ফুলকৌড়ি পর্ব-৩৮+৩৯

0
9

#ফুলকৌড়ি
(৩৮)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

কৌড়ির ফোনটা প্রায়শই নাফিমের হাতে দেখা যায়।সেদিন রাতেও ড্রয়িংরুমে বসে কৌড়ির ফোনটা নিয়ে গেম খেলছিলো নাফিম।আশেপাশে কেউ ছিলোনা।শুধু ডাইনিং টেবিলে প্রতিদিনের ন্যায় খাবার সাজাচ্ছিলেন তিন নারী।যাদের খেয়াল ড্রয়িংরুমে ছিলোনা।নিভান গিয়ে বসেছিলো নাফিমের পাশে।বরাবরের মতো নিভানকে দেখে দ্বিধান্বিত হয়ে ভয়ে গেম খেলা ছেড়ে ফোনটা তারদিকে এগিয়ে দিয়েছিলো নাফিম।
প্রথমে ভেবেছিলো,ফোনটা নেবেনা।নাফিম কে খেলতে বলবে কিন্তু তারপর কিছু একটা ভেবে ফোনটা নিয়েছিলো নিভান।নাফিম চলে যেতেই ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে,রেকর্ড অ্যাপসের মধ্যে হাত লেগে ঢুকে গিয়েছিলো।বেশ অনেকগুলো রেকর্ড।বেশিরভাগ বিথী বলে নাম সেভ করা সেই মেয়েটার সাথে কথোপকথনের রেকর্ড।রেকর্ডিং অ্যাপস থেকে চলে আসতে গিয়েই আবারও হাত লেগে রেকর্ড ওপেন হয়ে যায়।ওটাই হয়তো সেদিনের শেষ কথা ছিলো,তারপর আর কারোর সাথে কথা হয়নি। যার কারনে রেকর্ডের তালিকায় প্রথম ওই রেকর্ডটা থাকায়
অনিচ্ছুক সত্ত্বে জানতে পেরেছিলো,বিথীর আর কৌড়ির মধ্যে হওয়া কথাগুলো।বিথীর উপদেশ মুলক বানীগুলো।সেখানে আরও রেকর্ড ছিলো,কৌতুহল জাগলেও শোনেনি নিভান।ওটুকু শুনেই নিভানের মনে হয়েছিলো মেয়েটার স্বাধীনতা হরন করছে।মেয়েটার প্রতি এক্সট্রা লেভেলের পজেসিভ হয়ে পড়েছে সে,তাই বলে এভাবে অন্য গোপনীয়তা হরন করার বিষয়টা অতিরিক্ত।সেরকমই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় নাহিদের ভালো হয়ে যাওয়ার বিষয়টা সম্পর্কেও জানতে পারেছিলো সে।তবে সেদিন নিজথেকে শোনেনি।নাফিম ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো,আর কিছু একটা শুনছিলো।সে পাশে এসে বসতেই কথাগুলো শুনেছিলো।বাচ্চা মন হয়তো কৌতহলবশত শুনছিলো, কি রেকর্ড আছে বা গানটান কিছু কি-না।আর তাকে পাশে বসতে দেখেই বরাবরের মতো ফোনটা রেখেই দৌড় দিয়েছিলো।তবে নাফিম ফোন রেখে গেলেও রেকর্ড বন্ধ করেনি নিভান।সেদিন ইচ্ছাকৃতভাবেই রেকর্ডটা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলো।
একবার নয় দু’বার,খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল।আর সেদিন মনে গেঁথে গিয়েছিলো অজনা শঙ্কা।তবে সেদিন রেকর্ড শোনার পর রেকর্ডগুলো ডিলিট দিয়েছিলো নিভান।সাথে রেকর্ড অপশন-ও অফ করে দিয়েছিলো।প্রায়সই নাফিমের হাতে ফোন থাকে।মেয়েটার তারসাথেও মাঝেমধ্যে কথা হয়।বিষয়টা ভালো দেখায় না।

সেদিন থেকেই মনটা কৌড়িকে নিয়ে অদ্ভুত এক আশংঙ্কায় কুঁকড়ে আছে।কোনোভাবে কৌড়িকে যদি হারিয়ে ফেলে!এমন শঙ্কা মনের কোণে কোথাও একটা এঁটে খুঁতখুঁত কাজ করছিলো!আর সেই শঙ্কা থেকে আজ হাফিজ ভাইকে না যেতে দিয়ে কৌড়ির সাথে এক্সট্রা সতর্কতাসরূপ ইভানকে পাঠালো।তাতে হোলোটা কি?ইভানকে বারবার বলে সতর্ক করে দেওয়া সত্ত্বেও ইভান তো সেই ব্লান্ডারটাই করলো!যে দৃশ্যাবলী মনেমনে দৃশ্যমান করতেও মনকে কখনো প্রশ্রয় দেইনি।দিতে চাইনি নিভান।সেই দৃশ্যই কি পরিতৃপ্ত করে দিলো না তাকে! মনকে কিভাবে ওই দৃশ্যাবলী দেখার পর ক্রোধে জ্বলে উঠা আগুনের অনল থেকে রক্ষা করবে!কি করে নিজেকে ঠান্ডা করবে সে?উফফ!কৌড়ি!

‘দাদাভাই প্লিজ!ওরা শুধু কথা বলছে।ওরা ভাইবোন ভালোমন্দ কথা বলতেই পারে।প্লিজ উল্টো পাল্টা ভেবে কিচ্ছু করোনা।প্লিজ দাদাভাই,আমার রিকোয়েস্ট। প্লিজ প্লিজ।তুমি অসুস্থ।প্লিজ দাদাভাই।

মৃদু হাসলো নিভান।কি ঠান্ডা ভয়ংকর তাচ্ছিল্যময় হাসি।ইভানের বুক কেঁপে উঠলো।সে নিশ্চিত, সেদিনের মতো আজও দাদাভাই একটা অঘটন ঘটাবে!তন্মধ্যে নিভান শীতল মার্জিত গলায় বললো।—এতো সুন্দর দৃশ্যবালী দেখার জন্য ওরসাথে আমি তোকে পাঠিয়ে ছিলাম ইভান?ওরা দু’জনে নির্জন পুকুরপাড়ে বসে গল্প করবে আর আমি দুনয়ন পরিতৃপ্ত করে দেখবো!

মার্জিত কথাগুলো মোটেই নিভানের ঠান্ডা গলায় ঠিক লাগলোনা ইভানের।কি করবে,কি বলবে ভেবে উঠতে পারলো-না।কেমন পাগল পাগল লাগলো।সত্যিই তো দাদাভাই তাকে বিশ্বাস করে পাঠিয়ে ছিলো,সেই ভরসা বিশ্বাসের মর্যাদা কি রাখতে পেরেছে সে?পারিনি তো!মূহুর্তেই মুখটা ছোটো হয়ে গেলো তার।দূর্বল নমনীয় গলায় অপরাধীর ন্যায় মুখ করে বললো।–‘স্যরি দাদাভাই।

‘বাড়িতে আসছিস কখন?

নিভানের ঠান্ডা গলার বার্তা প্রশ্ন নয় উত্তর বলে দিচ্ছে, আর একমুহূর্ত নয়।এক্ষুনি চলে আসবি।অথচ এখন কোনোমতোও যাওয়া সম্ভব নয়।কৌড়ির দাদিআপা রান্নাবান্নার বিশাল আয়োজনে নেমেছে।প্রিয় নাতনীটাকে অনেকদিন পর কাছে পেয়েছে বলে কথা।সেই মানুষটাকে এখন কি বলে উপেক্ষা করে বাড়িতে যাবার কথা বলবে সে!ভিতরে ভিতরে ভিষণ অসহায় বোধ করলো ইভান।কন্ঠে ফুটে উঠলো সেই অসহায়ত্ব।

‘প্লিজ দাদাভাই,একটু বুঝতে চেষ্টা করো।এখন আসা সম্ভব নয়।কি করে আসবো?

‘এইযে আজ আমি অফিসে এসেছি,মৃদুল ড্রাইভ করে নিয়ে এসেছে।এখন বল,তবে তুই কি চাইছিস?এই অবস্থায় আমি ড্রাইভ করি আবারও উল্টো পাল্টা কিছু ঘটিয়ে হসপিটালে পড়ে থাকি?এবার মনে কর আর বেঁচে ফিরলাম না আমি।

দূর্বল জায়গায় আঘাত!মুখটা আরও অসহায় দেখালো ইভানের।কন্ঠস্বর আগের ন্যায় দূর্বল, নমনীয় রেখে বললো।-কেনো পাগলামি করছো?তুমি এমনটা ছিলেনা দাদাভাই!এমনটা তোমার কাছে কাম্য নয়।

এবার আর নিজের ভিতরের ক্রোধটাকে চাপিয়ে রাখতে পারলোনা নিভান।এতোসময় বহুত চেষ্টা করেছে তবে আর অনড় থাকতে পারলোনা।টেবিলের উপরের ফুলদানিটা মূহুর্তেই হাতে নিয়ে ছুঁড়ে ফেললো।টেবিলের সরাসরি কাঁচের দরজায় গিয়ে সেটা করাঘাত করলো।মূহুর্তেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে।সেই চূর্ণবিচূর্ণ কাঁচের টুকরো টুকরো শব্দে অফিসকক্ষ যেনো মৃদু ভূমিকম্প বয়ে গেলো।শব্দ ছড়িয়ে পড়লো,অফিসকক্ষের বাহিরে স্টাফকক্ষেও।সবার নজর প্রশ্নাতীত হলো।তবুও সাহস জুগিয়ে কেউ প্রশ্ন করতে এলোনা।শুধু ক্ষনে ক্ষনে সেদিকে নজর দিলো।ততোসময়ে নিভানের ক্রোধিত কন্ঠস্বর বজ্র গলা নিলো–এই তোরা কি বাধ্য করছিসনা আমাকে এমনটা করতে?ইভান,ওই ছেলেটার জন্য মেয়েটার সবকিছু থাকা সত্ত্বেও বাবার মৃত্যুর দিনে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে তাকে।অন্যের আশ্রিতা হয়ে থাকতে হচ্ছে! বিষয়টা নিশ্চয় তোর অজনা নয়!আর না নেহাৎই ছোটোখাটো কোনো কারণে বাড়িছাড়া হতে হয়েছে তাকে বলে তোর মনেহয়!বিষয়টা কোন পর্যায়ে গেলে তাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে সেটাও নিশ্চয় তোর আন্দাজ আছে! করতে পারছিস আন্দাজ!তবুও কেনো সব বুঝে ওকে ওখানে নিয়ে গেলি?ও তো আবদার জুড়বে,ওর সবকিছু ওখানে।তুই কেনো বুঝলিনা?ওই ছেলেটাকে বিশ্বাস করে তার কথায় তুই ওকে ওবাড়িতে নিয়ে গেলি!কেনো?আর ওর-ও বিবেকবোধ দেখ,দিব্যি কি সুন্দর প্রকৃতি বিলাশ করছেন ম্যাডাম।তাও আবার সেই ছেলেটার সাথে,যে মাত্রই ওর জীবনের দুঃস্বপ্ন।আশ্চর্য হচ্ছি আমি!শুধু ওর আমাতেই সমস্যা।ওকে কাছে পেলে….

কথা শেষ করলোনা নিভান। দাঁতে দাত চেপে বাকি কথা গিলে ফেললো।ছোটো ভাইয়ের সামনে তা আর প্রকাশ করতে চাইলোনা।ফের কিছুটা সময় নিয়ে শান্ত গলায় বললো।–ফোন ওর কাছে দে।

বকাগুলো নীরবে হজম করলেও,কৌড়িকে চাইতেই চোখ বড়োবড়ো হয়ে গেলো ইভানের।কৌড়িকেও বকবে নাকি?বকারই তো কথা।যে কান্ড ঘটিয়েছে মেয়েটা।কি দরকার ছিলো এতো সুন্দর ঘটা করে বসে ওই খাটাশটার সাথে কথা বলার।আচ্ছা কৌড়ি যে মেয়ে, এমন ঘটা করে কথা বলার তো নয়।পরিক্ষার কেন্দ্র ছেলেটাকে দেখেও তো কথা বলিনি সে।এমনকি বাড়িতে আসার পথে ভুলেও ছেলেটার দিকে নজর দেয় নি কথাতো দূর।তবে এখন এতো ঘটা করে কথা বলছে কেনো?যাই হোক দাদাভাইয়ের এখন কৌড়ির সাথে কথা বলতে দেওয়া যাবেনা।নাহলে আরেক কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে।আর সেই কেলেঙ্কারির কারণ ধরে যদি কৌড়িকে আর ওবাড়িতে না পাঠাতে রাজী হয়!তবে এদিকে দাদাভাইকে ঠান্ডা করবে কিকরে?অসহায় নজরে আকাশের পানে তাকালো ইভান।ফের অসহায় কন্ঠে মিনমিন করে বললো –ইয়া আল্লাহ মাবুদ রক্ষে করো!

‘কি হলো ফোন ওর কাছে দে।

ইভান পড়লো বিপাকে। তবুও আরেকবার রোধ করার চেষ্টা করে বললো–‘পরে কথা বললে হবে না?পরে কথা বলে নিও?

‘ইভান…

কলিজা মোচড় দেওয়ার মতো শীতল ডাকটা শুনেই তড়িঘড়ি করে ইভান ফের বললো—প্লিজ দাদাভাই,মেয়েটাকে বকো-না।আমার দোষ,আমার যা বলার বলো।ও বাড়িতে এসে ভিষণ খুশী।আমি এতোটা উচ্ছল ওকে ওবাড়িতে কখনো দেখিনি।

আগুনে ঘি ঢাকার মতো কাজ করলো ইভানের বলা বাক্যগুলো।ইভান তখনও বুঝতে পারিনি সে আরও একটা ব্লান্ডার করে ফেলেছে।নিভানের তাচ্ছিল্যেময় ঠান্ডা গলায় উত্তর পেতেই নিজের গালে কোষে দু’চারটা চড় অনায়সে মারতে ইচ্ছে করলো তার।–‘সে তো দেখতেই পাচ্ছি তিনি বাড়িতে গিয়ে আপন মানুষদের পেয়ে কতো আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত।

প্রায় তিন মাসের মতো নিজ বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন কৌড়ি অথচ এবাড়িতে আসার পর মনেহচ্ছে তিনমাস নয় কত যুগ সে এবাড়ি থেকে দূরে।পরিচিত একই ঘরবাড়ি,আগানবাগান,পুকুরঘাট অথচ সবটাই যেনো কৌড়ির চোখে নতুন লাগছে।পরিক্ষার কেন্দ্রে বিথীর সাথে দেখা হলেও,পরিক্ষা দিয়ে কোনোমতে বাড়িতে গিয়েই মেয়েটা আবার চলে এসেছে তার এখানে।কতো কথা, কতো গল্প,কতো মনখারাপ হলো এই কয়েক ঘন্টার মধ্য।কৌড়ির মনেহলো,মেয়েটা কতো কথা জমে রেখেছে তারজন্য।একসাথে নিজের ঘরে বসে গল্প করছিলো কৌড়ি আর বিথী।দুপুর গড়িয়ে বিকালের আভা ছড়াতেই দুজনে,কৌড়িদের মুখামুখি শান বাঁধানো ঘাটটায় গিয়ে বসেছিলো।কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে বিথী উঠে গিয়েছে ওয়াশরুমে।আর বিথীর ফোনটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো কৌড়ি।হঠাৎ অনুভব করলো তার মুখোমুখি শান বাঁধানো বসার জায়গাটা দখল করে নিয়েছে কেউ।মুখ উচু করে তাকাতেই আগের সেই উগ্র লাল চোখের চাহুনী,নেশাখোর টাইপের ছন্নছাড়া চেহারা কিছুই নজরে এলো-না কৌড়িট।সেখানে শান্ত নজর আর সুদর্শন মুখটা নজরে পড়লো কৌড়ির।যে উগ্র ছেলেটার জন্য তাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিলো, সেই ছেলেটা কি এই?হঠাৎ মেলাতে পারলোনা কৌড়ি।তবুও মনেমনে শঙ্কিত হলো।ছেলেটা এখানে এসেছে কেনো?

‘কেমন আছিস?

গলার সেই একগুঁয়ে উচ্চ স্বরটাও বিলিন।কি নম্রভাব সেখানে।তার আলাপনের উত্তর দেওয়া উচিত কি?উচিত অনুচিত খুব একটা ভাবা প্রয়োজন মনে করলো-না কৌড়ি।শুধু গাঁট হয়ে বসে রইলো।সেদিন যখন সবসীমা পার করে তারসাথে নরপিশাচের মতো আচারণ করেছিলো।তাকে বাজে উদ্দেশ্য ছুঁতে চেয়েছিলো ছেলেটা। তারপর থেকে,এই ছেলেটার সাথে কথা বলা তো দূর ঘৃনার মুখটাও দর্শন করার ইচ্ছেও করে-না কৌড়ির।আর যারজন্য বাবার মৃত্যুর শোকটাও ঠিকঠাক পালন করতে পরিনি,বাড়ি ছাড়া হতে হলো তাকে।সেই ছেলেটার কথার উত্তর দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন আছে বলে মনে করেনা কৌড়ি।কথাই বলতে চায়না সে।সামনের ছেলেটা বুঝি সেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারলো,অপরাধবোধটা যেনো ধিকেধিকে জ্বললো বুকের ভিতর।কৌড়িকে পাওয়ার ইচ্ছে সেই ছেলেবেলা থেকে।সেখানে কৌড়ির সাথে ওই বাজে নোংরা আচারণটা সে করতে চায়নি।আগেও করতে চায়নি,সেদিনও করতে চায়নি।কিন্তু বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে তাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়েছে।বলাবাহুল্য তখন বন্ধুদের পরামর্শটা তার কাছে যথাযথ মনে হয়েছিলো।শুধু তখন নয়,তখনকার সব পরামর্শ তারকাছে যথাযথ মনে হতো।যা এখন আফসোস হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাকে অপরাধবোধে ভোগায়।আর সবচেয়ে বড় আফসোস এটাই,সেই বুঝলো সে।তবে কৌড়িকে হাতছাড়া করার পর।এটা যদি কয়েক বছর আগে বুঝতো,তবে কৌড়িকে মনেহয় হারাতে হতোনা তাকে।জোর করে, গুন্ডামী করে ভয় দেখিয়ে, শাসিয়ে, যে আর যাই হোক মনের মানুষের ভালোবাসা হোক বা তাকে,আদায় করা সম্ভব নয়।তা এখন হাড়েহাড়ে অনুভব করছে।সত্যিই কি কৌড়ি শুধু তার আফসোস হয়ে থাকবে?মূহুর্তেই
পিছনের করা অপরাধমূলক উগ্র আচারনগুলো দুনয়নে ভেসে উঠলো।তাচ্ছিল্যের মৃদু হেসে অপরাধবোধে মাথা নিচু করে নিলো সে।মন বললো।হয়তো আফসোস হয়েই থাকবে কৌড়ি তার !তবে স্বীকারোক্তি তো তাকেই জানাতেই হবে।

‘বড়চাচা আর তোরসাথে এযাবৎকালের আমার করা সকল অন্যায় আচারণের অপরাধী আমি।জানি ক্ষমার যোগ্য নয়।তবুও ক্ষমা করিস আমায়।আমি আমার করা আচরনের জন্য অন্যকে দায়ী করতে চাইনা,তবুও বলছি আমি ইচ্ছাকৃতভাবে তোরসাথে বা বড়চাচার সাথে ওই অন্যায়মুলক উগ্র আচরনগুলো করিনি। করতে চায়ওনি।আর না সেদিন তোকে বাজেভাবে ছুঁতে চেয়েছিলাম।আমার সবকিছু খারাপ আমি জানি।কিন্তু তোকে বাজেভাবে ছুঁতে চাওয়ার মানসিকতা আমি কখনো পোষণ করিনি।বিশ্বাস কর,শুধু বন্ধদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।ওরা বলেছিলো,আমার দ্বারা তুই কলঙ্কিনী হলে,তুইও বাধ্য হবি আমার হতে আর চচাও বাধ্য হবে তোকে আমার সাথে বিয়ে দিতে।আমি তোকে পাওয়ার লোভে,ওদের পরামর্শ নিয়েছিলাম।আর সেই পরামর্শে যে তোকে একেবারে হারিয়ে ফেলবো,তা তখন বুঝিনি।দোষ আমার নয় বলছিনা।দোষ পুরো আমার।আমি অন্যায় করেছি,বাজে আচারণ করেছি।কিন্তু তোকে পাওয়ার আগ্রহটা আমার কোনোকালেও মিথ্যা ছিলো-না,ফুল।শুধু পন্থা অনুসরণ করাগুলো ভুল ছিলো।যদিও সেই ভুলের মাশুল মনে হয়,তোর বোঝা বোঝা ঘৃনার অনল নিয়ে আমাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়ে যেতে হবে।আমি রাজি বইতে।তবুও বলবো ক্ষমা করিস আমায়।তোর জীবনের সকল খারাপ পরিস্থিতিগুলো ক্রিয়েট করার জন্য দ্বায়ী আমি।পাারলে সত্যিই আমাকে ক্ষমা করে দিস।

মাথা উঁচু করলো নাহিদ।কৌড়ির অবিশ্বাস্য নজরে নজর রাখলো সে।ওই নজরে তারজন্য দ্বিধা, সংশয় অবিশ্বাস, ঘৃনা সব যেনো স্পষ্ট।হয়তো তার কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছেনা বা চাইছে না মেয়েটা।অবিশ্বাস্য
শুভ্র মুখখানা কি মায়াময়।এই মায়াই-তো ডুবেছিলো সে।আর তারজন্য কতো পাগলামি,কতো উগ্রতামী করলোই না জীবনে সে!অথচ ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু হলো না!ভুলটা তো অবশ্যই তারই ছিলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভিতরে ভিতরে পুড়তে থাকা সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধের স্বীকারক্তি জানিয়ে পুনরায় আওড়ালো।

‘আমাকে অবিশ্বাস কর!পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ ছেলে ভাব!তবুও এটুকু অন্তত বিশ্বাস কর,আমি সেদিন তোকে বাজেভাবে ছুঁতে চায়নি ফুল।শুধু আমার করে পাওয়ার জন্য ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।

আবারও একই বিষয়ে সাফাই।কৌড়ির অবিশ্বাস্য পলকহীন নজর এবার এলোমেলো হলো।দৃঢ়কণ্ঠে শক্ত গলায় একটাই বাক্য ছুড়লো—আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না,জানতেও চাইনা।আপনি চলে যান।আর দ্বিতীয়ত আপনি কখনো আমাকে ফুল নামে ডাকবেন না।ওটা শুধু বাবার মুখেই মানাতো আর কারও মুখে নয়।আপনার মুখে তো নয়ই।

এলোমেলো হাসলো নাহিদ।তবুও মেয়েটা কথা বলেছে, এই শান্তি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো সে।তন্মধ্যে সেখানে হাজির হলো ইভান।তাকে দেখে তড়িঘড়ি করে কৌড়িও উঠে দাঁড়ালো।কিছু প্রয়োজন পড়লো কি-না?
সেটা খেয়াল করেও নিজের কথা শেষ করতে নাহিদ বললো–যদি-ও তোর কাছে আমি বিশ্বাসযোগ্য মানুষ নই।তবুও বিশ্বাস করতে বলছি আমাকে।আমার দ্বারা আর কখনো তোর ক্ষতি হবে-না,আল্লাহ প্রমিজ।তাই বলছি এতো কষ্ট করে শহর থেকে এখানে এসে পরিক্ষা না দিয়ে বাড়িতে থেকে পরিক্ষা দে।ঝামেলা,কষ্ট দু’টোই রক্ষে হবে।তারপরে নাহয় আবার শহরে চলে যাস।

আবার শহরে চলে যাস কথাটা মুখ আওড়াতে চাইলো না।তবুও বুকের ভিতরের ব্যথা দমিয়ে কথাটা বলতে হলো নাদিহকে।ফের ইভানের দিকে তাকিয়ে সৌজন্যে হেসে চলে গেলো সে।ইভানের অসহায় নজর আরও অসহায় হয়ে ধরা দিলো।ফোনে তখন অডিও কলে নিভান।নিশ্চয় সব শুনেছে।এবার কি হবে?নাহিদ চলে যেতেই কৌড়ির খেয়ালী নজর ইভানের মুখে মনোবেশিত হলো।ইভানকে তারদিকে কেমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে গেলো তার।সহসা প্রশ্ন করলো।

‘কিছু লাগবে ভাইয়া আপনার?

সহসা ফোন এগিয়ে দিলো ইভান।অসহায় মুখ,কাচুমাচু নজর।দূর্বল গলায় বললো —ফোন ধরো।কথা বলো।

কে প্রশ্ন করে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলো কৌড়ি।ইভান তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে গা এলিয়ে শান বাঁধানো বসার জায়গায় বসে পড়লো।এবার কৌড়ির পালা!ইভানকে উত্তর না দিতে দেখে ফোনটা কানে নিলো কৌড়ি।সকাল থেকে ফোন দিয়ে তন্ময়ী আপু,মৌনতা, মান্যতা আপু,ছোটোমা,বড়মা জ্বালিয়ে দিচ্ছে।এখানে যেনো না থাকা হয়।তাড়াতাড়ি চলে আসি যেনো।সেরকম তাদেরই কারও কল হবে মনেকরে ফোনটা কানে তুললো সে।সময় যেতেই ওপাশ থেকে শুধু ঘনো নিঃশ্বাসের আওয়াজ আসতেই চমকে ইভানের মুখের দিকে তাকালো।ইভান যেনো অপেক্ষায় ছিলো।সে তাকাতেই চোখ দিয়ে ইশারা করলো,তুমি যাকে ভাবছো সেইই।সহসা হৃদস্পন্দনের গতিবেগ বেড়ে গেলো তার।চোখের আকার ছাড়ালো দ্বিগুন।
মূহুর্তেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো গম্ভীর আর অতি শীতল কন্ঠের কঠিন বার্তা।

‘কার অনুমতি নিয়ে তুমি ও-বাড়িতে গেছো?আবার থাকার চিন্তাভাবনাও করে ফেলেছো!

আজ প্রায় পাঁচদিনের মতো মানুষটা তারসাথে ইচ্ছে করে কথা বলে-না।আজ তার পরিক্ষা এটা জেনে-ও একবারও তাকে দোয়া জানানোর প্রয়োজন মনে করল না।আর না কথা বলার।এখন আসছে কৈফিয়ত নিতে!
সুক্ষ এক অভিমান জমে ছিলো কৌড়ির মনে।সেই অভিমান থেকেই সহসা উত্তর দিলো।

‘এটা আমার বাড়ি। এখানে আসতে অনুমতি কেনো লাগবে?আর এখানে থাকার চিন্তাভাবনা কি! এখানেই থাকার কথা ছিলো,আর এখানেই থাকার অধিকার আমার।

‘ওটা তোমার বাড়ি নয়,ওটা তোমার বাবার বাড়ি।

‘সমান কথা।বাবার মানে আমার।আর দ্বিতীয়ত বাবার আর কোনো সন্তান নেই।তারমানে এটা এখন আমারই বাড়ি।তাই এখানে থাকার সম্পূর্ণ অগ্রঅধিকার আমারই।

‘বাহ।কৌড়িতো দেখি উড়ে বেড়াচ্ছে।তা ইন্ধন যোগাচ্ছে কে?তোমার ওই সো কলড উগ্র বাজে স্বভাবের ভাই।তা থেকে যাও তবে তার কথায়।থাকবে?

এতো শান্ত আর স্বাভাবিক কন্ঠ।কৌড়ি উত্তর দিতে ভুলে গেলো।মুলত সাহস যুগিয়ে উত্তর গুছিয়ে বলতে পারলো না একটা শব্দও।কেমন ওপাশের মানুষটার গলা অতি স্বাভাবিকের মধ্যে-ও অস্বাভাবিক ঠিকলো তার কাছে।একটু নয় অনেকখানী অদ্ভুত অস্বাভাবিক ঠিকলো।

‘বলছো না যে, থাকবে?

প্রশ্নের প্রেক্ষিতে জবাব যেনো সহসা মুখ থেকে বেরিয়ে এলো কৌড়ির।—‘থাকলে অসুবিধা কোথায়?

আগুনের ফুলকির ন্যায় দরদরিয়ে ঝলসানো মেজাজে ঘি ঢিলে দিলো যেনে কৌড়ি।মূহুর্তেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো নিভান।কি ভাঙলো বুঝতে পারলো-না কৌড়ি।তবে তীব্র ঝনঝন শব্দে কানের তালা ছুটে যাওয়ার উপক্রম হলো তার।চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।ভয়ে মাথা থেকে পা অব্দি শিহরে উঠলো তার।কথা বলতে বলতে ইভানের থেকে বেশ কিছুটা দূরে চলে এসেছে সে।তবু-ও তার চোখমুখ খিঁচে নেওয়া দেখে ইভান বেশ বুঝতে পারলো,ফোনের ওপাশের মানুষটা ক্ষেপেছে ভিষণ।আর তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া চলছে।খারাপ লাগলো ভিষণ।তবে করার কিচ্ছু নেই।ফোনের ওপাশের মানুষটা তখন তীব্র রাগে অন্ধ।রাগে বজ্র কন্ঠে বার্তা ছুড়লো।

‘থাকলে অসুবিধা কোথায়?এই অসুবিধা কোথায় তুমি জানো-না?জেনে-বুঝেও কি করে জিজ্ঞেস করতে পারো,থাকলে অসুবিধা কোথায়?আর ওই উগ্র বাজে ছেলেটার সাথে বসে খোশগল্পে কি করে মেতে আছো তুমি? তাকে বিশ্বাস করে তুমি ওবাড়িতে গেছো!আবার তার পরামর্শ অনুযায়ী থাকতেও চাইছো!আবার বলছো থাকলে অসুবিধা কোথায়?আমার কথা একবারও কি মনে হয়না তোমার?

তীব্র ক্রোধ।সেদিনের মতো কি ভয়ংকর রাগ,কান্ড।তাকে ঘিরেই।এই লোকটা কি পাগল হলো!উফফ!কন্ঠ নমনীয় হলো এবার কৌড়ির।কোমল গলায় বললো।

‘প্লিজ আপনি অসুস্থ।পাগলামো করবেন না।

‘আমি অসুস্থ, এটা তোমার খেয়ালে আছে!খেয়ালে আছে বলছি কেনো,আমি মানুষ এটা তোমার মনেহয় বলে তো আমার মনেহয় না!তার ভালোমন্দ খেয়াল ধ্যান তোমার থাকবে,এটা আশা করাও অনুচিত।

‘প্লিজ।

‘তুমি আমাকে না জানিয়ে কেনো গেলে ওবাড়িতে কৌড়ি।তাও আবার ওই ছেলেটার কথায়!

‘আমি কারও কথায় এবাড়িতে আসিনি।এটা আমার জন্মস্থল।এখানে আমার টান,মায়া, ভালোবাসা সবকিছু। আমি সেই টানেই এসেছি।আর দাদিআপার কথা কিকরে ফেলতে পারতাম?আর আমি কারও সাথে খোশগল্প মেতে থাকিনি,উনিই এসেছিলেন কথা বলতে।বলেছেন আমি শুনেছি,উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।ব্যাস চলে গিয়েছেন।

কৌড়ির কথার ধরন বুঝে নিভান বুঝি এবার একটু শান্ত হলো।তীব্র আক্রোশে ফেটে পড়া কন্ঠ এবার দূর্বল হলো।এক্সডিন্টে মাথার ছেঁড়াকাটাযুক্ত জায়গা ঝিমঝিম করে উঠলো।চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বুঁজে দূর্বল গলায় বললো–‘চলে এসো কৌড়ি।

এই ডাক,এই আহ্বান!ফিরিয়ে দেওয়া যায়।নাকি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব!কি করবে সে এখন?এদিকে দাদিআপাকে-ও কি বলবে!আবার এই মানুষটাকে কি করে না বলবে!তবুও অবুঝের মতো বললো–এখন!কিভাবে সম্ভব।

‘কৌড়ি।

কি অদ্ভুত ডাক।পৃথিবীর সমস্ত মোহমায়া যেনো এই ডাকে কেটে গিয়ে শুধু ওই মানুষটার সম্মোহনী ডাকে মন তলিয়ে যায়।এই ডাকের অর্থ, তার কাছে সহজ সরল আবদারের প্রার্থনা,চলে এসো কৌড়ি। অসহায় হলো স্বর।বললো–‘আমি দাদুআপাকে কি বলবো?

‘জানিনা।শুধু যতো দ্রুত সম্ভব চলে এসো।বিকজ,আই ফিল ইনসিকিউর অ্যাবাউট ইউ।প্লিজ কৌড়ি,চলে এসো।

মধুময় আহ্বানে পিষ্ট হলো কৌড়ির মন।তবুও কন্ঠে বিস্ময় নিয়ে বললো–‘পাগল হয়েছেন!

অদ্ভুত ক্লান্ত হাসলো নিভান।এখনো চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বুঁজে আছে সে।মাথার ঝিমঝিম ব্যথাটা যেনো ধীরধীরে বাড়ছে।মাথায় বামহাতটা চেপে ধরলো সে।ফের খুব স্বাভাবিক, সহজ গলায় বললো।–তুমি আমার কাছে আসতে যতো দেরি করবে পাগলামোর মাত্রা ততো সীমা ছাড়াবে।আল্লাহ হাফেজ কৌড়ি।

ফোন কেটে দিলো নিভান।বুঝতে পেরেও কানে ফোন নিয়ে হতভম্ব হয়ে কিছুসময় দাঁড়িয়ে থাকলো কৌড়ি।ফের বিথী এসে ডাকতেই নড়েচড়ে দাঁড়ালো সে।ধীর পায়ে এগোলো ইভানের দিকে।গভীর ভাবনায় ডুবে আছে,এমনভাবে পুকুরের দিকে নিটোল চোখে তাকিয়ে আছে ইভান।কাছে গিয়েও সাড়া পাওয়া গেলোনা।তাই কৌড়িকে ডাকতে হলো তাকে।সে ফিরতেই তারপানে কেমন অসহায়া হয়ে তাকালো কৌড়ি।ইভান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে কৌড়ির চেয়েও অসহায় চাহুনি ফেললো তারদিকে। দু’জনের একটাই ভাবনা,কি করবে এখন!কোনদিকে যাবে?

চলবে…..

#ফুলকৌড়ি
(৩৯)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

রাত প্রায় বারোটার দিকে বাড়ি ফিরলো ইভান আর কৌড়ি।সাথে কৌড়ির দাদিআপাকে-ও নিয়ে এসেছে।ভদ্রমহিলা নিজেও আসতে চান-নি এবং তাদেরকে-ও আসতে দিতে চান-নি।কতো আয়োজন করেছিলেন, সেসব সবকিছু ফেলে চলে আসতে হয়েছে। আর তারজন্য ইভানকে কতোকিছু বলে উনাকে ম্যানেজ করে তারপর উনাকেসহ তারা আসতে পেরেছে!বাবাকেও উকিল ধরেছিলো।বাবা নাহলে উনাকে নিয়ে আসা তো সম্ভবই হতোনা,সাথে নিজেদেরও আসা হতোনা।তাতে মহাপ্রলয় বয়ে যেতো।উফ!একেই বলে বুঝি প্রেমিক।রুমে ঢুকতেই তন্ময়ীকে দেখে মিষ্টি হেসে,তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকলো।সারাদিনের জার্নি।সমস্ত শরীর যেনো অস্বস্তিতে ডুবে আছে।গোসল সেরে ফ্রেশ হওয়া খুব প্রয়োজন।যদিও কৌড়িদের বাড়িতে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হওয়ার কাজটা সেরেছিলো।সারাদিনের একই পোশাকে জড়িয়ে থাকা শরীরের অস্বস্তি কি আর তাতে কমে?তাই বাড়িতে ঢুকতেই আগে মনে হয়েছে, গোসল সেরে শরীরের ভিতরবাহিরটাকে স্বস্তি,শান্তি দেওয়া উচিত।ওয়াশরুমে ঢোকার আগে তন্ময়ীকে বললো-তনু প্লিজ আমার পরিহিত পোশাকগুলো দিও।

তন্ময়ী ততক্ষণাৎ ওয়ারড্রব থেকে বের করে বাসায় পরার জন্য ট্রাউজার আর টিশার্ট এগিয়ে দিলো।এতো দ্রুত। ইভান একটু অবাকই হলো।যদিও সম্পর্ক তাদের বেশ সহজ হয়েছে।তবুও এতোটা নয়।তন্ময়ী সবসময় তার থেকে দূরে দূরে থাকার ট্রায় করে।যদিও কথা হয়।রাতে একসাথে থাকা হয়।তবুও স্বামী স্ত্রীর মতো সম্পর্কে আগলা বাধন তো রয়েই গেছে!সময় নিয়ে
গোসল সেরে ট্রাউজার পরে খালি গায়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হলো ইভান।তন্ময়ীকে দেখে ফের মিষ্টি হাসলো।অথচ মেয়েটার মুখ মলিন। কেনো?

‘মন খারাপ তোমার?কিছু হয়েছে তনু?শরীর ঠিক আছে?

জোর করে হাসলো যেনো তন্ময়ী।তড়িৎ বললো–মন খারাপ কেনো হবে!মন খারাপ নয়।আর শরীর-ও ঠিক আছে।

ইভানের চোখ যেনো তন্ময়ীর জোরপূর্বক ঠোঁট এলানো দৃশ্যতেই আঁটকে রইলো।–কিছুতো হয়েছে?কি হয়েছে বলো?

ইভানের কন্ঠ দৃঢ় শোনালো।তন্ময়ী কথা ঘুরাতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো।ভিতরে ভিতরে নিজেকে ধাতস্থ করে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো–বললেন যে আজ আসবেন না? তবুও ফিরলেন যে।

ইভানের দৃঢ় দৃষ্টি তখনো তন্ময়ীর চোখমুখে ঘুরপাক খাচ্ছে।মেয়েটা প্রসঙ্গ এড়াতে চাইছে বেশ বুঝলো।তবুও উত্তর সরূপ বললো–তুমি তোমার বরকে ছাড়া থাকতে পারলেও, দাদাভাই তার বউকে ছাড়া থাকতে পারেনা।তাই বাধ্য হয়ে আসতে হলো।

ইভানের কথায় কৌতুহলী হলো তন্ময়ীর মন।তড়িৎ বললো—মানে?

‘মানে কিছুনা।তোমার মন খারাপ কেনো সেটা না বললে আমিও বলছি-না।

মায়ের বুঝদার বানী,শ্বশুর বাড়ীতে অনেক কিছুই হয়, তাই বলে সব কথা বরের কানে তুলতে নেই।সব মন্দটা মানিয়ে না নিলেও কিছু কিছু মন্দ মানিয়ে নিতে হয়।না হলে সংসার হয়না।তাই ইভানের সামনে সেটা আর প্রকাশ করতে চাইলো-না।আর না নিজের মানের উত্তর নিতে চাইলো।ইভান বুঝতে পেরেছে তার মন খারাপ!আর উত্তর না নিয়ে ছাড়বেনা বান্দা, এটা বুঝে প্রসঙ্গ এড়াতে রুমের বাহিরের দিকে যেতেযেতে বলল–আমি খাবার নিয়ে আসছি।একটু অপেক্ষা করুন।

‘তনু, দাঁড়াও।

দাঁড়িয়ে পড়লো তন্ময়ী।ইভান কেনো দাড়াতে বললো সেটা বুঝে বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হলো।ক্ষুনক্ষরে যদি টের পায় ফুপুমনি উল্টো পাল্টা শুনিয়েছে তাকে কেলেঙ্কারি আরেকটা বাঁধবে।এবাড়িতে এসে ইভানের সাহচর্য পেয়ে এটুকু বুঝেছে।ছেলেটা অন্যায় কথাকাজ একদম সহ্য করতে পারেনা।আর এসব নিয়ে যদি বাড়ির সবার সামনে ইভান উচ্চবাচ্য করে তবে সে-ও তো ছোটো হয়ে যাবে।স্বামী না আসতেই সে কান ভাঙিয়েছে।উফ!কি এক জ্বালা হলো।ইভান তার মুখ দেখে বুঝলো কিকরে?এটাই বুঝে আসলোনা তন্ময়ীর।তার মুখে কি লেখা ছিলো তার মন খারাপ?যারকারনে ইভান আসছে শুনেই শাড়ী পরেছে সে।শাড়ীতে কেমন লজ্জা লাগছিলো।তাই তারউপরে শাল জড়িয়ে একপ্রকার ঢেকে রেখেছে।কি একটা জুবুথুবু অবস্থা!

‘কি হয়েছে তন্ময়ী।প্লিজ বলো?

দরজার কাছাকাছি দাড়ানো তন্ময়ী।আর তন্ময়ীর পিছনে দাঁড়িয়ে দরজা টেনে দিতে দিতে ধীরকন্ঠে শুধালো ইভান।ইভানের বুক বিধলো তন্ময়ীর পিঠে।মোহগ্রস্ত হলো তন্ময়ী।শ্বাস ঘনো হলো তার।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা করে বললো–দরজা আঁটকে দিলেন কেনো?খাবেন তো?খাবার আনতে হবে তো?

দরজা আটকে দেওয়া হয়ে গেলেও ইভান সরলো-না। সেভাবেই বললো—ওবাড়ি থেকে পর্যাপ্ত খেয়ে এসেছি।আমি আর খাবো-না।তবে তুমি আমার প্রশ্নকে বারবার এড়িয়ে যেতে পারো-না।আমার প্রশ্নের উত্তর দাও?কি হয়েছে?

তন্ময়ী ঘুরে দরজা ঘেঁষে দাড়ালো।নাহলে নিঃশ্বাস জানি কেমন আঁটকে আসছিলো তার।ঘুরে দাঁড়িয়ে আরও এক বিপদে পড়লো।ইভানের উন্মুক্ত ফর্সা চওড়া বুকটা দেখে অস্বস্তি বাড়লো।ইভান সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়ে তন্ময়ীর মুখোমুখি হয়ে কাছাকাছি দাঁড়ালো।হাত রাখলো তন্ময়ীর মাথা বরাবর দরজায়।একপ্রকার আঁটকে দিলো তাকে।তড়িৎ চোখ বুজে নিলো তন্ময়ী।কথা বলতে গলা কাঁপলো তবুও বললো।–বললাম তো কিছু হয়নি।মন খারাপ ন…

‘মিথ্যা বলবেনা তন্ময়ী!

ইভানের দৃঢ়কন্ঠে বুঁজে থাকা চোখ আরও খিঁচে নিলো তন্ময়ী।তড়িৎ বলতে শুরু করলো।

‘ফুপিমণি বলেছে,আমি দেখতে ভালো না।তাই নতুন বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও আমার বর আমাকে নিয়ে ঘোরার বদৌলে অন্য মেয়েকে সময় দিচ্ছে।সব ছেলেদের প্রথম আকর্ষণ সৌন্দর্য।বিয়ে ভেঙে যাওয়া আমাকে,উদ্ধার করতে আপনি আমাকে বিয়ে করলেও,আপনিও পুরুষ।যার নজর ঘরের অসুন্দর স্ত্রীতে আঁটকে নেই।সৌন্দর্যময়ী নারীতেই আটকে আছে।না-হলে কি স্ত্রী বাদে অন্য মেয়েকে সময় দেয় কেউ?

তন্ময়ীকে ফুপুমনির পছন্দ নয় তাই সুযোগ পেতেই কটাক্ষ করে কথা শোনাতে দ্বিধা করেনি।হয়তো আরও অনেক কথাই শুনিয়েছে!সেটা পরে দেখছে ইভান।আগে তন্ময়ী কি ভাবছে,সেটা জেনে নিক।সহজ হওয়া সম্পর্কটা না আগের ন্যায় হয়ে যায়।

‘তোমার ধারনা কি?আমাকে ভুল বোঝা আগের ঘটনার মতো?আমার চরিত্র খারাপ?

চোখ খুুলে ফেললো তন্ময়ী।ইভানের বলা কথার উত্তর সরূপ বলতে ইচ্ছে করলো,আমি আগে ভুল করেছি।যদিও ভুল আপনারও কম ছিলোনা।তবে দ্বিতীয়বার আপনাকে ভুল বোঝার বোকামিটা আর করছিনা।তবে ইভানের সাপাইটা তারসামনে গাইতে পারলোনা।উল্টো করে বললো–‘আমি কৌড়িকে বিশ্বাস করি,ভরসা করি।ও তেমন মেয়ে নয়।কখনোই নয়।আমি এই অল্প সময়ে ওকে যেটুকু চিনেছি,জেনেছি।আমি বড়বোন হিসাবে ছোটো বোনকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি। ভরসা করতে পারি।যদিও করি আমি।সেখানে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কোনো ফাঁকফোকর নেই।বিশ্বাস করুন, নেই।

মাথা ঝুকালো ইভান।মাথার সামনের লম্বা ভেজা চুলগুলো গিয়ে পড়লো তন্ময়ীর চোখে-মুখে।মূহুর্তেই আবার চোখ বুঁজে নিলো তন্ময়ী।অনুভূতিতে দোল খেলো শরীর মন।অনুভূতির তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়ে ইভান কেমন মোহগ্রস্ত কন্ঠে শুধালো—আর আমাকে বিশ্বাস করা যায়না?ভরসা করা যায়না?

দম এবার আঁটকে এলো তন্ময়ীর।উত্তর দেওয়ার বদলে বললো–প্লিজ সরে যাও ইভান।

হাসলো ইভান।আপনি থেকে তুমি।এতোদিনে মনেহয় মেয়েটাকে নিজের অনুভূতির ডোরে বাঁধতে পারলো।সরলো-না ইভান।বরং আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে দাড়ালো তন্ময়ীর।কন্ঠে আরও মায়া ঢেলে দিয়ে বললো–আজ হঠাৎ সেলোয়ার-কামিজের বাদে শাড়ী পরেছো কেনো?

উত্তর দিতে পারলোনা তন্ময়ী।দু’পাশের খামচে ধরা শাড়ির অংশবিশেষটুক আরও শক্ত হাতে খামচে ধরল।
কেনো পরেছে?এই কথা কিকরে নিজমুখে বলবে সে!
ইভানের গভীর নিশ্চল চোখদুটো তন্ময়ীর মায়াময় মুখে স্থির থাকলও,তার গতিবিধি অনুধাবন করতে পারলো ইভান।একটু একটু করে মেয়েটা অনুভূতিতে দূর্বল হশে পড়েছে তারপ্রতি,আজ ক্ষনিকের দূরত্বে সেটা যেনো স্পষ্ট।শাড়ীর অংশবিশেষ খামচে ধরা বাম হাতটা ছাড়িয়ে দিলো ইভান।আবারও একই মোহগ্রস্ত কন্ঠে শুধালো–আমাদের সম্পর্কটা কি এগোনো যায়-না তনু?একটু ভরসা,বিশ্বাস করা যায়না কি আমাকে?

অনুভূতিতে পিষ্ট তন্ময়ী তখন একটা শব্দও উচ্চারণ করার পর্যায়ে নেই।চোখমুখ খিঁচে সেভাবেই চুপ হয়ে রইলো সে।সেই মুখের দিকে মোহগ্রস্তের ন্যায় মায়ামায়া চোখে তাকিয়ে রইলো ইভান।মাঝেমধ্যে খুব ইচ্ছে করে মেয়েটার এই মায়াভরা চোখে,গোলগাল গালে,লালচে ঠোঁটে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতে।গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে।তবে বাধ্য সে।পারে-না।আজও হয়তো সেই চাওয়াটা বুকের ভিতরেই চাপা রাখতে হবে তাকে।একটু একটু করে সরে দাঁড়িয়ে পিছে মুড়লো ইভান।মূহর্তেই তার শক্ত হাতটা বাধা পড়লো একটা কোমল হাতের বাঁধনে। শিহরে উঠলো শরীর।কম্পিত হলো হৃদয়।সেই কম্পিত হৃদয়ের কম্পন আরও বাড়িয়ে দিয়ে তন্ময়ী মৃদু কাপা কন্ঠ বললো।

‘আমাদের সম্পর্কটা আমি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ইভান।

সুখ সুখ অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো মন।শিরশির করে উঠলো সমস্ত সত্তা।তবুও নিজের সেই অনুভূতি দমিয়ে রেখে ইভান প্রশ্ন ছু্ড়লো–‘বিশ্বাস করো,ভরসা করো আমাকে?

নীরব রইলো তন্ময়ী।সেটা বুঝে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো ইভান।নিজের লাজ ছেড়ে তখন তন্ময়ী বললো।

‘ভরসা বিশ্বাস তৈরী না হলে আমাদের সম্পর্কটা আমি কিছুতেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইতাম না।আমি তোমাকে বিশ্বাস করি,ভরসা করি ইভান।

ঘুরলো ইভান।মূহুর্তেই দুহাতে আগলে নিলো তন্ময়ীর মায়াময় মুখটা।ফের সন্দিহান কন্ঠে বললো–মিথ্যা বলছো না-তো?তুমি স্ত্রী হয়েও স্বামীকে সঙ্গ দিচ্ছো না এই অপরাধবোধে নিজেকে আমার কাছে সপে দিতে চাইছো না-তো?তাই যদি হয়,তবে তোমার শরীরটাকে আমার চাই-না।আমি পুরুষ,স্ত্রীকে একান্তভাবে পাওয়ার চাহিদা আমার আছে।তাই বলে,অবিশ্বাস, অভরসা নিয়ে তাঁকে আমি ছুঁতে চাই-না।আমি তোমাকে কাছে নিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছি তাতেই চলছে আমার।

ইভানের শান্ত চোখে সাহস করে চোখ রাখলো তন্ময়ী।স্পষ্ট স্বরে জানালো-আমি মিথ্যা বলছি-না ইভান।আমি বিশ্বাস করি তোমাকে।

ইভান গভীরপানে চেয়ে রইলো তন্ময়ীর চোখ দুটোতে।সেখানে যেনো পরখ করে নিতে চাইলো,তন্ময়ীর বলা কথার সত্যমিথ্যা।সময় অতিবাহিত হতেই,নিজের দু’হাতে আজলে রাখা তন্ময়ীর মুখটা নিজের আরও কাছে টেনে আনলো।ঠোঁট বসালো তন্ময়ীর ছোট্রো কপালটায়।বিয়ের রাত থেকে রোজ রাতে এই ঠোঁটের স্পর্শ সে পেয়ে চলেছে।তবে তার স্পর্শ,গাঢ়ত্ব আজ যেনো ভিন্ন।চোখ বুঁজে এলো তন্ময়ীর। হাতজোড়া আপনা-আপনি চলে গেল,ইভানের চওড়া পিঠে।শখের নারীটার কোমল স্পর্শ পেতেই ইভসন যেনো এতোদিনে নিয়ন্ত্রণে রাখা নিজের সত্তা হারালো।কপাল থেকে ঠোঁট ঘেঁষে নিয়েই তন্ময়ীর চিকন লালচে ঠোঁটে বসালো।অনুভূতিতে মোহ হারিয়ে ইভানকে আরও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো তন্ময়ী।আশকারা পেতেই মাতাল হয়ে উঠলো ইভান।সময় চললো,বাড়লো শখের নারীটাকে একান্তরূপে পাওয়ার পাগলামী।তাতে প্রশ্রয় দিলো সেই নারীটিও।

শীতল,শুনশান রাত।চারদিকে মৃতুপুরীর মতো নিস্তব্ধ। কৌড়ির চোখে ঘুম নেই।অথচ সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে জার্নি, তারপর পরিক্ষার টেনশন,এরপর বাড়ি, সেখান থেকে আবার জার্নি।শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে অথচ দু’চোখে ঘুম নেই।শোয়া থেকে এই পর্যন্ত এ-পাশ ও-পাশ করেও ঘুম কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না দুচোখের দুয়ারে।গা থেকে কম্বল সরিয়ে উঠে বসলো কৌড়ি।পাশে শুয়ে দাদীআপাকে একবার দেখে নিলো।উনার ঘনত্ব শ্বাসপ্রশ্বাস বলে দিচ্ছে,উনি গাঢ় ঘুমে।বেড থেকে নেমে রুমের মধ্যে কিছুসময় হাটাহাটি করলো। তবুও ক্লান্ত মনকে কিছুতেই স্থির করতে পারলো-না।অনবরত চলা শ্বাসপ্রশ্বাস কেমন রূদ্ধ হয়ে চলছে।এরকম মাঝেমধ্য হয়।খোলা, নির্মল পরিবেশ পেলে আবার ঠিক হয়ে যায়।অথচ এই রাতে যাবে কোথায়?বেলকনিতে গেলো। তবু-ও যেনো স্বস্তি পেলোনা,ভালোও লাগলোনা।শেষমেশ ছাঁদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।কিন্তু এতো রাতে ছাঁদে যাওয়া ঠিক হবে কি-না? এই দোনোমোনোয় কিছুসময় অতিবাহিত করলো।যখন মাত্রাধিক হাসফাস করে উঠলো ভিতরটা।তখন ভাবলো,ছাঁদে যাবে সে।তাতে যাই হয়ে যাক।গায়ের ওড়নাটা মাথায় সুন্দর করে দু-প্যাচানো দিয়ে ফের গায়ে জড়িয়ে নিলো।সঙ্গে চাদরটা জড়িয়ে নিলো আষ্টেপৃষ্টে।চাদরটা গায়ে নিতেই আবারও সেই মানুষটার কথা মনে পড়লো সাথে তার পাগলামোগুলো।আচমকা ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হলো কৌড়ির।ছাঁদে যাবার আরেকেটা রিজন মনের মধ্যে ঘুরেফিরে চলছে।তাই মনটাও অদ্ভুতভাবে টানছে সেখানে।কেনো জানেনা কৌড়ি।হয়তো কারণ,সেই মানুষটা।

দরজা চেপে দিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো কৌড়ি।ড্রয়িংরুমে নীল বাল্বের নিভুনিভু আলোতো ছেয়ে আছে চারপাশটা।সেই আলাতে ধীরপায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো সে।নমনীয় পায়ে একে একে ধাপ পার করতে থাকলো প্রতিটি সিড়ি।তাকে উপরে উঠতে দেখে,এতো সময়ের অপেক্ষিত দুটো সুগভীর,স্বচ্ছ চোখ যেনো সুক্ষ হাসিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।সেই হাসির উৎপত্তি ছড়ালো পুরো ঠোঁটের কোণ থেকে।কিচেনে থাকা মানুষটা তখন মনোযোগ দিয়ে কফি বানাচ্ছে।আজ মন যেনো বলছিলো,কৌড়ি বের হবে।আর তার সাথে সচ্ছ অলিক এক সাক্ষাৎ হবে।আজ আর কৌড়ি তাকে এড়িয়ে যাবে না।সময় নিয়ে কফি বানানোয় মনোযোগ দিলো নিভান।যেনো তাড়া নেই।একটু নাহয় অপেক্ষা করুক মেয়েটা।

ছাদে পা রাখতেই দক্ষিণা ঠান্ডা বাতাসে কুঁকড়ে এলো কৌড়ির পাতলা শরীর।গায়ের চাদরটা আপনাআপনিই আরও আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।ছাদের বড়ো-বড়ো লাইটের আলোতে,আশেপাশের সবকিছু পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকা।কুয়াশা ঘেরা রাতের প্রকৃতি আরও মুগ্ধময়।ছাদে লাগানো গাছগুলো লাইটের আলোতে আরও চিরসবুজ।কি সুন্দর দেখাচ্ছে সবকিছু।আল্লাহর নেয়ামতের বড় একটা নেয়ামত, রাত।এই রাতটা না আসলে মনেহয় দিনের গুরুত্ব,মর্মটা অনুধাবিত হতোনা।
চারপাশটা নিস্তব্ধায় ঘেরা বিশাল বড় ছাদটাই একাকি পা রাখতে শরীরটা ভিতর থেকে কেমন ছমছম করে উঠলো।অথচ কোনো কারণে এক মনোবলে ছাঁদে পা রাখলো কৌড়ি।ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে বসলো,নির্দিষ্ট বসার সেই শানবাঁধানো জায়গায়।হাতদুটো কোলের মধ্যে নিয়ে কিছুটা জড়োসড়ো বসলো।আজ আকাশে স্বচ্ছ একটা মস্ত বড় থালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে।কি সুন্দর পরিপূর্ণ অবয়ব তার।আশাপাশে আজ তারার মেলা নেই।বিধায় ওই আকাশে তার ঝলসানো পূর্ণ রূপটা যেনো আর-ও ঝলমল করছে।আর তার ঝলসানো রূপের মধ্যে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সেই ছোটোবেলায় শোনা দাদিআপার মুখের অবাস্তব আলৌকিক গাছটা।যে গাছের নিচে এক বুড়ির বসাবস।ছোটোবেলায় গল্পটা অতি সত্যায়িত অতি বাস্তব মনে হলেও,বড় হয়ে তার সত্যায়িত মিললো পুরো অবাস্তব এক কল্পকাহিনিতে।মৃদু হাসলো কৌড়ি।তা মিলিয়ে গেলো পুনরায় ঠোঁটের বাঁকে। হঠাৎই কারও উপস্থিত অনুভব করলো।মূহুর্তেই হৃদপিন্ডের ধুকপুকানির অস্বাভাবিকতা টের পেলো।তারসাথে টের পেল,মানুষটা কে?গায়ের তীব্র সুগন্ধটাও জানিয়ে দিলো,সেই মানুষটা এসেছে।ভিতরে ভিতরে একটু সংকোচিত হলেও,নড়নচড়ন করলো না কৌড়ি।সেভাবেই চুপচাপ বসে রইলো।তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছিলো,মানুষটা যেনো তার অপেক্ষায় আছে।ছাদে এসে মানুষটাকে না পেলেও মনে হচ্ছিলো, মানুষটা আসবে।নিভান এসে স্বাভাবিক দুরত্ব বজায় রেখে বসলো।হেলান দেওয়ার জায়গায়টায় বেশ আয়েশ করে হেলান দিয়ে পা মেলিয়ে দিলো।মূহুর্তেই পায়ের সিম্পল স্যান্ডেলজোড়া খুলে তারউপর পা রেখে অন্য পায়ের সাথে পা জড়িয়ে নিলো নিভান।ফের ঠোঁট ছোঁয়ালো কফির মগে।সেটা বেখেয়ালি নজরেও কৌড়ি দেখতে পেলো।সহসা নিভান একটা কফির মগ তার সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো।

‘কফি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো।তোমাকে তোমার বাবার বাড়ি থাকতে দিলাম না।কতো কষ্ট!আসলে তোমার বাবার বাড়ি থাকতে দিলাম না তাতে কষ্ট পাচ্ছো নাকি কার-ও কথা রাখতে না পেরে থাকতে পারোনি তাতে কষ্ট পাচ্ছো?

স্পষ্ট পরিহাস।সাথে দুষ্ট হাসির বার্তা।ভিতরটা রাগে টইটম্বুর হলো।তবুও ভুলেও নিভানের দিকে ফিরলোনা কৌড়ি।অন্যদিকে মুখ করে শক্তকন্ঠে বললো।

‘আপনি প্রচন্ড খারাপ একটা মানুষ।

হাসি বিস্তৃত হলো নিভানের ঠোঁটের কোনে।নিঃশ্বাসের মৃদু শব্দ সে হাসি পরিস্ফুটও হলো।দুষ্টুমিষ্টি স্বরে ফের শান্তস্বরে বললো–সারাটাজীবন সেই মানুষটাকেই তোমাকে সহ্য করতে হবে।ভালোবাসতে হবে,তার সঙ্গীনি হয়ে তারকাছেই থাকতে হবে।তোমার জীবনের প্রতিটি সময় বয়ে নিয়ে যেতে হবে সেই মানুষটার সাথে।সুতারং সে কেমন বলে লাভ আছে!মন্দ বললেতো গায়ে তোমারই পড়ে যাবে।সুতারং নিজের জিনিসের দোষ ঢাকতে শেখো।

অদ্ভুত শিহরনে ছেয়ে গেলো কোমল শরীরের ভিতর বাহিরটা।অনুভূতির কবলে পড়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে অন্যপাশে ফিরে রইলো।কিছুসময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো।ফের চোখ খুলে কুয়াশাচ্ছন্ন রাতের প্রকৃতিতে গাঢ় নজর ফেললো।তন্মধ্যে আবারও নিভান কফির মগটা কোড়ির সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো’–নাও,কফি খেয়ে নিজেকে ঠান্ডা করো।তারপর ধীরেসুস্থে রাগ জেদ দেখাও।আমাকে ছাড়া তো রাগ জেদ অনুভূতিগুলো তুমি আর অন্য কারও উপর প্রয়োগ করতে পারো-না।সো আমি-ও অপেক্ষারত।মনে করে এসেছি তোমার দুয়ারে।

ঘাড় ফিরিয়ে একপলক নিভানের দিকে তাকালো।
শক্ত দৃষ্টি নিভানের মুখপানে ফেলতেই,শান্ত আর নমনীয় হয়ে গেলো সে দৃষ্টি।নিভান মিষ্টি হেসে তখনও চেয়েছিল কৌড়ির মুখপানে।মাথায় সাদা ব্যান্ডেজটা আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো।শ্যাম মুখের মায়াটা যেনো তাতেই চৌগুন বেড়ে গেছো।মায়াময় দুটো সুগভীর চোখ।পুরো ঠোঁটের কোণের হাসির ঝলকানির প্রভাব যেনো সেই সচ্চ চোখদুটোতেও ভেসে বেড়াচ্ছে।সেই সুগভীর হাস্যোজ্জ্বল নজরে নজর পড়তেই সারা শীরর মৃদু কম্পিত হলো।তবু-ও আজ আর নজর সরালো না কৌড়ি।তবে বেশিক্ষণ নজরও স্থির রাখতে পারলো-না।স্পষ্ট গলায় বার্তা ছুড়লো—‘আমার মাথা ঠান্ডাই আছে।লাগবে-না আমার।আর এটা খেলে মাথা গরম হয় ছাড়া ঠান্ডা হয় বলে তো আমার অন্তত মনে হয়-না।উদাহরণ না-হয় নাই দিলাম।

কথাগুলো বলতে বলতেই মুখ ফিরিয়ে নিলো কৌড়ি।এলোমেলো নজর ফেললো সামনে।সেটা দেখে আর-ও বিস্তৃত হলো নিভানের হাসিমাখা ঠোঁট।শেষের কথার ইঙ্গিতটা যে তাকে ঘিরে সেটা স্পষ্ট।ঠোটের কোনে হাসি রেখেই কেমন শান্ত স্বরেই সে-ও বললো।

‘তোমার মনেহয় সামন্য এই তিক্ত কফিটা আমার রাগের কারণ?জেনে-বুঝেও কারণ হিসাবে দোষটা কফির উপরে চাপিয়ে দিচ্ছো?যাই হোক,আমারটা থেকেতো খেতে বলছি-না।এটা অতিরিক্ত কশ, তিক্ত।পারবেনা-ও না খেতে তুমি।ফিলিংস আলাদা অনুভব করায়।মিষ্টান্ন নয় তবু-ও একটা শান্তি, স্বস্তির অদ্ভুত ফ্রেশ অনুভূতি।যা মিষ্টান্ন না-হয়েও আমি মিষ্টি অনুভব করি। স্বস্তি পাই,শান্তি পাই।তাই হয়তো তিক্ত হয়েও এতো পছন্দনীয়।তবে তোমার জন্য আলাদা ফ্লেভারের বানিয়ে নিয়ে এসেছি।মিষ্টান্ন ফ্লেভারের।মিষ্টি হলে-ও আমার কেনো জানি মনেহয় তার অনুভব শক্তি কশ,তিক্ত।যদিও তোমার কাছে সেটা মিষ্টি,তুমি ঠিকই সেটা সাচ্ছন্দ্যে পান করে এড়িয়ে নিতে পারবে।কিন্তু আমার যে তিক্ততায় অভ্যাস।আমি পারছি না সেই তিক্ততা ত্যাগ করতে।তোমার মতো এড়িয়ে যেতে, পরিত্যাগ করতে।কিছুতেই পারছিই না।আরও নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিতে ইচ্ছে করছে সেই তিক্ততাকে।সেটা তোমার যদি অতি পাগলামো বলে মনেহয় তবে তাই।আমি নির্দ্বিধায় সেই তিক্ততার নেশায় ডুবে যেতে চাই।তার দরূন আমি পাগল, প্রচন্ড খারাপ মানুষ হতেও রাজি।

ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাকে কি সুন্দর নিষ্ঠুর মানুষ বানিয়ে দিলো!নিভানের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কৌড়ি।একটু আগের মোহে ডুবিয়ে রাখা,মিষ্টি হাসিটা মুখে নেই,মায়াময় নিগাঢ় দৃষ্টিটা তার আধারে আচ্ছন্ন।গায়ে হালকা টিশার্ট।তাও আবার হাফ সিল্ভ। শীত লাগছেনা?কৌড়ি গায়ে মাথায় কি সুন্দর করে ওড়না জড়িয়েছে,তারউপরে আবার মোটা চাদর জড়ানো।তবুও ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব, ভিতরটা ছুঁয়ে দিচ্ছে।গায়ের উপর থেকে আলগোছে আস্তেধীরে চাদরটা টেনে খুলে ফেললো কৌড়ি।পাশাপাশি বসা নিভানের কোলের উপর চাদরটা রাখলো।তড়িৎতেই কোলের দিকে তাকলো নিভান।ফের কৌড়ির মুখের দিকে।
মেয়েটার গায়ে মাথায় সুন্দর করে ওড়না পেচানো।
ততক্ষণে কৌড়ির গাঁট হয়ে বসে সামনে নজর ফেললো।নিভান কৌড়ির ব্যাপারটা বুঝে চুপচাপ চাদরটা গায়ে জড়ালো।উষ্ণ চাদরটার উষ্ণতায় কলিজার ভিতরটাও পর্যন্ত ছুঁয়ে দিলো।তন্মধ্যে কৌড়ি স্থির নজরটা সামনে রেখে তাকে নিষ্ঠুর উপাধি দেওয়ার কৈফিয়ত সরূপ বলতে শুধু করলো।

‘দাদিআপা আমাকে একটা আলাদা সমীকরণে মধ্যে বেড়ে তুলেছেন।হয়তো তিনি যেমন তেমনটাভাবেই গড়ে তুলতে চেয়েছেন।মা ছিলেন না।সেই শূন্য বয়স থেকেই মায়ের জায়গায় আমি উনাকে চিনতে জানতে শিখেছি।হয়তো সেই কারণেই,উনার গড়া সমীকরণেই সীমাবদ্ধ হয়েই বেড়ে উঠেছি।আমার বলা চলা দুষ্টমী,চলাচল সবকিছু একটা সমীকরণ তিনি তৈরী করে দিয়েছিলেন।ঠিক নির্দিষ্ট তৈরী আবার নয়।উনার শাসনে আদরে সেটা একটু একটু করে সেই সমীকরণ আস্তে আস্তে প্রভাবের হয়ে গিয়েছিলো আমার ভিতর বাহির।আর তারমধ্যে থেকে নড়চড় হলেই মায়ের মতো শাসন করতেন।জানিনা মায়েদের শাসনবারণ ঠিক কেমন হয়।তবুও চাচিমাদের দেখেছি তো তাই বলছি।আদর দিতে যেমন কম করেননি, তেমন শাসন করতেও পিছুপা হোন নি।এই কৌড়ি এখানে যাবিনা,ওখানে যাওয়া ঠিক নয়।এদের সাথে মিশবিনা।ওদের সাথে মেশা ঠিক নয়।
স্কুল কলেজ থেকে আসতে সময়সীমা পার হয়ে গলেই তিনি আর বাড়িতে বসে থাকতেন না।হুটহাট কোথাও বের হতে দিতেননা, ঘুরতে যেতে দিতেন না।আশেপাশে চাচাদের বাড়ি থাকলেও অবাধ সেখানে যাওয়া-আসা পছন্দ করতেন না।বাবাও সেটা নীরবে সমর্থন করতেন।
আমি এসব বিসয় নিয়ে ঝগড়া করতাম দাদিআপার সাথে।আবসর উনার কথা মানতামও।আস্তে আস্তে যত বড় হতে শুরু করলাম,আমি কেমন যেনো উনার ধরাবাঁধা সীমারেখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম।বিধায় সব বিষয়ে চাইলেও কেমন যেনো আমি দ্বিধায় জড়িয়ে যাই।আমার জন্য কোনটা ঠিক কোনটা ভুল,দাদিআপা বারবার অন্ধ ব্যক্তির ন্যায় হাত ধরিয়ে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন।আমি তাতেই যেনো অতি বিশ্বাসী হয়ে গেছি।আমার আবেগ আমার দূর্বল অনুভূতি সেখানেই যেনো বারংবার আমাকে থামিয়ে দেয়।আর দ্বিতীয়ত বাবা সমসময় বলতেন,এমন কিছু কখনো করবেনা,আমার পরিচ্ছন্ন ফুলের গায়ে মূর্ছা পড়ে।কেউ কখনো আমার ফুলের দিকে আঙুল তুলে আমাকে ছোটো বড় কথা না বলতে পারে।মা নেই,বাবা দাদিতে মানুষ করতে পারি নি।এমন বাক্য-ও যেনো না শুনতে হয় কখনো।বাবা আমাকে ফুল বলে ডাকতেন।আর সেই ফুলকে তিনি কিভাবে সংরক্ষিত রাখতে চেয়েছিলেন,আপনাকে বলে হয়তো বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়।বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন।আমাদের গ্রামে উনার আলাদা একটা সম্মান শ্রদ্ধা ছিলো।দাদিআপার দেওয়া শিক্ষা, আর বাবার সম্মান শ্রদ্ধার স্থান থেকে হোক বা উনাদের অতি আদর ভালোবাসায়।তাদের দেওয়া সমীকরণের বাইরে আমার আর যাওয়া হয়নি কখনো।প্রয়োজনও মনে হয়নি আমার।আমার মনেহয় ওরকম রক্ষন পরিবেশে বেড়ে উঠা আমার সৌভাগ্য।যার কারণে আমার স্কুল কলেজের বন্ধুবান্ধবীর সংখ্যা খুবই ক্ষীন।কারন আমি সেভাবে মানুষের সাথে হুটহাট মিশতে পারি-না আর মিশুকে হয়ে উঠতেও পারি।তবুও আপনজন প্রিয়জন বলতে যে কয়জন সীমাবদ্ধ ছিলো বা আছে আমার জীবনে আমি তাতেই অত্যন্ত সুখী।

একটু থামলো কৌড়ি।পাশের মানুষটার অদ্ভুত শান্ত নজর তখন তারপানে।মোহিত হয়ে কৌড়ির কথাগুলো শুনছে এবং অনুধাবন করছে।মেয়েটাকে কতো রক্ষনশীলতার মধ্যে মানুষ করা হয়েছে।সেটা কৌড়ির কথায় বেশ অনুধাবন করতে পারছে।নিজের মন নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ট্রেনিং যার আগে থেকে আছে সে কখনো তার দূর্বল আবেগে গা ভাসায়?
সেতো নিজের মন আর আবেগকে প্রশ্রয় প্রধান্য দেওয়ার আগে নিজের ফ্যামিলি আর ফ্যামিলির সম্মানের কথাকে চিন্তা করবে।এটাই তো স্বাভাবিক।কৌড়কে তার বরাবর ম্যাচুর মেয়ে বলে মনে হয়েছে। তাই বলে দায়িত্বশীল মানুষদের মতো এতোটা-ও নয়।কারণ এই বয়সের মেয়েদের যতোই কঠিন রক্ষানাবেক্ষনের মধ্যে রেখে মানুষ করা হয়না কেনো,তাদের মন তাদের মানসিকতা ঠিক কতোটা আবেগী চিন্তাভাবনার হয় সেটাতো মান্যতাকে দিয়ে দেখা।আশেপাশে তো অভাবই নেই।যেখানে পরিনত বয়সের দীবা এখনে পাগলামে করে চলেছে,সেখানে কৌড়িকে অদ্ভুত বলে মনেহলো তার।যদিও মা, কৌড়ির এসব বিষয় নিয়ে সবসময় প্রশংসা করেন।তবুও আজ যেনো অদ্ভুতই লাগছে তার।কৌড়ি ফের বলতে শুরু করলো।—এতো সময়ে হয়তো বুঝে গিয়েছেন, আমি ঠিক কিরূপ রক্ষনাবেক্ষনের মধ্যে বড় হয়েছি।আর সেখানের ছায়া ছিলেন বাবা।বাবা আমার শুধু ছায়া ছিলেন এমনটা নয়।তিনি, মা-হীনা আমার মা ছিলেন।যিনি মায়ের মৃত্যুর পর চাইলেই কারনবশত হোক বা অকারণে আবার বিয়ে করতে পারতেন।করেননি শুধু আমার কারণে।সেখানে মায়ের ভালোবাসা গুছিয়ে রাখার আবদানও কম নয়।তিনি আমার সুখঅসুখের সঙ্গী ছিলেন।যদিও প্রতিটা বাবা মা তার সন্তানের সুখঅসুখের সঙ্গী হয়ে থাকে।কিন্তু একটা মা-হীনা সন্তানের সুখঅসুখের সঙ্গী হওয়া সহজ কথা নয়।আমার ভালো মন্দ,আপনজন বলতে সবটা তাকে ঘিরে।আমার সম্মান,আমার শ্রদ্ধাবোধ সবটাই।আমার কারণেই সেই উনাকেই কেউ অসম্মান করে কথা বলুক, নিচু দেখাক বা আমার কোনো কর্মে উনাকে ছোটো হতে হয়।এগুলো আমি আগেও চায়নি,এখনো চাইনা।আর দাদিআপা।যিনি মায়ের দায়িত্বের বোঝা নিয়ে আমাকে লালিতপালিত করেছেন,তাকেও বা অসম্মান হতে দেই কিকরে!যিনি প্রতিনিয়ত আমাকে সতর্ক করেই চলেছেন।কখনো যেনো আমার দ্বারা বাবার সম্মানে আঘাত হানার মতো কাজ নাহয়।সেখানে আমি উনার আদেশ হোক বা উনাকে উপেক্ষা করি কি করে?জানেন,আমার আবেগ মাঝেমধ্যে আপনার মতো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।খুব করে মনের কথা শুনতে ইচ্ছে হয়।আমার জন্য পাগলামো করা মানুষটাকে আমার জীবনে খুব করে প্রশ্রয় দিতে মন চায়।পারিনা।দাদিআপার আর বাবার দেওয়া সেই সমীকরণের সীমাবদ্ধের বেড়াজালে আঁটকে যাই।তখন মন যতো দূর্বল হোক আর কাঁদুক তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখতেই হয়।তাকে স্বান্তনা দেইই,যা আমার তা আমার ভাগ্য জোরে এমনিতেই আমার হবে।তাকে আঁটকে রাখার সাধ্য প্রভু ছাড়া কার আছে।

নীরব সমর্থন।মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকা নজর খুশিতে ঝলমল করে উঠলো নিভানের।হঠাৎই চোখ বুঝে নিয়ে বিস্তৃত হাসলো।মাথা এলিয়ে দিল শান বাঁধানো হেলান দেওয়া উঁচু জায়গাটায়।এতো বুঝদার মেয়েটা!নিভানের কৌড়ির তো এমনই হওয়া উচিত।চোখ বুঁজে থাকা অবস্থায় নিভান বললো।–আমি এতোদিনে তোমার কথা মা’কে জানিয়ে দিতাম।আমি জানতাম আমাকে উপেক্ষা নয়,আমার অনুভূতিকে এড়িয়ে চলো তুমি।সমান কথাই তো হলো।তাই তোমার মতপ্রকাশ বিহীন জানাতে ভয় পেয়েছি।যদি তুমি অমত পোষন করো।

আজ যেনো কৌড়ির দ্বিধা কেটে গেলো।মন খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করলো।তাই নিভানের কথার উত্তর সরূপ বললো।

‘আপনাকে উপেক্ষা করা সহজ কথা নয়।সহজে কোনো নারী উপেক্ষা করতে পারবে বলে মনে হয়না আমার।যারা বোকা,অতিলোভী তারা ছাড়া।অথবা বাধ্য হয়ে।তবুও পারবে বলে মনে হয়না আমার।দীবা আপু পেরেছে কি?পারিনি।না-হলে নিজের সাজানো গুছানো ঘর সংসার ছেড়ে তিনি কি আপনাকে পাওয়ার আশায় উপেক্ষিত হয়েও এবাড়িতে পড়ে থাকতে পারতেন না!ক্ষনিকের জন্য ফুপুমনির কথার বাধ্যতায় আর সিয়াম ভাইয়ার পাগলোতে মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন।মোহ কেটে যেতেই,দেখুন তার পরিণিতি।যদি-ও আপনার চাওয়ায়ও খামতি ছিলো,আমার মতো করে যদি তাকে চাইতেন।হয়তো….

মূহুর্তেই চোখ খুলে ফেললো নিভান।ঘাড় বাকিয়ে তাকালো কৌড়ির স্বাভাবিক মুখপানে।নিশ্চয় কেউ দীবার কথা কৌড়িকে জানিয়েছে।তবুও ভালো।তার আর কৌড়ির মধ্যে কোনো রাখঢাক থাক এটা সে কদাপি চায়না।পুনরায় আগের স্থানে গা এলিয়ে দিলো।চোখদুটোও ফেরছে বুজে নিলো।ফের কৌড়িকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো।

‘আমি চাইনি তাকে।মা চেয়েছিলেন।তখন তুমি ছিলেনা।তাই দীবাকে বউ করার বিষয়ে মা আমার মতামত জানতে চাইলে,আমি তার সিদ্ধান্তকেই নিজের সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছিলাম।ও সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগে হোক বা সিয়ামের মোহে পড়ে আমার একটা উপকারতো অবশ্যই করেছে।তোমাকে আসার সময় দিয়েছে আমার জীবনে।এই কারণে হলেও,ওর-ও একটা উপকার আমার করা দরকার।সিয়ামের সাথে ওর সংসারটা আমি নাহয় নিজ হাতে গুছিয়ে দেবো।যদিও তুমি আমার জীবনে আসার ছিলে আর আমারই হওয়ার ছিলে।

সেদিন রাতে মান্যতা তাকে দীবার বিষয়ে বলেছিলো।সেদিন যেমন কথাগুলো শুনতেই মনটা অদ্ভুত অনুভূতিতে খচখচ করেছিলো।আজও কথাগুলো বলতে গিয়ে কেমন তিক্ত অনুভব হলো। তবুও বললো কৌড়ি।কেনো জানি পাশের মানুষটার রিয়াকশন কেমন হয় জানতে মন চাইলো।মনের সেই তিক্ত অনুভব দময়ি রেখে আরও একটা প্রশ্ন করলো।

‘আর আপুর ভালোবাসা ঋনটা চোকাবেন কি-করে?তিনি কিন্তু আপনাকে….

‘কারও ভালোবাসার ভালোলাগার দ্বায় আমার হতে পারে-না।সে ভালোবাসে বলে আমাকেও তাকে বাসতে বাধ্য হতে হবে এটা বাধ্যতামূলক নয়।হতে পারেনা।

কৌড়ি হাসলো।মজার ছলে বললো–আমার দ্বায় আছে বলছেন?আমি বাধ্য?আমার জন্য বাধ্যতামূলক?

নিভান জানতো শান্তশিষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়েটা তার কথার প্রেক্ষিতে এই কথাগুলো বলবে।ধপ করে চোখ খুললো।চোখ খুলে সহসা কৌড়ির দিকে এগিয়ে এসে উত্তেজিত গলায় বললো — হ্যা বাধ্য তুমি।অবশ্যই দ্বায় আছে তোমার।শুধু নিভান বলতে বাধ্যমূলক তুমি।তোমাকে যে দীবার কথা বলেছে,সে এটা বলেনি।দীবাতে আমি কখনোই ইন্টারেস্ট ছিলাম না আর না ছিলাম ওরজন্য পাগল।মা বলেছিলেন,সম্পর্কটা না হওয়ার ছিলো,দ্যাটস এ্যানাফ।তারপর ওর অন্যত্র বিয়ে,ভালো মন্দ কোনো কিছুতেই আমার কখনো যায় আসেনি।যায় আসেওনা।কিন্তু তোমার সবকিছুতে আমি ইন্টারেস্ট,তোমার ভালো মন্দ সবকিছুতে যায় আসে আমার।তুমি বুঝদার বুদ্ধিমতি মেয়ে হিসাবে নিশ্চয় এটা বুঝতে পরেছো?আর এটাও নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো,
আমার জীবনের একান্ত নারী হিসাবে আমি শুধু তোমাকে পেতে চাই।তোমাকেই ছুঁতে চাই,তোমাকেই ভালোবাসতে চাই।আমার শুধু তোমাকে চাই কৌড়ি।শুধু তোমাকে।ওসব অযথা কথা টেনে তোমার জায়গায় অন্য নারীকে বসিয়ে তুলনা করে কথাবলাটাকে মোটেই আমি পছন্দ করছি-না।বুঝতে পারছো?দ্বিতীয়ত তুমি আর সে আমার জীবনে ভিন্ন দুজন নারী।যার একজন আমার জীবনের সব।অন্যজন সম্পর্কিত ব্যতিত কিছুই না।সো তোমার জায়গায় অন্য কাওকে নিয়ে আর কখনো উল্টো পাল্টা প্রশ্ন তুলবে-না।

জানা কথাগুলো আবারও সেই মানুষটার মুখ থেকে শুনে স্তম্ভিত হলো কৌড়ি।নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল সামনের হঠাৎই ক্ষেপে উঠা মুখটার দিকে।প্রকৃতির হিমশীতল বরফঠান্ডা হাওয়াটা যেনো অন্তরকোণে ছড়িয়ে পড়লো।ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হলো এলোমেলো সচ্ছ হাসিতে।নজর সরিয়ে অন্যত্র নিলো সেই হাসি আড়াল করার জন্য।নিভান সরে গিয়ে ফের মাথা এলিয়ে দিলো নির্দিষ্ট জায়গায়।ঘাড় কাত করে প্রসঙ্গ এড়াতে কৌড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।

‘তোমার নেক্সট এক্সাম কবে?

কৌড়িও ততো সময়ে স্বাভাবিক করে নিলো নিজেকে।বললো — পৌরশু দিন।

‘সেদিন আমি যাচ্ছি।ওই গাধাটার সাথে তোমাকে আর পাঠাচ্ছি না।

‘এখানে ইভান ভাইয়ার কোনো দোষ নেই কিন্তু। অযথা আপনি তার উপর রাগ করে কথা বলছেন।আমি যেতে চেয়েছিলাম।দাদিআপাও জোর করলেন।তাই তিনি আর না করতে পারেননি।এখানে উনার দোষ কোথায়?

‘সবার প্রতি তোমার এতো মায়া।আমার বেলায় শূন্য হয়ে পড়ে কেনো সব?

উত্তর দিলো-না কৌড়ি।লজ্জায় ফের মুখ ঘুরিয়ে নিলো অন্য পাশে।নিভানও সেটা বুঝে আর কথা বাড়ালোনা।কৌড়ির জন্য বানানো কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে,কথা বলতে বলতে সেটা আর কৌড়ির খাওয়া হয়নি।নিজেরটাও অর্ধেক পড়ে আছে মগে।সময় চললো দু’জনে দুপাশে চুপচাপ বসে রইলো।

‘রুমে যাবেনা?ঠান্ডা লাগছে তো!

‘ঘুম আসছেনা!তাই যেতেও ইচ্ছে করছেনা।

সম্পর্কেটা হালাল হলে সময়টা হয়তো অন্যরকম ভাবে কাটতো।একই চাদরের নিচে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে রাতটা এখানেই পার করে দেওয়া যেতো অনায়াসে।মন উল্টো পাল্টা চাইতেই নিজেকে ভিতরে ভিতরে ধাতস্থ করলো নিভান।ফের বললো।

‘পরিক্ষা চলছে,ঠান্ডা লাগলে অসুবিধা।এই ঠান্ডায় আর থাকতে হবেনা।চলো।

উঠে দাড়ালো নিভান।কফি মগ দুটো হাতে নিয়ে কৌড়ির উঠার অপেক্ষা করলো।কৌড়ি উঠতেই চোখ দিয়ে তাকে সামনে এগোতে ইশারা করে সে পিছে হাটলো।ছাদের সিড়ি বেয়ে দোতলা থেকে নিচতলার সিঁড়িতে পা রাখতেই নিভান তাকে ডাকলো।

‘চাদরটা নেবে না?

কথাটা বললেও নিভানের গায়ে তখনও চাদরটা আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো।দেওয়ায় মতিগতি যে নেই,শুধু কথা বাড়ানো বেশ বুঝলো কৌড়ি।সেটা খেয়াল করে বললো–‘আমার জিনিস আমার কাছে আর থাকছেই বা কোথায়?

কথাগুলো বলেই মুখ ঘুরিয়ে সিঁড়িতে দ্রুত পা চালালো কৌড়ি।নজরের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত সেদিকে তাকিয়ে রইলো নিভান।নজরের আড়াল হতেই মৃদুস্বরে আওড়ালো–এখনো আস্ত তোমাকেই তো পাওয়াা হয় নি।সেখানে আমার আবার প্রিয় জিনিস বলতে ভাগ্যদোষ আছে।হয়তো তারা আমার থেকে হারিয়ে যায় নয়তো কোনো বাধার দেয়াল এসে তাদেরকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।যানিনা তোমার আমার মাঝে আবার কোন বাঁধা এসে উপস্থিত হয়।তবে তুমি বলতে নিভান বিন্দুমাত্র কম্প্রোমাইজ করবে না।কৌড়ি বলতেই যে নিভানের চাই।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমে ঢুকলো নিভান।অথচ একজোড়া অশ্রুভেজা নয়ন তারপানে নিষ্পলক চেয়ে রইলো।সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল করলো-না সে। আর কিসের অপেক্ষায় আছে দীবা!কিসের?সে যে আশায় ছিলো,তা কি কখনো পূর্ণ হওয়ার ছিলো?ছিলোনা তো!তবুও তো মন আশা বেধে ছিলো।কোনো একসময় নিভান তাকে বুঝে তারকাছে ফিরবে।যদিও আশাটা নিতান্তই অবান্তর।নিভানের ব্যাক্তিত্বের কাছে এই আশা মূল্যহীন। তবুও মন-তো।সুক্ষ এক আশা মনের কোণে বেধেই ছিলো।কিন্তু কৌড়ি নিভানের জীবনে আসার পর একটু একটু করে সে আশা চুরমার হতে শুরু করলো।তা ভাঙা চূর্ণবিচূর্ণ টুকটো গুলো নিঃশেষ হতে হতে আজ বুঝি একেবারেই শূন্য হয়ে গেলো।নিজের হাতে নিজের সৌভাগ্য পায়ে ঠেলে নাশ করা যাকে বলে।যা এখন প্রতি পদেপদে সে ভোগ করছে।এই আফসোস বুঝি তাকে সারাজীবন বয়ে নিয়ে,আওড়ে যেতে হবে।অথচ সিয়াম তার পিছনে পাগলের মতো লেগে আছে।
ইভানের বিয়েতে আত্মীয়তা রক্ষা করতে তাদেরকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিলো।দীবা বাজেভাবে বারণ করায় আর আসেনি।অথচ দামী উপহার পাঠাতে ভুল করেনি।ভুল করেনি দীবার একাউন্টে তার নিজ খরচ পাঠাতেও।এটা নিয়েও ঝামেলা হয়েছে।সিয়াম
বারবার নিজের ভুল অন্যায় স্বীকার করছে।তবুও মন গলছেনা দীবার।মন পড়ে আছে নিভানকে পাওয়ার নিষিদ্ধ এক চাওয়ায়।যা অন্যায়!পাপ!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে