদের শার্টের বোতামে হাত রাখতে আরশাদ বলে,
” কিস মাই চেস্ট জান।”
” কি!”
” ঠিকটাই শুনেছো যা বলছি করো জান।”
” আপনি ভীষণ বাজে লোক।”
” জানি তো হানি।”
খুশবু সরে যায় আরশাদ তাকে বাঁধা দিয়ে আরো কাছে টানে।খুশবুর পালটে যাওয়া স্বরটা আরশাদের ধরে ফেলতে সময় লাগে না।ছেলেটা কিঞ্চিৎ হেসে তার ফ্লুজির গালে চুমু খেয়ে বলে,
” ছেড়ে দিলাম জান।তবে সুদ আসল দু’টোই আদায় করে নেব।”
.
একটি সুপার শপে ঘুরে ঘুরে খাবার দেখছে আরশাদ।তার প্রয়োজনীয় সব ঝুড়িতে তুলে খুশবুকে বলে,
” হানি আমার প্রয়োজনীয় সব নেওয়া শেষ।তোমার কি কি লাগবে নিয়ে নাও।এটা বাঙালি দোকান হালাল হারামের ঝামেলা পোহাতে হবে না।সবটাই হালাল যা ইচ্ছা নাও।”
” আমি আবার কি নেব।আমার কিছু চাই না।”
” তা বললে তো হবে না।চিপস চকলেট কি লাগবে বলো?”
” আরশাদ আমি বাচ্চা নই।”
” এসব খেতে হলে বাচ্চা হতে হয় নাকি?”
ফ্লুজি প্রত্যুত্তর করে না।তার চোখ যায় চকলেটের দিকে একটি চকলেট হাতে তুলে আরশাদকে দেখিয়ে বলে,
” এই একটা হলেই চলবে।”
আরশাদ ভ্রু বাঁকায়।দেরি না করে তাকে থাকা সব চকলেট নিজের ঝুড়িয়ে নিয়ে নেয়।শুধু এক ধরনের চকলেট নয় যত প্রকার চকলেট চিপস ছিল সবটাই নিজের ঝুড়িতে রাখে।খুশবু অবাক হয় আরশাদকে বাঁধা দিতে গেলে ছেলেটা তার মাথায় টোকা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।
শপে থাকা সবার চোখ তখন কপালে এমন ক্রেতা তাদের দোকানে আছে ঠিকি তবে যাচাই-বাছাই ছাড়া এভাবে কেনে কয়জন?
কেনাকাটা শেষে আরশাদ খুশবুর হাত ধরে বেরিয়ে এলো।সব প্যাকেট গাড়িতে রেখে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিল।
” বিকাল হয়ে গেছে কি খাবে জান?”
” যে চমক আপনি খাইয়ে ছাড়ছেন এরপর আমার পেটে আর কিছু ধরবে না।”
আরশাদ হাসে।কিছুক্ষণ পর তার গাড়ি এসে থামে বাঙালি একটি রেস্টুরেন্টের সামনে।খুশবু বুঝতে পারি এটি নিশ্চয়ই আরশাদের রেস্টুরেন্ট।
” এটা আপনার?”
” না তোমার।আমার সব তোমার ফ্লুজি।ইয়ু ওন ইট।”
আরশাদ তার ফ্লুজির হাত ধরে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।ইতালির পরিবেশের মাঝে এক টুকরো নিজের দেশীয় ছোঁয়া পেয়ে পুলকিত হলো খুশবুর মন।আশেপাশে মাটির ফুলদানি দিয়ে সজ্জিত।দেয়াল জুড়ে আছে হরেক রকম পেইন্টিং।প্রত্যেকটি পেইন্টিং দেশীয় ছোঁয়ায় আবদ্ধ।দেয়ালের এক কোণে আকা হয়েছে শিমুল গাছ।অন্য কোণে বাগান বিলাশ।বিশাল দেয়াল জুড়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশের ছবি।আরেকটি দেয়ালে নারীদের ধান ঝারার দৃশ্য।
খুশবু যখন সবটা অবাক পানে দেখছিল তখনি তার সামনে ভিড় জমায় একদল বাঙালি ছেলে মেয়ে।
আরশাদ সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় খুশবুকে।রিমি খুশবুর হাতে ধরিয়ে দেয় একটি লিলি ফুল।
” মেম আপনি লিলি ফুলের মতো সুন্দর।”
খুশবু কিঞ্চিৎ হাসে।এতক্ষণ পর কারো মুখে নিজের বাংলা কথা শুনে ছলকে উঠে তার মন।
আরশাদ তার ফ্লুজিকে বসায় একটি চেয়ারে।আশপাশটায় নজর ঘুরিয়ে সে বলে,
” রেস্টুরেন্ট ফাঁকা কেন?”
” এখানে সবাই ধরা বাঁধা নিয়ে চলে।সকালের নাস্তা তারা সকালেই কপ্লিট করবে।এবং দুপুরেরটা দুপুরেই শেষ হবে।সবটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর ক্লোজ হয়ে যায়।এবার তুমি বলো কি খাবে?”
” আপনি যা নেবেন।”
আরশাদ খুশবুকে মেন্যু কার্ড দেখায়।এটা ওটা কত খাবার।খুশবু নিজের নির্দিষ্ট কোন পছন্দের খাবারের নাম বলেনি।আরশাদ অসন্তুষ্ট হয়।মেন্যু কার্ড বন্ধ করে বলে,
” ইন্ডিয়ান ফুড চলবে?”
” শিউর।”
” বাসন্তি পোলাও,মাটন,ডাব চিংড়ি,ভেটকির পাতুরি,ভাত,মুগের ডাল, ঝুরি আলুভাজা,দই,মিষ্টি,পায়েস…”
” এই থামুন থামুন এত খাবার কে খাবে?আমি কিন্তু ভোজন রসিক না।”
আরশাদ হাসে।অর্ডার পেয়ে প্রত্যেকটা স্টাফ লেগে পড়ে তাদের কাজে।
আরশাদের সাথে একটা সুন্দর সময় কাটলো তার।রাতে পরিবারের সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো।যদিও সেখানে উপস্থিত নেই ইমরান এবং আরশাদ। এলিনা ভীষণ ছটফটে মেয়ে খুশবুকে নানান কথা বলে অস্থির করে তুলছে।গ্লোরিয়া গরম গরম পাকোড়া ভেজে বসলো তাদের সাথে।আফরোজ অফিস শেষে বাড়ি এসে বিশ্রাম নিচ্ছেলিন হঠাৎ খুশবুর খিলখিল হাসির শব্দে বেরিয়ে এলেন রুম থেকে।কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“এই হাসে কে?”
খুশবু ভড়কে যায় আমতা আমতা করে বলে,
” আমি আম্মু।’
” এই সুন্দর হাসিখানা কি আমার বেয়াই বেয়ানের সামনে দেওয়া যায় না?তারা যে আপনার চিন্তায় অস্থির আপনি কি জানেন?”
খুশবু লজ্জা পায়।আফরোজ মেয়েটার কপালে চুমু খেলেন।পালটা চুমু খেল গ্র্যানি।গ্লোরিয়া তখন ছুটে এসে বলে, “আমি বাদ যাব কেন?” গ্লোরিয়া চুমু খেল খুশবুর কপালে।এলিনা এসে সেও একই কাজ করলো।আরিব তখন সরু চোখে তাকিয়ে ছিল,
” আমি বাদ যাব কেন?”
আরিবের মুখে এমন কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠে।ছেলেটার মুখ ভঙ্গি বদলালো না।মাছি তাড়ানোর মতো বলে,
” ভাইয়ার প্রোপাটিতে যে এমন করছো ভাই জানলে শূলে চড়াবে।”
.
রাত বেশি নয় খুশবু বাবা মায়ের সাথে কথা সেরে আরশাদের ভিলায় ফিরে আসে।নিচ তলায় স্লো সাউন্ডে গান চলছে।রান্নাঘর থেকে শোনা যাচ্ছে খটখট চাকু চালানোর শব্দ।খুশবু এগিয়ে গেল, আরশাদ দক্ষ হাতে এভোকাডো স্লাইস করছে পাশের বাটিতে দেখা যাচ্ছে কিছু স্টবেরি কাটা।
” আরশাদ কি করছেন?”
” হানি এসেছো।কাম।”
খুশবু এগিয়ে এলো আরশাদের পাশে দাঁড়াতে দেখতে পেল, কিউই,রাসবেরি,আপেল রাখা।
” আমি কেটে দিব?”
” তুমি পারো?”
খুশবু দ্বিধায় পড়লো, কি বলবে সে?কাটাকুটির কাজে সে কখনো হাত লাগায়নি।অনিমা তাকে রেখেছে মোমের পুতুলের মতো।খুশবুর নিরবতা দেখে হাসে আরশাদ।মেয়েটার কোমড়ে হাত রেখে বসিয়ে দেয় উপরে।
” বসে থাকো।আমায় দেখো।”
” আপনি কি করছেন?”
” ফ্রুটস সালাদ করছি।তোমার নাকি ক্ষুধা নেই একটু কিছু তো খেতেই হবে জান।”
পাশের চুলোয় ডিম সিদ্ধ হচ্ছে।ডিমের পাতিল নামিয়ে খুশবুর মুখে একটি আপেলের স্লাইস দিয়ে আরশাদ বলে,
” খাও।”
.
ডিনার শেষে নিজের রুমে ফিরে আসে খুশবু।দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে নাকে লাগে এক মিষ্টি সুভাস।খুশবু ভয় পেয়ে যায় অন্ধকার রুমে এত সুভাস কিসের?মেয়েটা ঢোক গিলে পেছনে ছুটতে নিলে আরশাদের চওড়া বুকের সহিত ধাক্কা খায়।
” কি হয়েছে হানি?”
” আরশাদ কিসের ঘ্রাণ?”
আরশার খুশবুকে কোলে তুলে নেয়।রুমে প্রবেশ করে খুশবুকে বসিয়ে দেয় বিছানায়।বিছানায় হাত রাখতে হাতের ভাজে উপস্থিত হয় নরম পাপড়ি।আরশাদ লাইট অন করতে চমকে যায় খুশবু বিছানায় সব গোলাপের পাপড়ি।সারাটা রুম জুড়ে নানান ফুল ফুলদানিতে সাজানো।
” আরশাদ এসব কী?”
“তোমার জন্য কত কি ভেবে রেখেছিলাম কিছুই হলো না তাই ছোট্ট সারপ্রাইজ।”
আরশাদ উঠে যায় রুমের বাতি নিভিয়ে একে একে কয়েকটা প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়।
খুশবু উঠে গিয়ে দাঁড়ায় আরশাদের সামনে।জানলার দ্বার খুলে এই মুহূর্তে তার দেখতে ইচ্ছে করছে এই রাতটা কতটা সুন্দর।জানলার দ্বার খুলতে শীতল বাতাসে শিউরে উঠে খুশবু।আরশাদ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার ফ্লুজিকে।অন্ধকার আবছা আলোয় সুযোগ বুঝে ফ্লুজির ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।দু’ঠোঁটের ছোয়া ক্রমশ গভীর যায়।ফ্লুজি যখনি নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইলো তখনি আরশাদ সরে দাঁড়ালো।মেয়েটাকে বাজিয়ে দেখতে বলে,
” আ’ম সরি হানি।এভাবে কিস করা ঠিক হয়নি।আমি একবার কাছে এলে ফিরতে পারবো না।তুমি হয়তো প্রস্তুত নও আমার উচিত ছিল তোমার পার্মিশন নেওয়া।”
ফ্লুজি হতবাক।মেয়েটার অনুভূতি ছলকে দিয়ে আরশাদ দূরে সরতে চাইছে?তার চোখের ভাষা কি আরশার বুঝে না?সে তো প্রস্তুত, এবার কি মুখেই বলতে হবে!আরশাদ দু’কদম আগাতে তার শার্টের কলার চেপে ধরে ফ্লুজি।তীব্র রাগ নিয়ে আঁচড় কাটে ছেলেটার বুকে।আরশাদকে সে নাগাল পায় না তাই তো ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ার তীব্র বাসনা পূরণ করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।আরশাদের পায়ে পা তুলে দাঁড়ায় খুশবু।গলা জড়িয়ে আরশাদের কাছে আকুতির স্বরে বলে,
” আরশাদ প্লিজ।”
” হুম বলো।”
” আরশাদ….।”
” বলো জান।মুখে বলো।”
খুশবু রেগে যায়।রাগে দুঃখে তার কান্না পেয়ে যাচ্ছে।তাকে উষ্কে দিয়ে ছেলেটা মজা নিচ্ছে?তীব্র অভিমানে আরশাদকে ছেড়ে দূরে সরে খুশবু।মেয়েটার ছলছলে চোখ প্রদীপের আলোয় চিকচিক করছে।খুশবু দাঁড়ালো না অভিমান নিয়ে চলে গেল রুমের বাইরে।আরশাদ বুঝতে পেরে ঠোঁট কামড়ে হাসে।অনেক জ্বালিয়েছে মেয়েটাকে তবে আর নয়।খুশবুকে কোলে তুলে রুমে ফেরে সে।মেয়েটাকে বিছানায় পাপড়ির চাদরে বসিয়ে উন্মাদনায় ঠোঁটে ঠোঁট মেশায়।প্রতিটি উষ্ণ ছোয়া কখন যে কামড়ে রূপান্তর হয় খুশবু টের পেল না।প্রতিটি ব্যথায় পিলে চমকে উঠলো সে।আরশাদ মেয়েটাকে ছেড়ে ছিটকে বসে বিছানায়।
হাঁপাতে হাঁপাতে।তাকায় তার ফ্লুজির পানে।মেয়েটার দু’ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে।
আরশাদ দ্রুত হাতে শার্টের বোতাম ছাড়িয়ে মেঝেতে ছুড়ে দেয় শার্ট।বাঁকা হেসে তাকায় ফ্লুজির পানে।মেয়েটাকে হেঁচকা টেনে বিছানার ফেলে নিজের বুকের আদলে মিশিয়ে নেয় ।আরশাদের অন্যরকম মোহে খুশবু নিজেকে প্রস্তুত করে।প্রলয়ের ভয়ে নিজেকে বারবার গুটিয়ে রাখতে চাইলেও চিন্তা চেতনা দেহ আজ অন্য কথা বলছে।
আরশাদ এক চিলতে হাসে।ফ্লুজিকে কাছে টেনে গালে হাত বুলায়।
” জান।”
” হুম।”
” সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলোয় যদি বেদনা পাশ কাটিয়ে যায় তুমি সামলাতে পারবে?”
খুশবু ঘোরে পড়ে যায়।তবুও যন্ত্র মানবের ন্যায় আরশাদের প্রশ্নের সাড়া দিয়ে সম্মতি জানায়।আরশার হাসে।শক্ত হাতের বন্ধনীতে জড়িয়ে নেয় তার ফ্লুজিকে।আরশাদের বলিষ্ঠ দেহের নিচে চাপা পড়েযায় ফ্লুজির ছোট্ট দেহখানি।এলোমেলো হয় খুশবুর ছোঁয়া।মেয়েটা আরশাদের পিঠে,ঘাড়ে, বুকে আঁচর বসিয়ে দেয় উন্মাদনায়।আরশাদ যতটা আক্রমণাত্মক হয় ফ্লুজি ততটা হাঁপিয়ে উঠে।প্রদীপের আলোয় প্রজ্জ্বলিত রুমটায় ভেসে যায় শীৎকার ধ্বনি।আরশাদ নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায়।সময় যত গড়িয়ে যায় আরশাদ ততটাই ফ্লুজির বশের বাইরে চলে যায়।চাদরে ছড়িয়ে থাকা ফুলের পাপড়িরা দুমড়ে মুচড়ে নেতিয়ে যায়।আরশাদ তার ফ্লুজির দেহের প্রতিটা খাঁজে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়।ফ্লুজির দু’চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুপাত ঘটে।আরশাদ তার বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে মুছে দেয় অশ্রুকণা।দু’চোখে চুমু দেয় উষ্ণ আবেশে।
আনন্দ সুখ বেদনা সবটাই মিশে একাকার মেয়েটার কাছে।ফ্লুজি বারবার হারিয়ে যায় তমসাচ্ছন্ন আরশাদের বাদামী চোখে।আরশাদ চোখে হাসে।খুশবুকে হাতে নিজের হাতের ভাজে নিয়ে বলে,
” লুক এট মাই আইস জান,আ’ম ফুল অফ ইয়ু।”
চলবে….
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৭ বাকি অংশ]
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পথে।আকাশটায় সূর্যের আলো নেতিয়ে যাচ্ছে।দূর আকাশটা লাল নীল মিশে একাকার অবস্থা।জানলার কাছে দাঁড়িয়ে ভেজা চুলে আঙুল বুলায় আরশাদ।গত রাতের পাগলামির কথা মাথায় আসতে পুলকিত হয় তার মন।খুশবু অর্থাৎ আরশাদের ফ্লুজি একটি স্নিগ্ধ ফোঁটা ফুল।এই ফুলকে কেউ ছেড়ার সাধ্য করেনি।অবশ্য ছেড়া তো দূরের কথা কেউ প্রেমময় ছোঁয়াতে ছুঁয়ে দেখেছে কি না সন্দেহ।আরশাদ কিঞ্চিৎ হাসে তার স্নিগ্ধ ফুলের মধু সে একাই গ্রহণ করেছে।জীবনের একটি বড় চাওয়া পূর্ণ হয়েছে বলে আরশাদের হাসি চওড়া হয়।ফ্লুজিকে পেতে কম বেগ পোহাতে হয়নি তার এবং অবশেষে ফ্লুজি তার।
বিছানায় শুয়ে থাকা অর্ধ নগ্ন ফ্লুজির কাছে এগিয়ে যায় সে।মেয়েটার শরীরে ছড়িয়ে দেয় বিছানায় পড়ে থাকা গোলাপের পাপড়ি গুলো।আরশাদ পুনরায় উন্মাদ হয়,তার ফ্লুজির গলায় মুখ ডুবিয়ে নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা চালায়।
গলায় বুকে ভেজা কিছুর ছোঁয়া ভেঙে যায় ফ্লুজির ঘুম।দু’চোখের পর্দা মেলে তাকাতে দেখতে পেল আরশাদের বাদামি চোখ জোড়ার মেশাতুর দৃষ্টি।খুশবু অবাক হয় নড়চড় করতে নিলে বুঝতে পারে আরশাদ তার উপরে শরীরের ভর ছেড়ে দিয়েছে।গত রাতের কথা মাথায় আসতে খুশবু লজ্জায় নুইয়ে যায়।কিন্তু আরশাদ এখনো তাকিয়ে আছে তার দিকে।
” জান,ইয়ু লুক লাইক বাটার।প্লিজ গিভ ওয়ান মোর চান্স।”
খুশবু চোখ পাকায়।
” কয়টা বাজে আরশাদ?”
” বিকাল সাড়ে পাঁচটা।”
” কি এতটা সময়!কেউ কি আমাদের ডাকেনি?”
আরশাদ হাসে।এতটা সময় কোথায়?আরশাদ তাকে ঘুমাতে দিয়েছে সকাল বেলায়।সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ঘুমানো বড় কোন ব্যপার নয়।আরশাদ উঠে যায় তার ফ্লুজির কাছ থেকে।ব্লাঙ্কেটে জড়িয়ে নিজের নগ্ন অবস্থা বুঝতে পেরে দ্বিধায় পড়ে ফ্লুজি,সে কি করে যাবে এখন ওয়াশরুম?আশেপাশে তাদের জামাগুলো ছড়িয়ে আছে।আরশাদ বুঝতে পেরে ফ্লুজির লং শার্ট এগিয়ে দেয়।তার ভেজা চুল আঙুলের সাহায্যে পেছনে ঠেলে দিয়ে বসে যায় ফ্লুজির পাশে।খুশবু আরশাদের ভেজা চুলে তাকিয়ে বলে,
” আপনি গোসল করেছেন?”
” হুম।তুমি সুযোগ দিলে আবার গোসল করতে রাজি আছি।”
আরশাদের পাগলামিতে সাড়া দিতে গেলে খুশবুর আজ আর বাঁচা হবে না।মেয়েটা দ্রুত গায়ে শার্ট জড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে।সর্বাঙ্গে চাপা ব্যথা অনুভব করতে ঢোক গিলে।আরশাদ বুঝতে পারে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে কোলে তুলে নেয় তাকে।নিজেকে বাঁচাতে আরশাদের গলা জড়িয়ে ধরে ফ্লুজি।লং শার্টটা ততক্ষণে হাটুর উপর চলে এসেছে।লজ্জায় আরো গুটিয়ে যায় মেয়েটা।তার অবস্থায় আরশাদ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।
.
ফ্লুজিকে গোসলে পাঠিয়ে আরশাদ ফিরলো রান্না ঘরে।খিদায় পেটের ভেতরটা খা খা করছে।এই মুহূর্তে ফ্লুজিরো নিশ্চয়ই খিদে পাবে।আরশাদ চটজলদি ভাত বসালো।ফ্রিজ থেকে একটি টুনা মাছের ক্যান নিয়ে পেয়াজ মরিচ কাটতে লাগলো।
আরশাদের রান্না হতে বেশি সময় লাগলো না এর মাঝে খুশবু উপস্থিত হয় আরশাদের সামনে।মেয়েটার ভেজা চুল দেখে আরশাদ বিচলিত হয়।
” ফ্লুজি হেয়ার ড্রায়ার রেখে এসেছি তো চুল শুকাওনি?”
” পরে শুকাবো।আমার খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দিন।”
” তুমি বসো এইতো খাবার তৈরি।”
আরশাদ টেবিলে সব খাবার এনে গুছিয়ে রাখলো।খুশবুর প্লেটে পরিমানের তুলনায় বেশি খাবার দিতে মেয়েটা কপাল কুচকে তাকায়।অবশ্য আরশার চোখ গরম করে আদেশ করে, সব ভাত শেষ করতে হবে।খাবার শেষে গরম গরম এক গ্লাস দুধ এনে টেবিলে রাখলো সেই সাথে রাখলো দু’টো ওষুধের খোসা।
” ওষুধ গুলো খেয়ে নাও।”
” কিসের ওষুধ?”
আরশাদ ভ্রু কুচকায়।খুশবুর অবচেতন মন সতর্কতার ইঙ্গিত দিতে দ্রুত ওষুধ দু’টো গিলে নেয়।
.
সন্ধ্যার পর খুশবু গ্র্যানির সাথে দেখা করতে গেল।এলিনা খুশবুকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।তার বকবক কোন মতেই থামছে না।আরিব গালের নিচে হাত রেখে তাকিয়ে আছে এলিনার পানে মেয়েটা কি করে পারে এতটা বকবক করতে।গ্লোরিয়া,ইমরান,আফরোজ তারা কেউ বাড়ি নেই।আরশাদ বেরিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।আড্ডার মাঝে এলিনা রোম ভেনিস সম্পর্কে নানান কথা বলে।কোথায় ঘুরতে গেলে ভালো হবে কিংবা কোথায় যাওয়া উচিত সবটাই বর্ননা করছে খুশবুকে।এলিনা অতি আগ্রহে চট করে বলে,
” ট্রেভি ফাউন্টেনে যাবে ভাবিমনি?জানো,যে সেখানে পয়সা ফেলবে সে আবার কোন না কোনদিন রোমে ফিরে আসবে এটাই সবার মাঝে বিশ্বাস।”
” দূর এসব কথা কি কেউ বিশ্বাস করে!”
” তুমি বিশ্বাস করছো না, তাই না?যখন যাবে তখন দেখবে।”
” এগুলো কুসংস্কার আমি এসব বিশ্বাস করি না এলিনা।”
আরিব হাসে।এগিয়ে এসে বসে খুশবুর মুখোমুখি এবং খুশবুকে বলে,
“আমরা উন্নত জাতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা কিছু মিথ নিয়ে চলি।যেমন তোমাদের দেশের কথাই বলো,মাজার অনেকের কাছেই এখনো প্রাধান্য পাচ্ছে,মাজারকে সিজদাহ্ করছে টাকা দিচ্ছে,মানত করছে আরো কত কি।সেইভাবে এই দেশের লোকের কাছেও এসব বিশ্বাসে পরিনত হয়েছে।”
খুশবু মাথা ঝাকালো।এলিনা আরিবের হাত টেনে বলে,
“এই ভাইয়া কাল তুমি ফ্রি আছো?চলনা ট্রেভি ফাউন্টেন যাবো ভাবিকে নিয়ে।”
” আমার কাল ক্লাস আছে যেতে পারবো না।আশা করি তুমিও যাবে না শুধু শুধু নিউ কাপলদের মাঝে ঢোকা ঠিক নয় এলিনা।তাদের একাই যেতে দাও।”
” আমি তাদের ডিস্টার্ব করবো না।”
” তুমি কি বাচ্চা মেয়ে?আসো গালটা চেপে দি।বাচ্চামো রাখো ওদের একাই যেতে দাও।তুমি আমার সাথে যেও আগামী ফ্রাইডেতে আমি ফ্রি আছি।”
এলিনার মনমরা মুখটা দেখে খুশবু বলে,
” এলিনা তুমি যেও।কোন সমস্যা নেই।”
আরিব এলিনার হয়ে বলে,
” না ভাবি ও যাবে না।তোমাদের তো ভেনিস যাওয়ার কথা আছে তখন না হয় আমরা সবাই মিলে ঘুরবো এখন তোমরা একাই যাও।”
এলিনা সম্মতি জানালো।গ্র্যানি সবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখছিলেন।সবার বাকবিতন্ডায় তিনি করে বসলেন আরেক মন্তব্য।
” আমরা পরিবারের সবাই একদিন পিকনিক করলে কেমন হয়?”
এলিনা এবং আরিব সম্মতি জানালো।তাদের খুশি যেন আজ আকাশে বাতাসে উড়ছে।পারিবারিক পিকনিকগুলো ভিষণ আনন্দের।
.
আরশাদ এখনো আসেনি।রাত বাজে প্রায় একটা।একা একটা ভিলায় থাকতে খুশবুর গা ছমছম করছে।নিজেকে স্থির রাখতে টিভির সাউন্ড জোরে দিয়েছে।ফ্রিজ থেকে চকলেট কোল্ড ড্রিংস এবং চিপ্স কত কি যে সাবাড় করেছে মেয়েটা।সারাটা ভিলা ঘুরে দেখলো খুশবু।আরশাদের শখের ভিলা তাই শখের ভিলা তো যেন তেন নয়।দামি পেইন্টিং,ফুল,আসবাবপত্র সবটাই দামি এবং ইউনিক।
ডোর বেলের শব্দে চমকে যায় খুশবু।তখন আবার ফোনটাও বেজে উঠেছে আরশাদ ফোন করেছে।ছেলেটা এসেছে তাই খুশবুকে জানান দিয়েছে।দরজা খুলে আরশাদকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে মেয়েটা।
” এত দেরি করলেন কেন?”
” সরি জান।একা একা বোর হচ্ছিলে?”
” হুম।”
আরশার দরজা বন্ধ করে কিচেনের দিকে যায়।টেবিলে খাবারের প্যাকেট রেখে বলে,
” পাস্তা এনেছি আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
রাতের খাবার শেষে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হয় দুজনে।একই ব্লাঙ্কেটের নিচে আরশাদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে খুশবু।মেয়েটার চোখে রাজ্যের ঘুম কিন্তু আরশাদ মুভি দেখছে।খুশবু তার সাথে জেগে মুভি দেখলেও মেয়েটার মন মুভিতে নেই।
” জান আগামীকাল বিকালে রেডি থেকো আমরা ঘুরতে যাব।”
” কোথায় যাবেন?”
“ট্রেভি ফাউন্টেন।তুমি নাকি যেতে চেয়েছো।”
” আমি কখন যেতে বললাম?”
” আরিব বললো।”
” ওরা আমাকে গল্প শোনালো আমি তো কিছুই বলিনি।”
আরশাদ হাসে। ফোনটা রেখে খুশবুকে বুক থেকে নামিয়ে বালিশে মাথা রাখে।
” ঘুমাও জান।”
খুশবু চোখ বন্ধ করতে সেই সুযোগে আরশাদ হামলে পড়ে তার ঠোঁটে, দু’হাতের ভাজে আরশাদ ক্রমশ দু’হাত চার করে মুষ্ঠিবদ্ধ করে।খুশবুর আতঙ্কগ্রস্ত মুখখানি দেখে ছেলেটা হেসে সরে যায়।
” এবার ঘুমাও।”
” আপনাকে আমি বিশ্বাস করিনা ঘুমের কথা বলে…”
” এই হিসসস চুপ, ঘুমাও।”
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে বিকাল সময়টাতে খুশবুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আরশাদ।তাদের যাত্রাটা প্রায় ঘন্টা খানেক।জানলার বাইরে তাকিয়ে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে খুশবু।এই শহরটা অন্যরকম সুন্দর।ঘন্টাখানেক বাদে ট্রেভি ফাউন্টেনে পৌঁছে গেল তারা।সন্ধ্যা নামার পথে পৃথিবীর বুকে নেমেছে অন্যরকম সৌন্দর্য।পর্যটকদের ভীরে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া দায় যে জায়গাটিতে তা হলো ট্রেভি ফাউন্টেন।
ট্রেভি ফাউন্টেনের সামনে পর্যটকের অভাব নেই।ভিড়ের মাঝেই চারপাশ পর্যবেক্ষণ করলো খুশবু।চারিপাশে সজ্জিত উঁচু দালান তার মাঝে স্বচ্ছ জলের ফোয়ারা।ট্রেভি ফাউন্টেন সমস্ত ইতালির বৃহত্তম ফোয়ারা।ফোয়ারায় অনেকগুলো সাদা মূর্তি দেখা যায়।স্বচ্ছ জলে চিকচিক করছে জলের তলায় পয়সাগুলো।
ত্রেভি শব্দটি এসেছে ইতালীয় শব্দ “ত্রে” এবং “ভিয়া”-র সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে যার অর্থ ‘তিন রাস্তা’।ট্রেভি ফাউন্টেন বা ত্রেভি ফোয়ারা ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত একটি ফোয়ারা। এটি রোম শহরের বৃহত্তম বারোক আনুমানিক ১৬০০ সালের দিকে যে শৈল্পিক রেনেসাঁ শুরু হয়েছিল।
আরশাদ খুশবুকে দাঁড়াতে বলে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ছবি ক্যাপচার করে।ধীরে ধীরে যখন রোমের বুকে অন্ধকার নেমে এলো তখন ট্রেভি ফাউন্টেনের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেল।সেই সাথে বাড়লো মানুষজন।নানান দেশের লোক এখানে উপস্থিত।
আরশাদ খুশবুর হাত ধরে হাটে।আশেপাশে অনেকেই কয়েকটি পয়সা ছুড়ে ফেলছে স্বচ্ছ ফোয়ারার জলে।আরশাদ পকেট থেকে কয়েকটি পয়সা বের করে তার ফ্লুজিকে বলে,
“পয়সা ফেলো।”
” আমি এসব বিশ্বাস করি না আরশাদ।”
” আমিও করি না।কিন্তু যতবার এসেছি পয়সা ফেলেছি।একটা ট্রেন্ড বলতে পারো যা বছরের পর বছর চলে এসেছে।স্থানীয় লোককাহিনী অনুযায়ী কথিত আছে যে, কেউ এই ফোয়ারায় পয়সা ফেললে সে আবার কোন না কোনদিন রোমে ফিরে আসবে। প্রচলিত কথা হচ্ছে এই ফোয়ারায় একটি পয়সা ফেললে দ্বিতীয়বার রোমে বেড়াতে আসার স্বপ্ন পুরন হয়। ২য় এবং ৩য় পয়সা যথাক্রমে প্রেম আর বিয়ের জন্য। প্রায় চারশ বছরের পুরানো এই ফাউন্টেনে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ইউরো জমা হয়।”
খুশবু হাসে।কি অদ্ভুত বিশ্বাস এই শহরের মানুষদের।আরশাদের হাত থেকে পয়সা নিয়ে ফোয়ারার স্বচ্ছ জলে ফেললো খুশবু।মুহূর্তে তার মাঝে একট চিলতে হাসি দেখা যায়।
ভিড়ের মাঝে দেখা মিলে এক দম্পত্তি গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে।কিছুটা দূরে আরেক দম্পত্তি নিজেদের ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে জানান দিচ্ছে ভালোবাসার।আরশাদ খুশবুকে টিপ্পনী দিয়ে বলে,
” চলো ওদের ফলো করি।”
” ছিহ আরশাদ।সবার সামনে এসব করা…”
” এরা আমেরিকান দম্পত্তি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।এই রাতের শহরটায় কিছু অলিতে গলিতে আরো রহস্যময়।যদি বেপরোয়া হতে চাও তবে চলো আমার সাথে।”
” কোথায়?”
” নাইট ক্লাব।”
.
খুশবু বারণ করলো কিন্তু আরশাদ আর সেই বারণ শুনলো না।বন্ধুদের সাথে সে অনেকবার নাইট ক্লাবে এসেছে হালকা নেশা করেছে কিন্তু কোন মেয়ে নিয়ে তার নাইট ক্লাবে আসা হয়নি।আর দু’একজন বন্ধু গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসে সারারাত মাস্তি করেছে নেশার কবলে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।আরশাদ কখনোই এসবে নাক গলায়নি।যার যার যেমন লাইফ স্টাইল।
তবে ক্লাবে থাকা আবেদনময়ী মেয়েদের দেখে তার পুরুষত্ব যে ছলকে উঠেনি তা কিন্তু নয়।তবুও আরশাদ নিয়ন্ত্রণে ছিল।ডিলান আর আরশাদ এসবে নিজেদের খুব কম জড়িয়েছে।রাত যত গভীর হলো শহরটার ততটাই রহস্যময় হয়ে উঠছিল খুশবুর কাছে।নাইট ক্লাবে পৌঁছে আরশাদ খুশবুর হাত ধরে রাখে।চারিদিকে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরাহিত মেয়েদের হিড়িক পড়েছে।খুশবু আড় চোখে তাকিয়ে নজর ঘুরায়।সবার মাঝে সে একাই অন্যরকম।কড়া সিকিউরিটি পেরিয়ে আরশাদ এবং খুশবু নাইট ক্লাবে প্রবেশ করে।উচ্চ স্বরে গানের শব্দে মাথা ধরে এলো খুশবুর।চারিদিকে মেয়েদের লাস্যময়ী রূপে কোন ছেলে পারবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে?
” হানি কেমন লাগছে?”
” ভীষণ বাজে।”
” তোমার লাইফে নতুন এক্সপেরিমেন্ট।”
” আমার আব্বু জানলে আমাকে এক্ষুনি আদেশ করবে, এই আরশাদ ফারশাদ ব্যাটাকে ছেড়ে চলে আয়।”
“এত সহজ নয় হানি।তুমি আমার।”
“আব্বু জানলে কি যে বলবে এসব তারা মোটেও পছন্দ করবে না।”
আরশাদ হাসে।খুশবুর হাত ধরে নিয়ে যায় ভিড়ের মাঝে।ছেলে মেয়েদের বেহায়াপনা নাচানাচিতে গা গুলিয়ে উঠলো তার।আরশাদ তাকে নিয়ে যায় বার সেকশনে।এলকোহলহীন একটি জুস নিয়ে ফ্লুজিকে খেতে বলে কিন্তু তৎক্ষনাৎ বারণ করে মেয়েটা।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি ইতালিয়ান মেয়ে আরশাদের হাতে হাত রাখে আরশাদ কৌশলে সেই হাত সরিয়ে দেয়।মেয়েটা ইতালিয়ান ভাষায় কিছু জিজ্ঞেস করে এবং আরশাদ সেসব উত্তর দিয়ে সরে আসে।
আরশাদ এবং ফ্লুজি অন্য পাশে যেতে দেখতে পেলো ছেলে মেয়েদের রোমান্স।কারো কোন বাঁধা নেই সবাই সামনা সামনি গভীর চুম্বনে মশগুল।খুশবু অবাক হয় আরশাদ খুশবুকে ইশারা করে বলে,
” চলবে?”
” না।”
” কোন না নয় জান।চলবে।”
” নো।
” ইয়েস।”
আরশাদ এগিয়ে আসে তার ফ্লুজির চুল খামছে আবেশে দু’টো ঠোঁট মেলায়।সময় যত বাড়তে থাকে দু’জন তত লাগামহীন হয়ে যায়।ফ্লুজি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে
আরশাদ নিজেকে বশে এনে ফ্লুজিকে বুকে জড়ায়।বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে নাইট ক্লাব থেকে বের হতে দ্রুত হাটতে হাটতে বলে,
” বাসায় চলো জান আর সহ্য হচ্ছে না।”
চলবে….