ফুলশয্যা(সিজন-০২)
পর্ব- ১৮
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
আবিরের কথা শুনে দৌঁড় দিচ্ছিল নীলিমা, ধরে ফেলে আবির। একটানে কোলে তুলে নেয়। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নীলিমা। দুষ্টু হেসে আবিরের প্রশ্ন-
পালাবে কোথায়?
খুব ক্লান্ত, ঘুমোতে চাই আমি। প্লিজ যেতে দিন আমায়। অনেকটা অসহায়ের মত আবিরের মুখের দিকে তাকায় নীলিমা। দুষ্টু হেসে আবিরের জবাব, ঘুম এখনি উদাও হয়ে যাবে, সাথে ক্লান্ত ভাবটাও। তাই কোনো কথা হবে না…..
“দেখুন! আপনি কিন্তু এখন বেশি বেশি করছেন। জোর করে উঠিয়ে নিয়ে আসছেন, তারউপর এখন এভাবে তেড়ে আসছেন। একবার যদি ছাড়া পাই না খুব খারাপ হয়ে যাবে। আপনার নামে মামলা করব।”
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আবির।
“আচ্ছা, তাই নাকি? কিসের ভিত্তিতে মামলা করবে? মানে কোন অপরাধে আমার নামে মামলা করবে?”
জবাব আসে, নারী নির্যাতন। আপনার নামে আমি নারী নির্যাতনের মামলা ককক……
হাসতে থাকে আবির। আচ্ছা, নারী নির্যাতনের মানেটা জানো তো?
রাগে কিচ্ছু বলতে পারে নি নীলিমা। দু’চোখের পাতা এক করে ফেলে। বিছানায় শুইয়ে দেয় আবির নীলিমাকে। দরজাটা বন্ধ করে রুমের লাইট’টা অফ করে দেয়। ড্রিমলাইটের মৃদু আলোয় আবির এগিয়ে যায় নীলিমার দিকে। নীলিমা তখনও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কাছে যায় আবির। হাতটা ছুঁয়ে দেয়। কেঁপে উঠে নীলিমা কিন্তু কিচ্ছু বলেনি। বুকের কাছে নিয়ে দু’হাতে নীলিমার হাতটা মুঠোয় বন্দি করে। প্রায় মিনিট ত্রিশেক হয়ে গেল আবিরের কোনো সাড়া না পেয়ে পাশ বালিশে ফিরে তাকায় নীলিমা। চোখ যায় আবিরের মাথার দিকে। কিরকম বালিশবিহীন শুয়ে আছে। আস্তে আস্তে হাতটা ছাড়িয়ে নীলিমা ওর মাথার নিচের বালিশটা আবিরের মাথার নিচে দিয়ে দেয়। চলে যাচ্ছিল নীলিমা, পিছন থেকে হাতটা টেনে ধরে আবির।
” পালিয়ে কোথায় যাবে?”
অনেকটা রাগান্বিত কন্ঠে জবাব দেয় নীলিমা, আজব! পালাবো কেন? এ রুমে বালিশ নেই তাই ঐ রুমে যাচ্ছিলাম বা….
থামিয়ে দিয়ে বলে উঠে আবির, বালিশ তো এ রুমেই আছে।
সেটা তো আপনার মাথার নিচে দিয়ে দিলাম।
মৃদু হাসে আবির- সেটা তো ছোট বালিশ। এর চেয়েও বড়সড় বালিশ কিন্তু তার উপর পড়ে আছে।
মানে?!!!
মানে সেই বড় বালিশে শুধু মাথা নয়, অনায়াসে তুলে দিতে পারবে হাত-পা’ও। এমনকি জাপটেও ধরতে পারবে। ইচ্ছে হলে চুমুও খেতে পারবে। জীবন্ত বালিশ কি না….?
রেগে যায় নীলিমা, আপনি এত খারাপ ক্যা?
হেসে দেয় আবির, তুমি এত ভালো ক্যান?
দেখুন, আপনি কিন্তু বেশী বেশী করছেন।
দেখো, তুমি কিন্তু কম কম করছ!
বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় নীলিমা। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ইয়া আল্লাহ! উঠিয়ে নিচ্ছ না কেন আমায়?
বিছানায় উঠে বসে আবির, ইয়া আল্লাহ! নিচে রাখছ কেন আমায়?
এবার কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে…!
এবার কিন্তু ভালো কিছু ঘটে যাবে।
উফফ! মরেই গেলাম বুঝি …..
জীবন্ত করে তোলার জন্য পাশেই রয়েছি আমি। আঙুল নাচিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল নীলিমা, একটানে বিছানায় নিয়ে যায়। হুড়হুড়িয়ে আবিরের বুকের উপর গিয়ে পরে নীলিমা। কিছুক্ষণ ঢ্যাবঢ্যাব করে আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে যেই ঝগড়া শুরু করতে চাচ্ছিল ওমনি আবির নীলিমাকে একটানে ওর খুব কাছে নিয়ে যায়। নীলিমার মুখ আবিরের মুখের খুব কাছে। নীলিমার খোলা চুল দুপাশে ছড়িয়ে যেন এক পর্দা তৈরি করে দিয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। নীলিমার নিশ্বাস ধীরে ধীরে ঘন থেকে আরো ঘন হচ্ছে। খুব কাছ থেকে আবির নীলিমার নিশ্বাসের শব্দগুলো শুনছে। সেই নিশ্বাস আবিরকে মাতাল করে দিচ্ছে। আচমকায় উপর থেকে একটা ইঁদুর ছিটকে পড়ে। ভয়ে চিৎকার দেয় নীলিমা। জাপটে ধরে আবিরকে। দু’হাত খামচে আবিরের শার্টের কলার ধরে আছে। নীলিমার নখের আচড়ে আবিরের গলার ক্ষাণিক জায়গা থেকে রক্ত বেরুচ্ছে। কিছু একটা পরে আছে আমার উপর, দেখুন না প্লিজ…. আরো জোরে খামচে ধরে নীলিমা আবিরের ঘাড়। আবিরের শরীরের অনেকাংশে ক্ষত হয়ে জ্বলছে। তারপরও আবির নড়ছে না। এ যেন এক অন্যরকম সুখ। নীলিমার নিশ্বাস ক্রমে ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে। হাত দিয়ে নীলিমার ঘাড়ের উপর পড়ে থাকা সদ্য জন্ম নেয়া ইঁদুরের বাচ্চাটাকে পাশে টেবিলের উপর রাখে আবির। একবার শুধু সেদিকে তাকায় নীলিমা। মনে মনে ভাবে, বিচ্ছু জাতীয় কিছু নয়তো?!!!
ভয়ে জাপটে ধরে আবিরকে। প্লিজ, প্লিজ লাইটটা জ্বালান। ঐটা বিচ্ছু। প্লিজ, লাইট জ্বালান। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
মনে মনে হাসে আবির।
ওহ! ম্যাডাম তাহলে বিচ্ছুকে ভয় পায়? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা…..
” নীলি! প্লিজ কথা বলো না এখন। আমার খুব ভয় করছে। তোমার ঘাড়ে একটা নয়, দুটো বিচ্ছু পরছিল। লাইট জ্বালাতে হবে না। তাড়াতাড়ি উঠো। আজকে এ রুমে থাকা নিরাপদ হবে না। আমাদের স্টাডিরুমে’ই ঘুমোতে হবে আজকে।”
লাইট না জ্বালিয়ে নীলিমাকে টানতে টানতে অন্য রুমে নিয়ে যায় আবির। তারপর লাইট জ্বালিয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে নীলিমা। কি করবে বুঝতে পারছে না আবার শুইতেও পারছে না। শুবে কোথায়? স্টাডি রুমের বেডটা এত ছোট যে একজনের থাকতে কষ্ট হবে। নীলিমা শুকনো এবং খাটো বিধায় ওর শুতে তেমন অসুবিধে হতো না। আজ সেই বিছানায় শুয়েছে বিশাল বড় সুঠামদেহের অধিকারী আবির।
” বুইড়ার’ই জায়গা হচ্ছে না, আমি আর কোথায় থাকব?”
লাইট’টা অফ করে চুপ করে ছোট্ট সোফার উপর পা তুলে ওড়না দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে জড়োসড়ো হয়ে বসে নীলিমা। তখনি আবির বিছানা থেকে উঠে একটা টানে বুকে নিয়ে যায় নীলিমাকে।
কিছুক্ষণ পর-
” গলায় হাত দিবেন না একদম। কাতুকুতু লাগে আমার।”
চুপ! কোনো কথা হবে না…..
” এই অনাচার আল্লাহ সইবে না। এর বিচার একদিন ঠিক করবে আল্লাহ….”
বড্ড জ্বালাচ্ছো তুমি। দাঁড়াও তোমার মুখ আমি বন্ধ করছি। অতঃপর……..
সকালে__
বাজার থেকে কেবল পরোটা আর সবজি নিয়ে বাসায় ফিরছিল আবির। রুমে ঢুকে’তো রীতিমতো ‘থ’ হয়ে যায়। এ আমি কি দেখছি? এও কি সম্ভব? চোখ কচলায় আবির। চোখ কচলিয়ে আবারো সোফার দিকে ফিরে তাকায়-
” আবিরের পাঞ্জাবি পাজামা পরে সোফায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে নীলিমা।”
খাবার টেবিলে পরোটার প্যাকেজ রেখে চুপটি করে সোফায় নীলিমার পাশে গিয়ে বসে। চরম হাসি পাচ্ছে আবিরের কিন্তু হাসছে না। কারণ, এ অবস্থার জন্য যে আবির নিজেই দায়ী। রাত্রে একটু বেশী ভালোবাসা দিয়ে ফেলেছিল কি না…!! এখন এ বাসায়ও নীলিমার কোনো কাপড় নেই। যার কারণে ওর এই বেহাল দশা….!!!
যায় হোক….
বহু কষ্টে হাসি আটকায় আবির-
” নীলি! চলো খাবে….”
—- নীলিমা নিশ্চুপ…!
—- কি হলো, চলো……(আবির)
—- নীলিমা এবারো নিশ্চুপ।
—- কি হলো? খাবে না???(আবির)
—– নীলিমা এবারো পূর্বের ন্যায় মাথা নিচু করে বসে আছে। সেটা দেখে শরীরে ধরে নাড়া দেয় আবির। প্রশ্ন করে- কি হয়েছে? এভাবে বসে আছ কেন?
তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে নীলিমা। অগ্নি চোখে আবিরের দিকে তাকায়। একদম শরীরে হাত দিবি না শয়তান, ইন্দুর, বান্দর, ফাজিল, তেলাপোকা…..
–এসব কি ভাষা বলছ? চলো, খাবে…
ওরে শয়তান! আমার কথা কি তোর কানে যায়নি? আবার কেন শরীরে হাত দিয়েছিসরে বদমাইশ?!!! আর কি জানি বলছিস, ভাষা? তোর মত লুচ্চার জন্য এসব’ই পারফেক্ট। আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তুই রাত্রে আমার সাথে যা করছস তার বিচার ঐ আল্লাহ করবে……
” নীলি প্লিজ শান্ত হও।”
বাঘের মত হুংকার নেয় নীলিমা। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে, আপনি আমার সামনে থেকে যান।
ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি।
তোমার জন্য কাপড় কিনে আনি। ততক্ষণে তুমি ব্রেকফাস্ট’টা সেরে নাও। কথাটা বলে আবির চলে যাচ্ছিল, দরজার কাছ থেকে আবার ফিরে আসে। মুচকি হেসে বলে-
“তোমায় কিন্তু বেশ কিউট লাগছে।”
দাঁতে দাঁত চেপে অগ্নিচোখে আবিরের দিকে তাকায় নীলিমা। ভয়ে ঢোক গিলে আবির। না, মানে যাচ্ছি বলে তাড়াতাড়ি রুম থেকে কেটে পড়ে। সকাল ১১টা নাগাদ হাতে বেশ কতগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরে আবির। বার কয়েক কলিং বেল চাপার পরও দরজা খুলছে না নীলিমা।
” আহারে বেচারি! পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় কে না কে দেখে ফেলে সেজন্য ভয়ে দরজাও খুলছে না।”
জোর গলায় বলে উঠে আবির- বুড়া মানুষকে আর কত দাঁড় করিয়ে রাখবা? এবার তো দরজাটা খুলো।
এবারো কোনো সাড়া নাই। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবারো ডাক দেয় আবির।
“নীলি! প্লিজ দরজাটা খুলো….”
সাড়া নেই এবারো। কলিং বেলে চাপ দিয়ে ডাক দেয় আবার। সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। পুরো শপিং ব্যাগ এখনো বিছানায় রাখেনি, তার আগেই দরজার ছিটকিনি আটকানোর আওয়াজ পায়। পিছনে ফিরে তাকায় আবির। ‘থ’ হয়ে যায়। মুখ হা হয়েছে তো হয়েছে। আর বন্ধ হচ্ছে না। সেটা দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে জবাব দেয় নীলিমা-
” বাথরুমে গিয়েছিলাম।
পাজামার ফিতায় গিট্টু লাগছে। গিট্টু খুলতে পারিনি। ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলেছি। আলমারির চাবি খুঁজে পাইনি। বারান্দায় এ লুঙ্গিটা পেয়েছি। তাই……..”
ঘোর কাটে আবিরের। ও মাই গড!শেষমেষ তুমি লুঙ্গি পরলে? হা, হা করে হাসতে শুরু করে আবির। হাত থেকে শপিং ব্যাগ নীলিমাকে দেখেই পড়ে গিয়েছিল, এখন আবির নিজেই পড়ে গেছে। পড়ে গিয়েও হা, হা, হু, হু করে হেসেই যাচ্ছে আবির। বিছানা থেকে ফ্লোরে পড়ে যায় আবির। ফ্লোরে পড়ে গিয়েও হাসতে থাকে। একপর্যায়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি দিয়ে হাসতে থাকে।
রাগে কান্না চলে আসছে নীলিমার। আবিরকে ফ্লোর থেকে টেনে তুলে ওর পরনের শার্টের কলার ধরে টানা শুরু করে। টানতে টানতে শার্টের বোতাম ছিড়ে ফেলেছে কয়েক জায়গায়। উন্মুক্ত হয়ে যায় আবিরের বুক। খামচে ধরে সেখানে। খামচে, খামচে বুকের বেশ কিছু জায়গা থেকে রক্তও বের করে দিয়েছে। সেদিকে আবিরের কোনো খেয়াল’ই নেই। আবির তখনো হেসেই যাচ্ছে। ধাক্কা মেরে আবিরকে বিছানায় ফেলে দেয়া হয়।আবির তখনো হেসে চলছে। এবার বিছানা থেকে উঠিয়ে কলার ধরে টানতে টানতে দরজার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। দরজা খুলে নীলিমা। তারপর এক ধাক্কা দিয়ে আবিরকে বাইরে ফেলে দেয়। বাইরে গিয়েও হাসতে থাকে আবির। হাসতে হাসতেই দরজায় টোকা দিতে থাকে-
” নীলি! প্লিজ দরজা খুলো। একটা সেল্ফি তুলব দুজনে….”
দরজায় ছিটকিনি আটকে ফ্লোর থেকে শপিং ব্যাগ গুলো তুলে বিছানায় রাখে। সবগুলো ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে। মেজাজ চরম খারাপ হয়ে যায় নীলিমার। একটা থ্রি-পিছ কিংবা লেহেঙ্গা কিচ্ছু আনেনি। যা এনেছে সব শাঁড়ি। রাগে দুঃখে দেয়ালে মাথা ঠুকতে ইচ্ছে করছে ওর। বহু কষ্টে রাগকে কন্ট্রোল করে। ৫টা শাঁড়ির মধ্যে থেকে একটা শাঁড়ি বেছে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে নীলিমা। কিছুক্ষণ পর পাঞ্জাবি লুঙ্গি পাল্টে গায়ে কোনোরকম শাঁড়ি জড়িয়ে রুমে ঢুকে। আবির তখনো দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে হাসছে আর বলছে-
” প্লিজ নীলি!
একটা, জাস্ট একটা সেল্ফি তুলবো তোমার সাথে। প্লিজ, দরজাটা খুলো।”
মুহূর্তেই দরজাটা খুলে যায়।
কিছু একটা বলতে যাবে আবির তখনি চোখ যায় নীলিমার দিকে। ‘থ’ হয়ে যায় আবির। হা করে তাকিয়ে আছে নীলিমার দিকো।
” এ আমি কি দেখছি?
এ যে স্বর্গের অপ্সরিকেও হার মানাবে।”
মনে মনে বলে উঠে, সুবহানআল্লাহ!
— দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করে নীলিমা,
এখানে হাবার মত এভাবে দাঁড়িয়ে কেন আছেন? বের হোন রুম থেকে। স্টাডি রুমে যান। আমি এখন শাঁড়ি’টা ভালো ভাবে পরব।
—– ইয়ে না মানে টিভিতে নিউজ দেখব। কথাটা বলেই ভেঁজা বিড়ালের মত সোফায় গিয়ে বসে আবির। ভ্রু- কুচকে অনেকটা বিরক্তি নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় নীলিমা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাঁড়ির আঁচল ঠিক করছিল নীলিমা, এরই মাঝে চুরের মত বার কয়েক সেদিকে তাকিয়ে ফেলেছে আবির। দৃষ্টি এড়ায় না নীলিমার। প্রথম কয়েকবার পাত্তা দিলেও একসময় তেড়ে যায় আবিরের দিকে।
” আপনি যে শিক্ষকতার পাশাপাশি লুচু কোম্পানির ম্যানেজার পদে আছেন সেটা কি আপনার কলেজে জানে?”
—- What???(আবির)
বার বার এভাবে চুরের মত আমার দিকে কেন তাকাচ্ছেন?(নীলিমা)
জবাব আসে, তোমাকে নয় আমি তো আয়না দেখছিলাম…..
পাল্টা জবাব নীলিমার- আর সেই আয়নার ভিতর আপনাকে না, আমাকে দেখা যাচ্ছিল।
কি সাংঘাতিক! আমি তোমার দিকে তাকাবো কেন?(আবির)
নীলিমার জটপট উত্তর, কারণ আপনি লুচ্চা….
ধমক দেয় আবির, কিসব আজেবাজে বকে যাচ্ছ সকাল থেকে। এসব কি ধরনের ভাষা? একজন শিক্ষিত, ভদ্র মানুষ হয়ে এসব ভাষা বলো কি করে?
চুপসে যায় নীলিমা। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে স্থানেই। ভ্রু-কুঁচকে রুম ত্যাগ করে আবির।
রুম থেকে বের হয়ে সোজা ছাদে চলে যায় আবির। তখনি ওর ফোনে শ্বশুর বাড়ি অর্থাৎ নীলিমার গ্রামের বাড়ি থেকে কল আসে। রিসিভ করে আবির-
লিমা- আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
আবির:- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছে আমার বোনটা?(শ্যালিকা)
লিমা- ভালো নেই ভাইয়া….
আবির:- কেন? কি হয়েছে?
লিমা- মায়ের শরীর’টা খুব খারাপ। অচেতন হয়ে বিছানায় পরে আছে। বার বার আপুর নাম নিচ্ছে। আপুকে ফোন দিয়ে বলছিলাম মা কথা বলবে, না শুনেই কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। প্লিজ, ভাইয়া একটা বার আপুকে বুঝিয়ে নিয়ে আসুন না। মা খুব খুশি হবে।
আবির:- কিন্তু ও কি আসবে?
লিমা- হ্যা, আসবে ভাইয়া। আপনি শুধু ওকে একটু ভালো করে বুঝিয়ে বলবেন মা ওর….(….)…..???
আবির:- লিমা আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি। রাখি এখন…
পুরো কথা বলতে পারেনি লিমা, তার আগেই কল কেটে দেয় আবির। কারণ, ছাদে দাঁড়িয়ে ও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নীলিমা নিচে দাঁড়িয়ে চলন্ত সিএনজি থামানোর চেষ্টা করছে। তার মানে ও বাড়ি থেকে পালাতে চাচ্ছে। দৌঁড়ে নিচে নামে আবির। ততক্ষণে একটা সিএনজিকে দাঁড় করিয়ে ফেলছে নীলিমা। আবির হাত ইশারায় পিছন থেকে সিএনজি ড্রাইভারকে চলে যেতে বলে। সিএনজি চলে যায়। উফ, চলে গেল বলে পিছনে তাকাতেই চমকে উঠে আবির। আআআআপনি….?!!!
– জ্বি, আমি। এভাবে পালিয়ে আমার থেকে পাড় পেয়ে যাবে ভাবছ?(আবির)
-………. (নীলিমা)
– এত সহজে তোমার নিস্তার নেয়ার। একমাত্র মৃত্যু ছাড়া আমার কাছ থেকে তোমায় কেউ আলাদা করতে পারবে না। সো, বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই। চলো…..
আবির নীলিমার হাত ধরে টান দেয় আবির। হ্যাচকা টানে সে হাত ছাড়িয়ে নেয় নীলিমা। ভ্রু-কুঁচকে ফিরে তাকায় আবির।
” কি হলো? কথা কি কানে যাচ্ছে না? ভিতরে চলো। ”
আমি যাব না। কিছুতেই যাব না। যায় হোক, আজ আর আপনি আমায় জোর করে নিয়ে যেতে পারবেন না। ভুলে যাবেন না কালকে রাত ছিল বিধায় আমি নিরুপায় ছিলাম। কিন্তু এখন দিন। এখন আপনি আরেকবার জোর করেই দেখেন না, চিল্লিয়ে মানুষ জড়ো করে ফেলব। আপনার ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে দিব।
আচ্ছা, তাই নাকি? দেখা যাক কি করতে পারো। আবির নীলিমাকে কোলে তুলে নেয়। নীলিমা চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ আসছে না। দুর থেকে যারা দেখেছে তারা হাসছে। কারণ, ওরা আবিরকে শিক্ষক এবং একাধারে বাড়িওয়ালার পুত্র বলে খুব ভালো করেই জানে। সেই হিসেবে নীলিমাকেও ওরা বেশ চিনে। আবির কোলে করেই নীলিমাকে রুমে নিয়ে যায়। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে। রাগে থরথর করে কাঁপছে নীলিমা, কিচ্ছু বলতে পারছে না।
নীলিমার পাশে বসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে অনেকক্ষণ বুঝিয়েছে আবির, কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। বাথরুমের ডাক পড়ে আবিরের। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বাথরুমে যায়। এবারো দরজা খুলে দু’লাফে রুম থেকে বেরিয়ে যায় নীলিমা। বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে আবির। আবারো পালিয়েছে?!!!
মেজাজ প্রচন্ড বিগড়ে যায় আবিরের। বারান্দায় গিয়ে দেখতে পায় নিচে কিচ্ছু না পেয়ে হাঁটা শুরু করেছে নীলিমা। দৌঁড়ে নামে আবির। নীলিমাকে ডাক দেয়, শুনেনি সে। এবার না ডেকে দৌঁড় দিয়ে নীলিমাকে ধরে।
” থাপ্পর খাওয়া হয় না অনেকদিন ধরে, তাই না?”
আবির শক্ত হাতে নীলিমাকে ধরে রাখে। নীলিমা সেই হাত মুচড়াতে থাকে। ছাড়াতে পারছে না। হঠাৎ’ই একটা রিক্সা পাশ কাটিয়ে চলে যায়। পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠে নীলিমা, স্যার! প্লিজ দাঁড়ান। এই বখাটে আমায় নিয়ে যাচ্ছে। রিক্সায় বসে থাকা যাত্রীটা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায় সাথে রিক্সাওয়ালাও। সেদিকে তাকিয়ে হাত ছেড়ে দেয় আবির। একদৌঁড়ে নীলিমা রিক্সায় অচেনা ভদ্রলোকের পাশে গিয়ে বসে। রিক্সা চলছে। ভদ্রলোকটি ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পিছনে তো আরেকবার নীলিমার দিকে তাকাচ্ছে__
” উফ! ভাগ্যিস বুদ্ধি খাটিয়ে লোকটাকে স্যার ডাকলাম……”
হঠাৎ’ই পাশ থেকে ভদ্রলোকটির প্রশ্ন,
” তোমাকে মনে হয় আমি দেখেছি কিন্তু খেয়াল নেই। আচ্ছা তুমি কোন ব্যাচের?”
জিহ্বায় কামড় দেয় নীলিমা, খাইছেরে! এতো দেখছি সত্যি সত্যি শিক্ষক। জোর করে মুখে হাসির রেখা টানে নীলিমা। হেসে বলে আমি অমুক কলেজের ২০** সালের ব্যাচের স্টুডেন্ট ছিলাম। আপনি আমাকে চিনবেন না স্যার। ক্ষণিক হাসে ভদ্রলোকটি। সানগ্লাস’টা চোখ থেকে নামিয়ে পরিষ্কার করে পরে নেয়। নীলিমা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
” তুমি সিউর ঐ লোকটা লোকটা তোমাকে ডিস্টার্ব করে?”
ঢোক গিলে নীলিমা। মনে মনে ভদ্রলোকের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলেছে ছেলেকে শিক্ষক বানানোর জন্য।
“কি হলো? বলো….”
বুকে সাহস সঞ্চয় করে নীলিমা, হ্যা! ওনি শুধু আজ নয় আমায় রোজ ডিস্টার্ব করে। আমায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। মাঝেমাঝে তো হাতও ধরে ফেলে।
নীলিমার কথা শুনে মিনিট খানেক নীলিমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন লোকটা। তারপর হঠাৎ’ই রিক্সা থামায়-
” ভাই একটু দাঁড়াও তো আমি একটু ফোন করে নেই। আমাদের কলেজের মেয়েকে ডিস্টার্ব করা ব্যাটার সাহস কত….!!!”
পকেট থেকে ফোন বের করে ভদ্র লোকটি নীলিমার দিকে ফিরে তাকায়। নীলিমা আমতাআমতা করে বলে, আআআআআমাদের কলেজ???
জবাব আসে, হু! আমাদের কলেজ। ঢাকা *** কলেজের স্টুডেন্ট না তুমি?
অচেনা শিক্ষকের মুখে নিজ কলেজের নাম শুনে গলা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম নীলিমার। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়। কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে, আপনি আমায় চিনেন?
হেসে দেয় লোকটি। কি যে বলো না। কলেজের সেরা স্টুডেন্ট নীলিমা একাধারে এম.বি.বি.এস’কে কে না চিনে? প্রসপেক্টাসে তোমার ছবি আমি বহুবার দেখেছি, তুমি আমায় চিনবে না। আমি কলেজে জয়েন করেছি তুমি আসার পর।
ইয়া আল্লাহ! তাহলে তো ইনি আবিরকে চিনে ফেলছে। আর ঘাড় ঘুরিয়ে সেই জন্য’ই বার বার পিছনে তাকাচ্ছিল। আচমকা রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়ায় নীলিমা। মনে মনে, নীলিমা তুই কেটে পর।
রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া মিটাতে গিয়ে ধরা খায় নীলিমা। এইরে! আমার কাছে তো টাকা নেই। স্যার মানে ভদ্রলোকটার দিকে দিকে করুণ চোখে তাকায় নীলিমা। ভদ্রলোকটা তখন মেসেজ চালাচালিতে ব্যস্ত। উফ! কি করব আমি….!!!
কি হলো ভাই? দাঁড়িয়ে আছো কেন? চলো। আমার এমনিতেও দেরী হয়ে গেছে।
” আপা তো ভাড়া দিচ্ছে না যাব কিভাবে?”
নীলিমার দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যজনক হাসি দেয় ভদ্র লোকটা। তারপর স্বাভাবিক গলায় বলে, ও আমার ছাত্রী। দাঁড়াও ওর ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি। এটা বলে মানিব্যাগ বের করে ভদ্রলোক। উফ! মানিব্যাগে তো ভাংতি নেই।
পাশ থেকে রিক্সাওয়ালা, আমার কাছে এত টাকার ভাংতি হবে না।
অসহায়ের মত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নীলিমা। কি করবে বুঝতে পারছে না। পিছন থেকে কাধে হাত রাখে কেউ –
” খেলে তো ধরা সবদিক থেকে?!!!”
চলবে……
[বি:দ্র:- আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত বন্ধুরা রাত্রে হঠাৎ’টি অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম, তাই এফবিতে আসতে পারিনি। আর কথামতো গল্পটাও দিতে পারিনি।]