#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১১ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য]
” ফ্লুজি রাস্তায় সাবধানে হাটবে।”
” হুম।”
” চোখ সামলাবে।”
” কেন চোখ সামলাবো?চোখ সামলে হাটলে তো উষ্টা খেয়ে পড়বো।”
” পড়লে আমি ধরে ফেলবো। ”
” যত বাজে কথা।”
” চোখ আমার দিকে থাকবে শুধু আমার দিকে।”
” আপনি যেহেতু নেই সেহেতু অন্য দিকে তাকাতেই পারি।”
আরশাদ টুশব্দ করলো না তবে ছেলেটার দীর্ঘশ্বাসের চাপা শব্দটা ঠিকি কানে এলো খুশবুর।
” ক্লাস কয়টায় জান?”
” একটুপরে শুরু হবে।”
” শেষ হবে কয়টায়?”
” দুইটায় বের হবো।”
আরশাদ ফোন রাখলো।খুশবুর পাসপোর্ট ভিসার কাজে ইদানী সে একটু বেশি ব্যস্ত।অপরদিকে খুশবু ভার্সিটি এসেছে।পড়াশোনায় খুশবু খুব বেশি ভালো নয় মূলত ভালো খারাপের প্রসঙ্গ আসে চেষ্টায়।পড়াশোনা নিয়ে কে কতটা চেষ্টা চালিয়েছে সেই এগিয়ে যার চেষ্টায় ক্রুটি ছিল না।চেষ্টার প্রসঙ্গ আসলে খুশবু ঝুড়িতে শূন্য ছাড়া কিছুই নেই।পড়াশোনা মোটেও ভালো লাগে না তার।পরিক্ষার আগে একটু আধটু পড়ে যতটা মার্ক পাওয়া যায়।অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে পড়ছে খুশবু।দ্বিতীয় বর্ষে এডমিট হওয়ার পর থেকে একদিনো ক্লাস করা হয়নি তার।তাই কত তলার কোন রুমে ক্লাস হয় মেয়েটা তাও জানে না।
ভার্সিটির অলিতে গলিতে প্রতিটা বন্ধু দলের আড্ডা চলে কিন্তু খুশবুর কাছের বন্ধু বলে তেমন কেউ নেই।সহজে মানুষের সাথে মিশতে পারে না সে।যে দুজন বান্ধবী আছে তাদের সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয়।
” খুশবু চরকির মতো ঘুরছিস কেন?”
রিয়ার কথায় ঘুরে তাকায় খুশবু।এইতো তার বান্ধবী রিয়া এসেছে এবার তবে নিঃসঙ্গতা কমবে।
” আমাদের ক্লাস কোনটা?”
” তুই ক্লাস না পেলে আমাকে ফোন করবি তো।”
” ফোনে টাকা নেই।”
” আয় আমার সাথে।কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।”
খুশবু রিয়ার পিছু পিছু গেল।ক্লাসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল মায়া।তিন বান্ধবী একসাথে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য যখনি প্রস্তুত হলো তখনি ক্লাসে স্যার এসে উপস্থিত।স্যারের উপস্থিতিকে পাত্তা দিল না তিন বান্ধবী তারা তাদের কথাতে ব্যস্ত।রিয়া খুশবুকে উদ্দেশ্যে বলে,
” তোর বিয়ে খেতে গেলাম আর তুই নেই তুই গায়েব।সত্যি করে বল কোথায় ছিলি তুই?”
” এসব কথা আমার এখন বলতে ভালো লাগছে নারে।পরে একদিন বলবো।”
” না, পরে টরে না এখনি বলবি।তুই যে ফাঁকি বাজ আজকের পর ঠিক কবে আসবি তাও জানি না।পার্লার থেকে তুই কোথায় গায়েব হয়েছিলি?”
খুশবু সত্যটা চেপে গেল।সে জানে তাকে কি বলতে হবে।শুধু বন্ধুদের নয় প্রত্যেক মানুষকে সে একই মিথ্যা বলেছে।
” পার্লার থেকে ফেরার পথে আমাকে কিডন্যাপ করেছিল রোহানের প্রেমিকা।তারপর আমাকে একটা গুদামে আটকে রাখে।”
” সে কি এসব বিয়ে ভাঙতে করেছিল?”
” তা নয়তো আর কী?এরপর আমি দুই দিন ছিলাম সেখানে একদিন সুযোগ মতো পালিয়ে গেলাম।কিন্তু বেশি দূর যেতে পারিনি তার আগেই ধরা পড়লাম।আমি নিজেকে বাঁচাতে যখন ছুটছিলাম তখন পড়লাম একটা গাড়ির সামনে।সেই গাড়িতে ছিল আরশাদ।”
” আরশাদটা আবার কে?”
” তোদের দুলাভাই।”
” মানে কি তোর বিয়ে হয়ে গেছে?”
” হুম।”
মায়া এবং রিয়ার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে তারা তো জানতো না খুশবুর বিয়ে হয়েছে।এই মেয়ে এত চাপা কেন?সবটা আড়াল করে কী মজা পায়।
” তুই বিয়ে করেছিস একবার বললিও না।দেখি দুলাভাইর ছবি দেখা।”
খুশবু তাদের বিয়ের ছবি দেখালো।মায়া আর রিয়ার স্তম্ভিত নয়নে চোখাচোখি করলো।
” এটা কেরে ভাই।সেই মাল কোথা থেকে পেলি কি করে পেলি!কোন কোম্পানির মাল।”
খুশবু রেগে গেল দ্রুত হাতে ছিনিয়ে নিল তার ফোন।
” তোদের দুলাভাই আর তোরা মাল বলছিস ছিহ!”
” চুপ কর।এবার বল দুলাভাই কোথায় থাকে?”
” আমার মনে।”
” তা তো থাকবে এবার বল এটা কোন দেশের?”
” ইতালির।”
” তোকে কি নিয়ে যাবে?”
” হ্যাঁ।”
” তোর ভাগ্য তো সোনায় মুড়ানো।”
খুশবু চুপচাপ রইলো ক্লাসে স্যার তাদের দিকে তাকিয়ে আছে গম্ভীর চোখে।কিছুক্ষণ বাদে তাদের শুরু হলো ক্লাস টেস্ট।সারাটা সময় মুখে কলম নিয়ে বসে রইল খুশবু।আজ কোন অধ্যায়ের পরিক্ষা চলছে সে তো তাও জানে না।
.
” শুনছেন,তাবাসসুম আরা খুশবু।”
পুরুষালী কণ্ঠে নিজের নাম শুনে চমকে পেছনে তাকালো খুশবু।গরম গরম সিঙারা মাত্র মুখের সামনে ধরেছে মায়া রোহানকে দেখে আনমনে কামড় বসাতে ছ্যাকা লেগে চুপসে যায় সে।
” আমাকে দেখে চমকে যাচ্ছ কেন খুশবু?”
” আপনি এখানে কী করছেন?”
” তোমার খোঁজে এসেছিলাম।”
” বাবা তো আপনাকে বলেই দিয়েছে আমার সাথে কোন যোগাযোগ আপনি করবেন না।”
” আমি কারো কথার ধারধারি না।শুনলাম এখন যাকে বিয়ে করলে ছেলেটা নাকি বিদেশি।তা বিদেশি দেখেই কি বিয়ে করলে?দেশি চামড়ায় কি মন ভরে না?”
” মুখে লাগাম দিন।”
” লাগাম দেওয়ার মতো কোন কথাই আমি বলছি না।কয়েকদিন পর টিভিতে নিশ্চয়ই নিউজ হবে প্রেমের টানে ইতালি থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছে এক প্রেমিক।”
খুশবুর দু’চোখ টলমলে ক্রমশ শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার।কেউ তাকে আঘাত দিয়ে কথা বলবে এসব মানতে পারে না সে।রোহান তাকে একে একে অনেক কথা শুনিয়ে গেল কিন্তু কোনটার সঠিক জবাব দিতে পারলো না খুশবু।মায়া রিয়া রোহানকে চুপ করতে বললে উলটে তাদের ধমকে চুপ করায় সে।
রোহান তার কাজ হাসিল করে চলে গেল।বন্ধুদের আড্ডা বিষাদে রূপ নিলো মুহূর্তে।খুশবু কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা।অপরদিকে আরশাদ একেরপর এক ফোন করেই যাচ্ছে খুশবু ফোন তোলার নাম নেই।ক্লাস শেষ দুইটায় অথচ খুশবু ভার্সিটির গেট থেকে বের হলো তিনটার কিছুটা আগে।রাস্তার ধারে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরশাদ।তার আগুন চুল্লির মুখখানি দেখে তেমন ভাবে গায়ে মাখলো না খুশবু।
” কোথায় ছিলে ফ্লুজি?”
আরশাদের গম্ভীর স্বরে পালটা গম্ভীর ভাবে জবাব দিল খুশবু।
” ক্যান্টিনে।”
” এতক্ষণ ক্যান্টিনে কী করছিলে?”
” আড্ডা দিচ্ছিলাম।”
আরশাদ খুশবুর চিবুক তুললো।লালচে নাক,ফোলা রক্তিম চোখ আরশাদকে অতি সহজে জানান দিচ্ছে খুশবু কেঁদেছে কিন্তু কেন?
” তুমি কাঁদছো কেন?”
” ক…কই?”
“আমাদের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার নিশ্চয়ই হাসি মুখে হয়নি।প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত আমি তোমার কান্না দেখেছি তোমার সবটাই আমার মুখস্থ,কণ্ঠস্থ।
” আরশাদ আমি বাড়ি যাব।”
” আগে বলো কেন কেঁদেছো?”
” প্লিজ আমাকে বিরক্ত করবেন না।”
” আমি তোমায় বিরক্ত করছি?”
আরশাদ রেগে গেল।তাতে খুব বেশি পাত্তা দিল না খুশবু।বরং পালটা রাগ দেখিয়ে সে হাটা শুরু করলো উলটো দিকে।খালি রিক্সা দাঁড় করিয়ে উঠতে নিলে তার হাত টেনে আনে আরশাদ।
” হোয়াট দ্যা হেল..”
“ছাড়ুন হাত আমি একাই যেতে পারবো।”
আরশাদ কোন কথাই শুনলো না।রাগে গজগজ করতে করতে খুশবুকে গাড়িতে তুললো সে।গাড়ির স্প্রিড বাড়িয়ে দিল কয়েক গুন।এত জোরে গাড়ি চালানো দেখে কিছুটা ভয় পেল খুশবু কিন্তু সে কোন প্রতিক্রিয়া জানালো না।যদি এক্সিডেন্ট হয় তবে হোক।
সারাটা রাস্তায় দুজনের মাঝে কোন কথাই হলো না।আরশাদ গাড়ি থামাতে দ্রুত নেমে গেল খুশবু।তার পিছু পিছু এলো আরশাদ।অনিমা তো তাদের অপেক্ষায় ছিল, আরশাদ খুশবুকে নিয়ে আসবে এবং মেয়ে জামাই একসাথে লাঞ্চ করবে।কিন্তু বেজে গেল তিনটা তাদের আসার নাম নেই।ডোর বেল বাজতে অনিমা দরজা খুললো খুশবু দ্রুত পায়ে ঢুকলো তার পিছু পিছু প্রবেশ করলো আরশাদ।অনিমাকে সালাম জানিয়ে সেও ছুটে গেল খুশবুর পেছনে।
সেচ্ছায় রুমের দরজা রুদ্ধ করতে চেয়েছিল খুশবু।সে চায় না আরশাদের সাথে আজ আর দেখা হোক।কিন্তু আরশাদ তার পেছনে এসেই দরজা বন্ধ করলো।
” আপনি কেন এলেন আমার রুমে।”
” এটা আমারো রুম ফ্লুজি।তুমি আমার তোমার রুমটাও আমার।এখন বলো কাঁদছিলে কেন?”
” উফফ আমাকে একা থাকতে দিন।”
” নেভার এভার।”
খুশবু রাগ দেখালো বিছানায় থাকা ব্যাগটা ছুড়ে ফেললো মেঝেতে।আরশাদ পালটা রাগ দেখিয়ে গায়ের ব্লেজার খুলে ছুড়ে ফেললো মেঝেতে।আরশাদ নিজেকে স্থির করলো এক হাতে আগলে ধরলো খুশবুকে।
” আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কোন সমাধান হবে না তার থেকে ভালো দুজনে মিলে সমস্যার সমাধান করি।বলো জান, কী হয়েছে?”
” রোহান এসেছিল।আমাকে অনেক বাজে বাজে কথা শুনিয়েছে।আমি এসব বাজে কথা কেন শুনবো?কী অন্যয় করেছিলাম আমি?প্রথমে আপনি এলেন আমার নামে অনেকগুলো অভিযোগ জানালেন। এরপর, এরপর আমার জীবনটা পালটে গেল।আমি কিচ্ছু চাইনি আমি শুধু সবার চোখে আমার জন্য গুরুত্ব দেখতে চেয়েছি।অথচ দেখুন বাবাও আমাকে দূরে ঠেলে দিল,রোহান বাজে কথা শোনালো।এসব আমার ভালো লাগছে না।”
আরশাদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।খুশবুর মাথায় হাত বুলিয়ে নিরবে রাগটা দমন করলো।
” ফ্লুজি আমার জান,তোমার বিশ্বাস হয় আঙ্কেল তোমার উপর রেগে আছে?দুঃখ পেও না আঙ্কেল যা করছেন মন থেকে করছেন না জেদ থেকে করছেন।শান্ত হও এত কাঁদে না।যা হওয়ার হয়েছে রোহানের মুখোমুখি তুমি হবে তোমার পাশে আমি থাকবো।তুমি দেখিয়ে দেবে যোগ্য কাউকে তুমি পেয়েছো।”
” আচ্ছা আপনি যদি আমাকে ঠকান তখন?সবাই আমাকে নিয়ে হাসবে উপহাস করবে।”
খুশবু মাথা চেপে ধরলো তার মনে একটাই ভয় আরশাদ যদি তাকে ঠকায় তবে কি করে লড়াই করবে সে।সে তো মুখ থুবড়ে পড়বে।আরশাদ কিঞ্চিৎ হাসলো মেয়েটার অশ্রু ভেজা চোখে উষ্ম ওষ্ঠ ছুঁইয়ে বলে,
” আমি যদি তোমাকে ঠকাই তবে তোমার প্রতিটি মোনাজাতে আমার ধ্বংস চেও।”
খুশবু কিছুই বললো না।চুপচাপ কাঁদলো সে।অপরদিকে আরশাদ মেয়েটার মনোযোগ ভঙ্গ করতে উঠে পড়ে লেগেছে, খুশবুর ফোঁপানো ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে শ্লেষ হাসলো আরশাদ।আচমকা খুশবু কেঁপে উঠলো আরশাদের চোখে চোখ রেখে মাথা নাড়িয়ে বলে,
” আরশাদ এখন না।”
” এখনি জান।”
” আরশাদ… ”
দু’আঙুলের সাহায্যে খুশবুর ঠোঁট চেপে ধরলো আরশাদ।খুশবু সরে যেতে চাইলে দেয়ালে ঠেসে দাঁড়ায় আরশাদ।দুহাতের বন্ধনীতে আটকে ভীতু চাহনিতে তাকালো মেয়েটা।আরশাদের ভাবাবেগ বুঝতে পারলো খুশবু নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে পালটা দৃঢ় বন্ধনীতে আটকে গেল।আরশাদ ঘোর লাগা স্বরে বলে,
” ইউর লিপস মেড মি ড্রাঙ্ক জান।”
খুশবু দু’চোখের পলক ফেললো।আরশাদ উন্মাদনায় ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো।খুশবুর সাড়া পেয় মেয়েটাকে ক্রমশ গ্রাস করলো সে।আরশাদ তার ফ্লুজির কোমড় জড়িয়ে উপড় করলো নিজের ভার রাখতে আরশাদের গলা জড়িয়ে ধরলো খুশবু।ক্রমশ অবাধ্য হলো দু’ঠোঁটের ছোয়া।অতীতের সব ভুলে আরশাদের কাছে নিজেকে সপে দিয়ে জগৎ ভুললো মেয়েটা।কিন্তু আরশাদের সাথে পেরে উঠে না সে, ওষ্ঠের লড়াইলে হাঁপিয়ে উঠলো শ্বাস আটকে আসার মুহূর্তে দ্রুত মুখ সরালো খুশবু,আরশাদ পূর্ণ দৃষ্টি রাখে প্রেয়সীর ঠোঁটে রক্তিম ফুলে থাকা ঠোঁট জোড়া তাকে যে আরো বেশামাল করে তুলছে।
” আরশাদ প্লিজ…”
” নো।”
” আর…
পুনরায় দু’ওষ্ঠের মিলন ঘটলো।এলোমেলো হলো খুশবুর ছোঁয়া।আরশাদ ক্রমাগত ঘায়েল করলো তার ফ্লুজিকে।ফ্লুজি যখন নিজের আরশাদের ছোঁয়ায় মগ্ন তখন আচমকা ফোন বেজে উঠলো।আরশাদ খুশবুকে ছাড়িয়ে নিল আবেগের দুনিয়ায় ছিন্ন হয়ে বাস্তবতায় ফিরলো সে।নিজের ভুল ভেবে জিভে কামড়ে সরে দাঁড়াতে চাইলো কিন্তু তার শার্টের কলার টেনে ধরলো ফ্লুজি।মেয়েটার চোখে অভিলাষের ঝড় বইছে আরশাদ পুনরায় ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে স্থির করতে চাইলো মেয়েটাকে।কিন্তু খুশবু জেদ ধরলো সে আরশাদকে ছাড়লো না।
” আরশাদ….
” সেম ফিলিংস জান,সামলে যাও।”
আরশাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল খুশবু।মেয়েটার অভিমানি চাহনি বুঝতে পারলো সে।খুশবুকে পেছন থেকে জড়িয়ে বলে,
“তুমি বেপরোয়া হলে আমাকে সামলাবে কে?”
চলবে___
#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১১ ‘বাকি অংশ’ ]
” ফ্লুজি ঘুমাও ভোর হতে চললো।”
“আরেকটু থাকুন আরশাদ।আমার ঘুম আসবে না আজ।”
আরশাদ চুপ করে রইল।রাত এগারোটার পর থেকে তাদের কথা শুরু হয়েছে আর এখন পাঁচটা বাজতে চললো।মেয়েটার যত এলোমেলো কথা আরশাদ মন দিয়ে শুনল।খুশবু কখনো প্রেম করেনি প্রেমিকের প্রতি একজন প্রেমিকার অনুভূতি কেমন সে তাও জানে না।রোহানের সাথে তার কথা হয়েছে খুব অল্প কিন্তু এই অল্প স্বল্প আলাপনে রোহানের কথাই ছিল সবচেয়ে বেশি।রোহান বলেছিল তার আগামী জীবনের পরিকল্পনার কথা,তার কি চায়,কি কিনবে,কি করবে এসব।নিজেকে নিয়ে খুশবু খুব বেশি কথা বলতে পারেনি।অথচ আরশাদের কাছে নিজেকে খুচরো পয়সার মতো জমাচ্ছে সে।
আরশাদ তার সবচেয়ে বড় শত্রু,অথচ আরশাদ এখন বন্ধু হলো কী করে?তবে কি খুশবুকে ভুলে গেছে সেই দিনের কথা,যখন হুমকির মুখে ফেলে তাকে বিয়ের জন্য বাধ্য করেছিল।
” আরশাদ আমার একটা কথা মনে এসেছে।”
” কী কথা জান?”
” কাল রোহানের জন্মদিন।”
আরশাদ চুপসে গেল।খুশবুর এই দিনটার কথা মনে রাখা কী খুব জরুরি ছিল?আরশাদের নিরবতা ফসফস শ্বাসের শব্দ বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারলো খুশবু। দ্রুত সে কথা পালটে বলে,
” আমি…আমি বলতে চাইছি আসলে..”
” আসলে কী?”
” রোহান আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছিল।আমার কাছে সে একটি দামি ঘড়ি চেয়েছিল বাথডে হিসেবে তাই আরকি।”
” খুঁজে খুঁজে গিফট আদায়!ইন্টারেস্টিং।তা তুমি কি গিফট দিতে চাও?”
” সে আজ আমাকে যেসব কথা শুনিয়েছে এর পরেও..”
” আমার কথা শোনো তুমি গিফট দিতে যাবে এবং তার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলবে।”
” মাথা ঠিক আছে আপনার?”
” একদম ঠিক।এখন কোন কথা নয় ঘুমিয়ে পড়।”
.
অনিমার চেচামেচিতে ঘুম ভাঙলো খুশবুর।মেয়েটা ঘুমিয়েছে বেশিক্ষণ হলো না এর মাঝে এমন চেচামেচির টর্চার মানা যায় না।মুখ থেকে কাঁথা সরিয়ে পিটপিট চোখে তাকালো সে,
” আম্মু কি হয়েছে?”
” জামাইকে তুই কি বলেছিস?”
” আমি উনাকে কি বললাম!কই কিছু বলিনি।”
” এই ছেলে একশটা গোলাপ গাছ পাঠিয়েছে তোর জন্য। দুটো ভ্যান নিয়ে লোক দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাইরে।”
খুশবু লাফিয়ে উঠলো।কই সে তো কিছু বলেনি।এত গোলাপ গাছ পাঠানোর মানে কী?
” আম্মু আমি উনাকে কিছু বলিনি।”
” তোর বাপের বাগানে কি গোলাপ গাছ নেই?এত গাছ দিয়ে এখন তুই নৃত্য কর।আমার হয়েছে যত জ্বালা।”
খুশবু নিজেই পড়লো দোটানায়।দ্রুত হাতে ফোন তুলতে দেখতে পেল আরশাদের মেসেজ,
‘ হ্যাপি রোজ ডে মাই রোজ।একশটা ফুল দিয়ে সেই ফুল পঁচিয়ে কি লাভ?আমি না হয় একশটা গাছ পাঠিয়ে দিলাম।সারা বছর গাছ থেকে ফুল ফুটবে তুমি দু’চোখ ভরে দেখবে এতেই আমার শান্তি।”
রোজ ডে!কিসের ডে ফে কি বলছে আরশাদ।জীবনে এসব ডে পালন করেনি খুশবু।তার সিঙ্গেল জীবনে এসব দিন পালন করা বিলাসীতা ছাড়া আর কিছুই নয়।আড়মোড়া কাটিয়ে উঠে বসে খুশবু।ঘড়িতে বাজে সবে দশটা।ভ্যানের লোকদের বাড়িতে ডুকতে দেয় কাজের ছেলেটা।ভ্যান থেকে একে একে নামানো হলো একশটা গোলাপ গাছে।না শুধু লাল হয় নানান রঙের গোলাপে সেজেছে আজ খুশবুদের উঠন।
অনিমা কাজের ছেলেটাকে আদেশ করলেন সব গাছ যেন বাগানে লাগানো হয়।ছেলেটা আগ্রহ নিয়ে চললো গাছ লাগাতে।সব গাছের মাঝে টকটকে লাল গোলাপটা ছিড়ে নিজের এলো কেশ সরিয়ে কানে গুজলো খুশবু।মেয়েটার মনে আজ প্রজাপতিরা উড়ো উড়ো করছে।
.
লাঞ্চের সময়টা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে রোহান।খুশবু আজ তাকে ডেকে পাঠিয়েছে।এমন দিন যে তার কপালে আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি ছেলেটা।একটি রেস্টুরেন্টে দুজন বসে আছে মুখোমুখি।খুশবু পিৎজার স্লাইসে কামড় বসিয়ে দূর থেকে আড়চোখে তাকালো আরশাদের পানে।আরশাদ রোহানের পেছনের টেবিলে বসে।ছেলেটা জহুরি চোখে পরখ করছে খুশবুকে সে চায় না রোহান খুশবুর সাথে পালটা কোন প্রতিক্রিয়া করুক।
” এই দুপুরে পিৎজা!অন্যকিছু অর্ডার করি।”
” না না আমি ঠিক আছি।পিৎজাতেই আমার হবে।”
” হঠাৎ ডাকলে কেন?গত কালের জন্য আমি সরি আসলে মাথা ঠিক ছিল না।”
” চোরের মায়ের বড় গলা কথাটা শুনেছিলেন কখনো?”
” মানে?”
” না মানে আপনি প্রেম করলেন আপনার জন্য এতসব অথচ আপনি দোষটা দিলেন আমার।ব্যপারটা হাস্যকর না?”
” সরি রাগের মাথায়…”
” রাগের মাথা তাতে কী বিবেক বুদ্ধি কি বিসর্জন দিয়েছিলেন নাকি?”
রোহান চুপসে গেল খুশবুর কথা সে কোন গায়ে মাখলো না।
” তোমার হাজবেন্ড কোথায়?আমার সাথে দেখলে রেগে যাবে না?”
” সে তো আর জানবে না আপনি আমি একসাথে।নিন আপনার জন্মদিন উপলক্ষে আপনার গিফট।”
রোহান হতভম্ব চাহনিতে তাকালো খুশবুর পানে।ঘড়ির বক্সটা এগিয়ে নিয়ে বলে,
” সিরিয়াসলি?”
” জি।পছন্দ হয়েছে?
রোহান দ্রুত হাতে বক্স খুললো।ঘড়িটি হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাসিত সে।খুশবু অবাক হলো যে মেয়ের সাথে এই ছেলের সম্পর্ক ছিন্ন সেই মেয়ের কাছ থেকে এতটা সহজে কি করে গিফট গ্রহন করছে সে?আরশাদ ঠিকি বলেছে এই ছেলে বেহাইয়া।
রোহান ঝটপট ঘড়িটা হাতে পড়ে নিল।তার হাসি হাসি মুখ দেখে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো খুশবুর।
” গতকালের জন্য আমি সরি আসলে..”
ওয়েটার এগিয়ে এলো।খুশবুর অর্ডারকৃত পুদিনা লেমন জুসটি দিয়ে হাসি মুখে প্রস্থান করলেন তিনি।রোহান দ্রুত হাতে জুসটি মুখে তুলে কুচকে ফেললো মুখ,
” এমন কেন?”
” পছন্দ হয়নি?এই রেস্টুরেন্টে এটা আমার ফেভারিট।প্লিজ আপনি পুরোটা খান,না খেলে আমার কষ্ট লাগবে।”
রোহান হাসি মুখে পুরোটা জুস সাবাড় করলো।মুহূর্তে ছেলেটার মুখে যেন বিষ্ফোরিত হলো।মুখ চুলকে খুশবুর পানে তাকালো সে,
” আমার মুখ চুলকাচ্ছে কেন?”
” আমি কী জানি?”
” সিরিয়াসলি প্রচন্ড চুলকাচ্ছে।”
রোহান অস্থির হলো।সামনে থাকা পানির বোতল ঠেসে ধরলো মুখে।ঠোঁট চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে গেল তার সারা মুখ।খুশবু দাঁড়ালো টেবিলে ভর দিয়ে ঝুকলো রোহানের মুখোমুখি।
” গতকাল যা যা বলেছেন আমি কতটা আঘাত পেয়েছি আপনি জানেন?মানুষের জিহ্বা একটা ধারালো তরবারির সমান।শুধু একটা বাক্যে অপর মানুষের চিন্তা চেতনা ফালা-ফালা করে দিতে পারে।কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ গতকাল করেছেন আজ না হয় বোবা প্রাণি হয়ে থাকুন।ওটা পুদিনা পাতা ছিল না বিছুটি পাতা ছিল।আর রেস্টুরেন্টের নামে কেস মামলা থেকে বিরত থাকবেন না হলে ফলাফল খুব খারাপ হবে।”
খুশবু মুখ ভরতি থুথু ছুড়ে ফেললো রোহানের মুখে।গতকালের রাগ জেদ সবটাই তার এক নিমিষে গায়েব হলো।আরশাদ পেছন থেকে হাত তালি দিয়ে এগিয়ে এলো।খুশবুকে বাম হাতের সাহায্যে জড়িয়ে আগলে ধরে বুকে,
” ওয়েল ডান জান।”
শুরু থেকে শেষ সবটাই ছিল আরশাদের পরিকল্পনা খুশবু শুধু আদেশ মোতাবেক কাজ করে গেছে।
.
শান্ত স্নিগ্ধ দু’চোখের আদলে বারংবার হারিয়ে যাওয়ার কোন কারণ খুঁজে পায়না আরশাদ।যতটা দিন যাচ্ছে খুশবুর সান্নিধ্যে তার ধৈর্য ক্ষমতা কমে আসছে।কবে জানি ধৈর্য হারিয়ে কোন এক অঘটন ঘটিয়ে বসে সে নিজেও জানে না।আরশাদের বাদামী মনিজোড়া ঘোর লেগে আছে।পাশে বসে থাকা সুন্দরী রমনীর শরীর থেকে আসা মিষ্টি ঘ্রাণ তার নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।আরশাদ জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো বাম হাতের সাহায্যে এলোমেলো করলো বাদামি চুল।গ্র্যানির সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে গ্র্যানি এর মাঝে বাচ্চার কথাও বলে ফেলেছে অথচ এমন এক হিটলার শ্বশুর যে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সে কথা কি করে বোঝাবে আরশাদ।
বউ যদি প্রেমিকার মতো দূরে দূরে ঘুরে তাহলে বাচ্চা তো দূরের কথা আরশাদের এই জন্মে আর দেহের ক্ষুদা মিটবে না।গত রাতে ঘুমায়নি খুশবু আরশাদের সাথে বকবক করার মাঝে গাড়িতে ঘুমিয়েছে সে।এখন সময় রাত আটটা।বাহারুল হক দুই বার ফোন করে আরশাদকে ধমক দিয়েছেন কিন্তু আরশাদ খুশবুর ঘুম ভাঙায়নি।বউটা কাছে ঘুমিয়ে আছে ঘুমাক,সে চায় না জ্বালাতন করতে।
আরশাদের বাহুতে ঝুকে ঘুমিয়ে আছে খুশবু।আরশাদের ভ্রম হয়েছে, সব এলোমেলো ঠেকছে তার কাছে।আর কিছুক্ষণ যদি তার ফ্লুজি তার কাছে থাকে তবে আজ কিছু একটা ভুল হবেই।
এই ভুল হয়তো হওয়ারি ছিল নড়ে চড়ে আরশাদের সহিত আরো গভীরে লেপটে গেল খুশবু।ছেলেটা নিজের ধৈর্যের প্রশংসা জানিয়ে বিদায় জানালো ধৈর্যকে।ঝটকায় কোলে তুলে নিল খুশবুকে।অন্ধকার গাড়িতে আচমকা চোখ খুলে দিশাহীন মেয়েটা।
” আরশাদ আমি কোথায়।”
” আমার কাছে ফ্লুজি।
আরশাদের দেহের সাথে চেপে আছে খুশবু।নিজের অস্ত্বিত্ব বুঝতে পেরে লজ্জায় পড়লো সে।
” আপনার খালি দুষ্টুমি।আমাকে উষ্কে দিয়ে আপনি ভেগে যান।”
” তোমার বাবাকে বলো তোমাকে আমার কাছে পাঠাতে তাহলে তো আর সমস্যা নেই।”
” তখন তো অনেক সমস্যা।”
” কী সমস্যা?”
” না বলবো না।আমাকে ছাড়ুন আরশাদ আজ আর আপনার কোন কথায় আমি সাড়া দেব না।”
” সত্যি?”
” সত্যি।”
” আমিও দেখবো ফ্লুজি।”
আরশাদ শ্লেষ হাসলো খুশবুর গলায় আঙুল ছোঁয়াতে ছিটকে দূরে সরতে চাইলো সে।আরশাদ কি করে বুঝলো তাকে সিডিউস করার মতো সহজ মাধ্যম গলা।খুশবু নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আরশাদ বাঁকা হাসে।উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়ায় ছুঁইয়ে দিতে থাকে মেয়েটার গলদেশ।আরশাদের প্রতিটি ছোঁয়ায় নিজের জেদের কাছে সহজে হেরে গেল খুশবু।আরশাদের চুল খামছে জানান দিল তার চাওয়া।তৎক্ষনাৎ বেজে উঠলো আরশাদের ফোন।বাহারুল হক ফোন করেছেন।খুশবু রেগে গেল অসহায় চোখে তাকালো আরশাদের পানে।তার মনের কামনা বাসনা প্রতিবার এভাবে বিফলে যায়!আরশাদ তাকে উষ্কে দিয়ে কি মজা পায়?খুশবুর রাগান্বিত চাহনিতে ঠোঁট উল্টে আরশাদ বলে,
” সরি জান আমার কী দোষ?”
চলবে___