ফুলশয্যা(সিজন-০২)
পর্ব- ২৬ এবং অন্তিম পর্ব
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
বিছানার পাশে কলাগুলো রেখে শুয়ে পরে আবির। মিনিট ত্রিশেক পর শুনতে পায় চপচপ শব্দ। শব্দটা ঠিক পাশ থেকেই আসছিল। মনে হচ্ছে আদিরার কলার উপর ইঁদুর হামলা করেছে। আস্তে আস্তে ফোনটা হাতে নিয়ে টর্চটা জ্বেলে দেয়। কিন্তু একি?
” এ যে ছোট ইঁদুর….”
হেসে দেয় আবির। ঘুমে ঢুলুঢুলু আদিরা মিটমিট চোখে কলা খাচ্ছে……
‘ওরে আমার পিচ্চি কলা পাগলী’টা….’
হাত থেকে ফোনটা রেখেই আবির আদিরাকে জাপটে ধরে। নাকে, মুখে, কপালে চুমু দেয়। আদিরা প্রচন্ড রাগান্বিত ভঙ্গিতে জানান দিচ্ছে, ‘ওর কলা খাওয়াতে আবির বিঘ্ন ঘটিয়েছে।’ সরে যায় আবির। সরে গিয়ে সুযোগ করে দেয় কলা খেতে। আদিরা আপনমনে কলা খেয়ে চলছে।
পরদিন___
সকাল সকাল’ই জেগে উঠে আবির। বলতে গেলে বলতে হয় অনেকটা বাধ্য হয়েই উঠেছে। না হলে ছুটির দিনে এত তাড়াতাড়ি উঠার লোক আবির না। আসলে ফজর নামাজ শেষে একটু শুয়েছিল, কিন্তু পিচ্চি আদিরার কলকলানির আওয়াজে আর টিকতে পারল না।
‘ বাপরে বাপ!’ এত্ত কথা পারে কিভাবে? কথাটা বলেই আবির ঘুম ঘুম চোখে আদিরাকে নিয়ে পাশের যে রুমে নীলিমা শুয়েছে সে রুমে যায়। আদিরাকে কোলে নিয়ে’ই ওরুমের দরজা আংশিক ফাঁকা করে উঁকি দেয়। কিন্তু একি?!
নীলিমা যে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে ভেঁজা চুল আঁচড়াচ্ছে! দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে আবির। চোখ বড় বড় করে নীলিমার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
‘কি ব্যাপার? সকাল সকাল গোসল, ঘটনা কি?’ আবিরের দিকে তাকায় নীলিমা-
” ঘটনা মানে?”
আবিরের কোল থেকে নেমে আদিরা দৌঁড়ে নীলয়ের কাছে চলে যায়। নীলিমা তখনো জিজ্ঞাসো দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। মাথা চুলকায় আবির।
” ইয়ে, না মানে আমি তো কালকে তো আমি ঐ রুমে ছিলাম! তবে কি তুমি স্বপ্নে…..(…)….???”
রেগে যায় নীলিমা। কথার মাঝখানে থামিয়ে দেয় আবিরকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে, ‘স্বপ্নে নয় বাস্তবে! আপনার গুনধর পুত্র প্রস্রাব করে পরনের জামা ভিঁজিয়ে দিয়েছে।’ মুখে দুষ্টু হাসির রেখা ফুটে আবিরের।
” উহ! আমি ভাবলাম কি না কি হয়েছে।”
কিছু বলতে গিয়েও বলেনি নীলিমা। প্রচন্ড রাগে রুম থেকে হনহনিয়ে বের হয়ে যায়।
ব্রেকফাস্টের পর___
আবির রুমে বাচ্চাদের সাথে খেলতেছে আর নীলিমা কিচেনে বাচ্চাদের জন্য খাবার তৈরি করতেছে। পাশে এসে দাঁড়ায় নীলিমার শাশুড়ি। পিছনে না ফিরেই প্রশ্ন করে নীলিমা- “মা! কিছু লাগবে?”
বাঁকা মুখে শাশুড়ির জবাব,
নাহ! আদিবার শ্বশুর বাড়ি থেকে কল এসেছে। ওর ননদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। ওরা বলেছে, বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে। আদিবা যেন আদিত্যকে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায়। আর আমাদেরও দাওয়াত দিয়েছে, বিয়ের দু’দিন আগে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত থাকতে হবে। আমার শরীরটা’তো বেশী ভালো যাচ্ছে না। তাই আমি কোনো বিয়েটিয়েতে যেতে পারব না। কিন্তু তোমরা যেও। না হলে ব্যাপারটা খারাপ দেখা যায়। আর হ্যা, বিয়ের যেহেতু এখনো ১৫দিন বাকি তাই মুখে একটু ক্রিম-ট্রিম মেখে দেখো একটু সাদা হওয়া যায় কি না। বাজারে তো আজকাল অনেক ক্রিম’ই বিক্রি করে। একটা ক্রিম কিনে দেখো, রঙ’টা একটু ফর্সা হয় কি না।
কথাগুলো বলে’ই নীলিমার শাশুড়ি চলে যায়। নিঃশব্দে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায় নীলিমা।
নীলিমা রুমে ঢুকে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে আর আবির নীলিমাকে হেল্প করছে। খাওয়ানো শেষে বসা থেকে উঠে পরে আবির। হাটতে হাটতে দরজার কাছে চলে যায়। পিছন থেকে ডাক দেয় নীলিনা-
” শুনছেন?”
পিছনে ফিরে তাকায় আবির। তারপর—
আবির:- কিছু বলবে?
নীলিমা:- কোথাও যাচ্ছেন নাকি?
আবির:- হুঁ, মায়ের রুমে।
নীলিমা:- আচ্ছা, তবে যান।
আবির:- কিছু লাগবে তোমার?
নীলিমা:- না, আপনি যান।
আবির:- না, আগে তোমার কথা বলো। কি বলতে চাইছিলে? কিছু লাগবে কি?
মাথা নিচু করে নীলিমা। তারপর নিচু স্বরেই বলে, আমার একটা জিনিস আনা খুব দরকার ছিল। ভাবলাম আপনি বাজারে যাচ্ছেন……
আবির:- ওহ! এই কথা? কি জিনিস?
‘দাঁড়ান, আমি কাগজে লিখে দিচ্ছি।’
নীলিমা কাগজে ছোট্ট অক্ষরে ত্বক ফর্সাকারী একটা ক্রিমের নাম লিখে দিল। কলেজে থাকাকালীন সময়ে অনেক মেয়েরা নীলিমাকে কটাক্ষ করে, ওকে নিয়ে ঠাট্টা করে বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করার কথা বলত। তখন ওদের কথায় অপমানিত হলেও কষ্ট পায়নি। কথাগুলো এক কান দিয়ে শুনলে আরেক কান দিয়ে বের করে দিত। আজ শাশুড়ির কথাটা ভিতরে গিয়ে আঘাত করেছে। মনে কষ্ট পেয়েছে নীলিমা। তাই সেদিন বান্ধবীদের সাজেস্ট করা ক্রিমের থেকে একটা ক্রিমের নাম লিখে দেয়। আবির কাগজটা ভাঁজ করে প্যান্টের পকেটে রেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, ঠিক আছে! আমি তবে এখনি নিয়ে আসছি….
কথাটা বলেই আবির বাজারের দিকে পা বাড়ায়। পুরো বাজারের কসমেটিকসের দোকান ঘুরে সবশেষে একটা দোকানে ক্রিমটার খুঁজ পাওয়া যায়। ক্রিমটা হাতে নিয়ে আবির বাসায় ফিরছিল। রাস্তায় বোন আদিবার সাথে দেখা হয়। ছেলে নিয়ে রিক্সাতে করে চলে যাচ্ছে বাসস্টপের দিকে। আবিরকে দেখে রিক্সাওয়ালাকে থামায়। প্রশ্ন করে আদিবা-
“দেখি তো ক্রিমটা?”
আবির বোনের দিকে ক্রিমটা এগিয়ে দেয়।
ক্রিমটার দিকে একনজর তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় আদিবা। প্রশ্ন করে ছোট ভাইকে- ‘ নীলিমা নিতে বলেছে?’
মাথা ঝাকায় আবির। অনেকটা জোরেই হেসে দেয় আদিবা।
‘ আচ্ছা, নিয়ে দে ওকে।
দ্যাখ, এটা দিয়ে একটু সাদা হতে পারে কি না। শাশুড়ির মন রক্ষা করতে পারে কি না।কথাটা বলেই আদিবা চলে যায়।’
আবির এতক্ষণে বুঝতে পারল তখন দোকানের ছেলেটা কেন বলছিল, বাব্বাহ! ভাবিও রূপচর্চা করে তাহলে? রাগে পুরো শরীর কাপছে আবিরের। ৭মিনিটের রাস্তাও ৫মিনিটে গেল। ড্রয়িংরুমে বসে নীলিমা তখন টিভিতে রূপচর্চা বিষয়ক একটা অনুষ্ঠান দেখছিল। আবিরকে দেখেই চ্যানেলে পাল্টে টিভি বন্ধ করে ফেলল। নীলিমাকে কিচ্ছু না বলে আবির হনহনিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। নীলিমা নিচে বাচ্চাদের রেখেই আবিরের পিছু নেয়। আবির ওর রুমে না ঢুকে সরাসরি মায়ের রুমে ঢুকে। নীলিমাও পিছু নেয়। রুমে কাউকে না দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করে, মা কোথায়? নীলিমার জবাব, এইতো পাশের বাসায় গেছে। ওহ, বলে রুমে চলে যায় আবির। আবিরের পিছু পিছু নীলিমাও রুমে যায়। আবির হাত থেকে ক্রিমটা ড্রেসিংটেবিলের দিকে ছুঁড়ে মারে। নীলিমা ক্রিমটা ধরতে গেলে আবির বাঁধা দেয়। ‘খবরদার! ক্রিমে হাত দিবা না।’
চমকে যায় নীলিমা। হাত দিব না মানে? উগ্র মেজাজে আবিরের জবাব, হাত দিবা না মানে হাত দিবা না। প্রশ্ন করে নীলিমা, তবে এটা এনেছেন কেন? নির্লিপ্ত কন্ঠে আবিরের জবাব, এটা মায়ের জন্য। মাকে দিব। বুঝতে পারছ এবার? ভ্রু-জোড়া কিঞ্চিৎ বাঁকা করে নীলিমার প্রশ্ন, মানে? মায়ের জন্য এনেছেন মানে? ক্রিমটা হাতে নিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে আবির জবাব দেয়, মানে খুব সহজ। এই ক্রিমটা মায়ের জন্য এনেছি। নীলিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, উফ! আপনি বুঝতে পারছেন না কেন? এই ক্রিমটা ত্বক…..(…..)….???
পাশ থেকে আবিরের জবাব, ফর্সা করে তাইতো? আমি এ ক্রিমটা আমার মাকে ফর্সা করার জন্য’ই দিব। তবে সেটা বাহ্যিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য নয়। আমি এটা মাকে দিব অভ্যন্তরিন সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য। আমি এটা ওনাকে দিব। তবে মুখের নয়, মনের কালো দুর করার জন্য। এটুকু বলে আবির রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কলার চেপে ধরে নীলিমা-
নীলিমা:- কি করছেন কি?
আবির:- ছাড়ো, ছাড়ো বলছি….
নীলিমা:- মাথা নষ্ট হয়ে গেছে আপনার?
আবির:- হ্যা, আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। আমাকে ছাড়ো তুমি, ঐ মহিলার সাথে আজ’ই আমার শেষ দিন।
নীলিমা:- খবরদার! আর কখনো যাতে এরকম বাজে কথা না শুনি।(মুখ চেপে)
আবির:- আর কখনো বলতেও চাইনা। আজই শেষ বুঝাপড়া হবে ঐ মহিলার সাথে।
নীলিমা:- এবার কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আরেক বার যদি মহিলা শব্দটা শুনি না তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। আর আপনার একটুও বিবেকে বাঁধছে না নিজের জন্মদাত্রী মাকে ঐ মহিলা মহিলা করে বলতে? কেন এভাবে রেগে যাচ্ছেন? কি করেছেন ওনি?
আবির:- আজ ওনার পরামর্শেই তুমি ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমটা আনছ তাই না?
নীলিমা:-……. (স্তব্ধ হয়ে)
আবির:- কি হলো? মুখের বুলি শেষ হয়ে গেল এখনি?
নীলিমা:- দেখুন, আপনি অযথায় রাগ করছেন। ওনি আমাকে জাস্ট ক্রিমটা সাজেস্ট করছেন, এটুকুই। ওনি আমাকে ছোট বা অপমান করার মত কিছুই বলেননি। তাই প্লিজ শান্ত হোন।
রেগে যায় আবির। নীলিমার থেকে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। তারপর জোর গলায় বলতে শুরু করেন-
এতকিছুর পরও তুমি বলছ অপমান করেনি? দিনের পর দিন তোমার বংশ নিয়ে, তোমার গায়ের রঙ নিয়ে কথা শুনিয়েই যাচ্ছে, তারপরও বলছ অপমান করেনি? একটু কাজে ভুল না হতেই মা বাবা তুলে গালি দেয়, তাও বলছ অপমান করেনি? বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে সামান্য একটু খেতে চাইতা, তার জন্য কথার আঘাতে জর্জরিত হতে হয়েছে। তারপরও বলছ অপমান করেনি? আদিরা একটু কালো হয়েছে, এই জন্যও তুমি দায়ী। কথা শুনতে হয়েছে তোমাকে। নীলি, নিজেকে খুব চালাক আর আমাকে খুব বোকা মনে করো, তাই না? ভেবেছ আমি কিছু’ই জানি না? বাচ্চাদের ১ম জন্মদিনে মায়ের তিক্ত কথা সহ্য করতে না পেরে আদিরার মুখ পরিষ্কার করার জন্য সাবান দিয়ে মুখ ঘষতে ঘষতে রক্ত বের করে দিয়েছিলা, তুমি কি মনে করেছ? আমি সেসব জানি না? তোমার কি মনে হয়, আমি সুদুর ঢাকা থেকে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিন বাসায় শুধু বাচ্চা দেখতেই আসি? তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে আড়ালে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে দেখিনি? তোমার কি মনে হয় আমি দেখিনি বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায়ও মা তোমার সাথে কিরকম বাজে ব্যবহার করত? তোমার কি মনে হয় আমি তোমার হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টকে অনুভব করতে পারি না? আমি সব জানি, সব বুঝি, সব দেখি। কিন্তু কিচ্ছু বলিনি এতদিন। মনে করেছিলাম, যাক না কিছুদিন! তারপর ভালো হয়ে যাবে আমার মা। শুধরে নিবে নিজেকে। কিন্তু নাহ। আমার মা ভালো হয়নি। পরিবর্তন হয়নি দৃষ্টি ভঙ্গির। আসলে কি জানো? ওনি কখনো শুধরাবার নয়। আজ তাই আমি ওনাকে কিছু কথা শুনাতে চাই। তারপর ওনাকে গুডবাই জানিয়ে আমি আমার বউ বাচ্চাদের নিয়ে ঢাকা চলে যেতে চাই।
চলে যাচ্ছিল আবির। দৌঁড়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে আবিরের পথ আগলে দাঁড়ায় নীলিমা। প্লিজ, আপনি শান্ত হোন। একটু শান্ত হোন। রাগের বশবর্তী হয়ে এত বড় অন্যায় করবেন না। যত যায় হোক, আপনি ওনার সাথে এমন করতে পারেন না। কারন, ওনি আপনার মা। আপনাকে জন্ম দিয়েছেন। মানুষ করেছেন। আজ সামান্য কারনে আপনি ওনার সাথে এমন করতে পারেন না। এত বড় পাপ করতে পারেন না। মানছি ওনি আমাকে অনেক সময় অনেক কটু কথা শুনিয়ে দিয়েছেন তার মানে এই নয় ওনি আমাকে ভালোবাসেন না! ওনি আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন। বিশ্বাস করেন ওনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন। আর ভালোবাসেন বলেই আমার সাথে রাগ দেখাতে পারেন। আর তাছাড়া ওনিও আমার মতো একটা জীবন অতিক্রম করে এসেছেন। যে জীবনে ওনিও আমার মতই বউ ছিল। আপনি একটা কথা বুঝতে পারছেন, এই যে ওনি আমাকে বলত এটা খাবে না, ওটা খাবে না। বেশী খাবে না। এগুলো আমার প্রতি কোনো রাগ থেকে বলেনি। এগুলো বলেছে কারণ ওনার সাথেও এরকম হয়েছে। ওনিও একসময় মুরুব্বীদের এসব কথা শুনেছে, মেনেছে। আর আমাকে এসব বলেছে বাচ্চার ভালোর জন্যই। কারন, ওনি এখনো মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন বেশী খেলে বাচ্চা জন্ম দেয়ার সময় কষ্ট হয়। টাকি মাছ খেলে বাচ্চার গায়ের রঙ কালো হয়। এগুলো কুসংস্কার। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এসব চলে আসছে। তাই এসব বিষয়ে এককভাবে ওনাকে দোষারোপ করা যায় না। আর সবচেয়ে বড় কথা যেটা সেটা হলো ওনার বয়স হয়েছে। এই সময় মানুষের মস্তিষ্কের..(………..)……পরিবর্তন ঘটে। যার ধরুন বুড়ো মানুষরা বেশী কথা সহ্য করতে পারে না, প্যানপ্যান করে। ওনার অনেক বয়স হয়েছে। তাই ওনার এসব করাটাই স্বাভাবিক। এখন আমরা যদি ওনার এসব কথাকে মনে নিয়ে বসে থাকি, তাহলে তো হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি ওনাকে আমার মা বলে মেনে নিয়েছি। তাই আমি বেঁচে থাকতে, একজন মেয়ে বেঁচে থাকতে তার মাকে কেউ কষ্ট দিতে পারে না, আপনিও পারবেন না। দয়া করে শান্ত হোন। প্লিজ……
আবির চুপ হয়ে যায়। এত্ত সুন্দর কথা শুনার পর, আর কি বা কথা থাকতে পারে। রাগটা এতক্ষণে অনেকটা কন্ট্রোলে চলে আসে আবিরের। নীলিমাকে সরানোর চেষ্টা করে বলে, তবুও প্লিজ তুমি একটু সরো। আমি জাস্ট মাকে দুটো কথা বলে আসব।
বাঁধা দেয় নীলিমা। ‘কোথায়ও যাবেন না আপনি। একটা কথাও বলতে পারবেন না আপনি ওনাকে।’ আবির নীলিমাকে সরানোর চেষ্টা করছে, নীলিমা যেতে দিচ্ছে না। একপর্যায়ে নীলিমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ছিটছিনিতে হাত দেয় আবির, তখনি বসা থেকেই কাঁদতে শুরু করে নীলিমা। আবির তাকিয়ে দেখে নীলিমা ফ্লোরে পরে আছে। আমি ছিটকিনি না খুলে নীলিমাকে উঠায় আগে। ‘স্যরি….’
কাঁদতে থাকে নীলিমা। কাঁদতে কাঁদতেই আবিরের একটা হাত চেপে ধরে।
” দয়া করে আপনি ওনাকে কিছু বলবেন না। আপনাকে ওনি অনেক ভালোবাসেন। মেনে নিতে পারবেন না ওনি আপনার কথাগুলো। কষ্ট পাবেন ওনি, ভিষণ কষ্ট। প্লিজ, নিজেকে একটু শান্ত করেন। এভাবে রাগ দেখাবেন না। এতে সংসারে ফাঁটল ধরবে। আপনি একটু বুঝার চেষ্টা করেন। মাকে এভাবে কথা শুনালে আমার নিজেকে বড্ড ছোট মনে হবে। এরপর আমি মায়ের সামনে দিয়ে হাঁটতেই পারব না। তাই আমার কথাটা শুনুন…..
আবির নীলিমার হাত থেকে ওর হাতটা সরিয়ে নিয়ে নীলিমার চোখের জল মুছে দেয়। তারপর মুখে জোর করে হাসির রেখা টেনে বলে, ঠিক আছে! আমি কিচ্ছু বলব না। তুমি যাও রেডি হয়ে নাও। ঢাকায় যাব আমরা।
আবির চলে যাচ্ছিল। পিছন থেকে নীলিমার প্রশ্ন, পালিয়ে যাচ্ছেন? পিছনে তাকায় আবির। নীলিমা বলে উঠে, কিন্তু পালিয়ে কিংবা এড়িয়ে গেলে যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। আঘাতের বদলে আঘাত নয়, ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে হয়। কবি জসীমউদ্দীনের ‘প্রতিদান’ পড়েননি? কবিতায় ওনি বলেছেন,
ওনার ঘর যে ভেঙেছে ওনি তার ঘর বাঁধে, ওনাকে যে পর ভেবে দুরে সরিয়ে দিয়েছে, তাকেই আপন করার জন্য কাঁদে। যে ওনার দিকে বিষে ভরা তীর ছুঁড়ে দিয়েছেন, ওনি তাকেই বুক ভরা গান দেন। যে কুল ভেঙেছেন, ওনি তারই কূল বাঁধেন। যে ওনাকে বুকেতে আঘাত করেছে, ওনি তারই জন্য কাঁদেন। প্রকৃতপক্ষে জীবনের সার্থকতা তো এখানেই বুড়ো। দরজার সামনে থেকে আবারও ফিরে আসে আবির। নীলিমাকে বুকে টেনে নেয়। কপালে উষ্ণ ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দিয়ে বলে, ঠিক আছে আমার পাকনা বুড়ি’টা। আমি পালিয়ে যাব না। তবে কাল কিন্তু যেতেই হবে। বাচ্চারা মোটামুটি বড়’ই হয়েছে, আর ওখানে শ্যালিকা শাশুড়ি মাও আছেন। তাই আর কিন্তু না করা যাবে না। হেসে দেয় নীলিমা। ঠিক আছে। কাল যাব। আজকে রাত্রে বাবা আসলে মা-বাবাকে কথাটা জানাবো আগে। কেমন? একটা মৃদু হাসি দিয়ে আবির বলে, ওকে।
সেদিন রাত্রে শ্বশুরের অনুমতি নেয়ার পর নীলিমা ওর শাশুড়ি মায়ের রুমের দিকে যাচ্ছিল। দরজার সামনে গিয়ে থমকে যায় নীলিমা। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না সে। ওর শাশুড়ি কাঁদছে। খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আস্তে, আস্তে কাঁদছে। বুকের ভেতরটায় কিরকম হাঁহাকার করে উঠল। এতবছরের বৈবাহিক জীবনে আজই প্রথম নীলিমা ওর শাশুড়ির চোখে পানি দেখছে। এখন ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে না এই ভেবে নীলিমা দরজার সামনে থেকে বিদায় নিচ্ছিল, ডাক দেয় শাশুড়ি। ” ভিতরে আসো….”
নীলিমা ভীরু পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
“বসো….”
বিছানার পাশে বসে আমতাআমতা করতেছে নীলিমা। ইয়ে না মানে মা আমরা….(……)…..???
“কালকে চলে যাবে, তাই না?”
শাশুড়ির দিকে হা করে তাকায় নীলিমা। কিছু একটা বলতে যাবে, তার আগেই নীলিমার একটা হাত চেপে ধরে শাশুড়ি।
‘ মারে! আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি ইচ্ছে করে তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি, তোকে কাঁদিয়েছি। গালি দিয়েছি মা বাপ তুলে। আমি বড্ড ভুল করেছিরে মা। ছাই ভেবে আমি হিরাকেই দুরে সরিয়ে দিয়েছি। খুব অন্যায় করে ফেলেছি আমি, আমায় মাফ করে দে মা। আমাকে একা করে দিয়ে যাস না। আমি আমার নাতি-নাতনিকে নিয়ে জীবনের শেষ সময়টা কাটাতে চায়।”
শাশুড়ির মুখ থেকে এমন কথা শুনে বড্ড মায়া হয় নীলিমার। কিন্তু কিচ্ছু করার ছিল না চোখের দু’ফোঁটা জল ফেলা ছাড়া। কারন, নীলিমা আবিরকে কথা দিয়ে ফেলেছে কাল চলে যাবে ওর সাথে।
‘মা! আমাদের কাল যেতে হবে। সকাল সকাল’ই রওয়ানা দিব।’
কথাটা বলেই নীলিমা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আবিরের মা চোখের জল ছেড়ে দেয়। এ জল অনুশোচনার। একটা খাটি হিরার টুকরাকে হাতের কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেলল, সেই অনুশোচনায়। সকালে পাশের বাড়ি থেকে ফিরে আদিরা নীলয়কে ড্রয়িংরুমে বসে থাকতে দেখে প্রচন্ড রেগে ওদের নিয়ে যাচ্ছিল আবিরের রুমের দিকে নীলিমার কাছে। তখন’ই ওদের কথা শুনতে পায়। বাচ্চা দুটোকে ছেড়ে দিয়ে সব কথা শুনে নেয় আবিরের মা। অনুশোচনার জন্মটা ঠিক তখন থেকেই। পরদিন সকালে আবির ওর বউ বাচ্চা নিয়ে রওয়ানা হয়ে যায় ঢাকার দিকে। ছোট্ট নীলয় বার বার দাদীর দিকে ফিরে তাকিয়ে চিৎকার করছিল কোলে উঠার জন্য, দাদীও ছুটে আসছিল কোলে নিতে কিন্তু আবির দেয়নি। জোর করে বাচ্চাদের নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। হু, হু করে কেঁদে দেয় আবিরের মা। দু’চোখের লোনাজলে গাল ভিঁজে একাকার। এ কান্নার শেষ কোথায় ওনি নিজেও জানেন না…..
দেখতে দেখতে ৭বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। ছোট্ট আদিরা-নীলয় ৯বছর বয়সে পদার্পণ করে। আবির নীলিমার বিবাহের বয়স তখন আঠারো। নভেম্বরের কোন এক তারিখে আবির ওর কলেজ স্টার্ভদের সাথে সফরে বের হয়। পুরো ৭দিনের সে সফর।
নভেম্বরের ১৩ তারিখ ছিল ওদের ১৮তম বিবাহবার্ষিকী।
নীলিমা ফোন দিল, ১৮তম বিবাহবার্ষিকী পালন করার জন্য বাসায় আসতে হবে। আবির তখন সিলেট সফরে গিয়েছিল। বলল, ৭দিনের সফর। তার আগে আসা যাবে না। তাই এবার বিবাহবার্ষিকী পালন করা হবে না। সত্যি বলতে নীলিমার জন্য একটা হার বানাতে দিয়েছিল আবির। বিশ হাজার টাকা বাকি ছিল। চিন্তা করল, হারের বকেয়া টাকাটা পরিশোধ করে নীলি বুড়িকে আঠারো তম বিবাহবার্ষিকীর একটা চমক তো দেয়া যায়। আইডিয়া অনুযায়ী বেতনসহ কলিগ মারুফের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করল। সফরে কলিগদের থেকে বিদায় নিয়ে চারদিন আগেই রাতে বাড়ির দিকে রওনা হলো। নীলির হার তৈরি করতে দেয়া হয়েছিল ওর বাবার বাড়িতে। আবির শ্যালিকাকে ফোন করে বলল, লিমা, তুমি বকেয়া টাকা পরিশোধ করে হারটা বানিয়ে রাখো, আমি গিয়ে টাকা দিয়ে নিয়ে আসব। কিন্তু তোমার বোন যেন না জানে। এদিকে আবির ওর বোন আদিবাকে ফোন করে বলল, আদিরা-নীলয়কে যেন ২দিনের জন্য ওদের বাড়িতে নিয়ে যায়। ভাইয়ের কথামতই আদিরা নীলয়কে নিয়ে গেল আদিবা। ১২ তারিখে খুব ভোরে গিয়ে দরজায় নক করল আবির।
কে?
আমি, দরজা খুলো।
নীলিমা প্রথমে দরজা খুলতে চাইল না।
তারপর শিউর হওয়ার পর দরজা খুলে আবিরকে জড়িয়ে ধরতে এলে আবির ওকে থামিয়ে দিল। নীলিমার তো অনেক প্রশ্ন, কেন ফোন দিলেন না? সফর রেখে হঠাৎ চলে এলেন যে? নাকি শরীর খারাপ… ইত্যাদি।
আবির শুধু বলল, আমি তো আর আকাশপথে আসিনি? আমি সারারাত জেগে বাসে করে এসেছি। একটু ঘুমাতে হবে। নীলিমা খুব মন খারাপ করল। আবির শুয়ে পড়লে নীলিমাও শুয়ে পড়ল।
একটু পর আস্তে আস্তে আবিরের দিকে এগিয়ে এসে আবিরের শরীরের সঙ্গে লেগে গেল। আবির ওকে একঝটকায় সরিয়ে দিয়ে রাগত স্বরে বলল, একটু ঘুমোতে দেবে? নীলিমা খুব ভয় পেল। কিছু না বলে রান্না করার জন্য উঠল। টুকটাক শব্দে আবিরের ঘুম ভাঙল। তখন সকাল প্রায় দশটা। ঘুম থেকে উঠে আদিরা-নীলয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে গোসল সেরে রুমে এল আবির। নীলিমা ভাত বেড়ে টেবিলে বসে ছিল। আবির রুমে আসতেই নীলিমা আবিরের হাত জড়িয়ে ধরে বলল, বলুন, আমি কি অপরাধ করেছি, আমার সঙ্গে এমন করছেন কেন? বলেন, কি ভুল করেছি আমি। পাশ থেকে আবির বলে উঠল, দোষ তোমার না, ভুল-দোষ সবই আমার। আমার এই পোড়া কপালের।
“ভাত খান।”
যদি তোমার ক্ষিধে লাগে আর যার জন্য রান্না করেছ তাকে খাওয়াও। এই বলে ভাত না খেয়ে শার্ট-প্যান্ট পরে রওনা দিতেই নীলিমা পা ধরে জোর গলায় কাঁদতে লাগল। নীলিমা শেষবারের মত বলল, একবার বলুন, কোথায় যান?
আবির বলল, সুখের খুঁজে।
ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে শ্যালিকাকে ফোন দিল আবির। জিজ্ঞেস করল, কোথায় আছ? লিমা বলল, ভাইয়া এইতো বাজারের কাছাকাছি।
লিমা, নীলি যেন কোনোভাবেই না জানে। আমি কিন্তু বাসা থেকে রাগারাগি করে এসেছি। ফোন দিলে বলবা না যে আমি তোমাদের বাড়িতে আসছি। আর হারের কথা তো বলবেই না।
ওদের শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের খেলা আবিরের শাশুড়িও জানতেন না। দুপুর দুটোর দিকে শ্বশুর বাড়িতে গেল আবির। শাশুড়ি তো অবাক।
বাবা, তুমি? নীলিমা কই?
আবির কোনো কথা না বলে ঘরে গিয়ে বসল। আবিরের শাশুড়ি পিছু পিছু গিয়ে আবিরের পাশে বসে বলল, বাবা, আমাকে বলো কি হয়েছে? আবির কিছু না বলে চুপ করে থাকল। শ্যালিকা হারটা এনে মাকে দেখালো। আবিরের শাশুড়ি বললেন, এই তাহলে শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের খেলা? আবির শাশুড়িকে বলল, মা, এই কথা নীলিমাকে বলবেন না। খাওয়া-দাওয়া করার সময় শাশুড়ি বললেন, ভাগ্যিস লিমা ঢাকা থেকে আসার সময় মাংস এনেছিল। তা না হলে আলু ছানা দিয়ে ভাত খাওয়া লাগত।
তারপর আবির ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সরাসরি বাসায় না গিয়ে বাজারে দেরী করে রাত আটটায় বাসায় গেল। সারাদিন ফোনও বন্ধ ছিল। বাসায় এসে না খেয়েই শুয়ে পড়ল আবির। নীলিমা আবার পায়ের কাছে এসে প্যানপ্যানানি শুরু করল, কি দোষ আমার? কেন এমন করলেন? আপনার ফোনও সারাদিন বন্ধ। আমি সারাদিন কিছুই খাইনি। একটু পর বলল, ঠিক আছে, কথা না বললে না বলেন, চলেন খাবেন। আবির তবু গেলো না। ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকল। ঘন্টাখানেক পর নীলিমা কেঁদে শুয়ে পড়ল। তবে আবিরের শরীর ঘেষে নয়। এভাবে রাত এগারোটা পঞ্চাশ মিনিট পর্যন্ত ছিল। নীলিমা কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছিল। নীলিমাকে জাগিয়ে ঠিক এগারোটা ঊনষাট মিনিটে আবির বলল, চোখ বন্ধ করো। নীলিমা চোখ বন্ধ করতেই আবির হারটা বের করে নীলিমার গলায় পরিয়ে দিয়ে বলল, চোখ খুলো।
চোখ খুলে নীলিমা তো অবাক। প্রায় পাঁচ মিনিট আবিরের দিকে চেয়ে থেকে কেঁদে ফেলল। তারপর আবিরের বুকে মুখ লুকাল। আবির নীলিমার মাথায় হাত রেখে ডাকল। নীলিমা এমন হাসি দিল, মনে হলো সারা ঘর ওর হাসিতে কেঁপে উঠল। দালান ঘরে হাসিটা চার দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। আবির বিশ্বাস করতে পারছিল না, নীলিমা এভাবে হাসতে পারে। সেদিনই মানল, নীলিমার মতো পৃথিবীতে আর কেউ হাসতে পারে না। আবির মুগ্ধ হয়ে ওর হাসি দেখছিল। তা দেখে নীলিমা লজ্জা পেয়ে আবিরের বুকে মাথা রাখল। আবির নীলিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে গেল। তারপর আচমকায় গেয়ে উঠল-
সানাইটা আজ বলছে কি
আমি জানি সেই কথা
রাত জেগে কেউ শুনছে কি
আমি শুধু শুনছি তা
কি করে বলি এই প্রাণ চায় যা।
আজ মধুর রাত আমার ফুলশয্যা….
লজ্জায় ক্ষাণিকটা দুরে সরে গিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল নীলিমা। আবির চুপিচুপি বলল, ওঠো, খেয়ে নেই। আজ তোমাকে অনেক ভালোবাসা দেব। আর তা নিতে তো শক্তির প্রয়োজন আছে, তাই না? নীলিমা হেসে বলল, চলেন খেয়ে নিই। তারপর আবার সেই হাসি।
♪সমাপ্ত♪