ফুলশয্যা(সিজন-০২) পর্ব- ১৬

0
3157

ফুলশয্যা(সিজন-০২)
পর্ব- ১৬
লেখা- অনামিকা ইসলাম।

” মন জমিনের সবটুকু জায়গা ফাঁকা পরে আছে, নিবে কি ভাড়া? করবে কি বসত সেখানে?”

চমকে উঠে পিছনে তাকায় নীলিমা। অসহায়ের মত পিছনে দাঁড়িয়ে আবির। মুখটা অমাবস্যার ঘোর কালো অন্ধকারের ন্যায় হয়ে যায় নীলিমার। পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। পথ আগলে দাঁড়ায় আবির। একটা হাত চেপে ধরে নীলিমার। কাঁপা কাঁপা স্বরে অনুরোধ করে-
” প্লিজ, নীলি! ক্ষমা করে দাও। সব ভুলে চলো না জীবনটাকে নতুন করে সাজাই। কথা দিচ্ছি তোমার ভালোবাসার অমর্যাদা হবে না কখনো।”

হাতটা সারিয়ে নেয় নীলিমা। আবিরের থেকে দু’কদম সামনে এগিয়ে যায়। না চাইতেও মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তুমি শব্দ। অত্যন্ত দৃঢ় গলায় বলে উঠে, ক্ষমা করো আমাকে। জানি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারব না। অনেক কষ্ট হবে আমার। অশ্রু ঝরিয়েছি, আরো ঝরাবো। তবু তোমার সুখের দিকে তাকিয়ে কোনো দিন ভালোবাসার দাবি নিয়ে সামনে দাঁড়াব না। কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না তোমাকে। কারণ নিজে কষ্ট করতে পারব কিন্তু যাকে ভালোবাসি, তাকে কষ্ট দিতে পারব না। আমি তোমাকে পাবার উপযুক্ত নই, এতটুকু সান্ত্বনা বুকে নিয়ে ভুলে থাকার চেষ্টা করব তোমাকে।

জানি, পৃথিবীর সবচেয়ে আপন মানুষটিকে এত সহজে হারিয়ে ফেলার বেদনায় জমে থাকা নীল কষ্টের তুষারগুলো গলে গলে পড়বে অশ্রু হয়ে। তোমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পিছনের স্মৃতিগুলোই আমাকে পীড়া দিবে বেশি। বার বার তা ভেসে উঠবে হৃদয়ের ক্যানভাসে। সত্যি বুড়ো! অনেক ভালোবাসি তোমাকে, এ জীবনে মনে হয় না তোমার মতো আর কাউকে ভালোবাসতে পারব।

এতদিন পর হাহাকার বা কষ্ট প্রকাশ করে তোমাকে প্রভাবিত করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আমার মতো একটা অশিক্ষিত, কালো, গাইয়্যা ভূতকে পড়াশুনা করিয়ে আজ এতদুর এনেছো। তুমি অনেক বড় এবং মহৎ। তোমার এ দান, এ করুণাধারার কথা এ জীবন থাকতেও আমি ভুলতে পারব না। স্যলুট তোমাকে, আবেগের বশবর্তী হয়ে দাওনি সত্যকে জলাঞ্জলি। আজ তুমি আমায় তাড়িয়ে দিয়ে তোমার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েছ, এতে আমার কষ্ট পাওয়ার ও কিছু নেই। কারণ আমি জানি, জোর করে মানুষের দেহ ধ্বংস করা গেলেও, মন জয় করা যায় না।

আবির, আমায় যেতে দাও। পথ আগলে আর দাঁড়িয়ে থেকো না। আমার যে এখনো অনেক পথ পাড়ি দেয়ার বাকি আছে। জীবনের সেই পথটুকু আমি একা একাই পাড়ি দিতে চাই। ভালো থেকো, বিদায়।”

নীলিমা চলে যায়। ৭দিন পর আদিবা আপু ফোন করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে, তুই আমার বড় মুখ ছোট করে দিয়েছিস। আদিবার মতে, এমন ভাই কোনো ঘরেই যেন না থাকে। নীলিমার স্কুল বান্ধবী তামান্না ফোন দিয়েছিল, ইচ্ছে মত ঝারল। বেইমান, অসভ্য, প্রতারক, লুচ্চা, শয়তান এসব বলে গালিগালাজ করল। লিমা ফোন দিয়ে কিছু’ই বললো না, শুধু কিছুক্ষণ কাঁদল।

মনোযোগী শ্রোতার মত আবির সব শুনল। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হলো। কীর্তনখেলায় অনেক জল গড়াল অথচ আবিরের চরিত্রের সেই সিনেম্যাটিক নির্মম কলঙ্কের কথা কেউ জানতে পারল না। কে বিশ্বাস করবে এই অপ্রকাশিত সত্য? কেউ না। আর তাই দিশেহারা আবির সেদিন একসাথে অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হতে চেয়েছিল।

কিন্তু পাগলী বোন সাইমার জন্য পারে নি। রোজ রোজ আবিরকে এটা ওটা খাইয়ে দিয়ে পটানোর চেষ্টা করত। উদ্দেশ্য ওর মাকে যাতে মাকে বোঝায়, প্রেমিককে মেনে নেয়। প্রতিদিনের মত সেদিনও আবিরের জন্য নুডলস রান্না করে দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে রুমে উঁকি দেয়। চমকে উঠে সাইমা। আবিরকে একসাথে অনেকগুলো ছোট ছোট ট্যাবলেট মুখে দিতে দেখে। কাছে গিয়ে ঘুমের ট্যাবলেট রাখা একটা বক্স’ই দেখতে পায়। চেঁচিয়ে লোক জড়ো করে সাইমা। তখনি আবিরকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সে যাত্রায় বেঁচে যায় আবির কিন্তু সাইমার থাপ্পর থেকে নিস্তার পায়নি। আবিরকে বাসায় এনে কষে কয়টা থাপ্পর বসিয়ে দেয় গালে। বড় বড় চোখে আবির ওর চেয়ে বছর আটেক ছোট সাইমার দিকে তাকায়। তুই বড় ভাইয়ার গায়ে হাত তুললি?
উত্তর দেয় সাইমা, ওরে! আমি যে তোর গলা চেপে ধরিনি সেটাই বল। তুই কার জন্য মরতে যাচ্ছিস? ঐ মেয়ের জন্য যে দিব্যি তোর বোনের সাথে বাড়িতে হেসে খেলে দিন কাটাচ্ছে?

উতলা কন্ঠে প্রশ্ন করে আবির,
What? ও আদিবা আপুর সাথে আছে?
উত্তর দেয় সাইমা, হ্যা। সেদিন সন্ধ্যায় শীতের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিল তোর বোন-দুলাভাই। ওরা যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে নীলিমাকে সাথে করে নিয়ে যায়…..

প্রশ্ন করে আবির, তার মানে নীলিমা আদিত্যর দাদুবাড়ি আছে এখন?
পাশ থেকে সাইমার জবাব- জ্বি, আপনার বুড়ি এখন আদিত্যর গ্রামের বাড়িতেই আছে। আর বিলম্ব করবেন না বুড়োমশাই। আপনি আজ’ই যান। গিয়ে নিয়ে আসুন বুড়িকে। না আসতে চাইলে দরকার হয় চুরি করে নিয়ে আসবেন। হেসে উঠে আবির, উম্মমমমমমমম্মাহ! এত্তগুলা ভালোবাসা বোনটি……

সেদিন’ই আবির নীলিমাকে আনার জন্য আদিত্যর গ্রামের বাড়িতে যায়। যেতে যেতে রাত হয়ে যায়। রাত্রি ৯টায় আবির কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছে। যাওয়া মাত্র’ই ঘোর অপমান করে আবিরের বোন আবিরকে, বাসা থেকে বের করে দেয়। অসহায় আবির মসজিদের পাশে সেই কোয়াশার মাঝেই গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। রাত্রি তখন ১০টা বাজে। আদিবার স্বামী মানে আবিরের দুলাভাই সে রাস্তা দিয়েই বাজার থেকে ফিরছিল। দুরে সাদা প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে কাছে যায়। চমকে উঠে আবিরের দুলাভাই_
” আরে আবির যে!
এখানে দাঁড়িয়ে কেন? বাড়িতে চলো?”
যেতে পারবে না বলে মাথা ঝাকায় আবির। প্রশ্ন করে দুলাভাই- কারণ কি?
আবির ওর দুলাভাইকে সবটা খুলে বলে।
রেগে যায় আবিরের দুলাভাই-
” কিহ? অতিথিকে তাড়িয়ে দিয়েছে আদিবা? দাঁড়াও আমি তোমার বোনকে কয়টা কথা শুনিয়ে আসি।”

আবিরের দুলাভাই গিয়ে ওর বোনের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পরে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া চলছে। দুলাভাই শ্যালকের পক্ষে আর বোন ভাই বউয়ের পক্ষে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে দু-পক্ষের মধ্যে। পাশের রুমে নীলিমার সাথে শুয়েছিল ছোট্ট আদিত্য। লড়াইয়ের দাপটে ওর ঘুম ভেঙে যায় ওর। কাঁদতে শুরু করে আদিত্য। ঝগড়া থামিয়ে জোর গলায় বলে উঠে আদিবা-
” নীলিমা!
ড্রেসিংটেবিলের উপর দেখো জুস আছে। আদিত্যকে দাও আর ওকে নিয়ে একটু বাইরে যাও।”

” আব্বু!
আসো, আসো উঠানে গিয়ে তারা গুনি।” নেচে উঠে আদিত্য। নীলিমার হাতের আঙুল ধরে বাইরে চলে যায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আবার ঝগড়ার শুরু। উঠানে দাঁড়িয়ে জুস খাচ্ছে আদিত্য, তার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে আঙুল উঁচিয়ে তারা দেখাচ্ছে নীলিমা। জুস খাওয়া আর মামির সাথে তারা গুনায় ভিষণ ব্যস্ত হয়ে পরে ছোট্ট আদিত্য। আচমকা’য় পিছন থেকে নীলিমার মুখ বেঁধে ফেলে আবির। পিছনে তাকায় আদিত্য। চাঁদ-তারার আলোয় সে তার মামাকে চিনে নেয় খুব সহজেই। ততক্ষণে নীলিমাকে কোলে দিয়ে নিয়ে যাওয়া শুরু আবির। ছোট্ট আদিত্য মুখের জুস গিলে চেঁচিয়ে উঠে-
” ও মাগো, ও বাবাগো,
নিয়ে গেলো গো….
ও মাগো, ও বাবাগো,
মামিকে কোলে কইরা নিয়া গেলো গো….”
আদিত্য উঠানে লাফাচ্ছিল আর কথাগুলো বলছিল। রুম থেকে বেরিয়ে আসে আদিত্যর দাদা, দাদী, ছোট ফুপ্পি। পাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে আদিত্যর ছোট কাকা-কাকি। সেই সাথে বেরিয়ে আছে আদিত্য মা আদিবা ও তার স্বামী। আদিত্য তখনো লাফাচ্ছে আর বলছে, ও বাবাগো! নিয়া গেলোগো….

কাছে আসে আদিত্যর বাবা,
কোলে নেন ছেলেকে। আহ্লাদী স্বরে প্রশ্ন করেন-
” বাবা! কি হয়েছে? কে কাকে নিয়ে গেছে?”
চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে আদিত্য,
আমরা তারা গুনছিলাম না উঠানে?!!! তখনি পিছন থেকে আবির মামা এসে নীলি মামির মুখ বেঁধে মামিরে কোলে কইরা নিয়া গেছে।
ফিক করে হেসে উঠে আদিত্যর বাবা।
” বাপ, তুই নাম!
আমি কিছুক্ষণ হাইসা লই…..”

[বিঃদ্র:- একটা গল্প শুধু গল্প’ই নয়, মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবিও বটে। সেই জীবন গল্পে মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার রূপ চিত্রায়িত হয়। যে লেখিকা মানুষের জীবন গল্প লিখে, সে নিশ্চয় ঐ ব্যক্তির পুরো জীবন কাহিনী শুনে নিবে, তাই নয় কি? কাহিনী শুনার পর লেখিকা নিশ্চয় গল্পের সংক্ষিপ্ত কাহিনীবিন্যাস তার স্মৃতিতে সেভ করে রাখে। আর সেখান থেকে একটু একটু করে মানে পর্ব আকারে লেখিকা সেটা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করে। এখন আমার প্রশ্ন এখানেই, আপনারা যদি গল্প ছোট করেন, শেষ করেন, আর জোড়ালে ভালো হবে না এসব বলেন তাহলে কি লেখিকার মেজাজ খারাপ হবে না, আপনারাই উত্তর দিন। কেন আপনারা এমন মন্তব্য করেন? আমি তো আপনাদের ধরে বেঁধে আনিনি। তবে কেন এ ধরনের মন্তব্য দ্বারা লেখিকার লেখার মন মানসিকতাকেই নষ্ট করে দিচ্ছেন? কেন উল্টাপাল্টা মন্তব্য করছেন? আপনারা বুঝতে পারছেন আপনাদের এ ধরনের মন্তব্য একবার যদি লেখিকাদের মগজে ঢুকে তাহলে গল্পের পুরো প্লট’টাই চেঞ্জ হয়ে যাবে? তখন গল্পের সৌন্দর্য্য বলতে আদৌ কি কিছু থাকবে? নিশ্চয় না। আর গল্প লিখব, সেখানে যদি কোনো সৌন্দর্য্য’ই না থাকে, তবে কি করব আমি সে গল্প দিয়ে? শ্রদ্ধেয় পাঠক-পাঠিকা ভাই বোনেরা, আমি একজন সাহিত্য অনুরাগী মানুষ। আমি শুধু গল্প নয় ছোট গল্প, কাব্য, অনুকাব্য, নাটিকা, চিঠি সব, সব লিখি। আপনারা চাইলে আমার সেসব লেখার মানউন্নয়নের জন্য পরামর্শ দিতে পারেন। আমি সাদরে গ্রহন করব আপনাদের মতামত, পরামর্শ। কিন্তু অনুগ্রহ করে গল্প এখানেই বন্ধ করে দিন, আর বাড়াবেন না, এরকম মন্তব্য করবেন না। আমি সহ্য করতে পারব না। আমি আবারো বলছি, আমার গল্প ভালো না লাগলে এড়িয়ে যেতে পারেন অথবা আমাকে ব্লক করে দিতে পারেন। কিন্তু গল্প বড়-ছোট’র কথা বলবেন না। আশা করি, পরবর্তী সময়ে এ ধরনের মন্তব্য করে আপনারা আপনাদের হিংসাত্বক মানসিকতার পরিচয় দিবেন না।
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
ধন্যবাদান্তে___
” অন্তরা”]

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে